 
        				তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এবার ফরিদপুরে ধর্মঘট ডাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ধর্মঘট পালন করা হবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।
এদিকে আগামী ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশ হওয়ার কথা। পরিবহন নেতাদের হুঁশিয়ারির বিষয়ে দলটির গণসমাবেশের সমন্বয়কারী বলছেন, বিষয়টি তারা আগেই ধারণা করেছিলেন। সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দাবি ও ধর্মঘটের বিষয়ে আজ সোমবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন পরিষদের নেতারা। এতে বলা হয়েছে, দাবি না মানলে ধর্মঘট পালন করা হবে ১১ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত।
পরিষদের নেতাদের একটি চিঠি বেলা ১টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু এসব অবৈধ যান মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। অন্যথায় ১১ নভেম্বর থেকে ৩৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হবে। এর আওতায় ফরিদপুর জেলা বাস টার্মিনাল থেকে আঞ্চলিক বাস ও মিনিবাসসহ দূরপাল্লার পরিবহনের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে ১২ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীদের আসার কথা। তবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) এবং গণসমাবেশের সমন্বয়কারী শামা ওবায়েদ বলছেন, তারা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
শামা ওবায়েদ বলেন, গত পাঁচ সমাবেশের অভিজ্ঞতা থেকেই ধারণা করছেন কর্মসূচির আগের দিন বাস বন্ধ করে দেয়া হবে। জনগণের ভোগান্তি তাদের মাথায় নেই, তাদের চিন্তা বিএনপিকে বিপাকে ফেলা। কিন্তু এতে কোনো কাজ হবে না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, মানুষের আবেগ আটকে রাখা যায় না। সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ওরা বাস চলতে দেবে না জেনেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ট্রলার, ভেলায় চড়ে এমনকি হেঁটে মানুষ সমাবেশে আসবে।
ফরিদপুর মাহেন্দ্র শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বাস মালিকদের এ দাবির মানে বুঝি না। আমরা গরীব মানুষ। ধার দেনা করে জমি বেঁচে মাহেন্দ্র কিনে পেট চালাই। আমরা গাড়ি চালাবো। আমরা রাজনীতি বুঝি না, আমরা বাঁইচা থাকার রাজনীতি করি।’
জেলা মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিলন বেপারি সন্ধ্যায় বলেন, ১১ ও ১২ নভেম্বর ধর্মঘট হবে বা মাইক্রেবাস চালানো যাবে না এ কথা তাদের জানা নেই। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাননি।
 
                        গাজীপুরের কালীগঞ্জে অল্পের জন্য বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে কিশোরগঞ্জগামী ‘এগার সিন্ধুর গোধূলি (৭৪৯) এক্সপ্রেস’ ট্রেনের শতাধিক যাত্রী। ট্রেনটির একটি হুইসপাইপ খুলে যাওয়ায় আকস্মিকভাবে গতি কমে যায় এবং এক পর্যায়ে ট্রেনটি সম্পূর্ণ থেমে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে, যখন ট্রেনটি আড়িখোলা রেলস্টেশন অতিক্রম করছিল।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, টঙ্গী–ভৈরব রেলপথে চলাচলরত ট্রেনটি আড়িখোলা স্টেশন পার হওয়ার পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ধীরে ধীরে গতি হারায়। কিছুদূর এগিয়ে মুনসরপুর টেকপাড়া এলাকায় গিয়ে ট্রেনটি সম্পূর্ণ থেমে যায়। পরে চালক ও ট্রেনের পরিচালকেরা দেখতে পান, ট্রেনের ‘ক’ বগির হুইসপাইপ খুলে গেছে- এই পাইপ দিয়েই ট্রেনের ব্রেকসহ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্রেসড এয়ার প্রবাহিত হয়। পাইপটি খুলে যাওয়ার ফলে ট্রেনের ব্রেক সিস্টেম অচল হয়ে পড়ে, ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি পেছনের দিকে চালিয়ে আড়িখোলা স্টেশনে আনা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ভৈরবগামী লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ঢাকাগামী লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত ‘ক’ বগিটি আড়িখোলা স্টেশনে রেখে বাকি বগিগুলো নিয়ে রাত ১০টা ১৮ মিনিটে ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। এরপর টঙ্গী–ভৈরব রেললাইনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়।
নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।’
এদিকে ট্রেন হঠাৎ থেমে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে সৌভাগ্যক্রমে কেউ আহত হননি।
 
                        দেশের পর্যটন খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিন সাংবাদিকসহ ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। 
রাজধানীর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টারে (বিসিএফসিসি) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘১৩তম বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) ২০২৫’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) আয়োজিত এ মেলায় দেশের শীর্ষ পর্যটন ব্যক্তিত্ব, ভ্রমণ ব্লগার, ফটোগ্রাফার ও সাংবাদিকরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন। সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন- দৈনিক কালের কণ্ঠের বিজনেস এডিটর মাসুদ রুমী, এশিয়ান টিভির চিফ নিউজ এডিটর ও এটিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক বাতেন বিপ্লব এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ও এটিজেএফবির যুগ্ম সম্পাদক শফিউল্লাহ সুমন। এছাড়া প্রেস্টিজিয়াস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শুভাশীষ ভৌমিক।
অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন- স্টোরিটেলিং ট্রাভেল ভ্লগার আরকে সোহান, উইমেন ট্রাভেল ভ্লগার জান্নাত (দ্য লুনাটিক ট্রাভেলার), কাপল ও ফ্যামিলি ট্রাভেল ভ্লগার পেটুক কাপল, রাইজিং ট্রাভেল ভ্লগার জাস্ট এ মিনিট, ফটো প্রতিযোগিতায় হৃদয়, বিপুল আহমেদ ও তন্ময় দাস, ভিডিও প্রতিযোগিতায় শাহরিয়ার হোসেন শিজু এবং গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় সাজিব মাহমুদ।
এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি ১২০টির বেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যেখানে ২২০টি স্টল ও ২০টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, তুরস্ক ও স্বাগতিক বাংলাদেশ।
 
                        আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। পূর্ণিমার আলোয় মহারাস উৎসবে মেতে উঠবেন মণিপুরিরা। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। মণিপুরি পাড়াগুলোতে বিকেল থেকেই মৃদঙ্গের তালে মণিপুরি গান ভেসে বেড়ায়। গান আর মৃদঙ্গের তাল অনুসরণ করে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে মণিপুরিদের নাচের প্রস্তুতি। মণিপুরি–অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। চলছে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য এবং রাসনৃত্যের মহড়া।
বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অন্যান্য বছরের মতো এবারও মণিপুরিদের পৃথক দুটি গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে রাস উৎসবের। উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে। রাসপূর্ণিমার আলোয় ভেসে যাওয়ার জন্য মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষার পালা।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকাল বেলা ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখাল নৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখাল নৃত্য। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা শেষে রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে গেয়ে কৃষ্ণবন্দনা ভোর পযন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জনের মতো গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়। শুক্রবার দেখা যায়, পাড়াগুলোতে চলছে রাস উৎসবের মহড়া। প্রায় ১৫ দিন ধরে এখানে রাস উৎসবের মহড়া চলছে। মহড়ায় আসা মণিপুরি ছেলেমেয়েদের রাসনৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন রাসনৃত্যের শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ। সঙ্গে সজল কুমার সিংহ মৃদঙ্গ বাজিয়ে ও রীনা সিংহা গান গেয়ে সেই মহড়ার তাল দিচ্ছিলেন। রাস উৎসবে এই গান ও তালের সঙ্গেই সারারাত ধরে নাচতে হবে শিল্পীদের। প্রায় ১৫-২০ জন ছেলে-মেয়ে শিক্ষকদের কথা অনুযায়ী মহড়া দিচ্ছিলেন।
শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ বলেন, ‘মূলত রাস উৎসবের প্রায় এক মাস আগ থেকেই মহড়া শুরু করি। রাস উৎসবে অংশ নেওয়া মণিপুরি ছেলে-মেয়েদের অনেকেই নতুন। আবার অনেকে পুরোনো। আমরা এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে তাদের প্রস্তুত করি। প্রতিদিন নিয়ম মেনে সবাই আসেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ মহড়া চলছে।’
রাসনৃত্যের শিক্ষক সজল কুমার সিংহ বলেন, ‘৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাখাল নৃত্য শুরু হবে। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হবে রাস নৃত্য। এই রাসনৃত্যের জন্যই মহড়া হচ্ছে। দেশ-বিদেশ দর্শনার্থীরা এই রাস উৎসব দেখতে এখানে ভিড় করেন। এটা মণিপুরিদের ঐহিত্যবাহী উৎসব।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মহোৎসব উপলক্ষে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও সকলের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।
 
                        সপ্তাহ পার হয়েছে। লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচার পায়নি দুজন শিক্ষক। এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমন ঘটনা নড়াইলের কালিয়া উপজেলা শহরের প্যারী শংকর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয় প্রধান বলছেন, অভিযুক্তদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস ও সহকারী শিক্ষক চৈতালী বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় কোনো প্রতিকার মেলেনি। এতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।
প্রতিবেশী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো এক বিষয় নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ সাহিদুর রহমান বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস ও চৈতালী বিশ্বাস সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করলে সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ সাহিদুর রহমাস ও তার এক ছোট ভাই শেখ তবিবুর রহমান উত্তেজিত হয়ে প্রশান্ত বিশ্বাস ও চৈতালী বিশ্বাসকে অপমান-অপদস্তকরাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তারা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই সহকারী প্রধান শিক্ষক স্যার আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে থাকেন। ভদ্রতার খাতিরে আমরা তাদের কিছুই বলি না।
জানতে চাইলে চৈতালী বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিনে সব শিক্ষকরা শিক্ষক রুমে গল্প করছি। কোনো এক বিষয় নিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক স্যার শেখ সাহিদুর ইসলাম অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক সহকর্মী প্রশান্ত বিশ্বাসকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে গেলে আমিসহ অন্য সহকর্মীরা ঠেকাতে যাই। তখন সহকারী প্রধান শিক্ষক স্যার আমাকে একটা ঘুষি দেন। ঘুষিটি কপালের ডান পাশে লেগে রক্ত জমাট হয়ে যায়। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেই। গত ২৭ অক্টোবর খুলনায় গিয়ে সিটিস্ক্যান করেছি। চিকিৎসক বলেছেন কপালের উপরিভাগে বেশ ক্ষত হয়েছে। বিশ্রামসহ চিকিৎসা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমি ১৫ দিনের ছুটিতে আছি। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ওই দিনই প্রধান শিক্ষক বরাবরে আবেদন করছি। আজ ৮ দিন পার হয়েছে কোনো বিচার পাইনি।
সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিনে আমি প্রতিবাদ করলে সহকারী প্রধান স্যার রুমের বাইরে গিয়ে হাতুড়ি নিয়ে এসে আমাকে মারতে যান। সহকর্মী চৈতালী ম্যাডাম ঠেকাতে গেলে তাকে ঘুষি মারেন। তিনি গুরুতর আহত হন। আজও তার বিচার পাইনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, সহকারী প্রধান স্যারের ছোট ভাই শেখ তকিবুর রহমান। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও মাসের বেশিরভাগ দিন ছাত্রদের ক্লাস নেন না। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে জমি বেচাকেনা কাজে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। মাস পেরোলেই বেতন নিতে বিদ্যালয়ে থাকেন। বিদ্যালয়ের পাশে কালিয়া পৌরসভার বেন্দা গ্রামে তাদের বাড়ি।
গত ১৯১১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেখাপড়ার মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হলেও স্থানীয় শিক্ষকদের দাপটে অন্যরা ভয়ে থাকেন। তাদের অনুকূলে চলতে হয়। বিপক্ষে গেলে লাঞ্ছিত ছাড়াও করা হয় হাতুড়ি পেটা। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫১ জন। কয়েক বছর আগেও ৭৫০ থেকে ৮০০ ছিল।
শিক্ষক লাঞ্ছিতের সঙ্গে জড়িত সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ সাহিদুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এমনটাই বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ্তি রানী বৈরাগী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক শেখ তকিবুর রহমান মাঝে মধ্যে জমির কাজ করতে যান। তবে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নয়। আশেপাশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় আমাদের এখানে দূল থেকে আসা কিছু শিক্ষার্থী কমে গেছে।
কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে সে অভিযোগ পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
                        চার দশক পেরিয়ে গেলেও সংস্কার হয়নি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের ধনেশ্বর-গবরখোলা সড়ক। প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। ধুলোবালি ও কাদা-পানিতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক গ্রামের হাজারও মানুষ। এখানকার শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী এবং কৃষকের পোহাতে হয় বাড়তি বিড়ম্বনা।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই সড়কটি তাদের চলাচলের একমাত্র পথ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় রাস্তায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। বর্ষা মৌসুমে কাদা জমে রাস্তায় হাঁটা-চলাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। শুকনো মৌসুমে ধুলোবালিতে হাঁসফাঁস অবস্থা।
ধনেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটা এখন আর রাস্তাই নেই। বৃষ্টির সময় পা ফেলার জায়গা থাকে না, শুকনো মৌসুমে ধুলায় চোখ খুলে রাখা যায় না। তিনি আরও বলেন, এ এলাকায় প্রচুর আলুর আবাদ হয়। কিন্ত রাস্তা-ঘাট দুরবস্থার জন্য পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক আলুর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অটোরিকশাচালক ফরিদ আহম্মেদ বলেন, এই পথে গাড়ি চালাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যেকোনো সময় গাড়ি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক কাজ করে সব সময়।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী দিদার হোসেন বলেন, অন্যান্য বাজার থেকে এখানকার বাজারে সব ধরনের পণ্য মূল্য বেশ কিছুটা বেশি। কারণ দোকানিরা পণ্য ক্রয় করে এ সড়ক দিয়ে আনতে বাড়তি পরিবহন খরচ গুণতে হয়। এর প্রভাব পড়ে ক্রেতার উপর। দীর্ঘদিন আমরা বিভিন্ন জায়গায় সড়ক নির্মাণের জন্য যোগাযোগ করেছি। কিন্ত কোনো সুফল পাইনি।
সড়কটি ব্যবহার করে প্রতিদিন গবরখোলা, ধনেশ্বরসহ ও আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ গৌরীপুরসহ উপজেলা সদরে আসা-যাওয়া করেন। তবে বছরের পর বছর ধরে সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে চলতি অর্থবছরেই সংস্কারকাজ শুরু হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি নয় এবার দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু না হলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
 
                        বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, গণভোটের কোনো প্রয়োজনই নেই। জাতীয় সংসদে আলোচনা করে যেটি গ্রহণযোগ্য সেটি পাস না করে কোনো কিছু সম্ভব নয়।
শুক্রবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও ধানের শীষের প্রচারণা শেষে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল তাদের মেজাজে আছে সরকার গঠন করবে। কিন্তু বিএনপি সরকার গঠন করবে বুঝতে পেরে নির্বাচন ঠেকানো বা পেছানোর কৌশল অবলম্বন করছে তারা। বিরোধী দলে যাবে বুঝতে পেরে এক ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। তার ভেতরে একটি হচ্ছে পিআর পদ্ধতি। যেটি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা জানে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের একটাই লক্ষ্য ছিল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সাধারণ মানুষ যেন ভোট দিতে পারে। আমরা যত দ্রুত নির্বাচনের দিকে দেশকে নিয়ে যেতে পারব তত দ্রুত বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, দেশ রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচিত সরকার যেভাবে সংকট মোকাবিলা করতে পারে অন্য কোনো সরকার পারে না।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃত গণহত্যাকারী হচ্ছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। দেশে এত ভয়াবহ লুটপাট এর আগে কেউ করতে পারেনি। তাদের অবশ্যই দেশের মাটিতে বিচার হবে। শেখ হাসিনার যদি হিম্মত থাকে তাহলে আদালতে এসে মামলার লড়াই করুক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম রতন, আসিরুল ইসলাম সেলিম বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
 
                        ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার খাল-বিল ও জলমগ্ন কৃষিজমিতে সাধারণত সাদা শাপলাই চোখে পড়ে। তবে সম্প্রতি সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে উপজেলার শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুরে প্রথমবারের মতো লাল শাপলার চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে পুরো পুকুর জুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলা যেন এক লাল গালিচার দৃশ্য তৈরি করেছে, যা মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের।
শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এটি শুধু সৌন্দর্য নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর- বিশেষ করে লাল শাপলায় রয়েছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
লাল শাপলার সাথে সাদা বকের আনাগোনা এ পুকুরের নান্দনিকতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলাগুলোর পূর্ণরূপ দেখা যায়। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তোলায়, আবার কেউ পরিবার-পরিজন বা বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরপাড়ের এমফিথিয়েটারে বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন।
পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি সৌন্দর্যবর্ধক গাছ, ফুলের বাগান ও বসার জায়গা তৈরি হওয়ায় পুরো পরিবেশটি যেন এক মনোমুগ্ধকর বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
শাপলার সৌন্দর্য দেখতে আসা রছুল্লাবাদের মনির হোসেন বলেন, ‘লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আমি সুযোগ পেলেই এখানে আসি। সকাল ১০টা পর্যন্ত শাপলাগুলো পূর্ণ ফোটে থাকে। তখন লাল শাপলা আর সাদা বকের মেলবন্ধন সত্যিই মুগ্ধকর।’
শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ শাপলা ফুল দেখতে এখানে আসেন। এতে আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে, তেমনি এলাকায়ও সাড়া পড়েছে।’
শাপলা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা শাহারিয়ার করিম বলেন, লাল শাপলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার জন্য আমি সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসি, সকাল ৮টা পর্যন্ত শাপলাগুলো পূর্ণ ফুটন্ত অবস্থা থাকে। আর তখন শাপলার পাশাপাশি সাদা বকের আনাগোনা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি নিজ উদ্যোগে পুকুরটিতে লাল শাপলার বীজ রোপণ করেন।
 
                        ঢাকার কেরানীগঞ্জে কমফোর্ট ফোম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে নতুন সোনাকান্দা আদর্শ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
অগ্নিকাণ্ডে কারখানার তিনটি সেড, একটি প্রাইভেটকার, একটি পিকআপসহ কারখানার মূল্যবান মেশিন ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ম্যানেজার মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজের সময় কারখানার পাশে একই মালিকের আরেকটি সেড নির্মাণের কাজ চলছিল। এ সময় ওয়েলডিং মেশিনের আগুনের ঘোলা কারখানার পাশে পড়ে থাকা ফোমের ডাস্টবিনে গিয়ে পড়ে, সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রথমে শ্রমিক ও স্থানীয়রা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান; কিন্তু পাশে ফোমের গুদাম থাকায় মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পুরো কারখানাটি পুড়ে যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস সময়মতো আসায় পাশের একটি কেমিক্যাল কারখানা ও একটি মসজিদ আগুন থেকে রক্ষা পায়।
কারখানার মালিক আলী আজগর ও জমিদার আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৩০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মালিক পক্ষের দাবি অনুযায়ী প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে তদন্ত শেষে সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক ডাবলু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত শেষে অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
 
                        অর্ধশত বছরের পুরোনো গ্রামীণ রাস্তায় বেড়া দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বাঁশ ও প্লাস্টিকের নেট দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। জনদুর্ভোগের এমন বেহাল চিত্র ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের রামনগর সুপরপাড় এলাকায়।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুপেরপাড় হুসেনিয়া উচ্চবিদ্যালয়-সংলগ্ন সড়কের মাথায় স্থানীয় প্রভাবশালী নমজ আলী গংরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে পুরো রাস্তা আটকিয়ে দিয়েছেন। এনিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশে বেড়া খুলে দেওয়ার অনুরোধ করলেও প্রভাবশালীরা বেড়া খুলেননি। উল্টো নানা হুমকি দেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সুপেরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাকা রাস্তার পূর্ব মাথায় কাঁচা রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। পুরো রাস্তার মাটি কুপিয়ে গাছের চাড়া রোপণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গ্রামের লোকজন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। খেতের আল দিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের। এতে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় আনিসুর রহমান জানান, গ্রামবাসীর চলাচলে একমাত্র রাস্তা এটি। কয়েক ধাপে ৪ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। এ রাস্তার দেড় কিলোমিটার পাকা সমপূর্ণ হয়েছে ও বাকি রাস্তা টেন্ডারের আওতাভুক্ত রয়েছে। স্কুলের সঙ্গে বিরোধ হওয়ায় গত একমাস ধরে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, রাস্তা দিয়ে পুরো এলাকার লোকজন চলাচল করেন তবুও তারা বেড়া দিয়েছে। এনিয়ে গণ্যমান্য ও ইউপি চেয়ারম্যান বসে একাধিকবার সুরাহার চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। এনিয়ে অভিযুক্ত নমজ আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হুসেনিয়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামালুদ্দিন বলেন, জমিদাতা পরিবার বিদ্যালয়কে বিবাদী করে মামলা করেছেন। শারদীয় দুর্গাপূজার বন্ধ চলাকালীন সময়ে তারা বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন ব্যাপক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিষয়টি সুরাহা করতে ইউপি চেয়ারম্যান বারবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কারো কোনো কথা শোনে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস বলেন, ওইখানে স্কুলের সাথে জমি নিয়ে মামলা চলছে। যা আদালতে বিচারাধীন। হঠাৎ তারা রাস্তা আটকিয়ে দিয়ে সকলকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। জনদোর্ভোগ নিরসনের স্বার্থে তাদের সাথে অনেক কথা বলেছি, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী (নায়েব) কথা বলেছে, তারা কোনো কথা শোনে না।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তকে শুনানিতে ডেকে ছিলাম তিনি আসেননি। পরবর্তী সময়ে আবারও চেষ্টা করে এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
                        ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসবের মোমের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গারো পাহাড়। অন্ধকার থেকে উজ্জ্বল হয় পাহাড়ি এলাকা। মা মারিয়ার ভক্তদের বিশ্বাস এ ভাবেই তাদের মনের অন্ধকারও দূর করে আলোকিত জীবন গড়ে দেবেন মা মারীয়া। ভক্তদের এমন বিশ্বাস আর প্রত্যাশার মধ্যেই ‘আশার তীর্থযাত্রী; ফাতেমা রাণী মা মারীয়া, বারোমারী’ এই মূলভাবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী বারোমারী খ্রিষ্টান মিশনে দুই দিনব্যাপি ২৭তম বার্ষিক তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে। একই সাথে দীর্ঘ ২৫ বছর পর উদযাপন করা হয় তীর্থের জুবিলী উৎসব।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, মণ্ডলি ও বারোমারী তীর্থের জুবিলী উদযাপন করা হয়। পরে পুনর্মিলন সংস্কার, পবিত্র খ্রিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থনা; রাতে আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় প্রথমদিনের মূল উৎসব। আর শুক্রবার জীবন্ত ক্রশের পথ ও মহা খ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
এবার প্রায় ৩৫ হাজার তীর্থযাত্রী এসেছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে। উৎসবে মূল আকর্ষণ ছিল আলোক শোভাযাত্রা। ভক্তরা দেড় কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রশের পথ অতিক্রম শেষে ৪৮ ফুট উঁচু মা-মারিয়ার কাছে নিজেদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য মানত পূরণ করেন।
১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারোমারী সাধু লিওরে ধর্মপল্লীটি। ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই এটিকে বার্ষিক তীর্থ স্থান হিসেবে নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় ক্যাথলিকদের এই তীর্থোৎসব।
এ বিষয়ে বারোমারির রুপন চেংচাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস মা মারীয়া আমাদের মনের আশা পূরণ করেন। এ জন্যই এ তীর্থোৎসব পালন করি আমরা।’
এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে; ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের পালপুরহিত বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি।
জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানিয়েছে, কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে এবারের তীর্থোৎসব। আর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলছে, এই উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ।
 
                        ফরিদপুর শহরের অ্যাডুকেশন জোন খ্যাত বাইতুল আমান কলেজগেট স্টেশনে ট্রেন থামানোর দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন ফরিদপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে আসলে তার কাছে বাইতুল আমান এলাকাবাসী ও আশেপাশে কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের এই দীর্ঘদিনের দাবি তুলে ধরেন এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় ফরিদপুর কলেজগেট স্টেশনে ট্রেন থামানো দাবি কমিটির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু, ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাহিম, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সভাপতি মো. পার্থ আহমেদ, মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান,মোহাম্মদ রোমন চৌধুরী, মো. আব্দুস সালামসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, বাইতুল আমান কলেজগেটে বহু আগে থেকেই রেলের একটি স্টেশন রয়েছে, সেখানে আগে ট্রেন এসে থামত, অজ্ঞাত কারণে এখন আর এখানে ট্রেন থামে না। এলাকা ফরিদপুরের মধ্যে অ্যাডুকেশন জোন নামে খ্যাত। যেখানে রয়েছে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর সিটি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের একেক জেলার একেক প্রান্ত থেকে তারা শিক্ষা লাভের জন্য কেউ বাসে কেউ লঞ্চে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অধিক ভাড়া দিয়ে তারা ফরিদপুর থেকে যাতায়াত করেন। অথচ বায়তুল আমান কলেজগেট স্টেশন থেকে কলেজের কোনোটির দূরত্ব ৪০০ মিটার ৫০০ মিটার ৬০০ মিটার। বাইতুল আমান কলেজগেট স্টেশনে যদি ট্রেন থামানো হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হবে তাদের সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প ভাড়ায় তারা বাড়িতে যাতায়াত করতে পারবে।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর করতে বাইতুল আমান রেলগেট স্টেশনে পূর্বের মতো ট্রেন থামানো নির্দেশনা একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে রেলের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন এলাকাবাসী ও প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর।
 
                        জলাবদ্ধতা নিরসন ও অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আনাসহ বহুমুখী লক্ষ্য নিয়ে রাউজানে খাল খনন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রকল্পে দুঃখ ঘোচতে চলেছে এলাকাবাসীর। 
এ প্রকল্পে বেরুলিয়া, হাজিপাড়া, কাগতিয়া, বিনাজুরি, রাউজান সদর, বিনাজুরি, রাউজান, লেলাংগারাসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষির মুখে হাসি ফুটছে। নতুন করে চাষে নামার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। জানা যায়, পাহাড়ি ঢল আর বানের পানিতে প্রতি বছর ডুবে রাউজান। হাজার হাজার কৃষকের সোনালি ধান, বীজতলা পচে পানির নিচে। কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কসহ স্থানীয় সড়কগুলোতে হয় কোমরপানি। আকস্মিক জলাবদ্ধতাই পরিচিতি পায় ‘রাউজানের দুঃখ’ হিসেবে। খাল পুনঃখননের ফলে এ থেকে মুক্তি পাবেন রাউজানের ওই অংশের মানুষ। হাজিপাড়ার চাষি রবিউল আলম বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তারপর রয়েছে পাহাড়ি ঢল আতঙ্ক। এ কারণে অনেকে ফসল ও মাছ চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অবশ্য চাষের খরচ, মাছের খাদ্যের দামও বাড়ছে। ফলে অনাবাদি জমি পড়ে থাকছে বিলের পর বিল। নতুন করে খাল পুনঃখনন করায় চাষিরা আগ্রহী হচ্ছেন। যত ভালো পরিকল্পনা ও টেকসই কাজ হবে ততই মানুষের স্বস্তি মিলবে। 
বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ভূউপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়িত হচ্ছে ৬০২ কোটি টাকায়। এর আওতায় চট্টগ্রামের ১৬টি এবং কক্সবাজারের ৯টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে রাউজানে মহেশখালী ও কাশখালী খাল পুনঃখনন, দেড় কিউসেক সোলার চালিত বারিড পাইপলাইন নির্মাণ এবং পাঁচ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত বারিড পাইপ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে বোরো মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬০০ একর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং বর্ষায় এসব জমির ফসল রক্ষা পাবে। বর্ষাকালে রাউজান পৌরসভা, রাউজান ইউনিয়ন ও বিনাজুরি ইউনিয়নের বন্যাজনিত সমস্যার নিরসন হবে। 
প্রকল্পের আওতায় বিনাজুরিতে দেড় কিউসেকের ১,২০০ মিটার বারিড পাইপ এবং পৌরসভায় পাঁচ কিউসেকের ২,২০০ মিটার বারিড পাইপ বসানো হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অন্তত ৮০০ কানি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে।
উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুম কবীর জানান, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে রাউজানে ব্যাপক ক্ষতি হয় কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে। জলাবদ্ধতা থেকে সুরক্ষা এবং ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে বিএডিসি একটি যুগান্তকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাউজানে। 
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়নভিত্তিক একাধিক খাল পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে, ইতোমধ্যে অনেক খালের খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে খালের পানির ধারণক্ষমতা বাড়বে, জোয়ারের পানি খালের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকবে, শুষ্ক মৌসুমে চাষিরা সেচ দিতে পারবেন, আবার বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফসল রক্ষা পাবে। আশা করি প্রকল্পটির কাজ সুসম্পন্ন হলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে।
 
                        স্বামী মারা যাওয়ার পর হতদরিদ্র খালেদা বেগম দুই সন্তান নিয়ে সংসারের হাল ধরতে পারি জমান ঢাকায়। পোশাককর্মী হিসেবে কাজ নেন একটি কারখানায়। হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তার। চোখে কম দেখায় খালেদা বেগম সেই চাকরিও হারান। একপর্যায়ে ঋণ করে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন চোখে ছানি পড়েছে। আর তার চিকিৎসার খরচের কথা শোনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন খালেদা বেগম। এরপর উপার্জন বন্ধ হয়ে ধারদেনা বাড়তে থাকে। এ কারণে অনেক সময় তাকে না খেয়েও দিন কাটাতে হয়েছে। এভাবে কেটেছে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর। একপর্যায়ে গত ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় একটি চক্ষুশিবিরের খোঁজ পান খালেদা বেগম। আবারও চোখে আলো ফিরে পাওয়ার আশায় স্বামীকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হন উপজেলার ডিএস আলিম মাদ্রাসা মাঠে। চিকিৎসক তার ডান চোখে ছানি শনাক্ত করেন। সেই চক্ষুশিবিরের আয়োজকদের মাধ্যমেই কয়েকদিন পরে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ছানি অপারেশন হয় তার। সাথে ওষুধ, থাকা-খাওয়া সবই পেয়েছেন বিনামূল্যে। 
গত ৩০ অক্টোবর উপজেলার সরকারি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আয়োজনে দিনব্যাপী চোখে ছানিপড়া রোগীদের চক্ষুশিবিরে আবারও চিকিৎসা নিতে এসে এসব কথা জানালেন খালেদা। 
তিনি এ সময় বলেন, ‘চার বছর আগে সালমান ওমর রুবেল (ওমর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা) যদি চোখের চিকিৎসা না কইরা দিতেন, তাইলে অহন রাস্তায় রাস্তায় অন্ধ হিসেবে ভিক্ষা করুন লাগত। এছাড়া আর কোনো উপায় থাকত না। আল্লায় ওনার ভালো করুক।’ ফের বাম চোখে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় এসেছেন তিনি। চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার আনন্দ শুধু খালেদার বেগমের একার নয়, তার মতো হালুয়াঘাট উপজেলার ৬ হাজার ২০০ জন অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষের বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসায় চোখের আলো ফেরাতে সহযোগিতা করেছেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ও হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান ওমর রুবেল। 
যেভাবে শুরু সালমান ওমরের বিনামূল্যে এই চক্ষু শিবিরের
হালুয়াঘাট উপজেলার নাসুল্লাহ গ্রামের মৃত হানিফ ওমরের ছোট ছেলে সালমান ওমর (৪৮)। তিনি জানান, ২০১০ সালেই অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যে তিনি হালুয়াঘাট উপজেলায় ওমর ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের লক্ষ্যই ছিল গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দুই বছর ওমর ফাউন্ডেশন উপজেলায় অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজ করে। ২০১২ সালের শুরুতেই সালমান ওমর নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তখন তিনি অসহায় মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ চোখের চিকিৎসা করানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এ নিয়ে তিনি ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের প্রধান কে জামানের সঙ্গে আলাপ করেন। তখন কে জামান এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। কথা অনুযায়ী তিনজন চিকিৎসকসহ ১২ জনের একটি দল নিয়ে উপজেলার ঘাশীগাঁও দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে এই যাত্রা শুরু। এখন প্রতি বছরই এই শিবিরের আয়োজন করেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর তার সহযোগিতায় হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আয়োজনে দিনব্যাপী চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। এখান থেকে নির্বাচিত ছানিপড়া রোগীদের পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে ছানি অপারেশন করানো হবে। 
৬ হাজার মানুষের চোখের ছানি অপারেশন: গত ২০১২ সাল থেকে নিজের ব্যক্তিগত অর্থে পরিচালিত ওমর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ চক্ষুচিকিৎসক ও ১০-১২ জন সহকারী সদস্যের একটি টিম স্বেচ্ছায় নিজ খরচে বিনামূল্যে চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসাপত্র দিয়ে চলেছেন। এছাড়া চোখের অপারেশনের জন্য রোগী নির্ধারণের কাজটিও তারা করে থাকেন। রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, প্রেশার মাপাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চিকিৎসক ও সহকারীরা হাসিমুখে করে চলেছেন। চক্ষু ক্যাম্পে রোগীদের স্লিপ দেওয়া, নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন করে দেওয়া, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, চিকিৎসকসহ অতিথিদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব পালন করে ওমর ফাউন্ডেশনের ১২-১৫ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার মানুষের চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। 
বিএনপি নেতা ও ওমর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওমর জানান, শুরুর দিকে মানুষের তেমন সাড়া না পেলেও এখন প্রতিটি চক্ষু ক্যাম্পে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। প্রতি বছররের ন্যায় এবারও দিনব্যাপী এ কার্যক্রম চলছে।