ইলিশ নিধন, বিক্রি ও পরিবহনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত ১৩ অক্টোবর। তবে ঝালকাঠিতে দেখা যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম। খোদ মৎস্য অফিসের যোগসাজসে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক জেলেই নদীতে মা ইলিশ ধরা অব্যাহত রেখেছেন। এদের মধ্যে মৌসুমী জেলের সংখ্যাই বেশি।
গেল এক সপ্তাহের সরেজমিন অনুসন্ধানে যা পাওয়া যায় তা হলো, শতাধিক ব্যক্তি সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে লক্ষাধিক মিটার জাল নিয়ে পৃথকভাবে ইলিশ নিধনের মহোৎসবে মেতেছেন, যা মধ্য রাতে দেখা যায়। অথচ নিষেধাজ্ঞার পর সপ্তাহখানেক সময় পেরিয়ে গেলেও কিছু জাল জব্দ এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া ছাড়া তেমন কোনো সাফল্য নেই মৎস্য অফিসের। তারা নামমাত্র অভিযান, ফটোসেশনসহ তাদের দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত।
নলছিটির তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শুরুর দিন থেকেই বিষখালী নদীর ভবানীপুর, ইসলামপুর, তেঁতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট ও সুগন্ধা নদীর মগড় জাঙ্গালিয়া ইটভাটা, অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙা এলাকায় চলছে অবাধে মা ইলিশ নিধন। অভিযানে নামার আগাম খবর পেয়ে যায় জেলেরা। এর পরই শুরু হয় মৎস্য দপ্তরের লোকদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা’।
নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি গ্রামের জুয়েল হাওলাদার বলেন, ‘শতাধিক ডিঙি নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদীতে। মৎস্য অফিসের অভিযানের ট্রলার আসার আগেই এরা নৌকা নিয়ে ছোট ছোট খালে আত্মগোপনে চলে যায়। অভিযানের লোকেরা চলে গেলে তারা আবার নৌকা নিয়ে নদীতে প্রবেশ করে।’ অসাধু জেলেদের সঙ্গে মৎস্য অফিসের লোকদের যোগসাজস রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জুয়েল।
ঝালকাঠি লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা নান্টু সেলিম বলেন, ‘তালিকাভুক্ত (কার্ডধারী) অনেক জেলে নিজে নদীতে না নেমে মাছের ভাগের বিনিময়ে নৌকা ও জাল দিয়ে মৌসুমি জেলেদের সহযোগিতা করছেন। আবার এলাকার কিছু লোক নৌকা কিনে মৌসুমি জেলেদের কাছে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। আর মৎস্য অফিসের লোকজন সারাদিন নির্দিষ্ট একটি গণ্ডির মধ্যে ট্রলার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিছু জাল ধরে ফটোসেশন করে চলে যায়।’
নদীতীরের বাসিন্দা অনেকেই জানালেন, মৎস্য অফিসের সঙ্গে যারা লিয়াজোঁ না করে, তাদেরই ধরা হয়। আর লিয়াজোঁকারীরা লুকোচুরি খেলায় দিন কাটিয়ে মা ইলিশ নিধন উৎসব করছে। জাল তোলার পর মাছ নৌকা থেকে নামিয়ে নদীর তীরের ঝোপ-জঙ্গল ও কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রাখছে। এসব ইলিশ সস্তায় কিনতে দূর-দূরন্ত থেকে ক্রেতারা আসছে প্রতিদিন।
খেয়াঘাটে দায়িত্বরত অনেকে জানালেন, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নদীতে অভিযানে নামলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে অসাধু জেলেদের খবর জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে বেশ কিছু লোক। বিনিময়ে প্রত্যেককে ৫০০-৬০০ টাকা করে প্রতিদিন দেওয়া হয়। এদের কাজ হলো নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নদীতে প্রশাসন অভিযানে নামলেই মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া। কারণ মৎস্য কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তাদের হিমধরা আতঙ্ক।
গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কজন জেলে জানান, বর্তমানে প্রচুর ইলিশ জালে উঠছে। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি নিরাপদ। তাই রাতেই বেশি জাল ফেলছেন। ইলিশ বিক্রির জন্য কোনো চিন্তা করতে হয় না। ক্রেতারা নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন মাছ কেনার জন্য। কিছু ক্রেতা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। ফোন দিলেই তারা এসে মাছ নিয়ে যান।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যখন যেখানে জাল ফেলার সংবাদ পাচ্ছি তখনই সেখানে অভিযান চালাচ্ছি। আমরা যেভাবে গোপন খবর পেয়ে অভিযানে ছুটে যাই, ঠিক তেমনি আমাদের অভিযানের তথ্যটিও অসাধু জেলেদের কেউ খবর দিয়ে দেয়। তাই অনেক সময় ব্যাটে বলে মেলে না। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। আবার আমাদের ফোন করে ভুল তথ্যও দিচ্ছে অজ্ঞাত লোকজন। ভুল তথ্যের কারণে অভিযানেও ব্যাঘাত ঘটছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘৬৩ কিলোমিটার নদীর ৮ পয়েন্টে আমরা আলাদা নজর রাখছি। মৎস্য অফিসের অভিযান বা টহল টিম নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, পুরো এলাকায়ই টহল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অসহায় ভ্যানচালক আবদুল মমিনের হাতে নতুন টিনসেড ঘর তুলে দিয়েছে স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশন। শুক্রবার সংগঠনটির ‘আশ্রয়ন প্রকল্প’-এর উদ্যোগে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী সাতঘড়ীয়া গ্রামে ঘর পেয়ে খুশিতে আবেগাপ্লুত হন তিনি।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মোনাজাত করেন উপজেলা সম্মিলিত ওলামা পরিষদের সভাপতি ও চিওড়া আজগরিয়া ফাযিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার উল্লাহ। স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশনের পরিচালক মনির হোসেন খোকন, চিওড়া ইউনিয়ন ব্লাড ডোনেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ হোসেন নয়ন, পাঁচরা জনকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নুর মোহাম্মদ সুমন, উপদেষ্টা আবুল হাশেমসহ সংগঠনটির সদস্য ও গ্রামবাসী।
নতুন ঘর পেয়ে আবদুল মমিন বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চলত। টাকার অভাবে জরাজীর্ণ ঘরে থাকতে হতো। এই নতুন ঘর পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এবং স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশনের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
স্বপ্নপূরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, আবদুল মমিনের আবেদন পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের পর প্রবাসী ও দেশের মানবিক ব্যক্তিদের সহায়তায় ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর আগে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় পরিবারকে আরও পাঁচটি নতুন ঘর প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের দেওয়া অনুদান যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে আমাদের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার খুরুইল বুটিয়াকান্দি দরবার শরীফে প্রতিষ্ঠিত সাখা অরফেনজ সেন্টারের উদ্যোগে ৪০০ এতিম ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে কাতার চ্যারিটি। শুক্রবার দুপুরে দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে এ মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দরবার শরীফের পীর ড. শাহ মো. এনামুল হক আল আজহারী। প্রধান অতিথি ছিলেন কাতার চ্যারিটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আহমেদ আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অরফেনজ ডিরেক্টর ড. আব্দুল কাদের।
বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন পীরজাদা মাওলানা এমদাদুল হক, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সভাপতির বক্তব্যে ড. শাহ মো. এনামুল হক আল আজহারী বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে এবং রমজান মাসকে সামনে রেখে এতিম ও দুস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাতার চ্যারিটির প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সহায়তা ৪০০ পরিবারের জন্য বড় স্বস্তি।’
অতিথিরাও সমাজসেবামূলক এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশা প্রকাশ করেন।
বরগুনার আমতলীতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে স্বর্ণা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিক পক্ষ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পৌর শহরের ফেরিঘাট সড়কের গাজীবাড়ির সামনে পার্কিং অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর বন্দরের শহীদ দেওয়ান দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরিবহন ব্যবসা করছেন। তার মেয়ে স্বর্ণার নামে তৈরি বাসটি বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কে চলাচল করত। ঘটনার রাতে ফেরিঘাট সড়কে ৮টি বাস পার্কিং ছিল। সামনের অবস্থানে থাকা স্বর্ণা পরিবহনের বাসটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তেই পুরো গাড়িটি পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ততক্ষণে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতাউর রহমান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ খান, পৌর যুবলীগ সদস্য তন্ময় গাজী, কাওসার রনি ও সগির মল্লিককে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
বাস মালিক শহীদ দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, দুর্বৃত্তরা আমার জীবনের সঞ্চয় পুড়িয়ে দিয়েছে।
তার ছোট ভাই ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা বাতেন দেওয়ান বলেন, পরিকল্পিতভাবেই এই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমি বিএনপি করি বলেই আমাদের বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক অহিদুজ্জামান সজল মৃধা জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়ারহাউস ইন্সপেক্টর মো. হানিফ বলেন, দ্রুত গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে আরও বড় ক্ষতি হতো।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় গড়ে উঠছে একের পর এক নতুন পর্যটন আকর্ষণ। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে তেঁতুলিয়া সদর ও শালবাহান ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত কুমারটুল এলাকার নোম্যানস ল্যান্ড। সীমান্তঘেঁষা এই স্থানটি এখন পর্যটকদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে ছোট্ট ভারত নামে।
তেঁতুলিয়ায় প্রবেশের আগে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ভাগ করা ৪৩৬ নম্বর মূল পিলারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। একদিকে বাংলাদেশের শান্ত, সবুজ গ্রামীণ প্রকৃতি- অন্যদিকে ভারতের বিস্তীর্ণ সমতলভূমির চা-বাগান ও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তার মাঝেও প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসু মানুষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নোম্যানস ল্যান্ডের পাশ দিয়ে যাওয়া তেঁতুলিয়ার মূল সড়কের পাশে সবুজে মোড়ানো চারপাশ, সীমান্ত পিলারের অপর পাশে ভারতের চা-বাগানের সারি আর দেখা মিলছে ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। দৃশ্যটি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে পর্যটকদের ভাষায়, একবার না দাঁড়ালে যেন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কেউ তুলছেন ছবি, কেউ ভিডিও করছেন- সব মিলিয়ে জায়গাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক, চেক-ইন স্পট।
ঘুরে আরো দেখা গেছে, শীতের আগমনী বার্তা আর হেমন্তের নরম রোদে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সীমান্তের এ এলাকাটি। কেউ তুলছেন স্মৃতি-বন্দি ছবি, কেউবা নিরাপদ দূরত্ব থেকে ভারতের চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন আর ছবি তুলছেন।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা নুসরাত জাহান বলেন, আমরা মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। কিন্তু সীমান্তের এই জায়গায় এসে মনে হলো, না এসে থাকলে ভ্রমণটা অসম্পূর্ণ থাকত। এখানে দাঁড়িয়ে ভারতের চা-বাগান দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। পরিবার নিয়ে মজা করার পাশাপাশি ছবি তুলছি।
রাজশাহী থেকে আসা মঞ্জুরুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আমরা মূলত সীমান্তের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি- একদম ভারতীয় মাটির সামনেই। সবকিছু মিলে দারুণ লাগছে।’
বগুড়া থেকে বাইক নিয়ে আসা পর্যটক অরজুন রায় বলেন, ‘আমরা চারটি বাইক নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এই জায়গাটা অন্যরকম। তাই সবাই মিলে এখানে ছবি তুলছি।’
স্থানীয়রা জানান, এলাকাটি এখন ফটোগ্রাফার, ভ্রমণব্লগার ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের নতুন প্রিয় জায়গা। সকাল কিংবা বিকেলের আলোয় সীমান্তের মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে।
এ নিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের আগমন বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর রয়েছে। একই সাথে সীমান্ত নিরাপত্তায় কাজ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে তেঁতুলিয়ার রয়েছে বিশেষ অবস্থান। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা খালি চোখে দর্শন ছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতলের বাংলার বিস্তৃন্য মাঠজুড়ে সমতলের চা-বাগান, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও মহানন্দা নদীসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সব মিলিয়ে তেঁতুলিয়া এখন যেন উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি রাজধানী- আর নতুন সংযোজন এই ছোট্ট ভারত নামের সীমান্ত এলাকা।
মেহেরপুরে প্রেমিকের সাথে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক প্রেমিকা। ঘটনায় সাথে জড়িত দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার রাজাপুর মাঠে গত বুধবার সন্ধ্যায়। আটক দুই ধর্ষক হলেন, রাজাপুর গ্রামের আফতাব আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম, জুমাত আলীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম। আরেক ধর্ষক নজরুল ইসলামের ছেলে মিনারুল পালাতক রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই আসামিকে সদর থানা পুলিশের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আর গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। আটক দুই ধর্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বুধবার বিকালে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী তার প্রেমিক সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রের সাথে মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। পরে সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মাঠের রাস্তা দিয়ে আসার সময় তিন যুবক তাদের পথরোধ করে একপর্যায়ে তারা প্রেমিকের গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ইউপি সদস্য চঞ্চলের ভাটার পেছনে আম বাগানে নিয়ে যায়। এ সময় তারা প্রেমিকের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাদের দুজনকে বিবস্ত্র করে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় প্রেমিক তার প্রেমিকাকে তিন যুবকের কাছে রেখে টাকা নিতে মেহেরপুর শহরে আসেন। টাকা নিয়ে ফিরে গিয়ে দেখেন তার প্রেমিকা কান্নাকাটি করছে। পরে প্রেমিকা জানান, তাকে জোর করে তিনজন ধর্ষণ করে। এ সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পাঠায়।
এ নিয়ে ৩ যুবককে আসামি করে মেহেরপুর সদর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে।
সদর থানার ওসি অপারেশন জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত দুই জনকে আটক করা হয়েছে। পালাতক আসামিকে আটকে পুলিশি অভিযান চলমান রয়েছে।
তারুণ্যের উৎসব, খেলাধুলার প্রাণচাঞ্চল্য এবং জুলাই শহীদদের স্মরণে মাগুরায় শুরু হয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি মাগুরা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ ২০২৫’। শুক্রবার সকালে মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এ লিগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক মো. অহিদুল ইসলাম।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক জুলফিকার আলী খান, মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা মমতাজ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাগুরার ১০ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
মাগুরা জেলা পরিষদ এবং চিকিৎসক সিমিন মজিদ আখতারের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা এ লিগের আয়োজন করেছে। ১৬ ক্লাবের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টটি চলবে এক মাসেরও বেশি সময়। সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয়, জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং বিসিবির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয়। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতিথিরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিগের সফলতা এবং মাগুরার ক্রিকেট অগ্রগতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
শহীদ সোহান শাহের বাবা শাহ সেকেন্দার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাগুরার তরুণরা দেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছিল। সেই শহীদদের নামে এই লিগ আমাদের পরিবারের জন্য সম্মান ও আবেগের বিষয়।’
বিসিবির পরিচালক জুলফিকার আলী খান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম জেলা হিসেবে মাগুরায় এ বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ মাঠে গড়াল। স্থানীয় ক্রিকেট উন্নয়নে মাগুরার এই উদ্যোগ অন্য জেলার জন্য উদাহরণ।’
পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, ‘মাগুরা তরুণদের শহর- এই লিগ তরুণদের সুস্থ ধারার সম্পৃক্ততায় আনবে এবং শহীদদের আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেবে।’
জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ের শহীদদের স্মরণ করে আমরা শুধু ইতিহাসই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এই লিগ মাগুরার ক্রিকেটে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।’
ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, মাগুরায় সর্বশেষ ২০২২ সালে দ্বিতীয় বিভাগ ও ২০২১ সালে প্রথম বিভাগ লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে মাগুরা প্রেসক্লাব।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকার ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০টায় কোটালীপাড়া থানা সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব ফলের চারা বিতরণ করেন গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির ও গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে জামায়াতের প্রার্থী রেজাউল করিম।
এ সময় উপজেলা জামায়াতের আমির সোলায়মান বিশ্বাস, নায়েবে আমীর সেকেন্দার আলী, সেক্রেটারি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, বায়তুলমাল সম্পাদক মো. মহিবউল্লাহ, পৌর সভাপতি আক্তার দাড়ীয়া, সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন, রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা মামুনুর রশিদ, শুয়াগ্রাম সভাপতি ফরিদুজ্জামান ও আমতলী সেক্রেটারি মাওলানা আসলাম উদ্দিন সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেজাউল করিম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী তথাকথিত রাজনৈতিক প্রোগাম নিয়েই শুধু মাঠে থাকে না। মানুষের কীভাবে কল্যাণ হবে সেটা বিবেচনা করেই জামায়াত কর্মসূচি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জেলাটি বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে জামায়াত। এরই ফলে আজকে গাছের চারা বিতরণ করা হচ্ছে।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে, ভয় বা প্রলোভনে নয়। আমরা নিজেরা দুর্নীতি করব না, কাউকেও করতে দেব না। জামায়াতে ইসলামী জয়ী হলে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে। এ জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে সবাইকে দাড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের শন্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশের উন্নয়নে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
দিনের তাপমাত্রা খুব একটা পরিবর্তন না হলেও শেষ বেলায় তৈরি হয় শীতের আবহ। ফলে ক্রমেই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় চাহিদা বাড়ছে শীত নিবারণ সামগ্রীর। বছরের এ সময়টায় ব্যস্ততা বাড়ে লেপ তোশক কারিগরদের। বাকী ৮ মাস তাদের কাটাতে হয় অলস সময়। তবে শীত নিবারণ তৈরি সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। নদী বেষ্টিত হওয়ায় এ এলাকায় শীতের প্রকোপ কিছুটা বেশি। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ক্রেতারা ভীড় করছেন লেপ তোশকের দোকানে।
তুলা, কাপড় ও কারিগরদের মূল্য গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা বেশি। ক্রেতা বিক্রেতারা বলছেন এ বছর প্রতি লেপ তোশকে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিনশত টাকা। অনেক ক্রেতা মেরামত করছেন তাদের পুরানো লেপ তোশক। মূলত মধ্য ও নিম্ম মধ্যবিত্ত মানুষের ভিড় বেশি লেপ তোশকের দোকানে। আধুনিক শীত নিবারণ সামগ্রীর দাপটে আগের চেয়ে কমেছে এ শিল্পের জৌলুস।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, তুলাধুনা, সেলাই, নকশা আকতে ব্যস্ত কারিগর। দম ফেলার নেই ফুসরৎ।
বর্তমানে গার্মেন্টস ঝুট দিয়ে তৈরি সিঙ্গেল তোশক ৫ শত থেকে ৮ শত টাকা এবং ডবল তোশক ১৫ শত থেকে ২৫ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর শিমুল তুলার দাম ছিল ৫ শত টাকা কেজি, এবার তা ৬ শত ৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। গার্মেন্টস ঝুটও কেজিপ্রতি ৬০থেকে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শত থেকে ১শত ৪০ টাকায়।
দাউদকান্দি বাজারের খাজা বোডিং এর মালিক খাজা হোসেন বলেন, প্রতি লেপ তোশক তৈরিতে কারিগরিদের মজুরি দিতে ৪শত থেকে ৫শত টাকা। দুই মাস আগ থেকেই ব্যস্ততা শুরু হয়েছে তার দোকানে। শীতের প্রকোপ বাড়লে শীত বস্ত্রের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা তার।
আক্তার হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, তার একটি লেপ বানাতে এবার ১৬ শত টাকা খরচ হচ্ছে। যা গতবারের চেয়ে প্রায় তিন থেকে চারশত টাকা বেশি। তবে খরচ বাড়লেও শীত নিবারণে তার পছন্দ লেপ।
লেপ তোশক তৈরির কারিগর স্বপন জানান, লেপ তোশক বানানো মৌসুমি ব্যবসা। মৌসুমের এ সময় তাদের কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে। বাকী সময়ে তাদের তেমন একটা কাজ থাকে না। এ সময়ের আয়ের উপর তারা নির্ভরশীল থাকে।
শীতের প্রকোপ আরও বাড়লে চাহিদা বাড়বে বহু গুণ। এমনটি মনে করছেন ব্যবসায়ী ও কারিগররা। তাই এখনই ব্যস্ততার মধ্যেও ক্রেতাদের অর্ডার মেটাতে দিন রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
মাগুরায় বিআরটিএ ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিআরটিএ মাগুরা। অনুষ্ঠানে বিআরটিএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহাম্মেদ প্রধান অতিথি হিসেবে আহত ও নিহত পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন। চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ অহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বিআরটিএ খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হাসান, ঝিনাইদহ বিআরটিএ সহকারী পরিচালক লিটন বিশ্বাস, মাগুরা বিআরটিএ সহকারী পরিচালক কেশব কুমার দাস, মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান, মাগুরা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু মিয়া, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি কাজল মিয়া ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের উপদেষ্টা ফুরকানুল হামিদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে দুটি ক্যাটাগরিতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। এর মধ্যে নিহতের পরিবারের মাঝে ৫ লাখ টাকা, আহতদের পরিবারের মাঝে ৩ লাখ ও ১ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা সুপারিশ তুলে ধরেন বক্তারা।
চট্টগ্রাম বোয়ালখালী পৌরসদরের তুলতলা এলাকায় রেল লাইনের উপরে বসেছে বাজার। চলছিল বেচাকেনা। প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজারটি বসে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকেও জমজমাট ছিল বাজার। তুলাতলা ক্রসিং দিয়ে পারাপার হচ্ছিল যানবাহন। এরই মধ্যে সারাশব্দ ছাড়া এসে পড়ে ওয়াগন ট্রেন। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পায় শত শত মানুষের প্রাণ।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ বলছেন, রেলওয়ের লোকের গাফিলতিতে (বৃহস্পতিবার) অনেক মানুষের প্রাণহানি হতো।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা রেলক্রসিং দিয়ে তখন পার হচ্ছিলেন সংগীত শিল্পী জুসি বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমাদের গাড়িটি রেল লাইনের উপরে যাবে এমন সময় সামনে দিয়ে ট্রেন ছুটে গেল। একটু ঊনিশ-বিশ হলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেত। বাজারেও ছিল প্রচুর লোক।
জুসি অভিযোগ করে বলেন, ‘ট্রেন আসার আগে ফেলা হয়নি রেলগেটের ব্যারিকেড, উন্মুক্ত ছিল যান চলাচল। ট্রেনটির আলোও দেখা যায়নি। দেয়নি সাইরেন।’
এ বিষয়ে গোমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তুলাতল রেল গেটের দায়িত্বরত গেটম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন ট্রেন আসার আগে মোবাইল গ্রুপে মেসেজ আসে। সন্ধ্যায় নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে মেসেজটি দেরিতে পাই। ফলে এ সমস্যা হয়েছে।’
গোমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শরীফ বলেন, ‘এবিষয়ে জুসি বড়ুয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ট্রেনটি দোহাজারীতে ফার্নেস অয়েল খালাস করে চট্টগ্রাম ফিরছিল।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগপূর্বক অবহিত করা হয়েছে।’
দেশের সর্বউত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়। শান্তশিষ্ট মানুষের প্রাণের জনপদ হিসেবেও পরিচিত এই জেলাটি।
শুধু চা উৎপাদনেই নয়, দুগ্ধ উৎপাদনেও এ জেলা এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
জাতীয়ভাবে চা উৎপাদনে ৩য় স্থানে থাকা পঞ্চগড় জেলাটি এখন দুধ উৎপাদনেও ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।
জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক খামার। এর মধ্যে প্রায় চারশ বড় খামারি নিয়মিতভাবে বৃহৎ পরিসরে দুধ উৎপাদন করছেন।
জেলায় প্রতিদিন উৎপাদিত হয় প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার লিটার দুধ। কিন্তু স্থানীয় চাহিদা তুলনামূলক কম প্রায় ৭-৮ হাজার লিটার। ফলে বিপুল পরিমাণ দুধ অবিক্রীত থেকে যাওয়ার আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে খামারিরা। ঠিক এ জায়গাটিই শক্তভাবে দখল করে নিয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরোনো দুগ্ধ সংগ্রহ ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা।
মিল্কভিটা যাত্রা শুরু করেন ২০১০ সালের ১৪ নভেম্বর। এরপর নিয়মিত খামারিদের কাছ থেকে দুধ নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্কভিটার দুধ সংগ্রকারী সমিতির সংগঠক মহসিন আলম জানান, আমাদের ৫ উপজেলায় মোট ৪৮টি খামার রয়েছে। যা থেকে প্রতিনিয়ত দুধ আসছে আমাদের কাছে। আমাদের কাছে আসা দুধের ফ্যাট অনুয়ায়ী আমরা দাম দেই। সাধারণত ৩.৬০/৩.৭০% ফ্যাটের দুধ আমরা ৪৬/৪৭ টাকায় ক্রয় করি। ফ্যাট এর কম হলে দাম ও কম হয়।
দাম কম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হেড অফিস থেকে লিটার প্রতি ৫ টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা কম নিতে বাধ্য হচ্ছি।
গরু খামারি বাবুল জানান, আমি সমিতির ম্যানেজার। আমার সমিতিতে মোট ৪০ জন সদস্য আছে। সবার দুধ সংগ্রহ করে আমি মিল্কভিটায় নিয়ে আসি। এখানে লিটার প্রতি এক টাকা করে পাই আমি। টাকা প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়ে যাই।
আরাজি শিকারপুরের খামারি আজিজুল জানান, আমার সমিতির ১০-১২ জন খামারি দুধ দেই। দুধের দাম ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা প্রতি লিটার। তাও আবার ফ্যাটের উপর নির্ভর করে।
পুর্ব জালাসীর খামারি আব্দুল মালেক জানান, আমরা ডেইলি ৮০ থেকে ১০০ লিটার দুধ মিল্ক ভিটার কাছে দেই। আগে দাম বেশি ছিল। এখন প্রতি লিটার দুধ ৫ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। মিল্ক ভিটার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও দুধ বিক্রি করি।
দুধ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমেছে এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ পেয়েছেন অনেকেই। অনেক পরিবার নতুনভাবে খামার গড়ে তুলছেন, আবার কেউ কেউ ছোট খামারকে বড় পরিসরে নিয়ে যাচ্ছেন। দুধ উৎপাদনকে কেন্দ্র করে জেলার পশুখাদ্য ব্যবসা, পশু চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়েছে।
পঞ্চগড়ের উপব্যবস্থাপক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান খান জানান, এখন দুধ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল পঞ্চগড়কে সামনে রেখে মিল্কভিটা আরও উন্নত সংগ্রহ ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বাড়লে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পঞ্চগড় দেশের অন্যতম বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করবে।
উল্লেখ্য যে, গত ২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সমবায়ী খামারিরা ছয় দফা দাবিতে মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। তারা দুধের দাম ৪৮-৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন।
খামারিদের দাবি, ক্রমাগতভাবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুপাতে দুধের দাম বাড়ায়নি মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ দুধের দাম দিচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের কাছে দুধের দাম ৬০ টাকা করার দাবি জানায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘাটতি মেটাতে গো-খাদ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে নজর রাখার পাশাপাশি সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
এক দুগ্ধ খামারি বলেন, এক লিটার দুধ উৎপাদনে যে ব্যয় হয়, তার ৭০ শতাংশই যায় গো-খাদ্যে। এর বাইরে শ্রমমূল্য এবং অন্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও রয়েছে। দেশি গরু খায় কম, তাই দুধ উৎপাদন কম, সংকর জাতের গরু খায় বেশি, তাই দুধ উৎপাদন অনেক বেশি। সংকর জাতের খামারের তুলনায় দেশি গরুর খামারে এত বেশি দুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় দেশি খামারে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুর রহমানের ফ্ল্যাটে ঢুকে তার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক দুর্বৃত্ত। বিচাকরের ছেলের নাম তাওসিফ রহমান সুমন। এ ঘটনায় বিচারকের স্ত্রী ও হামলাকারী যুবকও আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে নগরের ডাবতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্পার্ক ভিউ নামের দশতলা ভবনের পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন বিচারক।
আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি পরিবার নিয়ে নগরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বসবাস করতেন। তাওসিফ রহমান নবম শ্রেণিতে পড়ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে অস্ত্রপচার করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একজন দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে। আহত হওয়ায় তাকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হিসেবে আটক ব্যক্তির নাম ইমন। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। ভবনে ঢোকার সময় ওই যুবক দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন লিমন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে যান।
ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী বলেন, ওই যুবককে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মুঠোফোন নম্বর লিখিয়ে নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাকে এসে জানান, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলেকে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তারা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত পান। এরপর তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আর হামলকারী যুবক ও বিচারকের স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়াা হয়েছে।
খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে।
পুলিশ কমিশনার জানান, সিলেটের সুরমা থানায় এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন তাসমিন নাহার। কেন এই ঘটনা ঘটেছে তা তারা এখনো বিস্তারিত জানেন না।
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও নির্মাণ সামগ্রীসহ ২২ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর বিকেলে কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিএন শাকিব মেহবুব এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়- একটি চক্র বাংলাদেশি পণ্যের বিনিময়ে ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য মিয়ানমার থেকে দেশে আনার পরিকল্পনা করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার রাত ১টার দিকে কোস্ট গার্ডের জাহাজ জয় বাংলা সেন্টমার্টিন ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে সন্দেহজনক দুটি ফিশিং ট্রলার থামিয়ে তল্লাশি চালানো হলে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রায় ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৬০০ বস্তা মটর ডাল ও ৬৫০ বস্তা সিমেন্ট জব্দ করা হয়। এ সময় পাচারে জড়িত ২২ জনকে আটক করা হয়। জব্দকৃত মালামাল, ট্রলার ও আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোস্ট গার্ডের ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, পাচার ও চোরাচালান রোধে কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।