খুলনার একাধিক গ্রামীণ এলাকায় প্রধান সড়ক কাঁচা মাটির তৈরি হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সামান্য বর্ষায় এসব রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে, ফলে হাঁটু সমান কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মাগুরখালী ইউনিয়নের বাঘারদাইড় থেকে গাজীনগর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল, সে রাস্তায় মানুষের চালাচল একেবারেই অসম্ভব।
অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৫টি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া এ সড়ক পাড়ি দিয়ে ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়েও যেতে হয়।
সমীর নামে ওই এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘বর্ষা শুরু হলে আমাদের এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। হাঁটু সমান কাদার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে প্রায়ই পিছলে পড়ে যাই। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক।’
তিনি বলেন, শীতের সময়ও এই রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো থাকে না। শুকিয়ে যাওয়া মাটির রাস্তা ধূলায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেই ধূলা উড়ে নাকেমুখে ঢুকে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ওই সড়কটিতে ইটের সলিং নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
একই অবস্থা রয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একটি সড়কে। ৬ বছর ধরে সংস্কার না করায় ভাঙা-চোরা, কাদা-ধূলির সড়কে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি দিয়ে দৈনিক ১০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া সড়কের পাশে থাকা দুটি বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর যাতায়াতের একমাত্র পথও এটি।
সড়কের পার্শ্ববর্তী পাথরঘাটা এ এইচ এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, ‘সামান্য বর্ষা হলেই হাঁটু সমান কাদা হয়ে যায় এই সড়কটিতে। কত নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আমরা গিয়েছি, তার ঠিক নেই। তবে বারবার শুনি কাজ হবে, কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে না।’
এলজিইডি খুলনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ‘খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় পাথরঘাটা গ্রামে ১ দশমিক ৬৮৬ কিলোমিটার (১৬৮৬ মিটার) সড়কের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ই-টেন্ডারের পর ২০২৩ সালের ২১ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোসার্স এস আর ট্রেডার্সের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনা করা হয়। ওই কাজের চুক্তি মূল্য ছিল ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৩১৮ টাকা। ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান আমাকে প্রস্তাব করেছেন, সড়কের বরাদ্দের মধ্যে বেট কাটা, বালু ফেলা ও সাব বেজ করা লাগবে না। এতে যে টাকা বেঁচে যাবে, তার ৬০ শতাংশ তাকে দিয়ে দিতে হবে। এই প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায় আমার কাজ বাতিল করা হয়েছে।’
তবে রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এই সড়কের এস্টিমেটের (কাজের সম্ভাব্য পরিমাণ ও পরিব্যয় নির্ণয়) কিছু সংশোধন করে ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চৌমুহনী বাজার পর্যন্ত সড়কের মাঝের প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের ইটের সলিং তুলে ফেলায় সেই সড়কটিও কর্দমাক্ত রয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালের বছরের ৫ মে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন সংসদ সদস্য সেই সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজ। ওই কাজের চুক্তিমূল্য ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২০ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় কাজটি বাতিল করা হয়।
স্থানিয়রা জানিয়েছেন, ঠিকাদার ইটের রাস্তার সোলিং উঠিয়ে ফেলায় বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে যায় রাস্তা। পরে আর কাজ না করায় রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, চলটি অর্থবছরে আমাদের ১০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ ও ১৫০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেসব সড়ক বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্মাণ বা সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলায় যশোরের দুঃখখ্যাত ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১৮ হাজার বিঘা জমিতে এবার আমন আবাদ করতে পারেননি কৃষকেরা। এসব জমিতে ১২ হাজার টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কৃষি বিভাগের। আমন আবাদ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি এসব বিলে ঢুকে পড়ায় কৃষিকাজ বন্ধ রয়েছে। জলাবদ্ধতার পেছনে অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে পানি সরতে না পারা কারণ হিসেবে দেখছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এই উপজেলায় ৭১ হাজার ৬২৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৫৫০ টন; যার বাজারমূল্য ১৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে এবারের আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ৫৩ হাজার ৭০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ হয়। অনাবাদি থেকে যায় ১৭ হাজার ৯২৫ বিঘা জমি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুম শুরুর আগেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের, নদীর নাব্যতা না থাকাসহ মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার পানি শুষ্ক মৌসুমেও নামতে পারেনি। এতে বিস্তীর্ণ জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ করতে ব্যর্থ হন কৃষকেরা।
উপজেলার মজিদপুর গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন জানান, বুড়িভদ্রা নদীর পাশে তার প্রায় দেড় বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ কারণে তিনি এবার আমন আবাদ করতে পারেননি। অপরিকল্পিত মাছের ঘের ও নদ-নদী পলিতে ভরাট হয়ে পানি সরতে না পারায় তার মতো অনেক কৃষক আমন আবাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পৌরসভা এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ার কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিলে এখনো হাঁটুসমান পানি। জলাবদ্ধতার কারণে আমার সাত বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে পারিনি।
একই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, নোনামাঠেল বিলে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকেরা এবার আমন আবাদ করতে পারেননি।
মজিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, মজিদপুর, বাগদহ, দেউলী, হিজলতলাসহ অধিকাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলের বিলগুলো জলাবদ্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন দৈনিক বাংলা পত্রিকাকে বলেন, ভবদহের প্রভাবে জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে আমন আবাদ হয়নি। এ জন্য এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষকেরা ১১ হাজার ৯৫০ টন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।
যশোর জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে ভবদহের অবস্থান। চার দশক ধরে এখানকার ৩৩০ কিলোমিটার এলাকার ৩ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রক্তক্ষয়ী এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মূলহোতা সিফাত ও আবরারসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সংঘর্ষের পর পুলিশ ও র্যাব নগরীর বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
সোমবার বেলা ১২ টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর কুমিল্লা কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ ও কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে চারজন গুরুতর আহত হন মোস্তাফিজুর রহমান, অনয় দেবনাথ, মাহিন ও রিজভী। তারা কুমিল্লার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী জিসান ও তাহফিদের সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীন সিফাতের কথা কাটাকাটি হয়। পরে সিফাত তার বাহিরের বন্ধুদের নিয়ে কলেজে আসে এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সংঘর্ষের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কলেজজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক তরুণ হাতে রামদা নিয়ে দৌড়াচ্ছে এবং আরেকজনের হাতে পিস্তল। তদন্তে জানা গেছে, ভিডিওতে অস্ত্রধারী ওই তরুণ সিফাত।
ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, “ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।”
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, “সংঘর্ষের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই অভিযান শুরু হয়। রাতভর অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, “ঘটনার ভিডিও প্রকাশের পর দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। র্যাব তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে পারুল বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করেছে তার পুত্রবধূ ৩ সন্তানের জননী মাকসুদা আক্তার লিলি (২৮)।
প্রথমে পুলিশ ও স্থানীয়দের মাঝে লিলি শাশুড়িকে কে বা কারা হত্যা করে লাশ বাড়ির উঠানে ফেলে যায় বলে মিথ্যা নাটক সাজায়। কিন্তু পরবর্তীতে রাত ১১ টার দিকে পুলিশের ব্যাপক জেরারমুখে নিজেই হত্যার কথা স্বীকার করে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের আসাদনগর মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল বেগম ওই এলাকার আব্দুল ওয়াহিদের স্ত্রী। এ ঘটনায় পুত্রবধূ লিলি আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জামিল খান জানান, পারুল আক্তার ও আব্দুল ওয়াহিদ মিয়া দম্পতির একমাত্র ছেলে বিল্লাল প্রবাসে থাকেন। বাড়িতে তারা দুজন ছাড়াও পুত্রবধূ লিলি আক্তারও থাকেন। লিলির তিন সন্তান রয়েছে। শাশুড়ির সঙ্গে তার পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। প্রায় সময়ই বাকবিতণ্ডা হতো।
প্রতিবেশীরা জানান, রোববার সকালে আব্দুল ওয়াহিদ মিয়া কুমিল্লায় চিকিৎসার জন্য যান। সন্ধ্যায় শাশুড়ির সঙ্গে লিলির ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে শাশুড়ির মাথায় আঘাত করে এবং মাথা ও মুখে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পারুল বেগম মারা যান।
এর আগেও পুত্রবধূ লিলি নিহত শাশুড়ি পারুল বেগমকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওসি হাসান জামিল খান জানান, হত্যার পর বাড়ির উঠানে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করে। ঘরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে লিলিকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পুত্রবধূ কর্তৃক বৃদ্ধা শাশুড়িকে হত্যার ঘটনাটি পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে সবচেয়ে বৃহত্তম শিমুল গাছটি ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। বহন করছে নানা ঐতিহ্য। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী এই শিমুল গাছটি।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গাছটির বয়স পাঁচ থেকে ছয়শ বছর। এর ছায়ায় প্রশান্তি পান ক্লান্ত পথিক। তবে বৃহদাকৃতির এ গাছটি ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। তাই এটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি স্থানীয়দের। গাছটি ঘিরে পর্যটনেরও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত এলাকাবাসীর।
বানারীপাড়া উপজেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামক স্থানে গাছটির অবস্থান। এই গাছটির নিচে অনেকেই মনের বাসনা পূরণের জন্য মানত হিসাবে গরু খাসি, মোরগ, জবাই করে রান্নাবান্না করে। গাছ দেখার জন্য আগত ভক্তদের উদ্দেশ্য একটাই যেন তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। অনেকে মনের বাসনা পূরণের জন্য মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। আবার অনেকে দেখার জন্য এসে গাছটিতে প্রিয়জনের নামও লিখে যায়। আগত ভক্তদের একটাই উদ্দেশ্য যেনো সৃষ্টিকর্তা তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করে।
প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা শিমুল গাছটির গোড়ার পরিধি প্রায় ৫৫ গজ। গাছটির গোড়ায় দাঁড়িয়ে কখনো মনে হয় পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি। এর বিশালতায় ভরে যায় মন। এখানে এলে মুগ্ধতার আবেশে জড়িয়ে যায় দর্শনার্থীর হৃদয়। আলোচিত এই গাছটি দেখতে তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
স্থানীয় বাড়ির বাসিন্দা ও গাছের মালিক উত্তম সরকার বলেন, আমি বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনে আসছি এই শিমুল গাছটির বয়স কমপক্ষে পাঁচশ বছর হবে। আবার গ্রামের অনেকেই বলেছে, গাছটির বয়স ছয়শ বছর বা তারও বেশি হবে।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছটি বেড়ে উঠেছেও প্রাকৃতিকভাবেই। একসময় বৃহৎ আকৃতির এই শিমুল গাছটি পত্র-পল্লবে এতটাই ঘন ছিল যে এর নীচে রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশাও পড়ত না। প্রচন্ড গরমের সময়ও গাছের নীচে পাওয়া যেত হিমেল শান্তির পরশ। পথিক, কৃষক থেকে শুরু করে নানা পেশা ও শ্রেণির লোকজন গাছের তলায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত। দুপুর ও বিকালে দেখা যেত ডালে ডালে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেকে।
গাছটি যার জমিতে আছে তিনি (উত্তম সরকার) তার বাবার পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছেন, তিনি আবার তার বাবার কাছ থেকে এভাবেই চলে আসছে শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে। কিন্তু কেউ বলতে পারে না এর জন্মলগ্নের সঠিক ইতিহাস।
গাছটিকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানান কল্পকাহিনী। স্থানীয়রা অনেকেই জানান, প্রায় সময় এখানে বিভিন্ন এলাকার লোকজন গাছটি একনজর দেখার জন্য এসে ভিড় করে থাকে। তারা মানত করে স্থানীয়দের মাঝে মোরগ-পোলাও মিষ্টি বিতরণ করেন। তারা মনে করে এ গাছে অলৌকিক কোন কিছু আছে। তাই মনের বাসনা পুরন করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা অসীম সরকার জানান, এই পুরাতন শিমুল গাছটি কাটার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন অবস্থাতেই কাটা যায় না। যে গাছটি কাটতে যায় সে অসুস্থ হয়ে যায়। শুনেছি অনেক আগে এ গাছ কাটতে এসে নাক, মুখ দিয়ে রক্ত এসেও মারা গিয়েছে। এটি আমাদের এলাকার পুরাতন একটি গাছ। এটি আমাদের ঐতিহ্য।
এলাকাবাসী মহানন্দ মন্ডল দোকানদার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিমুল গাছটি অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। ভেঙে পড়ছে বড় বড় ডালগুলো। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই গাছটিকে সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। দর্শনার্থী টানতে এলাকাবাসী বিশালাকৃতির দৃষ্টিনন্দন এ গাছটি সম্পর্কে প্রচারণা ও মূল রাস্তা থেকে গাছের গোড়া পর্যন্ত পাকা সংযোগ সড়ক তৈরিসহ বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলায় হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা। যার এক তৃতীয়াংশ অশনাক্ত। মিলছে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ও হত্যাকাণ্ড—এই তিন ধরনের মৃতদেহ। এরমধ্যে অধিকাংশ ঘটনায়ই হত্যাকাণ্ড। বেশিরভাগই স্থলভাগে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খুলনা নৌপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২২ মাসে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭৩টিরও বেশি মরদেহ। তার মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে গেল ১০ মাসে মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত নদ-নদী থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌপুলিশের তথ্য মতে, ২০২৪ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু খুলনায় মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আরও অন্তত ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৭ অক্টোবর নিখোঁজের তিন দিন পর দাকোপের বাজুয়ার চুনকুড়ি নদী থেকে আশিষ সরকারের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিনে পাইকগাছা উপজেলার সোনাদানা ইউনিয়নের শিবসা নদীর চর থেকে ইকরাম হোসেন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এর আগের দিন ১৬ অক্টোবর পাইকগাছার জিরবুনিয়া খাল থেকে অজ্ঞাত (৪০) যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, খুলনাসহ আশপাশের জেলার নদ-নদীগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই মানুষের মরদেহ ভেসে উঠছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ৫ আগস্টের পর পুলিশের ভূমিকাটা যেভাবে হওয়া উচিত ছিল, সেভাবে নেই। পুলিশের নজরদারি সেইভাবে নেই এবং খুলনাসহ আশপাশের জেলায় র্যাবের একটা বড় ভূমিকা থাকতো, কিন্তু সেইভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না। যেভাবে বুক ফুলিয়ে দেশের জন্য পুলিশ কাজ করতো, সেভাবে করতে পারছে না। পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতিতে চলে গেছে। এই সুযোগে বিভিন্ন স্থানে যেসব সন্ত্রাসী আত্মগোপনে ছিল, তারা এলাকায় ফিরে আসছে। তারাই এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া, বিচার প্রক্রিয়া যদি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা যায় তাহলে অন্যান্য অপরাধীরা ভয় পাবে।
তিনি বলেন, হত্যার পর যেসব মরদেহ ফেলে দেওয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই অজ্ঞাত থাকছে। এসব মরদেহ শনাক্তের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্ত করা হলে অধরাধীদের সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হতো।
খুলনা নৌপুলিশ সুপার ড. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, নদীতে যে মৃতদেহগুলো পাই সেগুলো নিয়ে কাজ করি। আমরা তিন ধরনের মৃতদেহ পাচ্ছি। এরমধ্যে একটি দুর্ঘটনাজনিত। গোসল করতে গিয়ে, নৌকা থেকে পড়ে, পরস্পর নৌকা-ফেরিতে ধাক্কা লেগে পড়ে যাচ্ছে এমন। দ্বিতীয়ত কিছু আত্মহত্যার ঘটনায় পাওয়া যায়। আর তৃতীয়ত আমরা কিছু পাচ্ছি হত্যাজনিত। হত্যার মধ্যেও আবার দুই ক্যাটাগরি রয়েছে। একটি নবজাতক। এক-দুই দিন বয়সী নবজাতককে তার বাবা-মা ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। আর পাচ্ছি বয়স্ক হত্যাজনিত। এসব ঘটনায় মামলা নিয়ে তদন্ত করছি। তিন ধরনের মধ্যে হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মৃতদেহ বেশি পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নদ-নদী থেকে গত বছরের তুলনায় মৃতদেহ উদ্ধার চলতি বছরে বেড়েছে। গত বছর যে পরিমাণ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত সেই পরিমাণ উদ্ধার করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়েছে।
নৌপুলিশ সুপার বলেন, নবজাতক বাদ দিয়ে পূর্ণ বয়স্ক মৃতদেহ যেগুলো পাই তার মধ্যে অর্ধগলিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন কাজ। আর যেগুলোর ফিঙ্গার প্রিন্ট পাই এবং নিখোঁজ জিডি আছে কিনা খোঁজ করে পরিচয় পাওয়া গেলে তদন্তের অগ্রগতি ভালোভাবে সম্পন্ন করা যায়। যতোগুলো হত্যাকাণ্ডজনিত মামলা রয়েছে এর কোনোটিই আসলে নদীর ওপরে নয়। স্থলভাগে যেই সমস্ত ঘটনায় হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, সেটা পারস্পারিক দন্দ্ব বা সম্পত্তির বিষয়ে থাকতে পারে, মাদক-সংক্রান্ত হতে পারে। যেগুলো স্বাভাবিক ঘটনা, সেগুলো ওখানে (স্থলভাগে) ঘটে কিন্তু মৃতদেহটি নদীতে ফেলে দেয় তথ্যপ্রমাণ লুকানোর জন্য। আমাদের নদীকেন্দ্রীক চলাফেরাই বেশি। এই ঘটনাগুলোতে আমরা বেশি মনোযোগ দিই। স্থলভাগের ঘটনাগুলোতে আমাদের পদচারণা কম। নদীকেন্দ্রীক ঘটনাগুলোতে আমাদের গোয়েন্দারা থাকে।
তিনি বলেন, স্থলভাগের হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, কোনো র্যাকেট আছে কিনা? কোনো চক্র আছে কিনা? সেটার তথ্য নতুন করে নিতে অনেক সময় আমাদের বিলম্ব হয়ে যায়। তার পরও দুই জায়গাতেই মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে লোকবলের কিছুটা সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে যদি আমাদের সাপোর্ট বেশি থাকতো তাহলে আরও কম সময় নিয়ে হয়ত ব্যাপারটা সমাধান করতাম বা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম।”
শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য দ্বিতীয় শ্রেণির পদে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগের প্রতিবাদে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের স্থায়ী কর্মচারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিক্ষোভকালে কর্মচারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মূল দাবি হলো, অবিলম্বে প্রেষণে দেওয়া ওই কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করে শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য এই পদে যোগ্য দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. মওদুদুল করিম (বাবু), মুজাহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মচারীরা। তারা বলেন, যে পদটি সম্পূর্ণভাবে বোর্ডের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত, সেখানে প্রেষণে প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন করছে এবং পদোন্নতির সুযোগকে সীমিত করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বিক্ষোভ চলাকালীন মো. আহসান হাবিবের সমর্থকেরা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে মব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ নিয়ে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, মো. আহসান হাবীব তিনি আজ সহকারী কলেজ পরিদর্শক পদে যোগদান করতে এসেছিলেন, সেটি ১০ম গ্রেডের পদ, তিনি ৯ম গ্রেডে চাকরি করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে পদটি প্রথম শ্রেণির পদ নয়। তিনি বলেন, এই ইস্যুতে আমাদের কর্মচারীরা বাঁধা সৃষ্টি করে। আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
চেয়ারম্যান আরও জানান, আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনার জেরে শিক্ষাবোর্ডে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ঝালকাঠির পৌর শ্মশানঘাটে রোববার সন্ধ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের মৃত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় মোমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্বালন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ সময় মৃত স্বজনদের পছন্দের খাবার তাদের সমাধিতে উৎসর্গ করা হয়।
ঝালকাঠি পৌর শ্মশান কমিটির সভাপতি নির্মল চন্দ্র দে তরনী জানান, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের তিথিকে ভূতচতুর্দশী তিথি বলা হয়ে থাকে। রোববার সন্ধ্যায় তিথি শুরু হয়েছে এবং আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত চলবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিকেল থেকেই সনাতনসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও শ্মশানঘাট প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। দিপাবলী উপলক্ষে প্রতি বছর এই দিনে হাজারো মানুষের পদচারণ থাকে এখানে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অলোক সাহা জানিয়েছেন, ‘দীপালি উৎসবকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার সমাধির এই শ্মশানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সদর থানা পুলিশ, র্যাবসহ সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করেছে। পাশাপাশি আছেন শ্মশান রক্ষা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা।'
বিধান রায় নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাবার সমাধিতে মোমবাতি, আগরবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে স্মরণ করতে এসেছি। তিনি মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন, তার সমাধিতে নানা ধরনের মিষ্টি সাজিয়ে উৎসর্গ করেছি।’
শ্মশান এলাকায় অনেককে কীর্তন করতে দেখা গেছে। কেউবা অশ্রুসজল চোখে স্মরণ করেন হারানো প্রিয় মানুষটিকে।
বিকেলে অল্প সংখ্যাক লোকজন থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধা নদীর তীরে পৌর শ্মশানঘাটে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সমাগম বাড়তে থাকে।
রাতে দিপালী উৎসব পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান এবং পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায়। উৎসব চলাকালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজ নেন পুলিশ সুপার।
এছাড়াও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন, সদস্য সচীব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন, সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিনসহ তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জেলা বিএনপিরএকটি প্রতিনিধি দল দীপালি উৎসবে এসে উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজিবির আহ্বানে বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির নিয়ন্ত্রণাধীন গিরাগাঁও বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ৪০৯/২ এস সীমান্ত পিলার সংলগ্ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রমজানপাড়া এলাকার শুন্যরেখায় এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সৌজন্য সাক্ষাতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মনিরুল ইসলাম ও বিজিবি, এমএস, পিএসসি, এসি ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল তানজির আহমেদ।
তার সঙ্গে ছিলেন স্টাফ অফিসারসহ মোট ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। অপরদিকে বিএসএফ-এর পক্ষে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ ১৭ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট শ্রী অজয় কুমার শুকলা ও বিএসএফ ১৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট রাজেশ বোহরা।
সৌজন্য সাক্ষাতে দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি রক্ষা, সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধ, মানব পাচার, গরু পাচার রোধ এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ, পুশইনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে চোরাকারবারীরা সুযোগ নিতে পারে। সাক্ষাতে সীমান্ত সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও চোরাচালান রোধে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সৌজন্য সাক্ষাতের শুরুতে বিজিবি- বিএসএফ কমান্ডার পর্যায়ে কুশলাদি বিনিময় করেন।
খুলনার বাজারে কমছে না সবজির দাম। মাছের দামও কমেনি। সবজি ও মাছের চড়া মূল্যের কারণে ক্রেতাদের অভিযোগেরও শেষ নেই। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ না থাকায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে, শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করলে দাম কমে যাবে। রোববার খুলনার নতুন বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, খালিশপুর বাজার ও নিউমার্কেট বাজার ঘুরে এমনটা জানা যায়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, টমেটো ১২০, পটল ৬০, চিচিঙ্গা ৬০ ও কচুমুখী ৪০ টাকা কেজি, চায়না গাজর ১৪০, মোটা গোল বেগুন ১২০ ও শসা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০, শিম ১২০-১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০-৭০, চিকন বেগুন ৬০-৭০ টাকা, ঢেড়স ৭০-৮০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ২৮০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারে, ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা কেজি দরে, সোনালি ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে ও লেয়ার ২৯০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে ও খাসির মাংস ১,১৫০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে, রুই মাছ আকারভেদে ৩৫০-৪০০ টাকা, ভেটকি মাছ আকারভেদে ৬০০-৮০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা দরে, ছোট মাছ ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, পাঙাশ মাছ ১৬০-২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সবজি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। নতুন সবজি বাজারে উঠলেই দাম অনেকটা কমে যাবে। মাঝে সবজির দাম ১০-১৫ টাকা কেজিতে কমলেও বৃষ্টি হওয়ায় ফের দাম বেড়েছিল। তবে বাজারে সবজির সরবরাহ কম; কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি।
মিস্ত্রিপাড়া বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী সবুজ মোল্যা বলেন, ‘শীতকালীন কিছু সবজি উঠলেও এখন চড়া দাম। পাইকার বাজারেও দাম অনেক বেশি। এ জন্য অল্প-স্বল্প সবজি উঠাচ্ছি। দাম বেশি হওয়ায় অনেকে কম কম সবজি ক্রয় করছেন।’
নিউমার্কেট বাজারে আসা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সবজি কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর মাছের দামে তো আগুন। সামুদ্রিক মাছের দামও হুহু করে বেড়েছে। এমন চড়া দামে মাছ-সবজি কেনা অনেক কষ্টকর। কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে নেই।’
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, ‘সবজির আমদানি কম থাকলে দাম একটু বেশি থাকে। আর গত কয়েক মাস ধরে তো বৃষ্টির কারণে সবজি নেই বললেই চলে বাজারে। শীতকালে একটু বাজারের পরিবেশ ঠাণ্ডা হতে পারে। তবে আমাদের সবজির দাম বেশি রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলার গ্রামীণ কৃষিজীবনে একসময় ছিল দোন আর সেঁউতির রাজত্ব। বাঁশ, কাঠ, দড়ি ও মাটির কলস বা টিনের পাত্র দিয়ে তৈরি এই সেচযন্ত্রগুলো ছিল কৃষকের অমূল্য সম্পদ। খাল, পুকুর কিংবা নদী থেকে পানি তুলে উঁচু জমিতে ফসল ফলাতে দোন ও সেঁউতির বিকল্প ছিল না। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন সেই ঐতিহ্যবাহী সেচব্যবস্থা হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে।
মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া, বুনাগাতী, গঙ্গারামপুরসহ মাগুরার বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় দোন-সেঁউতি ছাড়া সেচ দেওয়ার কথা ভাবাই যেত না। ভোর কিংবা বিকেলে দল বেঁধে কৃষকরা যেতেন খাল বা নদীর ধারে। কেউ টানতেন সেঁউতি, কেউ চালাতেন দোন। দোলনার মতো দোন নড়াচড়া করত একদিক থেকে অন্যদিকে, আর তার সঙ্গে উঠত স্বচ্ছ পানি- যা ঢালা হতো ফসলি জমিতে।
দোনকল সাধারণত একটি লম্বা বাঁশ বা কাঠের সঙ্গে তৈরি হতো। এক প্রান্তে থাকত মাটির পাত্র বা টিনের কলস, অন্য প্রান্তে ভারসাম্য রাখার জন্য ভারী বস্তু। একজন মানুষ সহজেই এটি চালাতে পারতেন। অন্যদিকে সেঁউতি ছিল কিছুটা বড়, দোলনার মতো কাঠামো, যা দুই বা ততোধিক ব্যক্তি পা দিয়ে চালাতেন।
এখন আর গ্রামের মাঠে এই দৃশ্য দেখা যায় না। বিদ্যুৎচালিত পাম্প আর ডিজেল ইঞ্জিনের আগমনে দোন-সেঁউতি হারিয়েছে জীবনের বাস্তবতা, টিকে আছে শুধু স্মৃতিতে।
শালিখার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক শুকুর বিশ্বাস সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আগেকার দিনে মেশিন তো ছিল না। আমরা দোনে পানি তুলে জমি ভরতাম। সেই সময়ের পরিশ্রম, মিলেমিশে কাজ করার আনন্দ- সব হারিয়ে গেছে। এখন মেশিনে সব হয়, কিন্তু মানুষের মধ্যে সেই একতা নেই।’
বুনাগাতীর দেশমুখপাড়া গ্রামের কৃষক লুৎফর বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের সময়ে খাল থেকে দোনে পানি তুলে পাতোর ভুঁইতে দিতাম। একজনের কাজ শেষ হলে অন্যজনের জমিতে যেতাম। কাজটা কঠিন ছিল, কিন্তু সবাই মিলেমিশে করতাম বলে ক্লান্তি লাগত না। এখন এসব দেখে না নতুন প্রজন্ম।’
শ্রীপুর উপজেলার প্রবীণ কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আগে যখন মোটর বা ডিজেল পাম্প ছিল না, তখন দোন আর সেঁউতি দিয়েই আমরা জমিতে পানি দিতাম। দুজন মিলে দিনভর সেঁউতি টানলে জমি ভিজে যেত, ক্লান্তি থাকত কিন্তু তৃপ্তিও ছিল।
দোন ও সেঁউতি কেবল সেচযন্ত্র নয়- এগুলো ছিল গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য ঐতিহ্য, যা মানুষের পরিশ্রম, সহযোগিতা আর আনন্দের প্রতীক হয়ে বেঁচে ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আজকের তরুণ কৃষকরা হয়তো জানেনই না। তাদের পূর্বপুরুষরা কীভাবে নিখুঁত দক্ষতায় জমিতে পানি দিতেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মাগুরা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন কৃষিযন্ত্র দোন-সেঁউতি। একসময় এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার ছিল; কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কারণে তা এখন বিলুপ্তপ্রায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এখন দোন-সেঁউতির শব্দ আর শোনা যায় না, দেখা যায় না খালের পাড়ে দোলায় দুলতে থাকা বাঁশের দণ্ড। তবু মাটির গন্ধে, পুরোনো কৃষকের কপালের ঘামে, আর তাদের স্মৃতিচারণে এখনো বেঁচে আছে সেই সোনালি দিনের কৃষি ঐতিহ্য।
মাগুরার মাটিতে তাই এখনো লুকিয়ে আছে এক চিরচেনা গল্প- যেখানে প্রযুক্তি জয় করেছে সময়কে; কিন্তু হারিয়ে গেছে গ্রামীণ জীবনের সোনালি এক অধ্যায়।
দোন-সেঁউতির ইতিহাস: দোন-সেঁউতির ইতিহাস মূলত বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষি সেচ পদ্ধতির ইতিহাস। অতীতে, যখন আধুনিক যন্ত্র ছিল না, তখন কৃষক এই হাতে তৈরি পদ্ধতি ব্যবহার করে নদী, খাল বা জলাশয় থেকে জমিতে জলসেচ দিত। এটি একটি সরল; কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি ছিল যেখানে ‘দোন’ নামক বড় আকারের পাত্র ও ‘সেঁউতি’ নামক বিশেষ ধরনের নলের মাধ্যমে জল উত্তোলন করা হতো। প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে এখন এটি প্রায় বিলুপ্ত; কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এটি এখনো কিছু স্মৃতিতে বেঁচে আছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনদুর্ভোগ কমাতে চলাচলের অনুপযোগী খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুর জেলা যুবদলের নেতারা। গত শনিবার ও রোববার শ্রমিক এনে দিনভর এ বেহাল রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। ফরিদপুর শহরের চর টেপাখোলা বেরিবাঁধ থেকে ধলার মোড় পর্যন্ত পাঁকা রাস্তা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে পরিবহন ও মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ওই রাস্তায় পানি জমে থাকত। শুকনো মৌসুমে মানুষ যাতায়াতে ধুলাবালিতে কষ্ট পোহাতে হতো।
এ অবস্থায় ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় এবং ফরিদপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর ও প্রচার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান সেন্টুর অর্থায়নে ওই রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন তারা।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা জানান, রাস্তাটি বড় বড় গর্তে ভরা থাকায় চলাচল ছিল কষ্টসাধ্য। এখন সংস্কার হওয়ায় মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।
যুবদল নেতা সিদ্দিকুর রহমান সেন্টু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী ছিল। শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখে আমরা যুবদলের নেতারা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ অব্যাহত থাকবে।
উত্তর চট্টগ্রামের আতঙ্কের জনপদ হিসাবে খ্যাত রাউজান উপজেলার ধারাবাহিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনার সর্বশেষ শিকার বিএনপির কর্মী ও ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম চৌধুরী। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাউজানে নেতাকেন্দ্রিক রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে রাউজান বিএনপির দুই ‘শিরোমণি’ হিসেবে পরিচিত গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন উভয় গ্রুপই এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, মাটি-বালুর ব্যবসা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে গত বছরের ২৮ আগস্ট ২০২৪ থেকে সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ হয় শতাধিকবার। এসব ঘটনায় ৩৫০ এর বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। মামলা করা হয় অর্ধশতাধিক। তবে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীরা। হত্যাকাণ্ডগুলোতে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে রাউজান থানার পুলিশ। বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সামনে চট্টগ্রামের জেলা পুলিশও যেন অসহায়। তবে সর্বশেষ হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়েছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিবদমান একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আরেকপক্ষে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও মারামারি হলেও হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ওই বছরের ২৮ আগস্ট থেকে। ওই দিন পিটিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল মান্নান নামের একজনকে। ১ সেপ্টেম্বর মো. ইউসুফ মিয়া এবং ২৯ অক্টোবর আজম খান নামের দুজনের লাশ পাওয়া যায়। ১১ নভেম্বর মেলে আবু তাহেরের লাশ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১৫ মার্চ পিটুনি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন কমরউদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ পিটিয়ে হত্যা করা হয় মো. রুবেলকে। ৪ এপ্রিল মা ও দুই ভাইয়ের হাতে খুন হন প্রকৌশলী নূর আলম বকুল। ১৭ এপ্রিল মো. জাফর নামের একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ এপ্রিল রাতে গুলি করে এবং চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আবদুল্লাহ মানিককে। ২২ এপ্রিল দোকানে ডেকে এনে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় ইব্রাহিমকে। গত ৬ জুলাই স্ত্রী-কন্যার সামনে মো. সেলিম উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেছে বোরকা পরা অস্ত্রধারীরা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম হাটহাজারী মডেল থানায় হাজির হয়ে নিহত আবদুল হাকিম চৌধুরীর স্ত্রী তাসফিয়া আলম গত ৯ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের একটি মামলা দায়ের করেন।
হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মনজুর কাদির ভূঁইয়া মামলার রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানে হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যাচ্ছে না। কারণ অনেক হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। এছাড়া পারিবারিক সমস্যায় হত্যাগুলো তাৎক্ষণিক হচ্ছে। অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যতটা সহজ, হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ ততটা সহজ নয়। তবে সব হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের কঠোর অভিযান চলমান আছে।
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর টি-বাঁধে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইমারজেন্সি ওয়ার্ক দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। গত শনিবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেশ্বর গ্রামে তিস্তা নদীর এক নম্বর ওয়ার্ড টি হেডে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইমারজেন্সি ওয়ার্ক দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে ঝুকিপূর্ণ টি-বাঁধে দ্বাড়িয়ে স্থানীয়রা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান, ছমির আলী, আব্দুল হাকিমসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, জনস্বার্থে তিস্তা নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করে টি-বাঁধ ভাঙন প্রতিরোধে চলমান কাজ হঠাৎ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ কালীগঞ্জ বিওপির সুবেদার আনোয়ারুল হক বন্ধ করে দেন। অথচ একই এলাকায় বিজিবির নতুন ক্যাম্প নির্মাণ, এনজিও কর্তৃক ভিটে বাড়ি উঁচুকরণ, কবরস্থান উঁচুকরণসহ ব্যক্তিগত কাজে মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন করা হলেও বিজিবি তখন কিছুই বলেননি!
গত ৫ অক্টোবর উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বন্যায় টি-বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই থেকে এই এলাকার মানুষজন আতঙ্কে নিদ্রাবিহিন জীবন-যাপন করছেন। ঝুকিপূর্ণ বাঁধটির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি আরও ভেঙে এলাকার শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই আমরা দ্রুত সময়ে টি-বাঁধটির অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হস্তক্ষেপের জোড়ালো দাবি জানাচ্ছি। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর প্রতিনিধি সামিউল হাসান শিমুল বলেন, ২৫০ মিটার কাজের মধ্যে ৫০ মিটার কাজ হতে না হতেই বিজিবি কাজটি বন্ধ করে দেন। ১৭৫ থেকে ২৫০ কেজির বস্তাগুলো ভরাট করে স্থানান্তর করা গেলেও ১০ ফিট জিও-টিউব স্থানান্তর করা অসম্ভব। এগুলো কাজের স্থানেই ভরাট করতে হয়। সারাদেশে ইমারজেন্সি ওয়ার্কের কাজ এভাবেই হয়ে আসছে।
৫১-বিজিবির কালীগঞ্জ বিওপি ক্যাম্পের সুবেদার আনোয়ারুল হক বলেন, নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করার কোনো ধরনের নির্দেশনা না থাকায় কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা ডিসি স্যার অথবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, বিজিবি মাটি কাটতে না দেওয়ায় কাজটি বন্ধ রয়েছে। আমাদের যে জিও-টিউবব্যাগ সেগুলো মেশিন দিয়ে কাজের স্থানেই ভরাট করতে হয়। পদ্মা-মেঘনাসহ সারাদেশে নদীভাঙনে ইমারজেন্সি কাজগুলো এভাবেই হয়ে আসছে। মাত্র তিন দিন সময় পেলেই আমাদের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা না হলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি এমন ভয়ংকর হতে পারে যে, ডিমলা সদরেও পানি চলে যেতে পারে বলে জানান তিনি।