দেশের ৮ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হলো- জয়পুরহাট, রাজশাহী, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, শরীয়তপুর ও নাটোর।
আজ বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উপসচিব পদমর্যাদার এসব কর্মকর্তাকে ডিসি নিয়োগ দিয়ে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর মধ্যে পরিকল্পনা বিভাগের উপপ্রধান আফরোজা আকতার চৌধুরীকে জয়পুরহাট, চট্টগ্রাম ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আফিয়া আখতারকে রাজশাহী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে রাজবাড়ী, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. তৌফিকুর রহমানকে কুষ্টিয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রফিকুল ইসলামকে দিনাজপুর, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে শরীয়তপুর এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত উপসচিব আসমা শাহীনকে নাটোরের ডিসি করা হয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ও জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইইনিট। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের উপস্থিতি ছিল কম। বুধবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড়ে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এর আগে এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের ও ৫০ জন গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় ডিএমপি।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকায় আলম পরিবহন নামে একটি বাসে আগুনের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় এক হেলপারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী ও সোনারগাঁও জনপদ, ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, বাড্ডা ও বসুন্ধরার ১০০ ফিট এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যদিও ঢাকার এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন। মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একইভাবে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একইদিন ভোরে মোহাম্মদপুরে সরকারের একজন উপদেষ্টার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের গেটে দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চোরাগুপ্তা মিছিল ও নাশকতার অপচেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে এবং ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
কমিশনার বলেন, ‘এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। টাকার বিনিময়ে তারা মিছিলে অংশ নেয়, তারপর ঢাকার বাইরে চলে যায়।’
রায় ঘোষণার দিন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা: আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হতে পারে। পুলিশ বলছে, ওই দিন আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছে। নাশকতা ঠেকাতে হোটেল, মেস ও গেস্টহাউসে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার আগে পরিচয় যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির সদর দপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদরদপ্তর সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছে যেন বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢোকতে না পারে। এ জন্য গণপরিবহন, রেল ও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী নাশকতার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে মাঠে আছি। কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করে, কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র করে আমরা সাইবার মনিটরিং, টহল এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি। এটি গুজব হোক বা বাস্তব পরিকল্পনা- আমরা প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সতর্ক আছি।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব ও পুলিশ উভয় সূত্রই মনে করছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এখন বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির সক্ষমতা নেই, তবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলটির বিদেশে পালিয়ে থাকা কয়েকজন নেতা অনলাইনে ‘লকডাউন’ ঘিরে নাশকতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের ভেতরে তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হলেও, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে সব দোকান, বাণিজ্য এবং শপিংমল খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কার্যক্রম চালাবে। তবে একই দিনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি মূলত রাজনৈতিক প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও এর আড়ালে থাকতে পারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কৌশল। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের লকডাউন কোনো বাস্তব আন্দোলন নয়, বরং এটা তথ্যযুদ্ধের অংশ। সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে এখন তাদের সংগঠিত কোনো শক্তি নেই।
তবে, গুজব বা অনলাইন প্রচারণা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই গোয়েন্দা নজরদারি ও জনসচেতনতা দুটোই এখন সমান জরুরি বলে মত তাদের।
ফ্যাসিবাদীদের গণপ্রতিরোধের ডাক; কথিত ‘লকডাউন’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এ ধরনের নাশকতা ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ১৩ নভেম্বর রাজপথে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঢাকায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আওয়ামী লীগের নাশকতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
এছাড়া ‘জুলাই ঐক্য’ ১৩ নভেম্বর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। আগের দিন ১২ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে’ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা।
সহিংসতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার পরামর্শ: অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসে আগুন ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করছে। যারা অতীতে অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতিবাজি করেছে, তারাই এখন সে ধরনের নাশকতায় জড়িত হওয়ায় জনমনে তাদের অতীতের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজধানীতে কয়েকটি বাসে আগুন এবং ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। হাজিরা দিতে এসে দিনে-দুপুরে সবার সামনে একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হলেন, যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে। অতীতে সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি করে মানুষকে আতঙ্কিত করে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সহিংস পন্থা বেছে নিয়েছে বলে উদাহরণ আছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত।
এই পরিস্থিতি যত বেশি সৃষ্টি হবে সাধারণ মানুষ তত বেশি আতঙ্কিত থাকবে উল্লেখ করে তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক পরিচয়সহ কোনো ধরনের বিবেচনা গণ্য না করা।
নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রশ্নে সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন জানিয়ে ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাধারণ মানুষকে নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকা এবং কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতার উপস্থিতি লক্ষ্য করলে একত্র হয়ে মোকাবিলা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দায়িত্বশীল ভূমিকা সব প্রকার সংঘাত-সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের ও প্রতিরোধের শক্তিশালী উপায়।
ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মতো অপতৎপরতা রোধে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকায় ১২ প্লাটুন ও আশপাশের জেলায় দুই প্লাটুনসহ মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১৩ নভেম্বর। এই রায়কে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা: ডিএমপি
এদিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হলে তা মেরামতের জন্য মেকানিক আনা হয়। পরবর্তীতে গাড়িটি সারানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেও চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে গাড়ির ইঞ্জিন গরম হয়ে গাড়িটিতে আগুন ধরে গেলে মেকানিক সামান্য আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি অনেকে ভিন্নভাবে প্রচার করছেন, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা।
চরাঞ্চলে এগ্রোইকোলজিক্যাল ফামিং পদ্ধতিতে মিশ্র ও আন্তঃফসল চাষের মাধ্যামে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালুচেইন উপপ্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরে কৃষকের মাঝে উন্নত মানের সোলার প্যানেল ও সেচ মেশিন বিতরণ করেছে একেকে।
বুধবার ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা আমরা কাজ করি- একেকের প্রধান কার্যালয়ে চরাঞ্চলের নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের মাঝে ২০টি সেচ মেশিন ও ৫টি সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে।
একেকে নির্বাহী পরিচালক এম এ জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেচ মেশিন ও সোলার প্যানেল বিতরণ করেন ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহিদুজ্জামান। এ সময় ফরিদপুর বিএসটিআই উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন, একেকের প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর এম এ কুদ্দুস মিয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নেত্রকোনায় জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণপ্রকৌশল দিবস ২০২৫ ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোনায় বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে ‘দক্ষ জনশক্তি, দেশ গঠনের মূল ভিত্ত’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই আয়োজন করে আইডিইবি নেত্রকোনা জেলা শাখা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। আইডিইবি জেলা শাখার সভাপতি এস এম মুসার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাদেক খান এবং ইঞ্জিনিয়ার এ বি মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. রেহান মিয়া রায়হান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল কবীর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নায়েব আলী খান, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবীর, নেত্রকোনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন কুমার পণ্ডিত, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন এবং রুজেল শিক্ষা পল্লী টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল আলম হাদী। সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রস্তুক করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের সাবেক এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, চট্টগ্রামের বন্দর থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া আবদুল জলিল। আশরাফুল আলম বর্তমানে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ এই প্রতিবেদককে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে আসামি আবদুল জলিল (৫০) বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার পৌরসভার তারাবনিয়া ছড়া মসজিদ কলোনি এবং স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ হালিশহর অলি মাঝিরপাড়া উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালের ২২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৪ মে একই ব্যক্তি আবারও একই ওয়ার্ড থেকে জন্ম নিবন্ধন করেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পান।
দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে, আবদুল জলিল নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন- চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে তিনি যে জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়েছে সেখানে স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ আছে- কক্সবাজার জেলার চৌফলদণ্ডী এবং বর্তমান ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর শুলকবহর আব্দুল লতিফ রোড উল্লেখ আছে। তবে জন্মনিবন্ধনের তথ্যানুযায়ী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় আবদুল জলিল ও তার পরিবারের সদস্যদের বসবাসের কোনো তথ্য পায়নি দুদক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনে আবেদন ফরমের ৪৬টি ঘরে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে দুদক। ফরমে মোবাইল নম্বর, ধর্ম, ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার কারণ, শনাক্তকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, তথ্য-সংগ্রহকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, সুপারভাইজারের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সংশ্লিষ্ট ঘরে কোনো তথ্য উল্লেখ না করে ঘরগুলো খালি রাখা হয়।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ফরমের সঙ্গে আবদুল জলিল জমির কাগজ, জাতীয়তা সনদ, শিক্ষা সনদ, বিদ্যুৎ বিলের কপি, প্রত্যয়নপত্র জমা দেননি। শুধু একটি জন্ম নিবন্ধন জমা দিয়ে কোনো জাতীয়তা সনদ ছাড়াই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে যে জন্মসনদ জমা দিয়েছেন, সেটার যাচাইকারীর স্বাক্ষর ও নিবন্ধকের স্বাক্ষর দুদকের ফরেনসিক প্রতিবেদনে সঠিক পাওয়া যায়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও ওঠে এসেছে, আবদুল জলিল ও তার পূর্বপুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিত্বের কোনো বৈধ রেকর্ডপত্র নেই। তার কোনো জাতীয়তা সনদ নেই। তিনি কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডতে জন্মগ্রহণ করেছেন দাবি করলেও এর সপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র নেই। তার বাবা-মায়ের নামে কোনো ভূমির রেকর্ডপত্র নেই। আবার ভূমিহীন সনদও নেই। আবদুল জলিলের দাবি তার বাবা-মা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন। কিন্তু তার কাছে তাদের কোনো মৃত্যুসনদ নেই।
মামলার আরও অভিযোগ করা হয়েছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালে বৈধ কোনো নথিপত্র জমা না দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের তৎকালীন জন্ম নিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমারের সাথে যোগসাজশ করে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর স্বাক্ষর জাল করে জন্ম নিবন্ধন করেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম নির্বাচন কমিশনে কোনো রেকর্ডপত্র জমা না দিয়ে কার্যালয়ের নিজের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ব্যবহার করে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবদুল জলিলের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন। দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের সদরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটের ঘটনায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি, মুল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ও মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পলি খাতুন।
ভুক্তভোগী পলি খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চর হরিপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। বুধবার সদর উপজেলার এস এস রোডস্থ নিউজ হোম অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পলি খাতুন অভিযোগ করে বলেন,গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঘরের ভেতরে আমি একা ছিলাম। সেই সুযোগে একই গ্রামের জাহিদ, খোকন, নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা আমাকে ধারালো ছুরি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তারা ঘরে থাকা ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইলসহ আনুমানিক ১১ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা হুমকি ধামকি দিয়ে যায়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাহিদ ও নাজমুলকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু মামলার মুল আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
পলি খাতুন আরো বলেন, আসামীরা এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে তারা প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও ধামকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কোন সহযোগিতা করছে না।ফলে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ নিয়ে সদর থানার ওসি মোখলেছূর রহমান বলেন, “ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও শনাক্ত করা গেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।”
একটি ছবিকে বুকে চেপে দীর্ঘ ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা মা শামসুন নাহার। প্রতিদিনই মনে পড়ে ছেলের শেষ মুহূর্তের কথা—ঢাকায় যাওয়ার আগে মায়ের হাত থেকে এক গ্লাস পানি আর এক খিলি পান খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম বাচা। এরপর থেকে আর ফেরেননি তিনি।
২০১০ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় সাদা পোশাকধারীরা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ এই বিএনপি নেতা—বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
মা শামসুন নাহার কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “ছেলে আসবে, বুকের ভেতর ঠান্ডা হবে—এই আশাতেই দিন কাটাই। আমার মনে হয়, আমার ছেলে এখনো বেঁচে আছে।
স্ত্রী শামীম আরা সিদ্দিকিও এখনও আশায় বুক বাঁধেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন—আজও জানি না। বর্তমান সরকার যদি সত্যিই মানবিক হয়, ড. ইউনুস স্যার যেন অন্তত আমাদের জানিয়ে দেন।”
পরিবার জানায়, দলীয় কাজে ঢাকা যাওয়ার সময় গাজীপুর চৌরাস্তায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টো বাচার খোঁজ দেওয়ার কথা বলে এক নারী পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বাচার পরিবার ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি’-তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি—সব জায়গায় আবেদন জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ থেকে গুম হওয়া কিছু নেতাকর্মী ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাচার ছোট ভাই হামিদুল হক মন্নান আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু ভাই এখনও ফেরেননি।
গাজীপুর-৬ সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাসহ এলাকাবাসী। বুধবার সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশন রোড এলাকায় ‘সর্বদলীয় নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
একই সময়ে টঙ্গী কলেজগেট, এশিয়া পাম্প, গাজীপুরা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরি করা হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়কে চলাচলকারি যাত্রীরা।’
বিক্ষোভকারীরা জানান, সাম্প্রতিক নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবে গাজীপুর-৬ আসন বিলুপ্তির উদ্যোগে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই আসনটি বাদ দিলে গাজীপুর অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে বিক্ষোভকারীরা “গাজীপুর-৬ আসন চাই, এলাকার মর্যাদা রক্ষা চাই”—এই শ্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন, “গাজীপুর-৬ আসন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি আমাদের এলাকার সম্মান ও উন্নয়নের প্রতীক। এই আসনটি বাদ দিলে আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ ও টায়ারে আগুন দেন টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি ও গাজীপুর ৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন।
অপরদিকে কলেজগেট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী ড. হাফিজুল রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক রাকিবুল উদ্দিন সরকার পাপ্পু , আরিফ হোসেন হাওলাদার, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহবায়ক বশির আহমেদ, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন বাট, টঙ্গী পূর্ব থানা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ফকির শফি মণ্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
সন্ধ্যায় ‘ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সারারাত চলবে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর। বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় একদিনের এ আয়োজন।
খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর তীরে অবস্থিত ফকির শফি মণ্ডলের ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও নানা লোকজ পণ্যের পাশাপাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তরা আশ্রমে সমবেত হন। অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক আধ্যাত্মিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি আসি। মূলত এখানে গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।
বাইরে মেলার দোকানিরা বলেন, দুদিন আগেই দোকান বসিয়েছি। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরাও জানান, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দিত।
এ বিষয়ে সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মণ্ডলের জামাতা মুকুল হোসেন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যার ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, আর বুধবার দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হয়।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, “মেলা এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়— সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, শফি মণ্ডল বাংলাদেশের খ্যাতনামা বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মণ্ডল ছিলেন ইমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী শফি মণ্ডল ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষায় লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে “লালনের দেশে” তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।
হঠাৎ খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার গরু খামারিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চল এলাকার কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন, কারণ সম্প্রতি বন্যা ও নদীর ভাঙ্গনের কারণে ঘাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খামারি ও কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে খড় ও অন্যান্য পশুখাদ্যের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট-বড় খামারি ও গরু পালন করা সাধারণ মানুষ। ফলে খড়ের চাহিদা বাড়ায় ধানের থেকেও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে খড়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার হাবিবুর রহমান জানান, সর্বশেষ জরিপে সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে প্রায় ৯৯ হাজার ৮০০-এর মতো গরু রয়েছে। বর্তমানে আগের থেকে বেশি গরু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো গরু বিভিন্ন চরাঞ্চলে লালন-পালন করা হয়।
গরু পালনকারী ও খামরিরা জানান, প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। খড়ই হলো- সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও অপরিহার্য খাদ্য, বিশেষত দুগ্ধ গাভীর জন্য, কারণ এটি দুধ উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বর্তমানে প্রতি কেজি খড় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক মন (খড়ের বোঝার আকার অনুযায়ী) ভালো মানের খড় কিনতে গেলে ১,১০০-১,২০০ টাকা লাগে। যা বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দামের সমান। আবার প্রতিটি খড়ের আটি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। যেগুলো আগে ছিল ২-৩ টাকা। নতুন খড় বাজারে না আসা পর্যন্ত হয়তো দাম এমনি থাকবে। খড়ের পাশাপাশি খৈল ও ভুষির দামও বেড়েছে, যা আমাদের সীমিত আয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় গরু বিক্রি করে খড় কিনতে হচ্ছে আমাদের। অনেকে আবার খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
পোগলদিঘা ইউনিয়নের চরগাছ বয়ড়া গ্রামের গরু পালনকারী শাহ জালাল পরান বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়া খড়ের পাশাপাশি ভুশি, চালের খুদ, খৈলসহ অন্য গো খাদ্য দিতে হয়। ঘাস চাষ করতেও জায়াগার প্রয়োজন হয়। এখন খড় ও সব পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে’
গরু খামারি নাসির উদ্দিন নাজমুল বলেন, ‘আমার ১০টি গরু ছিল, গরুর খাদ্য ও খড়ের দাম বাড়ার কারণে এবং খড়ের সংকটের কারণে গত সপ্তাহে একটা গরু বিক্রি করে দিয়েছি। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে বাজার থেকে অন্য গরুর জন্য খড় কিনেছি। এখনো খামারে ৯টা গরু আছে। নতুন ধান কাটার পর নতুন খড় পাওয়া গেলে তখন দাম হয়তো অনেকটাই কমে যাবে। বর্তমানে গরু পালন ও খাবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আশপাশের জমিতে ঘাসও নেই। বাধ্য হয়েই বেশি দামে খড় কিনতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘খড় এখন কৃষকের কাছে ধানের মতোই মূল্যবান হয়ে উঠেছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে ধান কাটার কাজ শুরু হলে খড়ের দামও কমে আসবে।’
গাইবান্ধায় তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ৩০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে সাঁতার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সনদ পেয়েছে। বুধবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
ক্ষুদে সাঁতারুদের হাতে এই সনদ তুলে দেন সাঁতার প্রশিক্ষণ-২০২৫ এর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী ও স্কাউটের দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সুধীরচন্দ্র বর্মণ। এর আগে টানা ১০ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয় গত ২ নভেম্বর। প্রশিক্ষণে গাইবান্ধা কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুবিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে গাইবান্ধা কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন, মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন ও জুবিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর অঞ্চলের স্কাউটের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান, ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এহসানুল কবির, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ, জেলা স্কাউটের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সম্পাদক মালেক সরকার, সদর উপজেলা স্কাউট সম্পাদক রেজাউল করিম, কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফরিন খাতুন, সাঁতার প্রশিক্ষক নাছিমা বেগম ইতি, সহযোগী আশিকুর রহমান আশিক, সোহানুর রহমান সোহানসহ অভিভাবকরা।
কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বক্তারা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাফল্যে অভিনন্দন জানান এবং সাঁতারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘সাঁতার শুধু একটি খেলা নয়, এটি জীবন বাঁচানোর দক্ষতা। ছোটবেলা থেকেই এই প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস জোগাবে।’
জেলা শহরের জেলা পরিষদের বড় আয়তনের পুকুরে টানা ৯ দিন এই সাঁতার প্রশিক্ষণ দেন জেলা স্কাউট সভপতি সাইফুল ইসলাম, নারী প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নাছিমা বেগম ইতি ও তাদেরকে সহযোগিতা করেছেন আশিক ও সোহান।
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।
টাঙ্গুয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংগঠনের নেতারা, হাওর পাড়ের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষ মতবিনিময় সভাটি করছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। সভায় উপস্থিত বক্তারা টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেছেন তা হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য এবং নৌকার মাঝি ও কমিউনিটি গার্ডদের হাওরে মাছ, পাখি মারাসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে ছোট ছোট বিলগুলো মাছ আহরণের জন্য খাস কালেকশন বন্ধ করতে হবে। ইলেকট্রনিক শর্ট দিয়ে মাছ মারা বন্ধ করতে হবে। বিষ টোপ দিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। সংরক্ষিত এলাকায় হাস, গরু মহিষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে। পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গাছকাটা বন্ধ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বক্তারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের ৮২গ্রামের ৪১ টি সংগঠনে ১২৫০ জন সদস্য আছে টাঙ্গুয়ার হাওরের রক্ষনাবেক্ষণে কাজ করছে এবং এই হাওরের ৫২ টা বিলের মধ্যে ১২ অভয়ারণ্য।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক, তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনু
তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন, ২ নং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ, টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ করির, এনজিও সংস্থা সিএনআরএস এর সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সাইফুল চৌধুরীর প্রমুখ।
বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ ছায়ায় ঘেরা চা বাগানে বাঁশিতে সুর তোলেন কৃষ্ণ দাস। ৪৫ বছর বয়সী এ তরুণ একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। সুরের জাদুতে তাকে ঘিরে ভিড়। কারও প্রিয় গানের সুর তোলার আবদার। বাঁশির সুরেই জীবন চলে কৃষ্ণ দাসের। মন মাতানো শ্রুতিমধুর সুর-ছন্দে বাজানো বাঁশের বাঁশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্য যন্ত্র। যা রাজদরবার থেকে শুরু করে সর্বজনীন বিনোদনপ্রেমী বাঙালির সুস্থ বিনোদন ধারার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এ বাঁশি দিয়ে মরমি সুরের দোলায় গানের বাণীকে ফুটিয়ে তোলা যায়।
বাঁশিপ্রেমিক কৃষ্ণ দাস এর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রী গোবীন্ধপুর। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন কৃষ্ণ দাস। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি। ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা কৃষ্ণ দাসের।
উপজেলার মাধবপুর লেকের দেখা যায়, বাঁশি দিয়ে মুখে তুলছেন নানা সুর। বাঁশির সুরেলা সুর লেকে আসা পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলে। এ সময় সুরপাগল নানা বয়সি মানুষ হুমড়ি খেয়ে বাঁশির সুর শুনেন।
স্থানীয়রা জানান, শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়ে বাড়ি, লেকের পারে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান কৃষ্ণ দাস। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাতে চোখে পড়ে তাঁকে। গভীর রাতে যখন সে বাঁশি বাজায় তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে হৃদয় অন্যদের উদারহণ। তাকে নিয়ে গর্ব করাই যায়।’
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মহিমা পাল জানান, ‘অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটন এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শুনা যায় হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনার। শখের বসে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো, আর বর্তমানে সেই বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।’
এ বিষয়ে কৃষ্ণ দাস জানান, ‘আমার জন্ম ভারতের কলকাতায়। সেখানেই বাঁশি বাজানো শেখা। মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোটকালে বাংলাদেশে চলে আসি। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানে বসবাস করছি। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভালোই চললে এখন আর চলতে পারিনা। আগে বাশিঁর সুর শোনে মানুষ টাকা দিত, এখন সুর শুনলেও টাকা দেয়না। তারপরও বাঁশি বাজানো আমার বন্ধ হবে না। আত্মার সঙ্গে এই সুর মিশে গেছে, তবে এই বাঁশির সুরে এখন আর জীবন যেন চলছে না।’ তিনি বলেন, মানুষ বাশের বাঁশির সুর শুনতে চায়। তারা মন দিয়ে শোনে এটাই আমার তৃপ্তি। যাওয়ার বেলায় ১০-২০ টাকা দেয়,সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। এক সময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংঙ্কৃতির অনুসঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ। বংশীবাদক কৃষ্ণদাসকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।
নওগাঁর বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে উন্নত জাতের ফলদ, মসলা ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা। বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে অন্তত ২৭ জাতের বিভিন্ন চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। উন্নতমানের চারা সুলভ মূল্যে পাওয়া যাওয়ায় প্রতিদিনই ভিড় করছেন প্রান্তিক কৃষি উদ্যোক্তারা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে রাজস্ব আয়। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত চারা পাচ্ছেন না। উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি চারার উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চল কৃষি উদ্ভাবনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ধান ও সবজির জন্য পরিচিত কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁ এখন আমের জেলা হিসেবেও সুপরিচিত। জেলার বদলগাছী উপজেলার জিধিরপুর গ্রামে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে চার একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার। শুরুতে উৎপাদন কম হলেও গুণগত মান ভালো থাকায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় কেন্দ্রটি। এখানে আম, লিচু, কদবেল, আঠাবিহীন কাঁঠাল, পেয়ারা, করমচাসহ অন্তত ২৭ জাতের চারা পাওয়া যায়। প্রতিটি চারার দাম ২ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকায় উদ্যোক্তারা সহজেই মানসম্মত চারা সংগ্রহ করতে পারছেন।
হর্টিকালচার সেন্টারের চারাগুলো উন্নত জাতের হওয়ায় কৃষকরা পাচ্ছেন উচ্চ ফলন, ভালো পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধী গাছ। এতে উৎপাদন খরচ কমছে, ফলন বাড়ছে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
জেলার মান্দা উপজেলার পাজরভাঙা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা অপূর্ব সাহা বলেন, বাড়ির পাশে ছোট জায়গায় ফলের বাগান করার ইচ্ছে থেকেই বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের ৮৫টি চারা কিনেছি। প্রতিটির দাম ৬০ টাকা, যা বাইরের নার্সারির তুলনায় ৪০-৫০ টাকা কম। দূরত্ব সত্ত্বেও উন্নতমানের চারা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।
উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আজমল হুদা জানান, চাহিদা বাড়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল ও শোভাবর্ধনকারী গাছের ওপর কাজ করা হচ্ছে। উন্নত মাতৃগাছ থেকে কাটিং ও কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়, যা গুণগত মান নিশ্চিত করে।
হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (এলআর) কৃষিবিদ মো. নাছরুল মিল্লাত বলেন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে পতিত ও অনাবাদী জমিকে ফলবাগানের আওতায় আনা হচ্ছে। উন্নত জাতের চারা সুলভ মূল্যে সরবরাহের ফলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন। তবে জমির পরিমাণ কম হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। অন্তত ১০ একর জমি হলে উৎপাদন ও রাজস্ব উভয়ই আরও বৃদ্ধি পেত।”
হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যানুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক লাখ পিস চারা বিক্রির মাধ্যমে ৭ লাখ টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বছরগুলোতে রাজস্ব আয় ছিল—
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯৯ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬২ টাকা।
এছাড়া চারা উৎপাদন ও পরিচর্যার কাজে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা মজুরিতে চারজন শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নাছরুল মিল্লাত আরও জানান, গত তিন বছরে জেলায় ২০টি আনারস, ৫০টি মসলা, ১০০ বস্তা আদা এবং আমসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আমবাগানে আনারস চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।