ঝিনাইদহে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন। আজ বুধবার সকালে শৈলকুপার দুধসর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার পারমথুরাপুর এলাকায় এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন হরিণাকুন্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বাপ্পি শেখ (২৫) ও যশোরের জামাল হোসেন (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, জামালপুর থেকে ট্রাকে নিজের ট্রাক্টর নিয়ে যশোর যাচ্ছিলেন জামাল হোসেন। বুধবার সকালে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুধসর আব্দুস সোবহান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা লরির সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে জামাল হোসেনসহ তিনজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জামালকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বাকিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে, ঝিনাইদহ থেকে আলমসাধু (স্থানীয় যানবাহন) নিয়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলার এ জি বি ইটভাটায় ইট আনতে যাচ্ছিলেন বাপ্পি শেখ। ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডু সড়কের পারমথুরাপুর নামক স্থানে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আলমসাধুটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে গুরুতর আহত হন বাপ্পি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন মারা গেছে। দুইজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন দক্ষিণ হ্নীলা (নীলা) বড় বৌদ্ধ বিহারটি দীর্ঘদিন দখলে থাকার পর অবশেষে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু অংশ উচ্ছেদ করে বিহার কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। রবিবার বিহারটি পরিদর্শন করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, ট্রাস্টের সদস্য মংহ্লাচিং, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মংথেনহ্লা রাখাইন, হ্নীলা বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি ক্যজঅংসহ স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
পরিদর্শন শেষে বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার আগেই একটি গোষ্ঠী এই বিহার দখল করে নেয়। তারা বিহারের জমি দখল করে ঘর তৈরি করে ভাড়া দিত। দীর্ঘ আন্দোলন ও সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় অবশেষে প্রশাসন কিছু অংশ উচ্ছেদ করেছে। আমরা চাই অবশিষ্ট অংশও দ্রুত উদ্ধার হোক, যাতে এখানকার বৌদ্ধরা আবারও স্বাধীনভাবে ধর্মীয় অনুশীলন করতে পারেন।
বিহার কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের প্রয়াত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পরিবার অবৈধভাবে জমি দখল করে রেখেছে। আদালতের রায় বিহারের পক্ষে থাকলেও এতদিন তা কার্যকর হয়নি। সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনের পর সম্প্রতি প্রশাসন আংশিক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর পর ঐতিহ্যবাহী এই বৌদ্ধ বিহারের জমি উদ্ধারের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। একসময় হ্নীলা ইউনিয়নের ক্যাংপাড়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল এই বড় ক্যাং বা বিহার। কিন্তু গত ১৪ বছরে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে বিহার এলাকা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ সময় বিহারের পাশের শ্মশান পাহাড় কেটে নিচু জায়গা ভরাট করে সেখানে মহিলা উদ্যোক্তা বাজার, আইওএম অফিস ও বাঁশের গুদাম নির্মাণ করা হয়। বিহারের ভিক্ষু ও উপাসকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, উপজেলা প্রশাসন যদি আরও আন্তরিক হয়, তাহলে দ্রুতই সম্পূর্ণ বিহার এলাকা দখলমুক্ত করে পুনরায় ধর্মীয় কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ এম এ রউফ তার কার্যালয়ে নির্বাচিত সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। পরে তিনি নবনির্বাচিত সদস্যদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
ঘোষিত কমিটিতে ভিপি (সহসভাপতি) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তিথী, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) জয়ন্তী মণ্ডল, এজিএস (সহকারী সাধারণ সম্পাদক) আয়েশা সিদ্দিকা ঐশী, ক্রীড়া সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৌমিতা এবং মিলনায়তন সম্পাদক সোনিয়া। পদাধিকারবলে ছাত্রী সংসদের সভাপতি কলেজের অধ্যক্ষ এম এ রউফ।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ বছর ধরে সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজে চালু রয়েছে এই ব্যতিক্রমী মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদ। রাজনীতি বা প্রভাব নয়, এখানে মেধাই নেতৃত্ব নির্ধারণ করে। সংসদের ৬টি পদে চার ধাপে নির্বাচন হয়। প্রথম ধাপে বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ৩টি পদে নির্বাচন হয়। বাকি তিন ধাপে ভিপি, জিএস ও এজিএস নির্বাচিত হন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর অর্জনের মাধ্যমে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মান শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ায় নুসরাত জাহান তিথী ভিপি নির্বাচিত হন। একইভাবে স্নাতক (পাস) প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় জয়ন্তী মণ্ডল জিএস এবং উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় আয়েশা সিদ্দিকা ঐশী এজিএস নির্বাচিত হন।
এছাড়া কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ক্রীড়ার ক্ষেত্রে সেরা হওয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌস ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সেরা হওয়ায় মৌমিতা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং আন্তঃক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ায় সোনিয়া মিলনায়তন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
নবনির্বাচিত ভিপি নুসরাত জাহান তিথী বলেন, পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ভিপি হওয়ার আনন্দ অন্যরকম। আমরা সবাই মিলে কলেজের ভাবমূর্তি রক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সচেতনতায় কাজ করতে চাই।
কলেজের অধ্যক্ষ ও ছাত্রী সংসদের সভাপতি এম এ রউফ বলেন, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব বা বাহুবলের স্থান নেই। মেধার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন আমাদের গর্বের বিষয়। এ ধরনের মেধাভিত্তিক ছাত্রী সংসদ দেশের অন্য কোনো কলেজে নেই বললেই চলে।
দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) আবারও ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাটি বন্ধ থাকায় দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকার সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। রবিবার রাত সাড়ে ৩টা থেকে সিইউএফএলে ইউরিয়া উৎপাদন পুনরায় শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, গত ১১ এপ্রিল থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেডিসিএল) কারখানাটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত ১৯ অক্টোবর থেকে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রবিবার রাত থেকে উৎপাদন শুরু হয়।
গ্যাসনির্ভর এই কারখানায় পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাস–সংকট ও যান্ত্রিক জটিলতার কারণে গত অর্থবছরে সিইউএফএল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানাগুলো মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করা হয়। বাকি ১৬ লাখ মেট্রিক টন সার উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয় সরকারকে।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় এই সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারখানার প্রাথমিক উৎপাদনক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, যা বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এছাড়া বার্ষিক প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত ১৯ অক্টোবর থেকে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেছে। এখন পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চলছে। গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকলে এবং যান্ত্রিক ত্রুটি না দেখা দিলে এ ধারা বজায় থাকবে।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামানকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অফিসার্স ক্লাবের সহসভাপতি ও উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুল হাসানের সঞ্চালনায় বিদায়ী ইউএনওর আটোয়ারীতে ৬ মাস কর্মকালের স্মৃতিচারণসহ নিজস্ব অনুভুতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন, অফিসার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. হুমায়ুন কবীর, আটোয়ারী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম সরকার (জুয়েল), অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. ফয়সাল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাসুদ হাসান, উপজেলা সমবায় অফিসার মো. ফারুক হোসেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা করুনা কান্ত রায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ.দা.) জিয়াউর রহমান, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইউসুফ আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান একজন সৎ ও দক্ষ কর্মী, তিনি কাজের প্রতি খুবই আন্তরিক। তিনি শুধু জনপ্রতিনিধিদের সাথে নয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আন্তরিকভাবে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সেবা দিচ্ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিদায়ী ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে আটোয়ারীর মানুষ অত্যান্ত সহজ সরল। এখানকার মানুষ খুবই আন্তরিক। ভালো থাকুক আটোয়ারী উপজেলার প্রতিটি মানুষ। আটোয়ারীতে আমার সংক্ষিপ্ত কর্মকালে সেরা ভালোবাসা পেয়েছি সবার কাছ থেকে। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সবাই যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সে কারণে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। পরে অফিসার্স ক্লাব ও ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে তাকে সম্মাননা ক্রেস্টসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিদায় অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ৩ নদীতে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ও অবৈধ চায়না দোয়ারি জাল দিয়ে মাছ নিধন। এ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীগুলোতে অবাধে দিনে-রাত চলছে চায়না দোয়ারি জালের ব্যবহার। এছাড়াও নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে ইলেক্ট্রিক বা কারেন্ট শর্ক দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট-বড় মাছ। ফলে হুমকির মুখে হারাতে বসেছে নদীর ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র। দ্রুত নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এসকল অবৈধ ফাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সচেতন মহলের।
জানা যায়, এ উপজেলার মধ্য দিয়ে বহমান যমুনা, ঝিনাই ও সুবর্ণখালী নদীগুলোতে অবৈধ ও নিষিদ্ধ চায়না দোয়ারিসহ বিভিন্ন জালদিয়ে অবাদে চলছে মাছ নিধন। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এমন অবৈধ উপায়ে মাছ নিধন করলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের তদারকি ও সচেতনতার অভাবে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিদিন হাজার হাজার চায়না বিভিন্ন জালের ফাঁদ পেতে ধরছে সকল প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। এসব জালের প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ফুট হয়ে থাকে। এদিকে নদীগুলোতে রাতের আঁধারে ইলেক্ট্রিক শর্ক দিয়ে ধরা হচ্ছে মাছ। নৌকায় করে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো ইলেক্ট্রিক শকদেয়া বড় বড় ব্যাটারি ও লোহার রড নিয়ে মাঝ নদীতে মাছ ধরতে চলে যায় অসাধু মাছ শিকারীরা। নদীর তীরগুলোতে গিয়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে নদীর বুক জুড়ে হাজার হাজার বাঁশের খুঁটি। প্রতিটা খুঁটি যেন একেকটা চায়না জালের ফাঁদ। যার কবলে পড়ে নদী মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র। আবার এসব চায়না জালে মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া, শামুক, উপকারী পোকাসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণি আটকা পড়ছে। ফলে নদীতে মাছ শূন্যতার পাশাপাশি জলজ প্রাণিও শূন্য হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলে ও সকালে এসব চায়না জাল নদীর পানিতে খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে এসব জাল তুলে মাছ নিয়ে আবার সেগুলো নদীর পাড়েই রোদে শুকাতে দেওয়া হয়।
একাধিক স্থানীয়রা জানান, নদীতে নতুন পানির আগমনের সাথে সাথেই পানিতে জন্ম নেয় মাছের রেণু। একটি চক্র নদী থেকে এসব রেনু নিধন করে তা বাজারে বিক্রি করছে। এমনকি মাছের ছোট ছোট বাচ্চা তুলেও বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছে এই চক্র। রাতদিন নদীতে নৌকা ও রেনু নিধনের জাল নিয়ে অবাধে চলাফেরা করছে।
স্থানীয়দের মতে, এই চায়না বিভিন্ন জাল নিধন না করা হলে ভবিষ্যতে নদীতে পানি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তিনটি নদীতে চায়না জালের ফাঁদ পেতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অবাধে মাছ নিধন করা হচ্ছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেবযানী ভৌমিক বলেন, চায়না জাল গুলো খুবই মারাত্মক একটি জাল। এটাতে ছোট বড় মাছ ও রেনু পর্যন্ত ধরা পড়ে। যা নদীগুলোর জন্য হুমকি। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি এইসব অবৈধ চায়না জাল বন্ধ করতে। ইতোমধ্যে আমরা নদীর একাধিক স্থানে ও জালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও মোবাইল কোর্ডও পরিচালনা করেছি। অনেক জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে এক দুর্নীতিগ্রস্ত ইউএনও পদায়ন ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতৃবৃন্দ, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
ঘন্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝিনাইদহ জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক আবু হুরাইরা, সদস্য সচিব সাইদুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি এম আব্দুর রহমান, কেসি কলেজ শিবিরের সভাপতি মাহবুবুর রহমানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংককে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে বদলি করা হয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়ে বক্তারা বলেন, স্বৈরাচারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কোনো কর্মকর্তাকে ঝিনাইদহে যোগদান করতে দেওয়া হবে না। এছাড়াও সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবী জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার। ইউটিউবে আদা চাষের পদ্ধতি দেখে আদা চাষের সম্পর্কে জানেন জাসমা আক্তার। বস্তায় আদা চাষ একটি নতুন ধারণা হলেও লাভজনক হওয়ায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে।
জাসমা আক্তার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মাহবুবুল আজমের স্ত্রী। এর আগে জাসমা ইউটিউব দেখে আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে পরামর্শ নেন জাসমা। পরামর্শ শেষে বাড়ির আঙিনায় ফাঁকা ও পতিত জমিতে শুরু করেন আদা চাষ। প্রত্যেক বস্তায় তিনটি করে আদার চারা রোপন করে সারিবদ্ধ ভাবে রেখেছেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে ফলন বেশি হওয়ায় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। এদিকে লাভজনক হওয়ায় ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিতে আদা চাষে কৃষকদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় কৃষক এবং কৃষি বিভাগ বলছেন, এই অঞ্চলে এই প্রথম আদা চাষ হচ্ছে। উজানচর ইউনিয়নের জাসমা আক্তারের হাত ধরে আদা চাষের সূচনা হয়। জাসমা আক্তার ১০ শতক মাটিতে ৩০০ বস্তায় আদা চাষ করেন। তিনি প্রতিটি বস্তায় দুই কেজি করে আদার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। কয়েক বছর আগ থেকে তিনি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় আদা চাষ শুরু করেন তিনি। আর বস্তায় আদা চাষে সফল হলে অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করার ইচ্ছা নারী উদ্যোক্তা জাসমা আক্তারের। আর কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ীর উঠান কিংবা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। অল্প খরচ আর অধিক লাভজনক হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবেও বস্তায় আদা চাষ করছেন চাষিরা। এ বছরে যেমন গাছ ভালো হয়েছে তেমন আদাও ভালো হবার স্বপ্ন দেখবে বলে আশাবাদি জাসমা আক্তারের।
সরকারের সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিক ভাবে আরো বড় পরিসরে আদা চাষ করতে চান জানিয়ে উদ্যোক্তা জাসমা আক্তার বলেন, আমি ইউটিউবে আদা চাষ দেখি। এটা দেখার পর আমার মাথায় আসলো আমিও আদা চাষ করি। সামনে বাণ্যিজিক ভাবে করতে চাই। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে আরো বড় পরিসরে বাণিজ্যিক ভাবে আরো আদা চাষ করতে পারব। আমার আশে পাশে যে সকল নারীরা আছে তারা আমাকে দেখে উদ্ধুদ্ধ হোক তাদের সবসময়ই আমি পাশে থাকব। নারীরা ঘরে বসে না থেকে এগিয়ে আসুক বাড়ির আঙিনায় যে সমস্ত জায়গা ফাঁকা বা পড়ে আছে, তাতে যদি আদা চাষ করা যায় তাদের পরিবারের জন্য ভালো হবে, নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বাণ্যিজিকভাবে বিক্রি করতে পারবে। সরকার আমাকে যদি সহযোগিতা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমি নারী হয়ে যে আদা চাষ পদ্ধতি করেছি এটা প্রথম।
ছালমা নামের স্থানীয় এক নারী বলেন, সে অনেক পরিশ্রম করে৷ ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির পাশাপাশি সে নতুনভাবে বস্তায় আদা চাষ করছে। এই প্রথম আমি দেখলাম বস্তায় আদা চাষ করা যায়।
মোহাম্মাদ নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের এই জায়গায় জাসমা যে বস্তায় আদা চাষ করতেছে, এরকম এই পর্যন্ত আদা চাষ দেখি নাই আমরা। জাসমার আদা গাছগুলো অনেক ভালো হয়েছে। ফলন ও ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, কৃষিকাজে অধিকাংশ স্থানে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি করে গোয়ালন্দ উপজেলায় এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে। জাসমা নামের একজন নারী উদ্যোক্তা তার বাড়িতে ফাঁকা বা পতিত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছে। তার গাছগুলোও অনেক ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে এবং আমরা নিয়মিত তার সাথে যোগাযোগ রাখছি, সঠিক পরামর্শ দিয়ে তার পাশে আছি। তিনি আরো বলেন, জাসমা বস্তায় আদা চাষের পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সে একদিন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, বস্তায় আদা চাষের আগে জাসমা আক্তার ২০২৪ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন শুরু করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের আয়োজনে ক্লাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা প্রতিবেদক নির্বাচিত হয়েছেন দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা২৪.কম এর স্টাফ রিপোর্টার রাকিবুল হাসান রোকেল।
শনিবার (০১ নভেম্বর) রাতে স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
ক্লাবের সভাপতি ও মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম।
বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ উপলক্ষ্যে চারটি ক্যাটাগরীতে চারজন সাংবাদিককে সেরা প্রতিবেদকের সম্মাননা প্রদান করা হয়। জুড়ি বোর্ডের চারজন বিচারকের সংবাদ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মাল্টিমিডিয়া থেকে দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলা'র কিশোরগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার রাকিবুল হাসান রোকেল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে একুশে টেলিভেশনের জেলা প্রতিনিধি রুমন চক্রবর্তী, প্রিন্ট মিডিয়া থেকে আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাজন আহমেদ পাপন ও অনলাইন মিডিয়া থেকে খবরের কাগজের জেলা প্রতিনিধি তাসলিমা আক্তার মিতুকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নয়াদিগন্ত পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. আল-আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল আগত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর শুরু হয় বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ সম্মাননা প্রদান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, ইসলামী আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আলমগীর হোসাইন তালুকদার, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ ও সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন বিভাগ) ডা. মো. একরাম আহসান জুয়েল, হয়বতনগর আনওয়ারুল উলুম (এ ইউ) কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজিজুল হক, পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মুআ লতিফ, কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসিম খানসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, জেলা পর্যায়ে এমন আয়োজন সাংবাদিকদের কাজের প্রতি দায়িত্ব ও স্বচ্ছতা বাড়িয়ে দেবে। তাই এমন আয়োজন বছরে অনন্ত একবার হলেও প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণ ঢুকতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক সংকট।
রোববার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় প্রতিশ্রুত ত্রাণসামগ্রীর খুব সামান্য অংশই প্রবেশ করতে দিচ্ছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। যা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের মাত্র ২৪ শতাংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বাধা দিচ্ছে। এর ফলে ২৪ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সংকট ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আর এর দায় সম্পূর্ণ ইসরায়েলের।”
এমন অবস্থায় “কোনও শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই” ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মূলত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ত্রাণ প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে গাজার অধিকাংশ মানুষ এখনো খাবার, পানি, ওষুধসহ মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র সংকটে রয়েছেন।
এছাড়া দুই বছরের লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় বহু পরিবার এখনো আশ্রয়হীন। ঘরবাড়ি ও পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক গত বৃহস্পতিবার বলেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “এখন কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তঘেঁষা ফিলাডেলফি করিডর হয়ে উপকূলীয় সংকীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে যেতে হচ্ছে, যা মারাত্মকভাবে যানজটে আক্রান্ত।”
তিনি আরো জানান, ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারে অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট চালুর প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবারও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় বিমান, কামান ও ট্যাংকের গোলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্বদিকে কয়েকটি আবাসিক ভবনও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, খান ইউনিসে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “ইসরায়েলি ড্রোন আর ভারী গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আকাশে ড্রোনের অব্যাহত উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং ভারত সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মার চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসলেও প্রশাসন কোন করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু কাকন কিংবা মণ্ডল বাহিনী নয়; সাইদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনীও সক্রিয় এই চরাঞ্চলে।
রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাহিনী পদ্মার এমন দুর্গম চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ একেবারে সীমিত। কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরাঞ্চলজুড়ে তাদের বিস্তার।
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় ‘কাকন বাহিনীর’ প্রধান কাকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট শতাধিক সদস্য নিয়ে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মা চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারত না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন খুন হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখন চরের মাটিতে পা দিতে গা ছমছম করত। দুই বাহিনীর নাম ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁদ বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন।
সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।
১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। বর্তমানে তাঁর বাহিনীতে প্রায় ৪০ জন সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দলের সদস্য ২০ জনের বেশি। হত্যাকাণ্ডের পর টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর নামে মামলা হয়, যদিও আটকের পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামের এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টির বেশি মামলা রয়েছে।
দৌলতপুর থানায় আলোচনায় থাকা আরেক বাহিনী ‘রাখি বাহিনী’র প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়া রয়েছে কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র দেশে ঢোকার তথ্য রয়েছে। জানা গেছে, তিন চালানে মোট প্রায় ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে দেশে।
দুর্গম চরে অভিযান
বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ ১২০ জন সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ এই অভিযানে চরবাসী খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তাঁরা আশা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
এবিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’
আলু উৎপাদন দেশের দ্বিতীয় জেলা জয়পুরহাট। গত বছর আলু চাষ করে এখনো জেলার হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। জেলার ২১টি হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। এতে ব্যাপক লোকসানে মুখে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা।
কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে। যেসব জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এছাড়াও রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা শুরু হবে। এ অসময়ে বৃষ্টি হয়ে এখন কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে আগাম জাতের আলু ৭৭৭ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। আজ রোববার পর্যন্ত জেলার ২১টি হিমাগারে আলু মজুত রয়েছে ৮৪ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে জমিতেই জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব ক্ষেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওযায় এবছর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি হওযায় আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। অনাবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে আরও একমাস আলু রোপণে দেরি হবে।
অন্যদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে ভাসছে ধানের গাছ। আবার শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও দেখা lদিয়েছে শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করে এক সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে লাগাতার বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকায় গাছ ঠিক মতো উঠতে পারে নাও পারে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, সবেমাত্র এক সপ্তাহ আগে এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছি। এরই মধ্যে কয়েকদিন থেকে বৃষ্টি। এখনও মেঘে ঢেকে আছে। ঝিরঝির করে থেমে থেমে বৃষ্টিও পড়ছে। মাটির নিচে রোপণ করা আলুর বীজ একটু পানি পেলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ক্ষেতের অধিকাংশ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফসলের এই ক্ষতিতে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
ক্ষেতলাল উপজেলার কুসুমশহর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাইতাছে দেখে আমিও দুই বিঘা জমিতে কয়েক দিন আগে লাগালাম। কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আলুর জমিতে পানি জমে গেছে। এতে করে রোপণকৃত বীজ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
কালাই উপজেলার পুনট এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। এই ধান আর ঘরে আসবে না। এমনিতেই গত বছর আলু চাষ করে ব্যাপক লোকসান হয়েছে।
কালাই উপজেলার ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। আবার এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই থাকে। এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বাড়ে আর ট্যাক্স বাড়ে এই দুর্ভাগা কৃষকের ওপর। কারণ কৃষকরা আন্দোলন করতে পারে না।
ক্ষেতলাল উপজেলার তেলাল গ্রামের খায়রুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজ বলেন, কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কাঁচা মরিচ, টমেটো বেগুন, করলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজির গাছের গোড়ায় পচন দেখা দিয়েছে ও ফুল ফল ঝরে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষকরা খরচের টাকাও তুলতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাকসবজি ২৭ হেক্টর জমিতে, আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর জমিতে ও আগাম জাতের আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে কয়েকদিনের অসময়ের বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো ক্ষতির
হিসাব নিরূপণ করা যায়নি। ঝড় বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কারোর কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পরিশ্রমেই জীবন যাপন। দু’পা হারিয়েও হার মানেননি মেহেরপুরের গাংনীর ঠান্ডু মিয়া। জীবনের সঙ্গে এক অনন্য সংগ্রামের নাম—ঠান্ডু মিয়া।
গাংনী উপজেলার জুগিরগোফা স্কুলপাড়া এলাকার মৃত ইসমাইলের ছেলে ঠান্ডু মিয়া। ২০০০ সালে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হারান তার ডান পা। তারপরও থামেননি, জীবন চলেছে কোনোভাবে।
এক বছর তার চিকিৎসা চলছিল। তারপর আসে করোনা। চিকিৎসার অভাবে আক্রান্ত হয় অন্য পাটিও। অবশেষে ২০২৪ সালে সেটিও কেটে ফেলতে হয়। এরপর একজন পরিশ্রমী কৃষক, হঠাৎই হয়ে পড়েন কর্মহীন ও অসহায়। নিজ হাতে তৈরি করেছেন বিশেষ ভ্যান। এই ভ্যানই এখন তার জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা।
প্রতিদিন সকালে বের হন বাদাম নিয়ে— গাংনী, বামন্দী, আলমডাঙ্গা কিংবা হাটবোয়ালিয়া— যেখানেই যান, সঙ্গে থাকে জীবনের আশ্চর্য এক উদ্যম। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে সাত আট শ টাকা বিক্রি করে আড়াই থেকে তিন শত টাকার মতো লাভ হয়। সেই টাকায় চলে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন।
ঠান্ডু মিয়া বলেন, “দুই পা নাই... কিন্তু আমি কারো কাছে হাত পাততে চাই না। আমি বাদাম বিক্রি করি। আল্লাহ যা দেন তাই খাই।”
ঠান্ডু মিয়ার স্ত্রী শাহানারা খাতুন বলেন, আমাদের এক সময় ভাল অবস্থা ছিল। চাষাবাদ ও মুনিশপাট খাইটি ভালই চলতো। এক্সিডেন্টে আমার স্বামীর পা হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরেও থেমে নেই আমাদের জীবন। বাদাম বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়েই সংসার চলে। “আমি প্রতিদিন বাদাম ভেজে রেডি করে দিই। যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে।”
স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, “মানুষটার মনটা অনেক বড়। ও কারো কাছে চায় না, নিজের পরিশ্রমে খায়। আমরা চেষ্টা করি বাদাম কিনে একটু সাহায্য করতে।” দু’পা নেই—তবুও তিনি থেমে যাননি। মানুষের অঙ্গ হারালেও, হারায় না মনোবল। ঠান্ডু মিয়া যেন প্রমাণ।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানার উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলায় বসবাসরত ২৮টি পুঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক গঠনমূলক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর মিশন স্কুলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক। এ সময় তিনি জেলা পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাহাড়ি এলাকায় অপরাধ প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, কুলাউড়া থানা পুলিশ সবসময় আপনাদের পাশে আছে। বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে পুলিশ ও জনগণের যৌথ সহযোগিতাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
সভায় পুঞ্জিতে বসবাসরত উপজাতি প্রতিনিধিরা সম্প্রদায়ের চলমান সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও পার্শ্ববর্তী বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও আলোচনা হয়।
এ সময় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকঞ্জি, এসআই মুস্তাফিজসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।