শরীয়তপুরের জাজিরা পদ্মা সেতু টোল প্লাজা এলাকায় দ্রুতগতির দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে পদ্মা সেতু টোলপ্লাজা এলাকার দক্ষিণ থানার পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- নাবিল ফরাজী (১৮), পিতা রুবেল ফরাজী, সায়েম (১৯) পিতা এস্কেন্দার আলী মাদবর, আরমান (১৮) পিতা দাদন ঢালী ও খিদির (২০) পিতা-আলিম মাতবর।
নিহতদের সবার বাড়ি জেলার পদ্মা সেতু দক্ষিণ এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টোলপ্লাজা এলাকায় থানার সামনে দিয়ে দুটি মোটর সাইকেল খুব দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। থানা রোডে প্রবেশ করলে ওই দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় মোটরসাইকেলে থাকা চালকসহ ৪ আরোহী ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে।
শরীয়তপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই চারজনই মারা যান।
উদ্ধারকারীরা জানান, তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাকি একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। নিহতরা সবাই উঠতি বয়সি, তারা বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আকরাম হোসেন জানান, পদ্মা সেতু টোলপ্লাজা এলাকার দক্ষিণ থানার পাশে বেপরোয়া দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় মোটরসাইকেলে থাকা ৪ আরোহীই নিহত হয়।
জামদানি ভিলেজ স্থাপনের মাধ্যমে আদর্শ গবেষণা ও নকশা উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি করা হবে-এমনটিই কথা ছিল। একই সঙ্গে থাকবে প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া জামদানি ভিলেজ স্থাপন প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। অথচ কাজ হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। আর মাত্র সাত মাসে প্রকল্প ঠিক কতটুকু আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে সন্দিহান খোদ কর্মকর্তা ও জামদানি শিল্পীরা।
জামদানি ভিলেজটি স্থাপন করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগন্তের তারাব পৌরসভার শীতলক্ষ্যা নদীর পার ঘেঁষে। বাওয়ানী জুট মিলের সরকারি জায়গা এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। সীমানা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এখন তরুণরা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক।
নানা জটিলতায় থমকে গেল জামদানি ভিলেজ প্রকল্প। দুই বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে সিকি ভাগ, বাকি কাজ দ্রুত এগোবে তারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্পের উন্নায়নে ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিলেজ স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন নিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের ঐতিহ্যের বাহক এই জামদানিশিল্পের উন্নয়নে এর আগে ১৯৯২ সালে রূপগঞ্জে জামদানি পল্লী প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। জামদানিশিল্প ও তাঁতিদের রক্ষা করাই ছিল প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রতিটি এক হাজার ৫০০ বর্গফুটবিশিষ্ট ৪২০টি ১টি তাতিদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। প্রতি প্লটের এককালীন মূল্য ধার্য করা হয়েছিল এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কিন্তু এই বরাদ্দেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূল তাঁতিরা প্লট থেকে বঞ্চিত হন। প্লট বাগিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা।
প্রকল্পের আওতায় ১৯১৮ সালে প্রশাসনিক ভবন, বিপণনকেন্দ্র, হাটবাজারের জন্য তিনটি শেড, পাম্প হাটিস, অভ্যান্তরীণ সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ সাম্পূর্ন করা হয় এবং প্লটগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হয়। বিসিক জামদানি তাঁতিদের ২০০০ সালে ৪০৭টি প্লট বরাদ্দ দেয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র পাচটি রেসিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে।
তাঁতিরা বলেন, এই শিল্প বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক পরিচয় হিসেবে ইউনেসকোর অপরিমেয় সংস্কৃতিক ঐতিহ্য (২০১৩) এবং ভৌগোলিক নির্দেশক (জিয়াই) পণ্য (২০১৬) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সাফল্য সত্বেও জামদানিশিল্প এবং এর কারিগররা বর্তমানে টিকে থাকার ঝুঁকিতে রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলে, ঐ শিল্পকে টেকসই রূপ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের গৃহীত ‘জামদানি ভিলেজ স্থাপন বাস্তবায়ন অগ্রগতি ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত মাত্র ১২ শতাংশ, যা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং তাঁতবস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
গবেষণা ও নকশা উন্নয়ন কেন্দ্র তৈরি না হওয়ায় কারিগররা ঐতিহ্যবাহী নকশা পুনরুদ্ধারে ডিজাইনারদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র তৈরি না হওয়ায় তারা নকল পণ্যের তল্লাসন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অনুপস্থিত থাকছে। এই ধীরগতি প্রমাণ করে, সরকার দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কারিগরদের জরুরি আর্থিক নিরাপত্তা উপেক্ষিত হচ্ছে। যদি এই স্থবিরতা কাটানো না যায়, তবে প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই ঐতিহ্যবাহী কারিগর সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। 'জামদানি ভিলেজ স্থাপন' প্রকল্পের ব্যস্তবায়নে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, তা অবিলম্বে দূর করা প্রয়োজন। প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং কামিটি গঠন এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা উচিত। জুন ২০২৭-এর মধ্যে প্রদর্শনী বা বিক্রয়কেন্দ্র এবং আদর্শ জামদানি গবেষণা ও নকশা উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করা অত্যাবশ্যক।
প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘প্রকল্পটির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটি বাওয়ানী জুট মিলের জায়গা। এটা জামদানি ভিলেজের জন্য কেনা হয়েছে। এ পর্যন্ত এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায় হায়াছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের বাধা ছিল। তরুণরা এটাকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তবে আশা করি, ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) স্বাগত মিছিল করেছে ছাত্রদল। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মিছিলটি ঢাবির টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফের টিএসসিতে এসে শেষ হয়। এরপর ঢাবির রোকেয়া হলের পার্শ্ববর্তী যাত্রী ছাউনিতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
এ সময় ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ‘মা মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে; তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে; তিস্তা নদী বহমান, তারেক রহমান; তারেক রহমান আসছে, বাংলাদেশ হাসছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমান বিগত ১৫ বছর বিদেশে বসে এ দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের অধীর আগ্রহের অবসান ঘটিয়ে তিনি অচিরেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন। আমরা তার এ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে একটি সাম্য, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমি ছাত্রদলের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগাকাল ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি তার এ আগমনে এ দেশে গণতন্ত্রের নতুন দ্বার খুলবে। দেশ আবার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেছেন, পারস্পরিক নিবিড় সমন্বয় ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মামলা দ্রুত ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধান হলে, এর সুফল নগরবাসী পাবে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ১,৩১৯টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ডিএসসিসি তথা জনস্বার্থ রক্ষায় প্রথম প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গে সমন্বয় সভা হওয়ার কথা জানান তিনি।
জানা গেছে, উচ্চ আদালতে ৯৫৪টি ও নিম্ন আদালতে ৩৬৫টিসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্পর্কিত মোট ১,৩১৯টি মামলা রয়েছে।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চলমান মামলায় নিয়োজিত আইনজীবী মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া চলমান মামলাগুলো জনস্বার্থ রক্ষা করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। সুষ্ঠুভাবে মামলার তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। এ সময় বিভিন্ন মার্কেট নির্মাণ-সংক্রান্ত চলমান মামলাসহ জনগুরত্বপূর্ণ মামলাগুলো আগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, ‘বিদ্যমান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ডিএসসিসি তথা জনস্বার্থ রক্ষায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞ প্যানেলভুক্ত আইনজীবীদেরর সঙ্গে সমন্বয় সভা হচ্ছে।
সমন্বয় সভার আয়োজন করায় প্যানেলভুক্ত আইনজীবীরা ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী এবং বিভাগীয় প্রধানসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘হেলথ অ্যান্ড মরবিডিটি স্ট্যাটাস সার্ভে-২০২৫’–এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে শীর্ষ ১০টি রোগের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিএমএ ভবনে ‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: অগ্রগতি, বাধা এবং করণীয়’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এই আহ্বান জানানো হয়।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৮ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে অসংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও, এই খাতে বাজেট বরাদ্দ খুবই সামান্য।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের মোট অর্থায়নের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম ব্যয় হয় অসংক্রামক রোগ-সংক্রান্ত বাজেটে। এই সীমিত বরাদ্দ কার্যকরভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, বরাদ্দকৃত অর্থও যথাযথভাবে ব্যবহার হয় না বলে জানানো হয় কর্মশালায়।
বক্তারা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করা গেলে দেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। একই সঙ্গে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যয়ও হ্রাস পাবে। উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয় কর্মশালায়।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ডা. গীতা রানী দেবী বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে আমরা সকল কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারবে।’
এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) মো. রিয়াদ আরেফিন বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা আমাদের অন্যতম প্রধান একটি অগ্রাধিকার। আশা করি দ্রুতই আমরা সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে।’
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের হেড অব নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জহিরুল আলম; জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার প্রোগ্রাম অফিসার সামিহা বিনতে কামাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডিকলোনাইজেশন অ্যান্ড মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনটির আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস)।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কারাসের চেয়ারম্যান ও ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রুনাই দারুসসালামের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইফতেখার ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন; তিনি ছিলেন জনতার বিবেক, নৈতিকতার প্রতীক এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দূরদৃষ্টি রাষ্ট্রচিন্তক।
তিনি বলেন, ভাসানীর রাজনীতি কখনোই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না; দরিদ্র কৃষক, শ্রমজীবী ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন। ক্ষমতার রাজনীতির চেয়ে জনতার রাজনীতিকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ভাসানী রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও মানবিক সম্মানের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে দেখতেন। এ কারণেই তিনি খুব আগেই পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থার বৈষম্য শনাক্ত করতে পেরেছিলেন এবং ১৯৫৭ সালে তার ঐতিহাসিক ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ভাসানীর কাছে শিক্ষার মানে ছিল চেতনার জাগরণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস সৃষ্টি; বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষা মুক্তির পথ হতে পারে না।
সভাপতির বক্তব্যে ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রামরত একজন সমাজবিপ্লবী ও দূরদর্শী রাষ্ট্রচিন্তক। তিনি নিজেকে প্রথমে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং নদী, কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষের প্রশ্নকে রাজনীতির কেন্দ্রে এনেছেন। ভাসানীর রাজনীতি ছিল ক্ষমতা বা নির্বাচনের জন্য নয়; বরং সাম্য, সামাজিক মালিকানা ও গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য। আজকের বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে মওলানা ভাসানীর পথই মানবমুক্তি ও প্রকৃত স্বাধীনতার দিশা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন ঔপনিবেশিক শাসন, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক বিরল সমাজবিপ্লবী নেতা। তিনি কলোনিয়াল বাংলা, আসাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চারটি রাজনৈতিক পরিসরে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা অর্জন করে উপমহাদেশের কৃষক আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশ ও আসামের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস পুনর্লিখনে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা নতুন করে মূল্যায়ন করা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে মওলানা ভাসানীর জীবন ও সংগ্রামভিত্তিক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মওলানা ভাসানীর বিশ্বদর্শন, রাজনৈতিক চিন্তা ও বি-উপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহসহ বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদগণ।
এছাড়া কারাস গবেষক দলের উদ্যোগে ‘ফিরে দেখা ফারাক্কা লংমার্চ’ শীর্ষক একটি বিশেষ পর্যালোচনা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা প্রস্তুতি, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপর্যায়ের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার (Michael Miller) এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ও রাজনৈতিক, প্রেস ও তথ্য বিভাগের প্রধান মিসেস বাইবা জারিন। সৌহার্দ্যপূর্ণ এ বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
সাক্ষাৎকালে মহাপরিচালক মহোদয় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন। বাহিনীর প্রশিক্ষিত জনবল, বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতির বিষয়সমূহ উপস্থাপনের পর ইইউ রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আলোচনায় বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা উন্নয়ন, পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গৃহীত বহুমাত্রিক উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এ প্রেক্ষাপটে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, সময়োপযোগী ও আধুনিক প্রশিক্ষণ কাঠামো, টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রম এবং বাহিনীর প্রান্তিক সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গৃহীত “সঞ্জীবন প্রকল্প” বিশেষ গুরুত্ব পায়।
বাহিনীপ্রধান মাননীয় রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন যে, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে বাহিনী ব্যাপক প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এসব উদ্যোগের ফলে প্রশিক্ষিত সদস্যদের জন্য দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্ভাবনাকে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগানো এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।
এসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বাহিনীর সামগ্রিক কার্যক্রম, পেশাদারিত্ব এবং উন্নয়নমুখী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সুদৃঢ় ও বিস্তৃত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চরের দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিনভর উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের দুর্গম জাগলার চরে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মেঘনার বুকে জেগে ওঠা নতুন এই চরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় মনির মেম্বার গ্রুপ এবং শান্ত গ্রুপের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলে আসা উত্তেজনার জেরে আজ এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, চরের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও হামলা-পাল্টাহামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই বেশ কয়েকজন হতাহত হন। পুলিশ খবর পেয়ে দুর্গম এই চরে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আরও অনেক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘর্ষ থামলেও পুরো এলাকাটিতে চরম আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ মরদেহগুলো উদ্ধার করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেছে। পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে বর্তমানে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। মূলত নদীবেষ্টিত এই চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দুষ্কৃতিকারীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়া রোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তজুড়ে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপনসহ ব্যাপক তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ১৪ বিজিবি পত্নীতলা ও ১৬ বিজিবি নওগাঁ থেকে পাঠানো পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট, সাপাহার ও পোরশা এলাকায় এই বিশেষ নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং দুষ্কৃতিকারীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ১৪ ও ১৬ বিজিবির আওতাধীন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদক চোরাচালান, অবৈধ পণ্য পাচার ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ উপেক্ষা করে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির সদস্যরা।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৪ ও ১৬ বিজিবি)-এর অধীনস্থ বিভিন্ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও চেকপয়েন্টে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এর ফলে সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ সকল পয়েন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া সীমান্তের যাতায়াত পথ গুলোতে একাধিক অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন সদর থেকে পরিচালিত মোবাইল টহলের মাধ্যমে সীমান্তে প্রবেশের সম্ভাব্য পথগুলোতেও কঠোর নজরদারি ও তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৬ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম মাসুম এবং পত্নীতলা ব্যাটালিয়ন (১৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার, নজরদারি বৃদ্ধি, বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপনসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ ও দুষ্কৃতিকারীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে বিজিবির এই তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে
গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোষাক কারখানার অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় অসুস্থ শ্রমিকদের পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কারখানা কতৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটার দিকে তিলারগাতি এলাকার মাসকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কনসেপ্ট নিটিং লিমিটেড নামক কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকরা জানায়, প্রতিদিনের মত সকালে কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কাজ করছিলেন তারা। বেলা এগারোটার দিকে টিফিন খাওয়ার পর হঠাৎ করে কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে শ্রমিকদের ভিতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এতে আতঙ্কিত হয়ে অর্ধ শতাধিক নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পরেন। পরে তাদের উদ্ধার করে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পরপরই অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত আতঙ্কিত হয়ে বেশিরভাগ নারী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী, হাসপাতালে আসা বেশীর ভাগ শ্রমিক প্যানিক এ্যাটাক জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তাদের মধ্যে কিছু শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতা ভুগছেন। অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের পরিদর্শক আজাদ রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রেরণ করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির টপ সয়েল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। পাশ্ববর্তী জমির কৃষক বাঁধা দিলেও জোরপূর্বকভাবে কাটা হচ্ছে মাটি। উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখাগেছে, উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মাঝবাড়ী গ্রামে ৩ ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। যা ট্রাকের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। গত কয়েকদিন ধরেই এ কর্মযজ্ঞ বিরাজমান রয়েছে। মাঝবাড়ী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান পিন্টু, জিয়াউর রহমান মোল্লা এবং আবু বক্কর সিদ্দিক মাটিগুলো বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের আব্দুল মোল্লা এবং আবু বক্কর সিদ্দিক বক্কা মাটিগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও তা মানছেন না ধৃত ভূমি দশ্যুরা।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনে প্রায় ৫০ শতাংশ জমির টপ সয়েল কাটা হয়েছে। এতে জমিগুলো ৩ থেকে ৪ ফিট করে নিচু হয়েছে। ট্রাক পরিবহনের ফলে বেশকিছু কৃষিজমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষকের জমি। এছাড়া মাটি পরিবহনের ফলে উপজেলার ফুলবাড়ি গোহাটি থেকে রামচন্দ্রপুর গামী গ্রামীণ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন এলাকায় ছোটবড় বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যা খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কার করা হয়েছিল।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কৃষিজমির মাটি কাটাতে বাধা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ইটভাটার লোকজন জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষাকালে তাদের জমি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাছাড়া কৃষিজমির উপরের টপ সয়েল বিক্রির ফলে জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে। তাছাড়া এতে একদিকে যেমন কৃষিজমি কমছে এবং অপরদিকে মাটির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষক শহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, তার জমির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই মাটি বিক্রির হিড়িক উঠেছে। মাটিগুলো কেটে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে তার জমির পাশের জমি ৪ ফুট নিচু হয়েছে। মনে হচ্ছে বর্ষাকালে তার জমি ভেঙে যাবে। কৃষকরা দলবদ্ধ হয়ে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তাদের গ্রামের পাকা রাস্তাও একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রশাসনের কাছে তারা এর প্রতিকার চাই।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমাইয়া ফেরদৌস বলেন, এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কৃষিজমির টপ সয়েল কাটার কোনও সুযোগ নেই। খুব শীঘ্র সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কৃষিজমির টপ সয়েল কাটা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফরিদপুর জেলাজুড়ে পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ চিরুনি অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’-এ গত ৪৮ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শামছুল আজম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়মিত মামলা, ওয়ারেন্ট ও মাদকসহ বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত রোববার দিবাগত রাতে বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রাম থেকে জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মৃধা ওরফে লিটন মৃধাকে তাঁর নিজ বাসভবন থেকে আটক করা হয়। মনিরুজ্জামান মৃধা ২০১৯ ও ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে এবং ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বোয়ালমারী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
তবে লিটন মৃধার স্ত্রী নাসরিন নবী গিনি এই গ্রেফতারের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর নামে যে আগে কোনো মামলা ছিল, তা তিনি জানতেন না। রোববার রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামছুল আজম জানিয়েছেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুরো জেলায় এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মূলত সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা দমনে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী অভিযানের অংশ হিসেবেই ফরিদপুরে এই ধরপাকড় চালানো হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকায় একটি তুলা ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমবাগ পূর্বপাড়া নাদের আলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন শরীফ উদ্দিনের মালিকানাধীন ফ্যাক্টরিটিতে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। স্থানীয়দের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সৃষ্টি হয়ে তা মুহূর্তের মধ্যে পুরো ফ্যাক্টরিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাক্টরির ভেতরে দাহ্য পদার্থ হিসেবে তুলা থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয় এবং কোনো মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। কোনাবাড়ী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের দুটি এবং কাশিমপুর সারাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটের নিরলস চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে ততক্ষণে ফ্যাক্টরির ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ তুলা ও অন্যান্য সরঞ্জাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মামুন জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকায় এর আগেও কয়েকবার বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বারবার অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক নেতা মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় এক চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। প্রথমে তিনি ঢাকার ওসমান হাদির মতো রাস্তায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন চিত্র। প্রকৃতপক্ষে রাস্তায় নয়, বরং সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং মাদক সেবনের সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তনিমা ওরফে তন্বী নামে এনসিপির সহযোগী সংগঠন যুবশক্তির এক নেত্রীকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব ও তন্বী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আল আকসা মসজিদ সরণির ‘মুক্তা হাউস’ নামের একটি ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। সোমবার সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোতালেব দাবি করেছিলেন, তাঁকে রাস্তায় সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। কিন্তু পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, মোতালেব রক্তাক্ত অবস্থায় ওই ফ্ল্যাট থেকেই বের হয়ে আসছেন। পরবর্তীতে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বিদেশি মদ, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। বাড়ির মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী, তন্বী নিজেকে এনজিওকর্মী পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিলেও সেখানে নিয়মিত অপরিচিত পুরুষদের যাতায়াত ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলত, যার জন্য তাঁকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।
মোতালেব শিকদারের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পেশায় ট্রাকচালক মোতালেব আগে যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি খুলনার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর জাকির হোসেন বিপ্লব এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি ভোল পাল্টে এনসিপিতে যোগ দেন এবং জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব বাগিয়ে নেন। তবে এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে কার্ড ছাপিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটি মূলত তাঁদের নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মাদক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফল। গুলিটি মোতালেবের কানের চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে শঙ্কামুক্ত এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে এনসিপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি মোতালেবের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং এর সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। পুলিশ বর্তমানে পলাতক তন্বীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই ঘটনায় আর কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে।