দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাফলংয়ে সারা বছরই ভিড় করেন পর্যটকরা। তবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে মলিন হয়ে পড়ে জাফলং। কেবল জাফলিই নয়, একই অবস্থা পাথর কোয়ারি হিসেবে পরিচিত সিলেটের পর্যটন আকর্ষণীয় আরও পাঁচটি এলাকারও। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে এসব এলাকা থেকে চলছে নির্বিচারে পাথর লুট। কেবল জাফলং আর সাদাপাথর থেকেই লুট হয়েছে দুইশ কোটি টাকার পাথর। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও পাথর লুট থামানো যাচ্ছে না।
যদিও এলাকার পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটক আকর্ষণ ধরে রাখতে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা জারি করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারও আগে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানা কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরো সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজসম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’
জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম কিছুদিন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কেবল জাফলং ও সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকেই প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার পাথর লুটে নিয়েছে লুটপাটকারীরা। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতারা জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনার পরও থেমে না থেকে জাফলং-সাদাপাথরসহ সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ জন্য নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলছেন তারা। অপরদিকে, পরিবেশকর্মীদের পক্ষ থেকে পাথর লুটপাট বন্ধ ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবেশ ও পর্যটন সুরক্ষার দাবি উঠেছে। ফলে সরকার পরিবর্তনের পর আরবারও প্রশ্ন উঠেছে- পাথর উত্তোলন নাকি পরিবেশ ও পর্যটনের সুরক্ষা- কোনো পথে হাঁটবে সরকার।
মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েকবছর বন্ধ ছিলো পাথর উত্তোলন। ফলে জাফলংয়ের পিয়াইন ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উৎসমুখে (সাদাপাথর) বিপুল পরিমাণ পাথর মজুদ হয়। স্রোতের তোড়ে উজান থেকে আসা পাথর স্তরে স্তরে মজুদ হয় দুই নদীর উৎসমুখে। এসব পাথরের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে জাফলং ও সাদাপাথরে পর্যটক সমাগম বাড়ছিলো।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, সরকার পতনের পর প্রথম তিনদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিস্ত্রিয় ছিল। এই সুযোগে জাফলং থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। আর কোম্পানিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার ভাষ্যমতে, সাদাপাথর থেকে লুট হয়েছে ২০ কোটি টাকার পাথর। যদিও স্থানীয়দের দাবি, দুই কোয়ারি থেকে ১৪০ কোটি নয়, দুইশ কোটি টাকার ওপরে পাথর লুট হয়েছে। কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু লুটের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় ৩টি ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় ১টি মামলা দায়ের হলেও মূলহোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই কোয়ারিতে বালু ও পাথর লুটের সাথে জড়িত প্রভাবশালীদের বেশিরভাগ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের প্রমাণ পেয়ে দলীয় পদ হারান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ। এছাড়া পাথর লুটের সাথে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের নাম জড়িয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, মামলা আর অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ- কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাথর লুট। গত ৬ নভেম্বর সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনেও এমন অভিযোগ করা হয়। মো. ইসমাইল হোসেন নামে জাফলংয়ের এক ব্যক্তি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদে চলছে পাখর লুট।
এদিকে পাথর উত্তোলনের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে জাফলং ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন খাঁন আনু বলেন, জাফলংসহ সকল পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে দেশের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। তিনি বলেন, প্রতি বছরই ঢলের সাথে প্রচুর পাথর ভারত থেকে এই এলাকায় এসে জমা হয়। এসব পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ঘনঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাই পরিবেরে স্বার্থেই পাথর উত্তোলন করা প্রয়োজন।
জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রতি বছরই ভারত থেকে প্রচুর পরিমান পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। এতে ডলার সংকট আরও বাড়ছে। বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে লুটপাট করে জাফলং ও সাদপাথরকে পাথরশূন্য করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার পাথর উত্তোলনের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই দাবি মানা হলে এসব পর্যটন এলাকা আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশারুল কবির বলেন, দেশে চাহিদার খুব সল্প সংখ্যক পাথর সিলেটের কোয়ারিগুলোতে পাওয়া যায়। ফলে বড় অংশই ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে এমন দাবি সত্য নয়। কোয়ারি সচল হলে কিছু মানুষ আর্থিকভাবে লাভভান হতে পারেন কিন্তু দেশের বিরাট ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারি সচল করা হবে কি না এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি গোষ্ঠী বালু পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের পূর্বাংশে ভারতের সীমানা ঘেঁষে পাহাড়ি অঞ্চল আনন্দপুর। প্রকৃতির লীলাভূমি এই টিলা-পাহাড়ি এলাকার গহিন বনে টিলার পাদদেশে ব্ল্যাক কফি ও কাজুবাদামের চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন দুই সহোদর কৃষক বাবুল মিয়া ও হোসেন মিয়া।
দীর্ঘদিন ধরে তারা পাহাড়ি এই অঞ্চলে ব্ল্যাক কফি ও কাজুবাদামসহ বিভিন্ন বিদেশি ফলের চাষ করে আসছেন। এর পাশাপাশি তাদের বাগানে রয়েছে কমলা, সফেদা, মাল্টা, আনারস, কাগজি লেবু, বরিশালের আমড়া, নেপালি সাগরকলাসহ বড়ই, লিচু, পেয়ারা ও নানা জাতের ফলজ গাছ। গত বছর প্রথমবারের মতো তাদের বাগানে কাজুবাদামের ফলন আসে। গ্রামের লোকজন কৌতূহলবশত ফল পেড়ে খেয়ে ফেলায় সংরক্ষণ করা যায়নি। এবার কাজুবাদামের ফলন তেমন নেই, তবে ব্ল্যাক কফির নতুন মৌসুমের ফলন নিয়ে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা।
কৃষক বাবুল মিয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘স্বপ্নের ব্ল্যাক কফির নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। উঁচুনিচু টিলা পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে প্রায় ২ একর জমিতে কাজুবাদাম ও ব্ল্যাক কফির নতুন ফলন পেয়েছি। আমরা খুবই খুশি। মনে করি, সবাই যদি বাড়ির সাইট বা পতিত জমিতে আমাদের মতো বিদেশি ফলের চাষ করে, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।’
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন আক্তার বলেন, ‘দুই সহোদর কৃষকের উদ্যোগটি খুবই সুন্দর ও ব্যতিক্রমী। সুযোগ এলে আমরা সরকারিভাবে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব।’
কৃষিবিদদের মতে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কফি চাষ হচ্ছে এবং চাষির সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ক্লান্তি দূর করে শরীর চাঙা করার জন্য কফি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি পানীয়। শহুরে জীবনে পানীয় হিসেবে কফির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
কফি গাছ ঝোপের মতো, মাঝারি উচ্চতার চিরসবুজ উদ্ভিদ। এটি (Rubiaceae) পরিবারভুক্ত। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে কফি উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বান্দরবান, কক্সবাজার, নীলফামারীসহ নানা স্থানে কফি চাষ হচ্ছে, যার মানও প্রশংসনীয়।
কফি উদ্ভিদের জন্য বছরে ১,৫০০-২,২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। এ্যারাবিকা জাতের কফি চাষের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা ১৫-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রোবাস্টা জাতের জন্য ২৪-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ্যারাবিকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,০০০-২,২০০ মিটার এবং রোবাস্টা ১০০-৭০০ মিটার উচ্চতায় ভালো জন্মে। উচ্চতা যত বেশি হয়, পাকা কফি বিন তত বেশি সুগন্ধি হয়। মাটি ও পরিবেশের গুণাগুণও কফির স্বাদ ও ঘ্রাণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
কফি গাছ সামান্য ঢালু জমি ও আংশিক ছায়া পছন্দ করে। এ কারণে ছায়াদায়ী গাছের নিচে কফি চাষ করা উত্তম। ভারতে কফি বাগানে নির্দিষ্ট দূরত্বে কলা গাছ রোপণ করা হয়, যাতে সরাসরি সূর্যের তীব্রতা থেকে কফি গাছ কিছুটা সুরক্ষা পায়।
প্রাকৃতিকভাবে কফি গাছ ৪০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়, তবে ফল সংগ্রহ সহজ করতে চাষকৃত গাছকে সাধারণত ৬-৯ ফুট উচ্চতায় ছাঁটাই করে রাখা হয়।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাগুরায় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে কালেক্টরেট চত্বর থেকে র্যালি শুরু হয়ে শহরের ভায়না মোড়, চৌরঙ্গী প্রদক্ষিণ শেষে কেশব মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
পরে বিশ্ব মানবাধিকার ফাউন্ডেশন মাগুরা শাখার কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সালমা খাতুন। বক্তব্য রাখেন, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্বাস আলী, মোহাম্মদ মিশুক পারভেজ, আসিফ, সাগর ও আখি খাতুন। বক্তারা বিশ্ব মানবাধিকারের তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়জ ফাউন্ডেশন (আসফ), মাগুরা জেলা কমিটি ‘হে বিশ্ববাসী, সুন্দর পৃথিবীতে আমরা সকলেই সকলের প্রতি আন্তরিক হই’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনকে সম্মান ও দেশপ্রেমের প্রতি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
অবশেষে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ফরিদপুর শহরের অ্যাডুকেশন জোন খ্যাত বাইতুল আমান কলেজ গেট স্টেশনে ট্রেন থেমেছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টায় দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল বাইতুল আমান কলেজ গেটে ট্রেন থামলে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষসহ ওই এলাকায় অধ্যায়নরত ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীরা। এ সময় ট্রেন থামানোর আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন অনু, কনজ্যুমার ভয়েস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক রুমন চৌধুরী, প্রিন্সিপাল লোকমান হোসেন, ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমানসহ এলাকার সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে শুকরিয়া আদায় করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন কমলাপুর রেলস্টেশন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুজিবুর রহমান। ফরিদপুর জেলার মধ্যে অ্যাডুকেশন জোন নামে খ্যাত বাইতুল আমান এলাকাটি। যেখানে রয়েছে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর সিটি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, জীবনের ঝুঁকি ও শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াতের জন্য ট্রেন থামানোর এই দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম এবং মানববন্ধন করেছেন।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধি সাংবাদিক মনোয়ার হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ইউনিয়নের মহিলা সদস্য নুরবানুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার নুরবানু আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য।
এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহল ও সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, একজন সংবাদকর্মীর ওপর প্রকাশ্যে হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত এবং আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা।
জানা যায়, সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনে প্রকাশিত ‘মহিলা মেম্বারের প্রেমে মজেছেন পুরুষ মেম্বার’ শিরোনামের একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে। সংবাদ প্রকাশের পর থেকে ইউনিয়নের ২ জনপ্রতিনিধি ওই সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আয়মারসুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস চত্বরে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন পেশাগত কাজে গেলে তার ওপর হামলা চালান ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নুরবানু ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ সময় তারা গালিগালাজ করতে করতে তাকে মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলের দিকে ভূমি অফিসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দুই মেম্বার মনোয়ারকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তেড়ে আসেন। এরপর গালিগালাজ করতে করতে হামলা চালান সাংবাদিক মনোয়ারের ওপর।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক মোরসালিন বলেন, ভূমি অফিসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দুই মেম্বার মনোয়ারকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তেড়ে আসেন। এরপর গালিগালাজ করতে করতে হামলা চালান।
হামলার শিকার সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন বলেন, সংবাদ প্রকাশ করায় আমার ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তা গণমাধ্যমের প্রতি সরাসরি হুমকি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি থানার ওসি আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ফরিদপুরের কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পিপিএম -এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় সাংবাদিকরা ফরিদপুর শহরের যানজট, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চালনা, অপসংবাদিকতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবৈধভাবে ফুটপাত দখল, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি দমনে ফরিদপুরের নবাগত পুলিশ সুপারের নিকট তুলে ধরেন।
এ সময় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সিনিয়র সাংবাদিক পান্না বালা, এস এম তমিজউদ্দিন তাজ, জাহিদ রিপন, শফিকুল ইসলাম মনি, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সঞ্জীব দাস, আশরাফুজ্জাম দুলাল, শেখ মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, সহ-সাধারণ সম্পাদক শেখ মফিজুর রহমান শিপন, দপ্তর সম্পাদক মাসুদুর রহমান তরুণ, সিনিয়র সাংবাদিক নাজিম বাকাউল, এস এম মনিরুজ্জামান, আলিমুজ্জামান রনি, বিকে শিকদার সজল, শ্রাবণ হাসান, ইব্রাহিম হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, কিশোর অপরাধ ও সাইবার অপরাধ, যানজট নিরসনে কাজ করা, শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিকরণ, অটোচালকের শৃঙ্খলার মধ্যে আনা, থানায় ও অনলাইনের মাধ্যমে জিডি গ্রহণ, এবং থানায় যাতে সাধারণ মানুষ কোন হয়রানির শিকার না হন পাশাপাশি অপ সাংবাদিকতার কারণে কোন সাংবাদিক যেন হয়রানীর শিকার না হন সে ব্যাপারে তার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টায় তার নিজ গ্রাম রুহুল আমিন নগরে অবস্থিত জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের সিএ আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দেওটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাবলু, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শুভ সূত্রধর, বীরশ্রেষ্ঠের ছেলে শওকত হোসেন, নাতনী বৃষ্টি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমির সহকারী প্রধান শিক্ষক নূর আলম, এস আই নূরনবীসহ শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ রুহুল আমিনকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৩৪ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমিন। ১৯৫৩ সালে নৌবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চলে যান ত্রিপুরা, যোগ দেন ২ নম্বর সেক্টরে। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে গানবোটে রূপান্তর করা হয়।এর নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মোংলা থেকে পদ্মা ও পলাশ খুলনার দিকে আসছিল। রূপসা নদীতে পদ্মা ও পলাশের ওপর ভুল সিগন্যালের কারণে মিত্র বাহিনীর বিমান থেকে গোলা ছোড়া হয়। এতে পলাশ ধ্বংস হয় এবং রুহুল আমিন আহত হন। আহতাবস্থায় তিনি রাজাকারের হাতে ধরা পড়েন। আহত এ বীর সন্তানকে তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও মহান আত্মত্যাগের জন্য তাকে স্বীকৃতি স্বরূপ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, হজ ব্যবস্থাপনা সহজ করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে অতিতের মতো কোনো সিন্ডিকেট কাজ করতে পারবে না ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সকলে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। অতীতে হাজীদের জিম্মি করার যে প্রবনতা ছিল তা এখন শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তত্ত্বাবধায়নে হাজীদের বাড়ি ভাড়াসহ সকল কাজ সম্পন্ন করায় গত বছর সাড় আট কোটিরও অধিক টাকা হাজীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নাটোর জেলা মডেল মসজিদ উদ্বোধন শেষ উপদেষ্টা এই কথা বলেন তিনি এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, এজমা, হৃদরোগ ও ক্যান্সারেরর রোগীদের হজে যেতে নিষেদ করেছে সৌদি সরকার। তাই ধর্ম মন্ত্রাণালয় এইসব রোগীদের হজে যেতে দেবে না। কোনো চিকিৎসক এইসব রোগীদের সুস্থ বলে সার্টিফিকেট প্রদান করে তাহলে সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বয়স্কদের হজে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে উডদেষ্টা বলেন, হজে অনেক পরিশ্রম হয়। তা বয়স্ক মানুষদের কঠিন হয়। তাই তিনি বয়স্কদের হজে না যেতে আহ্বান করেন।
এছাড়া হজের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা বলেন হজের জন্য সর্বোচ্চ কম খরচ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান। পরে তিনি জেলার আরও দুটি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।
এ সময় নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুরে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ওই আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, মাদারীপুর জেলা শাখা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার জেলা শাখার সভাপতি শরীফ মো. ফায়েজুল কবীর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পারভেজ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, মাদারীপুর সদর-২ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান।
আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি এনায়েত হোসেন নান্নু, সহসভাপতি প্রফেসর (অব.) মো. মকবুল হোসেন, বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব রেজাউল হক রেজা, আসক ফাউন্ডেশন জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মিজান ফরাজী, কোষাধ্যক্ষ নূরুল হক সরদার, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক কেন্দ্রীয় নীরিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ এনায়েত হোসেন, অ্যাডভোকেট (এজিপি) মো. সাইফুর রহমান, সংগঠক ও মানবাধিকার প্রতিনিধি এসকান্দার মাতুব্বর, সিনিয়র সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস, আসক ফাউন্ডেশন মাদারীপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফারহানা ইসলাম কান্তা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুন নাহার কলি, ত্রাণ, কোষাধ্যক্ষ নূরুল হক সরদার, সদর উপজেলা শাখার সেক্রেটারি জাকির মাতুব্বর অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
পরিশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি শরীফ মো. ফায়েজুল কবীর সব ক্ষেত্রে মানবাধিকার শতভাগ বাস্তবায়নসহ, দুর্নীতিবন্ধে সামাজিক-সাংগঠনিকভাবে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলেচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর একটি র্যালি ডিসি অফিস প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে মূল ফটকের সামনে এসে শেষ হয়।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়ন পেয়েছেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ। প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তালিকায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ও নতুন মুখের প্রাধান্য দেখা গেছে। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়ন পেয়েছেন জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মণ।
এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সদস্য খোকন বর্তমানে মুখের চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় রয়েছেন। সুস্থ হয়ে দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন খোকন। ওই দিনের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গুলিতে খোকনের ঠোঁট, মাড়ি, নাক-মুখের অংশের মাংস প্রায় খুলে পড়ছে। তার মুখ ও পুরো শরীর রক্তাক্ত। এই অবস্থায় তিনি একজনের হাত ধরে উঠে দাঁড়ান। খোকন নিজেই আঙুলের ছাপ দিয়ে মোবাইলের লক খোলেন। সেই মোবাইল থেকে একজন খোকনের বড় ভাই খোকা চন্দ্র বর্মণকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর জানান।
আগামী সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় পৌর শহরের নিজ বাসভবন প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তার সমর্থক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আমার প্রতি জনপদের মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আছে, সে জন্য আমি মানুষের পাশের থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি উল্লেখ করে মতবিনিময় সভায় দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, আমার জীবনের বাকি দিনগুলো আমি জনগণের সাথে থাকতে চাই, জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। সে জন্য আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় (সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর) কাঙ্ক্ষিত যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়য়নের দিক দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ। আমরা এর পরিবর্তন চাই, বৈষম্যের নিরসন চাই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক বিষয়ে আমি সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে চাই। সুনামগঞ্জের মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে সে জন্য সন্ত্রাস- চাঁদাবাজমুক্ত ও সম্প্রীতির সুনামগঞ্জ চাই, আর এ জন্যই আমি নির্বাচন করতে চাই।
দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চারবারের চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুলের নাম ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে ডেন্টাল এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল চেয়ার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে দাঁত উঠানো, রুট ক্যানেল, ফিলিং, স্কেলিং ও দাঁতে ক্যাপ পড়ানোসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটছে। এতে থাকায় চরম ভোগান্তি ও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলা ছাড়াও জেলার পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলা থেকে প্রতিদিন শতশত রোগীরা এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে শুধুমাত্র ব্যথা ও গ্যাসের ট্যাবলেট নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফলে প্রায় কার্যত ডেন্টাল চিকিৎসা সেবা অচল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ডেন্টাল বিভাগ ছাড়াও হাসপাতালটি চিকিৎসক সংকটেও ভুগছে। হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ অনেকটা নাজুক। শৌচাগার দুর্গন্ধময় ও অপরিচ্ছন্ন এবং সেবাগ্রহীতারা প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডেন্টাল চিকিৎসা নিতে আসা রোগী তানিয়া বেগম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দাঁতে ব্যথায় ভুগছিলেন। পরে চিকিৎসা সেবা নিতে তিনি হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক তার দাঁত জানায় দাঁত তুলতে হলে আগে এক্স-রে লাগবে। কিন্তু এখানে এক্স-রে করার ব্যবস্থা নেই। পরে বাধ্য হয়ে বাহিরের ক্লিনিক থেকে তিনি এক্স-রে করেন।
অপর রোগী কাওছার মন্ডল বলেন, তাকে এক্স-রে করতে বাইরে যেতে বলা হয়েছে। তিনি গরিব মানুষ, তার কাছে টাকা নেই। হাসপাতাল থেকে শুধু প্যারাসিটামল দেওয়া হয়, এতে দাঁতের ব্যথা যায় না। তাছাড়া এ হাসপাতালে ব্যথা, গ্যাসটিক ও স্যালাইন ছাড়া কোনো ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ মেলে না।
হাসপাতালে আসা এক রোগী বলেন, তিনি গরিব মানুষ, তার কাছে টাকা নেই। হাসপাতাল থেকে শুধু প্যারাসিটামল দেওয়া হয়, এতে দাঁতের ব্যথা যায় না। তাছাড়া এ হাসপাতালে ব্যথা, গ্যাসটিক ও স্যালাইন ছাড়া কোনো ছাড়া তেমন কোনো ঔষধ মেলে না। তাকে এক্স-রে করতে বাইরে যেতে বলা হয়েছে।
ভূঞাপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুক জানান, তিনি একজন সহকারী চিকিৎমক নিয়ে প্রতিদিন শতাধিক জন রোগীকে দাঁতের চিকিৎসা দেন। কিন্তু ডেন্টাল বিভাগের এক্স-রে মেশিন, ডেন্টাল চেয়ার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নেই, যার কারণে তারা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান আজাদ বলেন, এ হাসপাতালে ভূঞাপুর ছাড়াও আরও পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসে। ফলে রোগীর চাপ বেশি। ডেন্টাল বিভাগের চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির সংখ্যা কম। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ডেন্টালের কিছু যন্ত্রাংশও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে তিনি উর্ধতন দপ্তরে জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে হাঁসের পিছু নিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে সাবাব মন্ডল (৩) ও তোহা মন্ডল (২) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের নতুনগ্রাম দিঘলাপাড়া এলাকায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যাদুরচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত সাবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুনগ্রাম দিঘলাপাড়া এলাকার শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং তোহা মন্ডল একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। নিহত দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে।
পারিবারিক-স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে শিশুদের বাবা ও মায়েরা ব্যস্ত ছিলেন গৃহস্থালির কাজ নিয়ে। এদিকে সাবাব মন্ডল ও তোহা মন্ডল নামের দুই শিশু খেলছিল। এমন সময় বাড়ির পালিত হাঁসের পিছু নিয়ে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পরিবারের লোকজন পানি থেকে দুই শিশুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা মাঠে নিহত দুই শিশুর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও ২৮ কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি থেকে মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী আজিজুর রহমান, তার ছোট ভাই জামায়াতে ইসলামীর মনোনিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাফিউর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহনেওয়াজ হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ না থাকায় নিহত দুই শিশুর মরদেহ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করা হয়েছে।
মাঠ ভরা সরিষা ফুলে স্বপ্ন বুনছে দুই জেলার কৃষক। এর মধ্যে মেহেরপুরে অনাবাদি ও দুই ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করে লাভের আশা করছেন চাষিরা। আর হেমন্তের কুয়াশায় সোনালি স্বপ্ন যশোরের কেশবপুরে সরিষা চাষে বাম্পার সম্ভাবনায় উৎসবে কৃষক। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
জুলফিকার আলী কানন মেহেরপুর থেকে জানান, মেহেরপুরে অনাবাদি ও দুই ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করে লাভের আশা করছেন চাষিরা। ভালো ফলন পেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষকদের খরচ কমাতে ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে জেলা কৃষি বিভাগ দিয়েছে সব ধরনের সহযোগিতা। সরিষার ফুলের সঙ্গে কৃষকের আশার আলোও ছড়িয়ে পড়েছে মাঠময়। ভালো আবহাওয়া থাকলে এই মৌসুমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে মেহেরপুরের কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে অন্যান্য আবাদের সাথে সরিষার রঙিন উৎসব। মাঠের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। একেবারে যেন হলুদের কারুকাজে সাজানো প্রকৃতি। বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার সবুজ পাতার ওপর হলুদের ঘ্রাণ; সেই সঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। অনাবাদি ও দুই ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করে পরিবারে তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করার আশা করছেন চাষিরা।
মাইলমারী গ্রামের কৃষক আমাদের যেসব জমি অমন আবাদের পর কিছুদিন পড়ে থাকে সেসব জমিগুলোতে সরিষার আবাদ করি। এতে অল্প খরচে এবং চাষে নিজের বাড়ির তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি একটি মোটা অঙ্কের টাকা আয় হয়।
ভাটাপাড়া গ্রামের কৃষক ফরমান আলী বলেন, সরিষা আবাদে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই এই চাষের ফলে পতিত জমিটুকু থেকেও আমরা একটি মোটা অঙ্কের আয় করি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এই খেত থেকে ১১ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সরিষা চাষে আগ্রহ তৈরি করতে জেলায় ৬ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্জিব মৃধা জানান, সরিষা তেলজাতীয় একটি আবাদ। আমন চাষের পর কিছুদিন জমি পতিত থাকে। সে সময় কৃষকরা এই চাষটি করে থাকেন। তারা অল্প খরচে অল্পদিনেই একটা ভালো আয় করেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষটি উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের প্রণোদনাসহ নানাভাবে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি।
হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর) থেকে জানান: যশোরের কেশবপুর উপজেলার হেমন্তের সকাল। পাতলা কুয়াশার চাদর সরিয়ে নরম রোদ উঠতেই ফসলে দোলতে থাকা সরিষা ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন। বাতাসে ভাসে সরিষা ফুলের মাদকতাময় সুবাস। চারদিকে চোখ যতদূর যায় শুধুই হলুদের সমারোহ। প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক রূপে সোনালি স্বপ্ন বুনছেন এখানকার কৃষকরা।
এ বছর কেশবপুরের ১১টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেন সরিষা চাষের এক উৎসব নেমে এসেছে। আগাম জাতের বারি সরিষা চাষে যেমন ফলনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল, তেমনি কৃষকের মুখেও ফুটে উঠেছে আশার হাসি।
সরকারি প্রণোদনায় আবাদ বেড়েছে ৫০৫ হেক্টর। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর সরকারি প্রণোদনা হিসেবে ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর কেশবপুরে সরিষা আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। আর চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে- যা গত বছরের চেয়ে ৫০৫ হেক্টর বেশি। লক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর, সেটি ছাড়িয়ে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে চাষ করেছে কৃষকরা।
বারি-১৪, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৮, বারি-১৭ ও টরি-৭ জাতের উচ্চফলনশীল সরিষা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। আগাম জাত হওয়ায় সরিষা কাটার পর একই জমিতে সহজেই বোরো ধানের আবাদ করা যায়। ফলে কৃষকরা একসঙ্গে দুই ফসলের লাভ তুলতে পারছেন।
৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায় এই ফসল। মজিদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, এই মৌসুমে নতুন করে টরি-৭, বারি-৯, বারি বীনা-৯, বারি-১৭ ও বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ শুরু হয়েছে। এসব জাত ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। তাই কৃষকরা বোরো আবাদ শুরুর আগেই সরিষা কাটতে পারেন, ফলে সরিষা চাষে তারা ঝুঁকছেন বেশি।
কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি। পাঁজিয়া গ্রামের নিয়ামুল ইসলাম, কামরুল ও বিধান দাসসহ সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান ও আজিজুর রহমান জানান, গত বছর বৃষ্টির পানি বেশি থাকলেও ফলন কম ছিল। এ বছর পানি কম হলেও ফলন ভালো। বিঘাপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে ৬-৭ মণ সরিষা পাব বলে আশা করছি। বাজারদরও ভালো থাকবে।
আবহাওয়া অনুকূলে লক্ষ্য ছাগানোর আশাবাদী কৃষক অফিস। উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ মামুন বলেন, এবার কেশবপুরে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠজুড়ে ভালো ফলনের আভাস মিলছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা খুব সহজেই সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন।
প্রকৃতির রূপ, কৃষকের পরিশ্রম আর সরকারি সহায়তায় কেশবপুরে সরিষা চাষ যেন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। হেমন্তের কুয়াশা ভেদ করে সোনালি সরিষার হাসি কৃষিজীবী মানুষের ঘরে আনতে পারে সমৃদ্ধির বার্তা।