নানা জটিলতা কাটিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে ৬৫৩ জন পর্যটক নিয়ে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন গেছে এমভি বারো আউলিয়া। রোববার সকাল ১০টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজটি ছেড়ে যায়। জাহাজটি বিকেল নাগাদ দ্বীপে পৌঁছেছে।
গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। ওইদিন কেয়ারী সিন্দাবাদ নামের একটি জাহাজ পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার কথা থাকলেও পর্যটক সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করে। ফলে এমভি বারো আউলিয়ায় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে ৯ মাস পর প্রথম যাত্রা শুরু হলো। এমভি বার আউলিয়ার পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার পরিকল্পনা থাকলেও ছেড়েছে কেবল এমভি বার আউলিয়া। জাহাজটিতে ৮৫০ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা থাকলেও গেছেন ৬৫৩ জন।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত এই রুটে কেয়ারী সিন্দাবাদ ও এমভি বার আউলিয়া ছাড়াও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে আরেকটি যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। তবে যাত্রী সংকটের কারণে বার আউলিয়া ছাড়া অপর দুটি জাহাজ গতকাল সেন্টমার্টিন যায়নি। সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে নিয়ন্ত্রণে আনাসহ জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। এ কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মেনে পর্যটকেরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। গতকাল বারো আউলিয়ার প্রথম যাত্রায় যাত্রী হিসেবে ছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ওবায়দুর রহমান। সপরিবারে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করছেন তিনি। জাহাজে ওঠার আগে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, দ্বীপে দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে যাচ্ছি। ট্রাভেল পাস জোগাড়ে একটু জটিলতা হলেও দ্বীপে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকবে, জটিলতা থাকবে না, আরামে ঘোরা যাবে-এসব আনন্দের। এ সময় এ প্রতিনিধির কথা হয় আরও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। প্রায় সবাই সেন্টমার্টিনে দু-একদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছেন বলে জানান।
এদিকে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বহন করা নিষিদ্ধ। এ নিয়মটি যাত্রীদের মানাতে জেটিতে জাহাজে ওঠার সিঁড়িতে পর্যটকদের হাতে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আছে কি না তা তদারকি করতে দেখা যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। পর্যটকরা যাতে জাহাজে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জমির উদ্দিন। তিনি বলেন, পর্যটকদের পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাহাজে যাতে কোনোভাবে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল সকালে পর্যটকবাহী জাহাজ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কার্যকর করতে এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি কাজ করবে। প্রসঙ্গত গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে করা হয়েছে সদস্য সচিব।
গত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইনানি সৈকতে স্থাপিত নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানি জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নাসর্কে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভুল চিকিৎসার বিষয়টি স্বীকার করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পেটে ব্যথাজনিত কারণে গত ১২ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন নিকলী উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জহিরুল (২২)।
আজ বুধবার সকালে দুজনেরই অপারেশন হওয়ার কথা ছিল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি আলম (৩০) জানান, সকালে নার্স এসে রোগী জহিরুল ইসলামকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। তখন কোন শব্দ না করে সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জহিরুল। এ সময় একই ইনজেকশন আরও দুই রোগীকে দেওয়া হয়েছে, তাদের অবস্থাও আশংকাজনক হওয়ায় অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। রাব্বি আরও বলেন, কিছুক্ষণ পরে আরেকজন নার্স এসে পরীক্ষা করে জানান জহিরুল মারা গেছেন।
জহিরুল ইসলামের বড় ভাই মাসুক মিয়া বলেন, জহিরুল ইসলাম অত্যন্ত গরীর মানুষ, তার ঘরবাড়ি বলতে কিছুই নেই। দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী আবারও অন্তঃসত্ত্বা। এমন অবস্থায় ভুল চিকিৎসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ মাসুক বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে হার্নিয়ার চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া এলাকার ফালু মিয়ার ছেলে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক (৩২)।
মনিরুজ্জামান মল্লিকের চাচাতো ভাই মো. মোজাফফর জানান, মল্লিকের এপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথা ছিল। অতীতে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়েছে। তখন চিকিৎসক জানিয়েছেন অপারেশনর করতে হবে। তাই ভালো চিকিৎসা এবং খরচের চিন্তা করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে এসেছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যে ইনজেকশন দেওয়ার কথা অপারেশন থিয়েটারে, সেখানে না দিয়ে দেওয়া হয়েছে রোগীর বেডে। ইনজেকশন দেওয়ার কয়েক মিনিট পরেও মল্লিক চিৎকার করে বলছিল সিস্টার আমাকে কী ইনজেকশন দিলেন, আমি তো শেষ! একথা বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মল্লিক। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপারেশনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা বেগম ওয়ার্ডের সীটেই দুজনকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার ৫ থেকে ১০মিনিটের মধ্যেই দুজন কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
অভিযোগ রয়েছে, ‘নর কিউ’ নামক অ্যানেসথেশিয়ার ইনজেকশনটি অপারেশন থিয়েটারে পুশ করার কথা ছিল, সেটি আগেই ভুল করে ওয়ার্ডের সীটেই পুশ করেন নার্স। এতেই ঘটে বিপত্তি। মৃত্যু হয় দুজন তরতাজা যুবকের।
তাদের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে বিক্ষোভও করেন। তারা সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ভুল চিকিৎসায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নার্সকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অজয় সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নার্সের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে তিনি নিজেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনটি রিসোর্ট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
ইকো রিসোর্টে মালিকদের বরাত দিয়ে চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে পশ্চিম সৈকতের গলাচিপায় অবস্থিত সাইরী ইকো রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে মাল্টিপ্লাগে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এতে করে পাশে থাকা বীচ ভ্যালীর ১৮টি কক্ষ, কিংশুক ইকো রিসোর্টে ৭টি ও সাইরী ইকো রিসোর্টের (রিসিপশন) অভ্যর্থনা কক্ষ ১টিসহ সর্বমোট ২৬টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি- প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়িরর ইনচার্জ এসআই অজিত কুমার দাস বলেন, সেন্টমার্টিনে সাইরী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল। সাইরী রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।
রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো. সরোয়ার কামাল বলেন, আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা নিঃস্ব।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ডানা ঝাপটিয়ে জলে এসে পড়ছে, জলকেলিতে আনন্দ উপভোগ করছে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা অতিথি পাখি। শীত শুরু হলেই দলবেঁধে চলে আসে তারা। পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। যা দেখতে ভিড় করেন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পাখিপ্রেমীরা।
বলছি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার রামরাই দীঘির কথা। যেখানে প্রতিবছর শীতে আসে একঝাঁক অতিথি পাখি। পুরো দীঘির জলাশয় সেজেছে এক নতুন সাজে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়ে লক্ষ্য রাখছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাণীশংকৈল উপজেলা। এই উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন রামরাই দীঘি। প্রতি বছরের মতো এবার শীতেও দীঘিটিতে ভিড় জমিয়েছে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি।
তাই তো শীতের মৌসুম আসতেই প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরাই দীঘিটি যেন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত। ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে সেখানে। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমীকরা।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ওড়াউড়ির দৃশ্যধারণের চেষ্টায় মেতেছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ আবার নৌকায় চড়ে পাখিদের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তুলছেন সেলফি। করছেন ভিডিও। রামরাই দীঘিতে অতিথি পাখির অবাদ বিচরণ এখন নজর কেড়েছে সবার।
অতিথি পাখি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। তবে পাখিগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পাখি দেখতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল সুমন। তিনি বলেন, ‘এবারে প্রথম আসলাম পাখি দেখতে। এসে দেখি অনেক পাখি এসেছে। পাখিগুলো সুন্দর করে একসঙ্গে উড়ে যাচ্ছে আবার এসে পানিতে বসছে। এ এক মনোরম দৃশ্য। খুবই সুন্দর লাগছে।’
হরিপুর থেকে পাখি দেখতে এসেছেন ওমর ফারুকসহ তার বন্ধুরা। তারা বলেন, ‘পাখিগুলো প্রতিবারে শীতের সময় আসে। তবে অনেকে এগুলো শিকার করতে চায়। পাখিগুলো যাতে এখানে নিরাপদে থাকতে পারে সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, ‘অতিথি পাখি কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে, তাই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রামরাই দীঘি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী দীঘি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব সময় নজরে রাখছি।’
উল্লেখ্য, প্রায় ৪২ একর জমিজুড়ে রামরাই দীঘিটি অবস্থিত। আর এখানে প্রতিদিন দর্শনার্থী আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান গৃহযুদ্ধে রাখাইন অঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলো এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেসব অঞ্চল বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। তখন থেকে নাফনদী পথে টেকনাফ স্থলবন্দরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক আসা কমছেই না। ফলে এবার মাদক রোধে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের (১-১২ জানুয়ারী পর্যন্ত) টেকনাফ সীমান্ত-নাফনদের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযানে মিয়ানমার থেকে পাচারকালে ১২ দিনে পৌনে পাচঁ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসময় পাচঁজন মাদক পাচারকারীকেও আটক করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদ্য যোগদানকারী টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
বিজিবি জানায়, সর্বশেষ আজ রোববার ভোরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার ডাবল জোড়া নামক এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে মাদকের একটি চালান আসার খবরে বিজিবির সদস্যরা সেখানে টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি করে। পরে মিয়ানমার জলসীমানা থেকে কর্কশিট দ্বারা উদ্ভাবিত উপায়ে তৈরি ভেলায় মাদক নিয়ে নাফ নদী সাঁতরে আসা দুই পাচারকারীকে দেখে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ঘন কুয়াশার আড়ালে নদী সাঁতরিয়ে শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অপর পার্শ্বে পালিয়ে যায় তারা। পরে তাদের ফেলে যাওয়া ভেলা তল্লাশি চালিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে বিজিবি-২ অধিনায়ক আশিকুর রহমান বলেন, ‘রোববার ভোরে মাদকের একটি বড় চালান পাচারের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়াস্থল নাফনদে তীরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৫টি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা ১২ দিনে প্রায় পাচঁ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদকরোধসহ সীমান্তে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গার পাশাপাশি কোন মাদক ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবি রাত-দিন টহল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া সীমান্তে সম্পূর্ণরুপে অপরাধ রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
এদিকে বিজিবির তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ১ হাজার ৯৭০ পিস ইয়াবা, ৩ জানুয়ারি ৬ হাজার ইয়াবা, ৪ জানুয়ারি ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা, ৬ জানুয়ারি ৯৬৫ পিস ইয়াবা, ১০ জানুয়ারি ৭৭৫ পিস ইয়াবা, ১২ জানুয়ারি ২ লাখ ৫০ হাজার উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসব অভিযানে আটক হয়েছে পাঁচজন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইস পাচার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পেছনে পৃষ্ঠপোষকতায় বারবার নাম আসে মিয়ানমার সরকারের জান্ত বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক তালিকায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির অধীনেই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচা-বিক্রি হয়ে আসছে।
মাদক পাঠাচ্ছে আরাকান আর্মি
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী তুমুল লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিজিপি ঘাঁটিগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। ঘাঁটিগুলোতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। বিশেষ করে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইনে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখল নেওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ থাকলেও দেশটি থেকে মাদক আসা বন্ধ হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন আরাকান আর্মির সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে। তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন? বিষয়টি আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বলেছি। কেননা আরাকান আর্মি সম্প্রতি সময়ে রাখাইনে মংডু টাউশিপ দখলের পর থেকে মাদক পাচার বেড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত তারা (আরাকান আর্মি) সেদেশ থেকে গবাদি পশু এবং মাদক পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। মাদককের টাকায় তার বিপরীতে বিভিন্ন কৌশলে সেদেশে (মিয়ানমার) চোরাচালালে পাচার হচ্ছে (যাচ্ছে) রসদসহ বিভিন্ন মালামাল। সরকারের উচিত এই মুহূর্তে এটি বন্ধের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। না হয় ভয়াবহ রূপ নেবে।’
সীমান্তের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘এখন মাদকের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির ভূমিকা পরিষ্কার না। এখন মাদকের চালান প্রবেশ অনেক বেশি চিন্তার। তবে বিজিবি সীমান্তে মাদক রোধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ’
সীমান্তে মাদক আসা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন।
এদিকে মিয়ারমারের সংঘাতে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মি দখলের পর গত ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন ধরনের পণ্যেবাহি ট্রলার আসেনি। ফলে স্থলবন্দর অচল হয়ে পরে আছে। অভিযোগ রয়েছে, আরাকান আর্মির ‘প্রতিবন্ধকতার’ কারনে কোন ট্রলার না আসলে সীমান্তে মাদক পাচার বেড়েছে।
রাজশাহী নগরীর একটি ছাত্রাবাস থেকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর ফুদকিপাড়া এলাকার এবেলা ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহতের লাশ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে ৬ জন। হতাহতরা সবাই কুখ্যাত ‘নৌডাকাত নয়ন বাহিনী’র সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন- গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
গতকাল শুক্রবার রাত দশটার দিকে মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাতরা অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিল। নিহতদের মধ্যে ওদুদ বেপারি নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএ'র উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুল করিম খান বলেন, শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি স্পিডবোটের সঙ্গে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ধারণা যারা মারা গেছে তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে আজ শনিবার দুপুর ২ টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোপ থেকে নিখোঁজ থাকা স্পিডবোট চালক নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করত কুখ্যাত নৌডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্য বার অভিযান পরিচালনা করেও অবৈধ এই বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি। সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৩/৪টি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এই বাহিনীর সঙ্গে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিন চালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। এসময় নৌযান দুটিতে ১০/১১ জন আরোহী ছিল।
রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিকভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তীতে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে স্পিডবোট চালক নাঈমের লাশ উদ্ধার হয়।
এদিকে নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার সময় নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, 'ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিন সিটির নির্মাণাধীন আবাসন ভবন থেকে আরও এক রাশিয়ান নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রাশিয়ান নাগরিক ইভান কাইটমাজোভ (৪০) প্রকল্পের স্কেম কোম্পানিতে ইলেকট্রিক সার্কিট ইনস্টলার পদে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে গ্রিন সিটির ১৪ নম্বর ভবনের নবম তলার ৯৫নং ফ্ল্যাটের টয়লেট থেকে এই মরদেহ উদ্ধার হয়।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত রুশ নাগরিকের লাশ ওয়াশরুমে গলায় রশি লাগানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। গ্রিন সিটির দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও অনুসন্ধান চালিয়ে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আবাসিক ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক রুশ নারীর মৃত্যু হয়। নিহত রুশ নাগরিক পোশতারুক সেনিয়া (৪০) রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।
ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দুই দফায় তিনি এ আবেদন করেছিলেন। তবে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় তার দুটি আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নাগিকত্বের আবেদনও খারিজ করেছিল মাল্টা কর্তৃপক্ষ।
ফাঁস হওয়া নথিপত্রের খবর দিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। শাহীন সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। শাহীন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি ও বুশরা চাচাতো বোন। টিউলিপ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নেতার বাড়িতে টিউলিপের বসবাস করা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর জেরে দেশটিতে তার ওপর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশেও টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১৩ সালে শুধু শাহীন সিদ্দিক মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে ওই আবেদন নাকচ করে দেয় হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই সময় মাল্টায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কর্মসূচি দেখভালের বিশেষ দায়িত্বে ছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে আসা নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শাহীন সিদ্দিকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তার মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
শাহীন সিদ্দিক-সংশ্লিষ্ট যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে, সেটির নাম প্রচ্ছায়া। শাহীন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন ছিলেন। প্রচ্ছায়ায় নিজের পদের বিষয়টি ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত তার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তারিক সিদ্দিক।
শেখ হাসিনার সমালোচকেরা দাবি করেন, প্রচ্ছায়ার জন্য জমি দখল করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন তারিক। ২০১৬ সালে ওই জমি বিক্রি করে দেয় প্রচ্ছায়া। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকাধীন জমি দখল ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।
নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৩-এর পর ২০১৫ সালের মার্চে মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের সঙ্গে যৌথভাবে মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন শাহীন সিদ্দিক। সেবার নাগরিকত্বের জন্য শাহীনকে খরচ করতে হতো ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। আর বুশরার খরচ পড়ত ২৫ হাজার ইউরো। এ ছাড়া ফি বাবদ হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসকে দিতে হতো ৭০ হাজার ইউরো।
২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য (স্টেটমেন্ট) দেখান শাহীন। তাতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়। আগের দুই মাসে ১১টি লেনদের মাধ্যমে ওই অর্থ হিসাবটিতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই অর্থের কোনো উৎসের কথা নথিতে জানানো হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রানীতি অনুযায়ী, এক বছর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে নিতে পারবেন না।
বুশরা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শিক্ষার্থী ভিসায় অবস্থানের সময় নিজের ঠিকানা দিয়েছিলেন মধ্য লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের কাছের একটি বাড়ির। ওই বাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে কিংস ক্রস এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে তাকে বিনা মূল্যে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট একজন আবাসন ব্যবসায়ী।
২০১১ সালের নথি অনুযায়ী, ওই সময় বুশরা প্রচ্ছায়ার পরিচালক ছিলেন। তবে ২০১৫ সালে মাল্টার যৌথ নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করেননি শাহীন সিদ্দিক। এর বদলে চট্টগ্রামের দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেডকে নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন তিনি।
২০১৫ সালের শেষের দিকের ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, ‘আবেদন খারিজ এবং/অথবা বাতিল’ শিরোনামে একটি তালিকায় শাহীন সিদ্দিকের নাম রয়েছে। মাল্টার সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, শাহীন সিদ্দিক বা বুশরা সিদ্দিক- কেউই দেশটির নাগরিকত্ব পাননি। তারা যে পাসপোর্ট পাননি, তা নিশ্চিত করেছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসও।
দিনাজপুর সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক তার এক সহযোগীকে নিয়ে থানার ওসি পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা করছিলেন। এ সময় ক্ষুব্ধ জনতা তাদের দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দিনাজপুর কোতয়ালি থানায় চাঁদাবাজি, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনা জানতে পেরে শুক্রবার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাককে ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আটক ও বহিষ্কার হওয়া ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক সদর উপজেলার নহনা গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে ও তার সহযোগী আপেল একই এলাকার শাহাদতের ছেলে।
চাঁদাবাজি, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি এলাকার মৃত নির্ভয় বর্মণের ছেলে চৈতু বর্মণ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নহনা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে শাহীনুর ইসলাম, আপনের ছেলে শান্ত, সাহাদুলের ছেলে আক্তারুল, শ্রী উজ্জ্বল রায়, শ্রী তাপস রায় ও শ্রী মহেশ চন্দ্র রায়।
মামলা, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৈতু বর্মণের ছেলে ইমন চন্দ্র বর্মণের (২২) সঙ্গে একই গ্রামের এক মেয়ের (১৯) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। এই ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আব্দুর রাজ্জাকসহ তার সঙ্গীয় লোকজন মাইক্রোবাস নিয়ে রাত পৌনে ১২টায় দিনাজপুর সদরের ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামে চৈতু চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে যান। নিজেকে কোতয়ালি থানার ওসি পরিচয় দিয়ে চৈতু বর্মণের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলে থানায় যেতে বলেন।
এ সময় পরিবার ও স্থানীয়দের কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে জোরপূর্বক টানাহেঁচড়া করে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তোলেন। মাইক্রোবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার ছেলের ঠিকানা নেন। পরে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাকে টাঙ্গাইলে অপহরণ করে নিয়ে যান।
টাঙ্গাইল থেকে ছেলে ইমনসহ তার বাবা বাদী চৈতুকে নিয়ে বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১০টায় পুনরায় দিনাজপুর নিয়ে এসে ৪নং শেখপুড়া ইউনিয়নের মাধবপুর গোয়ালপাড়া এলাকায় মহেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন চালান এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে নিজের ও ছেলের জীবন বাঁচাতে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে স্বীকার করে এক দিনের সময় চাইলে রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে মামলাসহ প্রাণনাশের হুমকিও প্রদর্শন করে।
পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও লোকজন চৈতু ও তার ছেলেকে ভাটিনা ঠাকুরবাড়ি গ্রামের চাকলাদার পুকুর পাড়ে ডেকে নেন। এ সময় ওই চাঁদার টাকা দাবি করে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তখন এলাকার লোকজনের সন্দেহ হলে তারা এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাদের আটক করে গণধোলাই দেন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
কোতয়ালি থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ও আপেলকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এদিকে ছাত্রদল নেতা আব্দুর রাজ্জাককে সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় সংসদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর জেলা শাখার অধীনস্থ সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাককে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন এবং ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
রাজশাহীতে মদ্যপানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও চারজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মোহনপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। অসুস্থ চারজনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সোলেমান আলীর ছেলে মন্তাজ আলী, ময়েজ মন্ডলের ছেলে টুটুল, মোংলার ছেলে একদিল ও করিষা গ্রামের তুজাম্মেলের ছেলে জুয়েল।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, দুর্গাপুর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে পিন্টু, মৃত জাহান আলীর ছেলে আকবর, সাঈদ আলীর ছেলে মোনা ও আফসার আলীর ছেলে ফিরোজ হোসেন।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র সংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘তার সবাই মদ্যপান করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। যাদের মধ্যে হাসপাতালে দুজন মারা যান। আর হাসপাতালে পৌঁছার আগে দুজন মারা যান।’
জাহানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, ‘উপজেলা ধোরর্সা গ্রামের হান্নান দেশীয় মদ পটেনসি (কট) ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে মদ কিনে মন্তাজের বাড়িতে বসে মদ্যপান করে তারা।’
‘এরপর তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের রামেকে পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে পৌছার আগে ও দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পুলিশের অনুমতিতে চারজনের লাশ দাফন করা হয়েছে।’
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বলেন, এ ঘটনায় নিহত মন্তাজের ছেলে মাসুম রানা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। এর পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন, উপজেলার মতিহার গ্রামের মহিরের ছেলে মুকুল ও ধোপাঘাটা গ্রামের গফুরের ছেলে জনি। জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বাসস
লস অ্যাঞ্জেলেসের কর্মকর্তাারা বলেছেন ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১০ জনে। এ ছাড়া আগুনে ১০ হাজার ঘরবাড়ি, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এদিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানল নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক দলীয় গভর্নরের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প পানি সংকটের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি।
আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। হারিকেন তীব্রতার বাতাস, শুষ্ক আবহাওয়া এবং পানির
চাপ কম থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছে দমকল কর্মীরা।
আগুনের তীব্রতা দেখে তা নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন ফায়ার ফাইটাররা। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেশ কম হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন নেভাতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ছয় অঙ্গরাজ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়ায় আনা হয়েছে। আগুন নেভানোর কাজে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে পানি। প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকার কিছু আগুন নেভানোর জন্য পানি সরবরাহের হাইড্রেন্ট শুকিয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের দুই লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বুধবার সন্ধ্যায় আগুন দেখা যায় চলচ্চিত্র জগতের তীর্থ স্থান হলিউডে। আগুনে হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকার বাড়ি পুড়ে গেছে। বিখ্যাত হলিউড সাইনবোর্ডটির বেশ কাছাকাছি আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লস অ্যাঞ্জেলেস মূল শহরের বাসিন্দারা। এই এলাকায় বেশিরভাগ বাংলাদেশির বসবাস।
এই পর্যন্ত তারা নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে। আগুনে ভস্মীভূত বাড়িঘরে লুটপাট করার খবর পাওয়া গেছে। এই চরম সংকটেও যারা লুটপাট করছে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন লস এঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তা ক্যাথরিন বার্গারবলেন। লুটপাটের ঘটনায় এরই মধ্যে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আগুনে এ পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রায় দুই হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাড়িও রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত সাড়ে তিন লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দাবানলে এ পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
এদিকে হোয়াইট হাউজে এক ব্রিফিংয়ে, বিশেষ ফেডারেল ফান্ড থেকে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দাবানলের কারণে বাতিল করেছেন ইতালি সফর।
আগুনের দাহ থেকে বের হওয়া সূক্ষ্ম কণা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। আগুনের এসব কণা ফুসফুস এমনকি ধমনীতে পর্যন্ত প্রবেশ করে যে কাউকে মারাত্মক অসুস্থ করে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত কয়েকদিনের তুলনায় বাতাসের গতিবেগ কম হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণ কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন দমকলকর্মীরা। তবে পানি সংকট নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পঞ্চগড় জেলায় তাপমাত্রা কমেছে। রাতভর কুয়াশা ঝড়েছে বৃষ্টির মতো। সকালের দিকেও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকেছে পথঘাট। ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীতে কাবু পুরো জনপদ। তীব্র এই শীতে স্থবিরতা নেমে এসেছে জেলা জনজীবনে। বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিমম্ন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
গতকাল বৃহস্পতিবার একই সময়ে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। সে হিসেবে এ এলাকার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে এ জেলায় অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। হিমেল বাতাসের মধ্যেই মাঠে-ঘাটে কাজ করছেন শ্রমজীবিরা। তবে সন্ধ্যার পর পরই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ব্যস্ততম এলাকাগুলো। হাড়কাঁপানো শীতে জুবুথুবু অবস্থা জনজীবনে। কনকনে শীত আর হিমেল বাতাস সহজেই কাবু করছে এখানকার জনজীবন। দুর্ভোগ বেড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের। রাত থেকে সকাল অবধি ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে পথঘাট। ফলে শ্রমজীবিরা সময়মত কাজে যেতে পারছেন না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও বিকেলের পর থেকে আবারও বাড়ছে শীতের দাপট। বিপাকে যানবাহন চালকরাও।
তাদেরকে সকালের দিকেও হেডলাইট জ্বালিয়ে সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অনেকেই খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, আজকে এখানে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৮ শতাংশ এবং গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮-৯ কিলোমিটার।
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে থানা ভবনের তৃতীয় তলায় তার নিজ কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এটিকে প্রাথমিকভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে ধারণা করছে পুলিশ।
ওসি আল আমিনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে থানা ভবনের একটি কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ঘটনার আসল কারণ জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পরে বাকিটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
ওসি আল-আমিনের বাড়ি বরিশালের মুলাদী এলাকায়। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন বলে জানা যায়।
জাজিরা থানা সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা সদরে থানা ক্যাম্পাস অবস্থিত। সেখানে চারতলা একটি ভবনে থানার কার্যক্রম চলছে। ওই ভবনের একটি কক্ষে থাকতেন ওসি আল-আমিন। বেলা সোয়া একটার দিকে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান, ওসি আল-আমিনের দেহ তার থাকার কক্ষের একটি জানালার সঙ্গে ঝুলছে। পরে থানায় কর্মরত অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি শরীয়তপুরের এসপিকে জানান। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও এসপি নজরুল ইসলাম জাজিরা থানায় যান।
শরীয়তপুর পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওসি আল-আমিনের গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। তার শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এদিকে ওসির মরদেহ উদ্ধারের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। থানায় ভিড় করেছেন স্থানীয় লোকজন।