শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-আমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে থানা ভবনের তৃতীয় তলায় তার নিজ কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এটিকে প্রাথমিকভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে ধারণা করছে পুলিশ।
ওসি আল আমিনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে থানা ভবনের একটি কক্ষ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ঘটনার আসল কারণ জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পরে বাকিটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
ওসি আল-আমিনের বাড়ি বরিশালের মুলাদী এলাকায়। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাজিরা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন বলে জানা যায়।
জাজিরা থানা সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা সদরে থানা ক্যাম্পাস অবস্থিত। সেখানে চারতলা একটি ভবনে থানার কার্যক্রম চলছে। ওই ভবনের একটি কক্ষে থাকতেন ওসি আল-আমিন। বেলা সোয়া একটার দিকে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান, ওসি আল-আমিনের দেহ তার থাকার কক্ষের একটি জানালার সঙ্গে ঝুলছে। পরে থানায় কর্মরত অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি শরীয়তপুরের এসপিকে জানান। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন ও এসপি নজরুল ইসলাম জাজিরা থানায় যান।
শরীয়তপুর পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওসি আল-আমিনের গলায় গামছা প্যাঁচানো ছিল। তার শরীরে অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এদিকে ওসির মরদেহ উদ্ধারের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। থানায় ভিড় করেছেন স্থানীয় লোকজন।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকায় লুসাই পার্ক পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এই ভাঙন রোধে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পর্যটন শিল্পে বিরুপ প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে সৈকতে তীব্র ঢেউয়ের প্রভাবে বীচের আশেপাশের বেড়িবাঁধ, পুকুরপাড়, পার্ক, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় পুরো বীচটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা, এদিকে পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক।
ঘুরে দেখা যায়, বীচের দক্ষিণ পাশের প্রায় ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি বাকি আছে সেগুলোও বেঁকে গেছে। বীচের এইপাশের ডোবায় ডুকছে সাগরের পানি। ভেঙে গেছে লুসাই পার্কের সীমানা বেড়িবাঁধ, বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয়দের তৈরি করা বেড়িবাঁধ। সাগর গর্ভে চলে যাচ্ছে বীচের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। বীচের সামনে কোনো প্রতিবন্ধক না থাকায় সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা পৌঁছে যাচ্ছে বীচে গড়ে উঠা দোকানপাট-স্থাপনায়।
স্থানীয় প্রবীণ কয়েকজন ব্যক্তি জানায়, কর্ণফুলীর মোহনায় পাকিস্তানের আমলে ২টিপাথরের বাঁধ ছিলো, বন্দরের নব্যতা বাড়ানোর জন্য ফ্রি ড্রেজিং এর ফলে আনোয়ারা সাইডে দেয়ালটি ভেঙে যায় যার কারণে সাগরে ঢেউ সরাসরি বীচে আঘাত করছে।
পারকি সমুদ্র সৈকতে আসা রিফাত হোসেন নামের এক পর্যটল জানান, দিনদিন পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে, এখন ঢেউয়ের কারণে বাঁধ, গাছ, দোকানপাট ভেঙে যাচ্ছে। এসব রক্ষায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সৈকতের লুসাই পার্কের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পারকি সমুদ্র সৈকতে ব্যবসা করছি,আমার লুসাই পার্কের বাঁধ ভেঙে গেছে, এখানে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ হচ্ছে, রয়েছে সরকার-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। তাই এসব রক্ষার্থে বীচ এরিয়ায় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. কাশেম বলেন, শত শত ব্যবসায়ীরা পারকি বীচকে ঘিরে নিজেদের রুজিরোজগারের ব্যবস্থা করছেন, পানির স্রোত এবং ঝাউগাছ ভেঙে পড়ে আমাদের দোকানপাটের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই বীচটা আমাদের সম্পদ এটি আমাদের রক্ষা করতে হবে।
বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
পারকি বীচ রক্ষায় পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন,পারকি বীচ থেকে টানেল পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তবে এখনো তা কাগজেকলমে পাশ হয়নি। এটার জন্য স্থানীয়দের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার শাখারিয়া গ্রামের বাসিন্দা, ১ ডজনের বেশি মামলা আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর বুধবার (০২ জুলাই) ভোর রাতে খুন হয়েছে। মাদক, বালু ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির টাকা ভাগবাটোয়ারার দ্বন্ধে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়ে থাকতে পারে ধারনা স্থানীয়দের।
জানা যায়, চাকমা জাহাঙ্গীর গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের মধ্য শাখারিয়া গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গোপালপুর, ভূঞাপুর ও মির্জাপুর থানায় মাদক, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে ১ ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপারের নিকট দায়ের করা এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানানো হয়, যমুনার ঘাটে অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, সড়ক পথে ডাকাতি, নারী নির্যাতন ও চাঁদবাজির সংঘবদ্ধ একটি গ্যাং চালাতো চাকমা জাহাঙ্গীর। এদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দরুন টাঙ্গাইল ও জামালপুরের যমুনা নদী তীরের জনপদ অশান্ত হয়ে উঠে।
গোপালপুর থানার ওসি গোলাম মুক্তাদির আশরাফ জানান, বহু মামলার আসামী সন্ত্রাসী চাকমা জাহাঙ্গীরের নাগাল পাচ্ছিলো না পুলিশ। লাশ ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় মামলা দায়ের করতে আসেনি।
সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গেল দু’দিন ধরে ভোলার অভ্যন্তরীণ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে বইছে দমকা বাতাস।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাগর উত্তাল হওয়ায় সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ ভোলার ইলিশা-লক্ষীপুর, আলেকজান্ডার-দৌলতখান, মনপুরা-তজুমুদ্দিন ও মনপুরা-ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে।
এদিকে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীরা বলছেন, দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। কিন্তু, বৈরী আবহাওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এছাড়াও নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। যাঁর ফলে নদী ও সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভোলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত জেবল হক (৮০) কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের লামছি গ্রামের মৃত গনু মিয়ার ছেলে।
বুধবার (২ জুলাই) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মরিয়ম সিমি বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তি সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। দুপুরে তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। কিট সল্পতার কারণে উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এখনো শুরু করা হয়নি।
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় এখন থেকে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। গতকাল মঙ্গলবার হালদা নদীর মোবারক খিল এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে চারটি ড্রোন। নদীর পরিবেশ রক্ষায় এবং সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন বলেন, চারটি ড্রোন মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে হালদা এবং কর্ণফুলীর মোহনা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। ড্রোনগুলো দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের ১২টি দল নদী পর্যবেক্ষণ করবে। এতে নদীতে সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে। একেকটি ড্রোন সাত লাখ টাকা করে কেনা হয়েছে ঠিকাদারের মাধ্যমে।
এর আগে সকালে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গহিরা এলাকায় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। এরপর স্পিডবোটে হালদা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। দুপুর দুইটায় হালদার অংশীজনদের সঙ্গে মোবারক খিল এলাকায় মতবিনিময় সভা করেন।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা হালদার প্রাকৃতিক পরিবেশ, দূষণ, ডিম সংগ্রহ ও জেলেদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘হালদা দেশের বড় ঐতিহ্য। এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। তবে একা নয় সবাই মিলে।’
হালদার দূষণ প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ‘যারা নদীর পরিবেশ দূষণ করে, তারা নদীকে নির্যাতন করে। এটাকে আমি দূষণ বলব না। এদের নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে দূষণ বন্ধ করা সহজ হবে।’
মৎস্য অধিদপ্তরের হালদা নদী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা প্রকল্প আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব আবদুল করিম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ, নৌ পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন, হালদা প্রকল্পের পরিচালক মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ার হোসেন হালদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনীতে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৫ সালের জুনে চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরুই করা যায়নি নির্মাণ কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে অর্থের যোগান নিশ্চিত না হওয়ায় এতদিন কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বিদেশি একটি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করায় দ্রুতই নির্মাণকাজ শুরু হবে।
জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার ষোলআনী ও দৌলতপুর মৌজায় ২০১৬ সালে ৩৫০ মেগাওয়াটের কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সে লক্ষ্যে প্রায় আড়াইশো একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ওই জায়গায় ৬০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল ও ৬৫ মেগাওয়াটের একটি পরিবেশবান্ধব সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চাহিদা না থাকায় ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ ২০৩০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে আরপিসিএল। অন্যদিকে সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ ২০২৩ সালে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) সূত্রে জানা যায়, ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ। ৬৫ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে ২০২২ সাল থেকে কাজ করছেন তারা। ২০২৩ সালে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়। ২০২৫ সালের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতায় তার নির্মাণ কাজই শুরু করা যায়নি। এদিকে বিভিন্ন জটিলতার পর প্রকল্পটিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে জার্মানির বিনিয়োগ ও উন্নয়ন ব্যাংক কেএফডব্লিউ (KFW)। দ্রুতই প্রকল্পটি নির্মাণকাজ শুরু হবে যা ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ভরাট এবং ভূমি উন্নয়নের যাবতীয় কাজ শেষ করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। প্রকল্পটি নদীর তীরে হওয়ায় নদীভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হয়েছে কংক্রিট ব্লক। প্রকল্প এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণে কাজও শেষ হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের ৯ বছর পার হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সেখানে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলী বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছে এ জায়গাটি এখন ষোলআনী প্রজেক্ট নামে পরিচিত। শুনেছিলাম এখানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। কিছু লোক বলেছিল প্রকল্প এলাকার একপাশে একটি সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে, কিন্তু আমরা সেরকম কিছুই দেখতে পাচ্ছি না’।
প্রকল্প এলাকায় ঘুরতে আসা নুরুল হক বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসি। মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই জায়গাটি ষোলআনী সৈকত নামে পরিচিত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে বেড়াতে আসে। অনেকদিন ধরে শুনছি এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে তবে শুধুমাত্র একটি বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ছাড়া এখানে কিছুই নেই’।
আরপিসিএলের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া জানান, ‘প্রয়োজনীয় ফান্ড না পাওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে আসার কথা হচ্ছে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কেএফডব্লিউ (KFW) ৪২ মিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। স্বল্প সুদে পাওয়া এই ঋণ দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা দিবে সরকার। সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জমি পাওয়া। আমাদের জমি রেডি রয়েছে দ্রুতই আমরা সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব। ২০২৮ সালে আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা’।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পুলিশের ওসি সেজে ইলেকট্রনিক্স শো-রুম থেকে পণ্য আত্মসাতের ঘটনায় এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রতারক চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপে আনোয়ারা থানার ওসির পোশাক পরা ছবি ব্যবহার করে নিজেকে থানার ওসি পরিচয় দিয়ে উপজেলার বটতলী ও বন্দর সেন্টার মহালখাঁন বাজারের দুটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা দুটি স্মার্ট টিভি, একটি ফ্রিজ ও দুটি ফ্যান কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং টাকা বিকাশে পাঠানো হবে অথবা লোক মারফত পরিশোধ করা হবে বলে জানায়।
এরপর গত ২৭ জুন মালামাল পিকআপে তুলে নেওয়ার পর চক্রটি টাকা না দিয়ে গা ঢাকা দেয়। প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ীরা তখন আনোয়ারা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নামে এবং সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানাধীন বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকার একটি কলোনিতে অভিযান চালিয়ে মো. সুমন (৩৫) নামের একজনকে আটক করে। তিনি মৃত মো. করিমের ছেলে।
আটকের সময় সুমনের বাসা থেকে একটি ফ্রিজ ও একটি ফ্যান উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া পটিয়া এলাকা থেকে একটি স্মার্ট টিভিও উদ্ধার করে পুলিশ।
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "ওসি সেজে প্রতারণার ঘটনায় একজনকে আটক এবং তিনটি মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক অন্য প্রতারককে ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে।"
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি পিকআপ ভ্যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক কাভার্ড ভ্যান চালক নিহত হয়েছে। এঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৪জন।
সোমবার (৩০ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া হাসান রাবার ইন্ডাস্ট্রির উল্টা পাশে ঢাকাগামী লেনে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত কাভার্ড ভ্যান চালকের নাম রনি (৩৮)। সে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার আলম মিয়ার ছেলে। আহতরা হলেন, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আব্দুল হাকিমের ছেলে কামাল হোসেন(৫০), একই এলাকার আব্দুর রব মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন(৪৩), বাচ্চু মিয়ার ছেলে রনি(৩০) ও যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কাটাখালী গ্রামের খালেক মিয়ার ছেলে কামরুল (২৭)। আহতদের মধ্যে কামাল হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে ঢাকামুখী একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোড ডিভাইডারে ধাক্কা দিলে পেছন থেকে দ্রুতগতির দুটি কাভার্ড ভ্যান পরপর পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে পিছনের কাভার্ড ভ্যানের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় কাভার্ড ভ্যানের চালক চাপা পড়েন। খবর পেয়ে ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ও গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আধা ঘন্টার চেষ্টায় আটকে পড়া কাভার্ড ভ্যান চালককে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শওকত হোসেন জানান, নিহত চালকের মরদেহ পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন'।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ এবং জ্বালানি সম্পদ রক্ষায় চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সোমবার গাজীপুর ও কুমিল্লা জেলায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযানে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সাহেবনগর, ভাদুয়াপাড়া ও কাকিয়ারচর এলাকায় মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) সৈকত রায়হান। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল)-এর আওতাধীন এসব এলাকার ৩টি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৩টি মামলায় ৩ জন ব্যক্তিকে মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় প্রায় ০.৫ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি ৫৩টি অবৈধ গ্যাস রাইজার এবং ২২টি অবৈধ গ্যাসচালিত চুলা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) মনিজা খাতুনের নেতৃত্বে জোবিঅ-টঙ্গী এবং আবিবি-জয়দেবপুরের একটি যৌথ দল অভিযানটি পরিচালনা করে। এর আওতায় তিনটি নির্ধারিত স্থানে পরিদর্শন চালানো হয়। সেগুলো হল, টঙ্গীর শিলমুন হাইস্কুল রোডের এস.এম.ফ্যাশন, মিরাশপাড়ার নদী বন্দর রোডের মোহাম্মদিয়া কালার ট্রেডিং এবং দত্তপাড়া জহির মার্কেটের মিথিলা লন্ড্রি ওয়াশ।
তবে, তিনটি স্পটেই গ্যাস সংযোগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম বা অবৈধ ব্যবহার শনাক্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, পূর্ববর্তী অভিযানগুলোর কারণে ওই এলাকায় অবৈধ সংযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুল ইসলাম বাসস’কে জানান, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি রোধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সবাইকে বৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নিয়ে ও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সচেতন হতে হবে। নাগরিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জ্বালানি খাতের আইন মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক শূন্য ৫ লাখ হেক্টর। এ পরিমাণ জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টন।
সোমবার বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লাখ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লাখ মেট্রিক টন এবং চারকোলের উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কীভাবে কাজ করছে তার ওপরেও মার্কেট রিসার্চে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে। কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনো দিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিখে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে কীভাবে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, ‘পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। দেশে প্রায় ৫০টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজেআরআইয়ের প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআইয়ের জেনোম গবেষণা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম মাহবুব আলী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে শেরপুর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও জনাব মো. আশরাফুল আলম রাসেল।
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নির্ভুলতা, সময়ানুবর্তিতা ও সার্বিক দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনায় অনন্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন শেরপুর এর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ মাজিস্ট্রেট তরফদার মাহমুদুর রহমান।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন,"এই স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়, এটি ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্মী, গ্রাম পুলিশ এবং সহযোগী সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার ফল। আমরা চেষ্টা করেছি নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ রাখা, জনসচেতনতা তৈরি ও নিবন্ধন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে। এই সম্মাননা আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে জনসেবায় নতুন উদ্যমে কাজ করতে। আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তথ্যের সঠিক নিবন্ধন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি। তাই এই কাজকে আমি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, নাগরিক অধিকারের অংশ হিসেবেও দেখি।”
এছাড়াও একই কার্যক্রমে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একজন শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশকেও পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাদের নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও নিবন্ধন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) ও গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।