চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর পারে ১৩টি গ্রাম নিয়ে ৫০ বছরের পুরোনো চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন সদর থেকে নৌপথে দুই কিলোমিটার ভেতরে বকচর, যার অবস্থান ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর ও লালগোলা। ভয়ংকর মাদক হেরোইনের প্রধান তিনটি প্রবেশদ্বারের একটি এই বকচর। আফগানিস্তানের তৈরি এই মাদক ইরানের নৌকায় করে ভারত-পাকিস্তান হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী। আর দুই দশক ধরে ব্যাপক হারে হেরোইন-ফেনসিডিল ঢুকছে ওই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন দিয়ে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে আসা হেরোইনের ৯০ শতাংশই ঢুকছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে। পাশের দেশ থেকে ঢোকা সেই মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে মাদকের ব্যবসার সঙ্গে অন্তত ৭৫০ জন জড়িত। তারা ১৮টি সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করেন। এসব সিন্ডিকেটের প্রধান পরপর দুবারের ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা টিপু। যাকে জেলার প্রায় সবাই চেনেন। অভিযোগ আছে, টিপুর ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ ব্যবসা।
মাদকের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন টিপু। স্বীকার করেছেন তার এলাকা দিয়ে হেরোইন পাচারের কথা। জানিয়েছেন তিনি নিজেও একসময় এসব কারবারের নেতৃত্ব দিতেন। এমনকি গরু পাচারকাণ্ডে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মুর্শিদাবাদের আলোচিত এনামুল হকও ছিলেন তার সিন্ডিকেটের লোক। তবে টিপুর দাবি, ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি মাদক কারবার ছেড়ে দিয়েছেন। এখন এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন অন্য মানুষ।
যদিও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র্যাব- সবার তালিকাতেই শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে আছে টিপুর নাম। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের মুখেও বারবার এসেছে তার নাম। কিন্তু টিপুর নামে কোনো মাদক মামলা নেই।
রাজশাহী বিভাগের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, সিন্ডিকেটগুলো এতটাই শক্তিশালী যে একজন অন্যজনের নামে মুখ খুলতে চায় না। যে কারণে জব্দ হওয়া কোনো চালানের হোতা পর্যন্ত সহজে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব বলেছেন, মাদক কারবারিদের কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। চলতি বছরও ৫৩৯ জন কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সরেজমিন সীমান্তবর্তী এই জেলাগুলো ঘুরেছেন দৈনিক বাংলার এ প্রতিবেদক। হেরোইন সিন্ডিকেট, মাদকের টাকা লেনদেন, রুটসহ কথা হয়েছে অভিযুক্ত হেরোইন কারবারির সঙ্গেও।
শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান-ভারত হয়ে যেভাবে ঢুকছে দেশে
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়- ইউএনওডিসির তথ্য অনুযায়ী, আফিমের সর্ববৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তান। সারা বিশ্বে আফিম সরবরাহের ৮০ শতাংশের বেশি চাষ হয় আফগানিস্তান ভূখণ্ডে। পপিগাছের নির্যাসে আফিম থেকে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক তৈরি করা হয়। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আফগানিস্তানে এই মাদকের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ইউএনওডিসির তথ্য বলছে, আফগানিস্তান থেকে হেরোইন মূলত ইরানের পথ ধরে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের পথ ধরে পাচার হয়। অধিকাংশ সময়ই ইরানি জাহাজের কনটেইনার বা নৌকা ব্যবহার করে হেরোইন পাচার করা হয়। মাদক যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য পানি নিরোধক মোড়ক করা হয়। বড় বড় প্যাকেটের ওপর আলাদা চিহ্ন করে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের নাম উল্লেখ থাকে। সেখানে অবশ্য বাংলাদেশের নামে কোনো প্যাকেট থাকে না। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান হয়ে শেষ চালান আসে ভারতে। মূলত ভারতের চালান থেকেই খুচরা বিক্রেতারা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আনে এই মাদক।
গত অক্টোবরে মাদক পাচারের খুব বড় চক্র ফাঁস করে ভারতীয় নৌসেনা ও নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো। ২০০ কেজির হেরোইনের বড় চালান আটক করে তারা, যার মূল্য আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদক ঢোকে ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ দিয়ে। মাদক সিন্ডিকেটের একটি অংশ মুর্শিদাবাদ ব্যবহার করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা এলাকার পদ্মারচর, সুলতানগঞ্জ, কোদালকাটি, চরআষাঢ়িয়াদহ, মানিকের চরে চালান পৌঁছে দেয়। অন্য অংশ মালদহ ব্যবহার করে চাঁপাইয়ের সদর থানার চরবাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর, শাহজাহানপুর ইউনিয়ন ব্যবহার করে হেরোইন আনে। আরেকটি সিন্ডিকেট মাদক আনে চাঁপাইয়ের চরআলাতুলী দিয়ে। কারবারিরা দেশের ভেতরে এসব জায়গায় ১৫-২০ কেজির বস্তাগুলো ভেঙে ২-৩ কেজির প্যাকেট তৈরি করে পদ্মা পার করে জেলা শহরে পাঠায়।
হেরোইনের চরআলাতুলী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ইউনিয়ন চরআলাতুলী। জেলা সদর থেকে চরাঞ্চলের সুন্দরপুর, চরবাগডাঙ্গা, দেবীনগর তিনটি ইউনিয়ন পেরিয়ে বিদ্যুৎহীন আলাতুলী যেতে পদ্মা ও শাখা পদ্মা নদী অতিক্রম করতে দিন শেষ। পদ্মা নদী পেরিয়ে রাজশাহী জেলার চরআষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের ৮-৯ কিলোমিটার ধু-ধু বালুচরে একমাত্র বাহন ভাড়ায় চলাচলকারী মোটরসাইকেল। মাদক নিয়ে কাজ করা বাহিনীগুলো বলছে, চরআলাতুলী ইউনিয়ন হেরোইন পাচারের এক স্বর্গরাজ্য।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন স্বীকার করেন, ওই সীমান্তের অধিকাংশ মানুষই হেরোইন পাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে হাতেগোনা দু-একজন ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও একসময় মাদক ব্যবসা করতেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ, ভোলাহাট, কানসাট, আজমতপুর, চাকপাড়া, কামালপুর, শিয়ালমারা, ভাটিয়া বিল, তেলকুপি, রঘুনাথপুর, ওয়াহেদপুর, জহুরপুর টেক ও ফতেহপুর সীমান্ত দিয়েও মাদক ঢোকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাধিক চালান অনুসরণ করে তারা জানতে পেরেছেন, মাদকগুলো শহরে এসে পিটিআই মোড়, আরামবাগ, ঝাপাইপাড়া মোড়ে অন্তত চার-পাঁচটি ভাড়া বাসায় রাখা হয়। সেখানে ১০০ গ্রামের ছোট ছোট প্যাকেট করা হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ধাপে ধাপে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়া হয়।
রাজশাহী র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, পদ্মার চরগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা অনেক সময় কষ্টকর। এ কারণে মাদক চোরাচালান চক্র চর এলাকা মাদকের প্রাথমিক সংরক্ষণের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে।
কারা চালাচ্ছেন এই মাদক সিন্ডিকেট
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা এলাকার অনেকেই মাদকের সঙ্গে জড়িত। কেউ তথ্য দিয়ে, কেউ হাত বদল করে, কেউ সরাসরি যুক্ত থেকে কোনো না কোনোভাবে এসব চালান পার করতে সহযোগিতা করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুধু গোদাগাড়ীতেই হেরোইন ব্যবসায়ী রয়েছেন অনন্ত ৪০০ জন। হেরোইনের প্রধান দুই প্রবেশদ্বারে একটি চরবাগডাঙ্গা হলে অন্যটি এই গোদাগাড়ী।
র্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের হেরোইন কারবারির তালিকায় চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ রানা বাদেও নতুন নতুন নাম উঠে এসেছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে একই ইউপির সদস্য জুয়েল ও নুরুলের। তারা এখন আলাদা আলাদা করে সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য জুয়েল বা নুরুল কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ‘ওরা আগে যা করার করেছে। আমার ইউপিতে সদস্য হওয়ার পর আমি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। ওসব কিন্তু আর চলবে না।’
কারবারি তালিকায় আরও আছে সুন্দরপুরের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের নাম। তা ছাড়া রয়েছে মোজাহার, হান্নান কন্ট্রাক্টর, কাশেম, কাজল, গোলাম নবীর নাম। এদের সবার অনন্ত ২০-২৫ জনের একটি করে গ্রুপ আছে। এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়। তবে কেউই সাড়া দেননি।
কেজিতে লাভ ৭৩ লাখ টাকা, হুন্ডিতে টাকা পাঠান মতি
সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকান হেরোইনের প্রভাব সারা বিশ্বে বাড়তে শুরু করেছে। তবে আফগানি হেরোইনে চাহিদা এখনো বেশি। দামও আকাশছোঁয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারবারিরা সীমান্তের চরে হেরোইন ভাগ করে নেন। তখন প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৭ লাখ টাকা। পরে সেগুলো ১০০ গ্রামের প্যাকেটে ভাগ করা হয়। তখন কেজিপ্রতি দাম দাঁড়ায় ১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে লাভ হয় ৭৩ লাখ টাকা। মাদকের দাম হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাঠানোর আগে মধ্যস্থতাকারী একজনের কাছে টাকা জমা থাকে। চালান পদ্মা নদীতে ধরা পড়লে সেটি ভারতীয় কারবারির ক্ষতি হিসেবে ধরা হয়। আর বাংলাদেশি কারবারির হাতে পৌঁছানোর পর পুলিশ ধরলে সেটি দেশি ব্যবসায়ীর ক্ষতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, একাধিক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন টাকা জমা রাখা মধ্যস্থতাকারীদের একজন শিবগঞ্জ উপজেলার মতি। মতি তিন কেজি স্বর্ণ চোরাচালান মামলারও একজন ফেরারি আসামি।
হেরোইন সেবনকারীর সংখ্যা বেশি রাজশাহীতে
মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা উদ্ধারের হার বেশি হলেও হেরোইনে আসক্তের সংখ্যাই বেশি। এমন তথ্য উঠে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে। সংস্থাটি বলছে, দেশের ভেতর হেরোইনের আধিক্য বেশি রয়েছে রাজশাহীতে, পরের অবস্থানে ঢাকা।
চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া মাদকাসক্তদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ২০২১ সালে হেরোইনে আসক্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসাদের সংখ্যা ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
হেরোইনসংক্রান্ত মামলার তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শনাক্ত ও উদ্ধারের হার রাজশাহী বিভাগে ৪৭ দশমিক ৯৮, ঢাকা বিভাগে ২৫ দশমিক ৬৭, রংপুর বিভাগে ৯ দশমিক ৯১, খুলনা বিভাগে ৩ দশমিক ৩৭, ময়মনসিংহ বিভাগে শূন্য দশমিক ৫১ ও বরিশাল বিভাগে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।
উদ্ধারও কম না
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরই তারা ৪ কেজি ৮০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ উদ্ধার করেছে ৪ কেজি ৫৯০ গ্রাম, বিজিবি উদ্ধার করেছে ৪ কেজির মতো। সর্বশেষ ২০২১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, র্যাব মিলে উদ্ধার করে ৫৪ কেজি ১৮৯ গ্রাম, যার মূল্য ৫৬ কোটি টাকার ওপরে।
সারা দেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার অভিযানে ২০২১ সালে হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৪৪১ কেজি, ২০২০ সালে ২১০ কেজি, ২০১৯ সালে ৩২৩ কেজি ও ২০১৮ সালে ৪৫১ কেজি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, মাদকের সহজলভ্যতা কমাতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বিষয়টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে।
সিভিল এভিয়েশন একাডেমিতে বেবিচকের বিভিন্ন গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাক্রমে "Foundation Training Course No. 12" এবং "Basic Office Management Course No. 40" সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আজ ০৩ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার একাডেমির কনফারেন্স রুমে সমাপনী ও সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উক্ত দুইটি কোর্সের কার্যক্রম শেষ হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিভিল এভিয়েশন একাডেমির পরিচালক জনাব প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী (Prasanta Kumar Chakraborty) এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর সদস্য (প্রশাসন) জনাব এস. এম. লাবলুর রহমান (S M Lablur Rahman)। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সাধারণ প্রশিক্ষণ জনাব মোহাম্মদ ইকরাম উল্লাহ (Muhammad Ikram Ullah)।
এই কোর্স দুটি নব নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোর্স দুটিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নব নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সিভিল এভিয়েশন এর বিভিন্ন দপ্তরের দাপ্তরিক কাজের বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
উল্লেখিত কোর্স দুটিতে মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনাব এস. এম. লাবলুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন মানবসম্পদ উন্নয়নই হলো টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি। সুশিক্ষিত, দক্ষ ও কর্মনিষ্ঠ জনবলই একটি সংস্থার প্রকৃত সম্পদ। সিভিল এভিয়েশন একাডেমি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও বলেন যে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে সিভিল এভিয়েশনের সেবায় আরও দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন।
সভাপতি জনাব প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী তাঁর বক্তব্যে বলেন সিভিল এভিয়েশন একাডেমি সর্বদা প্রশিক্ষণার্থীদের পেশাগত জ্ঞান, মনোভাব ও নেতৃত্বগুণ বিকাশে সচেষ্ট।
উক্ত অনুষ্ঠানে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
সোমবার দুপুরে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ শনিবার দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে কোস্ট গার্ড স্টেশন হাতিয়া ও রামগতি কর্তৃক নোয়াখালীর হাতিয়া থানাধীন টাংকির খাল সংলগ্ন মেঘনা নদীতে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় সন্দেহজনক ৪ টি ইঞ্জিনচালিত কাঠের বোটে তল্লাশিকালীন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ১৪০ টন কয়লা ও ২ জন চোরাকারবারিকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে আটককৃত ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কয়লাগুলো চট্টগ্রামের বহিঃ নোঙ্গর এলাকার একটি বাণিজ্যিক জাহাজ হতে অসদুপায় অবলম্বন করে ক্রয় করা হয়েছে। জব্দকৃত কয়লা, চোরাই কাজে ব্যবহৃত বোট ও আটককৃত পাচারকারীদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড উপকূলীয় এলাকায় অপরাধ দমনে ভবিষ্যতেও এধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা তো দূরের কথা, মৌলিক নিরাপদ শ্রেণিকক্ষের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। বিগত পাঁচ বছর ধরে জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে এই বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।
৫ বছর আগে পুরোনো সেমিপাকা স্কুলটি ভেঙে নতুন স্কুল ভবন তৈরির কাজ শুরু করে। সেই ভবনের কাজ শুরুর কিছুদিন পরই কাজ বন্ধ করে পালিয়ে যায় ঠিকাদার।
সরেজমিনে ভবন নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিল্ডিং এর স্তম্ভের কয়েকটি জায়গায় পাইলিং শেষ করা হয়েছে। তবে এই লোহাগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। জম ধরেছে ফেলে রাখা এসব লোহাগুলোতে। এছাড়া আর কোনো কাজ করা হয়নি। স্কুলের পাশে জায়গা না থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে টিন দিয়ে কয়েকটি রুম করে চালানো হচ্ছে স্কুলের কার্যক্রম।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল হোসেন বলেন, এই এলাকার গণজনবসতিপূর্ণ এলাকা, প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দাদের এই একটিই স্কুল। আশেপাশে আর স্কুল নেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্থানীয় সমস্যার কারণে স্কুলের কাজটি সম্পন্ন হয়নি। যার কারণে এই এলাকার ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে দিকে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) এর আওতায় দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটির বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা পাইলিং এর কাজ করে যাতে ব্যয় হয় ৯০লাখ টাকা মত। এরপর কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।
তামান্না আক্তার নামের স্কুলের ৫ম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে, গ্রীষ্মে টিনের গরমে পড়তে পারিনা। আমাদের আশেপাশের বন্ধুরা সুন্দর সুন্দর স্কুলে পড়ে আমরাও চাই টিনের স্কুলের পরিবর্তে নতুন একটা স্কুল হউক, যাতে আমরা ভালো করে পড়তে পারি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, এই স্কুলে বর্তমানে প্রায় ২শ শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষক রয়েছে। ১৯৯৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে এটি জাতীয়করণ করা হয়। আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল ২০২১ সালে স্কুল স্থানান্তরের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। জরাজীর্ণ এই টিনের শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসময় তিনি দ্রুত স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানান।
এ নিয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। বি স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। আপাতত অস্থায়ী স্কুলটি সংস্কার করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হবে।
আলু উৎপাদন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। গত বছর আলু চাষ করে এখনো জেলার ২১টি হিমাগারে পড়ে রয়েছে লাখ লাখ বস্তা আলু। এতে ব্যাপক লোকসানে মুখে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা।
কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে। যেসব জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় আলুর বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এছাড়াও রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে পাকা ধান কাটা শুরু হবে। এ অসময়ে বৃষ্টি হয়ে এখন কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
জানা যায়, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ৭০ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে আগাম জাতের আলু ৭৭৭ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত জেলার ২১টি হিমাগারে আলু মজুত রয়েছে ৮৪ হাজার ১৬৯ মেট্রিক টন।
ঘুরে দেখা যায়, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছিল জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ। বৃষ্টিতে জমিতেই জমেছে পানি। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। শুধু আলু ক্ষেত নয়, আগাম জাতের শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। যেসব ক্ষেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়াও মাঠের আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে।
জানা যায়, গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওযায় এবছর লাভের আশায় আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টি হওযায় আলুর জমিতে পানি জমে। ফলে বৃষ্টির পানিতে একদিকে রোপণকৃত বীজ পচে গেলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। অনাবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের পর বীজ রোপণ কবে করা যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে আরও একমাস আলু রোপণে দেরি হবে।
অন্যদিকে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে আমন ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে ভাসছে ধানের গাছ। আবার শীতকালীন শাক-সবজির জমিতেও দেখা দিয়েছে শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা। পানি দ্রুত না সরলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার ধারকী গ্রামের কৃষক গোলাপ হোসেন বলেন, গতবছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। এবার আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাওয়া যাবে। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করে এক সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে লাগাতার বৃষ্টি। এখন বৃষ্টির পানি জমিতে জমে থাকায় গাছ ঠিক মতো উঠতে পারে নাও পারে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
ক্ষেতলাল উপজেলার কুসুমশহর গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজন আলু লাগাইতাছে দেখে আমিও দুই বিঘা জমিতে কয়েক দিন আগে লাগালাম।
কালাই উপজেলার পুনট এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, ধান পাকতে শুরু করেছে। কয়েকদিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির আধা-পাকা ধান হেলে পড়েছে, ধানের গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানিতে। এই ধান আর ঘরে আসবে না। এমনিতেই গত বছর আলু চাষ করে ব্যাপক লোকসান হয়েছে।
কালাই উপজেলার ধাপ গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাকসবজি ২৭ হেক্টর জমিতে, আমন ধান ৩৩৭ হেক্টর জমিতে ও আগাম জাতের আলু ৮৫ হেক্টর জমিতে কয়েকদিনের অসময়ের বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখনো ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করা যায়নি। ঝড় বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি ও আমন ধানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশে ফিরেছেন সুদানের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা বাংলাদেশি নাগরিক মো. ময়নুল হক।
গতকাল রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেই’ (UNISFA)-তে বাংলাদেশের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট-৩ এর একটি টহলদল আবেই বাজার এলাকায় হঠাৎ ময়নুল হকের সন্ধান পায়।
প্রায় ১৯ বছর আগে ঠিকাদারির কাজে সুদানের রাজধানী খার্তুমে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু হঠাৎ শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ তার জীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। বহুদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর প্রাণ বাঁচাতে তিনি পলায়ন করে চলে আসেন আবেই অঞ্চলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এ সময় তিনি হারান পাসপোর্টসহ সমস্ত বৈধ নথিপত্র, যার ফলে দেশে ফেরা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি দেশে ফিরে আসার প্রবল আকুতির কথা জানান।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আবেইতে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তার দেশে ফেরার আবেদন সেনাসদরে পাঠান। পরবর্তীতে আবেদনটি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে গত ১৫ আগস্ট ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস কর্তৃক ময়নুল হককে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য ‘ট্রাভেল পারমিট’ ইস্যু করা হয়।
এছাড়াও তার বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে দূতাবাস বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিমান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আবেই থেকে বিমানযোগে জুবা, সাউথ সুদানে আগমন করেন ময়নুল হক। পরে জুবা, সাউথ সুদান থেকে তিনি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানযোগে রোববার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর সুদানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে ময়নুল হক খুবই আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটকে পড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিকের দেশে প্রত্যাবর্তনের মতো মানিবক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা আনন্দিত ও গর্বিত।
ভোলার চরফ্যাশনে শতবর্ষী চলাচলের পথসহ অন্যের জমি জবরদখল করে পাকা বসতঘর নির্মাণ করেছেন চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্যজীবিলীগের সাবেক সভাপতি শফিউল্লাহ পালোয়ান। এতে ৩৫টি পরিবার দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে বিপাকে রয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন মৎস্যলীগের সাবেক এই সভাপতি।
রোববার (২ নভেম্বর) চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে গণসাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নির্বার্হী কর্মকর্তা সরজমিন তদন্তের জন্য চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
জানাগেছে, চরফ্যাশন উপজেলার পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি পুকুরপাড়ে শতবছর ধরে ভূমিহীন পরিবারগুলোর বসবাস করে আসছেন। পুকুর পাড়ের চারপাশে ভূমিহীন পরিবার বাদে পালোয়ান বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলোও বসবাস করেন। পুকুরপাড়ের ৩৫টি পরিবারসহ বাড়ির বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র এই পথটি আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে বসত ঘর নির্মাণ করেছেন। এতে পথটি সংকুচিত হয়ে গেছে।
ভূমিহীন পরিবারগুলোর অভিযোগ, শত বছর আগে তাদের যাতায়াতের জন্য ৬ ফুট চওড়া এই পথটি রাখা হয়। এখান দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতো। তাদের বাড়ীর কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ীতে এসে রোগী নিয়ে যেত। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী অনায়াসে প্রবেশ করতো। কিন্তু মৎস্যলীগের সভাপতি সফিউল্লাহ পালোয়ান আওয়ালীগের ক্ষমতা খাটিয়ে চলাচলের পথটি দখল করে সে এবং তার ছেলে পথজুড়ে পাকা বসতঘর নির্মাণ করেন। এতে ৬ফুট চওড়া পথটি আজকে দেড় ফুটে পরিণত হয়েছে। বসত ঘর নির্মাণের সময় ভূমিহীনরাসহ বাড়ীর অন্যান্য পরিবারগুলো সে সময়ে প্রতিবাদ করলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বাড়ির প্রায় ৩৫টি পরিবারের জন্য সরকারি বরাদ্দের টিউবওয়েলটি সে ক্ষমতা খাটিয়ে নিজস্ব আয়ত্তে রেখে ব্যবহার করছেন তার সৌদিপ্রবাসী ছেলের পরিবার ও তিনি। এতে অন্যান্য পরিবারগুলোর টিউবওয়েলটি ব্যবহারের থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, একইসাথে প্রভাব খাটিয়ে পালোয়ান বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা মো. শাহাবুদ্দিন এর চার শতাংশ, আবদুল মুনাফ এর এক শতাংশ, মমতাজ বেগম এর দুই শতাংশ, হাবুল্লা মাঝির দুই শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জমি দখল ছাড়াও শতাধিক অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এছাড়াও মৎস্যলীগের সভাপতি থাকাকালীন জেলেদের নামের সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে তিনি নামে-বেনামে তালিকা করে সরকারি বিভিন্ন ত্রাণ ভোগ করতেন। এতে প্রকৃত জেলেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দীর্ঘদিনের এমন অনিয়মে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকিতে গলদ থাকায় তিনি পার পেয়ে যান।
ভুক্তভোগী মালেক পালোয়ান বলেন, ‘বর্তমানে বাড়িতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ায় দৈনন্দিন কাজ কর্মের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কোন প্রকার দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে, কেউ অসুস্থ হলে কোন প্রকার অ্যাম্বুল্যান্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অথবা কোন চিকিৎসক, উদ্ধারকর্মী যাতায়াত করতে পারবেন না। একজন মানুষ মারা গেলে তার লাশ নেয়ার পথটিও নেই। এমনকি কোন বৃদ্ধ ব্যক্তি মসজিদে যেতে পাঁচ মিনিটের পথ আধাঘন্টা ঘুরে যেতে হয়। তাও অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে।’
একই বাড়ীর শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বলেন, ‘পথটি এতোটাই ছোট হয়েছে যে, যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ বা কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাকে বের করে আনারও কোনো পথ নেই।’
শতবর্ষী চলাচলের পথ দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত শফিউল্লাহ পালোয়ান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সম্পত্তির মধ্যে আমি ঘর নির্মাণ করেছি।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, গণসাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উক্ত বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চরফ্যাশন পৌরসভার প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় বিদেশে। তবে, এবার জেলায় আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় ও আলুর দাম না থাকায় ব্যাপক লোকসান গুনছেন কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। ফলে আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবারের মৌসুমে মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ভালো দামের আশায় হিমাগারে সংরক্ষিত আলু এখন তাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
জেলার ২১টি হিমাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এখন পর্যন্ত হিমাগারে ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। প্রতি বস্তায় গড়ে ৮৫০ টাকা লোকসান ধরলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। এছাড়া পূর্বে হিমাগার গেট থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৬ বস্তা। যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। আলু বিক্রি বাবদ ও আলু বিক্রি না হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে আলু কেনার কোনো উদ্যোগ না থাকায় তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আবার বাজারে আলুর দাম না বাড়া ও ক্রেতা সংকটের কারণে হিমাগারে জমে থাকা আলু বিক্রি করতে না পেরে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এরমধ্যে ২ লাখ ৬ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন বা ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৬ বস্তা আলু ২১টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে ৮২ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন বা ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৫০ বস্তা আলু এখনো হিমাগারে পড়ে আছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে জানা যায়, নভেম্বর-ডিসেম্বরে নতুন মৌসুমে আলু রোপণের সময় ঘনিয়ে এলেও পুরনো আলু এখনো হিমাগারে পড়ে আছে। হিমাগারের বেঁধে দেয়ার সময় ১৫ নভেম্বর মধ্যে হিমাগার খালি না করলে সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করলে প্রতিটি বস্তায় অন্তত ১০৫০-১০৭০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে, ফলে কেউই আলু তুলতে আগ্রহী নন।
সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক ফেরদৌস মোল্লা বলেন, সার সিন্ডিকেটের কারণে সার পায় না। আবার বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে যদিও বা ফসল রোপন করি। কিছুদিন পরেই পড়ে সেচ সিন্ডিকেটের পাল্লায়। ঋণ করে সমস্ত টাকা দিয়ে ফসল ফলায় কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। আবার এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই থাকে। এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বাড়ে আর ট্যাক্স বাড়ে এই দুর্ভাগা কৃষকের ওপর। কারণ কৃষকরা আন্দোলন করতে পারে না।
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের সুড়াইল গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম আকন্দ বলেন, ভালো দামের আশায় আমি ৪ হাজার বস্তা আলু ৫৬ লাখ টাকায় কিনে হিমাগারে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন দামের পতনে মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। প্রায় ৫১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে, আমার সব সঞ্চয় শেষ।
জেলার প্রতিটি হিমাগারেই একই চিত্র। কালাই পৌর শহরের এম ইসরাত হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলে ৫ হাজার ২৬০ জন আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। শুধু এই হিমাগারেই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
কালাই পৌরশহরের শিমুলতলী এলাকার আর বি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের মালিক প্রদীপ কুমার প্রসাদ বলেন, আমাদের হিমাগারে দুই লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষিত ছিল। দেড় মাস আগেই এগুলো বের করার কথা ছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তুলতে পারছেন না। আলু তুললেই বড় ক্ষতি নিশ্চিত, তাই সবাই দ্বিধায় আছেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকার আলু ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মিলন বলেন, উৎপাদন থেকে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত প্রতি কেজি খরচ পড়েছে ২৪-২৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯-১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ১৬ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে।
আরেক আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, আমি ১২ হাজার বস্তা আলু রেখেছিলাম। এর মধ্যে ১০ হাজার বস্তা বিক্রি করেছি, বাকি দুই হাজার বস্তা এখনো হিমাগারে রয়েছে। প্রতি বস্তায় ৯০০ টাকা লোকসান ধরলে প্রায় ৯০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
এই বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক। ক্ষেতলাল উপজেলার শিশির নাজিরপাড়ার কৃষক রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলু চাষ করছি, কিন্তু এমন ক্ষতি কোনোদিন দেখিনি। এ বছর ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু রেখে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
কালাই পৌর শহরের সড়াইল এলাকায় অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, সরকার আলুর ন্যূনতম দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় দাম কমছেই। বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ আলু হিমাগারে পড়ে আছে। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলুর চাহিদার চেয়েও উৎপাদন হয়েছে বেশি, তাই দামও কমেছে। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে, তবে বাজারে তা এখনো কার্যকর হয়নি। কার্যকর হলে কৃষকদের লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমতো।
জয়পুরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। সরকারিভাবে আলু কেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। রপ্তানি ও বিকল্প বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৫ সেপ্টেম্বর আক্কেলপুর সফরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারিভাবে আলু কেনা হবে এবং টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। তিনি হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি ২২ টাকা দরে আলু কেনা ও রপ্তানির আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে শূন্যরেখার নিকট থেকে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৪৭ ব্যাটালিয়ন। পরে মানবিক বিবেচনায় তাকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার পশ্চিম ধর্মদাহ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা সন্দেহ জনক অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে থাকা ফিরোজ আহম্মেদ সাদ্দাম (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মির্জানগর এলাকার তোফাজ্জেল শেখের ছেলে এবং মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পরিবারের মুচলেকা নিয়ে ফিরোজ আহম্মেদকে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিজিবি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিজিবির এমন মানবিক উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ প্রশংসা করেছেন এবং আটক ব্যক্তির পরিবার বিজিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কুমিল্লা সেক্টরের সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (৬০ বিজিবি) সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের ভারতীয় অবৈধ পণ্য জব্দ করেছে।
সুলতানপুর ব্যাটালিয়ন (৬০ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, আজ সোমবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত পৃথক পৃথক অভিযানে কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর ও ব্রাহ্মণপাড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৭৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে এবং ২৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় খাদ্য সামগ্রী।
তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ পণ্য পাচার প্রতিরোধে বিজিবি কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে। সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। জব্দকৃত পণ্যসমূহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ঢাকাগামী ছয়টি দূরপাল্লার বাসে অভিযান চালিয়ে ১৪০০ কেজি (৩৫ মণ) জাটকা (বাচ্চা ইলিশ) জব্দ করা হয়েছে। একইসাথে বাস চালকদের প্রত্যেককে ১২,০০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদেকের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কলাপাড়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে এ মাছ জব্দ করে। অভিযানকালে মিজান, ডলফিন, মিমসহ ছয়টি বাস তল্লাশি করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, মহিপুর-আলীপুর রুটের বিভিন্ন বাসের ৩১টি কর্কসিটে লুকিয়ে রাখা এসব জাটকা বিভিন্ন স্থানে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াসীন সাদেকের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরে জব্দকৃত জাটকা বিতরণ করেন। স্থানীয় ৫০টি এতিমখানার শিক্ষার্থী এবং কলাপাড়া পৌরসভার ৩০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে এসব মাছ বিতরণ করা হয়।
পাবনায় নামাজরত অবস্থায় বাবা নিজাম প্রামাণিককে (৬০) কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মাদকাসক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামাণিকের বিরুদ্ধে। রোববার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের পুরাতন ভাদুরডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তবে তাকে আটক করতে গিয়ে সদর থানার তিন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহত হয়েছেন।
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত নিজাম প্রামাণিক ওই গ্রামের মৃত ইন্তাজ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন। অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামাণিকও বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করতেন। তবে তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত নিজাম প্রামাণিক নতুন বাজারে দুধ বিক্রি করে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরেন। এরপর তিনি রাতের খাবার শেষে এশার নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় আগে থেকে ঘরে ওঁৎপেতে থাকা ছেলে মোস্তফা দরজা বন্ধ করে দেন। এর পর ধারালো হাসুয়া দিয়ে বাবা নিজাম প্রামাণিককে উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
ঘাতক মোস্তফা এরপর পাশের রুমে গিয়ে দরজা আটকে বসে থাকেন। পরে বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে নিজাম প্রামাণিকের লাশ উদ্ধার এবং ঘাতক ছেলে মোস্তফাকে আটক করে।
এদিকে অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফাকে আটকের সময় মোস্তফার ছুরিকাঘাতে সদর থানার এসআই আবু বকর সিদ্দিক, এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই আবু রায়হান আহত হন।
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন এসআই আহত হয়েছেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর নির্মাণাধীন কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কাজ শুরু হয়েছে ২০২০-২১ অর্থ বছরে। ৫৭০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৬ কোটি টাকা।
কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএএম হোল্ডিং লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাঝে ২ বছর করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ ছিল নির্মাণ কাজ।পরে সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পাঁচ বছরেও প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩৮ শতাংশ। সেতুর কাজে ধীরগতিতে দুর্ভোগে আছে লাখো মানুষ। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয়দের মাঝে।
প্রাশাসনিক নজরদারির ঘাটতি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা। শ্রমিক বেতন বকেয়া। সব মিলিয়ে প্রায়শই থমকে থাকে সেতুর নির্মাণ কাজ। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়
দাউদকান্দি, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার অন্তত ৩২ গ্রামের লাখো মানুষকে। তাদের নিত্যদিন পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। এতে নষ্ট হচ্ছে সময়। পারাপারে আছে জীবন ঝুঁকি। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলা ও শ্রমিকদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত চার মাস ধরে প্রকল্প এলাকায় কার্যত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
চর কুমারিয়ার কৃষক লিয়াকত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন নদী পার হয়ে মাঠে যাই। আসা-যাওয়ার পথে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য। ভিটিকান্দি গ্রামের নুরুল হক সরকার বলেন, আমরা হয়তো বেঁচে থাকতে এই সেতুর উদ্বোধন দেখতে পারব না। তিনি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবী জানান। দুধঘাটা গ্রামের গৃহবধূ রিনা আক্তার বলেন, ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা বাজারে যাওয়া সব কিছুতেই এখন ভয় আর কষ্ট। একবার যেতে ও ফিরতে ২০০ টাকার মতো খরচ হয়।
ভিটিকান্দি গ্রামের রুমা বেগম জানান, অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে নদী পার হওয়া যেন এক যুদ্ধের মতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সাইট সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈমুর রহমান বলেন, “জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, বন্যা ও করোনা মহামারির কারণে প্রায় আড়াই বছর কাজ বন্ধ ছিল। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে কাজের মেয়াদ। তবে আরও কিছু সময় প্রয়োজন।
অন্য সহকারী প্রকৌশলী অসিত কুমার রায় জানান, শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থাকায় অনেকে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। তাই আপাতত কাজ বন্ধ আছে।
দাউদকান্দি উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গোমতী নদীর ওপর ৬৬ কোটি টাকায় ৫৭০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় দুটি প্রতিষ্ঠান মঈনউদ্দিন বাশী লিমিটেড ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ (জেভি)। নির্ধারিত সময়েও কাজ শেষ হয়নি। প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার গরুর খামারে ৩মাসে দুই দফায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ১২টি গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। দুই দফায় ২৫ লাখ টাকার দুধের গরু নিয়ে গেছে ডাকাতদল। জেলার লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ঘটনায় শিক্ষক, কেয়ারটেকার ও ছাত্রসহ আটজনকে আহত করেছে ডাকাদল। রোববার মাদ্রাসায় গিয়ে এই তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, এই খামারের আয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলতো। ৩ মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খামারের বড় গরু গুলো লুট হয়ে গেছে। খামারের এক পাশ খালি পড়ে আছে। এখন ১১টি গরু আছে। খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাতদলের আনা তুষের বস্তা। যেগুলোর মাধ্যমে গরু ভ্যানে ওঠানো হয়। এলাকাবাসী গরু উদ্ধার ও ডাকাত দলের গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
মামলার বাদী ওই মাদ্রাসা শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, ‘গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুইটি পিকআপ গাড়ি নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদ্রাসার শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। এ সময় শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মুঠোফোনগুলো ডাকাতদের কাছে নিয়ে যায়। এরপর তারা মাদ্রাসার পাশ্ববর্তী গরুর খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে ৫ টি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এলে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, এ গরু খামারের আয়ের অর্থ দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও এ মাদ্রাসার খামারে গত তিন মাসে আগে ৭টি গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা জানান, লুট হওয়া গরু উদ্ধার ও ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।