সোমবার, ৬ মে ২০২৪

হেরোইন সিন্ডিকেটে জনপ্রতিনিধিরা

শাহরিয়ার হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ফিরে
প্রকাশিত
শাহরিয়ার হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ফিরে
প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২২ ১০:১৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর পারে ১৩টি গ্রাম নিয়ে ৫০ বছরের পুরোনো চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন সদর থেকে নৌপথে দুই কিলোমিটার ভেতরে বকচর, যার অবস্থান ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর ও লালগোলা। ভয়ংকর মাদক হেরোইনের প্রধান তিনটি প্রবেশদ্বারের একটি এই বকচর। আফগানিস্তানের তৈরি এই মাদক ইরানের নৌকায় করে ভারত-পাকিস্তান হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী। আর দুই দশক ধরে ব্যাপক হারে হেরোইন-ফেনসিডিল ঢুকছে ওই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন দিয়ে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে আসা হেরোইনের ৯০ শতাংশই ঢুকছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে। পাশের দেশ থেকে ঢোকা সেই মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে মাদকের ব্যবসার সঙ্গে অন্তত ৭৫০ জন জড়িত। তারা ১৮টি সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করেন। এসব সিন্ডিকেটের প্রধান পরপর দুবারের ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা টিপু। যাকে জেলার প্রায় সবাই চেনেন। অভিযোগ আছে, টিপুর ছত্রচ্ছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ ব্যবসা।

মাদকের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন টিপু। স্বীকার করেছেন তার এলাকা দিয়ে হেরোইন পাচারের কথা। জানিয়েছেন তিনি নিজেও একসময় এসব কারবারের নেতৃত্ব দিতেন। এমনকি গরু পাচারকাণ্ডে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মুর্শিদাবাদের আলোচিত এনামুল হকও ছিলেন তার সিন্ডিকেটের লোক। তবে টিপুর দাবি, ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি মাদক কারবার ছেড়ে দিয়েছেন। এখন এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করেন অন্য মানুষ।

যদিও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব- সবার তালিকাতেই শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে আছে টিপুর নাম। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের মুখেও বারবার এসেছে তার নাম। কিন্তু টিপুর নামে কোনো মাদক মামলা নেই।

রাজশাহী বিভাগের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, সিন্ডিকেটগুলো এতটাই শক্তিশালী যে একজন অন্যজনের নামে মুখ খুলতে চায় না। যে কারণে জব্দ হওয়া কোনো চালানের হোতা পর্যন্ত সহজে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব বলেছেন, মাদক কারবারিদের কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। চলতি বছরও ৫৩৯ জন কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সরেজমিন সীমান্তবর্তী এই জেলাগুলো ঘুরেছেন দৈনিক বাংলার এ প্রতিবেদক। হেরোইন সিন্ডিকেট, মাদকের টাকা লেনদেন, রুটসহ কথা হয়েছে অভিযুক্ত হেরোইন কারবারির সঙ্গেও।

শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান-ভারত হয়ে যেভাবে ঢুকছে দেশে

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়- ইউএনওডিসির তথ্য অনুযায়ী, আফিমের সর্ববৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তান। সারা বিশ্বে আফিম সরবরাহের ৮০ শতাংশের বেশি চাষ হয় আফগানিস্তান ভূখণ্ডে। পপিগাছের নির্যাসে আফিম থেকে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক তৈরি করা হয়। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আফগানিস্তানে এই মাদকের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে গেছে।

ইউএনওডিসির তথ্য বলছে, আফগানিস্তান থেকে হেরোইন মূলত ইরানের পথ ধরে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের পথ ধরে পাচার হয়। অধিকাংশ সময়ই ইরানি জাহাজের কনটেইনার বা নৌকা ব্যবহার করে হেরোইন পাচার করা হয়। মাদক যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য পানি নিরোধক মোড়ক করা হয়। বড় বড় প্যাকেটের ওপর আলাদা চিহ্ন করে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের নাম উল্লেখ থাকে। সেখানে অবশ্য বাংলাদেশের নামে কোনো প্যাকেট থাকে না। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান হয়ে শেষ চালান আসে ভারতে। মূলত ভারতের চালান থেকেই খুচরা বিক্রেতারা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আনে এই মাদক।

গত অক্টোবরে মাদক পাচারের খুব বড় চক্র ফাঁস করে ভারতীয় নৌসেনা ও নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো। ২০০ কেজির হেরোইনের বড় চালান আটক করে তারা, যার মূল্য আনুমানিক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মাদক ঢোকে ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ দিয়ে। মাদক সিন্ডিকেটের একটি অংশ মুর্শিদাবাদ ব্যবহার করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা এলাকার পদ্মারচর, সুলতানগঞ্জ, কোদালকাটি, চরআষাঢ়িয়াদহ, মানিকের চরে চালান পৌঁছে দেয়। অন্য অংশ মালদহ ব্যবহার করে চাঁপাইয়ের সদর থানার চরবাগডাঙ্গা, সুন্দরপুর, শাহজাহানপুর ইউনিয়ন ব্যবহার করে হেরোইন আনে। আরেকটি সিন্ডিকেট মাদক আনে চাঁপাইয়ের চরআলাতুলী দিয়ে। কারবারিরা দেশের ভেতরে এসব জায়গায় ১৫-২০ কেজির বস্তাগুলো ভেঙে ২-৩ কেজির প্যাকেট তৈরি করে পদ্মা পার করে জেলা শহরে পাঠায়।

হেরোইনের চরআলাতুলী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ইউনিয়ন চরআলাতুলী। জেলা সদর থেকে চরাঞ্চলের সুন্দরপুর, চরবাগডাঙ্গা, দেবীনগর তিনটি ইউনিয়ন পেরিয়ে বিদ্যুৎহীন আলাতুলী যেতে পদ্মা ও শাখা পদ্মা নদী অতিক্রম করতে দিন শেষ। পদ্মা নদী পেরিয়ে রাজশাহী জেলার চরআষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নের ৮-৯ কিলোমিটার ধু-ধু বালুচরে একমাত্র বাহন ভাড়ায় চলাচলকারী মোটরসাইকেল। মাদক নিয়ে কাজ করা বাহিনীগুলো বলছে, চরআলাতুলী ইউনিয়ন হেরোইন পাচারের এক স্বর্গরাজ্য।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন স্বীকার করেন, ওই সীমান্তের অধিকাংশ মানুষই হেরোইন পাচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে হাতেগোনা দু-একজন ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও একসময় মাদক ব্যবসা করতেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ, ভোলাহাট, কানসাট, আজমতপুর, চাকপাড়া, কামালপুর, শিয়ালমারা, ভাটিয়া বিল, তেলকুপি, রঘুনাথপুর, ওয়াহেদপুর, জহুরপুর টেক ও ফতেহপুর সীমান্ত দিয়েও মাদক ঢোকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাধিক চালান অনুসরণ করে তারা জানতে পেরেছেন, মাদকগুলো শহরে এসে পিটিআই মোড়, আরামবাগ, ঝাপাইপাড়া মোড়ে অন্তত চার-পাঁচটি ভাড়া বাসায় রাখা হয়। সেখানে ১০০ গ্রামের ছোট ছোট প্যাকেট করা হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ধাপে ধাপে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়া হয়।

রাজশাহী র‍্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, পদ্মার চরগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা অনেক সময় কষ্টকর। এ কারণে মাদক চোরাচালান চক্র চর এলাকা মাদকের প্রাথমিক সংরক্ষণের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে।

কারা চালাচ্ছেন এই মাদক সিন্ডিকেট

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা এলাকার অনেকেই মাদকের সঙ্গে জড়িত। কেউ তথ্য দিয়ে, কেউ হাত বদল করে, কেউ সরাসরি যুক্ত থেকে কোনো না কোনোভাবে এসব চালান পার করতে সহযোগিতা করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুধু গোদাগাড়ীতেই হেরোইন ব্যবসায়ী রয়েছেন অনন্ত ৪০০ জন। হেরোইনের প্রধান দুই প্রবেশদ্বারে একটি চরবাগডাঙ্গা হলে অন্যটি এই গোদাগাড়ী।

র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের হেরোইন কারবারির তালিকায় চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ রানা বাদেও নতুন নতুন নাম উঠে এসেছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে একই ইউপির সদস্য জুয়েল ও নুরুলের। তারা এখন আলাদা আলাদা করে সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য জুয়েল বা নুরুল কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ‘ওরা আগে যা করার করেছে। আমার ইউপিতে সদস্য হওয়ার পর আমি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। ওসব কিন্তু আর চলবে না।’

কারবারি তালিকায় আরও আছে সুন্দরপুরের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের নাম। তা ছাড়া রয়েছে মোজাহার, হান্নান কন্ট্রাক্টর, কাশেম, কাজল, গোলাম নবীর নাম। এদের সবার অনন্ত ২০-২৫ জনের একটি করে গ্রুপ আছে। এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়। তবে কেউই সাড়া দেননি।

কেজিতে লাভ ৭৩ লাখ টাকা, হুন্ডিতে টাকা পাঠান মতি

সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকান হেরোইনের প্রভাব সারা বিশ্বে বাড়তে শুরু করেছে। তবে আফগানি হেরোইনে চাহিদা এখনো বেশি। দামও আকাশছোঁয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারবারিরা সীমান্তের চরে হেরোইন ভাগ করে নেন। তখন প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৭ লাখ টাকা। পরে সেগুলো ১০০ গ্রামের প্যাকেটে ভাগ করা হয়। তখন কেজিপ্রতি দাম দাঁড়ায় ১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে লাভ হয় ৭৩ লাখ টাকা। মাদকের দাম হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাঠানোর আগে মধ্যস্থতাকারী একজনের কাছে টাকা জমা থাকে। চালান পদ্মা নদীতে ধরা পড়লে সেটি ভারতীয় কারবারির ক্ষতি হিসেবে ধরা হয়। আর বাংলাদেশি কারবারির হাতে পৌঁছানোর পর পুলিশ ধরলে সেটি দেশি ব্যবসায়ীর ক্ষতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা বলছেন, একাধিক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন টাকা জমা রাখা মধ্যস্থতাকারীদের একজন শিবগঞ্জ উপজেলার মতি। মতি তিন কেজি স্বর্ণ চোরাচালান মামলারও একজন ফেরারি আসামি।

হেরোইন সেবনকারীর সংখ্যা বেশি রাজশাহীতে

মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা উদ্ধারের হার বেশি হলেও হেরোইনে আসক্তের সংখ্যাই বেশি। এমন তথ্য উঠে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে। সংস্থাটি বলছে, দেশের ভেতর হেরোইনের আধিক্য বেশি রয়েছে রাজশাহীতে, পরের অবস্থানে ঢাকা।

চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া মাদকাসক্তদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে ২০২১ সালে হেরোইনে আসক্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসাদের সংখ্যা ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

হেরোইনসংক্রান্ত মামলার তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, শনাক্ত ও উদ্ধারের হার রাজশাহী বিভাগে ৪৭ দশমিক ৯৮, ঢাকা বিভাগে ২৫ দশমিক ৬৭, রংপুর বিভাগে ৯ দশমিক ৯১, খুলনা বিভাগে ৩ দশমিক ৩৭, ময়মনসিংহ বিভাগে শূন্য দশমিক ৫১ ও বরিশাল বিভাগে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।

উদ্ধারও কম না

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরই তারা ৪ কেজি ৮০০ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ উদ্ধার করেছে ৪ কেজি ৫৯০ গ্রাম, বিজিবি উদ্ধার করেছে ৪ কেজির মতো। সর্বশেষ ২০২১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, র‌্যাব মিলে উদ্ধার করে ৫৪ কেজি ১৮৯ গ্রাম, যার মূল্য ৫৬ কোটি টাকার ওপরে।

সারা দেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার অভিযানে ২০২১ সালে হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৪৪১ কেজি, ২০২০ সালে ২১০ কেজি, ২০১৯ সালে ৩২৩ কেজি ও ২০১৮ সালে ৪৫১ কেজি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, মাদকের সহজলভ্যতা কমাতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বিষয়টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে।


পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে ৫০১ একর জমি পাচ্ছে বন্দর

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৬ মে, ২০২৪ ০০:০৮
রতন কান্তি দেবাশীষ, চট্টগ্রাম

অবশেষে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল নির্মাণে জমির সুরাহা হয়ে গেল। প্রতীকী মূল্যে ৫০১ একর খাসজমি পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। ৩ কোটি ৩ টাকার বিনিময়ে এ জমি দিচ্ছে সরকার।

টাকা জমা দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে তিনটি পৃথক চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো এই চিঠি বৃহস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, সাগর উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মোট ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে। আরও ৮০৩ একর ভূমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন তাদের অধিগ্রহণ করা এই জমির মূল্য নির্ধারণ করে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর ভূমির জন্য বিপুল টাকা ব্যয় না করে প্রতীকী মূলে সেটি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিল।

অবশেষে প্রায় ১০ বছর পর এখন আরও প্রায় ৫০১ একর জমি বুঝে পাচ্ছে বন্দর। এখন পর্যন্ত ৫৬৭ একর জমি হাতে পাচ্ছে বন্দর। তবে আরও প্রায় ৩০০ একরের মতো জমি এখনো বুঝে পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষকে টাকা জমা দিতে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। টাকা জমা দেওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন্দোবস্ত দলিল স্বাক্ষর হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, জমি বন্দোবস্তের জন্য টাকা জমা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রায় ৩০০ একর জমি বরাদ্দ পেতে প্রক্রিয়া চলছে।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেল জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় বে-টার্মিনাল প্রকল্পে সরাসরি ৮০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসতে পারে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

এক দশক ধরে ব্যবসায়িরা বে-টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন এই প্রকল্পে বন্দরের সেবা বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভিড়ানো যাবে। কনটেইনার ও পণ্য খালাস করে শহরে না ঢুকেই দেশের নানা স্থানে নেওয়া যাবে। বন্দর ব্যবহারের খরচ কমবে এই আশায় ব্যবসায়িরা বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি।

বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আবুধাবি পোর্টস আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে তেল ও গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, জমি নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে জমি দিতে রাজি হওয়ায় সে জটিলতা কেটে গেছে। শিগগিরই চাহিদা মোতাবেক টাকা পরিশোধ করা হবে।


বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ

১ জনের দুই পা বিচ্ছিন্ন, আহত ৩
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বান্দরবান প্রতিনিধি

ছবি: সংগৃহীত


বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবার স্থল মাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের দুই পা বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর জানা গেছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার ফুলতলী সীমান্তের ৪৭ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- কক্সবাজারের রামু উপজেলার মো. রফিক, গর্জনিয়া এলাকার মো. আব্দুল্লাহ ও কচ্ছপিয়া এলাকার রশিদ আহমেদ। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, শনিবার রাতে একই এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে দুই বাংলাদেশি আহত হন। এরা সবাই অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তর ওপার থেকে গরু আনতে গিয়েছিল। সেখানে আরাকান আর্মি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তারা আহত হন। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আফসার ইমন জানান, খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্থানীয়রা। সীমান্তে বিজিবি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।


সাতক্ষীরায় আম ক্যালেন্ডার ঘোষণা

৯ মে থেকে বাজারে আসবে মুম্বাই ও গোলাপখাস আম
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

অপরিপক্ব আম বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়েছে সাতক্ষীরায়। ঘোষণা অনুযায়ী, ৯ মে থেকে মুম্বাই ও গোলাপখাস, ১১ মে থেকে গোবিন্দ ভোগ, ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপলি সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে। আজ রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ, সাতক্ষীরা শহর কাঁচা ও পাকা আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রজব আলী প্রমুখ।

সভায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রতি ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ক্রেতাদের প্রতি উল্লিখিত সময়সূচি মেনে সতর্কভাবে সাতক্ষীরার আম কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিদিনই সাতক্ষীরার কোথাও না কোথাও অপরিপক্ব আম পেড়ে রাসায়নিক দিয়ে পাকানোর অভিযোগে বিপুল পরিমাণ আম জব্দ ও বিনষ্ট করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৩৮ হাজার কেজি অপরিপক্ব আম বিনষ্ট করা হয়েছে।


গোপালগঞ্জে যাচ্ছে পাইপলাইনের গ্যাস

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

দেশে পাইপলাইনের গ্যাসে নতুন সংযোগ না দেওয়ার কঠোর অবস্থানের মধ্যেই হঠাৎ করে গোপালগঞ্জের শিল্পাঞ্চলের জন্য নমনীয় হয়েছে সরকার। পায়রা বন্দরের গভীর সমুদ্র থেকে এসে কুয়াকাটা দিয়ে বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট হয়ে খুলনা পর্যন্ত যাবে এ গ্যাস পাইপলাইন। তবে এ গ্যাস বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা যাবে না। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রাধাগঞ্জে প্রস্তাবিত ২০০ একর জমির ওপরে নির্মিত ইকোনমিক জোনে শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা হবে এ গ্যাস।

জেলার অন্যান্য স্থানে গড়ে ওঠা কলকারখানাগুলোও এ গ্যাস চাহিদামাফিক ব্যবহার করে স্বল্পমূল্যে পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। আর তাতে এ অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব দূর হয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

আজ রোববার অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী মাহবুবুল আলম।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুন্সী আতিয়ার রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফারহানা জাহান উপমা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম সিহাব উদ্দিন আজমসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সংগঠনের পরিচালক মোক্তারুজ্জামান, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ মো. ফয়সাল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইয়ার উদ্দিন মো. আওরঙ্গজেব প্রকল্প বিষয়ে অবহিত করেন।

গোপালগঞ্জে গ্যাস আসার খবরে খুশি জেলার সর্বস্তরের মানুষ। জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোশারেফ হোসেন শেখ, টুঙ্গিপাড়া মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল, কোটালীপাড়া মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা উচ্ছ্বসিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে বলেন, গ্যাস এলে নতুন নতুন কল-কারখানা চালু হবে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। বেকারত্ব কমবে। এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ অতিক্রমকারী পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটি জেলার তিন উপজেলা দিয়ে অতিক্রম করবে। উপজেলাগুলো হলো গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া। যেসব ইউনিয়ন ও মৌজা দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন অতিক্রম করবে সেগুলো হলো গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের খাটরা মৌজা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বোড়াশী ও তেঘরিয়া মৌজা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোবরা মৌজা, গোবরা ইউনিয়নের পোদ্দারের চর মৌজা এবং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের সিলনা ও দীঘারকুল মৌজা।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের গজালিয়া, হিজলবাড়ি ও তালপুকুরিয়া মৌজা। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের বালাডাঙা, বড় সিঙ্গিরপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া মৌজা, বর্নি ইউনিয়নের বর্নি মৌজা, ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ভৈরব নগর ও সালুখা মৌজা এবং গোপালপুর ইউনিয়নের গুয়াধানা মৌজা। এসব মৌজা থেকে জমি অধিগ্রহণ ও অধিযাচনের মোট পরিমাণ যথাক্রমে ৬২.৬৩৪ একর ও ১১৭.৪৮৬ একর।


সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে কোস্ট গার্ড-নৌ ও বিমান বাহিনী

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাগেরহাট প্রতিনিধি

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়ার ছিলা এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসহ কয়েকটি বাহিনীর কর্মীরা। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বনরক্ষী-ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি এ কাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।

আগুন নেভাতে নৌ বাহিনীর মোংলা ঘাঁটির লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরফাতুল আরেফিনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি ফায়ার ফাইটিং টিম আগুন নেভানোর কাজে নামেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পাশের ভোলা নদী থেকে পানি উঠানোর জন্য পাইপ সংযোগ দেন। তবে নদীতে জোয়ার না থাকায় পানি সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে।

ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপপরিচালক মামুন আহমেদ জানান, বনের পাশে ভোলা নদীতে এখন ভাটা থাকায় আগুন নেভানোর কাজে পাইপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নেওয়া যাচ্ছে না। জোয়ার হলে এগুলো পার করা হবে। তবে আগুন অল্প অল্প করে জ্বলছে।

এদিকে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধার স্টেশন অফিসার ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার রবিউল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির।

শনিবার বেলা ৩টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির ড্রেনের ছিলা এলাকায় এ আগুনের সূত্রপাত। এরই মধ্যে আগুনে কয়েক কিলোমিটার বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। এখনও থেমে থেমে জ্বলছে সুন্দরবনের আগুন।

আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলেও শনিবার সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় এবং কাছাকাছি কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেননি তারা। রোববার সকালে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়।

বিষয়:

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ মে, ২০২৪ ১২:১৮
বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এতে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, বনরক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নিয়েছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে সুন্দরবনে আমরবুনিয়া এলাকায় আগুনের খবর পায় বন বিভাগ। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে সন্ধ্যা হওয়ায় তারা অভিযান সমাপ্ত করে চলে যায়। পরে আজ রোববার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ স্থানীয় প্রাশন ও বাসিন্দারা আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বন বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যান। শনিবার সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারি নাই।

তিনি বলেন, সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে। আমাদের সাথে নৌবাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ, স্থানীয় প্রাশসন ও সাধারণ মানুষ আগুন নির্বাপণের কাজ করছে।

বিষয়:

গ্রীষ্মেই সিলেটে বন্যার শঙ্কা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

দেশের অন্য এলাকা যখন দাবদাহে পুড়ছে সিলেটে তখন ঠিক উলটো পরিস্থিতি। পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটে গ্রীষ্মেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলে বেড়ে চলছে নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আরও কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।

এরমধ্যে আজ রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টি আর ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।

আবওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব বলেন, রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। এই সময়ে মেঘালয়েও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ফলে ঢল নেমে সিলেটে অকাল বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত সিলেটের নিম্নাচল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঢল নেমে সিলেটের নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবারই দুটি পয়েন্টে নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। শনিবার দুপুরে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১১.০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সারি নদের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্ট শুষ্ক মৌসুমে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। নদের ওই পয়েন্ট পানি শনিবার দুপুরে ১১ দশমিক ৮৯ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।

এদিকে কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে উপজেলার নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে ডিবির হাওর ও কেন্দ্রী হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই হাওরে পানির নিচে তলিয়ে গেছে বোরো ফসল।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, উপজেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পেলেও ফসল ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা নেই।

তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতে বৃষ্টির ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে।

সিলেটে হাওরের ধান কাটা শেষপর্যায়ে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘যেটুকু ধান কাটা এখনো বাকি রয়েছে সেগুলো দ্রুত কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে। আশা করছি বন্যা হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।’


রূপগঞ্জে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি

থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আতিকুর রহমান মঈন তার দুই সহযোগীকে নিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করছেন। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ মে, ২০২৪ ০০:০১
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ

রূপগঞ্জে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্রের ভয়ানক বিস্তার ঘটেছে। সর্বত্রই আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়ি। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে যে পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হচ্ছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে চলে যাচ্ছে অপরাধীদের গোপন ডেরায়। আর এতে করে আন্ডারওয়ার্ল্ডে অস্ত্রভাণ্ডার দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে। ছোটখাটো ঘটনাতেও অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তানরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নামছে। মিডিয়ায় অস্ত্রধারীদের ছবি প্রকাশ হওয়ার পরও এসব অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে না।

এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হলেও গত কয়েক বছরে অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। তদন্তের দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যায় গডফাদাররা। ফলে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্কও অক্ষত থেকে যাচ্ছে। রূপগঞ্জে কথায় কথায় অস্ত্র প্রদর্শন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বুলেটের ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি যেন অহরহ ঘটনা। উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ৪৭টি সন্ত্রাসী বাহিনীর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকের কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্রও রয়েছে তাদের হাতে। গত এক যুগে অস্ত্রধারীদের গুলিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় সাড়ে ৪০০ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। আর বৈধ অস্ত্র রয়েছে ১১০ জনের কাছে। এর মধ্যে ৬০ জনের অস্ত্র থানার অস্ত্রগারে জমা রয়েছে। বৈধ অস্ত্রের মধ্যে একটির লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।

অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রূপগঞ্জের সন্ত্রাসীরা সাধারণত যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওয়ান শুটার গান, পাইপ গান, এলজি, একে-২২, আমেরিকান নাইন এমএম পিস্তল, সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ, নাইন এমএম, পয়েন্ট টু টু ও রিভলবার। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক ম্যাগাজিন, ককটেল, বারুদসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকও রয়েছে তাদের কাছে। এসব অস্ত্রের মূল চালান আসে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম এলাকা হয়ে এবং ভারত থেকে কুমিল্লা ও সিলেট হয়ে। অধিকাংশ সময় অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার করা হয় ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্য ও শিশুদের। সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের আদলে বানানো বেশ কিছু খেলনা পিস্তলও রয়েছে। অস্ত্রের আধিক্য দেখাতে তারা খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে থাকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, রূপগঞ্জে গত এক যুগে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর হাতে খুন হয়েছেন ১৬ জন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও থানা পুলিশের তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় সাড়ে ৪০০ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ আরো অস্ত্র বিভিন্ন অঞ্চলে গোঁপন স্থানে রয়েছে। অস্ত্রগুলো নির্বাচনকালীন, হাউজিং কোম্পানির জমি দখল, ইটের ভাটা দখলসহ নানা দখল বাণিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও এসব অস্ত্র ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। একটি ছিনতাইকারীচক্র, ডাকাত সদস্যরাও এসব অস্ত্র ভাড়ায় নিচ্ছে । সূত্র আরও জানায়, মিলকারখানায় জুট ব্যবসায়ী, হাউসিং কোম্পানির দালাল, বালু ব্যবসায়ী, ইটা ব্যবসায়ী, স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসব অস্ত্রের ব্যবহার। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই রিভলভার জাতীয়। মাঝে মাঝে শর্টগান, এসএমজিসহ নানা হাতবোমাও পাওয়া যাচ্ছে। র‌্যাব, পুলিশের অভিযানে গত এক বছরে ১১ টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই আগ্নেয়াস্ত্র। এক পরিসংখ্যানে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচজন করে গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য মিলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জের দীর্ঘদিনের আলোচিত হত্যাকাণ্ড শিল্পপতি রাসেল ভূঁইয়া, তারেক বিন জামাল, খালেদ বিন জামাল, ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা হাজী বেলায়াতসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় ক্রমেই অবৈধ অস্ত্রের মজুতের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল ৫ নং ক্যানেল, মুড়াপাড়ার মাছিমপুর এলাকা, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র, পূর্বাচল উপশহর, কাঞ্চন পৌরসভা, তারাব পৌরসভা, সদর ইউনিয়নের ইছাপুরা ও ভোলানাথপুর এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে রয়েছে চরম আতঙ্ক। অন্যদিকে পূর্বাচল উপশহরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক কোম্পানির ছত্রছায়ায়ও গড়ে ওঠেছে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহিনী।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পুলিশ ১১ টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২২টি গুলি উদ্ধার করেছে। এ সময় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্ত মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা (এসবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত গুলির ঘটনা ২৫টি ছাড়িয়ে গেছে। এই হিসাবে মাসে গড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচজনেরও বেশি।

থানা পুলিশ ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন মারামারিতে গত ২০২৩ সালে অস্ত্রবাজির অন্তত ১৩টি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এসব ঘটনায় অস্ত্র হাতে থাকা ৭ জনের ছবি ও ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে পেশাদার সন্ত্রাসীর পাশাপাশি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতাও রয়েছেন।

দৈনিক বাংলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব অস্ত্রধারীর কেউই ধরা পড়েনি। দুর্বৃত্তদের প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিস্তল, শটগান, এলজি ও বন্দুক। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। তারা এসব ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে দায়ী করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালে মাছিমপুর এলাকায় নজরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর মিরকুটিরছেও এলাকায় আব্দুর রশিদ মোল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২৩ সালের ৩১ মে বরপা এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে বিল্লাল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২০২৩ সালের ১০ মে চনপাড়া পুনর্বাসন এলাকায় সৈয়দ মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর সিটি শাহীন নিহত হন। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ডাকাতদলের গোলাগুলিতে আবুল হোসেন নামে একজন নিহত হয়। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্বাচলের ১১ নম্বর ব্রিজের নিচ থেকে সোহাগ, নুর হোসেন ও শিমুল নামে তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, রূপগঞ্জে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি অনেক বেশি। বর্তমানে রূপগঞ্জে অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আমরা চাই রূপগঞ্জে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হউক।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক সরকার বলেন, ‘রূপগঞ্জে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়। বেশকিছু অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা অস্ত্র নিয়ে ছবি প্রদর্শন করেছে কিংবা যেসব এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে সেসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’


গোয়ালন্দে রাস্তার কাজ ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা!

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ মে, ২০২৪ ০৩:০৭
মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার কাজ প্রায় এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। এতে করে প্রচণ্ড ধুলাবালুর মধ্যে ও ইট-পাথরের ওপর দিয়ে চলাচল করতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা। গোয়ালন্দ উপজেলা শহর ও দৌলতদিয়া ঘাটের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ৮ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে এলজিইডি হতে অন্তত ৬/৭ টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতে কোনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে এলাকার জনসাধারণ।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উত্তর দৌলতদিয়া এন এইচ ডব্লিউ উজানচর জিসি ভায়া চর দৌলতদিয়া রাস্তাটির দৈর্ঘ ৮ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার। ১৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যয়ে ১৮ ফুট চওড়া করে রাস্তাটি নির্মানের জন্য নিযুক্ত হয় ইমতিয়াজ আছিফ এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং (জাভা) নামে ফরিদপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি, শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ। ইতোমধ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ৯টি ছোট সেতু ও কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকাজুড়ে ডব্লিউএমএম এর কাজ হয়েছে। তাবে দুই পাশে মাটির কাজ ও গাইডওয়ালের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শুরু করা হয়নি কার্পেটিংয়ের কাজ। ভাঙ্গাই হয়নি রাস্তার অনেক জায়গার পুরোনো পিচ।

এ অবস্থায় প্রচণ্ড খরা ও রোদে ওই রাস্তাজুড়ে প্রচণ্ড ধুলাবালুর সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে রাস্তার দু’পাশের শত শত পরিবার, সাধারণ যাত্রী ও চালকরা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও পারছে না। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় বড় ইট ও পাথরের কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। ঘনঘন নষ্ট হচ্ছে হালকা যানবাহনের যন্ত্রাংশ। উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ প্রায় ১ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে চরের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তার ধুলোবালির মধ্য দিয়ে চলতে চলতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন স্থানে বহুবার সমস্যার কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আমরা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা চিন্তা করছি।’

গোয়ালন্দ শহরের বাসিন্দা হাবিবুর শেখ বলেন, ‘কিছুদিন আগে তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ চর দৌলতদিয়া বাবার বাড়ি হতে এই রাস্তা দিয়ে অটোরিকশায় চড়ে শহরে আসছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা ছিদ্দিক শেখ বলেন, রাস্তার পাশে তার বাড়ি হওয়ায় ধুলোবালিতে ঘরবাড়ির ওপর আস্তরন পড়ে গেছে। রাস্তার ধুলোয় বাড়ির খাবার-দাবার বিছানাপত্র দ্রুত নোংরা হয়ে যায়। একটা অসহনীয় অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, ‘রাস্তাটির কাজ গড়ে ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিল পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। কার্পেটিংসহ অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত এক বছরে ৬/৭টি চিঠি দিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই তারা দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বলে। আশা করি, চলতি মাসেই তারা অবশিষ্ট কাজ শুরু করবে।’ এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের মুঠোফেনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


সুন্দরবনে আগুন: সকালে কাজ শুরু করবে ফায়ার সার্ভিস

আপডেটেড ৫ মে, ২০২৪ ১২:১৪
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

পূর্ব সুন্দরবনের গহিনে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ও গুলিশাখালীর মাঝামাঝি এলাকায় ওই আগুন লাগে। এ ঘটনায় পুড়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার বনাঞ্চল। তবে আগুন এখনো ছড়িয়ে পড়ছে এবং রাত ৯টায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানা গেছে। বনে আগুন লাগার খবর পেয়ে বনবিভাগ, স্থানীয় গ্রামবাসী এবং জেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে গহিন বনে রাত নেমে আসায় আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারেক সুলতান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আনিসুর রহমান ধারণা করছেন, বনের ভেতর মধু সংগ্রহে মৌয়ালদের দেওয়া আগুন ছড়িয়ে গিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, বিকালে বনরক্ষী ও বনের ভেতরে কাজ করতে আসা স্থানীয় গ্রামবাসী আগুন দেখতে পায়। এ সময় বনবিভাগের কর্মী ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। এদিকে খবর পেয়ে সন্ধ্যার দিকে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়েছে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই কিলোমিটারজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিনই হবে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও পরে শরণখোলা ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটসহ মোট ৩টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাতে কাজ শুরু করতে না পারলেও, সকাল থেকে কাজ শুরু করবে।

আগুনের এই ঘটনায় কি পরিমাণ বনাঞ্চল পুড়ে গেছে বনের পশু হতাহত হয়েছে কি না তা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে বলেও জানিয়েছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।


সুন্দরবনের গহীনে আগুন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৪ মে, ২০২৪ ১৮:২৩
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

পূর্ব সুন্দরবনের গহীনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ও গুলিশাখালীর মাঝামাঝি এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে গেছে কয়েক মিটার বনাঞ্চল।

চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আনিসুর রহমান জানান, বনের ভিতর মধু সংগ্রহে মৌওয়ালের আগুনে এই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটসহ বনবিভাগের চারটি ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া পূর্ব সুন্দরবনের বন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই কিলোমিটার জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিনই হবে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, আগুনের খবর পেয়ে এরই মধ্যে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।

আগুনের এই ঘটনায় বনের পশু ও কি পরিমাণ বনাঞ্চল পুড়ে গেছে, তা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে বলেও জানান বন কর্মকর্তা আনিস।


মাগুরা-ফরিদপুর রেল চালু হচ্ছে আগামী বছর

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরা থেকে ফরিদপুর মধুখালী স্বপ্নের রেলপথ চালু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর ২২ মাসে প্রকল্পের ৪৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী বছরের প্রথম দিকেই এই রুটে রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মাগুরা অংশে অধিগ্রহণ করা জমি এখনো বুঝে না পাওয়ায় কাজ কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে চার বছর মেয়াদি এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে জমি অধিগ্রহণ ও করোনার প্রাদুর্ভাবসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মে মাসে। ওই বছরের ২৭ মে ভার্চুয়ালি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরেজমিনে গত বুধবার মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন রেল সেতুর মাগুরা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। মধুখালী অংশে পুরনো রেললাইন সংস্কারের কাজ চলছে। ওই অংশে বেশ কিছু বক্স কার্ল্ভার্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে মাগুরা অংশে দৃশ্যমান কাজ দেখা যায়নি।
জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হক বলেন, মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। এখন দ্রুত গতিতে কাজ এগুচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়েনি। মধুমতী নদীতে রেল সেতুসহ পুরো প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যে এখানে রেল চলা চল শুরু হবে।’

এখনো মাগুরা অংশে অধিগ্রহণ করা বেশির ভাগ জমি বুঝে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এটাকেই এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এই কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা অংশে রেল প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির পরিমাণ ১০৭ একরের মতো। যার মূল্য প্রায় ১১৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে অধিগ্রহণ করা এসব জমির বিপরীতে ক্ষতি গ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত দু দফায় ১ দশমিক ৯৬ একর জমির ক্ষতি পূরণ হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়। নানা জটিলতা কাটিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ শুরু করেছি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চাইলে এখন স্টেশনের কাজ শুরু করতে পারবে। ঈদের আগে আরও কিছু জমি তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এর পর ধাপে ধাপে রেল লাইনের জমির শিগগিরই বুঝিয়ে দেওয়া হবে’।

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, কামারখালী ও মাগুরা স্টেশনইয়ার্ডে ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার লুপলাইন নির্মাণ, দুটি নতুন স্টেশন (কামারখালী ও মাগুরা) নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৪৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯দশমিক ৯কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করছে কাজী নাবিল আহমেদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেলকন স্ট্রাশন কোম্পানি লিমিটেড। অপর দিকে মধুমতী নদীর ওপর ২ হাজার ৪১২মিটার দৈর্ঘ্যের রেল সেতু নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে ৪৪৯ কোটি টাকায়। এ কাজের ঠিকাদারি পেয়েছে মীর আক্তার কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বাকি অর্থ ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজে।


মনু নদীর চাতলাঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তলোন

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাঘাটে মনু ব্রিজের একেবারে কাছ থেকে বালু তোলায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে মনু নদীর ব্রিজ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট, নদীর বাঁধ ও কৃষিখেত।

আইন অমান্য করে বালু উত্তোলনের পর ডাম্পার ট্রাকে ওভারলোড করা হয়। এরপর বেপরোয়াগতিতে ট্রাকগুলো চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

একইভাবে কমলগঞ্জের ধলাইপাড় এলাকা থেকেও ধলাই নদীর বালু উত্তোলন হচ্ছে। ব্রিজের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে। তবে জরিমানার পরপর কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ থাকলেও আবার তা শুরু হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মনু নদীর চাতলাঘাট থেকে বালু উত্তোলন করে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়ক ব্যবহার করে দিন-রাত বালু পরিবহন করছে ১০ চাকার ডাম্পার ট্রাক। চাতলাঘাট বালুমহাল ইজারা নিলেও বালু উত্তোলনের কথা চাতলাপুর মনু ব্রিজের এক কিলোমিটার নিচ থেকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে ব্রিজের কয়েকশ গজ দূর থেকেই। এতে মনু নদীর চাতলা ব্রিজ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তা ছাড়া বিশাল এলাকা নিয়ে বালু উত্তোলন ও ডাম্পার ট্রাকে বালু পরিবহনে নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও দেবে যাচ্ছে। ট্রাকগুলো উন্মুক্তভাবে বালু পরিবহনের ফলে একদিকে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে শমশেরনগর বাজার চৌমুহনায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের আবাদি জমিতে বালু গড়িয়ে পড়ছে এবং কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আপত্তি জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে কৃষক অভিযোগ তুলেছেন। ট্রাকের কারণে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ লিখিতভাবে জানালেও তা কাজে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. হেলাল মিয়া বলেন, ‘বালু উত্তোলনের কারণে আমি খেত করতে পারি না। আমার কলার গাছ, আকাশি গাছ নষ্ট করি ফেলছে। অনেকবার কওয়ার পরেও বেটাগিরি দেখায়। ব্রিজের নিচ থেকে এক কিলোমিটার দূরে থেকে বালু তোলার কথা। এখন তারা ব্রিজের কাছাকাছি আইছে। অফিসার বা কেউ আইলেই তারা টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করি দেয়। বালু ধুইয়া ধুইয়া আমরা জমিনে পড়ে, ফলে কোনো খেত কৃষি করতে পারি না।’

শমশেরনগর বণিককল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, ‘বালুবহনকারী ডাম্পার ট্রাক চলার সময় ধুলোবালি উড়ে রাস্তার দুই পাশের দোকানপাটে ও চোখেমুখে এসে পড়ে। এ ছাড়া নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি করে।’

সড়ক বিভাগ, মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘বালুবাহী ট্রাকের কারণে রাস্তার ক্ষতি হওয়ায় আমরা ইতোপূর্বে তাদের লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে চাতলাপুর মনু নদীর বালুমহাল ইজারাদার মো. জুয়েল আহমদ বলেন, ‘আমার বালু উত্তোলনের কারণে কে খেত করতে পারছে না? এগুলো নিয়ে আপনাদের এত মাথাব্যথা কেন? আপনি নিউজ করেন। অনেক নিউজ হয়েছে। নিউজ করে কোনোকিছু হবে না।’

কুলাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘ব্রিজের কাছাকাছি আসার কারণে সম্প্রতি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার পরও বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।’


banner close