সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে দুজন ও হাসপাতালে যাওয়ার পর আরও ৩ জন মারা যান বলে জানা যায়।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার উনিশ মাইল নামক স্থানে ঢাকাগামী ট্রাক ও সিলেটগামী প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘সকালে ঘন কুয়াশার কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পর আরও দুজন মারা গেছেন বলে তথ্য পেয়েছি। বিকেলে আরেকজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। তবে নিশ্চিত হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘নিহতরা সকলে প্রাইভেটকারের চালক ও যাত্রী। সবার মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।’
নিহতদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- প্রাইভেটকারের চালক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার আমইল্লা গ্রামের সুহেল (৪০) এবং যাত্রী শামীমা (৪০), ইতি বেগম (৩৫) ও আয়ান (৭)।
আরেকজন বিকেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
যশোরের কেশবপুরে স্ত্রী ও সন্তানের পিতৃ পরিচয় চাওয়ায় তসলিমা খাতুন নামে এক যুবতিকে লোহার রর্ড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে দু'হাত ভেঙ্গে দেওয়াসহ মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়ার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সজ্ঞয় দাস আসামীর নিকট থেকে মোটা অংক নিয়ে জখমি সনদ আড়াল করে তড়িঘড়ি করে সাধারণ ধারায় আদালতে চার্জসীট দাখিল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তসলিমার বোন নাসিমা খাতুন বলেন, গত ৬ আগষ্ট তার বোন তসলিমা খাতুন স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পরিচয় চাওয়ায় উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন (৩০) তাকে মারপিটসহ তার দু'হাত ভেঙ্গে দেয়। এ নিয়ে কেশবপুর থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় থানার এসআই সজ্ঞয় দাসকে।
নাসিমা খাতুন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহন না করে এবং ডাক্তারী সনদ আড়াল করে, তড়িঘড়ি করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ২৫ আগস্ট মামলার চার্জসীট আদালতে দাখিল করেন। চার্জসীটে তিনি ভিকটিমের দু'হাত ফ্যাকচার (ভাঙ্গা) উল্লেখ না করে সাধারণ ফোলা-যখমের কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে মামলার আসামীকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে ভিকটিম ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
নাসিমার অভিযোগ, সাধারণ ধারায় প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার ফলে মামলার আসামী সোহাগ হোসেন ১২ অক্টোবর আদালত থেকে স্থায়ী ভাবে জামিন পেয়েছেন। তিনি এসময় বলেন, মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা এসআই সজ্ঞয় দাস মামলার তদন্তসহ সঠিক ভাবে চার্জসীট দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা গ্রহন করেন। তার পরও তিনি মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছেন। এর বিরুদ্ধে আমাদের আইনজীবি এ্যাড. আব্দুল মজিদ পুলিশের চার্জসীটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পত্র দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত তা মঞ্জুর করে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে তার তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করার জন্য যশোর পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলার বাদী সংবাদ সম্মেলনে জানান।
প্রায় ১ সপ্তাহ আগে দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানে কেবিএস কলেজ সংলগ্ন মাসিমপুর এলাকায় হাবিবউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি মেইন রোডের পাশে ১ টি পাকা দোকান নির্মাণ করে। সড়ক ও জনপদের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ পাকা দোকানটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলে দোকান মালিক হাবিবউদ্দিনের লোকজন সেখানে সিন্ডিকেট তৈরি করে সড়ক ও জনপদের সাব-এসিস্ট্যান্ট ইন্জিনিয়ার আরিফ ও সার্ভেয়ার অমিতকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সেখানে উত্তেজিত পরিবেশ সৃষ্টি হলে প্রথমে পুলিশ পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানকার সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভেবেছিল, এবার বুঝি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। গত ৭ অক্টোবর এই উচ্ছেদ অভিযানের মাত্র ৭ দিনের মাথায় সেই স্বস্তি উধাও। অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতেই উচ্ছেদকৃত স্থানে আবারো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজশেই এই প্রবণতা বাড়ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
মোঃ রায়হান আলী জানিয়েছেন আমার জায়গার পাশে দোকান করলে ভবিষ্যতে বাড়ী বানালে সেখানে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে সেজন্য আমি ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপথ সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এমনকি আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারির পরেও সেখানে জোর করে হাবিবগং তাদের লোকজন দিয়ে রাতারাতি দোকান তুলে রাস্তা বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম জানান একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেবল একজন মানুষকে নয়, পুরো একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়। সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো বিশেষকরে পুলহাট থেকে শিকদার হাট পর্যন্ত আমাদের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে রাস্তার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ে, অবকাঠামোগত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, পুলহাট থেকে খানপুর পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে যতগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে, সেগুলো আমরা উচ্ছেদ করবো। আবার কেউ গড়ে তুললে আমরা আবারো অভিযান চালাব। তবে আমাদের সাব-ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত মাঠে তদারকি করছেন। শুধু সওজ নয়, প্রশাসন, পুলিশ ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব না।
ব্যবসায়ী সংগঠনের তীব্র আপত্তি থাকার পরেও মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আরোপ করা বর্ধিত শুল্ক (ট্যারিফ)। তবে নতুন শুল্ক নিয়ে বন্দর এবং ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। ৩৯ বছর পর এই ট্যারিফ বাড়লেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর তো এত বছর লস করেনি। গত বছরও প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লাভ করেছে। তারপরও ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে কার স্বার্থে?
আলোচনা ছাড়াই ট্যারিফ কার্যকর করায় আমদানি খরচ বেড়েছে বলে দাবি করেছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন শুল্ক নীতির বড় প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে। ফলে নতুন শুল্কনীতি স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে একবারও আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমার কাছ থেকে বাড়তি ট্যারিফ নেবেন, আপত্তি নেই। কিন্তু তা হবে আলোচনার ভিত্তিতে।’ তিনি বলেন, ২৯ বছরের ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারে চট্টগ্রাম বন্দরের লস হয়েছে শুনিনি। তাহলে এখন কেন এই ট্যারিফ বাড়াবেন?’
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ বর্ধিত এই ট্যারিফ পরিশোধ করবে না। এর আগে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে ট্যারিফ কতটুকু বাড়ানো যায়; কিংবা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে কি না। এই আলোচনার আগ পর্যন্ত ট্যারিফ আদায় স্থগিত রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘ট্যারিফ বাড়ানোর কাজ তো এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ না। এটি নির্বাচিত সরকারের কাজ।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রতি ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা ছিল ৩০ টাকা, এখন তা ১২২ টাকা। তাহলে তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্যারিফ বাড়ছেই। নতুন করে আবার বাড়াতে হবে কেন? নতুন এ বৃদ্ধিতে প্রতি কনটেইনারে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হবে। আর এই টাকা গিয়ে পড়বে ভোক্তাদের ওপর।
ট্যারিফ কত বাড়ছে: আগে যেখানে একটি জাহাজের পাইলটিং চার্জ ছিল ৩৫৭ দশমিক ৫০ ডলার, এখন সেখানে করা হয়েছে ৮০০ ডলার। আগে যেখানে ২০০ থেকে ১,০০০ জিআরটির জাহাজের টাগ চার্জ ছিল ১৫৮ ডলার, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬১৫ ডলার। ইকুইপমেন্টের ক্ষেত্রে আগে যেখানে পণ্যভর্তি ২০ ফুট কনটেইনারের কি গ্যান্ট্রিক্রেন চার্জ ছিল ১৫ ডলার, এখন তা ২০ দশমিক ৮০ ডলার করা হয়েছে। ২০ ফুটের খালি কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৪০ ডলার করা হয়েছে। ১০ টনের মোবাইল ক্রেন ব্যবহারে আগে দিতে হতো ১ দশমিক ৭২৩ ডলার, এখন দিতে হবে ১০ দশমিক ৭০ ডলার। আমদানি করা এফসিএল কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম চার দিন, রপ্তানিযোগ্য এফসিএল এবং এলসিএল কনটেইনারে ছয় দিন ফ্রি টাইম রাখা হয়েছে। কিন্তু সপ্তম দিন থেকে ৬ দশমিক ৯ শূন্য ডলার দিয়ে শুরু হবে ট্যারিফ আদায়। যার ২১ দিন পার হলেই যুক্ত হবে ৬২ মার্কিন ডলার করে। এ ছাড়া এখন থেকে বন্দরে জাহাজের অবস্থানকালীন সময় ১২ ঘণ্টা অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য ১০০ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০, ৩৬ ঘণ্টার জন্য ৪০০ এবং ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে অতিরিক্ত চার্জ ৯০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতিটি কনটেইনারে বর্তমানে গড়ে মাশুল আদায় হয় ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। এখন তা বেড়ে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা। অর্থাৎ কনটেইনারপ্রতি মাশুল বাড়ছে গড়ে ৩৭ শতাংশ। প্রতিটি কনটেইনার জাহাজ থেকে ওঠানো বা নামানোর জন্য পরিশোধ করতে হতো ৪৩ দশমিক ৪০ ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬৮ ডলার। বাল্কের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পণ্যে আগে গড়ে মাশুল দিতে হতো ১ টাকা ২৮ পয়সা, এখন আরও বাড়তি দিতে হবে ৪৭ পয়সা।
অবশেষে কার্যকর হলো আলোচিত-সমালোচিত চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ১৫ সেপ্টেম্বর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের সমালোচনার মুখে ট্যারিফ কার্যকর এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত গত সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্যারিফ কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন ট্যারিফ সিস্টেমে পাইলটিং চার্জ ৮০০ মার্কিন ডলার এবং প্রতিবার জাহাজ টেনে আনার টাগ চার্জ ৬১৫ থেকে শুরু করে ৬ হাজার ৮৩০ ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বেড়েছে কনটেইনার ওঠানামার চার্জও।
সবশেষ ১৯৮৬ সালে ট্যারিফ বাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৩৯ বছর পর ৩৮-৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। আর এই বাড়তি ট্যারিফ নিয়েই যত আপত্তি বন্দর ব্যবহারকারী এবং ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘এটি অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। তাই গেজেটের আলোকে ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত এই ট্যারিফ কার্যকর হচ্ছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ চট্টগ্রাম বন্দরের নেই।
নওগাঁয় চক্ষু শিবিরে বিনামূল্যে দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে তিনটি ইউনিয়নের ৫শতাধিক মানুষকে এই এই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
নওগাঁ সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি, বিএনপির তথ্য সংগ্রহ কমিটির সদস্য ও নওগাঁ-৫ (সদর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান ডাবলুর এই আয়োজন করে।
জয়পুরহাট জেলার খঞ্জনপুর মিশন চক্ষু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই চিকিৎসা সেবা দেন। এই উদ্যোগের ফলে অনেক দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ প্রয়োজনীয় চক্ষু চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন বলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
চোখের ছানি নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা আকবর হোসেন জানান, তার পক্ষ্যে অর্থের অভাবে কোনো হাসপাতালে গিয়ে ছানি অপারেশন করা সম্ভব ছিল না। এখান থেকে তার অপারেশন, থাকা-খাওয়া সব ফ্রিতে করে দিবে।
ফাতেমা বেগম নামের সেবা প্রত্যাশাী বলেন, শহরে বড় হাসপাতালে গেলে অনেক টাকা লাগতো। এখানে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা পেলাম। যারা এমন মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন বিশেষ করে ডাবলু ভাতিজার জন্য দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
এসময় মাহবুবুর রহমান ডাবলু জানান, চিকিৎসা সেবায় দরিদ্রদের চক্ষু পরীক্ষা এবং চশমা প্রদান করা হয়। এছাড়া চোখের ছানি পড়া রোগীদের বাছাই করে বিনামূল্যে আপারেশন, কৃত্রিম লেন্স সংযোজনসহ ওষুধ প্রদান, হাসপাতালে ভর্তি ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এলাকার অনেক অসহায় ও দরিদ্র মানুষ অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পেরে নানা রোগে ভুগে থাকে। আর চোখ হচ্ছে মানুষের অমূল্য সম্পদ। তাই সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করেছি। এই কার্যক্রম আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এসময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৬৩৩টি খামারের ১ লাখ ৩০ হাজার ৯১৫টি গবাদিপশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে খামারিরা। এসব গবাদিপশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি নামে একটি রোগ। যাকে পক্সভাইরাস বলা হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া অ্যানথ্রাক্স নিয়েও আতঙ্কে রয়েছে এ অঞ্চলের গরুর খামারিরা। গবাদিপশুর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারিভাবে নেই কোনো উদ্যোগ। এই রোগের জন্য সরকারিভাবে টিকা দেওয়া কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব রোগ সম্পর্কে অবহিত না করে ঘুমিয়ে আছেন। গরুর খামারিদের জনসচেতনতা নিয়ে কোনো সহায়তা করছে না বলে অভিযোগ খামারিদের।
পশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগটি গবাদিপশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর মধ্যে যদি অ্যানথ্রাক্স রোগটিও ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এ অঞ্চলে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯১৫টি গবাদিপশু ও সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই শুরুতেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পক্সভাইরাস ও অ্যানথ্রাক্স মূলত গবাদিপশুর থেকে ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারিভাবে টিকা দেওয়া কথা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
ইতোমধ্যে অধিকাংশ খামারের গরু-ছাগল ও ভেড়ার মধ্যে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগ ছড়িয়ে পড়লেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাশে পাচ্ছে না বলে জানান, কয়েকজন খামার মালিক।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, রামগতিতে ১০২টি গরুর খামারে ৬৭ হাজার ২৫১টি গরু, ১৩৯টি ছাগলের খামারে ১৩ হাজার ৩৩৮টি ছাগল, ৫৯টি ভেড়ার খামারে ১০ হাজার ২২৮টি ভেড়া ও ৮ হাজার মহিষসহ মোট ৯৯ হাজার ১০৭টি গবাদিপশু রয়েছে।
কমলনগরে ২৫০টি গরুর খামারে ২০ হাজার ২৩০টি গরু, ৫০টি মহিষের খামারে ৬ হাজার ৫২৫টি মহিষ, ২৫টি ছাগলের খামারে ৪ হাজার ৫৯৮ ছাগল ও ৮টি ভেড়ার খামারে ৪৫৫টি ভেড়াসহ মোট ৩১ হাজার ৮০৮টি গবাদিপশু আছে। দুই উপজেলায় মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯১৫টি গবাদিপশু রয়েছে।
রামগতি উপজেলার চরলক্ষ্মীগ্রামের খামার মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তার খামারের সব গরুর মধ্যে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগ রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ফোন দিলে তারা ফোন ধরে না। কোনো খবরও নিচ্ছে না।’
কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ও রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রুবেল সরকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে গবাদিপশু বা মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স রোগ ধরা পড়লেও আমাদের এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত এই ধরনের রোগের খবর আমরা পাইনি। তবে কয়েকটি গরু-ছাগলের খামারে লাম্বি ভাইরাস বা এলএজটি রোগ ধরা পড়েছে। আমরা কিছু কিছু খামারের গরুকে টিকা দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সব খামারে টিকা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য মরহুম সাংবাদিক সরওয়ার উদ্দিন আহমেদর স্মরণে এক শোক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ইউনিয়নের সভাকক্ষে এ শোক ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান মজুমদান নাজিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সারোয়ার উদ্দিন আহম্মদের স্মৃতিচারণ করেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক সমবায় সমিতির সভাপতি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মোস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ টাইমস্ এর ব্যুরো প্রধান সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি সানের সাবেক ব্যুরো প্রধান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও আরটিভির ব্যুরো প্রধান গোলাম মওলা মুরাদ, দৈনিক পূর্বদেশের স্পোর্টস এডিটর সাইফুল্লাহ চৌধুরী, এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবুল হাসনাত, দৈনিক নয়া দিগন্তের ব্যুরো প্রধান নুরুল মোস্তফা কাজী, সাংবাদি ছগির আহমদ, মাহবুবুল মওলা, ইকবাল করিম, দৈনিক বাংলার ব্যুরো প্রধান জামালুদ্দিন হাওলাদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোখলেছুর রহমান ফরহাদী, শহিদুল ইসলাম, এনাম হায়দার, মীম ওসমান গণি, জাহাঙ্গীর আলম ও বজলুর রহমান প্রমুখ। উল্লেখ্য: সাংবাদিক সরওয়ার উদ্দিন আহমেদ গত শনিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ইন্তেকাল করেছেন।
বহুমুখী সংকটের মধ্যে সময় পার করছে রাউজানের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ উপজেলার ১৮১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১টিতে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় অর্ধশত। চলতি অর্থবছরে আরও অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। শিক্ষক সংকটের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকট রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়েও। এখানে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিও) ৮টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৩ জন। ৫ কর্মচারীর মধ্যে আছেন ৫ জন। রাউজানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থার খবর নিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত নাম ব্যবহারের কারণে উপজেলার ৮টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। নানা সমস্যায় থাকা প্রাথমিক শিক্ষার হালচাল দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট। শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছে বারান্দায় অথবা বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে। প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়ে লক্ষ্য করা গেছে, বিশৃঙ্খল পরিবেশ। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা মানছেন না বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময়সূচি। সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘরের মূল অভিভাবক না থাকলে যেমন হয় সেই অবস্থায় চলছে প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলো। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে এক সহকারীকে দেওয়া হলেও তার পক্ষে অন্য সহকর্মীদের শৃঙ্খলা দেখা সম্ভব হয় না। খবর নিয়ে জানা গেছে, রাউজানে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী শিক্ষক। তাদের প্রায় আশি শতাংশ থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। এসব শিক্ষককে সকালে সংসারের কাজ গুছিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়। অনেক সময় রাস্তায় যানজটে পড়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয় বিলম্বে। এমন সমস্যার মধ্যে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি দেখা যায় ১০টার পর। আরও দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটে থাকা এমন অন্তত ৩০টি বিদ্যালয়ের পাশে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকটির কাজ চালানো হচ্ছে ধীরগতিতে। কাজ বন্ধ হয়ে থাকা নির্মাণাধীন ভবন নিয়ে কথা বললে রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছিল। সেই সময় নির্মাণকাজ পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঠিকাদাররা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তারা কাজ ফেলে এলাকা ছেড়েছেন। এখন তিনি পলাতক ঠিকাদারদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিকল্প ব্যবস্থায় নির্মাণাধীন ভবনসমূহের কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। অন্যগুলো দ্রুত শেষ করতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও নিজ কার্যালয়ে জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, চলতি অর্থবছরে আরও কিছু শিক্ষক অবসরে যাবেন। অতিদ্রুত শূন্যপদে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অবশ্য এ কর্মকর্তা যোগ করেন জনবল নিয়োগ বিলম্ব হলে বিদ্যমান সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষকদের আসা-যাওয়ার নিয়ম না মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকতায় থাকা বেশির ভাগ শিক্ষক শহরে থাকেন। বিভিন্ন সময় রাস্তায় যানজটে পড়তে হয়। তবে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে পৌঁছে পাঠদানে অংশ নেন। তিনি আরও বলেন, ৮টি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য ও তার পিতা-মাতার নামে নামকরণ করা সাতটিসহ-আটটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত পেলে কার্যকর হবে।
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনদিন ধরে অবস্থান নেয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আপাতত লংমার্চ করবেন না। আজ বিকেল তিনটার মধ্যে যদি দাবি মানা না হয়, তাহলে চারটা থেকে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ শুরু করবেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনকারী ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
আন্দোলনকারীদের তিনটি দাবি হলো—মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম তিন হাজার টাকা) বাড়িভাড়া। শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা। কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।
এই তিন দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনদিন ধরে অবস্থান করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবি আদায়ে আজ বেলা ১২টায় সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ শুরুর কথা ছিল তাদের। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর অনুরোধে তারা লংমার্চ কর্মসূচি পিছিয়ে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন।
পটুয়াখালীর বাউফলে নৌ-পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে ঝাঁপ দেওয়া রাসেল খান (৩৫) নামের এক যুবকের লাশ নিখোঁজের তিন দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরওয়াডেল এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর বাতিঘর পয়েন্ট থেকে তার স্বজনরা লাশ উদ্ধার করে।
নিহত রাসেল খান উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় ডালিমা গ্রামের ইউসুফ খানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি ছিলেন এবং স্থানীয় বড় ডালিমা ব্রিজ এলাকায় তার একটি দর্জির দোকান ছিল। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন।
জানা যায় , গত শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে ইলিশ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালে রাসেল খান তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ট্রলারযোগে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ কিনতে যান। এ সময় মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশের একটি স্পিডবোর্ড অভিযান চালালে তারা ধাওয়া খায়। ধাওয়া থেকে বাঁচতে গিয়ে রাসেল খান নদীতে ঝাঁপ দিলে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান।খবর পেয়ে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান চালালেও তাকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আখতারুজ্জামান সরকার বলেন, “লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে নৌ ফাঁড়ির পুলিশ অবস্থান করছে। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে লাশের ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ন বিওপির আওতাধীন এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে, সহকারী পরিচালক এবং ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার মো. জাকিরুল ইসলাম অভিযানে অংশ নেন।
অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় আনুমানিক ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
পরে সোমবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ আশ্রায়ন বিওপি এলাকায় জনসম্মুখে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করা হয়। পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ এর উপস্থিতিতে জালগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।
৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সর্বদা তৎপর রয়েছে। মাদক ও সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। জনসাধারণের সেবায় বিজিবি ভবিষ্যতেও সর্বদা নিয়োজিত থাকবে।
পরপর দুই দফায় সময় বাড়ানো হলেও চার বছরেও শেষ হয়নি রাঙামাটির কুতুকছড়ি সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের ধীরগতির কারণে রাঙামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে যাতায়াতকারী পাহাড়ের লাখো মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে কুতুকছড়ি এলাকায়। এর মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করছে গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি।
২০২২ সালের ১১ আগস্ট সেতুর নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথম মেয়াদ শেষে কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তবুও অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে বর্তমানে বিকল্প সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্থায়ী সেতু ব্যবহার করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। চলমান বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিকল্প পথেও চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। উপচে পড়া পানিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন ও জরুরি চিকিৎসাসেবা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙা এই রাস্তা দিয়ে রোগী বা মেডিকেল টিম আসা-যাওয়া করা খুবই কষ্টকর। বিকল্প যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, সেটাও এখন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে, দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৮১.৩১৫ মিটার। নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০২১ সালে কুতুকছড়ির পুরনো বেইলি ব্রিজটি একটি পাথর বোঝাই ট্রাকসহ ভেঙে পড়ার পর নতুন সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ‘সরদার এন্টারপ্রাইজ’ এবং ‘রাঙামাটি ট্রেডার্স’ নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে।
রাঙামাটি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন মিশু বলেন, নদীতে পানি থাকায় কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। পানি কমে গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।
তবে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, পর পর দুবার সময় বাড়ানো হলেও এখনো কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে পত্র পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এটি পাহাড়ের কৃষিপণ্য, ফলমূল, এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ পথ। সেতুর নির্মাণ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে থাকায় স্থানীয় পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নারীদের অংশগ্রহণে একটি উঠান বৈঠক, মুক্ত আলোচনা ও ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেছে উপজেলা মহিলা দল।
সোমবার বিকেলে উপজেলার বৈদ্দ্যেরবাজার ইউনিয়নের পঞ্চবটি এলাকার মতিউর রহমান হাইস্কুল প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আজহারুল ইসলাম মান্নানের নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সালমা আক্তার কাজল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছেলে ও নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজিবের সহধর্মিণী সাদিয়া ইসলাম জুঁই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোন মারিয়া ইসলাম মুন্নি। তারা সভায় এলাকার সাধারণ নারীদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন।
সাদিয়া ইসলাম জুঁই বলেন, আজকের নারী শুধু সংসার সামলায় না, দেশও সামলায়। আমরা চাই এমন বাংলাদেশ, যেখানে আমাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকবে, যেখানে ভোট দিতে পারব নিজের ইচ্ছায়, যেখানে ন্যায়ের শাসন ফিরবে। বিএনপি সেই স্বপ্নের রাজনীতি করছে- মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার রাজনীতি।’ আপনাদের সবাইকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।
মারিয়া ইসলাম মুন্নি তার আবেগঘন বক্তব্যে বলেন, এই দেশটা আমাদের; কিন্তু আজ আমরা আমাদেরই অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের মা-বোনেরা কষ্টে আছে, ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তাই ৩১ দফা শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, এটা আমাদের বাঁচার স্বপ্ন। আমরা সবাই মিলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। তারেক রহমানের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমার বাবা তার পুরো জীবন আপসহীনভাবে জনগণের স্বার্থে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। আশা করি আপনারা বিএনপির পাশে থাকবেন। একই সাথে সোনারগাঁও আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দেবেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবারও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে ফিরবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশের মুক্তি নেই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বৈদ্দ্যেরবাজার ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, মোস্তাক হোসেন, রাকিব হাসান, কাউসার আহমেদ, সোহেল প্রধান, সেলিম হোসেন দিপু, আলিনুর বেপারী, মাহফুজ ইসলামসহ কয়েকশ নেতারা।
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত নারীদের হাতে হাতে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট বিতরণ ও ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান করেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওসহ আশেপাশে দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল। কিন্তু যে স্থানে মানুষ আসে সুস্থতার আশায়, সেই স্থানই এখন যেন রোগ উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল। নোংরা পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা আর অব্যবস্থাপনায় ভরে গেছে হাসপাতালটি।
রোগীরা বলছেন, এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মানুষ সুস্থ নয়, বরং আরও অসুস্থ হয়ে পরে। অন্যদিকে ধারণক্ষমতার দুই থেকে তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তারা বলছেন, জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সেবাগ্রহীতারা মনে করছেন ঠাকুরগাঁওয়ে দ্রুত একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের বিকল্প নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ২৫০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী। রোগীর চাপে বেড তো পাওয়া যায় না, অনেক সময় ফ্লোরেও জায়গা মেলে না। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের।
অন্যদিকে হাসপাতালের করিডোর, বাথরুম এমনকি রোগী ওয়ার্ড সব খানেই নোংরা পরিবেশ। নোংরা অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সুস্থ মানুষও সেখানে প্রবেশ করলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে চাপের ভীরে গুরুতর রোগী বা বয়স্কদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় তীব্র কষ্টের মধ্যে। দীর্ঘদিন ঘরে বালতি ও পাত্রে জমে থাকা নোংরা পানি । যেখান থেকে জন্ম নিতে পারে এডিস মশাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ। এছাড়া হাসপাতালের। ভেতরে কুকুরের বিচরণ তো আছেই। যার মাধ্যমে ছড়াতে পারে জলাতঙ্ক রোগ। এমনকি আইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং পিসিআর ল্যাবের জন্য নির্ধারিত ভবন ও স্থান থাকলেও, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলো চালু হয়নি।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এই হাসপাতালে অধিকাংশ পরীক্ষার রিপোর্ট বাইরে থেকে করাতে হয়। যেসব ওষুধ হাসপাতল থেকে দেওয়ার কথা সেসব ওষুধ নিতে রোগীদের ছুটতে হয় বাইরের ফার্মেসিতে। আর অনেক রোগীকে দিনাজপুর, রংপুর বা ঢাকায় রেফার করেন। রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই মৃত্যুর মুখে পতিত হন। এছাড়া এখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না ঠিকমতো। বাথরুমগুলোতে ঢোকা যায় না। বেসিনগুলোতে হাত ধোয়ার অবস্থা নেই। এখানে রোগী নিয়ে আসলে সুস্থ মানুষই আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি এমন অবস্থা এখানকার বলে জানান তারা।
মো. মুজাহিদ বলেন, এখানকার পরিবেশ এতটাই নোংরা যে বলার মতো না। যেখানে-সেখানে পানি ও ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে। আর হাসপাতালে অনেক টেস্ট হয় না। রোগী নিয়ে টেস্ট করাতে বাইরে যেতে হয়। এভাবে আমরা চরম ভোগান্তিতে পরি। এছাড়া এখানে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী সেবা দেওয়ার মতো জনবল দেখছি না। জনবল বৃদ্ধি করলে হয়তো কিছুটা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে অসুস্থতাজনিত কারণে মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘যেগুলো ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা ওই ওষুধগুলোয় আবার আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তাহলে সরকার যে ওষুধ দিচ্ছে সেই ওষুধগুলো যাচ্ছে কোথায়।’
শহীদুল ইসলাম উজ্জল তার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি আছেন হাসপাতালে তিনি বলেন, ‘ধরতে গেলে এই হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে তেমন কিছুই হয় না। সময় মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সরা ঠিক মতো কথা শোনছেন না। তাদের কোনো কিছু বলতে গেলে বিরক্ত বোধ করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে এখানকার লিফট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এদিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না। তাই আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়গুলো দেখার জন্য অনুরোধ করছি।’
রিক্তা পারভীন নামে এক নারী বলেন, ‘হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থা এতটাই খারাপ যে আমরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারছি না। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসে বেসিনগুলোতে তাদের হাত ধুয়ে যে খাওয়াব সেটাও করতে পারি না এতটাই নোংরা। এখানে আমরা আসি সুস্থতার জন্য কিন্তু রোগীর সাথে যারা আসি তারাই মনে হয় অসুস্থ হয়ে পড়ছি এমন অবস্থা।’
বাঁধন নামে এক যুবক বলেন, ‘এখানে রোগী নিয়ে আসলেই অধিকাংশ রোগীকেই শুধু রেফার করে দেওয়া হয় দিনাজপুর, রংপুরসহ ঢাকায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়ের রাস্তা হওয়ায় রোগীকে নিয়ে যেতে যেতেই অনেকের মৃত্যু হয়। এ জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে একটি ভালোমানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জরুরি হয়ে পড়েছে।’
স্থানীয় নাগরিক হিমেলসহ অনেকে বলেন, ‘হাসপাতালটিতে আশেপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ সেবা নিতে ছুটে আসেন। তাই এখানে একটি মেডিকেল কলেজ না হলে মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব। তাই ঠাকুরগাঁওয়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান তারা।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এই হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক ৫৯ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪০ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩টি পদেই শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সের পদ সংখ্যা মাত্র ৯১ জন। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮৮ জন। তৃতীয় শ্রেণির পদ সংখ্যা ৪২ জন হলেও আছেন মাত্র ২০ জন। এখনো শূন্য পদ ২২টি। চতুর্থ শ্রেণির লোকবল ২৫ জনের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত মোট পদের সংখ্যা মাত্র ২২১টি। এর মধ্যে আবার এখনো শূন্য হয়ে পরে আছে ৫৬ জনের পদ।