বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে স্থলমাইন বিস্ফোরণে তরিকুল নামে এক কিশোর আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার ফুলতলীর ৪৮ নম্বর সীমান্ত পিলারে মিয়ানমার অংশে এ ঘটনা ঘটে। আহত তরিকুল (১৭) কক্সবাজার রামুর কাউয়ার খোপ এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ করাচ্ছিল এলাকার সঙ্ঘবদ্ধ একটি চক্র। এরা বিভিন্ন সময় নামমাত্র মজুরি দিয়ে শ্রমিক হিসেবে এলাকার বা এলাকার বাইরের লোকজনকে মিয়ানমারে পাঠায় গরুগুলো আনতে। এবারও চক্রটির হয়ে গরু আনতে সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে ঢুকলে সেখানে মিয়ানমার সরকারের আগে থেকে পুতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণের কবলে পড়ে তরিকুল। এ ঘটনায় তার বাম পায়ের গোড়ালিসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নাইক্ষংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি এই উপজেলার দোছড়ি ও নাইক্ষংছড়ি সদর ইউপির ফুলতলীর ৪৭, ৪৮ ও ৪৯ নম্বর সীমান্ত পিলারের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পৃথক স্থলমাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছিল।
নওগাঁর পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে ১৬ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার বেলা ১১টায় নওগাঁর পত্নীতলা ১৪ বিজিবির ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ভোরে উপজেলার শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হলে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নাটোর জেলার মোতালেব শেখ (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৫), মজনু বিশ্বাস (৪৮), নয়ন খাঁ (২৫), মুকুল শেখ (২৫), মৃধুল শেখ (২০), সামির (১১), বিনা খাতুন (২৯), মিম (৮), মরিয়ম খাতুন (১০), রোজিনা খাতুন (১৮), মিরা খাতুন (৮ মাস), এলিনা খাতুন (২৮), জান্নাতুল সরকার (১০), জোছনা বেগম (৫০) এবং পাবনা জেলার মিরাজ শেখ (১৮)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ভোরে পত্নীতলা ১৪ বিজিবির শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করে। পরে বিজিবির টহল দল ঘুরকী গ্রামের পাকা রাস্তা সংলগ্ন চা দোকানের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, পাঁচ শিশু ও চারজন নারী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়- আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। আটকের পর তাদেরকে পত্নীতলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, ‘বিএনপি যদি মানুষের ভালোবাসার ম্যান্ডেট নিয়ে জনগনের সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করবে। বিশেষ করে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার শাসনামলে নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। শুক্রবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ব্রজগোপাল টাউনহলে এসএসসি/ দাখিল পরীক্ষায় ১১০ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমান এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আলোয় আলোকিত ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য তার জীবদ্দশায় নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ নায়ক তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।’
এ সময় চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কয়ছর আহমেদ কমল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোফরান মহাজন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মঞ্জুর হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সোহেল, ভোলা জেলা বিএনপির সদস্য মমিনুল ইসলাম ভুট্টু, চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্যাহ বাহার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সিকদার, চরফ্যাশন প্রেসক্লাব সভাপতি জুলফিকার মাহমুদ নিয়াজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামাল গোলদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক মিলটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি ও অবিভিাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য আরিফুর রহমান জুয়েল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের হাত থেকে এসএসসি/ দাখিল ২০২৫ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীরা সম্মননা স্মারক গ্রহণ করেন।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির কলস, থালা, বাটি, প্রদীপ, গ্লাস কিংবা নানা ধরনের পুতুল—সবই তৈরি হচ্ছে দিন-রাতের শ্রমে। পূজার সময় ঘনিয়ে আসতেই বেড়েছে অর্ডার, বেড়েছে কর্মব্যস্ততাও।
উপজেলার সন্ধ্যানী এলাকার কুমারপাড়ায় এখনো নয়টি পরিবার জীবিকার তাগিদে টিকে আছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে। একসময় সারাবছর মৃৎশিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র।মাটি-জ্বালানির দাম বাড়ায় কষ্টে মৃৎ শিল্পীরা।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের কুমারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, রোদ না থাকায় ঘরের ভেতরে ফ্যান চালিয়ে শুকানো হচ্ছে সদ্য তৈরি মাটির কলস, থালা আর প্রদীপ। পুরুষ ও নারী মৃৎশিল্পীরা কেউ মাটির কাজ করছেন, কেউ পূজাকে কেন্দ্র করে রং তুলির আঁচড়ে সাজাচ্ছেন নানান ধরনের পণ্য।
মৃৎশিল্পী জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। কলস আর থালার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে মাটি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ সামলে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও এই শিল্পকে ধরে রাখতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
নারী মৃৎশিল্পী বীনা রানী পাল বলেন, ‘আমরা শুধু মাটির জিনিসপত্র বানাচ্ছি না, দেশের ঐতিহ্যকেও বাঁচিয়ে রাখছি। অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে যুক্ত করেছি। তারা সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছে। কিন্তু মূলধন ও সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, প্লাস্টিকের দাপটে মাটির পণ্যের বাজার অনেকটাই কমে গেছে। তাই টিকে থাকতে তারা এখন দইয়ের বাটি, কাপ, চামচের মতো নতুন নতুন পণ্য বানাচ্ছেন। কিন্তু মূলধনের অভাবে উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ছে। ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
নাগরদোলা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শিমুল তরফদার বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মৃৎশিল্প। কিন্তু মূলধন ও সহযোগিতার অভাবে একে একে অনেক শিল্পী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এখনই সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা না করলে এই শিল্প বিলীন হয়ে যাবে।’
একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে অপরিহার্য ছিল মাটির থালা-বাটি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা বা অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে মাটির কলস, প্রদীপ কিংবা পাত্রের বিকল্প ছিল না। এখনো সেই চাহিদা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে প্লাস্টিকের ভিড়ে কবে পর্যন্ত টিকে থাকবে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প?
ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ফলক উন্মোচন করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
ফলক উন্মোচন শেষে নতুন ভবনে আয়োজিত উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মনির হায়দার।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আইএমইডি কামাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মুজিবুর রহমান, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুনজুর আহমেদ সিদ্দীক, মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা.একেএম আবু সাঈদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার, ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী, সিভিল সার্জন ডা. এ. কে. এম. আবু সাঈদ এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহরিয়া শায়লা জাহান।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত মাদারীপুর জেলা ও এর পৌর শহর। ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে মাদারীপুর পৌরসভাটি গঠিত হয়- যা প্রায় ১১৬ বছর পরে এসে ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। সে সময় চেয়ারম্যান ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান। ১ম শ্রেণিতে উন্নীত হবার পরে এখানে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করে মেয়র পদ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এরপর জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ পরপর ৩ বার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৫ বছর অপ্রতিরোধ্য মেয়র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার আমলেই সবচেয়ে বেশি পৌরসভার সরকারি খাল-দখল ও নাজুক অবস্থায় চলে যায়। ফলে শহরের ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংকোচিত হয়ে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন এ শহরের নাগরিকরা। আর ভোগান্তি থেকে উত্তরণের জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেও অবসান ঘটেনি। আজো উদ্ধার হয়নি দখল হওয়া খালগুলো। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সরকারি খাল উদ্ধার করা।
এলাকাবাসী বলেন, সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদের কাছে পৌর নাগরিকদের সেবার চাইতে তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছিল আওয়ামী দলীয় ও রাজনীতিকীকরণ। আর এজন্য প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালগুলো।
দখলদার প্রভাবশালীদের মধ্যে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান (বর্তমানে কারা অন্তরীণ) ও তার পরিবারবর্গ প্রথমে তাদের বাসার সম্মুখ দিয়ে বয়ে চলা শকুনী-ইটেরপোল-গোপালপুর খালের অংশ দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করেন এবং এরপর থেকেই শুরু হয় খাল দখলের মহা-উৎসব। এরমধ্যে আড়িয়ালখাঁ নদী থেকে শুরু করে শহরের মধ্য দিয়ে তৈরী হওয়া ষ্টেডিয়ামের পূর্বপাশ ঘেষে হরিকুমারিয়া-হাজিরহাওলা-রানাদিয়া খাল, শকুনী খাল, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খাল, গৈদী খাল, কলেজ রোড হয়ে আমিরাবাদ খাল, কুলপদ্দি খাল, মহিষেরচর খাল কৌশলে দখল করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সারাবছরই এসব খালে জোয়ার-ভাটার পানি থাকতো। এসব খালের পানি কৃষকের সেচকার্যে ব্যবহৃত হতো। এসব কারণে কখনোই জলাবদ্ধতা তৈরি হতো না মাদারীপুর শহরে। ওইসব খালে সারাবছরই দেশী মাছ শিকার করত মানুষ। প্রভাবশালীদের দখলের কারণে অস্তিত্ব হারানো এসব খালের মধ্যে দুয়েকটির উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন তৈরি হলেও এসব ড্রেনের বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, বেশীরভাগ সরকারি খাল আজো উদ্ধার করতে পারেনি পৌরসভা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব ড্রেনে পানি ও ময়লা-আবর্জনা আটকে যায় এবং জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন পৌরবাসি।
এদিকে, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হত্যা-দুর্নীতির মামলার আসামিসহ অন্যান্য মামলার আসামী হয়ে বাহাউদ্দীন নাসিম দেশের বাইরে পালিয়ে যান ও তার সহোদর সাবেক মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ অজ্ঞাত স্থানে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর এখানে মেয়র পদ ও পৌর নাগরিক সেবার শূন্যতা ও বিড়ম্বনার তৈরি হলে পৌর নাগরিকেরা পড়েন বিপাকে। দৈনন্দিন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে মানুষ। পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধন, পানি সঞ্চালন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদিতে নাজুক অবস্থার তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এখানে পৌর প্রশাসক হিসাবে উক্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুল আলমকে পদায়ন করেন। //
পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা, দিনরাত পরিশ্রমের ফলে নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারী খাল উদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মশক নিধন, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি প্রসঙ্গে সরাসরি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, আমরা সরকার সব খালের পাশ থেকে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি, অনেকে তা সরিয়েও নিয়েছেন, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খালের কিছু অংশে আমরা খনন কাজও চালিয়েছি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের মশক নিধন টিম প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় ঔষধ ছিটাচ্ছে, যে কারণে মাদারীপুর পৌর এলাকায় এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম। জলাবদ্ধতা ও ময়লা-আবর্জনা থেকে পৌরবাসিকে রক্ষার জন্য আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ড্রেণ পরিস্কার করছে, ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা নিজেরাও রাতদিন তা তদারকি করছি। অপ্রতুল জনবল ও সরকারী অর্থ বরাদ্ধের সীমবদ্ধতা সত্বেও আমরা দিনরাত কাজ করছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান আমাদের চলমান রয়েছে এবং এটা আরো গতিশীল করা হবে, যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো- দখল হওয়া সরকারী খালগুলো উদ্ধারেও আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।
আমার ছেলের লাশ ফেরত চাই। আমার বুকের ধনকে আইনা দেন। ওরে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বুক চাপরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ইরাক প্রবাসী নিহত আজাদ খান (৪৭) এর অসহায় মা।
নিহত আজাদ খান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। মাত্র তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাক গিয়ে তিনি মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার হন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে আজাদ ধারদেনা করে ইরাক যান। এক সপ্তাহ আগে ইরাকের বাগদাদ শহর থেকে সে নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে লিটন নামে অপর এক ইরাক প্রবাসী ফোন করে আজাদের পরিবারকে জানান, আজাদকে হত্যা করে ৩ টুকরো করে লাশ বস্তায় ভরে ময়লার ভাগারে ফেলে রাখা হয়। শহরের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা পরিস্কার করতে এসে লাশের দুর্গন্ধ পায়। এ সময় তারা বস্তার মুখ খুলে দেখে মানুষের লাশ। তখন তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ তাদের হেফাজতে নেয়।
আজাদের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে আমাদের পরিবার একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক ধারদেনা করে আমার স্বামীকে বাবুলের মাধ্যমে ৩ মাস আগে ইরাকে পাঠাই। তার যে কাজ দেয়ার কথা ছিলো বাবুল তাকে সেই কাজ না দিয়ে অন্য একটি কাজে দেয়। আমার স্বামী বাবুলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বাবুল তার কোনো ফোন ধরেনি। বাবুল তার ফোন ধরলে হয়তো আজ আমার স্বামীর এই করুন পরিনতি হতো না। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইরাক থেকে মুঠোফোনে বাবু্ল জানান, আমি ওর যেখানে গিয়ে ছিলাম সেখান থেকে কুমিল্লার সোহাগ নামে একটি ছেলে তাকে নিয়ে অন্য জায়গায় একটি দোকানে কাজে দেয়। সেই দোকানের মালিক (কফিল) আজাদকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন ধরে বাড়িঘরের ময়লা ও আশপাশ পরিস্কার করায়। এর মধ্যে আমি সোহাগকে ফোন করে আজাদের খবর জানতে চাই। সোহাগ আমাকে জানায়, আজাদ কফিলের বাসায় আছে। আজ শুনতে পাচ্ছি আজাদকে হত্যা করে লাশ তিন টুকরো করে ফেলা হয়েছে। আমরা ইরাকের বাংলাদেশ এম্বাসিতে বিচার দিয়েছি। অ্যাম্বাসির লোকজন সহ আমরা সেখানে যাচ্ছি। আজাদের লাশ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত আজাদের শ্যালক জহরুল হক বাপ্পি মুঠোফোনে জানান, আজাদ আমার দুলাভাই (চাচাতো বোন জামাই)। আমি বাংলাদেশ দূতাবাস, ইরাক সচিবের সাথে কথা বলেছি, আজাদ ভাইকে মেরে ফেলে কয়েক টুকরো করা হয়েছে শতভাগ সত্য। মরদেহ ইরাকে মর্গে আছে। আগামী রবিবার আজাদের হত্যাকারী আসামী কফিলকে কাজুমিয়া আদালতে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, আজাদ ভাইয়ের লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে।
স্বামীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে প্রান নাশের হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে সংবাদ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরের একটি চাইনিজ হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মলনে নীলফামারী প্রাথমিক জেলা অফিসের অফিস সহায়ক সুমি আকতার কল্পনা বলেন, আমার স্বামী হাবিবুল্লাহ পায়েল আমাকে নাকি তালাক দিয়েছে, এখনো তালাকনামা হাতে পাইনি। হাবিবুল্লাহ পায়েল নীলফামারী প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসের নৈশ প্রহরী পদে চাকরি করতেন। চাকরি করার সুবাদে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে চাকরির লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে টাকা নিতেন। ফলে চাকরি প্রত্যাশিরা চাকরি না তাকে খুঁজতে বাসায় আসলে আত্নগোপনে চলে যায় হাবিবুল্লাহ। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। বাসার খরচও দিতো না। তার অনৈতিকতা নিয়ে আমাদের সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে ওঠে। ফলে সে আমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে। তার অপকর্মের কারণে চাকরিচ্যুতও হয়। এসব কারণে সে আমাকে দোষারুপ করে সন্ত্রাসী দিয়ে বাসায় হামলা করে বাসা ছাড়া করেছে। এ ব্যপারে পুলিশকে অভিযোগ দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। বর্তমানে সে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমাকে চাকরি হারা করতে কর্মস্থলে যেতে বাধার সৃষ্টি করছে। আমি নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছি। আমাকে চাকরি হারা করতে সে আমার চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর তাকে সহযোগিতা করছে আব্দুর নূর, আবু তালেব, মোঃ মামুন, মেজবাউল হক, মতিয়ার রহমান, শ্যামল কুমার, মানিক হোসেন ও মোঃ লিমন।
তিনি বলেন, আমি চাকরি হারা হলে আমার নাবালক বারো বছর বয়সি সন্তান, আমার বৃদ্ধ মা, আমার ছোট বোন ও মিলে চার সদস্যের পরিবার রাস্তায় নামা ছাড়া অন্যকোন পথ থাকবে না।
সংবাদ সন্মেলনে সুমি আকতার কল্পনার সাথে ছিলেন নাবালক ছেলে আহনাফ আবিদ শিহাব, মা আলেয়া খাতুন, ছোটবোন মৌ আকতারসহ সুহৃদজনরা।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাইজদিহি চা বাগানে বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দের শতাধিক দরিদ্র্য চা শ্রমিকদের মাঝে শাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল মাইজদিহি চা বাগানে এই কাপড়গুলো বিতরণ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী নাদিরা আক্তার নীরা, ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোক্তার হোসেন, ট্যুারিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুল হাসান, সাংবাদক আহাদ মিয়া, সালাহ উদ্দিন শুভসহ স্থানীয় বাগান পঞ্চায়েত সদস্য, চা বাগানের বাবু ও সাংবাদিকরা।
চা শ্রমিকরা জানান, বিসমিল্লাহ এন এম জুলফিকার ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে পূজার আগেই নতুন কাপড় পেলাম। তাদের জন্য প্রাণভরে আশীর্বাদ করছি। নতুন পোষাক হাতে পেয়ে আনন্দে বিমোহিত হয়ে পূজার আগেই আনন্দের হাসি নিয়ে ঘরে ফিরছে মাইজদিহি চা বাগানের শ্রমিকরা।
বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শিক্ষানবিশ আইনজীবী নাদিরা আক্তার নীরা বলেন, আমরা ঢাকা সোনারগাঁও থেকে সম্প্রীতি মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুড়তে আসি। শ্রীমঙ্গলের মাইজদিহি চা বাগানে ঘুরতে আসলে হঠাৎ খাবার পানির প্রয়োজন হয়। তখন চা শ্রমিকদের কাছ থেকে আমি পানি পান করি। তাদের সুখ দুঃখের বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ হয়েছে। তখন সেই শ্রমিকদের আবদার ছিল পূজার আগে তাদের কিছু সহযোগিতা করতে। আমিও তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম। আজ সকালে শতাধিক চা শ্রমিকদের জন্য শাড়ি কিনে এনে তাদের হাতে শাড়িগুলো তুলে দিলাম।
তিনি আরও বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সবসময় সুবিধাবঞ্চিত। তাই শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাগানের নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য আমরা বিসমিল্লাহ এনএম জুলফিকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু শাড়ি নিয়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি। যাতে শ্রমিকরা একটু হলেও আনন্দ পায়। সামর্থ অনুযায়ী আমরা এসেছি আশাকরি অন্য সামাজিক সংগঠনও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
মোগল সাম্রাজ্যের প্রায় পৌনে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুমিল্লার শাহ সুজা জামে মসজিদ। মসজিদটির অবস্থান কুমিল্লা শহরের মোগলটুলি এলাকায়। ১৬৫৮ সালে এটি নির্মাণ করেন মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ছয়টি মসজিদের একটি শাহ সুজা জামে মসজিদ।
আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশি বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। এর বাহ্যিক কারুকাজ প্রমাণ করে তৎসময়ে এর প্রতিষ্ঠাতাদের স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য। মোগল আমলের ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদ যেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রদীপ।
জানা গেছে, বাংলার ইতিহাসে মোগল অধ্যায়ের একটি উজ্জ্বল নাম ছিলেন শাহ সুজা। তিনি মোগল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি ১৬৩৯ সাল থেকে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়। এ মসজিদটি কুমিল্লা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হিসেবে খ্যাত। ইতিহাস-ঐতিহ্যে জেলার তথ্য বাতায়নে এই মসজিদের নাম ও ছবি স্থান করে নিয়েছে।
এ মসজিদের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কৈলাসচন্দ্র সিংহ তার রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, ‘গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীতে সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ অদ্যাপি দৃষ্ট হয়ে থাকে। এ মসজিদ সম্পর্কে দুই ধরনের মতবাদ রয়েছে। প্রথমত, সুজা ত্রিপুরা জয় করে বিজয় বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করার জন্য এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করার জন্য নিমচা তরবারি ও হিরকাঙ্গুরীয়ের বিনিময়ে বহু অর্থ ব্যয় করে এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, মসজিদটির বাইরের আয়তাকার দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৬৮ মিটার, প্রস্থ ৮ দশমিক ৫৩ মিটার। প্রাচীরগুলো ১ দশমিক ৭৫ মিটার পুরু। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টকোণাকার বুরুজ রয়েছে। এগুলো কার্নিশের বেশ উপরে উঠে গেছে এবং এর শীর্ষে রয়েছে ছোট গম্বুজ।
মসজিদের পূর্ব প্রাচীরে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং এতে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোর উভয় পাশে ও উপরে প্যানেল নকশা অলংকৃত। কিবলা প্রাচীরে রয়েছে তিনটি মিহরাব, কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড় ও অধিক আকর্ষণীয়। এটি ফুল, লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত। দুইটি পার্শ্ব খিলান দ্বারা মসজিদের অভ্যন্তর তিন ভাগে বিভক্ত। মধ্যের অংশটি বাইরের দিকে পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুটা উদ্গত করে নির্মিত। এ অংশের চার কোণে চারটি সরু মিনার কার্নিশের উপরে উঠেছে। অষ্টকোণাকার ড্রামের ওপর নির্মিত তিনটি গোলাকার গম্বুজ দ্বারা মসজিদের ছাদ ঢাকা। মধ্যেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজগুলোর শীর্ষদেশ পদ্মনকশা ও কলস চূড়া দ্বারা শোভিত।
মসজিদের কার্নিশের নিচের অংশ মারলোন নকশায় অলংকৃত। বিভিন্ন সময়ে মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। একটি শিলালিপির পাঠ অনুযায়ী ১৮৮২ সালে হাজী ইমামউদ্দিন ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের সমতল ছাদবিশিষ্ট বারান্দাটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে মসজিদটি আরও সম্প্রসারিত ও দুই পার্শ্বে মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। প্রাচীন এ মসজিদটি দেখতে মহানগরীর মোগলটুলী এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। বিশেষ করে জুমা, শবে বরাত, শবে কদরসহ বিশেষ দিনগুলোয় এখানে মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় হয়।
স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদটি সংস্কারের নামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নষ্ট করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে অনুরোধ তারা যেন মসজিদটির ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখে।
মসজিদের ইমাম মুফতি খিজির আহমদ বলেন, কালের সাক্ষী এ মসজিদে অসংখ্য দর্শনার্থী এবং মুসল্লি এসে নামাজ আদায় করতে চান, কিন্তু স্থান সংকুলানের কারণে আমরা আগত মুসল্লি এবং দর্শনার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারি না। মূল কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটির পরিধি বাড়ানো খুবই দরকার।
শাহ সুজা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি শুধু কুমিল্লা নয়, সারা দেশের মধ্যে অন্যতম। এখানে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা ও সমাজ সেবক মাহবুবুল আলম চপল জানান, মসজিদটি অনেক বার সৌন্দর্য বর্ধনে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় উভয় দিকে সম্প্রসারণ করা হয় এবং সাথে মাদ্রাসা, পানির ঝর্ণা, অযুখানা নির্মাণ করা হয়। প্রধান ফটক কারুকার্য শোভিত করে তৈরি করা হয়। আমরা ছোট বেলা এই মসজিদেই বাবা সাথে নামাজ পড়তে যেতাম, তখন এখনকার মতো ঘনঘন মসজিদ ছিল না।
ফটিকছড়িতে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গণশুনানী কার্যক্রম। স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা কিংবা সমস্যা নিষ্পতিতে দ্রুত সমাধানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়টি এখন আশার প্রদীপ হয়ে উঠেছে।
সরকারি এমন উদ্যোগের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য সর্বমহলের কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন উপজেলা নিরাবাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বিশেষ করে গেল বছরের ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একটি বড় অংশ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সৃষ্ট বিরোধের সমাধান চাইতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগিদের।
মুলত এর পর থেকেই নির্বাহী অফিসারের গণশুনানী বিচার প্রার্থীদের কাছে আস্থার জায়গায় পরিণত হতে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জায়গা-জমি বিরোধ, চলাচলের পথ, কাবিনমার টাকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মাসে অন্তত অর্ধশতাধিক আবেদন জমা হয় এখানে। প্রতি বুধবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৫ থেকে ২০টি অভিযোগ গণশুনানীতে ওঠে। এর আগে উভয় পক্ষকে নোটিশ দিয়ে তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে এসব শুনানী অনুষ্টিত হয়। এতে বাদী-বিবাদী ছাড়াও উপস্থিত থাকেন উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা। বেশিরভাগ অভিযোগ প্রথম দফার বৈঠকে সমাধান হলেও কিছু অভিযোগ পরবর্তী শুনানীতে গিয়ে নিষ্পত্তি হয়।
গত বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে একটি শুনানী চলছে। বারান্দায় আরো বেশ কয়েকটি পক্ষ অপেক্ষামান। এসময় লেলাং ইউনিয়ন থেকে আসা মোবারক হোসেন বলেন প্রতিবেশীর তালাকের একটি বিষয় নিয়ে এসেছিলাম। ইউএনও মহোদয় উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। বিয়েটি যাতে ভেঙ্গে না যায়, সে জন্য আরো ভাবতে বলে শেষ করেছেন।
একই দিন পাইন্দং আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে একত্র হয়ে উপস্থিত হন পাঁচ বোন। তাদের সাথে কথা হলে জানান ভাই- বোনের সম্পত্তির ভাগ নিয়ে বিরোধ চলছে।বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে জানানোর পর তিনি উভয় পক্ষকে ডেকেছেন।
উপজেলা নির্বাহী আফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুনী বলেন, গণশুনানী করা কেবিনেট ডিভিশনের সীদ্ধান্ত। বিভিন্ন অভিযোগের সমাধান চায়তে মানুষ আমার অফিসে আসে। অভিযেগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষকে অফিসে ডেকে গণশুনানি করি
তিনি আরো বলেন সেসেঞ্জার-ওয়ার্টসাপে সাধারণ মানুষ নানাবিদ সমস্যার কথা আমাকে জানায়। এর মধ্যে যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান যোগ্য সেগুলো সমাধান করে দিই। তবে যেসব অভিযোগ সময় নিয়ে করতে হবে, সেগুলো গণশুনানির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ২ নং নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফকে ১৫/ ২০ হাজার টাকা দিয়েই রোহিঙ্গারা জন্ম সনদ নিচ্ছে। তিনি জালিয়াতি মাধ্যমে অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমিয়ে ও বাড়িয়ে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে জন্ম নিবেদন সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিন। পরে গত ৩ জুন বিকাল তিনটায় দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ওই জন্মনিবন্ধন নিয়ে ভোটার হতে এসে রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিনসহ স্থানীয় দুই দালাল আটক হয়।
পরে নির্বাচন অফিসের মা. ইউসুফ স্ক্যানিং এন্ড ইকুপমেন্ট মেইনটেনেন্স
অপারেটর এনআইডি বাদী হয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকনুরুল আমিন, নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফ, ভাবপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজগর হোসেন, জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনসহ ৭ জন দালালকে বিবাদী করে থানা একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৫। এ মামলায় ইউপি সচিব হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে আবারো মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের নতুন জন্ম নিবন্ধন দিচ্ছে। আবার অন্য ইউনিয়ন ও উপজেলার বাসিন্দাদের এ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন দিচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ইউপি সচিব ইউসুফ পার্শ্ববর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মার্চ মাসের ২০১৮ সালে নদনা ইউনিয়ন পরিষদের বদলি হয়ে আসেন। এখানে এসেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। টাকা ছাড়া এই ইউনিয়ন পরিষদে তিনি কোন কাজে করেন না। টাকা দিলেই তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করেন। গত ২ বছর পূর্বে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে সরকারি ফির চেয়েও ৩ গুণ বেশি নিয়েছেন।
এ নিয়ে তৎকালীন নদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ সোনাইমুড়ী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় অভিযোগ উপস্থাপন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন তাকে শোকজ করেন। এরপরও তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করেননি। বর্তমানে তিনি রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন দেয়া ও অন্য ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্ম নিবন্ধন করে বিপুল অঙ্গের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সচিবের নেতৃত্বে এই ইউনিয়নে ঝক্কি-ঝামেল মুক্ত সনদ পাইয়ে দিতে সৃষ্টি হয়েছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। ফলের সেবা গ্রহীতারা প্রতিনিয়ত হচ্ছেন প্রতারিত।
অভিযোগ রয়েছে, সোনাইমুড়ীর চাষির হাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের পুত্র আবুল কালাম স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে তার নাগরিত্ব রয়েছে । কিন্তু সে ৩ মে ১৯৬২ ইং বয়স দিয়ে জন্মসূত্রে বাড়ি সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষির হাট ইউনিয়নের পরকরা গ্রামে হলেও নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নের পূর্ব চাঁদপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে মোখলেছুর রহমানের জন্ম নিবন্ধন এই ইউনিয়নে রয়েছে। সে ২১ জুন ১৯৮৮ বয়স দিয়ে পার্শ্ববর্তী নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি জন্ম নিবন্ধন করেছেন। সোনাইমুড়ীর ছনগাঁও গ্রামের আক্কাছ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম নদনা ইউনিয়ন পরিষদের দালাল চক্রকে টাকা দিয়ে একইভাবে ১ জানুয়ারি ১৯৫৯ বয়স বাড়িয়ে নদনা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন করেছেন।
সোনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র মামুন হোসেন তার ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন থাকলেও ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে বয়স বৃদ্ধি করে নদনা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবেদন করেছেন। উপজেলা সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও খোরশেদ আলমের পুত্র খলিলুর রহমান গত ৩১ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে বয়স এক মেয়ে ২০০৩ সাল দেখিয়ে, একইভাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে বজরা ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আবুল কালামের পুত্র সালমান খান ১ জানুয়ারি ২০২৪ ইং বয়স বাড়িয়ে নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে জন্ম সনদ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোনাইমুড়ী বাজার, বজরা ইসলামগঞ্জ বাজার, কাশিপুর বাজার, নদনা বাজার, জয়াগ বাজারের বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানদারদের সাথে নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফের সাথে গোপন যোগাযোগ রয়েছে। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে এসব জন্ম নিবন্ধন চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গাসহ অপরাধীদের হাতে। তৈরি হচ্ছে পাসপোর্টও। বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর এ সুযোগে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াত চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অংকের টাকা।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার মুঠো ফোনে জানান, বিষয়টি তার জান ছিল না।তবে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সোনাইমুড়ীর নদনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইউসুফ জানান, জনসাধারণ ভোগান্তিতে পড়ে তাকে টাকা দিলেই বয়স কমিয়ে ও বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন করে দিয়ে থাকেন। এটা সত্য। তবে তার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একজন রোহিঙ্গা নাগরিক জন্ম সনদ করায় মামলা হয়েছে। তিনি ওই মামলায় জামিনে রয়েছেন।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রাম মন্ডলপাড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে মানসিক প্রতিবন্ধী দুই সহোদরের করুণ মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। নিহত দুই ভাই হলেন, মফিজ প্রামানিক (৬৫) ও হবিজ প্রামানিক (৪৫)। তারা উভয়েই একই গ্রামের মৃত হায়ের প্রামানিকের সন্তান।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মফিজ ও হবিজ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জীবনযাপন করছিলেন। প্রতিদিনের মতো এদিনও তারা দুপুরের আগে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিলেন। হঠাৎ করে কোনো এক সময় অসাবধানতাবশত বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে থাকা একটি পুকুরে পড়ে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যান তারা।
দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন লোক পুকুরে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে দ্রুত বাড়িতে খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা ও আশপাশের মানুষ ছুটে এসে মফিজ প্রামানিকের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে হবিজ প্রামানিককেও নিথর অবস্থায় পানির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে পুরো গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
নিহতদের ছোট ভাই বেলাল প্রামানিক জানান, ‘আমার দুই ভাই-ই জন্ম থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। তারা একে অপরের ছায়াসঙ্গী ছিল। কখন যে পুকুরে পড়ে গেল বুঝতেই পারিনি। স্থানীয়দের কাছ থেকেই খবর পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি—সব শেষ।’
রাণীনগর থানার ওসি আব্দুল হাফিজ মো. রায়হান জানান, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এই করুণ ঘটনায় গ্রামের মানুষ একসাথে শোক প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, দুই ভাইয়ের মৃত্যু শুধু তাদের পরিবারের নয়, পুরো গ্রামেরই অপূরণীয় ক্ষতি।
গাভীর সাথে দুধ দিচ্ছে ১৭ দিন বয়সি একটি বাছুরও। এমন আজব ঘটনায় ঐ খামারির বাড়িতে ভিড় করছেন অনেকে। কেউ দাড়িয়ে দেখছেন দুধদোহন আবার কেউ তুলছেন ছবি। খামারির বাড়িতে এখন উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই আছে।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের পূর্বচরকরণশী গ্রামে হারুনুর রশিদের খামারে ঘটেছে এমন ঘটনা। খামারিসহ স্থানীয়রা বলছেন, এটি মহান আল্লাহর খুদরত। তবে বিষয়টিকে ব্যতিক্রমী ঘটনা বলছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও।
খামারি হারুনুর রশিদ বলেন, দুই বছর পূর্বে ৭৫ হাজার টাকায় একটি বকনা বাছুর কিনেছিলেন তিনি। সেটি এবার প্রথমবার একটি বাছুর জন্ম দিয়েছে। কিন্তু বাছুরটির জন্মের পর থেকে দেখেন সেটির ওলান অন্যান্য বাছুরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বয়সের তুলনায় অনেকটা বড়। পরে ওলানে হাত দিয়ে দেখেন দুধও আসে। ঘটনাটি তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরকে জানালে তারাও এসে দেখে গেছেন। হারুনুর রশীদ আরও বলেন, এই বাছুরের দুধ দেখতে এবং স্বাদেও গাভীর মতোই। বিষয়টিকে আল্লাহর নিয়ামত বলেও মনে করেন তিনি। হারুন বলেন, এই বাছুরের দুধ আমি নিজেও খেয়েছি, আমার সন্তানদেরও খাইয়েছি।
হারুনুর রশীদের বাবা আব্দুল কাদির বাচ্চু বলেন, তার ৭০ বছর বয়সে এমন ঘটনা শুনেনওনি, দেখেনওনি। এমনকি তাদের পূর্বপুরুষদের মুখেও এমন ঘটনার কথা শুনেননি।
একই এলাকায় বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকুরির সুবাদে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও এমন ঘটনা তার চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই দুধ দিচ্ছে শুনে হারুনের খামারে এসেছেন। প্রথমে বিশ্বাস না হলেও এখন তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। মিজানুর বলেন, নিজের চোখে না দেখলে এটি কেউই বিশ্বাস করবে না।
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এম. এম. এ আউয়াল তালুকদার জানান, তার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। প্রলেকটিন হরমোন নির্গত হওয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে বলেও জানান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তিনিও এই বিষয়টিকে আল্লাহ পাকের কুদরত বলে মনে করেন। এই কর্মকর্তা বলেন, এই বাছুরের দুধ পান করলে কোন সমস্যা হবে না। গাভীর দুধ দেখতে ও স্বাদ যেমন, বাছুরের দুধও তেমনি হবে।