বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

তোফায়েল-আমু-কাদের-শামীম ওসমানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-আগুন

তোফায়েল আহমেদের ভোলার গাজিপুর রোডের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ০০:০৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ০০:০৩

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি ছিল গত বুধবার। সেদিনই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়ায় আবারও ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে বুধবার রাতে প্রথমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর গুঁড়িয়ে দেয় তারা। সে রাতে ভাষণও দেন ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা। এতে ক্ষোভের মাত্রা এত বেশি ছিল যে ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার স্বামীর বাড়ি ‘সুধা সদন’ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। এরপর এই ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার কারণে সারা দেশে আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বাড়িতে একের পর এক হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। গত বুধবার রাতেই ভোলায় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে, বরিশালে দলটির আরেক বর্ষীয়ান নেতা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর বাড়িতে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে, নারায়ণগঞ্জে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পৈতৃক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। এছাড়াও নওগাঁয় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদারের বাড়ি, রাজশাহীতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িতেও হামলা, বাঙচুর ও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন এবং দলটির অনেক নেতার বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

তোফায়েল আহমেদের ভোলার বাসায় ভাঙচুর, আগুন

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভোলার দোতলা বাসভবনে ভাঙচুরের পর আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার রাতে শহরের গাজীপুর রোডের ‘প্রিয় কুটির’ নামের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

এ সময় তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে একটি ক্রেন ও একটি এক্সকাভেটর আনা হয়। তবে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিসের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ১টার দিকে দুই-তিন শ বিক্ষুব্ধ জনতা তোফায়েল আহমেদের বাসায় ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুব্ধ জনতা বাসার ভেতরে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র বাইরে বের করে সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে বাসায় দোতলা ও নিচতলায় আগুন দেয় তারা। পরে তাদের মধ্য থেকে একটি দল সড়কে হ্যান্ডমাইকে জয়বাংলার গান বাজিয়ে নাচতে থাকে ও গানের তালে তালে জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বাসার ভেতরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আর ভোলায় আসেননি অসুস্থ তোফায়েল। বাসাটিতে তার ছেলে থাকতেন বলে জানা গেছে।

ভোলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. লিটন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, তারা কোনো অগ্নিকাণ্ডের খবর পাননি।

বরিশালে আমুর বাড়ি গুড়িয়ে দিয়ে আগুন

বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে জনতা। গত বুধবার রাত ২টার দিকে সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে নগরীর বগুড়া রোডের বাড়িটিতে ভাঙচুর শুরু করা হয়। রাত ৩টার দিকে ভাঙচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনতা নগরীর কালীবাড়ী রোডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়িটিও বুলডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়। তারপর সেখানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে কালীবাড়ী রোডে এসে পুলিশ অবস্থান নেয়। রাত ১২টার দিকে সেনাবাহিনীরি সদস্যরাও সেখানে আসেন। একই সময় ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কালীবাড়ি রোডের ‘সেরনিয়াবাত ভবন’ এর দিকে এগোয়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়কের দুইপাশ থেকেই প্রবেশে বাধা দেয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ভবনের ভেতর প্রবেশ করে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনেও এ ভবনটিতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।

নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামের বাড়িটিতে এ হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা উপজেলার বসুরহাট বাজার থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি বসুরহাট বাসস্ট্যান্ড হয়ে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে থাকা ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার দোতালা ভবন হাতুড়ি, শাবল দিয়ে ভাঙা হয়। পরে ভাঙচুর করা হয় তার ছোট ভাই শাহাদাত মির্জার ভবনও।

এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের দিন বিকালে ওই বাড়ির পাঁচটি বসতঘর এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সেদিন বাড়িটির বেশ কিছু আসবাব লুটপাটও হয়।

নাজিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ৫ আগস্টের কিছুদিন পর কাদের মির্জা ভবনটি সংস্কার করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় কাদেরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হল। তবে হামলা-ভাঙচুরের সময় তাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না। কাদেরের পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম।

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শামীম ওসমানের পৈতৃক বাড়ি

নারায়ণগঞ্জে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পৈতৃক বাড়ি ‘বায়তুল আমান’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়। তার আগে বহু লোকজন বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে। ভবনটি ভাঙার কাজ চলার সময় সেখানে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির একটি মিছিল বের হয়। তাতে নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। মিছিলটি শহরের চাষাঢ়ায় বায়তুল আমানের সামনে এসে পৌঁছালে শুরুতে বড় আকারের হাতুড়ি দিয়ে ভবনটির দেয়াল ভাঙতে শুরু করেন লোকজন। পরে একটি বুলডোজার দিয়ে ভবনটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ভবনটির ভেতরের একটি অংশেও দেওয়া হয় আগুন।

ঘটনাস্থলে থাকা বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু সাংবাদিকদের বলেন, “খুনি হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বছরের পর বছর মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অসংখ্য গুম, খুন করেছে। ওসমান বাহিনীর প্রতি মানুষের যে ক্ষোভ, এই ভবনটি ভাঙার মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে৷”

এর আগে বেলা ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কয়েকটি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ সময়ও নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির ওই দুই নেতা। সেখানেই দুপুরে ঘোষণা দেওয়া হয় সন্ধ্যার পর বায়তুল আমান ভবনটিও ভেঙে ফেলার।

খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ এখন ধ্বংসস্তূপ

খুলনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাইয়ের ‘শেখ বাড়িতে’ গত বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ ও বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুরের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাড়ির ইট ও রড খুলে নিয়ে গেছে লোকজন। প্রায় দেড় দশক খুলনায় ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ থাকা ভাঙা বাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

এদিন দুপুরে নগরীর শেরে বাংলা রোডে গিয়ে দেখা যায়, ‘শেখ বাড়ি’ এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ। অসংখ্য মানুষ হাতুড়ি দিয়ে ইট খুলে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকে করে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ যন্ত্রপাতি দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ইট ও রড খুলে ওই বাড়ির সামনে বিক্রি করছে। ভোর থেকে এই কর্মকাণ্ড চলছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন। বিকেলে বাড়িটির সামনে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র।

বাড়ির চত্বরে ডিজিটাল দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করে রড কিনছিলেন শেখপাড়া এলাকার এক ভাঙাড়ির দোকানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দোকানি বলেন, এখানে সস্তায় কিনতে পারছি, সে কারণে এখানে এসেছি।

রিকশায় করে ইট নিয়ে যাওয়ার সময় চালক সোলায়মান হোসেন বলেন, ‌‘১৫ বছর আওয়ামী লীগের লোকজন লুট করেছে। সে কারণে এখন তাদের ইট-রড খুলে নিয়ে যাচ্ছি। এই বাড়ির লোকজন খুলনার মানুষের ওপর অনেক নিপীড়ন চালিয়েছে।’

এর আগে বুধবার রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শেখ বাড়ির সামনে জড়ো হয়। তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে থাকে ‘শেখ বাড়ির আস্তানা ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’। রাত ৯টা থেকে ৩টি বুলডোজার দিয়ে বাড়ির গেট ও দোতলা বাড়ির অর্ধেক অংশ গুঁড়িয়ে দেয়। এছাড়া বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় উৎসুক অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করেন।

বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল, শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল ও শেখ বাবুর। এই বাড়ি থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো খুলনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ব্যবসা, ঠিকাদারি, নিয়োগ, বদলি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ অনেক কিছু। এর আগে ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান বিক্ষুব্ধ লোকজন। তবে সেদিন শেখ পরিবারের কেউ বাড়িটিতে ছিলেন না।

খুবিতে মুর‌্যালসহ ৫ স্থানে ভাঙচুর

এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরসহ পাঁচটি স্থানে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নগরীর দৌলতপুরে সরকারি বিএল কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল ভাঙচুর করে। বেলা ১১টার দিকে নগরীর গল্লামারী এলাকায় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল ভাঙচুর করা হয়।

এর আগে বুধবার রাতে শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কালজয়ী মুজিব’ ম্যুরাল ভাঙচুর করে। রাতে নগরীর দোলখোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলোর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ভেঙে দেওয়া হয় তার বিলাসবহুল গাড়ি। আগুন দেওয়ার পর ৫ তলা বাড়ির লোকজন আতঙ্কে ছাদে উঠে যায়। পরে ফায়ারা সার্ভিসের দু’টি গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলীর বাড়ি ভাঙচুর করে লোকজন।

সারা দেশে হামলা ভাঙচুরের আরও কিছু ঘটনা

সিলেটে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ম্যুরাল। গত বুধবার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ম্যুরালটির অবশিষ্ট অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুসলিম জনতার ব্যানারে ম্যুরালটিতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারকে কেন্দ্র করে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। পরে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়ে পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। পরে সেখান থেকে তারা জামালখান মোড়ের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। এর আগে বিক্ষুব্ধরা একটি মশাল মিছিল বের করেন।

কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল-আলম হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে একটি দল। গতকাল রাত ১০টার দিকে এক্সক্যাভেটর নিয়ে তারা বাড়ির সামনের কিছু অংশ ভেঙে ফেলে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর দলটি চলে যায়। স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় চার নেতার একজনের নামে থাকা সব স্থাপনার নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভ শেষে মিছিল নিয়ে চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকে শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক ছবি টানিয়ে গণজুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ করে তাঁর ফেসবুক লাইভে আসার প্রতিবাদ জানান।

নাটোরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের পোড়া বাড়ি আলোচিত ‘জান্নাতি প্যালেসে’ আবারও আগুন দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বুধবার রাতে শিক্ষার্থীরা শহরের কান্দিভিটা এলাকায় সাবেক আগুন দেন। এসময় মাইক বাজিয়ে মিছিল নিয়ে কান্দিভিটাস্থ শিমুলের জান্নাতি প্যালেসে যান এবং আগুন দেন। প্রায় এক ঘণ্টা পোড়া বাড়ির ভেতরে ছিলেন ছাত্ররা।


সোনারগাঁয়ে অবৈধ চুনা ও ঢালাই কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা চুনা ও ঢালাই কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার সোনারগাঁ পৌরসভা এলাকায় দিঘিরপাড় ও পৌর ভবনাথপুর এলাকায় এ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে দুটি কারখানার মালিকরা পালিয়ে যায়। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মিল্টন রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ড্রিস্টিবিউশন কোম্পানি সোনারগাঁ জোনের ম্যানেজার প্রকৌশলী শবিউল আওয়াল, সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র অফিসার জাহেদুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গ্যাস সংযোগ নিয়ে পৌরসভার দিঘিরপাড় এলাকায় চুনা কারখানা ও পৌর ভবনাথপুর এলাকায় ঢালাই কারখানা গড়ে তোলা হয়। এসব কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় ২০লাখ টাকার গ্যাস চুরি করে এ কারখানায় ব্যবহার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় এক্সকিউভেটার দিয়ে চুনা ও ঢালাই কারখানা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গ্যাস সংযোগে ব্যবহৃত পাইপ সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ড্রিস্টিবিউশন কোম্পানি সোনারগাঁ জোনের ম্যানেজার প্রকৌশলী শবিউল আওয়াল জানান, ৫ আগষ্টের পর রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি গ্রুপ সরকারী সম্পদ গ্যাস অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে চুনা ও ঢালাই কারখানা গড়ো তোলে। দুটি কারখানায় প্রতিমাসে সরকারের প্রায় ২০লাখ টাকার সম্পদ চুরি করে ব্যবহার করছে। আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।


সাবেক আইজিপির সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা করেছিলাম: শিবির সভাপতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউসুফ হোসেন অনিক, ভোলা

পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৫ বছরের সাজা নি:সন্দেহে ন্যায়বিচারের পরিপূর্ণতা অর্জন করেনি, উনারও সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা করেছিলাম বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন এটা নিয়ে আপিল হবে রিভিউ হবে, আশা করছি তাকেও সর্বোচ্চ সাজার আওতায় নিয়ে আসা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা জেলা পরিষদে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে,জেলা পরিষদ হলরুমে ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রশিবির শাখার আয়োজনে ভোলা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামুলক বক্তব্য রাখেন তিনি।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, সকলের একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল যেন শেখ হাসিনার মামলার রায় দ্রুত দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সারাদেশে গণমিছিল থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সরকারের কাছে বিচারের দাবি উত্থাপন করা এবং চাপ প্রয়োগের কাজটা আমরা করেছি। ধীরগতিতে হলে রায় হয়েছে, এ রায়টা যথেষ্ট না, আমরা মনে করি দ্রুত সময়ে রায় কার্যকর করা জরুরী।

এর আগে আগে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবির ভোলা সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি ইমরান হোসেন নাবিলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মো.সোহেল,স্পোর্টস বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ রাফি এবং ভোলা শহর শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আমিন প্রমুখ।

এসময় অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।


পঞ্চগড়ে মাঠ দিবস ও কৃষকদের নিয়ে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মিজানুর রহমান, পঞ্চগড়

ব্রি’ ধান আধুনিকজাত ও প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের সম্পৃক্ততায়, দ্বাড়িয়াপাড়া সুরিভিটা অফিস চত্বরে মঙ্গবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর এলএসটিডি প্রকল্পের আওতায় এবং ব্রি স্যাটেলাইট স্টেশন, পঞ্চগড়-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার দ্বাড়িয়াপাড়া ও সুরিভিটা গ্রামে আয়োজিত হলো ব্রিধান-৯৩ ও ব্রিধান-১০৩ এর মাঠ দিবস এবং কৃষক মতবিনিময় সভা।এই আয়োজনের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে ব্রি উদ্ভাবিত আধুনিক ও পরিবেশ উপযোগী ধানের জাত সম্পর্কে সচেতনতা এবং চাষে আগ্রহ তৈরি করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মো: আবু বকর সিদ্দিক সরকার, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়, দিনাজপুর, বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও ব্রির আধুনিক জাত সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: আব্দুল মতিন, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পঞ্চগড়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পঞ্চগড় এর উপপরিচালক মো: আব্দুল মতিন ব্রিধান৯৩ ও ব্রিধান১০৩ এর উপকারিতা, যেমন উচ্চফলনশীলতা, রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা, স্বল্প জীবনকাল এবং বাজারযোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ব্রি ধান৯৩ ও ব্রিধান১০৩ জাত দুটি উত্তরাঞ্চলের জলবায়ু উপযোগী এবং কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভ জনক হিসেবে উঠে আসে আলোচনায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন মো: মাসুদ রানা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, ব্রি স্যাটেলাইট স্টেশন, পঞ্চগড় ও মো: আসাদুন্নবী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, পঞ্চগড় সদর।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কৃষক মো: ওয়াহেদুল এর জমিতে স্থাপিত ট্রায়াল প্লটে ব্রিধান৯৩ এর ফসল কর্তন কার্যক্রম (ক্রপকাটিং) পরিচালনা করা হয়, যেখানে প্রতি বিঘাতে ২২.৬ মন ফলনের তথ্য উঠে আসে এছাড়াও কৃষক মোঃ মামুন এর জমিতে ব্রি ধান১০৩ এর ফসল কর্তন করা হয় যেখানে প্রতি বিঘাতে ২৩.৫ মন ফলন পাওয়া গেছে যা প্রচলিত স্বর্ণা জাতের চেয়ে বেশী।


চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও, খুচরায় প্রভাব নেই

পাইকারিতে পেঁয়াজ ১০৫ টাকা আর খুচরা বাজারে ১৩০ টাকা কেজি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আহসান হাববুল আলম, চট্টগ্রাম

পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েনি। চলতি সপ্তাহের গত রোববার থেকে পাইকারিতে মানভেদে পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আগের দামে, অর্থাৎ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে।

ভোক্তারা অভিযোগ করে বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন কিছু নয়। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। দেশে পেঁয়াজের উচ্চ ফলনের দাম সেভাবে কমেনি। এখন সরকার আমদানির ঘোষণায় তড়িঘড়ি করে দাম কমিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে গত সপ্তাহে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সব মিলিয়ে এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। তবে গত রোববার থেকে সেই দাম ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে, মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রায় পাঁচ ধরনের পেঁয়াজ মিলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোটটা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এরপর আকারভেদে ৯৫, ৯৭, ৯৮ ও ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এখনো তার প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। খুচরা দোকানগুলোতে এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানির অনুমতির খবরে সরবরাহ বাড়ায় দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দু-দিন আগেও যেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল সেই পেঁয়াজ এখন কমে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেটির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামেও

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসাস কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আশা করছি আগামী কয়েকদিনে আরও কমবে

তবে খাতুনগঞ্জের পাইকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে, তাই আমদানির অনুমতি না দিলেও সমস্যা হবে না। তা পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। এছাড়া চাহিদা কিছুটা কমে যাওয়া এবং আমদানির ঘোষণায় পাইকারি পর্যায়ে দাম সামান্য কমেছে।

এদিকে হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, চাহিদা কম এবং আমদানির ঘোষণার কারণে পাইকারিতে বাজার একটু কমেছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।

একই কথা বলেছেন চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই!

নগরের চকবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. এরফান দৈনিক বাংলাকে জানান, আমরা এখন ১২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। পাইকারিতে দাম কমেছে শুনেছি, কিন্তু আমাদের আগের কেনা মাল আগের দামে করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত ৪ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।

দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকার সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমদানির ঘোষণায় পাইকারি বাজারে সামান্য প্রভাব পড়লেও খুচরায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। চাহিদার তুলনায় দেশীয় উৎপাদন কম থাকায় কয়েক বছর আগেও দেশে প্রতি বছর ৫৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হতো। একসময় আমদানি হতো ১০ লাখ টনেরও বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময় আমদানি নির্ভরতা কমেছে।


ভূমি হস্তান্তর ও বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি চালুর দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিজয় ধর, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে বাজার ফান্ডের ভূমি হস্তান্তর ও বন্ধকী দলিল রেজিস্ট্রি চালুর দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি বাজার ফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে বাজার ফান্ডের ভূমি হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম চালু না হলে, আগামী ৩০ নভেম্বর রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচী পালন করা হবে। এর পরও যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হয়, তবে বাজার ফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটি পুরো রাঙামাটি জেলায় শাটডাউন, হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিটি।

বাজার ফান্ড ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম পনিরের সভাপতিত্বে ও সদস্য কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম শাকিল, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুল হক, রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আব্দুল মান্নান, রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, বৃহত্তর বনরুপা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, রাঙামাটি করাতকল সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও রহস্যজনক কারণে গত ৬ বছর ধরে পার্বত্যাঞ্চলের বাজার ফান্ড এলাকায় ঋণ কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে না, পাশাপাশি বাজার ফান্ডের ভূমি হস্তান্তর ও বন্ধকি দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে অত্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। তাই পাহাড়ের বাজার ফান্ড অধিভুক্ত নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য দ্রুত বাজার ফান্ডের ভূমি হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ পূর্বের ন্যায় কার্যক্রম চালু করার আহ্বান জানান বক্তারা।


এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল, গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় জান্নাতুল ফেরদৌস জিম (১৭) নামে একজন কলেজ শিক্ষার্থীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত জিম উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বর্তমান সৌদি আরব প্রবাসী জসিমের মেয়ে।

জানা যায়, মৃত জিম চলতি বছরে রাজবাড়ী মহিলা কলেজ হতে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। পরবর্তীতে সে পরীক্ষায় পাস করার নিশ্চয়তা নিয়ে বোর্ড চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর পরীক্ষার ফলাফল অকৃতকার্য আসে। এ ব্যাপারে তার মন খুবই খারাপ থাকায় বাড়ির কারোর সাথে তেমন কথা বলতেন না। এমতাবস্থায় গত ১৭ নভেম্বর রাতের খাবার খেয়ে তার ছোট বোন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া জিতুর সাথে তাদের মায়ের পাশের রুমে ঘুমাতে যান। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে মৃতের ছোট বোনের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিলে পাশে বিছানায় হাত দিয়ে তাকে দেখতে না পেয়ে পাশের রুমে তার মা শামীমা আক্তারকে ডাক দিলে তার মা বোন জীমকে ডাকতে বললে প্রতি উত্তরে জিতু বলে জিমকে ঘরে পাওয়া যাচ্ছে না।

তাৎক্ষণিক তার মা তাদের ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়ে দেখেন জিম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আছে।

মৃতের মা মোছাম্মদ শামীমা আক্তার জানান, এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানা ওসি আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।


তারুণ্যের উৎসবে বারি’র প্রযুক্তি প্রদর্শনী ও কর্মশালা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গাজীপুর প্রতিনিধি

‘তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইংয়ের উদ্যোগে ইনস্টিটিউটের কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে তরুণদের জন্য বারি’র প্রযুক্তি প্রদর্শনী ও কৃষি শিক্ষায় উদ্ভুদ্ধকরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, নবীন কৃষি উদ্যোক্তা এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজন অংশগ্রহণ করেন।

বারি’র প্রযুক্তি প্রদর্শনী অনুষ্ঠান পরবর্তী একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বারি’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. মুহাম্মদ আতাউর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ। এ সময় বারি’র ওপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইং) ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ এবং পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং) ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার; পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. মন্জুরুল কাদির; পরিচালক (কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো আলতাফ হোসেন এবং বারি’র বিভিন্ন কেন্দ্র/ বিভাগ/ শাখার বিভাগীয় প্রধানরা ও সিনিয়র বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন। ‘তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সবজি বিভাগ) ড. মো. উবায়দুল্লাহ কায়ছার। অনুষ্ঠানটি কো-অর্ডিনেট করেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইং) ড. মো. মিজানুর রহমান।

প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিএআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাত, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি এবং রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের প্রদর্শন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা এসব প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হন এবং বিভিন্ন প্রদর্শনী স্টল ঘুরে দেখেন। এই কর্মসূচি তরুণদের মধ্যে কৃষি বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি এবং কৃষিভিত্তিক উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা জ্ঞাপন করেন।


নীলফামারীতে বিভিন্ন দাবিতে ইপিজেডের শ্রমিকদের ডিসি অফিস ঘেরাও

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নীলফামারী প্রতিনিধি

অকারণে শ্রমিক ছাঁটাই, ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহাল এবং কর্মস্থলে অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও করেছেন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের সনিক বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কয়েকশ শ্রমিক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমিক মোহাইমিনুল ইসলাম, রশিদুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, শিমু আক্তার, নাছরিন বেগম, নুর জাহান প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ ২৬ দফা যৌক্তিক দাবি মেনে নিলেও কারখানার কয়েকজন বাঙালি ঊর্ধতন কর্মকর্তা এসব দাবি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন। কোন কারণ ছাড়াই শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে, অসুস্থতার জন্য ছুটি দেওয়া হয় না এবং ওভারটাইম করেও তাদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না- এমন অভিযোগও তুলে ধরেন তারা।

শ্রমিকরা জানান, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। পরে শ্রমিকনেতাদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। শেষে দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়ে শ্রমিকরা ডিসি অফিস প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

উল্লেখ্য, একই দাবিতে গত তিন দিন ধরে কারখানা গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সনিক বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিকরা।


কেশবপুরে স্থানীয় কতৃপক্ষের সাথে যৌথ পদক্ষেপ সংলাপ অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুরে নেটজ বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্ বাংলাদেশ (রিইব) আয়োজিত ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ পদক্ষেপ সংলাপ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি, সিএসও সদস্য ও রিইবের প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্থানীয় নানা সামাজিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আলাউদ্দিন আলা, চেয়ারম্যান, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ। সভাপতিত্ব করেন মো. হারুনার রশীদ বুলবুল, সভাপতি, সিএসও কমিটি, কেশবপুর উপজেলা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মো. হুমায়ুন কবির, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইপি.), মো. আসলাম মোল্লা, প্রকল্প সমন্বয়ক এবং মো. খালিদ হাসান, এলাকা সমন্বয়কারী, রিইব-হোপ প্রকল্প। এছাড়া গ্রাম আদালতের প্রতিনিধি সংকর পাল, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মোছা. রাশিদা বেগম, শাহানাজ পারভীন, নাজমা সুলতানা, ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দীন (দোরমুটিয়া), মো. সিরাজুল ইসলাম (মূলগ্রাম), রাজ্জাক (মূলগ্রাম), এ কে এম রেজওয়ানুর রহমান (আলতাপোল), মো. রাশিদুল ইসলাম, সহ জনপ্রতিনিধি ও সিএসও সদস্যরা অংশ নেন।

এ সময় ইউনিয়নের বিভিন্ন দীর্ঘদিনের সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, এলাকায় মাদক সেবন ও ব্যবসার বৃদ্ধি রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্থা সমাজে বর্ণ বৈষম্য, বিশেষত দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, অভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, মিতা মন্ডলের নিখোঁজ ঘটনা যার ডায়েরি দ্রুত থানায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি, সভায় অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক সমস্যাগুলোর সমাধানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। চেয়ারম্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিতভাবে এ বিষয়ে অবহিত করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা হবে।


শত বছর বয়সেও পিঠার ছাঁচ বানিয়ে উপার্জন করছেন মাগুরার সন্ধ্যা রানী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
শিউলি আফরোজ সাথী, মাগুরা

মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সন্ধ্যা রানী, শতবর্ষ পার করলেও সংসারের হাল ছাড়েননি। পিঠার ছাঁচ, দইয়ের হাড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে উপার্জন করছেন অর্থ। সংসার চালাতে ছেলেকে সাথে নিয়ে এ কাজ করেন তিনি।

স্বামী ব্রজগোপালের সাথে পুরনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মৃৎশিল্পের কাজ করে সংসার চালাতেন। স্বামী গত হয়েছেন ১২ বছর আগে। তার মৃত্যুর পরেও একমাত্র ছেলে আরাধনকে (৪৫) সাথে নিয়ে মৃৎশিল্প তৈরি করে সংসার চালান তিনি। তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন এই সংসারের পেছনে।

পাল বাড়িতে ৭ বছর বয়সে বউ হয়ে আসেন শতবর্ষী নারী সন্ধ্যা রানী। সেই থেকে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। একশত বছর পার করলেও এখনো সংসারের উপার্জনের জন্য তার হাতের নিপুন ছোঁয়ায় মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

যে বয়সে তার পুতুল খেলার কথা ছিল সে বয়সে হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। বয়সের ভারে মাজাটা নুয়ে পড়েছে তার। তবু সামনের দিকে মাথা ঝুঁকে একাই হাঁটা-চলাফেরা করেন তিনি। শীতের সময় পিঠার ছাঁচের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই বসা কাজগুলোই তিনি বেশি করে থাকেন। কাজের ফাঁকে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন তিনি। মানুষ দেখলে সেই কিশোরী বধূর মতো এখনো এক হাত ঘোমটা টানেন। নেই কোন ক্লান্তি নেই কোন বিরক্তি, বড্ড সাদাসিধে সহজ সরল মানুষ তিনি।

মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্ম তার। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই একমাত্র জীবিত আছেন বাকি সবাই পরলোক গমন করেছেন অনেক আগেই। মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকে হারিয়েছেন। কৃষক বাবা সাত বছর বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দেন। শ্বশুর শাশুড়ি তাকে গড়ে পিঠে মানুষ করেন। শাশুড়ির হাত ধরেই সংসারের কাজ শেখা এমনকি মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে ও পারদর্শীতার পরিচয় দেন।

সন্ধ্যারানী বলেন, কোনদিন খেলার কথা চিন্তা করিনি আর মন বলে কিছু আছে তা বুঝতাম না। এই কাজ করতি আমার ভালো লাগে, সেই সকাল ছয়ডার সময় ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজের পাশাপাশি মাটির জিনিসপত্র বানাই।

তার ছেলে আরাধন বলেন, আমার মায়ের বয়স ১০০ পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো সে একাই চলাফেরা করতে পারে। এ বয়সেও তার চশমা লাগে না খালি চোখেই দেখতে পায়। এমনকি তার শরীরে কোনো রোগ নেই কোনো ওষুধপত্র লাগে না। আর সব সময় হাসি খুশি থাকে।

প্রতিবেশী পরিতোষ পাল বলেন, উনি সহজ সরল একজন ভালো মানুষ সবসময় হাসিখুশিতে থাকেন। এ বয়সেও সংসারের টুকিটাকি কাজ করতেও দেখি উনার শরীর এখনো সুস্থ। তার বয়সি মানুষ এখন আর তেমন দেখা যায় না। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ওনাকে দেখতে আসেন। আবার অনেকে ভিডিও করে নিয়ে যান।


জয়পুরহাটে জামাইদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

*এক রুই মাছ ২২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি *নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এক যুগ ধরে চলে আসছে জামাই মেলা
থরে থরে সাজানো মাছ। নবান্ন উপলক্ষে বসেছে মাছের মেলা। সকালে জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলা থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে মাছের মেলা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, বোয়াল ও সামুদ্রিক মাছসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ।

মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হলেও এবার মাছের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মেলাকে ঘিরে সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় করছেন মেলাপ্রাঙ্গণে। মেলার দিনে এই এলাকার সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন। এ কারণে এই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রঙিন কাপড়ের বিশাল প্যান্ডেল বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই প্যান্ডেলের নিচে থরে-থরে দেশীয় প্রজাতির বড়-বড় মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাছের মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। মেলায় সারি সারি দোকানে চলছে হাঁকডাক, দরদাম। মিলছে তিন কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি গ্রাস কার্প ওজনের মাছ। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।

স্থানীয়রা জানান, ক্যালেন্ডার নয় পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসে প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মূলত এই মাছের মেলা বসিয়ে থাকেন। আর এই মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে অংশ নেন কালাই পৌর শহরে মূলগ্রাম, দুরঞ্জ, আঁওড়া, সড়াইলসহ উপজেলার পুনট, মাদাই, পাঁচগ্রাম, মাদারপুর, বেগুনগ্রাম, হতিয়ার, ঝামুটপুর, হাতিয়র, মাত্রাইসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতি বাড়িতে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত করা হয়। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকেও লোক আসেন মেলায় মাছ কিনতে।

মেলায় এবার প্রচুর মাছের আমদানি হয়েছে। মাছের সারি সারি দোকানে আকৃতি অনুযায়ী বিক্রি করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। সিলভার কার্প প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা, বিগহেড কার্প প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ১,২০০ টাকা ও কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ১,৩০০ টাকা।

মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাইয়ের মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ। সাড়ে ১৮ কেজি ওজনের রুই মাছটির দাম হাঁকেন ২৫ হাজার টাকা। সেই মাছ ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার মনোয়ার হোসেন ২২ হাজার ২০০ টাকায় কিনে নেন।

মেলায় মাছ কিনতে আসা কালাই পৌরশহরের মূলগ্রামের সুরেষ চন্দ্র বলেন, প্রতি বছর এ মেলায় আসি। আর মেলা থেকে পছন্দসই মাছ কিনে বাড়িতে ফিরি। এবার মেলায় মাছের দাম বেশি। ১৯ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনলাম ২৪ হাজার ৭০০ টাকায়।

মেলায় উপজেলার আহম্মেদাবাদের হাতিয়র গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছেন নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে নিয়ে মাছের মেলায় ঘুরতে এসেছি। পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলার নাম আগে থেকেই জানি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখছি। অনেক ভালো লাগছে।

মেলায় মাছ কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক জামাই বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলায় বড় মাছের আমদানি অনেক বেশি। মেলা থেকে ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনলাম। এখন শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

স্থানীয় কালাই পৌর শহরের পূর্বপাড়ার তাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, এই মাছের মেলাটি এক যুগ ধরে চলে আসছে। মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা।

মৎস্য খামারি মকবুল হোসেন বলেন, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন। এবার সকাল থেকে ক্রেতারা আসছেন মাছ কিনতে। তারা তাদের পছন্দ মতো মাছ কিনে বাড়িতে ফিরছেন।

মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বিক্রি সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ সামান্যই টিকবে। তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় ক্রেতা বেশি। তাই মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি।

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠেছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা ও মাছ চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। বড় বড় মাছ দেখে এ এলাকার চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় কমপক্ষে এক কোটি টাকার মাছ ক্রয়-বিক্রয় হবে। মৎস্য বিভাগ চাষিদের সবসময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মেলায় যেন কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।


রাণীনগরে রেলের উঁচু-নিচু রাস্তায় ঘটছে দুর্ঘটনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগরের গলার কাঁটা রেলগেটের উঁচু-নিচু রেলের রাস্তায় প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এক বছর পার হলেও বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে সময় পার করছে রেল কর্তৃপক্ষ আর অন্যদিকে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন পথচারীরা। দ্রুত রেলের মাঝের উঁচু-নিচু রাস্তাটি সমান করে দিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়সহ শত শত পথচারী।

স্থানীয় ভ্যানচালক মো. মেহেদী জানান, প্রায় এক বছর আগে রেল সংস্কার করার সময় সড়কের পাকা অংশ তুলে ফেলে সংশ্লিষ্টরা। এরপর থেকে যে উঁচু-নিচু অংশের তৈরি হয়েছে তাতে প্রতিনিয়তই ছোট ছোট যানবাহন যাত্রীসহ উল্টে যাচ্ছে। আবার অনেক রোগীরা এই রেলগেট পার হওয়ার সময় উঁচু-নিচু অংশের ঝাকুনি খেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছেই। আবার অনেকে উল্টে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহতও হচ্ছেন। দ্রুত এই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এই চালক।

সিমবা গ্রামের অটোচার্জার ভ্যানচালক রুহুল আমীন বলেন, রেলগেটের উভয় পাশের সড়ক ভালো হলেও রেলগেটের রেলের অংশটি দীর্ঘদিন যাবত পাকা তুলে উঁচু-নিচু করে রাখা হয়েছে। এই সামান্য অংশটুকু পারাপার হওয়ার কারণে গাড়ির যানবাহনের যন্ত্রাংশ হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় ২০টির বেশি ট্রেন চলাচলের সময় যখন যানজটের সৃষ্টি হয় তখন ভিড়ের মাঝে এই উঁচু-নিচু অংশ পার হতে যানবাহনের সঙ্গে পথচারীদের ধাক্কা লাগে। এতে করে মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনিভাবে যানবাহনেরও চরম ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত এই সামান্য অংশ সমান করে দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ জানান শ্রমজীবী এই মানুষটি।

আবাদপুকুর এলাকার বাসিন্দা পথচারী আলম হোসেন জানান, রাণীনগর রেলগেট অনুমোদিত একটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই রেলগেট পার হয়ে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিনই উপজেলা সদর, নওগাঁ শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে থাকেন। রেলগেটে নতুন ভোগান্তি হিসেবে যুক্ত হয়েছে উঁচু-নিচু রাস্তা। এই রেলগেট একবার পার হলে দুর্বল মানুষ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত রেলের উঁচু-নিচু রাস্তাটি সমান করার কোনো বিকল্প নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, ট্রেন যাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয় এই সরু রেলগেটে। তার উপর আবার সংস্কার কাজের সময় সড়কে রেলের অংশের পাকা তোলার কারণে যে উঁচু-নিচু অংশের সৃষ্টি হয়েছে সেই সামান্য অংশ চলাচলে পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা এসে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ভোগান্তির বিষয়টি লিখিতভাবে রেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার জানানো হয়েছে।

সান্তাহার রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য.) মো. আব্দুর রহমান মুঠোফোনে জানান, রাণীনগরের রেলগেটের উঁচু-নিচু অংশের নতুন করে পাকাকরণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দেওয়া হবে।

নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক রাসেল জানান, সড়কটি সড়ক বিভাগের হলেও রেলগেট অংশটি রেল কর্তৃপক্ষের যার কারণে চাইলেই সড়ক বিভাগ ওই উঁচু-নিচু অংশ সমান করে দিতে পারে না। বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি রেল অনুমতি প্রদান করে তাহলে পথচারীদের ভোগান্তি লাঘব করতে দ্রুতই সড়ক বিভাগ ওই সামান্য অংশটি নতুন করে পাকাকরণ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।


কোটালীপাড়া ককটেল বিস্ফোরণে ৩ পুলিশ সদস্য আহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিচ তলায় সমাজসেবা অফিসের দেওয়ালে দুটি ও রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোটালীপাড়া থানার নিচ তলার অফিস কক্ষে ১টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় দুষ্কৃতিকারীরা।

কোটালীপাড়া থানায় বিস্ফোরিত ককটেলে কর্তব্যরত কনস্টেবল আইরিন নাহার (৩১), কনস্টেবল আরিফ হোসেন (৩৩) ও কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৫২) আহত হয়েছেন।

আহতরা রাতেই কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুমার মৃদুল দাস বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের শরীরে স্পিন্টারের আঘাত ছিল। তবে সেগুলো মারাত্মক নয়। তাই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কোটালীপাড়া থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানায় একটি ককটেল ছুড়ে মারার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দোকার হাফিজুর রহমান জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে থানার পেছন দিক থেকে থানা ভবনকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতিকারীরা। এতে কর্তব্যরত ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। তাদের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কোটালীপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মামুন বলেন, কোটালীপাড়া থানায় একটি ও উপজেলা পরিষদে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।


banner close