বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
২২ কার্তিক ১৪৩২

বিভিন্ন জেলায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ছাত্র-জনতার বুলডোজার অভিযান: ভাঙা হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ০৫:৫৩

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক বিভিন্ন এমপি ও রাজনীতিবীদদের বাড়ি ঘরে ভাঙ্চুর চালিয়েছে বিক্ষব্ধ জনতা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এসব সম্পত্তিতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাসভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে রাজশাহীর উপশহর এলাকার তিনতলা বাড়িটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়।
ওই সময় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতাকে সাবেক মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। ছাড়া এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়ি ভাঙার দৃশ্য অনেকেই ঘটনাস্থল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করেন।
তবে এ বিষয়ে দ্বায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলেও এ ব্যাপারে কেউ কথা ভলতে চাননি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। ওই দিনই এই বাড়িতে হামলা করে সবকিছুই লুট হয়। এরপর বাড়িটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় খালি পড়ে ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে আবারও হামলা করে সীমানা প্রাচিরসহ ভবনটির সামনের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়।
এর আগে রাজশাহী উপশহরের নিউমার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক কার্যালয় ও শামীম নামের আওয়ামী লীগের এক নেতার চেম্বার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতার চেস্বার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ায় এক্সাভেটর ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া রাজশাহীর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িতে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বাঘার আড়ানী পৌরসভার চকসিঙ্গা এলাকার এই বাড়িটিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন দেয় ক্ষুব্দ জনতা।
এদিকে, ঝিনাইদহের শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরাল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের শমশেরনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ আমলে কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন শমশেরনগর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ শমসের দেশের সব চেয়ে বড় এই ১২৩ ফুট উঁচু শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরালটি স্থাপন করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা শমশেরনগরের শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরাল ভাঙচুর করার পর ম্যুরালের ভাঙ্গা অংশগুলো বারবাজার শহরে এনে সড়কের ওপরে রেখে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সমন্বয় হোসাইন আহমেদ বলেন, বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনা পরিবারের কোনো ম্যুরাল থাকবে না, থাকবে না ফ্যাসিবাদের কোনো চিহ্নও। এজন্য শেখ মুজিবের এই ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে ও আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এসময় আগুন দেওয়া হয় সাবেক মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের বাসভবনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার সময় ও পরে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা উপজেলা সদরে একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ণি করে। পরে মিছিলকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ খান, মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূরে আলম শাহীন, নাজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কান্তি বিশ্বাস ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার মঠবাড়িয়ার পৌর এলাকায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের (দক্ষিণ) সাবেক সভাপতি ও মঠবাড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বায়জীদ আহমেদ খানের বাইপাস সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ।
এসব বিষয়ে নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ আল ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে পিরোজপুরের নেছারাবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া বীর নিবাসে স্থাপন করা শেখ মুজিবুরের রহমানের নামে খোদাই করা ফলক ভাঙ্গে ফেরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জিরবাড়ী গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা এই ফলক ভেঙ্গে ফেলে।
নেছারাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতান নামে এক ব্যক্তি বলেন, যেখানেই আওয়ামী লীগের ও শেখ মুজিবের চিহ্ন আছে তা নিশ্চিহ্ন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে বলদিয়া ইউনিয়নের বীর নিবাসে বসানো শেখ মুজিবুরের রহমানের নামে খোদাই করা পাথর টাইলস ভাঙা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বীর নিবাসে লাগানো শেখ মুজিবের সব চিহ্ন ভাঙা হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত বুলডোজার অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামে বুলডোজার আনা সম্ভব নয় তাই তারা হাতুড়ি শাবল দিয়ে অভিযান শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে বীরনিবাসের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এক্সকেভেটর দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভা ভবন, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের বাংলাস্কুল মোড়ের জেলা আওয়ামী লীগের দোতলা কার্যালয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে এই ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ভবনটির বেশিভাগ অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকশ বিক্ষুব্ধ জনতা এক্সকাভেটর দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। এ সময় তাদেরকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টা থেকে ভোলা জেলা শহরের নতুন বাজার-সংলগ্ন প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হয় ছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি এক্সকেভেটর আনেন তারা। প্রথমে এক্সকেভেটর দিয়ে ভোলা পৌরসভা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর জেলা পরিষদের সামনের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এসব ম্যুরালের কিছু অংশ ভাংচুর করা হলেও বৃহস্পতিবার পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: দৈনিক বাংলা


ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার ধানমন্ডির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এরই ধারাবাহিকতায় ভোলাতেও শক মুজিবের ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়েছে।
তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের আঁতুড় ঘর ছিল ভোলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এ কার্যালয় থেকে হামলার নির্দেশ দেওয়া হতো। এ কারণে মুজিববাদ এবং ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার রাতে ভোলা শহরের সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ চৌধুরীর বাড়িসহ ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ফেনীর পৌরসভার বারাহীপুরে ও শহরের স্টেশন রোড এলাকায় এসব হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে হামলার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে এমপি নাসিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে ফেনী রেলস্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও ভাঙচুর চালায়। এছাড়া এমপি মাসুদ চৌধুরীর সোনাগাজী গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। তবে বাড়ির সব জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।
এসব ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন শাকিল বলেন, বুলডোজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথম ধানমন্ডি-৩২ নম্বর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছে। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র সমাজ ও আহত ভাইরা মিলে এই কর্মসূচি পালন করি।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
এর আগে, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাসিমের ফেনীর বাসভবন ও স্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।
এছাড়া নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া থানার ওসি আজমল হুদা। তিনি জানান, বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ঘাটে থাকা ছয়টি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। আহত একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকি দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিসহ বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা হাতিয়া উপজেলা সদর ওছখালীতে জড়ো হয়। পরে মিছিল নিয়ে তারা মোহাম্মদ আলীর বাড়ির দিকে গেলে বাড়ির সামনে মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার মিছিলে মোহাম্মদ আলীর বাড়ি থেকে তার লোকজন গুলিবর্ষণ করেছে।
অপরদিকে মোহাম্মদ আলীর অনুসারীরা অভিযোগ করেন, ওছখালীর দক্ষিণ ও উত্তর দিকে মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে একদল লোক। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে রাত ২টার দিকে বাড়ি দু’টিতে হামলা করে ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে তারা। পরে আফাজিয়া ঘাটে নোঙগর করা মোহাম্মদ আলীর ৪টি স্পিডবোট ও ৬টি ট্রলারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আজমল হুদা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১০ আগস্ট রাত ৩টার দিকে হাতিয়ার ওছখালীর ওই বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের বড় ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিকে হেফাজতে নেয় নৌবাহিনী। এরপর থেকে তারা তিনজন কারাগারে আছেন।
এদিকে রাতে হাতিয়ায় মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ক্ষোভ দেখান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ। তার গ্রামের বাড়ি হাতিয়ায়। তিনি সেখান থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাসুদ তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক প্রোফইলে একটি পোস্টে লেখন, আমার জন্মভূমি হাতিয়ায় সাবেক এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন আছে, কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রও আছে। আমার ভাইদের উপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, আমি যাচ্ছি। হয় জন্মভূমি, নয় মৃত্যু।”
পরে রাতেই মিছিল নিয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে যান তিনি। রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের আইজিপি ও আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বিষটি জানিয়েছি। হামলা করার মতো ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে শুক্রবার মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই নিশ্চয়তা আমি আপনাদের দিতে চাই। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে অভিযান চালায় পুলিশ।
এদিকে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও তার বড় ভাই সাবেক বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের দিনাজপুরের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। এছাড়া দিনাজপুর আওয়ামী লীগের জেলা ও সদর উপজেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বুলডোজার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কয়েকশ ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন এসব ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বুলডোজার নিয়ে প্রথমে দিনাজপুর সদর হাসপাতাল এলাকার ইকবাল ও তার ভাই ইনায়েতের নতুন বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও ৫ আগস্ট ওই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এরপর পুনঃনির্মাণ করা হয়।
ওই রাতেই দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টির আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর উপজেলা কার্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এছাড়া একই রাতে দিনাজপুর জেলার খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসও বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
এছাড়া, সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকায় সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের প্রয়াত এমপি আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের দুটি বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে এ বিষয়টি প্রচার করে।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মিছিল নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকায় বাড়ি দু’টিতে এ ভোংচর চালানো হচ্ছে। এ সময় আওয়ামী লীগের আস্তানা, সয়দাবাদে হবে না—মর্মে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। ভাঙচুর শেষে তারা মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বপনের এক স্বজন জানান, পুনর্বাসন এলাকায় তিনটি প্লটে প্রয়াত এমপি স্বপনের তিনটি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি একতলা ও একটি দোতলা মিলে দুটি পাকা বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বপন। মৃত্যুর আগে এসব বাড়ি তিনি মেয়েদের নামে লিখে দেন। বর্তমানে বাড়িগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ী-ঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রতিপক্ষের গুলিতে শান্তা ইসলাম (২৪) নামে এক গৃহবধু নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় আরো বেশ কয়েকজন। নিহত শান্তা ইসলাম একই এলাকার শাকিল খানের স্ত্রী। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের স্বজনরা জানান, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ চলার সময় প্রতিপক্ষ সোহেল ও তার লোকজন শস্ত্র নিয়ে ইউপি ভবন ও ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেলের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসময় ৮/১০ টি বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এতে বাধা দিলে ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা ইসলামকে গুলি করে তারা। শান্তা ইসলামকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন রাজিব তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় আরো ৫ থেকে ৭জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে জানান স্বজনরা।
রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ ইসমাইল হোসেন রাজিব বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে শান্তাকে নিয়ে আাসেন তার স্বজনরা। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেল জানান, সোহেল এলাকায় মাদক ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এরই জেরে সে জুমার নামাজ চলাকালে ফাকা বাড়ি পেয়ে তারা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় তাদের গুলিতে আমার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা ইসলাম মারা যায়।
এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ নিহতের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে, সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এবং উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এবং রাতে এসব ম্যুরাল হাতুড়ি দিয়ে ভাঙেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনের পর এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুলাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এবং রাতে উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।
এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তার আহমেদ, কাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তানজীল হাসান খাঁন, পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক আতিকুল ইসলাম আতিক, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক, সেক্রেটারি আবু বকর শিপন, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সালমান হোসাইন, কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শামীম আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাইদুল ইসলাম, রায়হান আহমদ, ইব্রাহিম আলী, শেখ রানা, আরিয়ান রিয়াদ, সাকেল আহমদ, আরিফুল ইসলাম, ফয়েজ আহমদ, নুর উদ্দিন, শামীম আহমদ, শাহরিয়ার জামিল, মাহিনুর রহমান, শাহ সিয়াম, ফাহাদ ও জিসান, পৌর জাসাসের আহবায়ক ফারাজ ফারদিন, যুগ্ম আহবায়ক তানফিজুর রহমান সাইফসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্র-জনতার অভিযানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
ও বিজয় একাত্তরচত্বর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে এস্কেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা প্রথমে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স মোড়ের বিজয়-৭১ চত্বরটি ভাংচুর শুরু করে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের মাঝে সড়ক দ্বীপ আকারে একটি ফোঁয়াড়া নির্মাণ করে পৌরসভা। শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য লাগানো হয় ফোঁয়াড়াটির চার পাশে। মুক্তিযোদ্ধ ভিত্তিক ভাস্কর্যের মাঝে দুটি মানুষ আকৃতি হাত তোলে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা বহন করছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত চত্বরটির নাম দেওয়া হয়েছে বিজয় ৭১ চত্বর। এ কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ায় ও যানজটের কারণে এটি অপসারণের দাবি ছিলো দীর্ঘ দিনে। বিজয়-৭১ চত্বরটি ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ শাহরিয়ার বিন মতিনের নামে নাম করণ করা হয়েছিল। এই চত্বরটি ভাঙার পর পাশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ চত্বরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সংগঠক হাসানুর রহমান জানান, মোহাইমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের ২টি বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুর্ণবাসন এলাকার বাড়ি দু’টিতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ণবাসন এলাকায় হাসিবুর রহমান স্বপন দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ি দুটি ভাড়া দেওয়া ছিলো। হাসিবুর রহমান স্বপন ৮০-র দশকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। পরে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বিএনপি তাকেবিহিস্কার করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঐক্যমতের সরকার গঠনের ডাক দিলে তিনি তাতে যোগ দিয়ে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২১ সালে করোনা ভাইসাসে আক্রান্ত হয়ে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সয়দাবাদের পুর্ণবাসন এলাকায় দুটি বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর শহরের পাঁচ মাথা চত্বর ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তবে সেখানে জাতীয় চার নেতা ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল অক্ষত রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ মুজিবের দুটি ম্যুরালের বেশ কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই মূল অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় পাঁচবিবি পৌর শহরের পাঁচ মাথা এলাকায় একটি এক্সকেভেটর আনেন। পাঁচ মাথা চত্বরের পশ্চিম পাশে একটি শাপলা ফুল, জাতীয় চার নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল রয়েছে। এসব ম্যুরালের মধ্যে গত ৫ আগস্টের পর শেখ মুজিবের ম্যুরালটির কিছু অংশ ভেঙে বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। এক্সকেভেটর নিয়ে শুধু শেখ মুজিবের ম্যুরালের মূল অবকাঠামো ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়। তবে জাতীয় চার নেতা ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল অক্ষত রয়েছে।
এ সময় ছাত্র-জনতাকে ‘মুজিব বাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘হই হই রই রই, শেখ হাসিনা গেল কই’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

পাঁচ মাথা চত্বরের শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া পর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এক্সকেভেটর নিয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরালটিও ভেঙে ফেলা হয়।

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় তারা চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলের বাড়িতেও ভাঙচুর-লুটপাট চালায়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হামলার এ ঘটনা গুলো ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুইটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছ।
স্থানীয়রা জানায়, রাত আটটার দিকে শতাধিক ছাত্র-জনতা লাঠি সোঠা নিয়ে সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাবেক সেনা প্রধানের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং ড্রইংরুমের সোপায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রায় একই সময় তারা পাশ্ববর্তী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেনের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। তবে হামলা-ভাঙচুরকালে উভয় বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ না থাকায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আর বাড়িতে পাহারাদার যিনি ছিলেন, তিনি ভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, সাবেক সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদের বাড়িতে তার ছোট ভাই জাবেদ উ আহমেদের বাড়িতে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিলনা। হামলাকারীরা ওই সময় নিচ তলার সোফার আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।


"লালমনিরহাটে ভারতের ৬২ কিলোমিটার দখল" শিরোনামে' র প্রেক্ষিতে বিজিবির বক্তব্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অতি সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “লালমনিরহাটে ভারতের ৬২ কিলোমিটার দখল?” শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া ও রাষ্ট্রবিরোধী গুজব প্রচার করছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উক্ত বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিজিবি দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছে যে, সার্বভৌম বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাগত উৎকর্ষতায় উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ যেকোনো তথ্য/গুজব যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে।


খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবি ৫৪ বছরের

ভোগান্তির শেষ নেই এলাকাবাসীর
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

ঢাকার কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ঘাট। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত অবধি হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন নদী পারাপারের জন্য। বুড়িগঙ্গার মতো বিশাল নদীতে আশপাশের ১০/১৫ কিলোমিটার এলাকায় নেই কোনো ব্রিজ, ভরসা কেবল নৌকা। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মাঝেমধ্যেই বালুবাহী বালহেটের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। অথচ দীর্ঘ ৫৪ বছরেও এখানে স্থায়ী ব্রিজ হয়নি।

দুই পাড়ের অনেকে কম বেতনে চাকরি করতে। স্কুল-কলেজে পড়তে যায় এলাকার ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু গরিব মানুষের অর্ধেক টাকাই খরচ হয়ে যায় নদী পারাপারেই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই ইজারাদারদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ইজারাদাররা ভাড়া নিয়ে টানাহেঁচড়া করে, বাজে ব্যবহার করে, এমনকি অনেক সময় হয়রানির শিকারও হতে হয়।অথচ তারা নামমাত্র মুল্যে ঘাটের ইজারা নেয়।

খোলামোড়ার তরুণ আরিফ বলেন, ব্রিজ হবে শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু পাইনি। প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে যে কষ্ট, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। তাছাড়া ইজারাদারদের ব্যবহার খুবই খারাপ। ৫/৭ বছরের বাচ্চাদেরও ইজারার টাকা ছাড়া বের হতে দেয় না। ব্রিজটা খুবই জরুরি।

গৃহবধূ সাদিয়া অফরিন বলেন, এক পাশে বাবার অন্য পাশে শ্বশুরবাড়ি, যাতায়াতের সময় তিন বাচ্চাকে নিয়ে নৌকায় উঠতে বুক কাঁপে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তার ওপর ইজারাদারদের খামখেয়ালি আচরণে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া করতে গিয়ে কত ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় মানুষ মরেছে, মালামাল নষ্ট হয়েছে। ব্রিজ হলে শুধু যোগাযোগই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যও এগিয়ে যাবে। কিন্তু এত বছরেও হয়নি।

কেরানীগঞ্জের সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমান জানান, বাবুবাজার ব্রিজ, বসিলা ব্রিজ আমরাই করেছি, এটাও আমরাই করব। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবার আগে খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ব্রিজ হবে।

স্থানীয়রা মনে করেন, পোস্তগোলা, বাবুবাজার ও বসিলা ব্রিজ কেরানীগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এবং নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গের ১০/১২টি জেলার রাজধানীতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই নতুন একটি স্থায়ী ব্রিজ সময়ের দাবি।

খোলামোড়া ও কামরাঙ্গীরচরের দুই পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের একটাই প্রশ্ন-আসলেই কি হবে এই ব্রিজ? আর না হলে বাধাটা কোথায়? প্রতিশ্রুতি নয়, তারা এখন দেখতে চান বাস্তবায়ন।


হাজার মানুষের পদচারণায় নির্জন ইটাখোলা এখন কর্মমূখর জনপদ

*রূপগঞ্জে জাহাজ কারখানায় কাজ করছে লক্ষাধিক মানুষ *মালামালের দাম বাড়লেও বাড়েনি জাহাজের দাম
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বুক ছিঁড়ে বহে চলছে শীতলক্ষ্যা। দু’তীরেই গড়ে ওঠেছে অসখ্য জাহাজ তৈরির কারখানা। এখানে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষাধিক লোকের জীবিকা। এসব কারখানায় দিন রাত চলে কার্যক্রম। এরমধ্যে কেউ জ্বালা দিচ্ছে। কেউ গ্রান্ডিং করছে। কেউ ডিজাইং করছে। কেউ প্লেট কাটছে। আবার কেউ রং করছে। অনেকে আবার পাহাদারের কাজও করছে। নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণ, মেরামত, পুরাতন জাহাজ কাটা, নতুন পুরাতন জাহাজ বেচাকেনা এসব কার্যক্রমকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে বিশাল বাজার। পথ চলতেই টুক্ টাক্ শব্দে পথচারীদের কান ঝাপাপালা হবার উপক্রম হবে।

ডেমরা থেকে বালু নদীর পশ্চিম তীর ঘেষে উত্তরে কালো অজগরের মতো একেবেকে গেছে পীচঢালা সড়ক। সেই রাস্তা ধরে মাত্র ৩ কিলোমিটার এগুলোই জাহাজ তৈরীর অসংখ্য কারখানার দেখা মিলবে।

এক সময়ের ভবঘুরে, এখন কোটি কোটি টাকার মালিক সুজন মিয়া বলেন, “একটা সময় কাজের সন্ধানে ছুটতাম। এখন আমার আন্ডারেই কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে। নয়ামাটি এলাকায় বালুনদের তীরে প্রথম ছোট্ট করে শুরু করি। তারপর নব্বই দশকের দিকে আমিই প্রথম এ ইটা খোলায় থ্রি-স্টার নামে ডকইয়ার্ড চালু করি। এরপর আমার পাশাপাশি অনেকেই জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন হাজার হাজার জাহাজ তৈরি হচ্ছে এখানে। সময়ের ব্যবধানে সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জাহাজ তৈরীর শিল্প। হাজার মানুষের পদচারনায় নির্জন ইটাখোলা এখন এক কর্মমূখর জনপদ।”

এছাড়াও বালুরপাড়, ইদেরকান্দি, পূর্বগ্রাম, ভাওয়ালীয়াপাড়া, ডাক্তারখালী, বড়ালু, মাঝিনা, হড়িনা, ও ইছাখালীর চরে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক জাহাজ তৈরীর কারখানা। এছাড়া উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর ও দড়িকান্দির চরে রয়েছে আরো ৮/১০টি প্রতিষ্ঠান। মাষ্টার ডকইয়ার্ড, থ্রিস্টার ডকইয়ার্ড, ফাইভ ইস্টার ডকইয়ার্ড, খান ডকইয়ার্ড, ফাহিম ডকইয়ার্ড, শামস ডকইয়ার্ড, তালহা ডকইয়ার্ড, আমির ডকইয়ার্ড, মালেক ডকইয়ার্ড, রাজু ডকইয়ার্ড, লিটন ডকইয়ার্ড, ফটিক ডকইয়ার্ড, ভাই ভাই ডকইয়ার্ড, মনির ডকইয়ার্ড, মাস্টাং ইঞ্জিনিয়ারিং জাহাজ কারখানাগুলোর অন্যতম। আড়াই‘শ ফিট থেকে শুরু করে শত ফিটের কোষ্টার বা মালবাহি জাহাজ, সরোঙ্গা, ফেরী, জেটি, পল্টন, বালুবাহি ট্রলার, বলগেট আর ড্রেজার তৈরী হয় এসব কারখানায়।

জাহাজ তৈরীতে মূলত ব্যবহার হয় লোহার প্লেনশীট আর এঙ্গেল, মেশিন সরাসরি আমদানী করতে হয় চীন থেকে। অতিরিক্ত উপাদান বলতে টি-গার্ডার, বিট-গার্ডার, রং, ইট, বালি ,সিমেন্ট, গ্যাস সিলিন্ডার, অক্সিজেন, ওয়েল্ডিং রড আর লেদ মেশিনের কিছু খুচরো কাজ।

একটি বড় মাপের কোষ্টার জাহাজ তৈরীর জন্য প্রথমে রাজমিস্ত্রি বেইস লাইন তৈরী করে দেন। পরে ঠিকাদারের নির্দেশনাক্রমে ফিটাররা জাহাজের মলিন তৈরী করেন। ওয়েল্ডার ঝালাইয়ের মাধ্যেমে জাহাজটির খাচা তৈরী নির্মান করেন। একটি বডি দাড় করানোর পর চলে মেশিন স্থাপন আর রংয়ের কাজ।

বড় জাহাজে ৩/৪টি খুপড়ি বা হেস থাকে। যেখানে ৩/৪শ টন পর্যন্ত মাল বহন করা যায়। প্লেনশীট আসে চট্রগ্রাম থেকে। বিদেশী কাটা জাহাজের ৮ থেকে ১২ মিলির শীট ব্যবহার করা হয় জাহার তৈরীতে। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে শীট কিনতে হয়। আর লোহার অঙ্গেল ৭৫/৭৬ টাকায় পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারে। ৮/৯ লাখ টাকায় জাহাজের মেশিন আমদানী করা হয় চীন থেকে আর অন্যান্য মালামাল আছে ঢাকার বংশালে অথবা চট্রগ্রামের ভাটিয়ারীতে।

সময় ও অবস্থাবেধে উপাদানের মূল্যেরও হেরফের হয়। সর্বসাকুল্যে একটি বড় জাহাজ তৈরীতে ৯/১০ কোটি টাকা খরচা হয়। এরপর মালিকরা সুবিধে মতো লাভ করে তা বিক্রি করেন। একটি জাহাজ ২০/২৫জন কারিগর মিলে তৈরী করলে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ মাস।

ফিটার আমির, মোজ্জামেল, মোক্তার, জয়নাল ওয়েল্ডার পান্নু, আলমাছ আনোয়ারসহ আরো অনেকে জানান, হিসেব কষে খেয়ে দেয়ে বাকি টাকা তুলে রাখেন পরিবার পরিজনদের জন্য। তারা বলেন কাজের তুলনায় বেতন অনেক কম তারপরও করার কিছু নেই। এই কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ তারা শিখিনি।

আর জাহাজের মালিক মোমেন, কাইয়ুম, শরীফ হোসেন, কামাল, মাহফুজ, আলামিন, মোস্তফাসহ আরো অনেকে বলেন, রোজ হাজিরা, মালামাল কেনা , বিদ্যু বিল আর জমির ভাড়া এগুলোর ভেতর লুকিয়ে থাকে জাহাজের লাভ লোকসানের ব্যাপার। এ কারনে হিসেব কষে সকলকে টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া মালামালের দাম যে হারে বাড়ছে জাহাজের দাম কিন্তু আগের তুলনায় বাড়েনি।


দেশের প্রথম ছাদবাগান সহায়তা কেন্দ্র ডিএনসিসির

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে এবং গ্রিন সেভার্স ও ডেল্টা ডট লিমিটেডের সহযোগিতায় রাজধানীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম ‘আরবান ট্রি মিউজিয়াম’ ও ‘বৃক্ষ সেবা ও ছাদবাগান সহায়তা কেন্দ্র’।
গতকাল বুধবার গুলশান নগর ভবনে ডিএনসিসি, গ্রিন সেভার্স ও ডেল্টা ডট লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আরবান ট্রি মিউজিয়াম এবং বৃক্ষ সেবা ও ছাদবাগান সহায়তা কেন্দ্র একসঙ্গে নগরের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত করবে। এটি হবে শেখা, অংশগ্রহণ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসার একটি কেন্দ্র। গাছের যত্ন মানেই নিজের জীবনের যত্ন।
রাজউক উত্তরা বর্ধিত প্রকল্প (ফেজ-৩) এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই অনন্য মিউজিয়াম নগর সবুজায়ন, বৃক্ষ সংরক্ষণ ও নাগরিক সচেতনতার নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
আয়োজকদের মতে, ‘আরবান ট্রি মিউজিয়াম’-এ ঢাকার বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় বৃক্ষ প্রজাতির একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা তৈরি করা হবে। এটি শুধু প্রদর্শনীর স্থান নয়- এখানে গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদনের সুযোগও থাকবে, যাতে নগরবাসী প্রকৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারেন। মিউজিয়ামটি নগর বনায়ন ও পরিবেশ পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে, যা নাগরিকদের সবুজের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলবে।
এছাড়া গুলশানের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ স্মৃতি পার্কে ডিএনসিসি ও গ্রিন সেভার্স যৌথভাবে গড়ে তুলছে ‘বৃক্ষ সেবা ও ছাদবাগান সহায়তা কেন্দ্র’।
এই কেন্দ্রটিতে নাগরিকরা তাদের অসুস্থ বা আক্রান্ত গাছের পাতা, ফল কিংবা মাটির নমুনা এনে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারবেন। থাকবে ‘ট্রি হসপিটাল’, প্ল্যান্ট ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরি, যেখানে জৈব বিশ্লেষণ, মাটির উপযোগিতা পরীক্ষা, কীটপতঙ্গ শনাক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও উদ্ভিদের অণুখাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে।


লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশিদের অপহরণ করতেন রিফাত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লিবিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের খন্দকার রিফাত হোসেন (২৬) নামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের সঙ্গে মিলে ইতালি যেতে চাওয়া বাংলাদেশিদের অপহরণ করত রিফাত।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান। এর আগে গত সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে রিফাতকে গ্রেপ্তার করে নোয়াখালী পিবিআই। তারপর বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। শেষে বিজ্ঞ বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।

কারাগারে প্রেরণকৃত খন্দকার রিফাত হোসেন টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার কামুটিয়া গ্রামের খন্দকার রমজানের ছেলে।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের মার্চ মাসে অবৈধ পথে লিবিয়া যান রিফাত হোসেন। সেখানে একটি কফিশপে চাকরি করার সময় স্থানীয় মাফিয়া সদস্য আবদুল্লাহ (লিবিয়ান), মোহাম্মদ (লিবিয়ান) ও তানভীরের (পাকিস্তানি) সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী মো. লিটন হোসেন ওরফে সুজন (২৫) লিবিয়ার একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন।

লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল লিটনের। সেই উদ্দেশ্যে টাকা জমাচ্ছিল সে, তখন বিষয়টি জানতে পারে রিফাত। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি, লিটনকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একটি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে অপহরণ করে রিফাত ও তার সহযোগীরা।

তাকে রিফাতের বাসায় আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ সময় লিটনের কাছ থেকে প্রায় ৭২ হাজার দিনার (বাংলাদেশি ১৫ লাখ টাকা) হাতিয়ে নেয় রিফাত। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি’র নারিন্দা শাখার মাধ্যমে আনু আক্তারের নামে আরও ৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

মোট ২ মাস ২০ দিন লিবিয়াতেই লিটনকে আটকে রেখে আরও টাকা দাবি করতে থাকে অপহরণকারীরা। পরে লিটনের মামা বাংলাদেশে এসে রিফাতের শ্বশুর-শাশুড়িকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে চাপের মুখে ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল ভুক্তভোগীকে মুক্তি দেওয়া হয়।

নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটির তদন্তে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। অবশেষে মানবপাচার চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য রিফাতকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রিফাত লিবিয়ায় বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইতালি গমনেচ্ছুক বাংলাদেশিদের অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করত। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


ময়মনসিংহে পৃথক হত‍্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি  

ময়মনসিংহে পৃথক ২টি হত‍্যা মামলায় ৩ আসামির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজের পৃথক দুটি আদালত। একই সঙ্গে এক আসামির বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় পৃথক আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এসব রায় ঘোষণা করা হয়।

ফাঁসির আসামিরা হলেন- ঝালকাঠি জেলার নলসিটি ভাবানীপুর এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী নাসরিন নেলী এবং ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রুবেল মিয়া।

এছাড়া ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডসহ একই মামলার আসামি দীন ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার আদিয়াবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

এর মধ‍্যে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী নাসরিন নেলী ময়মনসিংহ নগরীর কাচিঝুলি এলাকায় পরকীয়ার জের ধরে পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম হত‍্যা মামলার আসামি। এ ঘটনায় ২০১৪ সালে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত‍্যা মামলা দায়ের হয়।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ নম্বর আদালতের বিচারক মো. হারুন অর রশিদ এই রায় ঘোষণা করেন।

অপরদিকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রুবেল মিয়া এবং একই মামলার আসামি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দীন ইসলাম ২০২২ সালে তারাকান্দা থানায় দায়ের হওয়া একটি হত‍্যা মামলার আসামি।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪ নম্বর আদালতের বিচারক জয়নাব বেগম এই রায় ঘোষণা করেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আজিজ টুটুল খবরের সত‍্যতা নিশ্চিত করেছেন।


বাগেরহাটে সুপারির বাম্পার ফলনেও মন খারাপ চাষিদের 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে গাছে গাছে ঝুলছে পাকা সুপারি। এ বছর জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই চাষিদের মুখে ফুটেছিল আশার হাসি। কিন্তু বাজারে গিয়ে সেই হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে চিন্তায়। ফলন ভালো হলেও দাম কমে গেছে কুড়ি প্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছর যেখানে এক কুড়ি সুপারি বিক্রি হতো ৮০০ টাকায়, এবার সেখানে মিলছে ৫০০ টাকার কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় মোকামে চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা পড়েছে। তবে চাষিদের অভিযোগ খরচ বাড়ছে, দাম কমছে, ফলে লাভের বদলে এখন শঙ্কায় কাটছে সুপারি মৌসুম।

জেলার অন্যতম বড় সুপারির হাট কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার। সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটতেই ক্রেতা বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মুখর হয়ে ওঠে হাটটি। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝুড়ি, ব্যাগ ও বস্তায় নিয়ে আসা সুপারি দর-কষাকষির মাধ্যমে কেনা বেচা চলে দুপুর পর্যন্ত। বাজারের দিনে এক থেকে দেড় কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। পাইকারদের হাত ঘুরে এই সুপারি চলে যায় চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে।

বাধাল বাজারের এই সুপারির ব্যবসা কেন্দ্র করে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা সুপারি বাছাই, গোনা, বস্তা ভরা ও ট্রাকে ওঠানোর কাজ করে দিনে এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকা আয় করেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাগেরহাটে ১০ হাজার একর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। যাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন সুপারি।

জেলা জুড়ে সুপারির ফলন বেশি হলেও দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন চাষিরা। প্রতি কুড়ি (২১০টি সুপারিকে এক কুড়ি বলা হয়) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। গেল মৌসুম এবং চলতি মৌসুমের প্রথম দিকের তুলনায় এই দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা কম।

বিক্রেতা মনিরুল বলেন, এবার ফলন এতো ভালো যে গাছ ভরে গেছে সুপারিতে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দাম আগের মতো নেই। গত বছর প্রতি কুড়ি ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, এখন ৫০০ টাকাও ঠিকমতো পাই না। সার, শ্রমিক আর পরিবহন খরচ বাড়ছে সব মিলিয়ে লাভের বদলে এখন চিন্তাই বাড়ছে। বাজারে যদি একটু দাম বাড়ত, তাহলে আমাদের কষ্ট সার্থক হতো।

বিক্রেতা রহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী-ছেলে সবাই মিলে সুপারি চাষ করি। এ বছর ফসল বেশ ভালো হয়েছে, কিন্তু দামের অভাবে মনটা ভরে না। সকাল সকাল বাজারে আসছি। কিন্তু পাইকাররা আগের মতো দর দেয় না। আমরা গরিব মানুষ, এই টাকাতেই সংসার চলে। সরকার যদি আমাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে দিত, তাহলে চাষিরা আরও উৎসাহ পেত।

চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই সময় বাগেরহাটের সুপারি কিনতে আসি। এবার ফলন সত্যিই অনেক বেশি, বাজারেও সরবরাহ প্রচুর। তবে দেশের বড় মোকামগুলোতে চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। সেই কারণে দামও একটু নিচে। আমরা ক্রেতারা কিছুটা সুবিধা পেলেও বুঝি, এতে চাষিদের লাভ কমে যাচ্ছে। বাজার যদি স্থিতিশীল থাকত, তাহলে সবাই উপকৃত হতো।

স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী ক্রেতা রুবেল মোল্লা বলেন, আমি বাধাল বাজার থেকেই সুপারি কিনে খুচরা বিক্রি করি। গত বছর যে দামে কুড়ি কিনতাম, এবার সেই দামে দুই কুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি ঠিকই হচ্ছে, কিন্তু ক্রেতারা দাম কমে যাওয়ায় এখন অনেক বেছে নিচ্ছে। বাজারে জায়গা সংকট, ভিড়ও প্রচুর তাই ঠিকমতো ক্রয়-বিক্রয় করতেও ঝামেলা হচ্ছে।

বাধাল বাজারের ইজারাদার খান শহিদুজ্জামান মিল্টন বলেন, চাষিদের নিরাপত্তা, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বাজারে স্বাধীনভাবে ক্রয়–বিক্রয় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শতবর্ষী এই বাজারে ক্রয়-বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য সুপারি চাষিদের কাছ থেকে খাজনা নেওয়া হয় না। তবে বাজারে জায়গার সংকট হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হয়। পাশে জমি অধিগ্রহণ করে বাজারটি বড় করলে ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়ত বলে জানালেন ইজারাদার।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, বাগেরহাটের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী হলেও কৃষকরা সঠিকভাবে গাছের পরিচর্যা করেন না। নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করলে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


তাহিরপুরে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ উদ্বোধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় রবি মৌসুমী সরিষা গম চেনাবাদাম সূর্যমুখী উন্নত জাতের বীজ বিতরণ বিভিন্ন জাতের সার চাষের লক্ষ্যে উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের মধ্যে বিনামুল্যে রাসায়নিক সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ৬ ই নভেম্বর দুপুরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলা কৃষি অফিসে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ উদ্বোধন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি শাহরুখ হাসান শান্তনু।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম ,উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, তাহিরপুর প্রেসক্লাব দপ্তর সম্পাদক রোকন উদ্দিন প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অর্থ বছরের রবি/২০২৫-২০২৬মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চাষের সরিষা গম ভুট্টা সূর্যমুখী অনন্য ভূমিকা আছে বিভিন্ন প্রকার উন্নত বীজ ৩ শত১ কেজি করে জন কৃষকদের মাঝে বিতরন ও ৩ শত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার দেয়া হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে জনপ্রতি এমওপি ১০ কেজি ও ডিএপি ১০কেজি করে সার বিতরন করা হয়েছে।


নওগাঁয় সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকার জেরে ছুরিকাঘাতে নিহত ১

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি  

নওগাঁয় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকার জেরে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে গোলাম হোসেন (৫২) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) রাতে সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের সুনলিয়া মালঞ্চি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। নিহত গোলাম হোসেন মালঞ্চি গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের চাচাতো ভাই নয়ন ইসলাম জানান, মালঞ্চি গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ ও আজাদ নামে দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এবিষয়ে কিছুদিন আগে দুই পক্ষ একজন অ্যাডভোকেটের কাছে সালিশ বৈঠকে বসেন। সেখানে নিহত গোলাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন এবং আজাদের পক্ষে কথা বলেন। এই জেরে বুধবার রাতে গোলাম হোসেনের সাথে কথা-কাটাকাটি হয় হারুনুর রশিদের। একপর্যায়ে হারুনের ছেলে অন্তর এসে গোলাম হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নওগাঁর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এবিষয়ে নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সংবাদ পাওয়ার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ওসি আরও বলেন, এবিষয়ে একটি মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে। মামলা দায়ের হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের নিহত ৫

দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস, বাসেরও সামনের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কথা ছিল পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে সমুদ্র দেখতে যাবেন। তাই তো মনের আনন্দে সকলে রওয়ানাও দিয়েছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সবাইকে সমুদ্রে না নিয়ে পরপারে নিয়ে গেলেন। এমনই এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটলো কক্সবাজারের চকোরিয়ায়।

সেখানে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের পাঁচজন আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে পুলিশ নিশ্চিত করে।

বুধবার সকাল নয়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন।

পুলিশ জানায়, নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য এবং তারা সবাই মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই থেমে গেল সেই যাত্রা চিরতরে।

নিহতরা হলেন, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল হকের স্ত্রী রুমানা আকতার (৬০), তার মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সাদিয়া হক (২৪), আমিনুল হকের স্ত্রী লিজা মজুমদার (২৫), তার মা রাশেদা শিল্পী (৫০), বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ফারজানা মজুমদার (২৪)। আহত ব্যক্তিরা হলেন এনামুল হক, তার ছেলে মাইক্রোবাসের চালক আমিনুল হক ও তার শিশুসন্তান সাদমান (৬)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসটি হাঁসের দিঘী ঢালায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির মারসা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে–মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান একই পরিবারের পাঁচজন।

নিহতদের স্বজন জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) বলেন, বুধবার ভোরে আমিনুল হক তার স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা–বোন, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। আমিনুল হক নিজেই ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় পৌঁছালে চট্টগ্রামমুখী মারসা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আমিনুল হকের মা, বোন, স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালিকা মারা যান। আমিনুল, তার বাবা ও তার শিশু সন্তান গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘তাদের কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা ফেরার পথে চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকায় আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু পথে সব শেষ হয়ে গেছে। দেখা হলো না সমুদ্র, আসা হলো না আমাদের বাড়িতে।’

মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন নিহত রুমানা আকতারের ছেলে মুনীরুল হক। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’


নেত্রকোনায় নৃগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বিষয়ক মতবিনিময় সভা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এ বি চৌধুরী নাদিম, নেত্রকোনা

নেত্রকোণায় সেরা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে নেত্রকোনার পাবলিক হলে ‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোণার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল আজম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবস্থিত স্কুলগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ঐ জনগোষ্ঠী থেকে একজন করে আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া গেলে তাঁদের ভাষা যেমন সংরক্ষণ হবে তেমনি মাতৃভাষায় তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাও নিশ্চিত হবে। এছাড়াও দেশের যেসব এলাকায় কালচারাল একাডেমি হয়েছে, সেগুলো শুধু কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে কাজ করতে পারে, গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। সভায় ‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মুল আলোচনা পত্র উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম মাজহারুল ইসলাম। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক এন্ড অ্যাডাল্ট এডুকেশন এর ক্যাপাসিটি সাপোর্ট অ্যাডভাইজার কেএম এনামুল হক।সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা বিনতে রফিক, নেত্রকোণা রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, লেখক ও গবেষক আলী আহমেদ খান আইয়ুব, সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার পাল, গণসাক্ষরতা অভিযান ঢাকার প্রোগ্রাম অফিসার সিজুল ইসলাম, নেত্রকোণা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা, জাগরণ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কেএমএ জ্যামী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেরা’র নির্বাহী পরিচালক এসএম মজিবুর রহমান। সেরা’র পরিচালক (প্রোগ্রাম) আলী উসমানের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা অর্জনে চ্যালেঞ্জ, সীমাবদ্ধতা এবং করণীয় নিয়ে তাদের মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরেন।


সারিয়াকান্দির প্রধান সড়ক মেরামতের প্রস্তাব বাতিলে এলাকাবাসী হতাশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়া সারিয়াকান্দির অন্যতম প্রধান সড়ক বগুড়া-কড়িতলা সড়কের বেহাল দশা। সড়কটিতে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুই উপজেলার লাখো মানুষের ভোগান্তি। কর্তৃপক্ষ বলছে সড়কটি মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কিন্তু পাশ হওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ। এদিকে আবারো নতুন করে মেরামতের প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া-কড়িতলা সড়কের জোরগাছা সেতুর পশ্চিম থেকে কড়িতলা বাজার পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটিতে বিশালাকার হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কটির কিনারা ভেঙে বেশ বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাকসহ সকল ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে গাবতলি এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ বগুড়া জেলা সদরে যাতায়াত করেন। সড়কটির হাজারো গর্ত ডিঙিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে এলাকাবাসীর ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। বৃষ্টি হলে এসব গর্তগুলোতে পানি দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা অনেক সময় কাঁদামাখা হয়ে চলাচল করেন। বিশেষ করে জোড়গাছা, সোনাপুর, গুলারতাইড়, কাশাহার উল্লেখযোগ্য।

জোড়গাছা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এম. তাজুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করার কোনও জোঁ নাই। দীর্ঘদিন ধরেই সড়কের বেহাল দশা হলেও সড়কটির মেরামতের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। সড়কটির বেহাল দশার কারণে এলাকাবাসীর ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার প্রয়োজন।

উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সিপন বলেন, সড়কটির সংস্কারের জন্য সরকারের এমন কোনও দপ্তর নেই, যেখানে তিনি যাননি। তারপরও সড়কটির সংস্কার কেন হচ্ছে না। সড়কটির সংস্কার এলাকাবাসীর প্রধান দাবি। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হোক।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী তুহিন সরকার বলেন, সড়কটি সংস্কার করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবনাটি পাশ হয়নি। সারিয়াকান্দি থেকে ৯টি সড়ক সংস্কারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৪ টি রাস্তা সংস্কারের জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে এ সড়কটি নেই। সড়কটির সংস্কারের জন্য পুনরায় প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।


কমলগঞ্জে রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু মহারাসলীলা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে গত বুধবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা শুরু হয়েছে। দুপুরে তুমুল আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখী রাধার লীলাকে ঘিরে এ উৎসব শুরু হয়। শিশুদের রাখাল নৃত্য পরিবেশ করতে দেখা যায়। ভক্তরা নৃত্যরত শিল্পীদের বাতাসা ও টাকা উপহার দেন। উৎসব উপলক্ষে নানা ঐতিহ্যবাহী সাজে মেতেছে মণিপুরীপাড়া। মূল রাসলীলা রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে পরের দিন ভোর পর্যন্ত চলবে।

বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকাজে রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেন রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা। পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে তরুণীরা রাসলীলায় অংশ নিয়ে থাকেন।

রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে সূত্রধারী কর্তৃক রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আবাহন, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা ও কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা, আরতির মতো বিষয়গুলো।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাত ১১টায় জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।

এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতেই সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৪০তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়।

মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম মহারাসলীলা উপলক্ষে বিকাল সাড়ে তিনটায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্বালনে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।’


banner close