বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
২২ কার্তিক ১৪৩২

বিভিন্ন জেলায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ছাত্র-জনতার বুলডোজার অভিযান: ভাঙা হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ০৫:৫৩

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সাবেক বিভিন্ন এমপি ও রাজনীতিবীদদের বাড়ি ঘরে ভাঙ্চুর চালিয়েছে বিক্ষব্ধ জনতা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এসব সম্পত্তিতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এরমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাসভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে রাজশাহীর উপশহর এলাকার তিনতলা বাড়িটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়।
ওই সময় উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতাকে সাবেক মেয়র লিটনের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। ছাড়া এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়ি ভাঙার দৃশ্য অনেকেই ঘটনাস্থল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করেন।
তবে এ বিষয়ে দ্বায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলেও এ ব্যাপারে কেউ কথা ভলতে চাননি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। ওই দিনই এই বাড়িতে হামলা করে সবকিছুই লুট হয়। এরপর বাড়িটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় খালি পড়ে ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে আবারও হামলা করে সীমানা প্রাচিরসহ ভবনটির সামনের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়।
এর আগে রাজশাহী উপশহরের নিউমার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক কার্যালয় ও শামীম নামের আওয়ামী লীগের এক নেতার চেম্বার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতার চেস্বার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ায় এক্সাভেটর ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া রাজশাহীর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িতে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বাঘার আড়ানী পৌরসভার চকসিঙ্গা এলাকার এই বাড়িটিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন দেয় ক্ষুব্দ জনতা।
এদিকে, ঝিনাইদহের শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরাল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের শমশেরনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ আমলে কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন শমশেরনগর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ শমসের দেশের সব চেয়ে বড় এই ১২৩ ফুট উঁচু শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরালটি স্থাপন করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা শমশেরনগরের শেখ মুজিব টাওয়ারের ম্যুরাল ভাঙচুর করার পর ম্যুরালের ভাঙ্গা অংশগুলো বারবাজার শহরে এনে সড়কের ওপরে রেখে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির সমন্বয় হোসাইন আহমেদ বলেন, বাংলার মাটিতে শেখ হাসিনা পরিবারের কোনো ম্যুরাল থাকবে না, থাকবে না ফ্যাসিবাদের কোনো চিহ্নও। এজন্য শেখ মুজিবের এই ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পিরোজপুরের নাজিরপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে ও আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এসময় আগুন দেওয়া হয় সাবেক মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের বাসভবনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার সময় ও পরে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা উপজেলা সদরে একত্রিত হয়ে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ণি করে। পরে মিছিলকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ খান, মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূরে আলম শাহীন, নাজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কান্তি বিশ্বাস ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগও করা হয়। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার মঠবাড়িয়ার পৌর এলাকায় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের (দক্ষিণ) সাবেক সভাপতি ও মঠবাড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বায়জীদ আহমেদ খানের বাইপাস সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ।
এসব বিষয়ে নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ আল ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে পিরোজপুরের নেছারাবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া বীর নিবাসে স্থাপন করা শেখ মুজিবুরের রহমানের নামে খোদাই করা ফলক ভাঙ্গে ফেরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জিরবাড়ী গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী পরিচয়ে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা এই ফলক ভেঙ্গে ফেলে।
নেছারাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতান নামে এক ব্যক্তি বলেন, যেখানেই আওয়ামী লীগের ও শেখ মুজিবের চিহ্ন আছে তা নিশ্চিহ্ন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে বলদিয়া ইউনিয়নের বীর নিবাসে বসানো শেখ মুজিবুরের রহমানের নামে খোদাই করা পাথর টাইলস ভাঙা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বীর নিবাসে লাগানো শেখ মুজিবের সব চিহ্ন ভাঙা হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত বুলডোজার অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামে বুলডোজার আনা সম্ভব নয় তাই তারা হাতুড়ি শাবল দিয়ে অভিযান শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে বীরনিবাসের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এক্সকেভেটর দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভা ভবন, জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিনটি ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বৃহস্পতিবার রাতে জেলা শহরের বাংলাস্কুল মোড়ের জেলা আওয়ামী লীগের দোতলা কার্যালয়ে এক্সকাভেটর দিয়ে এই ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ভবনটির বেশিভাগ অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকশ বিক্ষুব্ধ জনতা এক্সকাভেটর দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। এ সময় তাদেরকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টা থেকে ভোলা জেলা শহরের নতুন বাজার-সংলগ্ন প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হয় ছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি এক্সকেভেটর আনেন তারা। প্রথমে এক্সকেভেটর দিয়ে ভোলা পৌরসভা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর জেলা পরিষদের সামনের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এসব ম্যুরালের কিছু অংশ ভাংচুর করা হলেও বৃহস্পতিবার পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ছবি: দৈনিক বাংলা


ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার ধানমন্ডির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এরই ধারাবাহিকতায় ভোলাতেও শক মুজিবের ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়েছে।
তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের আঁতুড় ঘর ছিল ভোলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এ কার্যালয় থেকে হামলার নির্দেশ দেওয়া হতো। এ কারণে মুজিববাদ এবং ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার রাতে ভোলা শহরের সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মাসুদ চৌধুরীর বাড়িসহ ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ফেনীর পৌরসভার বারাহীপুরে ও শহরের স্টেশন রোড এলাকায় এসব হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে হামলার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে এমপি নাসিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে ফেনী রেলস্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও ভাঙচুর চালায়। এছাড়া এমপি মাসুদ চৌধুরীর সোনাগাজী গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। তবে বাড়ির সব জিনিসপত্র পুড়ে গেছে।
এসব ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন শাকিল বলেন, বুলডোজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রথম ধানমন্ডি-৩২ নম্বর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছে। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিপ্লবী ছাত্র সমাজ ও আহত ভাইরা মিলে এই কর্মসূচি পালন করি।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
এর আগে, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাসিমের ফেনীর বাসভবন ও স্টেশন রোডের জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।
এছাড়া নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া থানার ওসি আজমল হুদা। তিনি জানান, বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ঘাটে থাকা ছয়টি স্পিডবোট ও চারটি ট্রলারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছে। আহত একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকি দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রাত ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিসহ বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা হাতিয়া উপজেলা সদর ওছখালীতে জড়ো হয়। পরে মিছিল নিয়ে তারা মোহাম্মদ আলীর বাড়ির দিকে গেলে বাড়ির সামনে মোহাম্মদ আলীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার মিছিলে মোহাম্মদ আলীর বাড়ি থেকে তার লোকজন গুলিবর্ষণ করেছে।
অপরদিকে মোহাম্মদ আলীর অনুসারীরা অভিযোগ করেন, ওছখালীর দক্ষিণ ও উত্তর দিকে মোহাম্মদ আলীর দুটি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে একদল লোক। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে রাত ২টার দিকে বাড়ি দু’টিতে হামলা করে ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করে তারা। পরে আফাজিয়া ঘাটে নোঙগর করা মোহাম্মদ আলীর ৪টি স্পিডবোট ও ৬টি ট্রলারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে গুলির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আজমল হুদা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১০ আগস্ট রাত ৩টার দিকে হাতিয়ার ওছখালীর ওই বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের বড় ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিকে হেফাজতে নেয় নৌবাহিনী। এরপর থেকে তারা তিনজন কারাগারে আছেন।
এদিকে রাতে হাতিয়ায় মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ক্ষোভ দেখান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ। তার গ্রামের বাড়ি হাতিয়ায়। তিনি সেখান থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাসুদ তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক প্রোফইলে একটি পোস্টে লেখন, আমার জন্মভূমি হাতিয়ায় সাবেক এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন আছে, কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রও আছে। আমার ভাইদের উপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, আমি যাচ্ছি। হয় জন্মভূমি, নয় মৃত্যু।”
পরে রাতেই মিছিল নিয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে যান তিনি। রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের আইজিপি ও আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বিষটি জানিয়েছি। হামলা করার মতো ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে শুক্রবার মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই নিশ্চয়তা আমি আপনাদের দিতে চাই। এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে অভিযান চালায় পুলিশ।
এদিকে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিম ও তার বড় ভাই সাবেক বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের দিনাজপুরের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। এছাড়া দিনাজপুর আওয়ামী লীগের জেলা ও সদর উপজেলা কার্যালয়েও ভাঙচুর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বুলডোজার কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কয়েকশ ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন এসব ভাঙচুর চালায়।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বুলডোজার নিয়ে প্রথমে দিনাজপুর সদর হাসপাতাল এলাকার ইকবাল ও তার ভাই ইনায়েতের নতুন বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও ৫ আগস্ট ওই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এরপর পুনঃনির্মাণ করা হয়।
ওই রাতেই দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টির আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর উপজেলা কার্যালয়ে বুলডোজার দিয়ে সামনের অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এছাড়া একই রাতে দিনাজপুর জেলার খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসও বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
এছাড়া, সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকায় সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের প্রয়াত এমপি আওয়ামী লীগ নেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের দুটি বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে এ বিষয়টি প্রচার করে।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মিছিল নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকায় বাড়ি দু’টিতে এ ভোংচর চালানো হচ্ছে। এ সময় আওয়ামী লীগের আস্তানা, সয়দাবাদে হবে না—মর্মে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। ভাঙচুর শেষে তারা মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বপনের এক স্বজন জানান, পুনর্বাসন এলাকায় তিনটি প্লটে প্রয়াত এমপি স্বপনের তিনটি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি একতলা ও একটি দোতলা মিলে দুটি পাকা বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বপন। মৃত্যুর আগে এসব বাড়ি তিনি মেয়েদের নামে লিখে দেন। বর্তমানে বাড়িগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ী-ঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রতিপক্ষের গুলিতে শান্তা ইসলাম (২৪) নামে এক গৃহবধু নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় আরো বেশ কয়েকজন। নিহত শান্তা ইসলাম একই এলাকার শাকিল খানের স্ত্রী। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের স্বজনরা জানান, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ চলার সময় প্রতিপক্ষ সোহেল ও তার লোকজন শস্ত্র নিয়ে ইউপি ভবন ও ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেলের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসময় ৮/১০ টি বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এতে বাধা দিলে ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা ইসলামকে গুলি করে তারা। শান্তা ইসলামকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন রাজিব তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় আরো ৫ থেকে ৭জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে জানান স্বজনরা।
রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ ইসমাইল হোসেন রাজিব বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে শান্তাকে নিয়ে আাসেন তার স্বজনরা। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেল জানান, সোহেল এলাকায় মাদক ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এরই জেরে সে জুমার নামাজ চলাকালে ফাকা বাড়ি পেয়ে তারা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসময় তাদের গুলিতে আমার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা ইসলাম মারা যায়।
এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ নিহতের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে, সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এবং উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এবং রাতে এসব ম্যুরাল হাতুড়ি দিয়ে ভাঙেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনের পর এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুলাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এবং রাতে উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।
এ সময় উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তার আহমেদ, কাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তানজীল হাসান খাঁন, পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক আতিকুল ইসলাম আতিক, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আতিকুর রহমান তারেক, সেক্রেটারি আবু বকর শিপন, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সালমান হোসাইন, কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শামীম আহমদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাইদুল ইসলাম, রায়হান আহমদ, ইব্রাহিম আলী, শেখ রানা, আরিয়ান রিয়াদ, সাকেল আহমদ, আরিফুল ইসলাম, ফয়েজ আহমদ, নুর উদ্দিন, শামীম আহমদ, শাহরিয়ার জামিল, মাহিনুর রহমান, শাহ সিয়াম, ফাহাদ ও জিসান, পৌর জাসাসের আহবায়ক ফারাজ ফারদিন, যুগ্ম আহবায়ক তানফিজুর রহমান সাইফসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্র-জনতার অভিযানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
ও বিজয় একাত্তরচত্বর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে এস্কেভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযান শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা প্রথমে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স মোড়ের বিজয়-৭১ চত্বরটি ভাংচুর শুরু করে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের মাঝে সড়ক দ্বীপ আকারে একটি ফোঁয়াড়া নির্মাণ করে পৌরসভা। শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য লাগানো হয় ফোঁয়াড়াটির চার পাশে। মুক্তিযোদ্ধ ভিত্তিক ভাস্কর্যের মাঝে দুটি মানুষ আকৃতি হাত তোলে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা বহন করছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত চত্বরটির নাম দেওয়া হয়েছে বিজয় ৭১ চত্বর। এ কারণে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হওয়ায় ও যানজটের কারণে এটি অপসারণের দাবি ছিলো দীর্ঘ দিনে। বিজয়-৭১ চত্বরটি ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ শাহরিয়ার বিন মতিনের নামে নাম করণ করা হয়েছিল। এই চত্বরটি ভাঙার পর পাশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ চত্বরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সংগঠক হাসানুর রহমান জানান, মোহাইমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা হাসিবুর রহমান স্বপনের ২টি বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পুর্ণবাসন এলাকার বাড়ি দু’টিতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ণবাসন এলাকায় হাসিবুর রহমান স্বপন দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ি দুটি ভাড়া দেওয়া ছিলো। হাসিবুর রহমান স্বপন ৮০-র দশকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। পরে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে বিএনপি তাকেবিহিস্কার করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঐক্যমতের সরকার গঠনের ডাক দিলে তিনি তাতে যোগ দিয়ে শিল্প উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২১ সালে করোনা ভাইসাসে আক্রান্ত হয়ে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সয়দাবাদের পুর্ণবাসন এলাকায় দুটি বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর শহরের পাঁচ মাথা চত্বর ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তবে সেখানে জাতীয় চার নেতা ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল অক্ষত রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ মুজিবের দুটি ম্যুরালের বেশ কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই মূল অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় পাঁচবিবি পৌর শহরের পাঁচ মাথা এলাকায় একটি এক্সকেভেটর আনেন। পাঁচ মাথা চত্বরের পশ্চিম পাশে একটি শাপলা ফুল, জাতীয় চার নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল রয়েছে। এসব ম্যুরালের মধ্যে গত ৫ আগস্টের পর শেখ মুজিবের ম্যুরালটির কিছু অংশ ভেঙে বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। এক্সকেভেটর নিয়ে শুধু শেখ মুজিবের ম্যুরালের মূল অবকাঠামো ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়। তবে জাতীয় চার নেতা ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরাল অক্ষত রয়েছে।
এ সময় ছাত্র-জনতাকে ‘মুজিব বাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘হই হই রই রই, শেখ হাসিনা গেল কই’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

পাঁচ মাথা চত্বরের শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া পর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এক্সকেভেটর নিয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরালটিও ভেঙে ফেলা হয়।

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় তারা চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলের বাড়িতেও ভাঙচুর-লুটপাট চালায়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হামলার এ ঘটনা গুলো ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুইটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছ।
স্থানীয়রা জানায়, রাত আটটার দিকে শতাধিক ছাত্র-জনতা লাঠি সোঠা নিয়ে সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাবেক সেনা প্রধানের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং ড্রইংরুমের সোপায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রায় একই সময় তারা পাশ্ববর্তী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেনের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। তবে হামলা-ভাঙচুরকালে উভয় বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ না থাকায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আর বাড়িতে পাহারাদার যিনি ছিলেন, তিনি ভয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, সাবেক সেনা প্রধান মঈন উ আহমেদের বাড়িতে তার ছোট ভাই জাবেদ উ আহমেদের বাড়িতে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিলনা। হামলাকারীরা ওই সময় নিচ তলার সোফার আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।


কেরানীগঞ্জে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার, মোটরসাইকেল উদ্ধার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী রাজু হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভোর ৬ টার সময় নিজ বাড়ি হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মোটরসাইকেল, আইফোন, নগদ টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর ভোরে রাজু হাওলাদার তার সহযোগীদের নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কেরানীগঞ্জ চুনকুটিয়া এলাকায় এক পথচারীকে লক্ষ্য করে রামদা দিয়ে আঘাত করে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আহত অবস্থায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে।

ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান মমিনের নির্দেশনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সৈয়দ আক্তার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন এসআই জাহাঙ্গীর আলম ও এএসআই একরামুল। অভিযানে সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার খেজুরবাগ এলাকায় অবস্থানরত রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার রাজু হাওলাদার (২৬) মঠবাড়িয়া উপজেলার পিরোজপুর জেলার চর খেয়ারবাগ গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে সে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় বসবাস করছিল।

পুলিশ জানায়, রাজু একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে। নতুন ঘটনায়ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ আক্তার হোসেন জানান, গ্রেপ্তার রাজু দীর্ঘদিন ধরে, চুনকুটিয়া, খেজুরবাগ, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও এর আসপাশের এলাকায় ছিনতাই করে আসছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার সহযোগীদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।


মধুপুরে বিনামূল্যে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প

মধুপুরে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্পে সেবা নিচ্ছে রোগীরা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের মধুপুরে গরীব ও দুস্থদের বিনামূল্যে সেনাবাহিনীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এলাকার হত দরিদ্র্য দুস্থ নারী পুরুষ চক্ষু রোগীরা বিনামূল্যে তাদের চক্ষু চিকিৎসা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ বিএডিসি কৃষি বীজ উৎপাদন খামারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের উদ্যোগে স্থানীয় রোগীদের বিনামূল্যে এ দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসাসেবা মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের অধিনস্থ ৯৮ সংমিশ্রিত ব্রিগেডের তত্ত্ববাবধানে ৩৭ এডি রেজিমেন্ট এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মধুপুর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনে মোট দেড় শতাধিক গরীব ও দুস্থ জনসাধারণকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগীকে তাদের প্রয়োজন মতো চশমাও প্রদান করা হয়।

সেবা গ্রহণ করতে আসা রোগী রওশন আরা বেগম (৫০) জানান, আমি এর আগে ময়মনসিংহে আমার একটি চোখ দেখিয়েছিলাম, আজ এখানে আর্মির ডাক্তার দেখালাম। আমার মনে হয় তাদের চেয়ে এখানকার চিকিৎসা ভাল লাগছে।

কাকরাইদ গ্রামের শান্তি বেগম (৫০) জানান, তিনি সকালে এসেছে চিকিৎসাসেবা নিতে। সে দূরে দেখে কিন্তু কাছে কম দেখে। চুলকায় চোখে পানি পড়ে এ জন্য তিনি এসেছে।

আলী আজগর ৪২ জানান, তার বাড়ি কাকরাইদ গ্রামে। চোখে কম দেখেন। চোখে পানি আসে। ডাক্তার দেখাতে পেরে সে খুব খুশি।

এ ধরনের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে ১৯ পদাতিক ডিভিশন এ অঞ্চলের গরিব ও দুস্থ জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোসহ জনগণের সার্বিক কল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এরূপ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়।

দিনব্যাপী এ ক্যাম্পে মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক চোখের রোগী সেবা নেন।


নদীর অবৈধ দখল ও নাব্যতা সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ

কেশবপুরে পরিদর্শনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুরের আপারভদ্রা নদীর অবৈধ দখল-দূষণ ও নাব্যতা সংকটে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নদী পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী যশোর সফরে, কেশবপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর দখল, দূষণ ও খনন কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। আরও উপস্থিত ছিলেন কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজ সহ অনেক কর্মকর্তারা। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত আপারভদ্রা, মুক্তেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল, বর্জ্য প্রবাহ ও নাব্যতা হ্রাসের কারণে পানি নিষ্কাশন ও সেচের সমস্যা ক্রমশ তীব্র হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মকসুমুল হাকিম চৌধুরী জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন। কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে আপারভদ্রা নদীর অবৈধ দখল, দূষণ ও নাব্যতার বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে। একই সাথে হরিহর, হরিতেলিগাতি, টেকা ও শ্রী নদীসহ ৬টি নদীর মোট ৮১.৫ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই খননকার্যের উদ্দেশ্য হলো ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা ও নদীর নাব্যতা সংকট ঘুরিয়ে দাঁড়ানোর। মুক্তেশ্বরী নদীতে অনেক অংশ দখল হয়ে ধীরে ধীরে নাব্যতা হারাচ্ছে। এক সংবাদ অন্বেষণে দেখা গেছে এক অংশকে বিক্রির জন্য চিহ্নিত করেছে, নদীর মোহনাংশ ধীরে ধীরে মাটিতে পরিণত হচ্ছে। নদীর ভরাট, অবৈধ মাছচাষ, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় জলপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভবদহ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ জলাবদ্ধতায় ভুগছেন। ২৪ অক্টোবর কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় মোট ৬টি নদীর জন্য ১৪০ কোটি টাকার খনন কাজের উদ্ধোধন করা হয়। খননের পরিমাণ ৮১.৫ কিলোমিটার। সেনাবাহিনী- পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে এই কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন আশা করছে, এই কাজের মাধ্যমে ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকড় থেকে মুক্তি মিলবে। যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘খুবই দ্রুতগতিতে কাজ এগোয়নি গেল কয়েক বছর; এখন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হবে।’
পরিবেশ-উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান মোবাইল ভার্চুয়াল মাধ্যমে বলেন, ‘নদীর নাব্যতা, দখল ও দূষণ একসাথে বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
নদী পুনরুদ্ধারে শুধু খনন যথেষ্ট নয় নিচের বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন: নদীর সীমানা পুনরায় নির্ধারণ ও আইনানুগভাবে চিহ্নিত করা। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। নদীতে বর্জ্য প্রবাহ রোধ ও নিকাশীর সমন্বিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। স্থানীয় জনজীবন ও কৃষিতে নদীর ভূমিকা পুনরুদ্ধার করা-যেমন সেচ, মৎস্য ও পরিবেশীয় ভারসাম্য। কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় ও মনিটরিং সিস্টেম চালু রাখতে হবে।


তিতাস গ্যাস কর্তৃক জরুরী বিজ্ঞপ্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিতাস গ্যাস -এর পাইপলাইনের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী ০৭/১১/২০২৫ তারিখ (শুক্রবার) সকাল ০৯ টা হতে ০৮/১১/২০২৫ তারিখ (শনিবার) সকাল ০৭ টা পর্যন্ত মোট ২২ (বাইশ) ঘণ্টা কড্ডা, কোনাবাড়ী, জরুন, সুরাবাড়ী, কাশিমপুর, মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, নবীনগর, সাভার ক্যান্টনমেন্ট, আশুলিয়া, জিরাবো ও তৎসংলগ্ন এলাকার সকল শ্রেণীর গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। সম্মানিত গ্রাহকবৃন্দের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত ---- তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।


তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ কালীগঞ্জ আন্তঃওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি

‘এসো দেশ বদলাই, এসো পৃথিবী বদলাই’ এই অনুপ্রেরণামূলক স্লোগানকে সামনে রেখে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হলো আন্তঃওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. টি. এম কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই খেলাটি ছিল তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করার এক প্রাণবন্ত আয়োজন। ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হয় জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন ১/২ নং ওয়ার্ড বনাম ৬ নং ওয়ার্ড। উত্তেজনাপূর্ণ এই খেলায় ১/২ নং ওয়ার্ড দল ৬ নং ওয়ার্ডকে ১-০ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে। মাঠে ছিল দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার অভিভাবক, শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী, সর্বজনপ্রিয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ. টি. এম কামরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার পি.আই.ও আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের প্রশাসক আবুল হোসাইন আকাশ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা, যাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

ফাইনাল ম্যাচ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে মূল্যবান পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেন। বক্তারা বলেন, ‘খেলাধুলা তরুণদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ, আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।’

অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে জাঙ্গালীয়া গ্রামের যুব সমাজসহ সকল সহযোগীদের প্রতি জাঙ্গালীয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়।

তারুণ্যের উৎসব ২০২৫- খেলার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ, বদলে যাক পৃথিবী!


পাংশায় পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় ২ পুলিশ সদস্য আহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর পাংশায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ এক স্থানীয় ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলার পাট্টা বিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে আলম শেখ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন পুলিশ।

পুলিশ জানা যায়, পাংশা মডেল থানার এসআই (নি.) মো. নজরুল ইসলাম, এসআই (নি.) ওবায়দুর রহমান, এএসআই (নি.) পরিতোষ মজুমদার, কনস্টেবল হুমায়ুন কবির ও আতোয়ার রহমানসহ একটি দল চাঁদাবাজি ও হামলা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে যান।

এ সময় পাট্টা বিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামি সবুজ (৩০), সজিব (২৫), সেন্টু (২৬)সহ আরও ১০–১২ জন পুলিশকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি, ককটেল জাতীয় বিস্ফোরক ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে স্থানীয় আকুল (৫৫) নামের একজন সন্ত্রাসীদের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন।

স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। হামলার সময় এসআই নজরুল ইসলাম ও কনস্টেবল আতোয়ার রহমান ইটের আঘাতে আহত হন। পরে এসআই নজরুল ইসলামকে আসামি আলম শেখ কিল-ঘুষি মেরে আহত করে। তবে পুলিশি চেষ্টায় আলম শেখকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, বাকি আসামিরা পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।


রাণীনগরে রেলগেটের যানজট নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগরের গলার কাঁটা রেলগেটের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে আন্ডারপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিতে উপজেলার সর্বস্তরের আমজনতারা মানববন্ধন করেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার রেলগেটে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রাণীনগর প্রেসক্লাবের সভপতি অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ, উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোসারব হোসেন, বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী রাণীনগর শাখার আমীর ডা. আনজীর হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিরা। মানববন্ধনে উপজেলার সুধীজন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষরা অংশগ্রহণ করে। এছাড়া সর্বস্তরের শ্রেণিপেশার কয়েক হাজার সাধারণ মানুসরাও অংশগ্রহণ করে।

এ সময় বক্তারা বলেন, রাণীনগর রেলগেট অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। রেললাইনের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক। যে সড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ভারী যানবাহন ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে চলাচল অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে নওগাঁ-রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়কে যেতে হলেও এই রেলগেট পার হতে হয়। দুটি আঞ্চলিক সড়কের মিলনস্থল এই রেলগেট। ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গে চলাচলের জন্য দিন দিন ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রেলগেটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। যার কারণে প্রতিদিনই ট্রেন চলাচলের সময় রেলগেট পড়ার পর দুপাশে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের শিকার হতে হচ্ছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার পথচারীদের। বছরের পর বছর কোনো সংস্কার না করা এবং বিকল্প কোনো সড়কের সৃষ্টি না করার কারণে এই রেলগেট বর্তমানে অত্র অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এই বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বহুবার লেখালেখি করেও আজ পর্যন্ত কোনো দপ্তরের সুদৃষ্টি পড়েনি।

এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার পথচারীদের প্রতিদিনই যানজট নামক মরণফাঁদে পড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত এই রেলগেট বিকল্প পথ হিসেবে আন্ডারপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণ করার আশ্বাস না দিলে আগামীতে রেলপথ অবরোধ করাসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে উপজেলাবাসী বাধ্য হবেন বলে মানববন্ধনে হুশিয়ার প্রদান করেন বক্তারা।


চট্টগ্রামে সাড়ে ৬ কোটি টাকার আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ জব্দ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পাখির খাদ্যের আড়ালে পাকিস্তান থেকে আসলো ২ কনটেইনার আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্স (এআইআর) শাখা চালানটি আটক করে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃক গণমাধম্যে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

কাস্টমস জানায়, গত ৯ অক্টোবর বার্ড ফুড হিসেবে দুই কনটেইনারে ৩২ হাজার ১০ কেজি পণ্যের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পরে সেটি খালাসের জন্য বেসরকারি অফডক ছাবের আহমেদ টিম্বার কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোতে নেওয়া হয়। চালানটির আমদানিকারক চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার কোরবানিগঞ্জ এলাকার ‘মেসার্স আদিব ট্রেডিং’। চালানটি খালাসের জন্য খালাসের জন্য নগরীর হালিশহরের শান্তিরবাগ এলাকার এম এইচ ট্রেডিং কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিমিটেড বার্ড ফুড ঘোষণা দিয়ে গত ১৪ অক্টোবর কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। পরে চালানটির উৎস, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকের ব্যবসার ধরণ পর্যালোচনা করে চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আছে সন্দেহে চালানটির খালাস স্থগিত করে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে লক করে দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা চালানটির খালাস স্থগিত করে পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেন। পরে ২২ অক্টোবর কনটেইনার দুটি খোলা হয়। উদ্ধার পণ্যের নমুনা তিনটি পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা পপি বীজ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এতে সাত টন পাখির খাবার ও ২৫ টন পপি বীজ পাওয়া যায়। বিষয়টি গোপন রাখতে পাকিস্তানে পণ্য বোঝাই করার সময় কনটেইনার দরজার মুখে পাখির খাদ্যের বস্তা রাখা হয়। ভেতরের দিকে রাখা হয় পপি বীজ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পণ্যচালানটির ঘোষিত মূল্য ছিল ৩০ লাখ ২ হাজার ৪৮২ টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষণে প্রাপ্ত পণ্যের বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসব পণ্য আমদানিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে কাস্টমসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।


বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে প্রোস্টেট ও হেড-নেক ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা নিয়ে ৩ দিনব্যাপী একাডেমিক সেশন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)-এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগে ৩–৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হলো “Evidence-Based Treatment Overview of Prostate Cancer and Head & Neck Cancer” শীর্ষক তিনদিনব্যাপী একাডেমিক সেশন। সেশনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের সাউথএন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ, MRCP, FRCR। তিনি আন্তর্জাতিক গাইডলাইনভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, ক্যান্সার রোগীর স্টেজিং ও রিস্ক স্ট্রাটিফিকেশন, রেডিওথেরাপির আধুনিক প্রযুক্তি এবং সিস্টেমিক থেরাপির সাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে বিশদ উপস্থাপনা করেন।

সেশনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়— আন্তর্জাতিক গাইডলাইনভিত্তিক চিকিৎসা, আধুনিক রেডিওথেরাপি স্ট্রাটেজি, সিস্টেমিক থেরাপির আপডেট, রোগী ব্যবস্থাপনায় বেস্ট প্র্যাকটিস।

তিনদিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমইউ-এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি ডা. ইমতিয়াজ আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,“এ ধরনের উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক সেশন আমাদের রেসিডেন্টদের আপডেটেড চিকিৎসা শেখায় এবং হাতে-কলমে আধুনিক ক্যান্সার ব্যবস্থাপনা জানার সুযোগ তৈরি করে। আমরা চাই তিনি আবারও বাংলাদেশে এসে আমাদের সাথে কাজ করবেন।”তিনি আরও বলেন, “একজন অনকোলজিস্টের সবচেয়ে বেশি জ্ঞান থাকতে হবে আধুনিক প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা, আন্তর্জাতিক গাইডলাইন, রেডিওথেরাপি ও সিস্টেমিক থেরাপির সাম্প্রতিক উন্নয়নের ওপর। কারণ আপডেটেড জ্ঞানই রোগীর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিএমইউ এর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোঃ আকরাম হোসেনসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, এমডি এবং এফসিপিএস ক্লিনিক্যাল অনকোলজি রেসিডেন্টরা অংশগ্রহণ করেন। বিএমইউ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতেও এ ধরনের আন্তর্জাতিক একাডেমিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে, যা দেশের ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে গ্রামে গ্রামে এলাকাবাসীর পাহারা

গজারিয়ায় পৃথক ডাকাতির ঘটনায় কোটি টাকার মালামাল লুট
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

ডাকাত আতঙ্কে গত কয়েকদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মানুষ। সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাত দলের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় বাধ্য হয়ে গ্রামে গ্রামে পাহারা বাসিয়েছে স্থানীয়রা।

খবর নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে গজারিয়া উপজেলায় দুটি সঙ্ঘবদ্ধ ডাকাতি ও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ক্ষেত্রে ডাকাত দলের সদস্যরা প্রথমে জানলার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে তারপর অস্ত্রের মুখে বাসিন্দাদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। দুটি ডাকাতির ঘটনায় প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে বলে জানা যায়। গত বুধবার রাতে উপজেলার বালুয়াকান্দি, ভবেরচর ও টেংগারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ব্যক্তি উদ্যোগে নিজেদের জানমাল রক্ষায় পাহারা বসিয়ে স্থানীয়রা। ডাকাত দলকে প্রতিরোধে পাহারা দিতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, পাইপ ও টর্চ লাইট ব্যবহার করছে গ্রামবাসী।

রায়পাড়া গ্রামে পাহারা দলের নেতৃত্ব দেওয়া মাসুদ প্রধান ইপু বলেন, গত কয়েকদিনে গজারিয়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছে। আমাদের জানমাল আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা গ্রামবাসী একজোট হয়ে পাহারা দিচ্ছি।

ভবেরচর কলেজ রোড এলাকায় পাহারার দায়িত্বে থাকা ফাহিম সরকার বলেন, অন্যান্য এলাকার মত আমরাও নিজ এলাকার নিরাপত্তায় পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এলাকার তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পাহারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।

বৈদ্দ্যারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মীম আক্তার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ডাকাত আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারিনা। প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ডাকাতি হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি আবেদন আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

এদিকে ডাকাতি বন্ধে বিএনপি নেতা কর্মীদের ভূমিকা রাখতে নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘ডাকাতি বন্ধে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। কোথাও কোনো অপতৎপরতার খবর পেলে সাথে সাথে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে এবং মসজিদের মাইকে ঘোষণা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাহারা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সামগ্রিক সহযোগিতা করব আমি। প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্যে টর্চ লাইট এবং বাশি বিতরণ করা হয়েছে।’

গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘দুটি সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে আমরা আমাদের তৎপরতা বাড়িয়েছি। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

গত রবিবার রাতে উপজেলার বালুয়াগান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনার সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ৫৪ লাখ টাকা মালামাল লুট হয়েছে। পরদিন সোমবার রাতে উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের সাতকাহনিয়া গ্রামে গ্রামে বৃদ্ধ এক দম্পতির মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৪৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।


"লালমনিরহাটে ভারতের ৬২ কিলোমিটার দখল" শিরোনামে' র প্রেক্ষিতে বিজিবির বক্তব্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অতি সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “লালমনিরহাটে ভারতের ৬২ কিলোমিটার দখল?” শিরোনামে একটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া ও রাষ্ট্রবিরোধী গুজব প্রচার করছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার প্রচারের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উক্ত বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিজিবি দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছে যে, সার্বভৌম বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাগত উৎকর্ষতায় উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ যেকোনো তথ্য/গুজব যাচাই-বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে।


খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের দাবি ৫৪ বছরের

ভোগান্তির শেষ নেই এলাকাবাসীর
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

ঢাকার কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ঘাট। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত অবধি হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন নদী পারাপারের জন্য। বুড়িগঙ্গার মতো বিশাল নদীতে আশপাশের ১০/১৫ কিলোমিটার এলাকায় নেই কোনো ব্রিজ, ভরসা কেবল নৌকা। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মাঝেমধ্যেই বালুবাহী বালহেটের সঙ্গে নৌকার সংঘর্ষে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। অথচ দীর্ঘ ৫৪ বছরেও এখানে স্থায়ী ব্রিজ হয়নি।

দুই পাড়ের অনেকে কম বেতনে চাকরি করতে। স্কুল-কলেজে পড়তে যায় এলাকার ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু গরিব মানুষের অর্ধেক টাকাই খরচ হয়ে যায় নদী পারাপারেই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিনই ইজারাদারদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ইজারাদাররা ভাড়া নিয়ে টানাহেঁচড়া করে, বাজে ব্যবহার করে, এমনকি অনেক সময় হয়রানির শিকারও হতে হয়।অথচ তারা নামমাত্র মুল্যে ঘাটের ইজারা নেয়।

খোলামোড়ার তরুণ আরিফ বলেন, ব্রিজ হবে শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু পাইনি। প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে যে কষ্ট, তা ভাষায় বোঝানো যায় না। তাছাড়া ইজারাদারদের ব্যবহার খুবই খারাপ। ৫/৭ বছরের বাচ্চাদেরও ইজারার টাকা ছাড়া বের হতে দেয় না। ব্রিজটা খুবই জরুরি।

গৃহবধূ সাদিয়া অফরিন বলেন, এক পাশে বাবার অন্য পাশে শ্বশুরবাড়ি, যাতায়াতের সময় তিন বাচ্চাকে নিয়ে নৌকায় উঠতে বুক কাঁপে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তার ওপর ইজারাদারদের খামখেয়ালি আচরণে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া করতে গিয়ে কত ক্ষতি হয়েছে। দুর্ঘটনায় মানুষ মরেছে, মালামাল নষ্ট হয়েছে। ব্রিজ হলে শুধু যোগাযোগই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যও এগিয়ে যাবে। কিন্তু এত বছরেও হয়নি।

কেরানীগঞ্জের সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমান জানান, বাবুবাজার ব্রিজ, বসিলা ব্রিজ আমরাই করেছি, এটাও আমরাই করব। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সবার আগে খোলামোড়া-কামরাঙ্গীরচর ব্রিজ হবে।

স্থানীয়রা মনে করেন, পোস্তগোলা, বাবুবাজার ও বসিলা ব্রিজ কেরানীগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এবং নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গের ১০/১২টি জেলার রাজধানীতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই নতুন একটি স্থায়ী ব্রিজ সময়ের দাবি।

খোলামোড়া ও কামরাঙ্গীরচরের দুই পাড়ের কয়েক লাখ মানুষের একটাই প্রশ্ন-আসলেই কি হবে এই ব্রিজ? আর না হলে বাধাটা কোথায়? প্রতিশ্রুতি নয়, তারা এখন দেখতে চান বাস্তবায়ন।


হাজার মানুষের পদচারণায় নির্জন ইটাখোলা এখন কর্মমূখর জনপদ

*রূপগঞ্জে জাহাজ কারখানায় কাজ করছে লক্ষাধিক মানুষ *মালামালের দাম বাড়লেও বাড়েনি জাহাজের দাম
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের বুক ছিঁড়ে বহে চলছে শীতলক্ষ্যা। দু’তীরেই গড়ে ওঠেছে অসখ্য জাহাজ তৈরির কারখানা। এখানে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষাধিক লোকের জীবিকা। এসব কারখানায় দিন রাত চলে কার্যক্রম। এরমধ্যে কেউ জ্বালা দিচ্ছে। কেউ গ্রান্ডিং করছে। কেউ ডিজাইং করছে। কেউ প্লেট কাটছে। আবার কেউ রং করছে। অনেকে আবার পাহাদারের কাজও করছে। নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণ, মেরামত, পুরাতন জাহাজ কাটা, নতুন পুরাতন জাহাজ বেচাকেনা এসব কার্যক্রমকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে বিশাল বাজার। পথ চলতেই টুক্ টাক্ শব্দে পথচারীদের কান ঝাপাপালা হবার উপক্রম হবে।

ডেমরা থেকে বালু নদীর পশ্চিম তীর ঘেষে উত্তরে কালো অজগরের মতো একেবেকে গেছে পীচঢালা সড়ক। সেই রাস্তা ধরে মাত্র ৩ কিলোমিটার এগুলোই জাহাজ তৈরীর অসংখ্য কারখানার দেখা মিলবে।

এক সময়ের ভবঘুরে, এখন কোটি কোটি টাকার মালিক সুজন মিয়া বলেন, “একটা সময় কাজের সন্ধানে ছুটতাম। এখন আমার আন্ডারেই কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে। নয়ামাটি এলাকায় বালুনদের তীরে প্রথম ছোট্ট করে শুরু করি। তারপর নব্বই দশকের দিকে আমিই প্রথম এ ইটা খোলায় থ্রি-স্টার নামে ডকইয়ার্ড চালু করি। এরপর আমার পাশাপাশি অনেকেই জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন হাজার হাজার জাহাজ তৈরি হচ্ছে এখানে। সময়ের ব্যবধানে সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জাহাজ তৈরীর শিল্প। হাজার মানুষের পদচারনায় নির্জন ইটাখোলা এখন এক কর্মমূখর জনপদ।”

এছাড়াও বালুরপাড়, ইদেরকান্দি, পূর্বগ্রাম, ভাওয়ালীয়াপাড়া, ডাক্তারখালী, বড়ালু, মাঝিনা, হড়িনা, ও ইছাখালীর চরে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক জাহাজ তৈরীর কারখানা। এছাড়া উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর ও দড়িকান্দির চরে রয়েছে আরো ৮/১০টি প্রতিষ্ঠান। মাষ্টার ডকইয়ার্ড, থ্রিস্টার ডকইয়ার্ড, ফাইভ ইস্টার ডকইয়ার্ড, খান ডকইয়ার্ড, ফাহিম ডকইয়ার্ড, শামস ডকইয়ার্ড, তালহা ডকইয়ার্ড, আমির ডকইয়ার্ড, মালেক ডকইয়ার্ড, রাজু ডকইয়ার্ড, লিটন ডকইয়ার্ড, ফটিক ডকইয়ার্ড, ভাই ভাই ডকইয়ার্ড, মনির ডকইয়ার্ড, মাস্টাং ইঞ্জিনিয়ারিং জাহাজ কারখানাগুলোর অন্যতম। আড়াই‘শ ফিট থেকে শুরু করে শত ফিটের কোষ্টার বা মালবাহি জাহাজ, সরোঙ্গা, ফেরী, জেটি, পল্টন, বালুবাহি ট্রলার, বলগেট আর ড্রেজার তৈরী হয় এসব কারখানায়।

জাহাজ তৈরীতে মূলত ব্যবহার হয় লোহার প্লেনশীট আর এঙ্গেল, মেশিন সরাসরি আমদানী করতে হয় চীন থেকে। অতিরিক্ত উপাদান বলতে টি-গার্ডার, বিট-গার্ডার, রং, ইট, বালি ,সিমেন্ট, গ্যাস সিলিন্ডার, অক্সিজেন, ওয়েল্ডিং রড আর লেদ মেশিনের কিছু খুচরো কাজ।

একটি বড় মাপের কোষ্টার জাহাজ তৈরীর জন্য প্রথমে রাজমিস্ত্রি বেইস লাইন তৈরী করে দেন। পরে ঠিকাদারের নির্দেশনাক্রমে ফিটাররা জাহাজের মলিন তৈরী করেন। ওয়েল্ডার ঝালাইয়ের মাধ্যেমে জাহাজটির খাচা তৈরী নির্মান করেন। একটি বডি দাড় করানোর পর চলে মেশিন স্থাপন আর রংয়ের কাজ।

বড় জাহাজে ৩/৪টি খুপড়ি বা হেস থাকে। যেখানে ৩/৪শ টন পর্যন্ত মাল বহন করা যায়। প্লেনশীট আসে চট্রগ্রাম থেকে। বিদেশী কাটা জাহাজের ৮ থেকে ১২ মিলির শীট ব্যবহার করা হয় জাহার তৈরীতে। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে শীট কিনতে হয়। আর লোহার অঙ্গেল ৭৫/৭৬ টাকায় পাওয়া যায় স্থানীয় বাজারে। ৮/৯ লাখ টাকায় জাহাজের মেশিন আমদানী করা হয় চীন থেকে আর অন্যান্য মালামাল আছে ঢাকার বংশালে অথবা চট্রগ্রামের ভাটিয়ারীতে।

সময় ও অবস্থাবেধে উপাদানের মূল্যেরও হেরফের হয়। সর্বসাকুল্যে একটি বড় জাহাজ তৈরীতে ৯/১০ কোটি টাকা খরচা হয়। এরপর মালিকরা সুবিধে মতো লাভ করে তা বিক্রি করেন। একটি জাহাজ ২০/২৫জন কারিগর মিলে তৈরী করলে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫ মাস।

ফিটার আমির, মোজ্জামেল, মোক্তার, জয়নাল ওয়েল্ডার পান্নু, আলমাছ আনোয়ারসহ আরো অনেকে জানান, হিসেব কষে খেয়ে দেয়ে বাকি টাকা তুলে রাখেন পরিবার পরিজনদের জন্য। তারা বলেন কাজের তুলনায় বেতন অনেক কম তারপরও করার কিছু নেই। এই কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ তারা শিখিনি।

আর জাহাজের মালিক মোমেন, কাইয়ুম, শরীফ হোসেন, কামাল, মাহফুজ, আলামিন, মোস্তফাসহ আরো অনেকে বলেন, রোজ হাজিরা, মালামাল কেনা , বিদ্যু বিল আর জমির ভাড়া এগুলোর ভেতর লুকিয়ে থাকে জাহাজের লাভ লোকসানের ব্যাপার। এ কারনে হিসেব কষে সকলকে টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া মালামালের দাম যে হারে বাড়ছে জাহাজের দাম কিন্তু আগের তুলনায় বাড়েনি।


banner close