বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২

থানার সামনে নাচের টিকটক, আ.লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ২০:১২

নাটোরের বড়াইগ্রামে থানা ভবনের ফটকে ধারণ করা নাচের টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরে তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়।

গ্রেপ্তার নারীর নাম শিউলি বেগম (৪০)। তিনি নাটোর জেলা শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও বড়াইগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল মার্কায় নির্বাচন করে পরাজিত হন।

শিউলি নাটোর সদর উপজেলার চরতেবাড়িয়া গ্রামের মামুনুর রশিদের স্ত্রী। তবে বর্তমানে তিনি বড়াইগ্রাম পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর মহল্লায় বাস করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোরে শিউলি বেগমকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও বিস্ফোরণ ঘটানোর মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সোমবার বিকেলে শিউলি বেগমের একটি নাচের টিকটক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বড়াইগ্রাম থানা ভবনের প্রধান ফটকের সামনে। সেখানে ‘পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে...’ গানের তালে তালে তাকে নাচতে দেখা যায়।

টিকটক নিয়ে সমালোচনার মধ্যে গ্রেপ্তারের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী শিউলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকটক করা আমার নেশা। সে কারণেই ভিডিওটি ধারণ করেছিলাম। পরে বুঝতে পেরেছি থানার সামনে কাজটি করা ঠিক হয়নি।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অগোচরে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। আমরা লোকজনের মারফত ভিডিওটির খবর পেয়েছি। তাকে একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’


রাঙামাটিতে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ম্যালেরিয়া

জেলায় আক্রান্ত ৬৭৬, মৃত্যু ১ 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিজয় ধর, রাঙামাটি

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব। সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলা জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়িতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই চার উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। অন্যদিকে পুরো জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৬৭৬ জন ছাড়িয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসের আংশিক প্রতিবেদনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে ৯৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে বাঘাইছড়িতে ১৬৪ জন, জুরাছড়িতে ২৪৭ জন, বিলাইছড়িতে ১৮৫ জন ও বরকল উপজেলায় ১৮০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ছয় উপজেলায় জুন মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৮ জন।
চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাড়তে থাকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বছরই এ রোগের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা জানান, আগে বর্ষাকালেই ম্যালেরিয়া বেশি হতো। এখন বছরের অন্য সময়েও বৃষ্টির কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় মশার বিস্তার হচ্ছে। ফলে সারা বছরই রোগী পাওয়া যাচ্ছে।এখন সেটি হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে জেলার মোট ৪ হাজার ৭১৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৭৬৮ জন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৬ জন।

এদিকে সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এই অবহেলা প্রাণঘাতী পরিণতি ডেকে আনছে।

রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের নোয়াদম গ্রামের স্কুলছাত্রী সুদীপ্তা চাকমা (১০) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার (১২ জুলাই) রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানান, স্কুল ছাত্রীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে তার জ্বর বেশি ওঠে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে হাসপাতালে আনার পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শওকত আকবর খান জানান, হাসপাতালে বতমানে ২ জন ম্যালরিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ার জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর জ্বর, মাথাব্যথা, কাঁপুনি, শারীরিক দুর্বলতা, রক্তাল্পতা, জন্ডিস, খিচুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি বিকল, কোমা এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নির্ণয় ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়া বাড়ে। এবছর আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে সরকার ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় টিম পাঠানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা।’ শনিবার (১২ জুলাই) সকালে সুদীপ্তা চাকমা নামে এক স্কুল ছাত্রী ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে জ্বর বেশি আসার পর শনিবার (১২ জুলাই) সকালে যখন তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তখন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না।
ডা. নূয়েন খীসা আরো বলেন, ‘ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্গম ও অসচেতনতার কারণে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েটি মারা গেছে। আমরা চিকিৎসা করার সুযোগ পাইনি। ‘জ্বর হলে কেউ অবহেলা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখলেই পরীক্ষা করানোই এর প্রতিরোধের উপায়।’ ২০১৬ সাল থেকে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়া শূন্য কোটায় নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।’


নীলফামারীতে রুমার হাতে গড়ে ওঠেছে আমের স্বর্গরাজ্য

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাসির উদ্দিন শাহ্ মিলন, নীলফামারী

রুমা অধিকারীর শৈল্পিক শখ এখন পরিণত হয়েছে এক সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগে। স্বামী পুলিশের চাকরির সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন রংপুরে। সেখানে বসবাসকালে ইউটিউবে বড় বড় বিদেশি আমের ভিডিও দেখে তার মনে জাগে আম চাষের আগ্রহ। শখ থেকেই শুরু। ২০২৩ সালের শেষের দিকে রংপুর থেকে ফিরে স্বামীর বাড়ি, নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ায় এক একর জমিতে শুরু করেন নানা জাতের আমের চাষ।

রোপণকৃত ৩০০টি আমগাছের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ১০টি ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের কিং অফ চাকাপাত, চীনের চ্যাং মাই, ডকমাই, ব্যানানা আম এবং আমেরিকার রেড পালমার, হানি ডিউসহ আরও নানা জাতের উন্নত মানের আম।

এই আমগাছগুলোতে মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ব হয়। লেট ভ্যারাইটির হওয়ায় এসব আম তুলনামূলক দেরিতে পাকে, ফলে দেশীয় আমের মৌসুম শেষে বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজারে দেশীয় আমের সরবরাহ যখন কমে যায়, তখন রুমার বাগানের আমই হয় বিকল্প উৎস। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি বাজারেও মেলে উন্নত জাতের আম।

আজ তার সেই আমবাগান যেন রঙিন এক আমের স্বর্গরাজ্য। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই নানা আকৃতি, রং ও স্বাদের আম। রুমা অধিকারী নিজেই পরম যত্নে গাছগুলো পরিচর্যা করেন। স্বামী দুলাল অধিকারী ছুটিতে বাড়ি এলে তিনিও সহায়তা করেন এই কর্মযজ্ঞে। শুরুটা ছিল স্বল্প পুঁজি নিয়ে, কিন্তু রুমা অধিকারীর স্বপ্ন অনেক বড়।

জানতে চাইলে রুমা অধিকারী বলেন, ‘প্রথমে তো এটা ছিল শুধুই একটা শখ, কিন্তু এখন এটা আমার স্বপ্ন। আমি চাই, দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন জাতের উন্নতমানের আম পৌঁছাক, যেন আম আমরাও বিশ্বমানের ফল চাষে পিছিয়ে না থাকি। নিজের হাতে গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, আর একেক সময় ফল আসতে দেখা- এই আনন্দ ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি বিশ্বাস করি, নারী হয়েও সফল কৃষি উদ্যোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার স্বপ্ন হলো- এই আমবাগানকে আরও বড় করে তোলা, যাতে এলাকার আরও মানুষ কাজের সুযোগ পায়। সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণ দেয়, তাহলে আমি এই উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে পারব।’

রুমা অধিকারীর স্বামী দুলাল অধিকারী বলেন, ‘আমি যখনই ছুটি পাই তখনই বাসায় আসি। এখানে এসে আমার স্ত্রীকে আম বাগানের পরিচর্যায় সহযোগিতা করি।’

স্থানীয় উত্তম রায় নামে এক যুবক বলেন, ‘রুমা বৌদি যে পরিশ্রম করে তার আম বাগান সাজিয়েছে, তা আমরা যুবকরাই পারব কি না, সন্দেহ। তার আম চাষ দেখে আমাদেরও আম চাষের অনুপ্রেরণা জুগছে।’

শওকত ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছিলাম এখানে বিভিন্ন ধরনের আম গাছ আছে। তাই আমগুলো দেখতে এবং খেতে এসেছিলাম। আমগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, ‘আম চাষে রুমা অধিকারীকে শুরু থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার সফলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ। যা দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনা, শ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কৃষিতেও গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি এমনভাবে তরুণ-তরুণীরা কৃষি খাতে এগিয়ে আসে, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় করে তুলবে।’


বাংলার মাটিতে আর কোনো নব্য স্বৈরাচারের স্থান হবে না : নাহিদ ইসলাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়েছি, আর কোনো নব্য স্বৈরাচারের স্থান এ বাংলার মাটিতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়বো, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবেনা। যেখানে মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ থাকবেনা, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, লুটেরাদের স্থান থাকবেনা, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই।’

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৪টায় ভোলা শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এনসিপির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে চলমান সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, গ্যাসের শহর ভোলা। এ জেলার গ্যাস দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় অথচ ভোলার জনগণকে গ্যাস থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ভোলাবাসীর সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।

জুলাই বিপ্লবে দ্বীপ জেলা ভোলার ৫৭ শহীদকে স্মরণ করে নাহিদ বলেন.‘কোনো একক জেলা হিসেবে জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন ভোলাতে। তাই আজ আমরা এসেছি ভোলাবাসীকে আপন করে নিতে। ভোলাবাসীর সাথে আর বৈষম্য করা হবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের পাশে থাকবে।’

এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে তাড়িয়েছি আর কোনো স্বৈরাচারের স্থান এ দেশের মাটিতে হবে না। প্রতিবাদের জায়গা হলো ভোলা। ভোলার বীর সেনারা জুলাই আগস্টের আন্দোলনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, সেই ভোলার মানুষ কোন চাঁদাবাজ, ধর্ষককে স্থান দেবে না।

তিনি বলেন, ‘ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ। এখানকার হাসপাতালটি অকেজো। ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা পিছিয়ে যা অন্য কোথাও নেই। আপনাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এ ভোলা হবে একটি সুন্দর সমৃদ্ধশালী জেলা।’

ভোলা জেলা এনসিপি আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শরীফের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আক্তার মিতু, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন। জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত হাসনাইন, সংগঠনের ভোলা জেলা সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও সমন্বয়কারী ইয়াসির আরাফাত।

ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলার ৭ উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ গ্রহণ করে।

এর আগে এনসিপি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ ভোলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকা থেকে শুরু করে সমাবেশস্থল পর্যন্ত এক পদযাত্রায় অংশ নেন।


ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মামলায় মহিন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

রিমান্ড শেষে এদিন আদালতে হাজির করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত আদেশ দেন।

এর আগে গত বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরোনো ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে।

এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মামলা করেন। এরপর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার (১১ জুলাই) কেরানীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। শুক্রবার (১১ জুলাই) গভীররাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে কাজী নান্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নান্নুকে ধরার মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির সংখ্যা আটজন।


রাজবাড়ীর ৫ সরকারী হাসপাতালে নেই করোনা টেস্টের কিট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জহুরুল হক, রাজবাড়ী

দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও রাজবাড়ী জেলার সরকারী কোনো হাসপাতালেই নেই করোনা পরীক্ষার কিট। এমনকি হাসপাতালে কর্মরতরাও পায়নি সুরক্ষা সামগ্রী। এখনও প্রস্তুত করা হয়নি আইসিইউ ইউনিট। এতে হতাশ রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে কিট চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সিভিল সার্জন দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ।

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিটের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে এখনও শুরু হয়নি কার্যক্রম। অথচ হাসপাতালের প্রবেশপথেই টাঙিয়ে রাখা হয়েছে আইসিইউ সেবার সাইনবোর্ড। বিয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ‘প্রতিদিনই জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথাসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসছেন রোগীরা। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কীট ও জনবল সংকটের কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। কোনো প্রকার উপায় না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া ও ঢাকায়।

হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ফেরা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, সংকটের কারণে সুচিকিৎসা হচ্ছে না। করোনা পরীক্ষা না করায় আরো বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে এ জেলার মানুষ।

এদিকে যারা রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিবেন সেই সব সেবিকা ও কর্মীদেরও দেওয়া হয়নি কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী। ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন তারা।

এ সময় স্যাম্পল সংগ্রহকারী সেবিকা হিরা আক্তার বলেন, ‘এর আগে করোনার সময় হাসপাতাল থেকে মাস্ক, পিপি, হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যাথাসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। কীট নেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষা হচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালের সেবিকাসহ সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। নিজেরা নিজেদের মত করে সুরক্ষা মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. ফরিদ শেখ বলেন, এত বড় হাসপাতাল শত শত রোগী। এত সব রোগীর পরীক্ষার জন্য মাত্র দুজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে রিপোর্ট প্রদান করতেও সময় লাগছে বেশি।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আগের সুরক্ষা সামগ্রীগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে ৩০ হাজার কীট চেয়ে আবেদন করা হলেও পাওয়া যায়নি। ওই কীটগুলো পাওয়া গেলে করোনা টেস্ট কার্যক্রম শুরু হবে। আর আইসিইউ ইউনিটের কাজ শেষে দিকে জনবল না থাকায় সেটিও চালু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, রাজবাড়ী জেলার শুধু সদর হাসপাতাল নয়! কোনো হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষার কীট নেই। জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কীট না পাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা প্রতিহত করতে হবে।


অস্তিত্ব সংকটে সাটুরিয়ার শতবর্ষী খাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শতবর্ষী একটি খাল দখলের মহোৎসব চলছে। সিনেমা হল সড়ক থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করায় খালটি আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চললেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় খালটির অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এর ফলে খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। খাল দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

সিনেমা হল সড়ক সংলগ্ন বাজার থেকে পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রাম পর্যন্ত খালটি এক সময় চন্দ্রখালী নদীর শাখা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অতীতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় পণ্য পরিবহন ও মানুষের চলাচলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। কৃষকদের শস্য উৎপাদন ও পরিবহনে এই খালটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু দখলদারদের আগ্রাসনে খালটি তার প্রাণ হারিয়েছে।

পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘এই খালই ছিল প্রায় সারাবছর একমাত্র যানবাহন নৌকার পথ, যা কৃষকদের ফসল হাটে নিয়ে যেতে এবং গ্রামের মানুষকে সাপ্তাহিক বাজার-সদাই করে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করত।’

কুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক মো. আতাউর রহমান বলেন, বর্ষার পানি নিষ্কাশন এবং প্রয়োজনে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য এই খাল অপরিহার্য ছিল। কিন্তু এখন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পার্শ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার জোয়ার আমতা গ্রামের মোহাম্মদ জুলহাস জানান, একসময় তারা বালিয়াটি হয়ে এই খাল দিয়ে সাটুরিয়া হাটে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে খালের বিভিন্ন অংশে বাধ দেওয়ায় খালটিকে আজ মেরে ফেলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই খালটির দুই পাশে বসবাসকারীরা প্রথমে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করত। এরপর মাটি ফেলে ভরাট করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছে। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় ২০-৩০টি স্থানে বাঁধ দিয়ে সম্পূর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গা এখন ময়লার ভাগাড়। জমে থাকা পানিতে মশা, রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে, তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

উত্তর কাওন্নারা গ্রামের মো. আক্কাছ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় খালটি দখল হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই এলাকার পাশ দিয়ে চলাচল করলেও মৌখিক অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দখলদাররা সুবিধা পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।’

খাল দখল হওয়ায় বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, উত্তর কাওন্নারা গ্রামের কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সামাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং মোকাদছ আলী, শাহ আলম ও তানি আলমরা বাঁধ দিয়ে খালের প্রবাহ আটকে দিয়েছেন। এর ফলে জমাট বাঁধা দূষিত পানিতে রোগবালাই বাড়ছে এবং মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে।

আব্দুস সামাদ মিয়া অবশ্য দাবি করেন যে একসময় এই খালে স্রোত থাকায় তাদের জমি ভেঙে খাল প্রসারিত হয়েছিল এবং সেই জায়গা ভরাট করে তিনি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সিনেমা হল রোড থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিজের টাকায় অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে রাস্তা বানিয়েছেন।

সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শহর আলী জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দখলদাররা নির্বিঘ্নে দখল চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করা অপরাধ। তিনি জানান, তার দপ্তরে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা প্রমাণিত হলে উচ্ছেদ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।


জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শো

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ এই প্রতিপাদ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও ড্রোন শো। সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় এই আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্মৃতিচারণা ও সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও ছিল ব্যতিক্রমী ড্রোন প্রদর্শনী।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। সহায়তায় ছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন সোনিয়া মুরশিদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস শেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ এবং জনপ্রিয় শিল্পী সায়ান সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সায়ান এককভাবে পরিবেশন করেন গণসংগীত ও জনপ্রিয় সংগীত।

‘জুলাই নারী দিবস’ উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসব প্রামাণ্যচিত্রে জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এরপর দেখানো হয় ‘দীপক কুমার গোস্বামী বলছেন’ এবং ‘জুলাই বিষাদসিন্ধু’ চলচ্চিত্র দুটি।

এ সময় শহীদ মিনারে বেশ কয়েকটি ডিসপ্লেতে জুলাই অভ্যুত্থানের এসব প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি ও শামসুন্নাহার হলের সামনেও শিক্ষার্থীদের উপভোগের জন্য বেশ কয়েকটি ডিসপ্লে লাগানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ, আনসার, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যসহ বেশ কিছু নিরাপত্তা টিম কাজ করে।

আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ড ‘ইলা লা লা লা’। তবে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ড্রোন শো, যা শহীদ মিনারের আকাশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় উপস্থিত দর্শকদের।

ড্রোন শোর প্রথম অংশে তুলে ধরা হয় কীভাবে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে জুলাই পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। দ্বিতীয় অংশে ফুটিয়ে তোলা হয় ১৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ।

উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্ত আন্দোলনে নতুন গতি আনে। সেই দৃশ্য পুনর্নির্মিত হয় ড্রোনের মাধ্যমে, যা আন্দোলনের ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরে।

এই আয়োজন ছিল জুলাই মাসব্যাপী চলমান স্মরণ ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একটি অংশ। আয়োজকেরা জানান, তরুণ প্রজন্মের মাঝে জুলাইয়ের আত্মত্যাগ ও চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অনুষ্ঠান। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নারী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এ আয়োজন অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকেরা মনে করেন।


পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের দাবিতে পঞ্চগড়ে আইনজীবীদের মানববন্ধন

আপডেটেড ১৫ জুলাই, ২০২৫ ১২:৪৫
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের দাবিতে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা।

১৫ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় পঞ্চগড় জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা আইনজীবী সমিতি।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. আদম সুফি, গভার্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অ্যাড. এম এ আব্দুল বারী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাড. মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মির্জা আমিরুল ইসলাম, অ্যাড. গোলাম হাফিজ, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. ইয়াসিনুল হক দুলাল, অ্যাড. মেহেদী হাসান মিলনসহ অন্যান্য সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীগণ।

বক্তারা বলেন, একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করে একটি স্বাধীন সচিবালয়ের অধীনে নিয়ে আসা জরুরি। তারা অভিযোগ করেন, অতীতে বিভিন্ন সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও জনগণের মৌলিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।

তারা আরও বলেন, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টসহ সকল বিচারিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচারকরা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনের প্রভাব পড়ছে এবং এতে করে ন্যায়বিচার ব্যাহত হচ্ছে।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিচার বিভাগ থাকায় বিচার বিভাগ কার্যকরভাবে স্বাধীনতা পাচ্ছে না। জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধে দ্রুত পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করতে হবে।

পঞ্চগড়ের আইনজীবীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদের দাবি আদায়ে দেশব্যাপী আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।


কালীগঞ্জ বাইপাস মোড়ে যেন মৃত্যুফাঁদ, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

গোলচত্বর নির্মাণের দাবি জোরালো
আপডেটেড ১৫ জুলাই, ২০২৫ ১৪:০১
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গি-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় এখন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গোলচত্বর কিংবা ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে প্রতিনিয়ত এখানে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ভয়াবহ যানজট আর দুর্ঘটনার এই মোড়ে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা।
মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী পরিবহনগুলো কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় অতিক্রম করে। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে তিন দিক থেকে আগত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি এবং কোনো ট্র্যাফিক পয়েন্ট না থাকায় ভয়াবহতা বেড়েছে কয়েকগুণ।
গত ১৪ মে এই মোড়েই একটি লরির চাপায় প্রাণ হারান মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল হামিদ (৩৪)। এমন দুর্ঘটনা যেন এখানে নিত্যদিনের ঘটনা। পথচারী, রিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের চোখে বাইপাস মোড় এক আতঙ্কের নাম।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরু রাস্তা, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, সড়কের দুই পাশে অবৈধ দোকান এবং তুমলিয়া মোড়ে অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণে এই মোড়ে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদেরও প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ ভোগান্তিতে।

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেন বলেন, “প্রতিদিন দুধ নিয়ে বাজারে যাই। বাইপাস মোড় পার হতে গিয়ে মনে হয়, জীবনটা আজই শেষ হয়ে যাবে। একদিকে বেপরোয়া বাস, অন্যদিকে কোনো ট্র্যাফিক নেই।”
কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ইসলাম জানান, “এই মোড়েই দুইবার দুর্ঘটনায় পড়েছি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। কিন্তু প্রতিদিনই এখানে একটা ভয় নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। আমরা চাই, দ্রুত এখানে গোলচত্বর হোক।”
বিগত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয়রা এই মোড়ে একটি গোলচত্বর নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, একটি সুপরিকল্পিত গোলচত্বর যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে আসবে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ বলেন, “চার মাস আগে আমি জেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে স্টাডি করছে বলেছে।”
তবে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরিফুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অবশেষে, সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—আর কোনো প্রাণ ঝরার আগে সরকার যেন এই মোড়টিকে নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শুধুমাত্র একটি গোলচত্বর নয়, প্রয়োজন একটি সমন্বিত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, যাতে এই ব্যস্ত মহাসড়ক হয়ে উঠতে পারে দুর্ঘটনামুক্ত ও জনবান্ধব।


কমলনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির মহোৎসব: প্রতিটি ঘর বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেন সরকারি ঘর বিক্রির মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দালালের নিয়ন্ত্রণে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প। নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন কিছু সচ্ছল ব্যক্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়ে ওই ঘর মোটা অঙ্কের টাকায় অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিছু ঘর বিক্রি হয়েছে একাধিকবার। আবার কেউ ভাড়া দিয়ে রাখছেন অন্য পরিবারের কাছে।

সম্প্রতি উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পটি একজন চিহ্নিত দালালের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই দালালের কাছে এখনো ১০ টির মত ঘর রয়েছে। ওই ঘরগুলো তালা মেরে রাখা হয়। সময়মত ক্রেতা পেলে ধাপে ধাপে লাখ টাকায় বিক্রি করছেন ঘরগুলো। মনে হয় দালালের নির্মাণ করা এসব ঘর।

সুত্র জানায়, ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৯ টি ঘরের মধ্যে প্রায় ৫০ টির মত ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে সবগুলো ঘরে ক্রয় করা ব্যক্তিরা বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়ায় থাকেন। এখনো ১৫ টির মত ঘর তালাবন্ধ রয়েছে। টাকার প্রয়োজন হলেই লাখ টাকা বিক্রি করে দিচ্ছে সরকারি ঘর।একই চিত্র ইউনিয়নটির ফজুমিয়ারহাট বাজারের পূর্ব পাশে ভুলুয়া ব্রীজ সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পেও।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি ধাপে উপজেলার চরকাদিরা, হাজিরহাট, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, চরকালকিনি ও চরমার্টিন ইউনিয়নে ৮২০টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণকাজের মধ্যেই ঘর বরাদ্দের জন্য ভূমি ও গৃহহীনদের আবেদনপত্র নেওয়া হয়। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ধাপে ধাপে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের জমি ও বাড়ি আছে এমন অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। অন্যদিকে টাকা দিতে না পারায় অনেক গৃহহীন পরিবার ঘর বরাদ্দ পাননি। যে কারণে, এসব সচ্ছল ব্যক্তি ঘর পাওয়ার পর সেখানে বসবাস না করে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বসবাসের জায়গা না থাকায় গৃহহীন পরিবারগুলো ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে দালালের কাছ থেকে আশ্রয়ণের ঘর কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ঘর বরাদ্দের সময় যথাযথ যাচাই-বাছাই এবং অবৈধ লেনদেন না হলে প্রকৃত গৃহহীনরাই আশ্রয়ণের ঘরগুলো পেতেন বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর কিনে বসবাসকারী দু’জন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই আশ্রয়ণে মোট ৫০টি ঘর বিক্রি হয়ে গেছে। এখনো ১০ টি ঘরে তালা মেরে রাখেন দালাল। টাকার প্রয়োজন হলেই একটা একটা করে বিক্রি করে ঘর বুঝিয়ে দেন ওই দালাল। উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ডাক্তারপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির মহোৎসব চলছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্ব ছিল তাদের। কিন্তু তালিকা যাচাই-বাছাই করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউএনও। তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ আরাফাত হোসেন বলেন,সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমলনগরের ইউএনও রাহাত উজ-জামান বলেন,বিভিন্ন মাধ্যমে এসব অভিযোগ শুনছেন। পরিদর্শন করে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।


অতি জোয়ারে প্লাবিত ইলিশা ফেরিঘাট, ভোলার ১০ নৌ-রুটে যান চলাচল বন্ধ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় আবারও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে ভোলার মেঘনা নদীর পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশ ফেরিঘাট জোয়ার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামার পথ তলিয়ে যায়। ফলে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হয়।

অপরদিকে, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করায় ভোলা-লক্ষ্মীপুরসহ জেলার ১০টি নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোটে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটে যাতায়াত করছে। এতে করে যেকোনো মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে অতি জোয়ারে ইলিশা ফেরিঘাটের দুটি ঘাটের মধ্যে লো ওয়াটার ঘাটটি তলিয়ে যায়। তবে হাই ওয়াটার ঘাটটি চালু রয়েছে। তখন একটি ঘাট দিয়ে যানবাহন ওঠানামা করাতে হয়। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক সময় বেশি লাগছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র ভোলা নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সমুদ্রে ৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি হওয়ায় ফের ভোলা জেলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুর, মনপুরা-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ১০টি নৌ-রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভোলা-ইলিশা রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।


শেরপুরে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
শেরপুর প্রতিনিধি

জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ এর অংশ হিসেবে শেরপুরে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৪ জুলাই সোমবার শেরপুর জেলা শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের পাশেই জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান।

নির্মাণ কাজ উদ্বোধনকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক শাকিল আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ শাহীন, প্রেসক্লাব সভাপতি কাকন রেজা, জেলা খামারবাড়ীর উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভুইয়া, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক লুৎফুল কবীর, জেলা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জাকারিয়া মো. আব্দুল বাতেন, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক মামুনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।

জেলা গণপূর্ত বিভাগ জানায়, প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি মাসেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।


চবির কলা অনুষদের ডিনের ক্ষমতার অপব্যবহার

গাড়িচালককে দিলেন পুকুর লিজ 
আপডেটেড ১৫ জুলাই, ২০২৫ ১১:২৫
রেফায়েত উল্যাহ রুপক, চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন একটি পুকুর নিয়ম না মেনে এবং কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই লিজ দিয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলা অনুষদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত একটি পুকুর নিয়ম না মেনে এবং কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিজের ব্যক্তিগত গাড়িচালক শহরমুল্লককে লিজ দেন অধ্যাপক ইকবাল শাহীন খান।

নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পুকুর, খাল কিংবা কৃষি জমি লিজ দিতে হলে প্রথমে দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। আগ্রহীরা আবেদন করলে, দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে লিজ দেওয়া হয়ে থাকে।

তবে কলা অনুষদের পুকুর লিজ দেওয়ার সময় মানা হয়নি যথাযথ প্রক্রিয়া। অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ বছরের জন্য পুকুরটি লিজ দেওয়া হয় কলা অনুষদের ডিনের গাড়ী চালক শহরমুল্লককে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চুক্তিতে শহরমুল্লক একক লিজগ্রহীতা হলেও, পুকুরে বাস্তবে ৬ জন মিলে মাছ চাষ করছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িচালক এবং ২ জন কর্মচারী।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শহরমুল্লক বলেন, ‘আমি ডিন স্যারের মাধ্যমেই পুকুরটি লিজ নিয়েছি। তিনি আমাকে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় দিয়েছেন।’

এবিষয়ে ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল শাহীন খান বলেন, ‘ওখানে শহরমুল্লক আগে থেকেই কিছু গাছ লাগিয়েছিল। সে বিবেচনায় বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মিটিংয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এটি কলা অনুষদের আওতাধীন। পরে জানতে পারি এটি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে। যেহেতু লিজ দিয়ে দিয়েছি, এখন তো আর করার কিছু নেই।’

জানতে চাইলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘ ডিন অফিস সরাসরি লিজ দিতে পারে না। আমি তাঁকে আবেদন করতে বলেছি। আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী লিজ দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানতাম না, এখনই আপনার থেকে জানলাম। এটা নিয়ে আমি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান এবং কলা অনুষদের ডিনের সাথে কথা বলবো। অবশ্যই আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’


banner close