প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, মেধা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে তরুণরাই বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বর্তমান বিশ্বে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলাদেশের তরুণরা সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় আজ শনিবার সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে ‘সিআরআই’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলা’র উদ্যোগে দেশের তরুণ সংগঠকদের ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার এই বিশ্বাসটাই আছে যে বাংলার মানুষ, আমরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি। আপনারা জানেন যে এখন সারাবিশ্বেই অনেক সংকট চলছে, যুদ্ধ চলছে, সমস্যা চলছে। এই একটি কোভিড মোকাবিলা করলাম আমরা দুবছর আগে। কোভিড যেতে না যেতে এখন যুদ্ধ, সন্ত্রাস, সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে।’
‘অনেকেই এখন ভয়ে ভয়ে থাকে যে, এই সমস্যা আমাদের দেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে?’ এই প্রশ্ন উল্লেখ করে সেটার উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এই কথাটা কেন বলছি এখানে, আপনারাই (তরুণ উদ্যোক্তারা) সেই সমস্যা সমাধানের উদাহরণ। দেখেন সমস্যার কোনোদিন শেষ থাকে না। এই ১৪ বছর যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, এর মধ্যে আমরা কী কী সমস্যা দেখেছি? প্রথমেই ছিল বিদ্যুতের সমস্যা। এই যে লোডশেডিং হয়, এটা আমরা কীভাবে সমাধান করবো? তারপর অর্থনীতির। এত মানুষকে কীভাবে খাওয়ানো হবে? এই অর্থনীতিকে কীভাবে আগানো যায়? এগুলো আমরা সমাধান করে দেখিয়েছি।’
‘এলো কোভিড। এটা নিয়ে সবাই ভয়ে ছিল, সবাই আতঙ্কে। সারা বিশ্বেই আতঙ্ক। তবে কী দেখা গেল? আমরা বাংলাদেশে, নিজেদের মতো করে, নিজেদের পরিকল্পনায়, এই কোভিডকে কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায়, এমনকি সবচেয়ে ধনী দেশের চেয়েও ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি।’
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমার নিজেরই আনন্দ লাগে যে, যখন দেখি আমাদেরই দেশে আপনারা (তরুণরা) রোবটিক হাব বানাচ্ছেন, এটা অসাধারণ। আমাদের দেশ থেকে আপনারা ক্লাইমেট চেঞ্জের জন্য দাবি করতে জাতিসংঘে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন, এটা অসাধারণ। আপনারা অসাধারণ। আমাদের দেশটি একটি অসাধারণ দেশ। নিজেরা লড়াই করে, রক্ত দিয়ে এই দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। এই ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাওয়াতে সক্ষম হয়েছি। এই ১৬ কোটি মানুষের দেশকে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে দরিদ্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছি।’
তরুণদের দেশের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এই তরুণ-তরুণীরা, এই ইয়াং বাংলার পুরস্কারজয়ীরা- আপনারাই হচ্ছেন ভবিষ্যৎ। আপনারা তরুণরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আপনারাই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আমার আশা আছে, বিশ্বাস আছে, আপনারাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ থেকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবেন। আর এটা আমাদের জীবনের মধ্যেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের পরিশ্রমে করবো। নিজেদের মেধা দিয়ে করবো, নিজেদের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করবো। আসলে নিজের মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস থাকে আর দেশপ্রেম থাকে তাহলে কিন্তু নিজের দেশের জন্য সবকিছু করা, নিজের দেশের মানুষের জন্য সবকিছু করা সম্ভব। নিজের মধ্যে যদি দেশপ্রেম আর স্বাধীনতার চেতনা না থাকে তাহলে আমি দেশের ভালো কীভাবে চাইতে পারি?’
তরুণরা ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন, এগিয়ে নিয়ে যাবেন- এ আশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে একটি শব্দেই অনুভূতি জানাতে চাই যে, অসাধারণ। আজকে যারা পুরস্কৃত হয়েছেন শুধু তারাই নন, যারা ফাইনালিস্ট এবং এই যে ৬০০ জন অংশ নিয়েছেন, আপনারা সবাই আজকে বিজয়ী।’
পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আপনারা দেশের ও দেশের মানুষের জন্য যেভাবে সেবা করছেন, এটা আমাদের সব নাগরিকের এবং বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ। আপনাদের মত তরুণ-তরুণীরা নিজের প্রচেষ্টায় কারও কাছে হাত না পেতে নিজের মেধায়, নিজের চিন্তাধারায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন, আপনারা কারও জন্য বসে নেই, এটাই হলো আমাদের চেতনা। এটাই আমাদের বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং সিআরআইয়ের ট্রাস্টি নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে ছয় বছর কেটে গেল। আজকে ইয়াং বাংলার সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় অনেক কিছু করেছেন। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
যারা পুরস্কৃত
বিকেল ৩টা জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ষষ্ঠবারের মত জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই ইয়াং বাংলার কার্যক্রম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এবারের পুরস্কারের জন্য প্রায় ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। তাদের মধ্য থেকে ২৮ জনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য বাছাই করা হয়। পাঁচটি ক্যাটগরিতে পুরস্কৃত করা হয় ১০ প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া দুইজনকে দেয়া হয় আজীবন সন্মাননা।
যে ১০টি প্রতিষ্ঠান পুরস্কৃত হয়েছে সেগুলো হলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের সহযোগিতায় কাজ করা ‘রোবোলাইফ টেকনোলজিস’, সমাজ গঠন, অর্থনীতি ও মানবিকতা নিয়ে কাজ করা ‘বিকে স্কুল অব রিসার্চ’, শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান শিখতে অনুপ্রাণিত করার সংগঠন ‘বিজ্ঞান সংঘ’, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘উচ্ছ্বাস’, নারীদের বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করা সংগঠন ‘ইয়ুথ প্ল্যানেট’, বিজ্ঞানচর্চার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’, পথশিশুদের শিক্ষাদানের সংগঠন ‘মজার ইশকুল’, ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার’, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র এবং আশ্রয়ের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কাজ করা সংগঠন ‘সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ ও ‘বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠন’।
এছাড়া আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন আইকনিক প্রকাশনা ‘উন্মাদ’র সম্পাদক আহসান হাবীব এবং পাহাড়ি লেখক ও গবেষক ইয়াংগুয়াং ম্রো।
জামালপুরের ইসলামপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ও আমার দেশ পত্রিকার ইসলামপুর উপজেলা প্রতিনিধি ওসমান হারুনী (৫০)। শনিবার ইসলামপুর পৌরশহরের ধর্মকুড়া এলাকায় তার নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ওসমান হারুনী একই এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে।
ইসলামপুর থানার ওসি আ. ফ. ম. আতিকুর রহমান জানান, সাংবাদিক ওসমান হারুনীর কিছুদিন আগে কিডনি নালীর অপারেশন হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। তবে তিনি বাড়িতে থেকে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেটের ব্যথা সহ্য করতে না পেয়ে তিনি নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মেহেদী বলেন, ওসমান হারুনী মোহনা টিভি ও আমার দেশ পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সাংবাদিকরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে রেখেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
চট্টগ্রামের রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত সর্তা খাল। অন্য বছরের তুলনায় এবার ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ফসলি জমি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে ফটিকছড়ির খিরাম ও ধর্মপুর ইউনিয়ন এবং রাউজানের হলদিয়া, চিকদাইর ও নোয়াজিশপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তা খালের তীব্র স্রোতে ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব অনেক পরিবার। অনেক আগে বসতভিটা হারিছে বেশ সংখ্যক পরিবার। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রাউজান ও ফটিকছড়ি অংশের দুই পাড় ভেঙে খালটি নদীর চেয়ে বড় আকৃতিতে রূপান্ত হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনে খালের পাড়ের ফসলি জমিতে রোপণকৃত ধানের চারা খালে পতিত হচ্ছে। ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবদুল জব্বার বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন বৃদ্ধি পায়। ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তত দেড়শ পরিবারের বসতঘর খালে বিলীন হয়ে গেছে। নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ভাড়াবাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ জসিম চৌধুরী বলেন, সর্তা খালের পাড়ঘেঁষে বাপ-দাদার আমলের প্রায় ১ একর ফসলি জমি ছিল। রাক্ষুসে সর্তা আমাদের সকল জমি গিলে খেয়েছে। এখন সামন্য ফসলি জমি আছে; চাষাবাদ করার মতো পর্যাপ্ত না হওয়ায় চাষাবাদ করিনি। খালের ভাঙনের জন্য বালু উত্তোলনকে দায়ী করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী (রাউজানের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘এ বছর বরাদ্দ আছে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘সর্তা খালের ভাঙনের বিষয়ে আমাদের কেউ অবগত করেননি। খবর নিচ্ছি, খবর নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের পুরান বাউশিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ভাঙচুর করা হয় স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি যাত্রীবাহী বাস। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সকাল এগারোটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মহাসড়কের পুরান বাউশিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শ্রাবন্তী আক্তার (১৪)। সে গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়া গ্রামের হানিফ মিয়া মেয়ে বলে জানা গেছে। সে গজারিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
জানা যায়, অন্যান্য দিনের মত শনিবার সকালে চর বাউশিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুলের সামনে নেমে রাস্তা পার হবার সময় ঢাকামুখী লেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সেন্ট মার্টিন পরিবহনের একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শ্রাবন্তীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রাবন্তী হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করে তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি বাস আটকে সেগুলো ভাঙচুর করে। পরে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়াও গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. হামিদা মুস্তফা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন,' বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তাদের সকল দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে'।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় মৃৎশিল্পীরা শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে ভালবাসার আঁচড়ে চলছে দিন রাত রং তুলি ও সাজ-সজ্জার কাজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ ঘরে ঘরে দেবী দুর্গার শারদীয় দুর্গোৎস দুর্গোৎসব আগমনী বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছে। দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে উপজেলার হিন্দু এলাকায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা। এবার কেশবপুর উপজেলায় ৯৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। উপজেলায় জমজমাট শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজনে দেখা যায় মৃৎশিল্পীরা কাদামাটি, খড় কাঠ সংগ্রহের কাজ শেষ করে বিভিন্ন রং তুলির আচড়ে, আবার কোথাও শাড়ি ও কাপড়, স্বর্ণালংকার এ সাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে এই কার্যক্রম। এখন শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই উৎসবকে ঘিরে মৃৎশিল্পীদের মাঝে দেখা দিয়েছে কর্মব্যস্ততা। দিনরাত কাজ করে শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। কাল রোববার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব ও দেবী দুর্গাকে বরণ করার জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। পরবর্তী মন্ডপে মন্ডপে চলছে বরণের প্রস্তুতি। দিনগুলোতে একের পর এক অনুষ্ঠিত হবে সপ্তমী, অষ্টমী নবমী, আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসজনের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে এই মহোৎসব।
উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সাহা জানান, পূজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা। আর পুজাকে ঘিরে উপজেলায় চলছে রাতদিন প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ।
কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন জানান, প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে আলাদা আলাদা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূজা মন্ডবে সি সি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায় সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা রেনু বেগমের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ গত ২১ সেপ্টেম্বর উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার মোটিভ শনাক্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করে এবং গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে র্যাব-৪ (সিপিসি), মাদারীপুরের একটি টিম ও পুলিশর একটি সমেত শিবচর থানাধীন পাচ্চর এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাজী মাহমুদ রাসেল সবুজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সবুজ জানায়, সে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সবুজ বলেন, তাকে ও তার স্ত্রীকে দেয়া চোরের অপবাদের প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
শুক্রবার সবুজের পাচ্চরের বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি (হাসুয়া/কাঁচি) উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় আসামি সবুজের খাটের নীচে লুকিয়ে রাখা ছুরির সাথে রেনু বেগমের বাসা থেকে চুরি হওয়া একটি রাইস কুকার, দুটি মোবাইলের একটি (স্যামসাং বাটন ফোন) উদ্ধার করা হয়। অপর একটি স্মার্ট ফোন (রিয়েলমি) হত্যাকারী সবুজ খুলনায় মোবাইলের দোকানে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলে, সেটিও খুলনা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের আরেকটি টিম।
ভিকটিম রেনুর কানের স্বর্ণের দুল ১৪ হাজার টাকায় শিবচরের একটি জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করা হলেও উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও রেনু বেগমের আলমারী থেকে লুট করে নেয়া ১৫৩০/- টাকাও উদ্ধার করা হয় আসামি সবুজের নিকট থেকে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামি সবুজকে শুক্রবার বিকালে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সে রেনু বেগমকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর তীব্র জোয়ারের আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের বয়ারচরের তেগাছিয়া বাজারে অবস্থিত একটি পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে পড়েছে খালে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তেগাছিয়া নামক একটি বাজারও। ইতোমধ্যে ওই বাজারের ১৫টি দোকান খালে ভেঙে পড়েছে। রামগতি-বয়ারচর সড়কের তেগাছিয়া বাজার অংশ ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় মেম্বার শেখ ফরিদ নিজ উদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখেন। বর্তমানে ওই বাজারের প্রায় ২ শতাধিক ঘরমালিক ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্ক রয়েছে। বাজারের পশ্চিম পাশের গাবতলীর খালের অংশ ভাঙছে প্রতিনিয়ত। এইভাবে চলতে থাকলে ১ মাসের মধ্যে বয়ারচরের গুরুত্বপূর্ণ এ বাজারটি তলিয়ে যাবে জোয়ারের পানিতে। বাজার ব্যবসায়ীরা রয়েছে চরম আতঙ্কে। কখন কার দোকান ভাঙবে সে চিন্তায় তাদের ঘুম নেই।
স্থানীয়রা জানান, বয়ারচরের দক্ষিণে ভুলুয়া নদী আর পশ্চিমে মেঘনা নদী। এই দুই নদীর পানি চলাচলের জন্য মাঝখানে গাবতলী নামে একটি বড় খাল রয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সকল পানি ভুলুয়া নদী দিয়ে গাবতলীর খালে এসে মেঘনা নদীতে পড়ে। এতে গাবতলীর খালের তেগাছিয়া বাজার অংশে পানির স্রোতের ধাক্কা লেগে তেগাছিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে যায়। ভাঙতে শুরু করছে বাজারটিও।
লক্ষ্মীপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ ও রামগতির ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শন করে তেগাছিয়া বাজার রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙতে শুরু করছে বাজারটি। ইতোমধ্যে ১৫টি দোকান ও রামগতি-তেগাছিয়া সড়ক ভেঙে পড়ে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ নিজ উদ্যোগে কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখেন।
তেগাছিয়া বাজারের ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম, মো. নুরশাদ, ডাক্তার কামাল উদ্দিন ও সাবু ব্যাপারী জানান, তেগাছিয়া বাজারটি বয়ারচরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ছিল একটি পুলিশ ফাঁড়ি। আশেপাশে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর প্রচণ্ড জোয়ারের আঘাতে পুলিশ ফাঁড়িটি ভেঙে যায়। পরে সেখান থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন বাজারটি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটি ভেঙে যাবে। তাই দ্রুত ব্লক দিয়ে বাজার রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ ফরিদ বলেন, প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর পানির স্রোতে গাবতলী খালের বিভিন্ন এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। গত ৩ মাসে তেগাছিয়া বাজারের প্রায় দেড়শ ফুট ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। এতে ওই বাজারের ১৫টি দোকান ভেঙে গেছে। বর্তমানে বাজারটি ভাঙনের মুখে। কিছুদিন আগে একটি পুলিশ ফাঁড়ি তলিয়ে গেছে খালে।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, নদীর জোয়ারে তেগাছিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ঘর ভেঙে যাওয়ায় আমরা পুলিশ ফাঁড়ির আসবাবপত্র আপাতত অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রেখেছি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, স্পিডবোট আর কার্গো জাহাজের ভিড়ে এককালের দাপুটে বৈঠার নৌকা এখন স্মৃতির পাতায়। ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলো কাঠের নৌকার চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কম সময়ে বেশি পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করতে পারা এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এলাকাবাসী বলছেন, আধুনিক জীবনযাত্রার দ্রুতগতির সঙ্গে তাল মেলাতে কাঠের নৌকা তাই পিছিয়ে পড়েছে। একটি কাঠের নৌকা তৈরি করা যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনই এর রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়বহুল। কাঠ সংগ্রহ, নকশা তৈরি এবং নিয়মিত মেরামত বাবদ খরচ অনেক বেশি। অন্যদিকে, ফাইবারগ্লাস বা লোহার তৈরি নৌযানগুলো তুলনামূলকভাবে কম রক্ষণাবেক্ষণ চায়।
তারা বলেন, একসময় নদী ছিল মানুষের জীবনরেখা। নদী ছিল পথ, নৌকা ছিল বাহন, আর মাঝি ছিল সাহসী পথপ্রদর্শক। সেতু-সড়কহীন সেই সময়ে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন ছিল যেমন ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙ্গি, ছৈওয়ালা, পাতাম, বাচারি, রপ্তানি, বউপলানোসহ ইত্যাদি নামের বাহারি সব নৌকা। নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশে নৌকায় ইঞ্জিন লাগানো শুরু হয়। তখন থেকে নৌকা একটি যান্ত্রিক বাহনে পরিণত হয়। এ যান্ত্রিক নৌকাগুলো শ্যালো নৌকা নামেও পরিচিত।
ঘাটের মাঝি হেলু মিয়া বলেন, ‘আমাগো জীবন আর চলে না। ইঞ্জিন পাইয়া বৈডার নাওয়ে মানুষ ওঠে না। আয় রোগারও নাই। চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না। ইঞ্জিনের নাও কিনতে অনেক টেহা লাগে, হেডাও তো নাই। না খাইয়া মরার বাও অইছে আমগো।,
একটা সময় নদীমাতৃক বাংলাদেশে যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম ছিল কাঠের নৌকা। ঢেউয়ের তালে দুলতে দুলতে ভাটিয়ালি সুরে মাঝিদের বৈঠা বাওয়া, দূর-দূরান্তের হাটে পণ্য পরিবহন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য- এ সবই ছিল আমাদের গ্রামবাংলার চিরচেনা দৃশ্য। খালে-বিলে বালু ফেলে ভরাট করে ফেলছে, নৌকা চলবই কেমনে মুড়াপাড়া ঘাটে কথাগুলো বলেন মাঝি কাইয়ুম মিয়া।
আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে কাঠের নৌকা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কাঠের নৌকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি আর গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাঝির ভাটিয়ালি গান, সারি গান, বা পালতোলা নৌকায় মেলা দেখতে যাওয়ার আনন্দ- এ সবই যেন আজ ধূসর স্মৃতি। এই শিল্পের বিলুপ্তি কেবল একটি জলযানের বিলুপ্তি নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের বিলুপ্তি।
ঘাটের মাঝি নিতাই বলেন, ‘সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী না হয়, তবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কাঠের নৌকা কেবল জাদুঘরের প্রদর্শনীতে বা বইয়ের পাতায় স্থান পাবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়তো কেবল ছবিতেই দেখবে, একসময় এই বাংলার বুকে ঢেউ তুলে দাপিয়ে বেড়াত কাঠের নৌকা। এই নীরব বিদায় কি রোধ করা সম্ভব নয়?’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তনের ছোঁয়ায় আধুনিক যুগে কাঠের নৌকা বৈঠা হারিয়ে যাচ্ছে। কাঠের তৈরি নৌকা বৈঠা পরিবেশবান্ধব। চাঁদনী রাতে নদীতে নৌকা নিয়ে ঘোরার মজাই আলাদা। ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সময় বাঁচে, বিকট শব্দে পরিবেশ দূষণ হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন ।
জানাগেছে, পূজা মন্ডপ গুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মন্ডপগুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন পুলিশ । এছাড়াও প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে কাজ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। একইসাথে প্রতিদিন একজন করে সরকারি কর্মকর্তা এসব মন্ডপগুলো মনিটরিং করার কথা রয়েছে।
এবছর ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ৬৫ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। সাচ্ছন্দ্যে পূজা পালনের জন্য পুলিশ মন্ডপগুলোকে সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরে ভাগ করে নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রেখেছেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম আছে তারাও নিয়মিত তদারকি করবেন। একইসাথে প্রতিটি মন্ডপে ৬ জন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
শ্রী অভিলাস চন্দ্র পাল বলেন,এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রসাশন আমাদের মুহুর্মুহু খবর নিচ্ছেন। অতীতের তুলনায় এবছর প্রশাসন সর্বোচ্চ তদারকি করছেন।
বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জিব জানান, বরবরের চেয়ে এবার আমাদের বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ তারিখ থেকে পূজার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। পূজার ৪ দিন আগে থেকেই এবার আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের একটি টিম ৩ ঘন্টা পরপর মন্ডপগুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রশাসনের এমন নিরাপত্তা কার্যক্রমে আমরা তাদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন,দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকেও রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত আমাদের এই তদারকি অব্যাহত থাকবে। কেউ যদি অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করে, তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কাজেই কোন প্রকার হুমকি নেই। এসময় তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের ব্যাপারেও আশ্বস্ত করছেন।
“ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ডে, ২০২৫” উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ল' সোসাইটি (BMLS) “আওয়ার ওশান, আওয়ার অবলিগেশন, আওয়ার অপরচুনিটি” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ৩টায় সিআইআরডিএপি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি এ.এফ.এম. আব্দুর রহমান (অব.), বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগ) সাবেক বিচারপতি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আখতার হোসেন, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি, পিএইচডি, উপাচার্য, বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমোডর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ (অব.), মহাপরিচালক, BIMRAD এবং মি. এস. এম. মইনুল ইসলাম, কান্ট্রি ম্যানেজার, Tyser Group Services Ltd., লন্ডন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মি. মোহিউদ্দিন আব্দুল কাদির, সভাপতি, BMLS ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; মি. মোহাম্মদ আব্দুল হাই, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত, থাইল্যান্ড; এবং ড. মীর তারেক আলী, অধ্যাপক, NAME, বুয়েট। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট শ্বেতা মিশ্র, প্রধান, MCLaw Services Ltd. এবং কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম (অব.), সাবেক মহাপরিচালক, নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও প্রজেক্ট লিড, MACN
সেমিনারে বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, জাহাজ মালিক, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সামুদ্রিক বীমা বিশেষজ্ঞ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, কার্গো স্টেকহোল্ডারসহ সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসব সংস্থার মধ্যে ছিল নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও রিভার পুলিশ।
উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি দেশের মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি, এআই, রোবটিক্স, অটোমেশন, চ্যাটজিপিটি প্রভৃতির ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এলক্ষ্যে তিনি মেরিটাইম সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরী, মেরিটাইম পেশাজীবিদের উক্ত প্রযুক্তিসমূহে দক্ষতা উন্নয়ন এবং এই সেক্টরের উন্নয়নে একাডেমিশিয়ান, শিল্প প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ সকল মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের একযোগে কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ
করেন।
আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় সামুদ্রিক আইন ও টেকসই মহাসাগর শাসনব্যবস্থার ভূমিকার ওপর। অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহাসাগরকে সুরক্ষিত রাখা সকলের যৌথ দায়িত্ব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন মোট ৩১ কি. মি. দৈর্ঘ্যের ৩৩টি রোড মিডিয়ানে বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের উদ্বোধন করলেন ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
জিরো সয়েল কার্যক্রমের আওতায় ২টি পর্যায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি মিডিয়ানে এবং বন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৫টি মিডিয়ানে শোভাবর্ধক ফুলের গাছ ও ঘাস রোপণের মাধ্যমে সবুজায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২টি পর্যায়ে মোট ১০,৬৪৫টি শোভাবর্ধন ফুলের চারা হিসেবে রাধাচূড়া, বাগানবিলাস, টগর, শিউলি, করবী, চেরি, বকুল, সোনালু, টিকুমা, জারুল, মুসেন্ডা এবং রোড মিডিয়ানের দুই পাশে হেজ বা বর্ডার হিসেবে থাকবে মোট ৮১,১০০টি মিনি টগর, রং চিতা, মিনি রঙ্গন রোপণ করা হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ মিডিয়ান জুড়ে সবুজায়নের জন্য থাকবে বার্মুডা ঘাস, লন ঘাস, আইভি লতা এবং অডেলিয়া।
১ম পর্যায়ে বাস্তবায়নাধীন ১৩টি মিডিয়ানের মধ্যে মিরপুর রোড, আব্দুল গনি রোড, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি, সিটি কলেজ হয়ে সীমান্ত স্কয়ার ও শহিদ ফারহান ফাইয়াজ সড়কের মিডিয়ান অংশে বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন ও পরিদর্শন করেন ডিএসসিসি প্রশাসক। এ সময় প্রশাসক বলেন,
"নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ডিএসসিসির আওতাধীন সড়ক মিডিয়ানে বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়ন করা হচ্ছে।" মাননীয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা ও মাননীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টার সার্বিক নির্দেশনায় ডিএসসিসি নিজে ও বন অধিদপ্তরের সাথে যৌথভাবে এ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহীতে ট্রাফিক মামলার জরিমানা আদায় আরও সহজ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এবং কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেল ৪টায় রাজশাহীর গ্র্যান্ড রিভারভিউ চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সম্মেলন কক্ষে এ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি বিনিময় করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, পিপিএম (বার), পিএইচডি।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক মামলার জরিমানা আদায়ের কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “ট্রাফিক মামলার জরিমানার অর্থ প্রদানে গ্রাহক হয়রানি কমানো, ভোগান্তি লাঘব এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে নগদ অর্থের পাশাপাশি কমিউনিটি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং বিকাশের মাধ্যমে জরিমানা প্রদান করা যাবে। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও গতিশীল হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর), অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, পিপিএম; উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো: নূর আলম সিদ্দিকীসহ আরএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব করপোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মো. আরিফুল ইসলাম, হেড অব কার্ড জনাব জাহির আহমেদ, হেড অব এডিসি ও হেড অব এমডি'স কো-অর্ডিনেশন টিমের প্রধান মো: মামুন উর রহমানসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১১টায় ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, রাজশাহীতে "ই-ট্রাফিক পরিচালনা ও জরিমানা আদায়" কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে আরএমপি ও জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্টদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ফেনীর পরশুরামে দুই কন্যা সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা দাবি করে ভাসুরের ছেলে জিহাদের (২২) বিরুদ্ধে পরশুরাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি উপজেলার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের ঘৃণা গাজী মজুমদার বাড়িতে ঘটেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী নারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়, মৃত অশ্রু মজুমদারের ছেলে জিহাদ তার চাচা দুবাই প্রবাসে থাকায় ফাঁকা সুযোগে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে জিম্মি করে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীর দুই কন্যা সন্তানকে হত্যার হুমকি দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, স্বামী এক বছর ধরে প্রবাসে থাকায় দুই সন্তান নিয়ে ওই নারী বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে জিহাদ আমাকে একাধিকবার জিম্মি করে ধর্ষণ করেছে। দুই মেয়েকে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছে। এখন আমি দুই সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম জানান, ভুক্তভোগী নারী জিম্মি করে ধর্ষণের অভিযোগ এনে জিহাদ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, ভুক্তভোগী নারী নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা দাবি করেছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নড়াইলের খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে অবাধে শামুক-ঝিনুক আহরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন জেলার চিংড়ি ঘেরগুলোতে এসব শামুক-ঝিনুক সরবরাহ করা হয়। নড়াইল জেলার প্রায় ৪০টি বিল ও জলাশয় থেকে প্রতিদিন শামুক আহরণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার নাকশি, আউড়িয়া, বাড়িরডাঙ্গা, সীতারামপুর, তুলারামপুর, মুলিয়া,বামনহাট, মাইজপাড়া, শাহাবাদ, বরাশুলা, নলামারা, কাড়ারবিল, ফেদি, রতডাঙ্গা, কমলাপুর, কালিরডোব, হাড়িভাঙ্গা গোবরা, মির্জাপুর, আগদিয়া, বাসগ্রাম।
লোহাগড়া উপজেলার ঝুকটিয়া, গিলেতলা, এড়েন্দা, ব্রম্মণডাঙ্গা, নলদী, মিঠাপুর, লাহুড়িয়, কালনা, ইতনা, বাতাসি, দিঘলিয়া, কুমড়ি, তালবাড়িয়া।
কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি, ইছামতি, বেন্দারচর, হামিদপুর, কুলশুর, চাদেরচর, কলাবাড়িয়া, বিভিন্ন বিল ও জলাশয় থেকে স্থানীয় দরিদ্র্য মানুষরা ডিঙিনৌকা ও তালের ডোঙা নিয়ে শামুক আহরণ করে নির্দ্দিষ্ট স্থানে জমা করেন। পরে সেখানে বসে শামুকগুলোর খোল থেকে মাংশ ও ঘিলু বের করে একটি পাত্রে রাখেন। ব্যবসায়ীরা এসব শামুক ২৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান।
লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের ব্রাম্মণডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার বিশ্বাসের স্ত্রী রমলা বালা বলেন, ‘গ্রামের মানসির (মানুষ) দেহাদেহি আমিও তালের ডোঙা নিয়ে ইছামতির বিলি শামুক কুড়োতি যাই। বেলা মাথার পর উঠলি শামুক নিয়ে বাড়ী ফিরে আসি। বাড়ী আসে সেগুলোর খোল থেকে মাংশ ও ঘিলু বের করি। পরে সেগুলো ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দি। তিনি বলেন, দিন গিলি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পাই। তাই দিয়ে সংসার চালাই।’
কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের খুশি রানী মালো বলেন, ‘পূব আকাশে ভোরের আলো ফুটার আগেই তালের ডোঙ্গা নিয়ে ঘরেরতে বার হই। বেলা মাথার উপর গিলি বিলিরতে শামুক-ঝিনুক নিয়ে ঘরে ফিরি। পরে সেগুলোর ভিতরেরতে ঘিলু আর মাংশু বার করে ব্যবসায়ীগে কাছে বিক্রি করি। তিনি বলেন, শামুক আর ঝিনুকের খুসা অন্য মানুষগে কাছে বেঁচে দেই। সেখানেরতে আমরা তিন-চারশো টাকার মত পাই। শুনিছি তারা ওই গুলো পুরায়ে চুন বানায়।’
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বরুন মজুমদার বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ের শামুক-ঝিনুকগুলো মিষ্টি পানিতে ভাসমান রসালো জলজ উদ্ভিদ খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। শামুক-ঝিনুকের বালুচর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া শুকনো মওসুমে শামুকের খোলস জমির আদ্রতা কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। অবিলম্বে শামুক-ঝিনুক আহরণ বন্ধ করা প্রয়োজন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুল আলম বলেন, জলাভূমির জীববৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তর জলাশয় থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণ নিষিদ্ধ করেছে। এর পরও এক শ্রেণির ঘেরমালিক ও ব্যবসায়ীরা শামুক-ঝিনুক নিধন করে চলেছেন। তিনি দাবি করেন, চিংড়ির জন্য শামুক আহরণের ব্যাপারে ঘেরমালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।