কবি রজনীকান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।’ স্থপতি বাবুই পাখিটি জানে, নিজের যতই কষ্ট হোক, তালগাছের পাতায় শ্রমে-আনন্দে তৈরি নিজের ঘরেই সুখ।
বর্তমানে তালগাছ অনেকটা কমে গেলেও গ্রাম থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি। এখনো গ্রামের কোনো পুকুর বা দীঘিরপাড়ে, পথের পাশে দু-একটা তালগাছ দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক বছর ধরে স্থপতি বাবুই পাখির আবাসস্থল হয়ে আছে তালগাছ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে এ রকম একটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা গড়ে উঠেছে, যা আলাদাভাবে অনেকের নজর কাড়ছে।
সম্প্রতি গয়ঘর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। গাছের বিভিন্ন পাতায় বাসা বুনেছে স্থপতি পাখি বাবুই। এক দুটি নয়, বাসা হবে প্রায় শখানেক। কোনো বাসা বোনার কাজ শেষ, কোনোটিতে চলছে বুনন। তখন বিকেল। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছে, মেঘলা আকাশ। একটু পর সন্ধ্যা হবে। পাখিদের ফেরার সময় হয়েছে।
এ সময় দেখা যায়, কোনো বাবুই বাসার ওপরে বসছে, কেউ বাসার ভেতরে ঢুকেছে। কেউ উড়ে যাচ্ছে। কোনো বাবুই পাতার ওপর বসে চারদিকটা দেখে নিচ্ছে। কেউ তালগাছ ছেড়ে আশপাশের গাছে গিয়ে বসছে, আবার ফিরে আসছে। পাখিদের এমন চঞ্চলতার দৃশ্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ।
বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসা বোনার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতিও খুব সুন্দর। নিজের ঘর সাজাতে তাদের জুড়ি নেই। গ্রীষ্মকাল হচ্ছে বাবুই পাখির প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ বাবুই তাল, খেজুর, ধান ও ঘাসপাতা থেকে বাসা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। সুতার মতো দু-তিন ফুট লম্বা পাতার চিকন আঁশ ঠোঁটে চেপে নিয়ে আসে। পছন্দের গাছের ডালে সেটা পেঁচিয়ে গিঁট দিয়ে শুরু করে বাসা বোনা। একটি বাসা তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহখানেক। স্ত্রী বাবুই গড়ে তিনটি ডিম পেড়ে থাকে। ডিম থেকে ছানা ফুটতে ১০ থেকে ১৩ দিন সময় লাগে। ছানারা ১৫ থেকে ১৯ দিনে উড়তে শেখে। বাবুই পাখির আয়ুষ্কাল প্রায় চার বছর।
কথিত আছে- বাবুই পাখি রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় গুঁজে রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়।
গয়ঘর গ্রামের মো. আমির মিয়া বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোতে অনেক বাবুই পাখির বাসা থাকত। কিন্তু এখন তা আর দেখা যায় না। যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙে।’
স্থানীয় পরিবেশকর্মী সোনিয়া মান্নান বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অসংখ্য প্রজাতির পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে। স্থপতি বাবুই পাখিও এখন তেমন একটা দেখা যায় না। তা ছাড়া আবাসন সংকটও একটা বড় কারণ। পরিবেশ বিপর্যয় ও বিলুপ্তির হাত থেকে বাবুই পাখিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।
জেলার হাজী ছালামত স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস বলেন, বাবুই পাখির খাবার ও বাসস্থানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তারা ধান, কীটপতঙ্গ, ঘাস, পাতা, ফুলের মধু প্রভৃতি খেয়ে থাকে। সুতরাং কীটনাশক ব্যবহার, নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজাড়ের বিষয়ে সচেতনতা দরকার। তালগাছ ছাড়াও নারিকেল, সুপারি, খেজুর প্রভৃতি গাছে বাবুই বাসা বানায়। এসব দিন দিন কমছে। এগুলো রক্ষায় নতুন করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বুননশিল্পী বাবুই পাখি ও বাসার সন্ধানে পাখিপ্রেমীরা ছবি তুলতে, কিচিরমিচির শব্দ শোনার জন্য আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। এখন আর তেমন একটা বাবুই পাখি চোখে পড়ে না। পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, কোনো পতিত উঁচু ভিটেমাটিতে কিংবা বাড়ির সীমানায় শোভাবর্ধন তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। তা দেখে পাখিপ্রেমীরা মুগ্ধ হতেন। এখন সেই তালগাছও প্রায় বিপন্ন হতে চলছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
হেমন্তের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। শীতের হালকা স্পর্শে দিনের শুরুতেই চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের খিতাপচর এলাকায় ঝকঝকে সবুজ লাউয়ে ভরে উঠেছে কৃষক মো. সাজ্জাদ হোসেনের খেত। মাচার ফাঁক গলে আসা রোদে ঝিলমিল করছে ঝুলন্ত লাউগুলো।
উঠে যাওয়া আমন ধানের জমিতে এখন বোয়ালখালীর গ্রামজুড়ে শিম, বরবটি, মরিচ, বেগুন থেকে শুরু করে লাউ পর্যন্ত বিভিন্ন সবজির আবাদ চলছে। তবে সাজ্জাদ আগাম লাউ চাষ করে পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা।
৪০ শতক জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের লাউ লাগিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে খেত পরিচর্যা- মরা পাতা পরিষ্কার, নিড়ানি, রোগবালাই দেখা- এসব নিয়েই তার দৈনন্দিন কাজ। সপ্তাহে তিন দিন তিনি লাউ সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করেন। আকারভেদে প্রতিটি লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাজ্জাদ দৈনিক বাংলাকে জানান, এ মৌসুমে লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। গত এক মাসে লাউ বিক্রি করে পেয়েছেন ২৪ হাজার টাকা। গাছের অবস্থা ভালো থাকলে পরবর্তী দুই মাসেও লাউ বিক্রি করা যাবে বলে আশা তার। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকার মতো আয় হতে পারে বলে তিনি জানান।
‘কম খরচে দ্রুত ফলন পাওয়া যায় বলে এবার লাউ চাষ করেছি,’ বলেন সাজ্জাদ। তিনি জানান, আশ্বিন মাসে বীজ থেকে চারা তৈরি করে লাগানোর প্রায় ৬০ দিনের মধ্যেই ফলন পেতে শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উচ্চফলনশীল জাতের লাউ সারা বছরই চাষযোগ্য এবং বীজ বপনের ৪০–৪৫ দিনের মধ্যে লাউ তোলা যায়। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ জাতের ফলন আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষিবিদ কল্পনা রহমান বলেন, ‘বাজারে এখন লাউয়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষকরাও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন লাউ উৎপাদন সম্ভব।’
সাজ্জাদের হিসাবে, তার খেতের ২৪০টি মাদায় লাউ লাগানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১,২০০টি লাউ বিক্রি করেছেন। আরও ৩০০টি লাউ চারা রয়েছে এবং প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০টি লাউ পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছেন তিনি।
আগাম চাষ, কম খরচ এবং দ্রুত লাভজনক হওয়ায় এলাকায় লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।
বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে প্রতি বছর সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। অথচ সেই বেনাপোলের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এই এলাকায় হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা বেকার থাকায় তাদের পরিবার অভাবের মধ্যে রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বন্দরে এই উপজেলার ছেলে-মেয়েরা অগ্রাধীকার ভিত্তিতে চাকরি পাবে এনং বন্দরকে আধুনিকায়ন করে গড়ে তুলব।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার সময় বেনাপোল পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড (নামাজগ্রাম দুর্গাপুর) আয়োজিত ওই ওয়ার্ডের সভাপতি আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি উঠান বৈঠকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে বেনাপোলে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। সেই সাথে এই স্থল বন্দরকেও আধুনিকায়ন করা হবে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই আমি এমপি হলে প্রথমে এই জনপদ থেকে মাদক নির্মূল করা হবে।
এর আগে তিনি লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেন বেনাপোল-২নং ওয়ার্ড ও বেনাপোল বাজারে।
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
শার্শা উপজেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক তাজ উদ্দিনসহ তথ্য গবেষণাবিষয়ক আতাউর রহমান আতা বিএনপি নেতা মফিজর রহমান সজন, পৌর বিএনপিরসহ সভাপতি সাহাবুদ্দিন সহসভাপতি সাহাদুর রহমান খোকন, নাসিমুল গনি বল্টু আব্দার রহমান, ইদ্রিস মালেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম মেহেরুল্লাহ সংগঠন সম্পাদক আব্দুল আহাদ পৌর বিএনপির অর্থ সম্পাদক সামাদ আলি আলী শার্শা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান রিপন পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. সহিদুল ইসলাম শহীদ পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইসতিয়াক আহমদ শাওন পৌর যুবদল ছাত্রদল শ্রমিক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম জেলার উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বেসরকারি সংস্থা এফাদ মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। এফাদের নির্বাহী প্রধান সাইদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, পাঁচগাছী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার, এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম, সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান, কৃষি কর্মকর্তা নাহিদা আফরিন, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন মিয়া, সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সরকার প্রমুখ।
মাল্টেসার ইন্টারন্যাশনাল বিএমজেড-পিটির সহযোগিতায় বিএমজেড-পি আফাদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে শিক্ষক, কৃষক, কৃষাণি, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছিও ঘোগাদহ ইউনিয়নে রেজিলেন্স স্ট্রেংদেনিং অব ভার্নারেবল পপুলেশন ইন নর্দান ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড ইস্টার্ন বাংলাদেশ থ্রো এ নেটওয়ার্ক এপ্রোচ অব ফাইভ পার্টনার অর্গানাইজেসন, বিএম জেড পিটি প্রজেক্টটি ২০২২ সালের ১ নভেম্বর শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। প্রকল্পের মোটা সুবিধাভোগী ৯ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ১২ জন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ৪৬ জন, দলিত সদস্য ৩০ জন, ট্রান্সজেন্ডার ২২ জন, নারীপ্রধান পরিবার ২৭ জন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার ৩৪৩ জন, ৪৮০ জন প্রত্যক্ষ সদস্য এবং পরোক্ষ সদস্য ৮,৫৮৯ জন।
ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবি জানিয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে সৈয়দপুর, নীলফামারী, রংপুর বিভাগের সকল ট্রাভেল এজেন্সিদের এক ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তারা এই দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে মঙ্গলবার দুপুরে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জাকির হোসেন মেননের সভাপতিত্বে ও শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন এটিএবির সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন টিপু, আমিনুল ইসলাম রতন, মাহাতাব হোসেন, মেহেদী হাসান, দিদারুল হোসেন, আলমগীর হোসেন রিপন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের আইন এবং ২০২১ সালের সংশোধনী আইনের পরিবর্তন করে নতুন যে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রায় হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে মালিক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা পুরো খাত এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
বক্তারা আরও বলেন, নতুন অধ্যাদেশে যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তার অনেকগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিশেষ করে ধারা ৫-এ অন্য এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করলে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকে থাকতে পারবে না। দেশে যে কয়েক হাজার এজেন্সি আছে, তাদের অধিকাংশেরই এয়ারলাইন্স থেকে সরাসরি টিকিট ইস্যুর সক্ষমতা নেই। অনলাইন ও অফলাইনের জন্য যে ১০ লাখ টাকা জামানত রাখার কথা বলা হয়েছে, তা ছোট এজেন্সিগুলোর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অধ্যাদেশের ধারা ৯-এ পরিবারের বাইরে ব্যবসা হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা, এক ঠিকানায় রিক্রটিং এজেন্টের কার্যক্রম সীমিত করা এবং বিনা শুনানিতে লাইসেন্স স্থগিত করার মতো বিধানগুলো খাতটিকে অকার্যকর করে দেবে। দেশের প্রচলিত আইনেই একই ঠিকানায় একাধিক ব্যবসার লাইসেন্স বৈধ। বহু রিক্রুটিং ও হজ এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে টিকিট সেবা দেওয়ার জন্য একই অফিস থেকে ট্রাভেল ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০২১ সালের আইনে নির্ধারিত শাস্তি সংসদীয় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পাস হয়েছিল। সেটিকে হঠাৎ করে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ও বন্যায় রৌমারীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে সংকটে পড়েন এ অঞ্চলের মানুষ। সাম্প্রতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দুর্যোগকালীন সহায়তার পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে ৩৬০টি পরিবারের জীবনমান।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রৌমারী উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র্য পরিবারকে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমুখী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে সবজি বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ, ভেড়া বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফ্রেন্ডশিপ। বন্যার সময়েও সবজি উৎপাদন চালু রাখতে কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং জৈব সার ব্যবহারের প্রচার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে পরিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শও দিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মিয়ার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার শুধু আয়বৃদ্ধিমূলক কাজেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেও যুক্ত হয়েছেন।
মিয়ার চর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের সহায়তায় তিনি ৪ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছিলেন। বর্তমানে তার পাঁচটি ভেড়া হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার টাকা।
আরেক কৃষক গোলজার আলী বলেন, ‘আধুনিক সবজি চাষের প্রশিক্ষণ পেয়ে বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে এ বছর ২২ হাজার টাকা আয় করেছি। এতে সংসারের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পেরেছি।’
একই গ্রামের শেফালী বেগম জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ শত টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করছেন।
আছমা বেগম জানান, তিনি ২৫টি বস্তায় আদাচাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তা থেকে এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়ার আশা করছেন। গ্রামের আরও অনেকে বস্তায় আদা চাষ, সবজি উৎপাদন, জৈব সার তৈরি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
আবু হানিফ বলেন, ‘আমাদের সুশাসন বিষয়ক প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক, সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কে জেনেছি। এখন কোন আইনি সহায়তা লাগলে ফ্রেন্ডশিপ বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়।’
একই গ্রামের এছাহাক আলী ও বেলায়েত হোসেন জানান, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনতে হতো; এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করছেন। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কীট দমন করছেন এবং সরকারি সেবা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগের সক্ষমতাও বেড়েছে। ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ-এর সহায়তায় কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মোট ২৮টি চরে ৮৪০ জন সদস্যকে আয়বৃদ্ধি, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রেন্ডশিপ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সর্বাত্মকসহযোগিতা প্রদান করছে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, চরাঞ্চল ভেড়া পালনের জন্যঅত্যন্ত উপযোগী। এ বছর ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে ৩৬০ পরিবারকে ভেড়া ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভেড়াকে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে স্বল্প খরচে দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।
এ যেন ফিলিপাইনের কুখ্যাত দুর্নীতি জুটি ‘ফের্দিনান্দ মার্কোস-ইমেলদা মার্কোসের চট্টগ্রাম সংস্করণ! এখানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দের ভূমিকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)-র সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে স্ত্রী ও চসিক সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা। ‘দুর্নীতির মানিক জোড়া’ চসিকের সিভিল বিভাগকে করেছে অনিয়ম দুর্নীতির আতুড় ঘরে। অনিয়ম দুর্নীতি করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের গন্ডি পেড়িয়ে সম্পদের সাম্রাজ্য গড়েছেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়।
চসিক সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকলে আমার সিনিয়দের জানান। তারাই বক্তব্য প্রদান করবেন। দুর্নীতির প্রমাণ না দেখা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করব না।’ চসিক সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইলে একাধিবার কল ও এসএমএস দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর খালাতো ভাই ও চসিকের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের সুপারিশে দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে বিল্ডিং সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি জীবনের শুরু হয়। শুরুতে অস্থায়ী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি চসিকের সংস্থাপন শাখার এক অফিস আদেশে সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হন শাহীন। আদেশে শর্ত হিসেবে উল্লেখ ছিল- যোগদানের তারিখ থেকে এক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকতে হবে। এ সময় সন্তোষজনক কর্মসম্পাদনের পর স্থায়ী করা হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে দুই ধাপ টপকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু শিক্ষানবিশ নির্বাহী প্রকৌশলীর ৪ বছরের মধ্যেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে যান। ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময় শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড বিতর্কের জন্ম দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন চলাকালে ৩ ও ৪ আগস্ট শাহীনের নির্দেশে নগরের সড়কবাতি বন্ধ রাখা হয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তাকে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হয় বরিশাল সিটি করপোরেশনে। ওখানে দায়িত্ব পালনকালেই বড় পুরস্কার পান তিনি। শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর যখন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময়েই চসিক তাকে পদোন্নতি দেয়। পদোন্নতি পাওয়ার কয়েক মাস পর তিনি চসিকে যোগদান করেন। শাহীনের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে অহরহ।
এক সংখ্যালঘু সিনিয়র কর্মকর্তাকে ধর্মীয় আঘাত করে মন্তব্য করায় ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরে উচ্চ আদালতে রিট করে চাকরি ফিরে পান। শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী ফারজানা মুক্তাকে চসিকে অস্থায়ী সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন। চসিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সহায়তায় সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২০২৩ সালে ২৫০ কোটি টাকার ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নিমার্ণ’ প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় ফারজানা মুক্তাকে। এ দায়িত্ব দেওয়ার সময় ফারজানা মুক্তা ছিলেন অস্থায়ী সহকারী প্রকৌশলী। অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের পরিচালক হতে স্থায়ী কর্মকর্তা হওয়া বাধ্যতামূলক। একই সাথে মন্ত্রণালয়েরও অনুমতি প্রয়োজন হয়। মুক্তাকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সময় কোনো বিধিই অনুসরণ করা হয়নি। শাহীন একইভাবে মুক্তাকে চসিকের ১০টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দিয়ে বির্তকের জন্ম দেয়। বর্তমানে শাহীন সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছে। মুক্তা হচ্ছে সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী।
এ দম্পতির ‘মানিক জোড়’ নানা দুর্নীতি অনিয়মের আতুড় ঘরে পরিণত করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগকে। তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বটবৃক্ষ ছিলেন চসিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। অনিয়ম দুর্নীতির টাকায় তারা গড়েছে সম্পদের পাহাড়। নগরীর প্রাণকেন্দ্র পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৬নং রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে প্রকৌশলী দম্পতির রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। তারা চলাচল করেন কোটি টাকা দামের অভিজাত গাড়িতে। দুই ছেলেকে লেখাপড়া করার নগরীর ধনী সন্তানদের স্কুল হিসেবে খ্যাত এক ইংলিশ মিডিয়ামে। তাদের টিউশন ফি মাসে প্রায় লাখ টাকা। অথচ এ দম্পতি মিলে চসিক থেকে বেতন পান লাখ টাকার মতো। শাহীনের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায় দুর্নীতির টাকায় কিনেছেন শত বিঘা কৃষি ও অকৃষি জমি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বেনামি ফ্ল্যাট ও প্লট। শাহীন তার শালার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় করেছে কোটি কোটি টাকা পাচার। অস্ট্রেলিয়ায় করেছে বাড়ি ও গাড়ি।
গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরোনো বাজার, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত এক প্রাণচঞ্চল নিত্যপণ্যের কেন্দ্র। এই সাধারণ বাজার আজ বদলে গেছে নতুন এক কর্মজীবনের ঠিকানায়। এখানে মাছের ভিড় যেমন চোখে পড়ে, তেমনি দেখা যায় একদল ব্যস্ত মানুষের নতুন পেশার দাপট-মাছ কুটুনি বা মাছ কাটিয়া। সময়ের চাহিদায় দ্রুত বাড়ছে এই পেশার কদর, বাড়ছে মানুষের কর্মসংস্থান ও সচ্ছলতা।
সম্প্রতি সরেজমিনে বেলা ১১টার দিকে বাজারে গেলে দেখা যায়-ছুটির দিনে মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। বাজারের পূর্বদিকের দ্বিতীয় গলিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারিবদ্ধ মাছ কাটিয়াদের ব্যস্ততা। বড় বড় বটি হাতে তারা যেন সময়ের সঙ্গে লড়ছেন। ক্রেতারা মাছ কিনে এগোতেই ডাক পড়ে-‘ভাই, মাছ কাটবেন?’
পুরোনো বাজারে ইলিশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, বোয়াল- সব ধরনের দেশি মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ কিনে অধিকাংশ ক্রেতাই সরাসরি চলে যান কাটিয়াদের কাছে। কারণ ঘরে নিয়ে কাটার ঝামেলার চেয়ে সামান্য টাকায় বাজারেই মাছ কেটে নেওয়া তাদের কাছে অনেক সুবিধাজনক।
মাছ কাটিয়াদের ভাষ্য, একসময় বাজারে মাত্র দুই-তিনজন বটিওয়ালা ছিলেন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। তাদের অনেকেই পেশা বদলে যুক্ত হয়েছেন এই কাজে। কেউ ছিলেন মাছ ব্যবসায়ীর শ্রমিক, কেউ ছোট-খাটো মাছ বিক্রেতা। পুঁজি ও ক্ষতির ঝুঁকি ছাড়া এই পেশায় স্থায়ী আয়ের সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই বেছে নিয়েছেন মাছ কাটার কাজ।
এ বাজারের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কুটুনিদের একজন বালিয়া চন্দ্র দাস। আগে ছোট মাছ ব্যবসা করলেও এখন পুরোপুরি পেশা বদলেছেন।
রবীন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আগে ছোট মাছের ব্যবসা করতাম। এখন ঝুঁকি-লোকসান ছাড়াই মাছ কাটার কাজ করি। প্রতিদিন ৭-৮শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
২৪ বছর বয়সি নিমাই চন্দ্র দাস একসময় ছিলেন মাছ ব্যবসায়ীর শ্রমিক। মাত্র পাঁচ-ছয় মাস হলো জায়গা ভাড়া নিয়ে শুরু করেছেন নিজের মাছ কাটার দোকান।
নিমাই দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আগে লেবার হিসেবে সংসার টানাপড়েনে চলত। এখন নিজে কাজ করি, আয়ও ভালো। ক্রেতারাও এই পেশার উন্নতিতে সন্তুষ্ট।
সিরাজ সরদার বলেন, অল্প টাকায় বাজারেই মাছ কেটে দিচ্ছে- এটা আমাদের জন্য খুব সুবিধা হচ্ছে।
অপর ক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, বড় মাছ ঘরে কাটতে ঝামেলা। বাজারেই কেটে দেওয়া হলে সময়ও বাঁচে, পরিশ্রমও কম।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে- মাছ কুটুনিদের এ নতুন পেশা দেখতে সাধারণ হলেও বদলে দিচ্ছে বহু মানুষের জীবন। শুধু মাছ বিক্রির কেন্দ্র নয়, গাইবান্ধার পুরোনো বাজার এখন হয়ে উঠেছে স্থানীয় কর্মসংস্থানের নতুন ভরসাস্থল।
প্রখ্যাত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিমের জনপ্রিয় গানের কথা ‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে।’ ওই গানে হয়তো গাড়ি চলে না, চরণকে আক্ষরিক অর্থে বোঝানো হয়নি। তবে এ কথাগুলোর আক্ষরিক অর্থ এখন মিলে যায় ময়মনসিংহ নগরের সঙ্গে। এ নগরে প্রতিদিন বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে যানবাহন আর যানজট। সাম্প্রতিক সময়ে এ যানজট হয়ে ওঠেছে বাউলের গানের মতোই-‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে।’
প্রাচীন জেলা, বিভাগীয় নগর, শিক্ষানগরী, চিকিৎসার নগরী- এসব উপমাকে পেছনে ফেলে এখন যেন ময়মনসিংহ হয়ে ওঠেছে যানজটের নগরী। গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে ময়মনসিংহ নগরের প্রায় সবগুলো সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সড়কে যানজটের কবলে দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে ইজিবাইক আর রিকশাগুলো। এ যানজটে স্থবির এক নগরী।
যানজট নিয়ে ময়মনসিংহ ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ময়মনসিংহ সারা বিশ্বের মধ্যে নবম ধীরগতির শহর হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিকের এক গবেষণায় বিশ্বের ২০টি ধীরগতির শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় ময়মনসিংহ নবম স্থানে ছিল।
এরপরেও যানজট নিয়ন্ত্রণে আসছে না। উল্টো গত এক বছরে যেন আরও বেড়েছে যানজন।
গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট চোখে পড়ে। বর্তমানে একই সঙ্গে নগরের সব স্কুলে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। সঙ্গত কারণে মানুষের চলাচল ছিল বেশি। এমন ব্যস্ত সময়ে নগরজুড়ে তীব্র যানজট লেগেই আছে। গত রোববার দুপুরে নগরের বদরের মোড় থেকে কাচিঝুঁলি পর্যন্ত ইজিবাইকে যেতে যাত্রীদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিটের বেশি। অথচ এ দূরত্ব যানজট না থাকলে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই যাওয়া যায়। বদরের মোড় থেকে কাচিঝুঁলি পর্যন্ত যেতে যেতে কথা হয় ইজিবাইকচালক রনি মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান,‘মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে তিনি টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রী নেন। দূরত্ব আনুমানিক ৬ কিলোমিটার। স্বাভাবিকভাবে ৬ কিলোমিটার যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। তবে গত রোববার তীব্র যানজটের কারণে এ পথ যেতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা। রনি মিয়া জানান, যানজটে এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকার কারণে সারা দিনের রোজগার অনেক কমে যায়। এতে আর্থিক সংকটে ভুগতে হয়। দুপুরে নগরের নতুন বাজার, সাহেব আলী রোড ও গরু খোয়ার মোড়ে দেখা যায় তীব্র যানজটে অসংখ্য যানবাহন আটকে রয়েছে। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাচ্ছিল। তীব্র যানজটের কারণে গাড়ি দুটি অনেকক্ষণ আটকে থাকে।
ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নগরের গাঙ্গিনারপাড়, চরপাড়া, পাটগুদাম মোড়, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড় ও কাচিঝুঁলি এলাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানজটের কারণে নগরবাসী প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হয়।
নগরবাসীরা বলেন, নগরে সড়কের তুলনায় ইজিবাইক ও ব্যাটারিচাতি রিকশার সংখ্যা অনেকগুল বেশি থাকার কারণে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ফুটপাত দখল, নগরের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে এমন যানজট। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর যেন এ নগরে দ্রুত বেড়ে গেছে মানুষ।
জেলা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ নগরের ১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগে বর্তমানে কর্মরত আছে ১১০ জন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই ভাগে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে কারণে অনেক সময় সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশ সদস্য দেওয়া সম্ভব হয় না।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, যানজট বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন। বর্তমানে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা মিলিয়ে নগরে অন্তত ১৫ হাজার যানবাহন রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে ইজিবাইক ও মোটা চাকার রিকশাগুলোতে জোড় ও বিজোড় নম্বরে ভাগ করে একদিন পর পর চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাসের মো. জহির বলেন, স্কুলগুলোতে একযোগে পরীক্ষা চলার কারণে যানজট এখন বেশি। পরীক্ষা ছাড়াও অন্যান্য সময়েও ময়মনসিংহ নগরে যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনের তুলনায় সড়কের পরিমাণ কম, নগরের মার্কেট ও বহুতল ভবনের পার্কিং করার সুযোগ না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়মিতভাবে যানজট হচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন।
কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।
সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে উপজেলাজুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।
কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জে মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান তারা।
কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।
মাগুড়া এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, এবার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা থেকে ২৫-থেকে ২৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার করেন্ট পোকার কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
কৃষক আবু বক্কর বলেন, ‘প্রায় দেড় একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১২০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ- ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’
গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ বিঘার ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, চলতি মৌসুমে ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ৫২, ব্রিধান ১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের ধান ফলন হয়েছে। উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ে সময়োপযোগী কার্যকরী পরামর্শ নিয়মিত প্রদান করায় ধানের ফলন বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওনের (এনসিআর) নয়ডা শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে এক বাংলাদেশি তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শাহরিয়ার নামের ওই তরুণ ভারতে পড়তে গিয়েছিলেন।
উত্তরপ্রদেশের আওতাধীন গ্রেটার নয়ডার বেটা-২ এলাকা থেকে গত রোববার সন্ধ্যায় ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহরিয়ারের বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দেন। বাড়িওয়ালা পুলিশকে বলেন, এক দিনের বেশি সময় ধরে ওই তরুণকে দেখতে না পেয়ে তিনি খোঁজ নিতে যান। পরে ঘরের ভেতরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা লাশ দেখতে পান।
গ্রেটার নয়ডা-১ সার্কেল অফিসার হেমন্ত উপাধ্যায় জানান, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কোনো সুইসাইড নোট মেলেনি।
বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, শাহরিয়ার ওই বাসায় উঠেছিলেন রুপা নামের এক নারীর সঙ্গে। রুপা বিহারের বাসিন্দা। দুজনই নিজেদের বিবাহিত দাবি করে ৮ হাজার টাকা ভাড়ায় কক্ষটি নেন। তারা ১৭ নভেম্বর সেখানে উঠেছিলেন।
পুলিশ বলছে, রুপাকে সর্বশেষ ২১ নভেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
সার্কেল অফিসার উপাধ্যায় বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তদন্ত চলছে।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গোপনে সরানো হয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ এবং তার স্ত্রী তামান্না শারমীনকে। এর মধ্যে সাজ্জাদকে রাজশাহী এবং তামান্নাকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে তাদের সরানো হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে ১৫ মার্চ সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। বন্দি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে ডাবল মার্ডারসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ায় সাজ্জাদ হোসেন ও তার বাহিনীর। গত ১০ মে দিবাগত রাতে দিকে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে শারমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীতে চাষীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের হলরুমে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ মনিটরিং কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব ড. মো. মনজুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে জেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা এ.টি.এম. তৈবুর রহমান, অতিরিক্ত উপপরিচালক জাকির হোসেন, উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নুররেজা সুলতানাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন ও বন্যায় রৌমারীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসতবাড়ী ও ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভুমিহীন ও গৃহহীন হয়ে সংকটে পড়েন এ অঞ্চলের মানুষ। সাম্প্রতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার গুলোকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দুর্যোগকালীন সহায়তার পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে ৩৬০টি পরিবারের জীবনমান।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রৌমারী উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমুখী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে সবজি বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ, ভেড়া বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফ্রেন্ডশিপ। বন্যার সময়েও সবজি উৎপাদন চালু রাখতে কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং জৈব সার ব্যবহারের প্রচার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে পরিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শও দিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মিয়ার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার শুধু আয়বৃদ্ধিমূলক কাজেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেওযুক্ত হয়েছেন।
মিয়ার চর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের সহায়তায় তিনি ৪ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছিলেন। বর্তমানে তার পাঁচটি ভেড়া হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার টাকা।
আরেক কৃষক গোলজার আলী বলেন, “আধুনিক সবজি চাষের প্রশিক্ষণ পেয়ে বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে এ বছর ২২ হাজার টাকা আয় করেছি।এতে সংসারের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পেরেছি।”
একই গ্রামের শেফালী বেগম জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ শত টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করছেন।
আছমা বেগম জানান, তিনি ২৫টি বস্তায় আদাচাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তা থেকে এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়ার আশা করছেন।গ্রামের আরও অনেকে বস্তায় আদা চাষ, সবজি উৎপাদন, জৈব সার তৈরি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।
আবু হানিফ বলেন, “আমাদের সুশাসন বিষয়ক প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক, সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কে জেনেছি। এখন কোনো আইনি সহায়তা লাগলে ফ্রেন্ডশিপ বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়।”
একই গ্রামের এছাহাক আলী ও বেলায়েত হোসেন জানান, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনতে হতো; এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করছেন। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কীট দমন করছেন এবং সরকারি সেবা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগের সক্ষমতাও বেড়েছে।ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ-এর সহায়তায় কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মোট ২৮টি চরে ৮৪০ জন সদস্যকে আয়বৃদ্ধি, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “ফ্রেন্ডশিপ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সর্বাত্মকসহযোগিতা প্রদান করছে।
”উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, “চরাঞ্চল ভেড়া পালনের জন্যঅত্যন্ত উপযোগী। এ বছর ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে ৩৬০ পরিবারকে ভেড়া ও প্রশিক্ষণ দেওয়াহয়েছে। প্রতিটি ভেড়াকে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে স্বল্প খরচে দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।