খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৮১ জন ভারতীয় নাগরিককে ঠেলে দিয়েছে (পুশ-ইন) ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ( বিএসএফ)। বুধবার (৭ মে) জেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার মাটিরাঙ্গার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, পানছড়ি উপজেলার রুপসেন পাড়া সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন, তাইন্দংয়ের আচালং বিটিলা বিওপি সীমান্ত দিয়ে ২৩ জন, রামগড় সীমান্ত দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ১ জনসহ মোট ৮১ জন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করিয়েছে ভারতীয় বাহিনী।
তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। জানা যায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি সীমান্তে আসা ৩০ জনকে বুধবার রাত ৮টা নাগাদ পানছড়ির লোগাং বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মাটিরাঙ্গায় অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন বিওপিতে বিজিবি নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, পানছড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ ইনের ঘটনায় সীমান্তজুড়ে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িতে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছেন। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবিকে সর্তক পাহারায় রাখা হয়েছে। টহল জোরদারের পাশাপাশি বিজিবিকে সহায়তা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) ৬৬ জন ভারতীয় নাগরিকের অনুপ্রবেশের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা।
তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করা সবাইকে বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছে বিজিবি। মানবিক সহযোগিতা বিবেচনায় তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তাদের সব ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
বুধবার (৭ মে) ভোর রাতে ভারতীয় এ নাগরিকদের সীমান্ত পার করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে বাধ্য করে বিএসএফ। জানা গেছে, ভারতের গুজরাট থেকে প্রায় সাড়ে চার শত জনকে আটক করে দুটি বিমানে তাদের ত্রিপুরায় নিয়ে আসা হয়। পরে বিএসএফের তত্ত্বাবধায়নে গাড়িতে করে পুশ ইনের জন্য বিভিন্ন সীমান্তে জড়ো করা হয় তাদের।
অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
সিরাজগঞ্জের সদরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটের ঘটনায় মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি, মুল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ও মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পলি খাতুন।
ভুক্তভোগী পলি খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চর হরিপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী। বুধবার সদর উপজেলার এস এস রোডস্থ নিউজ হোম অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পলি খাতুন অভিযোগ করে বলেন,গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঘরের ভেতরে আমি একা ছিলাম। সেই সুযোগে একই গ্রামের জাহিদ, খোকন, নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাড়ির গেটের তালা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা আমাকে ধারালো ছুরি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তারা ঘরে থাকা ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৮০ হাজার টাকা, মোবাইলসহ আনুমানিক ১১ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার আগে দুর্বৃত্তরা হুমকি ধামকি দিয়ে যায়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত জাহিদ ও নাজমুলকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু মামলার মুল আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
পলি খাতুন আরো বলেন, আসামীরা এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে তারা প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ও ধামকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কোন সহযোগিতা করছে না।ফলে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। এ বিষয়ে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ নিয়ে সদর থানার ওসি মোখলেছূর রহমান বলেন, “ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও শনাক্ত করা গেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।”
একটি ছবিকে বুকে চেপে দীর্ঘ ১৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বৃদ্ধা মা শামসুন নাহার। প্রতিদিনই মনে পড়ে ছেলের শেষ মুহূর্তের কথা—ঢাকায় যাওয়ার আগে মায়ের হাত থেকে এক গ্লাস পানি আর এক খিলি পান খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নজরুল ইসলাম বাচা। এরপর থেকে আর ফেরেননি তিনি।
২০১০ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় সাদা পোশাকধারীরা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ এই বিএনপি নেতা—বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও করলডেঙ্গা ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
মা শামসুন নাহার কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “ছেলে আসবে, বুকের ভেতর ঠান্ডা হবে—এই আশাতেই দিন কাটাই। আমার মনে হয়, আমার ছেলে এখনো বেঁচে আছে।
স্ত্রী শামীম আরা সিদ্দিকিও এখনও আশায় বুক বাঁধেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী বেঁচে আছেন না মারা গেছেন—আজও জানি না। বর্তমান সরকার যদি সত্যিই মানবিক হয়, ড. ইউনুস স্যার যেন অন্তত আমাদের জানিয়ে দেন।”
পরিবার জানায়, দলীয় কাজে ঢাকা যাওয়ার সময় গাজীপুর চৌরাস্তায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টো বাচার খোঁজ দেওয়ার কথা বলে এক নারী পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বাচার পরিবার ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি’-তে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি—সব জায়গায় আবেদন জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ থেকে গুম হওয়া কিছু নেতাকর্মী ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাচার ছোট ভাই হামিদুল হক মন্নান আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু ভাই এখনও ফেরেননি।
গাজীপুর-৬ সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাসহ এলাকাবাসী। বুধবার সকাল দশটা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশন রোড এলাকায় ‘সর্বদলীয় নেতাকর্মীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
একই সময়ে টঙ্গী কলেজগেট, এশিয়া পাম্প, গাজীপুরা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরি করা হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন মহাসড়কে চলাচলকারি যাত্রীরা।’
বিক্ষোভকারীরা জানান, সাম্প্রতিক নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাস প্রস্তাবে গাজীপুর-৬ আসন বিলুপ্তির উদ্যোগে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই আসনটি বাদ দিলে গাজীপুর অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে বিক্ষোভকারীরা “গাজীপুর-৬ আসন চাই, এলাকার মর্যাদা রক্ষা চাই”—এই শ্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন, “গাজীপুর-৬ আসন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি আমাদের এলাকার সম্মান ও উন্নয়নের প্রতীক। এই আসনটি বাদ দিলে আমাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাবে।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ ও টায়ারে আগুন দেন টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি ও গাজীপুর ৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন।
অপরদিকে কলেজগেট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী ড. হাফিজুল রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক রাকিবুল উদ্দিন সরকার পাপ্পু , আরিফ হোসেন হাওলাদার, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহবায়ক বশির আহমেদ, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন বাট, টঙ্গী পূর্ব থানা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ ছমিলপাড়া এলাকায় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী ফকির শফি মণ্ডলের ৩য় খেলাফত দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনব্যাপী সাধুসঙ্গ ও গ্রামীণ মেলা।
সন্ধ্যায় ‘ভক্তি সংগীত ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সারারাত চলবে বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের গান, বাণী ও দর্শনের আসর। বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় একদিনের এ আয়োজন।
খেলাফত দিবসকে ঘিরে হোসেনাবাদ হিসনা নদীর তীরে অবস্থিত ফকির শফি মণ্ডলের ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় স্থানীয় কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, গ্রামীণ খেলনা ও নানা লোকজ পণ্যের পাশাপাশি নানা ধরনের খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। সাধুসঙ্গে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অসংখ্য বাউল, ফকির ও ভক্তরা আশ্রমে সমবেত হন। অনুষ্ঠানস্থলজুড়ে সৃষ্টি হয় এক আধ্যাত্মিক ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত ভক্ত সাব্বির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গুরুর প্রতিটি খেলাফত দিবসে আমি আসি। মূলত এখানে গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময়ের একটি আসর বসে। সবার সাথে দেখা হয়, ভালো লাগে।
বাইরে মেলার দোকানিরা বলেন, দুদিন আগেই দোকান বসিয়েছি। প্রতি বছর এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। ব্যবসায়ীরাও জানান, বেচাকেনা ভালো হচ্ছে এবং উৎসবের আমেজে তারা আনন্দিত।
এ বিষয়ে সাধুসঙ্গের আয়োজক কমিটির সদস্য ও ফকির শফি মণ্ডলের জামাতা মুকুল হোসেন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টাব্যাপী এই সাধুসঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন। অনেকে রাতেই পৌঁছাবেন। সন্ধ্যার ভক্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে, আর বুধবার দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হয়।
এদিকে, সাধুসঙ্গ ও ‘সুধাসিন্ধু ভাব আশ্রম’ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ মেলার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দৌলতপুর থানা পুলিশ।
দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, “মেলা এলাকা ও আশেপাশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসছেন, তাই যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়— সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, শফি মণ্ডল বাংলাদেশের খ্যাতনামা বাউল ও সুফি সংগীতশিল্পী। তিনি ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহাদ আলী মণ্ডল ছিলেন ইমাম। ছোটবেলা থেকেই সংগীতে আগ্রহী শফি মণ্ডল ১৯৭৯ সালে ভারতের সাধন মুখার্জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন এবং পরে ফকির সুলতান শাহের দীক্ষায় লালন সাঁইয়ের পথ অনুসরণ করেন।
১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে “লালনের দেশে” তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। বর্তমানে তিনি তরুণদের বাউল সংগীত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং লালন দর্শন প্রচারে নিবেদিত। ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি খিলাফত গ্রহণ করেন।
হঠাৎ খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার গরু খামারিরা। মাত্র এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খড় বিক্রি হতো ৮ থেকে ১০ টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চল এলাকার কৃষকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন, কারণ সম্প্রতি বন্যা ও নদীর ভাঙ্গনের কারণে ঘাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে খামারি ও কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে খড় ও অন্যান্য পশুখাদ্যের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট-বড় খামারি ও গরু পালন করা সাধারণ মানুষ। ফলে খড়ের চাহিদা বাড়ায় ধানের থেকেও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে খড়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার হাবিবুর রহমান জানান, সর্বশেষ জরিপে সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে প্রায় ৯৯ হাজার ৮০০-এর মতো গরু রয়েছে। বর্তমানে আগের থেকে বেশি গরু পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো গরু বিভিন্ন চরাঞ্চলে লালন-পালন করা হয়।
গরু পালনকারী ও খামরিরা জানান, প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। খড়ই হলো- সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও অপরিহার্য খাদ্য, বিশেষত দুগ্ধ গাভীর জন্য, কারণ এটি দুধ উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বর্তমানে প্রতি কেজি খড় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক মন (খড়ের বোঝার আকার অনুযায়ী) ভালো মানের খড় কিনতে গেলে ১,১০০-১,২০০ টাকা লাগে। যা বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দামের সমান। আবার প্রতিটি খড়ের আটি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। যেগুলো আগে ছিল ২-৩ টাকা। নতুন খড় বাজারে না আসা পর্যন্ত হয়তো দাম এমনি থাকবে। খড়ের পাশাপাশি খৈল ও ভুষির দামও বেড়েছে, যা আমাদের সীমিত আয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় গরু বিক্রি করে খড় কিনতে হচ্ছে আমাদের। অনেকে আবার খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
পোগলদিঘা ইউনিয়নের চরগাছ বয়ড়া গ্রামের গরু পালনকারী শাহ জালাল পরান বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়া খড়ের পাশাপাশি ভুশি, চালের খুদ, খৈলসহ অন্য গো খাদ্য দিতে হয়। ঘাস চাষ করতেও জায়াগার প্রয়োজন হয়। এখন খড় ও সব পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে’
গরু খামারি নাসির উদ্দিন নাজমুল বলেন, ‘আমার ১০টি গরু ছিল, গরুর খাদ্য ও খড়ের দাম বাড়ার কারণে এবং খড়ের সংকটের কারণে গত সপ্তাহে একটা গরু বিক্রি করে দিয়েছি। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে বাজার থেকে অন্য গরুর জন্য খড় কিনেছি। এখনো খামারে ৯টা গরু আছে। নতুন ধান কাটার পর নতুন খড় পাওয়া গেলে তখন দাম হয়তো অনেকটাই কমে যাবে। বর্তমানে গরু পালন ও খাবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আশপাশের জমিতে ঘাসও নেই। বাধ্য হয়েই বেশি দামে খড় কিনতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘খড় এখন কৃষকের কাছে ধানের মতোই মূল্যবান হয়ে উঠেছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পুরো দমে ধান কাটার কাজ শুরু হলে খড়ের দামও কমে আসবে।’
গাইবান্ধায় তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ৩০ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে সাঁতার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে সনদ পেয়েছে। বুধবার দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
ক্ষুদে সাঁতারুদের হাতে এই সনদ তুলে দেন সাঁতার প্রশিক্ষণ-২০২৫ এর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী ও স্কাউটের দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সুধীরচন্দ্র বর্মণ। এর আগে টানা ১০ দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয় গত ২ নভেম্বর। প্রশিক্ষণে গাইবান্ধা কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুবিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে গাইবান্ধা কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন, মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন ও জুবিলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর অঞ্চলের স্কাউটের যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান, ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এহসানুল কবির, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ, জেলা স্কাউটের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সম্পাদক মালেক সরকার, সদর উপজেলা স্কাউট সম্পাদক রেজাউল করিম, কলেজিয়েট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফরিন খাতুন, সাঁতার প্রশিক্ষক নাছিমা বেগম ইতি, সহযোগী আশিকুর রহমান আশিক, সোহানুর রহমান সোহানসহ অভিভাবকরা।
কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বক্তারা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সাফল্যে অভিনন্দন জানান এবং সাঁতারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘সাঁতার শুধু একটি খেলা নয়, এটি জীবন বাঁচানোর দক্ষতা। ছোটবেলা থেকেই এই প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস জোগাবে।’
জেলা শহরের জেলা পরিষদের বড় আয়তনের পুকুরে টানা ৯ দিন এই সাঁতার প্রশিক্ষণ দেন জেলা স্কাউট সভপতি সাইফুল ইসলাম, নারী প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নাছিমা বেগম ইতি ও তাদেরকে সহযোগিতা করেছেন আশিক ও সোহান।
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।
টাঙ্গুয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংগঠনের নেতারা, হাওর পাড়ের গ্রামের লোকজন ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষ মতবিনিময় সভাটি করছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। সভায় উপস্থিত বক্তারা টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেছেন তা হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য এবং নৌকার মাঝি ও কমিউনিটি গার্ডদের হাওরে মাছ, পাখি মারাসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা বন্ধ করতে হবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে ছোট ছোট বিলগুলো মাছ আহরণের জন্য খাস কালেকশন বন্ধ করতে হবে। ইলেকট্রনিক শর্ট দিয়ে মাছ মারা বন্ধ করতে হবে। বিষ টোপ দিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। সংরক্ষিত এলাকায় হাস, গরু মহিষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে। পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গাছকাটা বন্ধ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বক্তারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের ৮২গ্রামের ৪১ টি সংগঠনে ১২৫০ জন সদস্য আছে টাঙ্গুয়ার হাওরের রক্ষনাবেক্ষণে কাজ করছে এবং এই হাওরের ৫২ টা বিলের মধ্যে ১২ অভয়ারণ্য।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মানিক, তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনু
তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন, ২ নং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ, টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ করির, এনজিও সংস্থা সিএনআরএস এর সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা সাইফুল চৌধুরীর প্রমুখ।
বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ ছায়ায় ঘেরা চা বাগানে বাঁশিতে সুর তোলেন কৃষ্ণ দাস। ৪৫ বছর বয়সী এ তরুণ একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। সুরের জাদুতে তাকে ঘিরে ভিড়। কারও প্রিয় গানের সুর তোলার আবদার। বাঁশির সুরেই জীবন চলে কৃষ্ণ দাসের। মন মাতানো শ্রুতিমধুর সুর-ছন্দে বাজানো বাঁশের বাঁশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্য যন্ত্র। যা রাজদরবার থেকে শুরু করে সর্বজনীন বিনোদনপ্রেমী বাঙালির সুস্থ বিনোদন ধারার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এ বাঁশি দিয়ে মরমি সুরের দোলায় গানের বাণীকে ফুটিয়ে তোলা যায়।
বাঁশিপ্রেমিক কৃষ্ণ দাস এর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রী গোবীন্ধপুর। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন কৃষ্ণ দাস। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি। ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা কৃষ্ণ দাসের।
উপজেলার মাধবপুর লেকের দেখা যায়, বাঁশি দিয়ে মুখে তুলছেন নানা সুর। বাঁশির সুরেলা সুর লেকে আসা পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলে। এ সময় সুরপাগল নানা বয়সি মানুষ হুমড়ি খেয়ে বাঁশির সুর শুনেন।
স্থানীয়রা জানান, শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়ে বাড়ি, লেকের পারে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান কৃষ্ণ দাস। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাতে চোখে পড়ে তাঁকে। গভীর রাতে যখন সে বাঁশি বাজায় তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে হৃদয় অন্যদের উদারহণ। তাকে নিয়ে গর্ব করাই যায়।’
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মহিমা পাল জানান, ‘অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটন এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শুনা যায় হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনার। শখের বসে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো, আর বর্তমানে সেই বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।’
এ বিষয়ে কৃষ্ণ দাস জানান, ‘আমার জন্ম ভারতের কলকাতায়। সেখানেই বাঁশি বাজানো শেখা। মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোটকালে বাংলাদেশে চলে আসি। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানে বসবাস করছি। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভালোই চললে এখন আর চলতে পারিনা। আগে বাশিঁর সুর শোনে মানুষ টাকা দিত, এখন সুর শুনলেও টাকা দেয়না। তারপরও বাঁশি বাজানো আমার বন্ধ হবে না। আত্মার সঙ্গে এই সুর মিশে গেছে, তবে এই বাঁশির সুরে এখন আর জীবন যেন চলছে না।’ তিনি বলেন, মানুষ বাশের বাঁশির সুর শুনতে চায়। তারা মন দিয়ে শোনে এটাই আমার তৃপ্তি। যাওয়ার বেলায় ১০-২০ টাকা দেয়,সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। এক সময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংঙ্কৃতির অনুসঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ। বংশীবাদক কৃষ্ণদাসকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।
নওগাঁর বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে উন্নত জাতের ফলদ, মসলা ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা। বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে অন্তত ২৭ জাতের বিভিন্ন চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। উন্নতমানের চারা সুলভ মূল্যে পাওয়া যাওয়ায় প্রতিদিনই ভিড় করছেন প্রান্তিক কৃষি উদ্যোক্তারা। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে রাজস্ব আয়। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত চারা পাচ্ছেন না। উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি চারার উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চল কৃষি উদ্ভাবনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ধান ও সবজির জন্য পরিচিত কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁ এখন আমের জেলা হিসেবেও সুপরিচিত। জেলার বদলগাছী উপজেলার জিধিরপুর গ্রামে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে চার একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার। শুরুতে উৎপাদন কম হলেও গুণগত মান ভালো থাকায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় কেন্দ্রটি। এখানে আম, লিচু, কদবেল, আঠাবিহীন কাঁঠাল, পেয়ারা, করমচাসহ অন্তত ২৭ জাতের চারা পাওয়া যায়। প্রতিটি চারার দাম ২ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে থাকায় উদ্যোক্তারা সহজেই মানসম্মত চারা সংগ্রহ করতে পারছেন।
হর্টিকালচার সেন্টারের চারাগুলো উন্নত জাতের হওয়ায় কৃষকরা পাচ্ছেন উচ্চ ফলন, ভালো পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধী গাছ। এতে উৎপাদন খরচ কমছে, ফলন বাড়ছে এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
জেলার মান্দা উপজেলার পাজরভাঙা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা অপূর্ব সাহা বলেন, বাড়ির পাশে ছোট জায়গায় ফলের বাগান করার ইচ্ছে থেকেই বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টার থেকে আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের ৮৫টি চারা কিনেছি। প্রতিটির দাম ৬০ টাকা, যা বাইরের নার্সারির তুলনায় ৪০-৫০ টাকা কম। দূরত্ব সত্ত্বেও উন্নতমানের চারা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।
উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আজমল হুদা জানান, চাহিদা বাড়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল ও শোভাবর্ধনকারী গাছের ওপর কাজ করা হচ্ছে। উন্নত মাতৃগাছ থেকে কাটিং ও কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়, যা গুণগত মান নিশ্চিত করে।
হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (এলআর) কৃষিবিদ মো. নাছরুল মিল্লাত বলেন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে পতিত ও অনাবাদী জমিকে ফলবাগানের আওতায় আনা হচ্ছে। উন্নত জাতের চারা সুলভ মূল্যে সরবরাহের ফলে উদ্যোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন। তবে জমির পরিমাণ কম হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। অন্তত ১০ একর জমি হলে উৎপাদন ও রাজস্ব উভয়ই আরও বৃদ্ধি পেত।”
হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যানুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক লাখ পিস চারা বিক্রির মাধ্যমে ৭ লাখ টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের বছরগুলোতে রাজস্ব আয় ছিল—
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯৯ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬২ টাকা।
এছাড়া চারা উৎপাদন ও পরিচর্যার কাজে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা মজুরিতে চারজন শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নাছরুল মিল্লাত আরও জানান, গত তিন বছরে জেলায় ২০টি আনারস, ৫০টি মসলা, ১০০ বস্তা আদা এবং আমসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আমবাগানে আনারস চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ঢাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেবেন না। নিজের মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করুন। কোন দুর্বৃত্তের হাতে চলে যাচ্ছে কি না তা খেয়াল রাখবেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অন্যের মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাড়া নিয়ে কোনো দুর্বৃত্ত যেন নাশকতা না করতে পারে, সেজন্য যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে জানাবেন।
শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ১-১১ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এছাড়া গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। এসব ঘটনায় গত দুই দিনে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দুটি দল ও তাদের অঙ্গ-সংগঠন অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে। ঢাকার বাইরে থেকে লোকজন ঢাকায় এসে টাকার বিনিময়ে মিছিল করে আবার ঢাকার বাইরে চলে যায়। এসব ঘটনায় অক্টোবর থেকে ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, হেলমেট ও মাস্ক পরে ভোর বেলায় কিংবা ব্যস্ত সময়ে ককটেল বিস্ফোরণ করা হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণ করানোর জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
আগামী ১৩ নভেম্বর ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো আশঙ্কা নেই ও চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঢাকাবাসী তৎপরতা রুখে দেবে। ওইদিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় মোতায়েন থাকবেন।
বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। সুরে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ ছায়ায় ঘেরা চা বাগানে বাঁশিতে সুর তোলেন কৃষ্ণ দাস। ৪৫ বছর বয়সী এ তরুণ একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। সুরের জাদুতে তাকে ঘিরে ভিড়। কারও প্রিয় গানের সুর তোলার আবদার। বাঁশির সুরেই জীবন চলে কৃষ্ণ দাসের। মন মাতানো শ্রুতিমধুর সুর-ছন্দে বাজানো বাঁশের বাঁশি প্রাচীন একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্য যন্ত্র। যা রাজদরবার থেকে শুরু করে সর্বজনীন বিনোদনপ্রেমী বাঙালির সুস্থ বিনোদন ধারার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। এ বাঁশি দিয়ে মরমি সুরের দোলায় গানের বাণীকে ফুটিয়ে তোলা যায়।
বাঁশিপ্রেমিক কৃষ্ণ দাস এর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রী গোবীন্ধপুর। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন কৃষ্ণ দাস। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি। ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা কৃষ্ণ দাসের।
উপজেলার মাধবপুর লেকের দেখা যায়, বাঁশি দিয়ে মুখে তুলছেন নানা সুর। বাঁশির সুরেলা সুর লেকে আসা পর্যটকদের বিমোহিত করে তুলে। এ সময় সুরপাগল নানা বয়সি মানুষ হুমড়ি খেয়ে বাঁশির সুর শুনেন।
স্থানীয়রা জানান, শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়ে বাড়ি, লেকের পারে বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান কৃষ্ণ দাস। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাতে চোখে পড়ে তাঁকে। গভীর রাতে যখন সে বাঁশি বাজায় তখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জীবন সংগ্রামে হৃদয় অন্যদের উদারহণ। তাকে নিয়ে গর্ব করাই যায়।’
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মহিমা পাল জানান, ‘অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পর্যটন এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় শুনা যায় হৃদয় কাঁপানো সুরের মূর্ছনার। শখের বসে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো, আর বর্তমানে সেই বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।’
এ বিষয়ে কৃষ্ণ দাস জানান, ‘আমার জন্ম ভারতের কলকাতায়। সেখানেই বাঁশি বাজানো শেখা। মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ছোটকালে বাংলাদেশে চলে আসি। বর্তমানে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানে বসবাস করছি। ছেলে ও মেয়ে নিয়ে ভালোই চললে এখন আর চলতে পারিনা। আগে বাশিঁর সুর শোনে মানুষ টাকা দিত, এখন সুর শুনলেও টাকা দেয়না। তারপরও বাঁশি বাজানো আমার বন্ধ হবে না। আত্মার সঙ্গে এই সুর মিশে গেছে, তবে এই বাঁশির সুরে এখন আর জীবন যেন চলছে না।’
তিনি বলেন, মানুষ বাশের বাঁশির সুর শুনতে চায়। তারা মন দিয়ে শোনে এটাই আমার তৃপ্তি। যাওয়ার বেলায় ১০-২০ টাকা দেয়,সেই টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘বাঁশির সুর উপমহাদেশের সংগীতে একটি অনন্য সংযোজন। এক সময়ের জনজীবনে বেশ চর্চা থাকলেও আধুনিক সভ্যতার যুগে বাঁশির সুর হারিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বাঙালি সংঙ্কৃতির অনুসঙ্গ সুরের মোহনা ছড়ানো এই বাঁশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ। বংশীবাদক কৃষ্ণদাসকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’
শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করা বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) ৩১টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বুধবার (১২ নভেম্বর) এনবিআর একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছে।
এনবিআর বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাবেক সংসদ সদস্যদের বিশেষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস নির্দেশনা চেয়েছিল।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৩১টি গাড়ির মোট প্রদেয় শুল্ক-করের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। উচ্চমূল্যের এসব গাড়ির এককপ্রতি প্রদেয় শুল্ক-করের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং এককপ্রতি প্রদেয় সর্বনিম্ন শুল্ক-করের পরিমাণ ৮ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা।
এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী, সমুদয় শুল্ক-কর পরিশোধপূর্বক আমদানি করা ৩১টি গাড়ি আমদানিকারকরা খালাস করেননি বিধায় কাস্টমস আইন, ২০২৩-এর ধারা ৯৪(৩) অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়। কোনো নিলামকারী গাড়িগুলোর যৌক্তিক মূল্য বিড না করায় গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি না করে জনস্বার্থে যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অতি মূল্যবান গাড়িগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের জন্য বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গাড়ির আমদানিকারক ভবিষ্যতে প্রযোজ্য সমুদয় শুল্ক ও কর পরিশোধ করে গাড়িগুলো আইনি পদ্ধতিতে খালাস করতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ এবং শুল্কায়ন সংক্রান্ত আইন, বিধি ও আদেশ মেনে খালাস করতে পারবেন।
যদি প্রযোজ্য শুল্ক-কর আদায়পূর্বক গাড়িগুলো ভবিষ্যতে আমদানিকারকের অনুকূলে খালাস করা হয়, তবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সেই গাড়িগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেবে।
অক্টোবর মাসে দেশে ৪৬৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬৯ জন। এ সময়ে আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৮০ জন। বুধবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্টোবরে রেলপথে ৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জন ও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় ৫২৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩১০ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত ও ১৩৭ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.২৪ শতাংশ, নিহতের ৩৭.৫২ শতাংশ ও আহতের ১০.৭০ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ১২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০টি, এতে ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৯ জন চালক, ১১৯ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৮ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৯৭ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ১ জন আইনজীবী, ২ জন সাংবাদিক, প্রকোশলী ৩ জন এবং ১৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র্যাব সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন প্রকোশলী, ১৩৩ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৫.৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.০৬ শতাংশ বাস, ১২.৮০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪.২৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৮.৪১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪.৭৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
মোট দুর্ঘটনার ৪৯.৮৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫.১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯.৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৪.৬৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৬৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষ ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবরে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪২.৪৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৭.২৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৬৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।