মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

চাল-তেলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সবজি ও মাছের বাজার চড়া

ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ১০ মে, ২০২৫ ১৩:০৩

সবজির পাশাপাশি রাজধানীর বাজারে বেড়েছে মাছ এবং মুরগির দামও। এছাড়া পেঁয়াজ এবং ডিমের দামও কিছুটা উর্ধ্বমুখী। তবে চাল ও ভোজ্যতেলসহ বেশকিছু পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, শসা, কাঁচা মরিচ, পটোল- সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। আগে যেসব সবজি ৬০-৭০ টাকায় মিলত, এখন সেগুলোর দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা দরে। এছাড়া পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, পটোল ৭০-৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মান ও বাজারভেদে কিছুটা দাম ওঠানামা করছে।

মুরগির বাজারেও দেখা দিয়েছে নতুন চাপ। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, কক ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধি, খামারে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পরিবহণ ব্যয় বাড়ায় এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই সুযোগে এক শ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে চলছে।

গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে। গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি। বাজার করতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মিরপুরে বাজার করতে আসা তানভীর বলেন, ‘সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। মুরগি কিনতে গেলেও একই অবস্থা।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারির ঘাটতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করা এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ধরনভেদে ৬৫ টাকা। তবে তুলনামূলক কিছুটা কম মানের পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। দেশি ছোট্ট রসুনের কেজি ১৪০ টাকা, আমদানি করা বড় রসুনের কেজি ২৪০ টাকা টাকা, আদার কেজি বাজার ও ধরনভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মিলছে। চিকন মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১২০ টাকা, আমদানি করা মুগডাল ১৪০ টাকা এবং দেশি মুগডাল ১৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।

তবে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারগুলোতে দেখা গেছে, চিকন চাল ৮০ থেকে ধরনভেদে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ বাজার ও ধরনভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে স্বর্ণার কেজি ৫৫ টাকা আর গুটিসহ অন্যান্য মোটা চাল সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই চাল এ দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে এবং লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাছের দাম দীর্ঘদিন ধরে চড়া অবস্থায় রয়েছে। বাজারে সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। ক্রেতাদের অভিযোগ, নজরদারি নেই বলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা চড়া যাচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।

রামপুরা-মালিবাগ এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা। বাজারে কিছু দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর দাম তুলনামূলক আরও বেশি। যেমন, বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।

এদিকে জাতীয় মাছ ইলিশের দাম সবসময়ই চড়া থাকে। আজকের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৪৫ টাকা, ডজন ১৩৫ টাকা। মিরপুর-৬ বাজারের ডিম একজন বিক্রেতা বলেন, ডিমের দাম কিছুটা বেশি; কেন বেশি জানি না! মোকামে বাড়তি দাম নিয়েছে, আমিও বেশি দামে বিক্রি করছি।


রৌমারীর চরাঞ্চলে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩৬০ পরিবার স্বাবলম্বী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন ও বন্যায় রৌমারীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে সংকটে পড়েন এ অঞ্চলের মানুষ। সাম্প্রতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দুর্যোগকালীন সহায়তার পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে ৩৬০টি পরিবারের জীবনমান।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রৌমারী উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র্য পরিবারকে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমুখী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে সবজি বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ, ভেড়া বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফ্রেন্ডশিপ। বন্যার সময়েও সবজি উৎপাদন চালু রাখতে কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং জৈব সার ব্যবহারের প্রচার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে পরিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শও দিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মিয়ার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার শুধু আয়বৃদ্ধিমূলক কাজেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেও যুক্ত হয়েছেন।

মিয়ার চর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের সহায়তায় তিনি ৪ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছিলেন। বর্তমানে তার পাঁচটি ভেড়া হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার টাকা।

আরেক কৃষক গোলজার আলী বলেন, ‘আধুনিক সবজি চাষের প্রশিক্ষণ পেয়ে বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে এ বছর ২২ হাজার টাকা আয় করেছি। এতে সংসারের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পেরেছি।’

একই গ্রামের শেফালী বেগম জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ শত টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করছেন।

আছমা বেগম জানান, তিনি ২৫টি বস্তায় আদাচাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তা থেকে এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়ার আশা করছেন। গ্রামের আরও অনেকে বস্তায় আদা চাষ, সবজি উৎপাদন, জৈব সার তৈরি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

আবু হানিফ বলেন, ‘আমাদের সুশাসন বিষয়ক প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক, সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কে জেনেছি। এখন কোন আইনি সহায়তা লাগলে ফ্রেন্ডশিপ বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়।’

একই গ্রামের এছাহাক আলী ও বেলায়েত হোসেন জানান, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনতে হতো; এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করছেন। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কীট দমন করছেন এবং সরকারি সেবা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগের সক্ষমতাও বেড়েছে। ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ-এর সহায়তায় কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মোট ২৮টি চরে ৮৪০ জন সদস্যকে আয়বৃদ্ধি, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রেন্ডশিপ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সর্বাত্মকসহযোগিতা প্রদান করছে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, চরাঞ্চল ভেড়া পালনের জন্যঅত্যন্ত উপযোগী। এ বছর ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে ৩৬০ পরিবারকে ভেড়া ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভেড়াকে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে স্বল্প খরচে দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।


চসিকে দম্পতির দুর্নীতির সন্ধান

*রয়েছে অভিজাত বাড়ি-গাড়ি *অস্ট্রেলিয়ায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জামালুদ্দিন হাওলাদার, চট্টগ্রাম

এ যেন ফিলিপাইনের কুখ্যাত দুর্নীতি জুটি ‘ফের্দিনান্দ মার্কোস-ইমেলদা মার্কোসের চট্টগ্রাম সংস্করণ! এখানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দের ভূমিকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)-র সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে স্ত্রী ও চসিক সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা। ‘দুর্নীতির মানিক জোড়া’ চসিকের সিভিল বিভাগকে করেছে অনিয়ম দুর্নীতির আতুড় ঘরে। অনিয়ম দুর্নীতি করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের গন্ডি পেড়িয়ে সম্পদের সাম্রাজ্য গড়েছেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়।

চসিক সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকলে আমার সিনিয়দের জানান। তারাই বক্তব্য প্রদান করবেন। দুর্নীতির প্রমাণ না দেখা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করব না।’ চসিক সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইলে একাধিবার কল ও এসএমএস দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর খালাতো ভাই ও চসিকের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের সুপারিশে দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে বিল্ডিং সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি জীবনের শুরু হয়। শুরুতে অস্থায়ী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি চসিকের সংস্থাপন শাখার এক অফিস আদেশে সহকারী প্রকৌশলী থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী হন শাহীন। আদেশে শর্ত হিসেবে উল্লেখ ছিল- যোগদানের তারিখ থেকে এক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকতে হবে। এ সময় সন্তোষজনক কর্মসম্পাদনের পর স্থায়ী করা হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে দুই ধাপ টপকে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু শিক্ষানবিশ নির্বাহী প্রকৌশলীর ৪ বছরের মধ্যেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়ে যান। ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময় শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর কর্মকাণ্ড বিতর্কের জন্ম দেয়।

অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন চলাকালে ৩ ও ৪ আগস্ট শাহীনের নির্দেশে নগরের সড়কবাতি বন্ধ রাখা হয়। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তাকে ‘শাস্তিমূলক বদলি’ করা হয় বরিশাল সিটি করপোরেশনে। ওখানে দায়িত্ব পালনকালেই বড় পুরস্কার পান তিনি। শাহীন উল ইসলাম চৌধুরীর যখন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময়েই চসিক তাকে পদোন্নতি দেয়। পদোন্নতি পাওয়ার কয়েক মাস পর তিনি চসিকে যোগদান করেন। শাহীনের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে অহরহ।

এক সংখ্যালঘু সিনিয়র কর্মকর্তাকে ধর্মীয় আঘাত করে মন্তব্য করায় ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। পরে উচ্চ আদালতে রিট করে চাকরি ফিরে পান। শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী ফারজানা মুক্তাকে চসিকে অস্থায়ী সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন। চসিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সহায়তায় সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২০২৩ সালে ২৫০ কোটি টাকার ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নিমার্ণ’ প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় ফারজানা মুক্তাকে। এ দায়িত্ব দেওয়ার সময় ফারজানা মুক্তা ছিলেন অস্থায়ী সহকারী প্রকৌশলী। অথচ সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের পরিচালক হতে স্থায়ী কর্মকর্তা হওয়া বাধ্যতামূলক। একই সাথে মন্ত্রণালয়েরও অনুমতি প্রয়োজন হয়। মুক্তাকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সময় কোনো বিধিই অনুসরণ করা হয়নি। শাহীন একইভাবে মুক্তাকে চসিকের ১০টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দিয়ে বির্তকের জন্ম দেয়। বর্তমানে শাহীন সিভিল ও মেকানিক্যাল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছে। মুক্তা হচ্ছে সিভিল বিভাগের অঞ্চল-৩ নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ দম্পতির ‘মানিক জোড়’ নানা দুর্নীতি অনিয়মের আতুড় ঘরে পরিণত করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগকে। তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বটবৃক্ষ ছিলেন চসিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। অনিয়ম দুর্নীতির টাকায় তারা গড়েছে সম্পদের পাহাড়। নগরীর প্রাণকেন্দ্র পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৬নং রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে প্রকৌশলী দম্পতির রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। তারা চলাচল করেন কোটি টাকা দামের অভিজাত গাড়িতে। দুই ছেলেকে লেখাপড়া করার নগরীর ধনী সন্তানদের স্কুল হিসেবে খ্যাত এক ইংলিশ মিডিয়ামে। তাদের টিউশন ফি মাসে প্রায় লাখ টাকা। অথচ এ দম্পতি মিলে চসিক থেকে বেতন পান লাখ টাকার মতো। শাহীনের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায় দুর্নীতির টাকায় কিনেছেন শত বিঘা কৃষি ও অকৃষি জমি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বেনামি ফ্ল্যাট ও প্লট। শাহীন তার শালার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় করেছে কোটি কোটি টাকা পাচার। অস্ট্রেলিয়ায় করেছে বাড়ি ও গাড়ি।


গাইবান্ধায় মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেকে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা

গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরোনো বাজার, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত এক প্রাণচঞ্চল নিত্যপণ্যের কেন্দ্র। এই সাধারণ বাজার আজ বদলে গেছে নতুন এক কর্মজীবনের ঠিকানায়। এখানে মাছের ভিড় যেমন চোখে পড়ে, তেমনি দেখা যায় একদল ব্যস্ত মানুষের নতুন পেশার দাপট-মাছ কুটুনি বা মাছ কাটিয়া। সময়ের চাহিদায় দ্রুত বাড়ছে এই পেশার কদর, বাড়ছে মানুষের কর্মসংস্থান ও সচ্ছলতা।

সম্প্রতি সরেজমিনে বেলা ১১টার দিকে বাজারে গেলে দেখা যায়-ছুটির দিনে মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। বাজারের পূর্বদিকের দ্বিতীয় গলিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারিবদ্ধ মাছ কাটিয়াদের ব্যস্ততা। বড় বড় বটি হাতে তারা যেন সময়ের সঙ্গে লড়ছেন। ক্রেতারা মাছ কিনে এগোতেই ডাক পড়ে-‘ভাই, মাছ কাটবেন?’

পুরোনো বাজারে ইলিশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, বোয়াল- সব ধরনের দেশি মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ কিনে অধিকাংশ ক্রেতাই সরাসরি চলে যান কাটিয়াদের কাছে। কারণ ঘরে নিয়ে কাটার ঝামেলার চেয়ে সামান্য টাকায় বাজারেই মাছ কেটে নেওয়া তাদের কাছে অনেক সুবিধাজনক।

মাছ কাটিয়াদের ভাষ্য, একসময় বাজারে মাত্র দুই-তিনজন বটিওয়ালা ছিলেন। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। তাদের অনেকেই পেশা বদলে যুক্ত হয়েছেন এই কাজে। কেউ ছিলেন মাছ ব্যবসায়ীর শ্রমিক, কেউ ছোট-খাটো মাছ বিক্রেতা। পুঁজি ও ক্ষতির ঝুঁকি ছাড়া এই পেশায় স্থায়ী আয়ের সম্ভাবনা থাকায় অনেকেই বেছে নিয়েছেন মাছ কাটার কাজ।

এ বাজারের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কুটুনিদের একজন বালিয়া চন্দ্র দাস। আগে ছোট মাছ ব্যবসা করলেও এখন পুরোপুরি পেশা বদলেছেন।

রবীন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আগে ছোট মাছের ব্যবসা করতাম। এখন ঝুঁকি-লোকসান ছাড়াই মাছ কাটার কাজ করি। প্রতিদিন ৭-৮শ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।

২৪ বছর বয়সি নিমাই চন্দ্র দাস একসময় ছিলেন মাছ ব্যবসায়ীর শ্রমিক। মাত্র পাঁচ-ছয় মাস হলো জায়গা ভাড়া নিয়ে শুরু করেছেন নিজের মাছ কাটার দোকান।

নিমাই দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আগে লেবার হিসেবে সংসার টানাপড়েনে চলত। এখন নিজে কাজ করি, আয়ও ভালো। ক্রেতারাও এই পেশার উন্নতিতে সন্তুষ্ট।

সিরাজ সরদার বলেন, অল্প টাকায় বাজারেই মাছ কেটে দিচ্ছে- এটা আমাদের জন্য খুব সুবিধা হচ্ছে।

অপর ক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, বড় মাছ ঘরে কাটতে ঝামেলা। বাজারেই কেটে দেওয়া হলে সময়ও বাঁচে, পরিশ্রমও কম।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে- মাছ কুটুনিদের এ নতুন পেশা দেখতে সাধারণ হলেও বদলে দিচ্ছে বহু মানুষের জীবন। শুধু মাছ বিক্রির কেন্দ্র নয়, গাইবান্ধার পুরোনো বাজার এখন হয়ে উঠেছে স্থানীয় কর্মসংস্থানের নতুন ভরসাস্থল।


তীব্র যানজটে অসহায় ময়মনসিংহের মানুষ

ভেঙে পড়েছে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কামরান পারভেজ, ময়মনসিংহ ব্যুরো

প্রখ্যাত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিমের জনপ্রিয় গানের কথা ‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে।’ ওই গানে হয়তো গাড়ি চলে না, চরণকে আক্ষরিক অর্থে বোঝানো হয়নি। তবে এ কথাগুলোর আক্ষরিক অর্থ এখন মিলে যায় ময়মনসিংহ নগরের সঙ্গে। এ নগরে প্রতিদিন বাড়ছে মানুষ। বাড়ছে যানবাহন আর যানজট। সাম্প্রতিক সময়ে এ যানজট হয়ে ওঠেছে বাউলের গানের মতোই-‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে নারে।’

প্রাচীন জেলা, বিভাগীয় নগর, শিক্ষানগরী, চিকিৎসার নগরী- এসব উপমাকে পেছনে ফেলে এখন যেন ময়মনসিংহ হয়ে ওঠেছে যানজটের নগরী। গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে ময়মনসিংহ নগরের প্রায় সবগুলো সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সড়কে যানজটের কবলে দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে ইজিবাইক আর রিকশাগুলো। এ যানজটে স্থবির এক নগরী।

যানজট নিয়ে ময়মনসিংহ ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ময়মনসিংহ সারা বিশ্বের মধ্যে নবম ধীরগতির শহর হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিকের এক গবেষণায় বিশ্বের ২০টি ধীরগতির শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় ময়মনসিংহ নবম স্থানে ছিল।

এরপরেও যানজট নিয়ন্ত্রণে আসছে না। উল্টো গত এক বছরে যেন আরও বেড়েছে যানজন।

গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট চোখে পড়ে। বর্তমানে একই সঙ্গে নগরের সব স্কুলে চলছে বার্ষিক পরীক্ষা। সঙ্গত কারণে মানুষের চলাচল ছিল বেশি। এমন ব্যস্ত সময়ে নগরজুড়ে তীব্র যানজট লেগেই আছে। গত রোববার দুপুরে নগরের বদরের মোড় থেকে কাচিঝুঁলি পর্যন্ত ইজিবাইকে যেতে যাত্রীদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিটের বেশি। অথচ এ দূরত্ব যানজট না থাকলে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই যাওয়া যায়। বদরের মোড় থেকে কাচিঝুঁলি পর্যন্ত যেতে যেতে কথা হয় ইজিবাইকচালক রনি মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান,‘মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে তিনি টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রী নেন। দূরত্ব আনুমানিক ৬ কিলোমিটার। স্বাভাবিকভাবে ৬ কিলোমিটার যেতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। তবে গত রোববার তীব্র যানজটের কারণে এ পথ যেতে সময় লেগেছে ১ ঘণ্টা। রনি মিয়া জানান, যানজটে এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকার কারণে সারা দিনের রোজগার অনেক কমে যায়। এতে আর্থিক সংকটে ভুগতে হয়। দুপুরে নগরের নতুন বাজার, সাহেব আলী রোড ও গরু খোয়ার মোড়ে দেখা যায় তীব্র যানজটে অসংখ্য যানবাহন আটকে রয়েছে। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাচ্ছিল। তীব্র যানজটের কারণে গাড়ি দুটি অনেকক্ষণ আটকে থাকে।

ময়মনসিংহ নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, নগরের গাঙ্গিনারপাড়, চরপাড়া, পাটগুদাম মোড়, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড় ও কাচিঝুঁলি এলাকায় প্রতিদিন সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানজটের কারণে নগরবাসী প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হয়।

নগরবাসীরা বলেন, নগরে সড়কের তুলনায় ইজিবাইক ও ব্যাটারিচাতি রিকশার সংখ্যা অনেকগুল বেশি থাকার কারণে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ফুটপাত দখল, নগরের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইন ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে এমন যানজট। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর যেন এ নগরে দ্রুত বেড়ে গেছে মানুষ।

জেলা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ নগরের ১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগে বর্তমানে কর্মরত আছে ১১০ জন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই ভাগে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে কারণে অনেক সময় সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশ সদস্য দেওয়া সম্ভব হয় না।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, যানজট বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন। বর্তমানে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা মিলিয়ে নগরে অন্তত ১৫ হাজার যানবাহন রয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে ইজিবাইক ও মোটা চাকার রিকশাগুলোতে জোড় ও বিজোড় নম্বরে ভাগ করে একদিন পর পর চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু নাসের মো. জহির বলেন, স্কুলগুলোতে একযোগে পরীক্ষা চলার কারণে যানজট এখন বেশি। পরীক্ষা ছাড়াও অন্যান্য সময়েও ময়মনসিংহ নগরে যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনের তুলনায় সড়কের পরিমাণ কম, নগরের মার্কেট ও বহুতল ভবনের পার্কিং করার সুযোগ না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়মিতভাবে যানজট হচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।


কিশোরগঞ্জে ধান কাটা-মাড়াই উৎসবে মেতেছেন চাষিরা

*এ মৌসুমে উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১৪৯৭০ হেক্টর জমিতে *ইতোমধ্যে ধান কর্তন হয়েছে ১৩৭৭০ হেক্টর জমির ফসল
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা

চলছে অগ্রহায়ণ মাস, আমন ধান ঘরে তুলার সঠিক সময়। প্রতি বছর যখন এই মাসটি আসে তখন সারাদেশের ন্যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রোপা-আমন ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার আমন মাঠ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। তাইতো কৃষকেরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব করছেন।

কৃষিতে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা মাঠেই ধান মাড়াইয়ের কাজ সারছেন। আবার গ্রামাঞ্চলের জমি থেকে পাকা ও আধা পাকা ধান চুরি হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা রাত জেগে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।

সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। চারিদিকে সোনালী রঙের নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রান। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ের ধুম চলছে উপজেলাজুড়ে। এখন মাঠের সোনালী ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা।

কয়েকমাস আগে যে স্বপ্ন বুনেছিল ধান ঘরে আসার সাথে সাথে সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নানা ব্যস্ততায় বাড়ির উঠান ও কৃষি জমিতে ধান রেখে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহোৎসব।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জে মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে জানান তারা।

কৃষকরা জানান, ইরি মৌসুমে জমি থেকে ফসল কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে এলেও আমন ধান কেটে সরাসরি বাড়ি নিয়ে আসেন না তারা। শুকানোর জন্য কাটা আমন ধান চার-পাঁচ দিন জমিতেই রেখে দেন। তারপর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সুযোগে কৃষকদের জমিতে কেটে রাখা ধান এমনকি আধা পাকা ধানও কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা।

মাগুড়া এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, এবার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা থেকে ২৫-থেকে ২৮ মণ ধান আশা করছি। পোকা কিছুটা ছিল, ওষুধ দিয়েছি। তবে এবার করেন্ট পোকার কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক আবু বক্কর বলেন, ‘প্রায় দেড় একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ১২০ মনের মতো ধান পেয়েছি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ধানক্ষেত পাহারায় চলে যেতে হচ্ছে। পাঁচ- ছয় দিন ধরে জমিতে পাহারা দিচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ধান মাড়াইর পর খলা তৈরি করে ধান সিদ্ধ করে শুকাই। শুকানোর পর সেই ধানগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’

গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছিলেন। আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে তার ৩ বিঘার ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি জমিতেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। ঋণ করে চাষ করেছিলাম, এখন সেই টাকা ফেরত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম বলেন, চলতি মৌসুমে ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ৫২, ব্রিধান ১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের ধান ফলন হয়েছে। উপজেলায় ১৪ হাজার ৯ শত ৭০ হেক্টর জমিতে এ মৌসুমে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭ শত ৭০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং মাঠ পর্যায়ে সময়োপযোগী কার্যকরী পরামর্শ নিয়মিত প্রদান করায় ধানের ফলন বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি হওয়ায় ধানি জমিতে পানি থাকায় ধানের খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেয়নি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটা হবে না। ফলন ভালো হওয়ায় ধান উৎপাদনের মাত্রা ঠিক থাকবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, কিশোরগঞ্জের আমন মৌসুম এবার কৃষকদের মাঝে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।


ভারতে ভাড়া বাসায় বাংলাদেশির লাশ, থাকতেন তরুণীর সঙ্গে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওনের (এনসিআর) নয়ডা শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে এক বাংলাদেশি তরুণের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শাহরিয়ার নামের ওই তরুণ ভারতে পড়তে গিয়েছিলেন।

উত্তরপ্রদেশের আওতাধীন গ্রেটার নয়ডার বেটা-২ এলাকা থেকে গত রোববার সন্ধ্যায় ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।

পুলিশ জানিয়েছে, শাহরিয়ারের বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দেন। বাড়িওয়ালা পুলিশকে বলেন, এক দিনের বেশি সময় ধরে ওই তরুণকে দেখতে না পেয়ে তিনি খোঁজ নিতে যান। পরে ঘরের ভেতরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকা লাশ দেখতে পান।

গ্রেটার নয়ডা-১ সার্কেল অফিসার হেমন্ত উপাধ্যায় জানান, লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কোনো সুইসাইড নোট মেলেনি।

বাড়ির মালিক জানিয়েছেন, শাহরিয়ার ওই বাসায় উঠেছিলেন রুপা নামের এক নারীর সঙ্গে। রুপা বিহারের বাসিন্দা। দুজনই নিজেদের বিবাহিত দাবি করে ৮ হাজার টাকা ভাড়ায় কক্ষটি নেন। তারা ১৭ নভেম্বর সেখানে উঠেছিলেন।

পুলিশ বলছে, রুপাকে সর্বশেষ ২১ নভেম্বর বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।

সার্কেল অফিসার উপাধ্যায় বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তদন্ত চলছে।’


স্ত্রীসহ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গোপনে সরানো হলো চট্টগ্রাম কারাগার থেকে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গোপনে সরানো হয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ এবং তার স্ত্রী তামান্না শারমীনকে। এর মধ্যে সাজ্জাদকে রাজশাহী এবং তামান্নাকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে তাদের সরানো হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে ১৫ মার্চ সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। বন্দি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে ডাবল মার্ডারসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নাম জড়ায় সাজ্জাদ হোসেন ও তার বাহিনীর। গত ১০ মে দিবাগত রাতে দিকে নগরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে শারমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।


নীলফামারীতে পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নীলফামারী প্রতিনিধি

“সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীতে চাষীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের হলরুমে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ মনিটরিং কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব ড. মো. মনজুরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা এ.টি.এম. তৈবুর রহমান, অতিরিক্ত উপপরিচালক জাকির হোসেন, উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নুররেজা সুলতানাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।


রৌমারীর চরাঞ্চলে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণে ৩৬০ পরিবার স্বাবলম্বী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন ও বন্যায় রৌমারীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বসতবাড়ী ও ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ভুমিহীন ও গৃহহীন হয়ে সংকটে পড়েন এ অঞ্চলের মানুষ। সাম্প্রতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবার গুলোকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন। দুর্যোগকালীন সহায়তার পাশাপাশি পরিবারভিত্তিক আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে ৩৬০টি পরিবারের জীবনমান।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রৌমারী উপজেলার ১২টি চরের ৩৬০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে উন্নয়নমুখী সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শীত ও গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে সবজি বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ, ভেড়া বিতরণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ফ্রেন্ডশিপ। বন্যার সময়েও সবজি উৎপাদন চালু রাখতে কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন এবং জৈব সার ব্যবহারের প্রচার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে পরিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শও দিচ্ছে সংস্থাটি। সম্প্রতি চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার মিয়ার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার শুধু আয়বৃদ্ধিমূলক কাজেই নয়, সামাজিক উন্নয়নেওযুক্ত হয়েছেন।

মিয়ার চর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড প্রকল্পের সহায়তায় তিনি ৪ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া পেয়েছিলেন। বর্তমানে তার পাঁচটি ভেড়া হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার টাকা।
আরেক কৃষক গোলজার আলী বলেন, “আধুনিক সবজি চাষের প্রশিক্ষণ পেয়ে বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে এ বছর ২২ হাজার টাকা আয় করেছি।এতে সংসারের খরচ চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করতে পেরেছি।”

একই গ্রামের শেফালী বেগম জানান, কেঁচো সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ শত টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করছেন।
আছমা বেগম জানান, তিনি ২৫টি বস্তায় আদাচাষ করেছেন এবং প্রতি বস্তা থেকে এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়ার আশা করছেন।গ্রামের আরও অনেকে বস্তায় আদা চাষ, সবজি উৎপাদন, জৈব সার তৈরি ও ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।

আবু হানিফ বলেন, “আমাদের সুশাসন বিষয়ক প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক, সংবিধান ও সংসদ সম্পর্কে জেনেছি। এখন কোনো আইনি সহায়তা লাগলে ফ্রেন্ডশিপ বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়।”

একই গ্রামের এছাহাক আলী ও বেলায়েত হোসেন জানান, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনতে হতো; এখন নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করছেন। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে কীট দমন করছেন এবং সরকারি সেবা পেতে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগের সক্ষমতাও বেড়েছে।ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশনাল ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের রিজিওনাল ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ-এর সহায়তায় কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মোট ২৮টি চরে ৮৪০ জন সদস্যকে আয়বৃদ্ধি, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “ফ্রেন্ডশিপ প্রকল্পের পাশাপাশি কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সর্বাত্মকসহযোগিতা প্রদান করছে।

”উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, “চরাঞ্চল ভেড়া পালনের জন্যঅত্যন্ত উপযোগী। এ বছর ফ্রেন্ডশিপের উদ্যোগে ৩৬০ পরিবারকে ভেড়া ও প্রশিক্ষণ দেওয়াহয়েছে। প্রতিটি ভেড়াকে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া হয়েছে। এতে স্বল্প খরচে দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করছে।


লামায় যে বিদ্যালয়ে ভর্তির আগে শিখতে হয় সাঁতার

লামায় বমুখালের কোমরপানি পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি

শুষ্ক মৌসুমে কখনো গলা, কখনো কোমর, কখনোবা হাঁটুপানি থাকে বমুখালে। এ পানি পেরিয়ে শিশুদের যেতে হয় বিদ্যালয়ে। খাল পার হওয়ার সময় পানিতে ভিজে যায় কাপড়, বই খাতাও। এই অবস্থা চলছে কয়েক বছর। আবার বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিতে খাল ভরপুর হয়ে গেলে ওপারের সব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। এতে শিক্ষায় পিঁছিয়ে পড়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীরা। একান্ত আলাপকালে এমনটিই জানালেন-লামার বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি দাশ।

শ্যামল কান্তি দাশ বলেন, ব্রিজ না থাকায় এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিশুদের সাঁতার শিখতে হয়। না হয় বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। অনেক সময় খাল পারাপারের ভয়ে অধিকাংশ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। শুধু তায় নয়, বটতলীপাড়া থেকে গজালিয়া উচ্চবিদ্যালয়েও প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে।

শিক্ষক শ্যামল কান্তি দাশ জানান, গত ১৫ নভেম্বর পারাপারের সময় এক শিক্ষার্থী পানিতে ভেসে গেলে সহপাঠীদের চিৎকারে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। যদি বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের এই বমুখালে একটি ব্রিজ নির্মিত হতো, তাহলে শিশু শিক্ষার্থীরা এই ঝুঁকি থেকে রেহাই পেত, পাশাপাশি যাতায়াতের সুবিধা পেত দুইপারের কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাও।

জানা যায়, উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বটতলীপাড়া বমুখালের এক পাড়ে বটতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭০টি বসতি পরিবার। অন্য পাড়ে রয়েছে পূর্ববটতলীপাড়া, তুলাতলী হামিদচরপাড়া, তুলাতলী মুরুংপাড়া, চিন্তাবরপাড়াসহ ৯টি পাড়ার প্রায় ৫ হাজার পাহাড়ি-বাঙালি জনবসতি। প্রতিদিন বটতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক স্থানীয় বাসিন্দা এই খাল পার হয়ে বটতলী-গজালিয়া বাজারে যাতায়াত করে আসছেন। বিশেষ করে ব্রিজ না থাকায় কৃষিপণ্য বাজারজাতে চরমভাবে বিঘ্ন ঘটছে। এতে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েন।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য খাল পার হচ্ছিল। দুই-একজন ক্লান্তও, নিচ্ছিল দম। তীরে উঠেই রোদে ভেজা জামা- কাপড় শুকাচ্ছিল কয়েকজন।

এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মো. ছগির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন- গত ১৫ নভেম্বর দুই শিশু সাঁতার কেটে পশ্চিমপাড়া আসছিল। কিন্তু খালের মাঝখান থেকে নাজিম উদ্দিন নামে এক শিশু ভেসে যায়। সঙ্গে থাকা শিশুটির চিৎকারে পার্শ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে এসে প্রায় তিনশ ফুট দূর থেকে ভেসে যাওয়া ওই শিশুটিকে উদ্ধার করেন।

বটতলীপাড়ার গ্রাম সরদার মো. মনির উদ্দিন জানান, আমাদের কাছে এই দৃশ্য নতুন কিছু নয়। দীর্ঘবছর ধরে এ অবস্থা চললেও খালে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ স্থানীয় প্রশাসন নিয়েছে কি না, জানি না।

চতুর্থ শ্রেণির রোকশানা আক্তার (৯) বলে, বাড়ি তুলাতলী হামিদ চরপাড়া গ্রামে। পড়ালেখাকরি বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুই পাড়ার মাঝখানে বয়ে যাওয়া বমু নামক এই খাল সাঁতরে আমার যেতে হয় বিদ্যালয়ে। ‘খাল পার হতে আমার অনেক ভয় হয়। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত অনেক কষ্ট করেছি। আমরা এই খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি করছি।

একই কথা জানায় তৃতীয় শ্রেণির শফিকুল ইসলাম, আনিশা আক্তার ও পঞ্চম শ্রেণির মো. রাহান মিয়াও।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শামসুল হক বলেন, ‘আমার দুই ছেলে এই বিদ্যালয়ে পড়ে। সপ্তাহখানেক আগে আমার এক ছেলে খাল পার হতে গিয়ে খালের কুমে পড়েছিল, আমি এসে উঠিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছি। বমুখালের ওপর একটি ব্রিজ হলে ভালো হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, বমুখালের বটতলীপাড়া বিদ্যালয়-সংলগ্ন স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উসাচিং মার্মা জানান, বমুখাল পাড়ি দিয়ে বটতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গজালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। এলাকার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে বমুখালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসছেন। ব্রিজটি নির্মাণ হলে কৃষকরাও উপকৃত হবেন।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, শিশু শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থে ওই খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ জরুরি। আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বটতলী ও পূর্ব বাইশফাঁড়িতে ব্রিজ স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করব।


সাঁথিয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের সাইনবোর্ডে আগুন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মিয়াপুর ক্ষেতুপাড়া শাখার গ্রামীণ ব্যাংকের সাইনবোর্ডে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার রাতের যেকোনো সময় আগুন দেওয়া হয়। স্থানীয়দের ধারণা ব্যাংকে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল দুর্বৃত্তরা। কিন্ত সাইনবোর্ডের আগুন দেখেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় আগুন দেওয়ার ঘটনার জের ধরে সাঁথিয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের একটি শাখায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত রোববার গভীর রাতে উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের মিয়াপুর ক্ষেতুপাড়া শাখায় দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের সাইনবোর্ডে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সাইনবোর্ডের অংশ পুড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ভিডিওতে দেখা যায় কে বা কারা প্রথমে সাইনবোর্ডে তেল জাতীয় কিছু ঢালছে। পরে তাতে আগুল লাগিয়ে দেয়।

সাঁথিয়া থানার ওসি আনিসুর রহমান জানান, গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন দেওয়ার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা রুজু হবে।


হালদায় অভিযানে তিনজনের কারাদণ্ড

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের হালদা নদীতে অবৈধভাবে ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার চালনার মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের অপরাধে তিনজনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

সোমবার বিকালে হালদা নদীর মদুনাঘাট এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান বলেন, হালদা নদীতে অভিযান পরিচালনা করার সময় অবৈধভাবে ইঞ্জিনচালিত ড্রেজার চালনার মাধ্যমে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের অপরাধে মো. ইব্রাহিম, মো. হান্নান ও মো. সবুজকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অভিযান পরিচালনাকালে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শওকত আলী, নৌপুলিশ এবং হালদার সংশ্লিষ্ট পাহারাদার সহযোগিতা করেন।


সেন্টমার্টিনে আটক ৯ সিমেন্ট পাচারকারী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমার থেকে মাদকের বিনিময়ে বাংলাদেশি সিমেন্ট পাচারের সময় ৯ চোরাকারবারিকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। সোমবার বিকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, একটি চক্র মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এনে তার বিনিময়ে বাংলাদেশি পণ্য পাচার করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার সকাল ৯টার দিকে কোস্ট গার্ড জাহাজ কামরুজ্জামান সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপের দক্ষিণ–পূর্ব-সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে একটি সন্দেহজনক ফিশিং ট্রলার থামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ট্রলার থেকে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে বহন করা প্রায় ২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের ৪৫০ বস্তা সিমেন্ট জব্দ করা হয়। আটক করা হয় ৯ চোরাকারবারিকে।

জব্দ করা মালামাল, ট্রলার ও আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোস্ট গার্ডের ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, ‘পাচার ও চোরাচালান রোধে কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।


banner close