চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।
বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) শিক্ষা বিভাগ।
প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আলাউদ্দিন আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরী। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদটির পেশ ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আহমদুল হক।
চসিকের শিক্ষা বিভাগের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে আরো ৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় এসব মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদুল আজহার অন্যান্য জামাতগুলো হলো- লালদীঘির পাড় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং সাগরিকা এলাকার মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মসজিদ ও ঈদগাহে স্থানীয়রা ঈদের জামাত আয়োজন করবেন।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২ জন।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার পশ্চিম তালদিঘি ফকির বাড়ি ও গাছতলা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
পশ্চিম তালদিঘি এলাকায় নিহতরা হলেন- নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় গ্রামের মো. পারভেজ মিয়া (৩৫), তার ছেলে মো. হাসান মিয়া (৮)। এদিকে, গাছতলা এলাকায় নিহতরা হলেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পিঠাসুটা গ্রামের মো. মন্নাছ মিয়ার ছেলে মো. শরীফ মিয়া (২৫) ও একই উপজেলার সাধুপাড়া গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান হবি (৪৫)।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান জানান, ঈদ উদযাপন করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে শেরপুরের হালুয়াঘাটে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন পারভেজ মিয়া (৩৫)। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। যাত্রীবাহী একটি বাসে তারা ময়মনসিংহ-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম তালদিঘি এলাকায় পৌঁছালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি মসজিদে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পারভেজ ও তার ৮ বছর বয়সী ছেলে হাসান মারা যান। আহত হন আরও অন্তত ১২ জন, যাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে এবং নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
একই সময়ে কাছাকাছি এলাকায়—উপজেলার গাছতলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে আরও দুইজন নিহত হন। নিহতরা হলেন, পিঠাসুটা গ্রামের শরীফ মিয়া (২৫) এবং সাধুপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান হবি (৪৫)।
শ্যামগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নান্নু খান জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ময়মনসিংহের দিকে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক শরীফ এবং যাত্রী হাবিবুর নিহত হন।
বাসটি জব্দ করা হলেও চালক পালিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। নিহতদের মরদেহ পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনগত কার্যক্রম চলছে।
গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। তবে আগের দিনের চেয়ে বৃষ্টি কিছুটা কমে আসে গতকাল। আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। সেই দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, এমন প্রশ্ন অনেকের। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে, ঈদের দিন দেশের অন্তত তিন বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। বাকি বিভাগগুলো একেবারে বৃষ্টিহীন না–ও হতে পারে। তবে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু এখন সক্রিয়। তবে এর প্রভাব কমে এসেছে। শুক্রবার (আজ), শনিবার ঈদের দিন এবং তার পরের দিন বৃষ্টি অপেক্ষাকৃত কমে আসতে পারে।
চলতি জুন মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি চলছে। আসলে গত মে মাসের শেষের দিক থেকেই এ বৃষ্টির শুরু। শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে দেখা দেয় গভীর নিম্নচাপ। এর প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ২৪ মে দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। নির্ধারিত সময়ের অন্তত এক সপ্তাহ আগেই এবার আগমন ঘটে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরানো এ বায়ুর। এর পর থেকে বৃষ্টি কমবেশি চলছে। তবে আজ শুক্রবার থেকে বৃষ্টি কমে আসতে পারে বলে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন।
বজলুর রশীদ বলেন, ঈদের দিনও অপেক্ষাকৃত শুকনো থাকবে। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি হবে না। রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই কম। রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে সামান্য কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীতে বৃষ্টি হলেও এক পশলা হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে—২৭ মিলিমিটার। আগের দিন দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি ছিল ৫৫ মিলিমিটার। এটা হয়েছিল কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। গতকাল রাজধানীতে এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
থেমে থেমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কিন্তু খুব কমছে না। বরং ভ্যাপসা গরম পড়ছে বৃষ্টির পরপরই। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় এমন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ঈদের দিনও গরম ও ভ্যাপসা ভাবটা থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে ঈদের পর সোমবার থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে।
ঈদযাত্রার শেষ দিনেও ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছে উত্তরবঙ্গের ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী যাত্রীরা। শত কষ্ট উপেক্ষা করেও বাসের ছাদে ও খোলা ট্রাক-পিকআপে করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন সবাই।
আজ শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মহাসড়কের সেতু এলাকা থেকে করটিয়া করাতিপাড়া বাইপাস পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, সেতুর উপর গাড়ি বিকল হওযাসহ বিভিন্ন কারণে বুধবার (৪ জুন) ভোর ৪টা থেকে শুরু হওয়া এই যানজট শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও অব্যহত রয়েছে।
এলেঙ্গা বাস স্টেশন, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও ট্রাক, পিকআপ, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে বাসের চেয়ে ট্রাক ও পিকআপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
পুলিশ, চালক ও যাত্রীরা জানান, দুই ঘণ্টার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনার ফলে এই ভোগান্তি। অন্যদিকে যমুনা সেতুর ধারণক্ষমতা কম থাকায় স্বাভাবিকভাবে গাড়ি পারাপার করতে পারছে না। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী গাড়িগুলো ভূঞাপুর দিয়ে ঘুরিয়ে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, মহাসড়কে একাধিক বাস বিকল হয়েছে। সেনাবাহিনী-পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিরসনে কাজ করছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুতে ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন নিহতের ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া, এ ঘটনায় ৪ জন রেল কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
বরখাস্ত হওয়া চার রেলকর্মী হলেন— পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম), লোকো মাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ, এবং অস্থায়ী গেট কিপার (টিএলআর) মাহবুব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে ওই দুর্ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো), ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১ ও পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঢাকা অভিমুখী একটি ট্রেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে একটি শিশুসহ তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুতে প্রবেশ করামাত্র অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলস আরও কয়েকটি ছিল যানবাহনে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি।
সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। যমুনা সেতু পশ্চিমপাড় থেকে সায়দাবাদ পর্যন্ত পুরোপুরি অচলাবস্থায় রয়েছে ঢাকামুখী লেন। যাত্রীদের সুবিধা ও উত্তরবঙ্গমুখী গাড়ির গতি ঠিক রাখতে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই লেনের টোল আদায়। ফলে সেতু এলাকা ও সংযোগ মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে চরম অচলাবস্থা।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে এ যানজটের সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকামুখী লেনে ট্রাক, বাস ও প্রাইভেট কারগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। যানবাহনগুলো প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে, তবে উত্তরবঙ্গমুখী লেনে রয়েছে স্বাভাবিক গতি ও শৃঙ্খলা।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকামুখী যেসব যানবাহন রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে চালক ও হেলপার ছাড়া যাত্রী নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে যাত্রী ও গাড়ির চাপ ব্যাপক হলেও যানজট নেই। তাই মানুষের সুবিধার্থে আপাতত ঢাকামুখী লেনের টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে, কিন্তু উত্তরবঙ্গমুখী লেনে টোল আদায় চলছে।
এদিকে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রউফ জানান, উত্তরবঙ্গমুখী যাত্রীদের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর আর কোনো বড় ধরনের জট নেই। মানুষ নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরছে।
যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ টানা কাজ করছে। তারা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর সীমান্তে ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তায় পুশ-ইন, গবাদি পশু চোরাচালান ও পশুর চামড়া পাচার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্বোচ্চ সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার প্রাগপুর বিজিবি ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ৪৭ বিজিবি ব্যাটায়িলনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিজিবি ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় গরু চোরাচালান রোধে অতিরিক্ত টহল, অস্থায়ী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ অপারেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।
একইভাবে, ঈদের পর কোরবানির চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় স্থানে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ও মোবাইল টিম মোতায়েন করে চামড়ার পাচার রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধেও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধের বিষয়ে প্রতিপক্ষ বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠক, লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে ।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের জনগণকে একটি নিরাপদ ও স্বস্থিদায়ক ঈদ উদযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এতে শিশুসহ তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে বোয়ালখালী উপজেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, দূর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি শিশু। সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে জানালিহাট স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রেনটি দ্রুতগতিতে সেতুর ওপর উঠে গিয়েছিল। সেতুর ওপর সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ছিল। সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সব গাড়ি সেতু থেকে নামতে পারেনি।
ট্রেনচালক সংকেত অমান্য করেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নেজাম উদ্দিন বলেন, নিয়ম হলো ট্রেন পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনচালক এ নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান। আবার উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসছিল। এ কারণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।
রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও হৃদয়ে দলীয় ভালোবাসা গেঁথে রেখেছেন কৃষক সোহাগ মৃধা। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি বছর ছয়েক ধরে বড় করে তুলেছেন একটি ষাঁড়—যার নাম ‘কালো মানিক’। এবার সেই ষাঁড়টিকে উপহার দিতে ঢাকায় রওনা হয়েছেন তিনি। প্রাপক? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়ার বাসিন্দা সোহাগ নিজেই জানালেন, এটি কোনো ভাইরাল স্টান্ট নয়—এটি তাঁর হৃদয়ের কথা। ষাঁড়টিকে তিনি সন্তানের মতো লালন করেছেন। এখন সেই সন্তানসম প্রাণিটিকে দিতে চান তাঁর রাজনৈতিক প্রেরণার উৎসকে। আমি নেত্রীর কাছে যাবো।
যাত্রা জমকালো—তিনটি ট্রাক, ৫০ জন কর্মী, ব্যান্ড পার্টি, ব্যানার, গেঞ্জি, প্রচার মাইক—সব প্রস্তুত।
গ্রাম থেকে ট্রাক ছাড়ার সময় যেন মেলা বসেছে। উৎসুক জনতা ছুটে এসেছে কালো মানিককে একবার দেখতে, ছবি তুলতে, ভিডিও করতে।
কালো মানিক একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কালো চকচকে গায়ের রঙের জন্য স্থানীয়দের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘কালো মানিক’ নামে।
সোহাগ জানান, ২০১৮ সালে একটি গাভি কেনেন তিনি। সেই গাভির বাছুর থেকেই শুরু হয় মানিকের পথচলা। অভাবের সংসারে শত কষ্টেও তিনি ছাড়েননি যত্ন। আজ গুলশান যাবো তাকে উপহার দিতে।
ঢাকার পথের সাথী রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে আমরা বিশ্বাস করিনি। এখন দেখি, পুরো প্রস্তুতি নিয়ে রওনা দিয়েছি। আমরা অনেক আনন্দ সহকারে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে যাচ্ছি ঢাকায়। সোহাগের বিশ্বাস, নেত্রী হয়তো উপহারটি গ্রহণ করবেন
কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরীতে জমে উঠেছে পশুর হাট। এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
টানা ছয়দিন বৃষ্টির পর বুধবার সকাল থেকে তা কিছুটা কমায় হাটমুখো হয়েছেন ক্রেতারা। তবে এর মাঝেও থেমে থেমে চলা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ভোগাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
কাদা আর গরুর হাটের আবর্জনা মাড়িয়ে হাটগুলোতে চলছে দরদাম। জমে উঠেছে বেচাকেনাও। ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা এবার সবচেয়ে বেশি।
বুধবার বিকালে নগরীর বিবিরহাট গরুর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এই হাটে বেশিরভাগ গরু এসেছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও গরু নিয়ে হাটে এসেছেন ব্যাপারিরা।
জামালপুর থেকে তিনদিন আগে এই হাটে আসা বিক্রেতা সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২২টা গরু নিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত চাইরটা বেচছি। লোকজন দাম বলে কম।
“দুই লাখ ২০ হাজার টাকা একটা গরুর দাম চাইলাম। কাস্টমাররা ১ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত বলছে। এই দামে গরু বেচা সম্ভব না। আরেকটু বাড়তি পেলে বিক্রি করতাম।”
তবে পাল্টা অভিযোগ ক্রেতাদের; বলছেন- বিক্রেতারা দাম ছাড়ছে না; ঈদের আগের দুই দিনের বাজার পরিস্থিতি দেখার অপেক্ষায় বিক্রেতারা।
এই হাট থেকে দেড় লাখ টাকায় একটি গরু কিনে ফেরার পথে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, “গরুর দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব বেশি না।
“বাজারে অনেক গরু আছে। আজকে একটা কিনলাম। কালকে বাজার দেখে আরেকটা কিনব।”
বুধবার নগরীর আতুরার ডিপো থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিবিরহাটে গরু কিনতে আসা আকবর হোসেন বলেন, “একটার সময় হাটে আসছি। ৩ ঘণ্টা ঘুরে বেশ কয়েকটা গরু দেখলাম। বাজারে গরু আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু ব্যাপারিরা দাম ছাড়ছে না।
“তারা মনে করছে কাল-পরশু দুইদিন সময় হাতে আছে। আমরাও অপেক্ষা করব। কালকে দেখেশুনে কিনব।”
বুধবার দুপুরে গিয়ে নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানি পশুর হাট সাগরিকা গরুর বাজারেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছে ব্যাপারিরা।
সাগরিকা গরুর বাজারে কুষ্টিয়া থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে আসা সিরাজুল আলম বলেন, “চারদিন হলো আসছি। আমাদের বেশিরভাগই বড় গরু। বৃষ্টি বেশি থাকায় এতদিন হাটে লোকজন আসেনি।
“কালকে আর আজকে মিলে মাঝারি সাইজের ৫টা গরু বেচছি। বড় গরুর পার্টি আজকে কেবল আসা শুরু করছে। তারা দর দেখতেছে। কালকে থেকে হয়ত কিনবে।”
সাগরিকা গরু বাজারের হাসিল গ্রহণকারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “হাটে প্রচুর গরু আছে। এতদিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় লোকজন খুব একটা আসেনি। আজকে আসতেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে। শহরের লোকজন কোরবানের ২-৩ দিন আগেই গরু কেনে।
“আমাদের হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিমও আছে। এখন পর্যন্ত সব ভালোভাবে চলছে।”
বিবিরহাট গরু বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুধবার বিকালে একটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে। তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। হাটের বাইরেও সেনা সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
এ হাটে গরুর চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি দল কাজ করছে।
এই দলের সদস্য সুব্রমনিয়ম বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দূর-দূরান্ত থেকে গরুগুলো দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে করে এখানে আনা হয়। পাশাপাশি গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি পড়েছে।
“একারণে কিছু কিছু গরুর শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এরকম গরু চিহ্নিত হলে জ্বরের ওষুধ ও অ্যান্টি হিস্টামিন ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে গত ২৯ মে বিবিরহাটে এসেছেন আবদুস সামাদ ও তার সঙ্গীরা। সেখানে গরুগুলোর পাশেই খালি জায়গায় নিজেদের জন্য খাবার রান্নার কাজও চলছিল।
আবদুস সামাদ বলেন, “এতদিন বৃষ্টিতে খুব কষ্ট পাইছি। কালকে থেকে বিক্রি শুরু হইছে। আজ পর্যন্ত ১১টা গরু বিক্রি করছি। বাকি গরু আশা করি, কালকের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।”
হাটের বাইরে গরু সাজানোর গলার মালা বিক্রি বাড়ায় খুশি বিক্রেতা মো. শফিও খুশি বেচাকেনা জমে ওঠায়। দেড়শ থেকে তিনশ টাকার মধ্যে মালা বিক্রি করছেন তিনি।
গরুর সাজসজ্জা সামগ্রী বিক্রেতা মো. শফি বলেন, “গতকাল প্রায় ১০ হাজার টাকার মাল বেচেছি। আজকেও বিক্রি ভালো। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে মানুষ হাটে কম আসে।”
বিবিরহাট বাজার লাগোয়া বাইরের গলিতে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় একটি ছাগল কেনা হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মো. কামাল বলেন, “বাড়ি যাবার পথে ছাগল কিনে নিলাম। গরু কিনব গ্রামে খামারির বাড়ি থেকে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুর সংখ্যা মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২টি। জেলায় এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। সে হিসাবে জেলায় এবার ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি আছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪০ হাজারের বেশি গরু এসেছে আজকে পর্যন্ত। আরো আসতে পারে। কাজেই এবার গরুর স্বল্পতা হবে না।
“গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম সামান্য বেড়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। হাটগুলোতে বিক্রিও শুরু হয়েছে। হাটে আসা গরু-মহিষে তেমন কোনো রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়নি।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪ সালে জেলায় কোরবানি হয়েছিল ৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৮টি পশু।
একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। অনেকেই বাসের ছাদসহ ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে অন্তত ২৫ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাস স্টেশন, রাবনা বাইপাস, আশেকপুর বাইপাস ঘুরে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে আছেন। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, পিকআপ, বিভিন্ন সড়কের লোকাল বাস, লেগুনায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কে বাসের চেয়ে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল বেশি দেখা গেছে। এছাড়াও বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রী পরিবহন করছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার। গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপ ও বাসের ছাদে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
চালক ও যাত্রীরা জানান, ভোররাত থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনের পাকুল্যা থেকে টাঙ্গাইলগামী সড়কে এই যানজট সৃষ্টি হয়। পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাস থেকে সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক যাত্রী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
গাজীপুর থেকে আসা পোশাক শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, গাজীপুর থেকে রাবনা বাইপাস আসলাম ৫ ঘণ্টায়। সড়কে যানবাহনের খুব চাপ। এক জায়গায় থেমে থাকলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে। ভাড়াও দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। আমি সিরাজগঞ্জ যাব।
বাইপাইল থেকে আসা যাত্রী আলমগীর বলেন, আমি ট্রাকে করে ৫০০ টাকা দিয়ে বগুড়া যাচ্ছি। তাও আবার দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে। বাইপাইল থেকে চার ঘণ্টা হয়েছে এখন আশেকপুর বাইপাস আসলাম। যাত্রীদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, সকাল থেকেই এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল প্লাজা থেকে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের জন্য এই যানজট হয়। সেনাবাহিনী-পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিরসনে কাজ করছে।
সিলেটে বৃষ্টি কমলেও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের প্রধান কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে ঢল নামা অব্যাহত থাকায় নদীগুলোর পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সিলেটে গত সোমবার সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপর দিনে আর তেমন বৃষ্টি হয়নি।
নদীর পানি বাড়লেও গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তবে জকিগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম ও রাস্তা এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। তবে জকিগঞ্জ বাজার থেকে পানি নেমে গেছে। এর আগে গত সোমবার কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে জকিগঞ্জ বাজার প্লাবিত হয়েছিল।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৬৯ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৪ মিটার ওপরে। অমলশিদ পয়েন্টে ১৭ দশমিক ৩৬ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯৬ মিটারের ওপরে। শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫২ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৭ মিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯ দশমিক ৯৮ মিটারে অবস্থান করছিল, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫৩ মিটার ওপরে। এ চারটি পয়েন্টেই আগের দিনের চেয়ে পানি বেড়েছে।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ছাড়াও জেলার ধলাই, লোভা, সারি ও ডাউকি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। শুধু সারি-গোয়াইন নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও ওসমানীনগর উপজেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এছাড়া বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে বন্যাকবলিত মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বল্বন, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে দুটি পরিবারের মোট ৯ জন ঠাঁই নিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটে বৃষ্টি ধীরে ধীরে কমে এলেও ভারত থেকে সীমান্তবর্তী নদ-নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল আসা অব্যাহত আছে। এতে বৃষ্টি কমলেও পানি বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতেও বৃষ্টি কমে আসছে। এছাড়া ভাটিতেও পানি দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। তাই নতুন করে বৃষ্টি না হলে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে উন্নত জাতের ঘাস চাষ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খামারীকে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর ‘‘শীর্ষক” প্রকল্পেরে আওতায় দৌলতপুর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে প্রতি ইউনিয়নে ২জন করে নির্বাচিত ২৮ জন খামারীকে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ প্রর্দশনী প্লট স্থাপন বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারি এ বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খামারীদের প্রদান করেন জনপ্রতি ৪৪০০ টাকা। এতে খামারিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের খামারী ময়না খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কত টাকা বরাদ্দ সেটা ঠিক জানিনা, তবে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে মোট ৮৮০০ টাকা আমাকে দিয়েছে।
মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামের খামারী জোয়াদুর রহমানসহ একাধিক খামারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের বরাদ্দ ৫০০০ টাকা থাকলেও বিভিন্ন খাত দেখিয়ে গত বছর ও এবছর ৪৪০০ টাকা করে ৮৮০০ টাকা সকলকে দিয়েছে। কেন কম দিলো সেটা আমরা জানিনা।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কমিউনিটি এক্সট্রেনশন এজেন্ট শাহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা স্যার যা বলেছে আমি তাই করেছি, আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ মাহমুদুল ইসলাম খামারীদের প্রাপ্য অর্থ কম দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অডিট ও মাঠ পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য টাকা কম দেয়া হয়েছে। এসকল খরচ তো আমি পকেট থেকে দেবনা। তাই খামারীদের ৬০০ টাকা করে কম দেয়া হয়েছে। আপনি অফিসে আসেন কথা বলি।