নওগাঁয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম। বাজারে ক্ষীরসাপাত/হিমসাগর, নাক ফজলি, ল্যাংড়া/হাড়িভাঙ্গা ও আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। ব্যবসায়িদের আগমন কম হওয়ায় ও সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ আম চাষীরা। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে চাষীদের। প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবী চাষীদের।
জেলার সাপাহার উপজেলা সদরে বৃহৎ আমের বাজারে প্রায় ৩৫০টি আড়ৎ রয়েছে। এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে ৮০-৯০ টি। যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- এ বছর জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক বাণিজ্যের আশা।
বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু । ফলে দেশজুড়ে আমের বেশ কদর রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাজারে আসতে শুরু করেছে আম। সাপাহার উপজেলা সদরে জিরো পয়েন্টে আমের বৃহৎ বাজার। আমের ভরা মৌসুমে জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের এক পাশে বসে আমের বাজার। তবে মৌসুমের শুরুতে এক কিলোমিটার জুড়ে বাজার বসেছে। বাজারে ল্যাংড়া, খিরসা/ হিমসাগর, নাকফজলি, হাড়ি ভাংগা, আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো পাওয়া যাচ্ছে।
চাষীরা বাগান থেকে আম পেড়ে সকাল থেকে ভ্যান, ভটভটি সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। তবে ব্যবসায়িদের আনাগোনা কম থাকায় বেচাকেনা কম। বিক্রির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে চাষীদের। আবার দামও তুলনামুলক কম। প্রতিমণ আম ল্যাংড়া ৮০০-১৫০০ টাকা, নাকফজলি ও খিরসা/ হিমসাগর ১২০০-১৬০০ টাকা, হাড়ি ভাংগা ১৫০০-২৫০০ টাকা, আম্রপালি ২২০০-২৮০০ টাকা এবং ব্যানানা ম্যাংগো ২৫০০-২৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এ বছর আম সংগ্রহের যে সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়েছে তা কাজে আসছে না। প্রচন্ড গরমে আম পেঁকে ঝরে পড়ছে। এ কারণে সব ধরনের আম প্রায় ১০ দিন আগেই বাজারে চলে আসছে।
আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল কেজি দরে আম বেচা-কেনা। দাবীর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের নিয়ে আলোচনা হয়। কেজিদরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র। ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কাছে হার মানছে চাষীরা। তারা ক্যারেট সহ ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কেজি দরে আম বেচা-কেনা করতে সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের বাজারে সচেতনতামুলক মাইকিং করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। প্রশাসনের দায়সারা ভাব মনে করছেন আম চাষীরা।
আম চাষীরা বলছেন, ‘মৌসুমের শুরু থেকে অনাবৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা বিরাজ করছিল। গাছে মুকুলের পরিমান বেশি দেখা দিলেও আম আসার পরিমাণ ছিল কম। ভাল দাম পাওয়ার কথা থাকলেও তার উল্টোচিত্র। আম চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে কেজি দরে আম বেচা-কেনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তবে কেজি দরে আম বেচাকেনা চালু হলে লাভবান হবেন চাষীরা।
উপজেলার কোরালডাঙ্গা গ্রামের আম চাষী আব্দুল মতিন বলেন, তিনবিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আমবাগান রয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে গাছ থেকে আম ঝরে পড়ছে। বাধ্য হয়ে আম নামাতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে আমের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর মৌসুমের শুরুতে তিন হাজার টাকার ওপরে মণ বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ। আবার ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা কেজি দরে কিনতে চাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আগের নিয়মে দিতে হচ্ছে।
সাপাহার গোডাউন পাড়ায় বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক এর উদ্যোক্তা আম চাষী সোহেল রানা বলেন- কেজি দরে আম বেচাকেনা নিয়ে আম চাষীদের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে সবার সম্মতিক্রমে এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কেজি দরে আম বেচাকেনার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। তারা কেজি দরে আম কিনতে চাচ্ছেন না। আড়ৎদার ও ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট করে আম বেচা-কেনা বন্ধ করে দেয়। প্রশাসন শুধু মাইকিং করে দায় সারতে চাচ্ছেন। কেজি-দরে আম বেচাকেনা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন হলে আম চাষীরা লাভবান হবে।
সাপাহার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা বলেন, ‘প্রশাসনের নিয়ম মানতে চান না ব্যবসায়িরা। কেজি দরে আম না কিনে ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে কিনছেন তারা। ওজন বিভ্রান্ত হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ি এখনো এ বাজারে আসছে না। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে। আমের মণের ওজন নির্ধারণ করা না হলে ব্যবসায়িরা আসতে চাচ্ছে না। অন্য জেলাগুলোতে আগের নিয়মে আম বেচা-কেনা হচ্ছে। তিনি বলেন- কেজি দরে আম কেনা হলে বাছাই করে ভালগুলো কেনা হচ্ছে। এতে করে আম চাষীরা চিল্লাপাল্লা করছে। তারাও এ ঝামেলা চাননা বলেন গড় ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুর দিকে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে কেজি দরে আম বেচা-কেনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও আম চাষীদের সাথে আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে জেলায় আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে।’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রণীত গণমাধ্যম নীতিমালায় বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে উল্লেখ করে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) এবং রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি (আরএফইডি)।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিজেসি ও আরএফইডির প্রতিনিধিরা তাদের যৌথ সুপারিশমালা জমা দেন। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিজেসি চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজা সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্বাচন কমিশন যে গণমাধ্যম আচরণবিধি তৈরি করেছে, তাতে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে কিছু অপ্রয়োজনীয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা বিজেসি ও আরএফইডি যৌথভাবে একাধিক সেমিনার আয়োজন করেছি, যেখানে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, অংশীজন ও সংবাদকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছি। আজ সেটি কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছি।’
বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছি যে, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করার যে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা। যদি সাংবাদিকদের বৈধ আইডি কার্ড ইস্যু করা থাকে, তাহলে আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই।’
সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট থাকার যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটির ব্যাপারেও আপত্তি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে রেজওয়ানুল হক রাজা জানান, ‘কমিশনের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, এটি কোনো কঠোর সময়সীমা নয়, বরং কেন্দ্রের জায়গার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় সাধারণ নির্দেশনা মাত্র। সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা সীমিত করার উদ্দেশে এটি নয়।’
বিজেসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, কমিশন আন্তরিকভাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করতে চায়। এমনকি তারা নিজেরাও মনে করেন, সিসি ক্যামেরা না থাকলেও সাংবাদিকদের ক্যামেরা উপস্থিত থাকলে ভোটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হয়।’
বৈঠকে সরাসরি সম্প্রচার নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল থাকা উচিত, যেন লাইভ সম্প্রচারে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে। তবে কোনো অনিয়ম বা কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের দায়িত্ব হবে সেটি তুলে ধরা। এই ধরনের বাস্তব পরিস্থিতিতে কঠোর সম্প্রচার-নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন দ্রুত আমাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবে। এতে সাংবাদিকরা আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন, একই সঙ্গে ভোটের স্বচ্ছতা ও জনগণের জানার অধিকারও সুরক্ষিত হবে।’
আরএফইডি সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, ‘নীতিমালায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা ক্যামেরাপারসনের ওপর আক্রমণ হলে দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিলে বা হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নীতিমালায় নির্দিষ্টভাবে যুক্ত করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সাংবাদিকদের অবাধ কাজের পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন যদি আমাদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে নির্বাচনী কাভারেজ আরও বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।’
নন-এমপিও শিক্ষকদের পূর্ব ঘোষিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় চার শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় বলে জানা যায়।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- আসাদুজ্জামান (৪৭), ইকবাল হাসান (৪০), মোস্তাকিম (৪৫) ও বাবু (৩৬)।
আহত আসাদুজ্জামান জানান, পূর্ব ঘোষিত আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ আমাদের উপর জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ও লাঠিচার্জ করে। পরে আহত অবস্থায় আমাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে আহত অবস্থায় চার শিক্ষককে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নন-এমপিও শিক্ষকরা জানান, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছি। বর্তমানে আমরা বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। শিক্ষকদের এক দফা হলো- সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা।
দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে অনুভূত হতে শুরু করেছে শীত। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকে ইতোমধ্যে লেপ-তোশক বানানোর কাজ শুরু করেছেন। তবে লেপ-তোশক বানানোর উপকরণের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কারিগরদের মজুরি। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দাম গুণতে হবে ক্রেতাদের।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা দোকানে লেপ-তোশকের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। ধুনকররাও লেপ-তোশক বানাতে শুরু করেছেন।
শহরের দেওয়ান বাড়ি রোডের কারিগর মিঠু মিয়া জানান, ৫-৭ ফিট সাইজের জাজিম তৈরিতে মজুরি নিচ্ছেন ৩৫০-৪০০ টাকা, ৬-৭ ফিট সাইজের জাজিমে ৪৫০-৫০০ টাকা, ৪-৫ হাত সাইজের লেপ বানানোর মজুরি ৩০০ টাকা, ৫ হাত বাই ৫ হাত সাইজের ৪০০ টাকা, ৬ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের তোশক ৩০০ টাকা এবং ৫ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের তোশক ২০০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় আইটেম ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি।
তার কারখানায় এখন দৈনিক ৮-১০টা লেপ তৈরি হচ্ছে। অনেকে আবার পুরোনো লেপ-তোশক ঠিকঠাক করে নিচ্ছেন। শীত বাড়লে ব্যস্ততাও বাড়বে। এখন চারজন কারিগর কাজ করছেন। ভরা মৌসুমে কারিগরদের সংখ্যাও বাড়বে।
এক বছরের ব্যবধানে মজুরি বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মিঠু মিয়া বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামত কমে না। আগের মতো ব্যবসাও নেই। এখন অনেকে রেডিমেডের ওপর নির্ভর করেন। বছরের এ সময়টা ধুনকরদের আয়ের একটা সময়। একজন কারিগরের সারাদিনের আয় দিয়ে যদি ঠিকমতো সংসারের খরচ না জোটে তাহলে তো তারা এ পেশা ছেড়ে দেবেন। এছাড়া লেপ-তোশক বানানোর যে উপকরণ তার দাম প্রতি বছর বাড়ছে। এসব কারণে এবার মজুরি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। তবে মৌসুমি কারিগরদের কাছে কিছুটা কম মজুরিতে মিলছে লেপ-তোশক।’
মেহের নিগার নামের এক কারিগর বলেন, শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে তাদের কাছে অর্ডার আসে। শীতের এ সময়টা তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। তবে শীত এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় তেমন চাপ নেই। প্রতিদিন ৪-৫টা করে লেপের অর্ডার পাচ্ছেন। ভরা শীতে ১৫-২০টা পর্যন্ত লেপ বানাতে হয়। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে জায়গা, সুতা ও শ্রমিকদের তৈরি করা হয়েছে।
মেহের নিগার বলেন, ‘শহরের ধুনকরদের তুলনায় এ এলাকায় মজুরি কিছুটা কম। এখানে পুরুষরা অন্য কাজ করলেও বাড়ির নারীরা বছরের এ সময়টা লেপ-তোশক বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। ঘরে বসে না থেকে এতে তাদের বাড়তি যা আসে তা সংসারের কাজে লাগে। তবে আগের মতো হাঁকডাক নেই এখন। অনেকেই গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় লেপ-তোশক তৈরি করছেন।’
এনামুল হক জানান, ‘৫-৭ ফিট সাইজের জাজিম বানাতে খরচ পড়ছে ২,৩০০-২,৫০০ টাকা, ৬ ফিট বাই ৭ ফিট সাইজের জাজিমে পড়ছে ৩,০০০-৩,৫০০ টাকা। পাঁচ বছর আগেও ৪-৫ হাত সাইজের রেডিমেড লেপ বিক্রি হতো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। অর্ডার দিয়ে বানানো ওই সাইজের লেপ গত বছর ১,২৫০-১,৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে ১,৫০০-১,৬০০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘৫ হাত বাই ৫ হাত সাইজের রেডিমেড লেপ ছিল ১,১০০ টাকা, এখন হয়েছে ১,২০০ টাকা। অর্ডার দিয়ে ওই সাইজের লেপ বানালে খরচ পড়বে ১,৮০০-২,০০০ টাকা। আর লেপের কভারসহ সেটা বিক্রি হবে ২,২০০ থেকে ২,৩০০ টাকা। যা গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম পড়বে।’
লেপ-তোশক বিক্রেতা রাজা মিয়া বলেন, লেপ বানানোর ভালো মানের লাল শালুর গজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা ও মাঝারি মানেরটা ৪৫-৫০ টাকা। যা গত বছর ৫৫ ও ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। তোশক বানানোর কাপড়েও প্রতি গজে দাম বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। জাজিম বানানোর কাপড়ের দাম বেড়ে ৯০-১০০ টাকা থেকে হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা।’
সিও বাজারের লেপ-তোশক বিক্রেতা আরমান হোসেন বলেন, ‘এখন আগের মতো এ ব্যবসায় লাভ নেই। অনেক ফরিয়া ব্যবসায়ী গ্রামে ফেরি করে লেপ-তোশক বিক্রি করছেন। বাড়িতে হাতের কাছে জিনিস পেলে তো কষ্ট করে দোকানে আসতে হচ্ছে না। যদিও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের বড় ক্রেতা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গার্মেন্টর ঝুট বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা, যা গত বছর ছিল ২২-২৫ টাকা, ভালো মানের কালো ব্লেজার তুলা ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা, লেপের তুলা ৭৫-৮০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা।
গাইবান্ধা জেলার নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। গত শনিবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারী করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এর আগে সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে গাইবান্ধার ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে গাইবান্ধার বিদায়ী জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার চাকরি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন মডেল এবং নকশাকার বিবি রাসেলের সম্মানে ফরিদপুরে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘বিবির মেলার’ সমাপ্তি হয়েছে। ফরিদপুরের অম্বিকা ময়দানে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হওয়া এই মেলা শনিবার রাতে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজকরা জানান, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক কাজগুলোকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার এই আয়োজন ছিল পুরোপুরি সফল।
বিবি রাসেলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তারই সম্মানে ফরিদপুরসহ দেশের ৩০ জেলার উদ্যোক্তাদের সমৃদ্ধ করতে ‘কৈফিয়া’ আয়োজন করেছিল এই মেলা। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই বিবির মেলার অনুষ্ঠিত হলো ফরিদপুরে। দেশীয় পণ্যের প্রসার, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করতে অম্বিকা ময়দানে হাজির হয়েছিলেন বিবি রাসেল নিজে।
বিবি গামছার শাড়ি, ফরিদপুরের নকশি কাঁথা, রাজশাহীর সিল্ক, মৃৎশিল্প, লাইব্রেরিসহ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার ৫০ টিরও বেশি স্টল ছিল মেলাজুড়ে। ঐতিহ্যকে ধারণ করে বসা স্টলগুলোতে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। মেলা শেষ হয়ে গেলেও, উদ্যোক্তারা তাদের হাতে তৈরি শিল্পকে বিবির মেলায় তুলে ধরতে পেরে উচ্ছ্বসিত।
দর্শনার্থীদের ভিড় বলে দিয়েছে, দেশীয় ঐতিহ্য আর শিল্পকলার প্রতি তাদের টানটা এখনো কতটা গভীর। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিবি রাসেলের নামে আয়োজিত এই মেলা যেন তাদের কাছে ছিল তিন দিনের এক মহোৎসব। নিজ দেশের শিল্পকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার এক আন্তরিক বাসনা নিয়ে তারা মেলায় এসেছিলেন।
মেলাটির আয়োজনে দ্বিতীয়বার সফল হওয়ায় উচ্ছ্বসিত আয়োজক কমিটি। তাদের কথায়, এই ‘বিবির মেলার’ মূল লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক কাজগুলোকে, যা এতদিন গ্রামের নিভৃতে ছিল, সেগুলোকে সরাসরি বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।
দেশীয় শিল্পের এই শক্তি প্রমাণ করে, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বিশ্ব জয়ের জন্য প্রস্তুত। ফরিদপুরের অম্বিকা ময়দানে তিন দিনব্যাপী এই ‘বিবির মেলা’ গত শনিবার রাতে শেষ হয়েছে; কিন্তু এর প্রেরণা ছড়িয়ে থাকবে আগামী প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মাঝে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটননগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। তবে কলেজ সড়কের একটি বৃহৎ এলাকাজুড়ে থাকা দীর্ঘদিনের ময়লার ভাগাড় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাগাড়টির পাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ, দ্য বাডস রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দুটি মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘনবসতি এলাকা। দুর্গন্ধ ও দূষণে দীর্ঘদিন বিপাকে আছেন সবাই।
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় অবশেষে রোববার ওই ময়লার ভাগাড়ের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধ ও বর্জ্যের বিষাক্ত উপাদান পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আমরা অনেক মানববন্ধন করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
স্থানীয়রা আরও বলেন, ১৯৩৫ সালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা প্রতিষ্ঠার সময়। তৎকালীন ভাড়াউড়া চা-বাগান রোড-সংলগ্ন এলাকাকে শহরের ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবসতি তৈরি হলে পরিস্থিতি ঘনীভূত হয়। সমস্যার সমাধানে ২০১৩ সালে শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের জেটি রোড এলাকায় হাইল হাওরের পাদদেশে ২ দশমিক ৪৩ একর জমি ক্রয় করে পৌরসভা। তবে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরোধিতায় ভাগাড় স্থানান্তর কার্যক্রম থেমে যায়।
সম্প্রতি বিগত আওয়ামী সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর আন্দোলন আবারও তীব্র হয়। চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভের পর অবশেষে আজ (রোববার) ভাগাড়ে তালা দেওয়া হলো। এলাকাবাসীদের দাবি, ভাগাড়টি দ্রুত স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করতে হবে এবং বিকল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক ইসলাম উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ময়লার ভাগাড়টি দীর্ঘদিনের সমস্যা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এটি স্থানান্তরের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সবাইকে নিয়ে আমরা সমস্যাটির সমাধান করব।
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখিবে তাই, পাইলে পাইতে পারও অমূল্য রতন’ কবির এই অমর পঙ্গক্তির বাস্তব প্রতিফলন যেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মামুন শেখ। অন্যদের চোখে যা বর্জ্য, তার চোখে সেটাই সোনার খনি। এক টুকরো চুম্বক আর এক দড়ির সাহায্যে তিনি বদলে দিয়েছেন নিজের ভাগ্য।
মাত্র ৫০০ গ্রাম ওজনের বিশেষ এক চুম্বক বেঁধে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান মামুন শেখ। রাস্তার পাশে ছড়িয়ে থাকা তারকাঁটা, নাট-বল্টু, পেরেক কিংবা ভাঙা লোহার টুকরো—সবই তার চুম্বকের টানে ধরা পড়ে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত লোহা সংগ্রহ করেন তিনি। ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে মাসে আয় করেন প্রায় ৬০ হাজার টাকারও বেশি। এ কারণেই এখন সবাই তাকে ডাকে ‘চুম্বক মামুন’ নামে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এসব দর্শকদের দেখাতে থাকেন।
গত শনিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুরে রাস্তায় লোহা সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাকে। কৌতূহলী মানুষজন আগ্রহভরে ঘিরে দেখছিলেন তার এই অভিনব কাজ। গোপালপুর পৌর শহরের রাস্তায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে প্রায় ১৩ কেজি লোহা সংগ্রহ করেছেন। কেউ ভিডিও তুলছিল, কেউবা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সেই দৃশ্যের দিকে। একটি চুম্বক, এক দড়ি আর এক ইচ্ছাশক্তি এই তিনে ভর করেই মামুন শেখ তৈরি করেছেন জীবিকার নতুন দিগন্ত।
কথা হলে মামুন শেখ বলেন, এই কাজ দেখতে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগে; কিন্তু আমি এই কাজটা ভীষণ উপভোগ করি। দেশের নানা জায়গায় ঘুরি, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই, নানা খাবারের স্বাদ নেই। এই কাজের মাধ্যমেই জীবনটা উপভোগ করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, ৫ সন্তানকে বাড়িতে রেখে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই এই পেশায় নেমেছেন মামুন।
আভুঙ্গী এলাকার অটোভ্যানচালক আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘রাস্তায় থাকা তারকাঁটায় গাড়ির টায়ার ফুটো হয়ে যেত। মামুন ভাই এসব লোহা তুলে নেওয়ায় এখন আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের সোরা গ্রামের লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত অভিরন বাঁচতে চায়। দীর্ঘদিন ধরে বিধবা হলেও তার ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতার কার্ড। অভিরন সোরা গ্রামের মৃত ওয়াজেদের স্ত্রী।
সরজমিনে জানা যায়, অভিরোন বিবি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই সংকটময় হয়ে উঠেছে। তার স্বামী বহু দিন পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন স্বামী মৃত্যুবরণ করলেও এখন পর্যন্ত পাননি বিধবা ভাতার কার্ড। একটি মাত্র কন্যা বিবাহিত। অসহায় কষ্টও সীমাহীন। দীর্ঘদিন ধরে লিভার রোগে আক্রান্ত তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছেন। অভিরোন বিবির জীবনটা শুরু থেকে কষ্টের। স্বামীর মৃত্যুর পরে একটি মাত্র কন্যাকে বড় করার জন্য দিনমজুরের কাজ শুরু করে। অনেক কষ্ট করে মেয়েক বড় করে বিয়ে দেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনভাবে তার জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ অভিরোন বিবি অসুস্থ হয়ে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েন। পরে অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে যে, তার লিভারে ক্যান্সারের জটিল রোগ। চিকিৎসার জন্য অভিরোন বিবিকে বহু থেরাপি নিতে হবে, যার খরচ প্রতি থেরাপি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পুরো চিকিৎসার জন্য প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন। অভিরোন বিবির উন্নত চিকিৎসা করার জন্য কোন অর্থ সম্পদ নাই। অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ১/২ দিনের ভেতরে থেরাপি না দিলে তার বেঁচে থাকা অসম্ভব হতে পারে। অভিরোন বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন মৃত্যুবরণ করলেও বেশ কয়েকবার অনলাইনে আবেদন করে এখন পযর্ন্ত বিধবা ভাতার কার্ডটি পেলাম না। বর্তমানে আমি মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। এ সময় তিনি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট বিধবা ভাতার কার্ড ও উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আবেদন জানান। সমাজের দানশীল, সমাজসেবক, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সাহায্যের আবেদন যাতে তিনি বিবি বাঁচতে পারেন। এ বিষয়ে রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আল মামুন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি আর্থিক সহযোগিতা করব এবং তার বিধবা ভাতার কার্ডটি পাওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করব।
মাগুরায় যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে ‘গণপ্রকৌশল দিবস ২০২৫’ ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রোববার সকাল ১০টায় আইডিইবি মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে ভায়না মোড়ে আইডিইবি কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘দক্ষ জনশক্তি-দেশ গঠনের মূল ভিত্তি’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাহবুবুল হক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ, নির্বাহী প্রকৌশলী, ওজোপাটিকো মাগুরা; প্রকৌশলী এটিএম বেনজির রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, মাগুরা; এবং প্রকৌশলী কাজী সিরাজুদ্দোহা, অধ্যক্ষ, টিটিসি মাগুরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, মাগুরা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান টিটো সাধারণ সম্পাদক আইডিইবি মাগুরা জেলা শাখা।
কুষ্টিয়া, ঢাকা, খুলনা, গাজীপুর, বগুড়া, নোয়াখালীসহ ১৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শনিবার মধ্যরাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৬ জন ডিসিকে অন্য জেলায় বদলি এবং উপসচিব পদমর্যাদার ৯ জন কর্মকর্তাকে ৯টি জেলায় ডিসির দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলার নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইকবাল হোসেন। তিনি এর আগে রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
একই প্রজ্ঞাপনে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনকে হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
প্রশাসনের এই নতুন রদবদলের ফলে কুষ্টিয়াতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। বদলিকৃতদের মধ্যে বাগেরহাটের ডিসি আহমেদ কামরুল হাসানকে নোয়াখালী, ভোলার ডিসি আজাদ জাহানকে গাজীপুর, বরগুনার ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আলমকে ঢাকা, সিরাজগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে গাইবান্ধা ও খুলনার ডিসি তৌফিকুর রহমানকে বগুড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সনদ্বীপ কুমার সিংহকে বরগুনা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সচিব (উপসচিব) আমিনুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জ, বাণিজ্য উপদেষ্টার একান্ত সচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে মাগুরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সাঈদকে পিরোজপুর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পাবনার জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মিজ আফরোজা আখতারকে সাতক্ষীরা, স্থানীয় সরকার ফেনীর উপপরিচালক (উপসচিব) গোলাম মো. বাতেনকে বাগেরহাট, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) একান্ত সচিব স. ম. জামশেদ খোন্দকারকে খুলনা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব ডা. শামীম রহমানকে ভোলার ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে।
বিগত ১০ বছর যাবত নরসিংদী জেলার উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা জলপাই চাষে ঝুঁকে পড়েছে। জেলার পাহাড়ি এলাকা শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার কৃষকরা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে জলপাই চাষ শুরু করেছে। এ অঞ্চলটি সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত থাকলেও গত কয়েক বছর যাবত পাহাড়ি এলাকার অধিকাংশ চাষি সবজি চাষ বাদ দিয়ে জলপাই চাষের প্রতি আগ্রহ হয়ে পড়ছে বেশি। রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের ধুকুন্দী গ্রামের জলপাই চাষি আলিম উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে তিনি তার জমিতে সবজি চাষ করতেন তার বাড়ির আঙিনায় মাত্র চারটি জলপাই গাছ ছিল।
এ চারটি গাছ থেকে তিনি ১ বছরে ১,৫০০ কেজি জলপাই পান এবং প্রতি কেজি জলপাই ৩০ টাকা করে মোট ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এরপর থেকে তিনি লাভ বেশি হওয়ায় সবজি চাষ বাদ দিয়ে জলপাই চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি ২ একর জমিতে প্রায় ৪০০ জলপাই গাছের চারা রোপণ করেছেন।
২ একর জমি থেকে এ বছর তিনি আনুমানিক ১২ হাজার কেজি জলপাই পেয়েছেন এবং প্রতি কেজি জলপাই পাইকারি ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এতে তার সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। জেলার শিবপুর উপজেলার শিবপুর বাজার, যশোর বাজার, মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া বাজার, বেলাব উপজেলার বেলাব বাজার ও রায়পুরা উপজেলার বারৈচা, মরজাল ও জঙ্গী শিবপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রতি কেজি জলপাই ২০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এসব জলপাই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। শিবপুর উপজেলার কামারটেক গ্রামের জলপাই চাষি আব্দুর বারেক জানায়, তিনিও ইতোমধ্যে সবজির চাষ করতেন।
খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় তিনি জলপাই চাষ শুরু করেছেন। তিনি বর্তমানে একজন সফল জলপাই চাষি হিসেবে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এলাকায় জলপাই চাষি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। অধিকাংশ পাইকাররা তার বাড়ি গিয়ে জলপাই ক্রয় করে নিয়ে আসে।
নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার স্বাক্ষর চন্দ্র বনিক জানান, বর্তমানে নরসিংদীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জলপাই চাষ করা হচ্ছে এবং সেগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
জয়পুরহাটের তিনটি হিমাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের নির্ধারিত সময়ের আগে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ৫৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার বস্তা বীজ আলু ছিল। হিমাগার থেকে সংরক্ষিত আলু বের করতে এসে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা গোপনে আলু বিক্রির ঘটনাটি জানতে পারেন। ইতোমধ্যে হিমাগারে আলু বিক্রি করার ঘটনাটি তদন্ত করছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা। যে তিনটি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করা হয়ে সেগুলো হচ্ছে, পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকায় অবস্থিত সাথী হিমাগার লিমিটেড, ক্ষেতলালের ভাসিলা এলাকায় অবস্থিত মোল্লা হিমাগার লিমিটেড ও ক্ষেতলালের আয়মাপুরে অবস্থিত হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার। এর মধ্যে সাথী হিমাগার লিমিটেড ২০ হাজার বস্তা, মোল্লা হিমাগার লিমিটেডে ৩০ হাজার বস্তা ও হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার ৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করে দিয়েছে। এই তিনটি হিমাগারে গিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে সংরক্ষণের নির্ধারিত সময়ের আগেই আলু বিক্রির ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হিমাগার শেডে নষ্ট আলু বাছাই করছেন নারী শ্রমিকরা। অন্যদিকে সংরক্ষিত আলু না পেয়ে কৃষকরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে ভিড় করছিলেন। এ সময় কৃষকরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। সেখানে ১০-১৫ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সাথী হিমাগার লিমিটেডে বিপুল পরিমাণ আলু ও বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। আগামী ১৫ নভেম্বর তাদের আলু ও বীজ আলু সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে।
তারা এখন তাদের সংরক্ষিত আলু ও বীজ আলু হিমাগারে নিতে আসেন। হিমাগার কর্তৃপক্ষ তাদের দীর্ঘক্ষণ আলুর জন্য বসিয়ে রাখেন। এরপর তাদের এক মাস আগে হিমাগার থেকে ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রির কথা জানানো হয়। এর মধ্যে তাদের আলু রয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেওনালা গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘সাথী হিমাগারে ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আলু তুলতে এসে জানতে পারি আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে আলু বিক্রির বিষয়টি আগে জানায়নি। এছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদ ছিল। টাকা দিয়ে আলু সংরক্ষণ করে আমার আলু তারা বিক্রি করে দেয়।’
পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাথী হিমাগারে ভালো মানের ১০০ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আলু রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। আজ হিমাগারে এসে দেখি আমার আলু নেই। কাগজপত্র দেখে হিমাগারের ব্যবস্থাপক আমাকে জানালেন একমাস আগে আমার আলু বিক্রি করা হয়েছে। এমনিতেই গত বছর আলুতে অনেক লোকসান হয়েছে। এখন আমি কী করে জমিতে আলু লাগাব।’
পাঁচবিবি উপজেলার কাঁকড়া এলাকার শিশির মণ্ডল বলেন, ‘আমি সাথী হিমাগারে ১২৪৩ বস্তা আলু রেখেছিলাম। এখন এসে দেখছি আমার শুধু ১৪৩ বস্তা আলু আছে। হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমার ১,১০০ বস্তা আলু বিক্রি করে দিয়েছে। আমার আলু তারা তো বিক্রি করার কেউ না। এই ক্ষতির সুষ্ঠু বিচার চাই।’
পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া এলাকায় অবস্থিত সাথী হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. শামসুল হক বলেন, ‘এই বছর আমাদের হিমাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ২৬ হাজার বস্তা আলু কৃষক জোর করে রেখেছিলেন। এ কারণে কিছু আলু নষ্ট হতে শুরু করেছিল। আমরা প্রায় ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। এখন কৃষকদের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী টাকা দিচ্ছেন। কেউ বীজ আলু দাবি করলে তাদের আমাদের নিজস্ব সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু আছে সেখান থেকে বীজ আলু দেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘আমরা হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে যেন কেউ কৃষকের আলু বিক্রি না করে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত হিমাগারে আলু সংরক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন মো. বাচ্চু মণ্ডল। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলার সকল হিমাগারে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে জেলার পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও জয়পুরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর উজ্জ্বল বাইন।
জয়পুরহাট আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত আলু তাদের না জানিয়ে বিক্রি করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ ৪০৬ ধারার অপরাধ করেছে। যদি কেউ মামলা করতে চায়। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। কৃষককে না জানিয়ে আলু বিক্রি করা একটা অপরাধ। বিষয়টি আমি নিজে তদন্ত করছি। এর মধ্যে মোল্লা হিমাগার লিমিটেডে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করে দিয়েছে। এখন তাদের বর্তমান বাজার অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত অক্টোবর-২০২৫ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ২০৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
জব্দকৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- ৩ কেজি ২৬২.৭৬ গ্রাম স্বর্ণ, ১১ কেজি ৪১০ গ্রাম রূপা, ৩৩,৯১০টি শাড়ী, ১৯,৫৮০টি থ্রিপিস/শার্টপিস/চাদর/কম্বল, ১৬,৯৯১টি তৈরী পোশাক, ৫৬৯ মিটার থান কাপড়, ১,৭১,৯৪৬টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৬,২২৭ পিস ইমিটেশন গহনা, ১৭,৬১,৫২৬টি আতশবাজি, ৬,০৫২ ঘনফুট কাঠ, ৪,৫৮৯ কেজি চা পাতা, ১০,৩৯২ কেজি সুপারি, ৩১,৬৫১ কেজি কয়লা, ৫৩৫ ঘনফুট পাথর, ৩৭,৩৫৫ কেজি সুতা/কারেন্ট/দুয়ারি জাল, ২৫১টি মোবাইল, ৩১,৬৭৮টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৪৮,২৮৬টি চশমা, ৪০,৮২৬ কেজি জিরা, ৯,৯১৪ কেজি চিনি, ২৬,৪৫৮ কেজি পিয়াজ, ৬০১ কেজি রসুন, ৫,৩৭৮ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৭,৬৯০ কেজি সার, ৫,০২৪ প্যাকেট কীটনাশক, ৩,০০২ লিটার ডিজেল, ১,০৯,৭৩২ পিস চকোলেট, ১,৫০০টি গরু/মহিষ, ১০টি ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান, ২১টি পিকআপ/মহেন্দ্র, ২টি ট্রাক্টর, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯টি ট্রলি, ১৯৭টি নৌকা, ৩২টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৪৯টি মোটরসাইকেল এবং ৩০টি বাইসাইকেল/ভ্যান।
উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ৪টি দেশী/দেশীয় পিস্তল, ১টি রিভলবার, ৩টি মর্টার সেল, ৬টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৩টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গোলাবারুদ, ২৫০ গ্রাম বিস্ফোরক, ২টি ডেটোনেটর, এবং ৭টি অন্যান্য অস্ত্র।
এছাড়াও গত মাসে বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১৩,৮২,৪৬২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ কেজি ২০৫ গ্রাম হেরোইন, ৫,৪৬৫ বোতল ফেনসিডিল, ১০,৫৮২ বোতল বিদেশী মদ, ২৫১.৫ লিটার বাংলা মদ, ১,২৬৭ ক্যান বিয়ার, ১,৭৮২ কেজি ২৪০ গ্রাম গাঁজা, ১,৩০,৭৫৯ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৫৫,৯১৭টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৪,০৮২ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৬,৩০৯টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ১৩০ কেজি ইয়াবা পাউডার এবং ৭,২৭,৭৬৮ পিস বিভিন্ন প্রকার ঔষধ ও অন্যান্য ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮৪ জন চোরাচালানী এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ২১০ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ০৩ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৪৯৩ জন মায়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে।