বাজারে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অক্টোবরে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে চলতি মাসের শুরুতেই প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে আমদানি না থাকা ও দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শুধু পেঁয়াজই নয়; নিত্যপণ্যের বাজারেও বইছে উত্তাপ। রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজি আসায় কিছুটা দাম কমলেও তা নাগালে আসছে না মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগের দিন গত বৃহস্পতিবার ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ গতকাল শুক্রবার ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর কাপ্তান বাজার, মালিবাগ বাজার, রামপুরা বাজার ও ডেমরার সারুলিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। মুদি দোকানগুলোতে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। তবে এসব বাজারে ভ্যান-গাড়িতে ১০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
কী বলছেন ব্যবসায়ীরা: এ বছর পেঁয়াজের আমদানি খুব বেশি হয়নি। দেশি পেঁয়াজের ওপর বাজার নির্ভর ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। নভেম্বরে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।
কাপ্তান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি বাজারে না পাওয়ায় প্রতিদিন দাম বাড়ছে। তিন-চারদিন আগেও ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। গত বৃহস্পতিবারও ৯০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ (শুক্রবার) সেটি ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এদিকে পাইকারি বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, যা গত শুক্র-শনিবারও বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮৫ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তদার মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মূলত দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে।’
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট চলছে। দেশে এখন আর পেঁয়াজের তেমন মজুত নেই। যার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।’
অন্যদিকে, পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, এ বছর বিভিন্ন জেলায় পেঁয়াজ রোপণ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এর ফলে রবি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতেও কিছুটা দেরি হচ্ছে। অন্য বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রবি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। এ বছর অনেক জেলায় এখনো পেঁয়াজ জমি থেকে উত্তোলন সম্ভব হয়নি।
নিত্যপণ্যের বাজারেও উত্তাপ: রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজি আসায় কিছুটা দাম কমলেও তা ক্রেতাদের নাগালে আসছে না। বিভিন্ন বাজার ঘুরে প্রায় প্রতিটি সবজি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম কমেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, এখনো সবজির দাম বেশি।
গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় টমেটো ১২০ টাকা, দেশি টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০-১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, দেশি শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০-৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০-১৬০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ২০০-৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে।
সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবজির দাম কিছুটা কমের দিকেই আছে এখন। শীত প্রায় চলে আসছে; এখন দাম আরও কমে যাবে হয়তো।’
বাজার করতে আসা সাইফুল হক বলেন, ‘দোকানদাররা বলছেন দাম নাকি কমেছে। কিন্তু এখনো তো সবজির দাম বেশি। ছোট একটা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর অন্য সবজিগুলোর দামও বেশিরভাগ ৮০ টাকার ওপরে। শুধু পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার দামই কম। তো সব কিছু যদি এত দামে বিক্রি হয় সেগুলো কি কম দাম বলা যায়? আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কীভাবে চলবে?’
মুরগির মাংসের বাজারও চড়া: বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, শীত আসছে বা শীতকালে মুরগির দাম কম থাকে। তবে এখন দাম কিছুটা বাড়তি। তবে কক মুরগির দাম কমেছে।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৬৩-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯৩-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০-১১৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম প্রায় একই রকম রয়েছে। কক মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকার মতো। এছাড়া সব ধরনের ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১০ টাকা করে কমেছে। আর অন্য মাংসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
মুন্সীগঞ্জ চিকেন হাউসের বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের থেকে কক মুরগির দাম কমেছে। লেয়ার আর ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় একই রকম আছে, কমেনি। শীতে সাধারণত দাম কমে, এবার কী হবে এখনো বলা যাচ্ছে না।’
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ ৯০০-২,৯০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১,২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১,০০০-১,২০০ টাকা, মেনি মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০-৯০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১,২০০-১,৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।