ভোরের আলো ফুটতেই রান্না শুরু করতে হয় হালিমা বেগমকে। ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছোঁয়ার আগেই সকালের নাশতাসহ শেষ করতে হবে দুপুরের রান্না। নভেম্বরের শুরু থেকে এটিই সকালের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকার এই বাসিন্দার। কারণ, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা, এই ৪ ঘণ্টা থাকছে না গ্যাস। ফলে ভোরে উঠেই সারতে হয় রান্না।
এই ভোগান্তি শুধু বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দাদের নয়, নগরীর বাকলিয়া, অক্সিজেন, মোহরা, খাজা রোড, আশকার দীঘিরপাড়, পাহাড়তলী, সাগরিকা রোড, পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলীসহ বেশ কিছু এলাকায় চলছে গ্যাস-সংকট। গ্যাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে আছেন গ্রাহকেরা। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক চুলায় রান্নাবান্না করছেন, আবার কেউ নতুন করে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার কিনে ফেলেছেন। এ ছাড়া বস্তিবাসীরা বেছে নিয়েছেন মাটির চুলা। প্রতি মাসে ৯৭৫ টাকা গ্যাস বিল দেয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন চার ঘণ্টা গ্যাস থাকছে না। যে কারণে বৈদ্যুতিক চুলা, সিলিন্ডার কিংবা লাকড়ির মতো বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের কারণে গ্রাহকের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।
চট্টগ্রামে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, শীত এলে গ্যাস-সংকট দেখা দেয়াটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা শীতকালে অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার হয়। এখন নতুন করে যোগ হয়েছে গ্যাসের জাতীয় সংকটও। দুইয়ে মিলে বেড়েছে সমস্যা।
কেজিডিসিএল জানিয়েছে, কোম্পানিটির বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হয়। আবেদন করা গ্রাহকদের গ্যাস-সংযোগ দেয়া হলে সেই চাহিদা ৪৫ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে এখন প্রতিদিন জাতীয় গ্রিড থেকে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসও পাচ্ছে না কোম্পানিটি। আবার যে গ্যাস পাচ্ছে তার অর্ধেক চলে যায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বাকি গ্যাস দিয়েই আবাসিকসহ অন্যান্য জায়গায় চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও বিতরণের অভাবে গ্যাস-সংকট বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গ্যাস-সংকট নিরসন করতে আমরা অনেকবারই কেজিডিসিএলকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা সমাধান করতে পারেনি। গ্যাস লাইনের লিকেজ ও অপচয় কমানো গেলে এই সংকট হতো না।’
তবে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আমিনুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ‘এত দিন কর্ণফুলী ইউরিয়া সার কারখানা (কাফকো) বন্ধ থাকায় গ্যাস-সংকট ছিল না। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ায় সেখানে গ্যাস দিতে হচ্ছে। আর জাতীয় গ্রিড থেকেও এখন আমরা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছি না। ঢাকাতেও গ্যাস সংকট বেড়েছে। তবে আশা করছি দ্রুত সমস্যা কেটে যাবে।’
রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ রবিবার বিকাল ৫ টায় কোস্ট গার্ড স্টেশন টেকনাফ কর্তৃক টেকনাফ থানাধীন নাফ নদী সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় সন্দেহজনক একটি ডিঙি বোটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৩৭ টাকা মূল্যের ৩০৪.৮৬ গ্রাম স্বর্ণসহ দুইজন পাচারকারীকে আটক করা হয়।
জব্দকৃত স্বর্ণ, পাচারকাজে ব্যবহৃত ডিঙি বোট ও আটককৃত পাচারকারীদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মঙ্গু শিকদার (৬৮) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত রোববার রাত ১১টার উপজেলার কাকডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার কাকডাঙ্গা গ্রামের মৃত আমজেদ শিকদারের ছেলে ও পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সোমবার সকালে মঙ্গু শিকদার কে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই কোটালীপাড়া উপজেলার ওয়াবদার হাট নামক স্থানে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা জড়ো হয়ে মহাসড়কে গাছ ফেলে বিক্ষোভ করে। এতে জনমনে আতঙ্ক ও জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় পুলিশ একশ ৫৫ জনকে জ্ঞাত ও এক হাজার পাঁচশ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকারি হাফিজুর রহমান বলেন, ১৬ জুলাই মহাসড়কে গাছ ফেলে বিক্ষোভের ঘটনায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে মঙ্গু শিকদারকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ পর্যন্ত এই মামলায় আমরা ৬২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কুটির শিল্পের গ্রাম নামে খ্যাত যশোরের কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল তেইশ মাইল। এটি ও পাশের দুই গ্রামের বাড়ি বাড়ি গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০০ কারখানা। এসব কারখানায় কাঠ দিয়ে প্লেট, ফুলদানি, কলস, বাটি, পাউডার কেস, বয়াম, ডিম সেট, আপেল সেট, খুন্তি, হামাম, পিঁড়ে, বেলান, অ্যাশট্রে, মোমদানি, হারিকেন, পেন্সিল ফুলদানি, চরকা, ধামা পাতি, কয়েরদানি, টিফিন বক্স, ব্যাংক, সিঁদুর বাক্সসহ ৩০ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করে প্রায় ৫০০ পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে।
বর্তমানে কাঠের তৈরি প্লেটসহ অনেক সামগ্রী এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ সহ অনেক দেশে যাচ্ছে। এ পেশায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এক যুগ আগেও অর্থাভাবে থাকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষের সংসারে এখন কুটির শিল্পের মাধ্যমে এসেছে সচ্ছলতা। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।
জানা গেছে, উপজেলার আলতাপোল গ্রামের ইনসার আলী নামে এক ব্যক্তি ভারত থেকে এসব পণ্য তৈরির কাজ শিখে ২০০০ সালে এলাকায় ফিরে আসেন। পরে তিনি আলতাপোল গ্রামে কাঠ দিয়ে পণ্য তৈরি শুরু করেন। তার সফলতা দেখে এলাকার অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হন। গ্রামের ৬৫ ভাগ মানুষ বাড়িতেই মোটর কিনে গড়ে তোলেন প্রায় ৪০০ কারখানা। অর্থাভাবে থাকা এলাকার বেকার যুবকসহ নারীরা জড়িয়ে পড়েন এ কাজে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষেরাও শ্রমিক হিসেবে এখন কাজ করছেন আলতাপোল কুটির শিল্পে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আয় বেড়েছে তাদের সংসারে।
কুটির শিল্পকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় সম্প্রতি আলতাপোলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের প্রথম জীবিকায়ন শিল্প পল্লি। এর মাধ্যমে এ পল্লির প্রায় ৬০০ পরিবার সরকারি অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহায়তায় নিজেদের ব্যবসার আরও বেশি উন্নয়ন করার সুযোগ পাবেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, আলতাপোল তেইশ মাইলে সব কারখানায় মেহগনি কাঠ থেকে কুটির শিল্পের এসব পণ্য তৈরি করা হয়ে থাকে। স্থানীয় ১২টি করাতকলে মেহগনি কাঠ নির্দিষ্ট মাপে কেটে টুকরো করা হয়। পরে শ্রমিকেরা টুকরো করা কাঠের ছাল উঠিয়ে রোদে শুকাতে দেন। দুই থেকে তিন দিন রোদে শুকানোর পর কারখানায় আনা হয় এসব কাঠ। পরে বৈদ্যুতিক মোটরে লাগানো ঘূর্ণায়মান রোলারে কাঠ আটকিয়ে ধারালো বাটালির ছোঁয়ায় খোদাই করে তৈরি করা হয় হরেক রকমের পণ্য। এসব পণ্যে সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে মসৃণ করে রং পলিশ ও ফার্নেস করার পর বিক্রি উপযোগী করে তোলা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনকি গভীর রাত অবধি চলে এ কর্মযজ্ঞ। শ্রমিকদের তৈরি করা পণ্যের পিচ হিসেবে দেওয়া হয় মজুরি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
আলতাপোল, মঙ্গলকোট ও কন্দর্পপুর গ্রামে প্রতি মাসে তৈরি করা কুটির শিল্পের এসব পণ্য ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। কুটির শিল্প তৈরি করার সময় আলতাপোল গ্রামের আলমগীর হোসেনের (৩৮) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে তিনি স্থানীয় মহাজনের কারখানায় কাঠ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকেন। পিচ অনুযায়ী মহাজন টাকা দেয়। তার মতো এলাকার অধিকাংশ যুবক এ কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি আলতাপোল তেইশ মাইলে দীর্ঘদিন যাবৎ এ কারখানায় কুটির শিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। তিনি প্রতিদিন ছোট খেলনা হাঁড়ি ১০০টির বেশি তৈরি করতে পারেন। তার প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। নারী শ্রমিক শাহনাজ খাতুন বলেন, যখন কাজ থাকে তখন প্রতিদিন তার ৭০০-৮০০ টাকা আয়। সংসারে আয় বাড়াতে ও উন্নতি করতে তার মতো অনেক নারীই এখন কুটির শিল্পে কাজ করেন। আলতাপোল তেইশ মাইল বাজারের ভাই ভাই কুটির শিল্পের ম্যানেজার রনি বিশ্বাস বলেন, তার কারখানায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। পিচ হিসেবে তাদের তৈরি পণ্যের মজুরি দেওয়া হয়। মেলার সময় কুটির শিল্পের চাহিদা বেশি থাকে। এসব তৈরি পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা বিভাগসহ দেশের সব জেলায় যায়।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সুজন কুমার চন্দ্র বলেন, বিআরডিবি পল্লি জীবিকায়ন শিল্প পল্লীর মাধ্যমে আলতাপোলে কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, কুটির শিল্পের মাধ্যমে আলতাপোল গ্রামের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ শিল্পকে ধরে রাখতে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে ব্যবসার উন্নয়ন করতে গড়ে তোলা হয়েছে জীবিকায়ন শিল্প পল্লী।
বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি) কর্তৃক আয়োজিত “ব্যক্তির জীবনকুশলতা ও সামাজিক কল্যাণ” শীর্ষক পাঠচক্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক সংগঠন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রধান অংশীদার হিসেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি (এমটিবি)-এর সহযোগিতায়, আন্তর্জাতিক পাঠচক্র- ১৪: ব্যক্তির জীবনকুশলতা ও সামাজিক কল্যাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিগত শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে যথাযোগ্য ও ভাবগাম্বীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ছয় মাসব্যাপী ১৩টি সেশনের এক যাত্রা, যেখানে আলোচিত হবে অর্থনীতি, নৈতিকতা, কল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্তঃসম্পর্ক। নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সক্ষমতার পন্থা ও সামাজিক চয়ন তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে এই পাঠচক্রের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। তাঁর স্বভাবসুলভ গভীরতা ও বিনয়ে তিনি অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ করিয়ে দেন—শুধু সুখ কিংবা আয় উন্নয়নের মানদণ্ড হতে পারে না। উভয়েরই গুরুত্ব আছে, তবে প্রকৃত মানদণ্ড হলো মানুষ কতটা স্বাধীনতা ও সামর্থ্য ভোগ করছে তাদের পছন্দের জীবনযাপন করার জন্য। অধ্যাপক সেনের ভাষায়:—“আমরা এমন এক পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা করি যেখানে আমরা সত্যিকার অর্থে বাঁচতে চাই”—তাঁর এই অন্তর্দৃষ্টি এখন এই পাঠচক্রের একটি স্থায়ী বৌদ্ধিক ভিত্তি হয়ে উঠেছে।
এই পাঠচক্র গড়ে উঠেছে বাঙলার পাঠশালার আগের পাঠচক্রের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে— যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ১২তম পাঠচক্র— ‘বাংলা ভাষায় অমর্ত্য সেন পাঠচক্র’। সেখানে ১২ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিত অধ্যাপক সেনের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আলোচনা করেন। এগুলোর ভিতর অধ্যাপক কৌশিক বসুর (কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র) “সামাজিক চয়ন, লোকনীতি ও ব্যক্তিস্বাদীনতা” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। বর্তমান উদ্যোগকে বলা যেতে পারে অমর্ত্য সেনের সামাজিক চয়ন তত্ত্বের বিস্তৃত ও গভীরতর অন্বেষণ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, এবং যৌথভাবে উদ্বোধন করেন এমটিবি’র পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান । তাদের উপস্থিতি এমটিবি’র শিক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সাবিনা আলকায়ারে (অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়), যিনি সক্ষমতা পদ্ধতি ও ভুটানের গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (জিএনএইচ) নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আলোচক হিসেবে অংশ নেন স্বাতী নারায়ণ ও ড. সাজেদা আমিন, যারা বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য, পরিবেশের ক্রমাবণতি, কল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তির বহুমাত্রিক দিক নিয়ে আলোচনায় সমৃদ্ধ করেন।
আলোচনায় জোর দেওয়া হয় কল্যাণের বহুমাত্রিক ও দৃঢ় সূচক তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার ওপর, যা দেখায় যে দারিদ্র্য কেবল আয়ের সীমাবদ্ধতা নয়; বরং এর সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। অধ্যাপক আল-কায়ারে উল্লেখ করেন যে স্টিগলিৎজ–সেন–ফিতুসি কমিশন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), এবং ভুটানের জিএনএইচ ইতিমধ্যেই উন্নয়ন নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্কের ধারা পাল্টে দিয়েছে।
সমাপনী ভাষণে অধ্যাপক রেহমান সোবহান দারিদ্র্য বিমোচনকে কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একে নৈতিক ও রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে বোঝার ওপর গুরুত্ব দেন এবং নীতি প্রণয়ন ও কৌশল নির্ধারণে দারিদ্র্যের বহুমাত্রিক বাস্তবতাকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
“এই পাঠচক্র শুধুমাত্র একাডেমিক চর্চা নয়; এটি একটি বৈশ্বিক জ্ঞান আদান-প্রদানের একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তরুণ, পণ্ডিত ও নীতিনির্ধারকরা একত্রিত হচ্ছেন—ব্যক্তিগত কল্যাণ ও সামাজিক কল্যাণকে আমাদের সময়ে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নতুন করে ভাবতে,” —বললেন আহমেদ জাভেদ চৌধুরী, বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক।
আগামী ছয় মাসে এই পাঠচক্রে ১৩টি সেশনে ভাষণ প্রদান করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিতরা। এর মধ্যে ড. প্রশান্ত কুমার পট্টনায়ক (ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইড) থাকবেন, যিনি পাঠচক্রটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই উদ্যোগ প্রতিফলিত করে বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের ১৭ বছরের বৌদ্ধিক যাত্রা এবং এমটিবি’র দৃষ্টিভঙ্গি— যা নতুন জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নকে পরিপুষ্ট করে আসছে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সাতক্ষীরার আয়োজনে সোমবার সকালে জেলা কালেক্টরেট চত্বর হতে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় মিলিত হয় ।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রিপন বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহিনুর চৌধুরী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এম আবুল হাশেম।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক শাহরিয়ার নাঈম শাইখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহ. আবুল খায়ের, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন কারিমী, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন, সাস এর নির্বাহী পরিচালক ইমান আলী, সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলার মনিরুল ইসলাম মনির সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এনজিও প্রতিনিধিরা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (BNFE) ২০০৫ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্ত বয়স্কদের সাক্ষরতা, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা, জীবনমুখী দক্ষতায় সক্ষম করে তোলা এবং জীবনব্যাপী শিখার সুযোগ সৃষ্টি করা—এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
রূপকল্প (Vision): শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ ও সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিকরণ।
অভিলক্ষ্য (Mission): বিদ্যালয় বহির্ভূত, ঝরেপড়া ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বয়সভিত্তিক উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, কার্যকর সাক্ষরতা, প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা এবং সবার জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়তা করা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বিএনকিউএফ মানদণ্ড অনুযায়ী প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে শিক্ষার্থীদের প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের প্রশিক্ষণ শেষে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব অ্যাসেসরের মূল্যায়ন করা হয় এবং ৮ম শ্রেণি সমমান প্রি-ভোকেশনাল কোর্সের সনদায়ন করা হয়।
সাম্প্রতিক কার্যক্রম
১) আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম (২০১৮-২০২৪)
ক) দেশের বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের জন্য নন-ফরমাল প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
খ) ১০ লক্ষ শিশুকে পুনরায় মূলধারার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।
গ) ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সমাপ্তি ঘোষণা।
২) মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) (ফেব্রুয়ারি ২০১৪-জুন ২০২২)
ক) ১৫-৪৫ বছর বয়সী প্রায় ৪৫ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ককে মৌলিক সাক্ষরতা ও জীবন-দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান।
খ) শিক্ষার্থীদের আয়-উপার্জনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সহায়তা।
৩) বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (SKILFO) পাইলট: (সেপ্টেম্বর ২০২৩-জুন ২০২৫)
ক) কক্সবাজার জেলায় ৬,৮২৫ কিশোর-কিশোরীকে ১৩টি ট্রেডে মৌলিক সাক্ষরতা, গণনা দক্ষতা ও জীবিকায়ন প্রশিক্ষণ।
খ) প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ।
বর্তমান কার্যক্রম
৪. কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ (প্রাক-বৃত্তিমূলক পর্যায়) প্রোগ্রাম
দেশের ৬৪ জেলার সদর উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো’র বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘কার্যকর সাক্ষরতা ও ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ (প্রাক-বৃত্তিমূলক পর্যায়)’ শীর্ষক কোর্স বাস্তবায়নে বিভিন্ন কারণে স্কুল হতে ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরীদের (১৫-২৪ বছর ৮ম শ্রেণি উত্তীর্ণ নয়) প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ (BNQF অনুযায়ী NSC Level-1 এর নিচে) প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি জেলায় সর্বোচ্চ চারটি ট্রেডে ৪৬০ ঘণ্টার (১০০ ঘণ্টা লিটারেসি ও ৩৬০ ঘণ্টার স্কিল) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি জেলায় ৮০ জন করে ৬৪ জেলায় ৫১২০ জন শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে এ প্রশিক্ষণ পাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক) দেশের ৬৪টি জেলায় সাক্ষরতা ও জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ।
খ) আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ করে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা।
গ) Alternative Learning Opportunity for Out of School children (ALO) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত ৬৪টি উপজেলায় বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০-১৪ বছর বয়সী ১৯,২০০ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য ৫ম গ্রেড পর্যন্ত মৌলিক শিক্ষা প্রদান (Back to School) এবং ১৫-২৪ বছর বয়সী ১৯,২০০ জনকে জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদান করা হবে।
ঘ) দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলায় বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (SKILFO) প্রকল্পের বিস্তৃতি, যাতে তিন বছরে ১,০০,০০০ কিশোর-কিশোরীকে দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা প্রদান করা হবে।
ঙ) জীবনব্যাপী শিক্ষা (Lifelong Learning)-এর জন্য উদ্ভাবনী শিক্ষা মডেল চালু করা।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড সম্পর্কিত তথ্য :
২৩ ফাল্গুন ১৪২৩ বঙ্গাব্দ/০৭ মার্চ ২০১৭ ব্রিস্টাব্দ তারিখে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ এর ধারা ১৬(১) অনুযায়ী ১৩ জন সদস্যের সমন্বয়ে “উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড” গঠন করা হয়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো পরিচালিত প্রাক-বৃত্তিমূলক স্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান শেষে মূল্যায়ন ও সনদায়ন এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় বাস্তবায়নকৃত স্কিলফো প্রকল্পের ৬৮২৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ও মূল্যায়নের কাজ এই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত শিক্ষার্থীদের সনদায়নের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন অকুপেশনে নিজস্ব সনদায়িত অ্যাসেসর রয়েছেন ৫৫ জন, মাস্টার ট্রেইনার রয়েছেন ২১ জন, প্রি-ভোকেশনাল ম্যানেজার রয়েছেন ২৫ জন। ভবিষ্যতে এই পরিসর আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল নির্বাচনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের করায়ত্ত করেছেন এবং প্রকৃতপক্ষে জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন করে ফেলেছিলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে একথা বলেছেন সদ্য প্রয়াত বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়াত বদরুদ্দীন উমর শেখ হাসিনার মামলায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। উনি ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য প্রদান করতে পারলেন না, তবে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উনি ওনার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী কোন সাক্ষী যদি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা যান, সেক্ষেত্রে প্রসিকিউসনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষ্যকে গ্রহণ করতে পারেন।
তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল নির্বাচনগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই তিনি ম্যানিপুলেট করেছেন। এগুলো সম্ভব হয়েছে, কারণ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ওপর, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ ও আমলাতন্ত্র-সব কিছুর ওপর তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রথম থেকেই শেখ হাসিনা ঠিক করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবেন। সেটি করতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা সম্ভব নয়। অথচ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন, সংশোধনী এনেছিলেন। কোনো নীতিবোধ বা নৈতিক লজ্জাবোধ তার ছিল না।
বদরুদ্দীন উমর আরো বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তিনিই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিলেন।
কারণ তিনি বুঝেছিলেন যে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, পরবর্তীকালে তারা আর জিততে পারবে না। সুতরাং নির্বাচনে জিততে হলে তাকে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে।
তিনি প্রশাসনকে দুইভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন— প্রথমত ঘুষ, টাকা-পয়সা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এবং দ্বিতীয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে।
বদরুদ্দীন উমর আরো বলেন, ২০০৯ সালের মধ্যেই এই নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো করেছেন। ২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে কাউকে ঢুকতেই দেয়নি।
২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ হয়েছে। দিনে ভোট হলেও, আসলে ভোট হয়ে গেছে আগের রাতেই। ২০২৪ সালেও একই ঘটনা। এভাবে নির্বাচন করেও তিনি জয়লাভ করেছেন।
যদিও এগুলোতে জনসমর্থনের কোনো ভিত্তি ছিল না। এইসব নির্বাচনে তার দল ৩০০ সিটের মধ্যে চার-পাঁচটি সিটও পেতো কি-না সন্দেহ। এরপরও তিনি জয়ী হয়েছেন শুধুমাত্র প্রশাসনের ওপর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে। এটা গোপন কিছু না, সবাই জানে। একটি সরকার যদি চায়, তারা এইভাবে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে, তাহলে সেটা ঠেকানো কঠিন। শুধু নির্বাচনের কারচুপিই নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নিষ্ঠুর দমন চালিয়েছে শেখ হাসিনা।
তিনি জবানবন্দিতে আরো বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যাতে কার্যকরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে, সে জন্যও নির্যাতন করা হয়েছে। প্রচুর মানুষকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে বিনা কারণে। ‘আয়না ঘর’ নামে টর্চার সেল তৈরি করা হয়েছে, যেটা শেখ মুজিবের আমলেও ছিল না। শেখ মুজিব বিরোধীদের সরাসরি হত্যা করতেন। শেখ হাসিনা শুধু হত্যা করতেন না, নির্যাতনও করতেন এবং এতে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পেতেন। সুতরাং, এভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের করায়ত্ত এবং প্রকৃতপক্ষে জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।
ভারত বা পাকিস্তানে এমন জনতার শক্তি ও ব্যাপকতার গণঅভ্যুত্থান কখনো দেখা যায়নি। বাংলাদেশ নিজেই একটি ‘গণঅভ্যুত্থানের দেশ।’ ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৯০ সালের ঘটনাগুলো তার উদাহরণ। তবে এইসব অভ্যুত্থানের মধ্যে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল সবচেয়ে বিস্ফোরক, সবচেয়ে রূপান্তরমূলক।
তিনি জবানবন্দিতে আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের (১৯৫২) মধ্য দিয়ে ভাষার স্বীকৃতি এসেছিল, ১৯৬৯-এ আইয়ুব খানের পতন হয়েছিল, ১৯৯০-এ এরশাদের পতনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এসব আন্দোলনে এমন সর্বগ্রাসী ভাঙন, এমন পলায়নপর সরকার বা দল দেখা যায়নি।
বদরুদ্দীন উমর আরো বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। শুধু তিনিই নন-তার মন্ত্রিসভা, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও দেশ ছেড়ে পালায়। এই রকম ব্যাপক দলীয় পতন, আতঙ্ক ও আত্মগোপন বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। সিরিয়া বা অন্য কোনো দেশে, স্বৈরাচার পতনের পরও এত সংগঠিত দলীয় পলায়ন দেখা যায়নি।
তিনি জবানবন্দিতে বলেন, এই অভ্যুত্থানের গভীরতা বোঝাতে একটি প্রতীকী চিত্র যথাযথ— শেখ হাসিনার পালানোর পরদিন থেকেই সারা দেশে শেখ মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল সাধারণ মানুষ নিজেরা ভেঙে ফেলে। কেউ কোনো নির্দেশ দেয়নি, তবুও এটি ঘটেছে। এটি এক ধরনের ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’, যার বহিঃপ্রকাশ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় হয়েছে। বহু বছর ধরে নির্যাতিত, অবদমিত জনগণের ক্রোধ এই অভ্যুত্থানে বিস্ফোরিত হয়েছে। শেখ মুজিব নিজেই এক সময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “সিরাজ শিকদার কোথায়?” যেটা ছিল একটি অমানবিক ব্যঙ্গ। কিন্তু ইতিহাসের প্রতিশোধ হয়েছিল ওই বছরেরই আগস্টে, যখন মানুষ বলেছিল, “শেখ মুজিব কোথায়?” এভাবে ইতিহাসে অনেক সময় ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি হয় প্রতিশোধের রূপে।
সদ্য প্রয়াত বরেণ্য ইতিহাসবিদ তার জবানবন্দীতে আরো বলেন, এই অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ শুধু ক্ষমতা থেকে বিতাড়িতই হয়নি, তারা জনগণের বিশ্বাস থেকেও বিতাড়িত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম লীগের পতনের মতোই এবারের গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগের জন্য একটি চূড়ান্ত রাজনৈতিক পরিণতি তৈরি করেছে। ভারতের সহায়তায় তারা হয়তো কিছু অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালাতে পারে, কিন্তু জাতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পুনঃউত্থান অসম্ভব বলেই মনে হয়।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, এই অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ছাত্রদের ভূমিকা। তারাই এই আন্দোলনের প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। ইতিহাসে ছাত্ররা বারবার নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু এবারের আন্দোলনে তারা যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, সাহস ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছে, তা বিরল।
ঊল্লেখ্য বরেণ্য এই বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, চিন্তক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গতকাল মারা গেছেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ৭ সেপ্টেম্বর সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে বদরুদ্দীন উমর হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১০ দিন চিকিৎসা শেষে গত সপ্তাহে তিনি বাসায় ফেরেন।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবুল হাশিম ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন।
ষাটের দশকে বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আর ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে তাঁর লেখা বইগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
তাঁর চিন্তা বুঝতে সহায়ক বিশেষ করে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯)-তিনটি বই।
এই বই লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি। শাসকদের অধীনে চাকরি পর্যন্ত করবেন না, এ মনোভাব পোষণ করে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন বদরুদ্দীন উমর।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তার পেশাজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এক সময় তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব নেন।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সব যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা থেকে চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ কর্মবিরতি শুরু হয়। তবে শুধুমাত্র একতা ট্রান্সপোর্টের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকাগামী যাত্রীরা। অনেকেই বিকল্প উপায়ে ভ্রমণের চেষ্টা করলেও পর্যাপ্ত বাস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী-ঢাকা রুটে বাস স্টাফদের বেতন অস্বাভাবিকভাবে কম। বর্তমানে ন্যাশনাল ট্রাভেলস চালকদের প্রতি ট্রিপে মাত্র ১১০০ টাকা, সুপারভাইজারদের ৫০০ টাকা এবং সহকারিদের ৪০০ টাকা বেতন দেওয়া হয়। শ্রমিকরা এই বেতন বাড়িয়ে অন্তত দুই হাজার টাকা করার দাবি তুলেছেন।
বেতন না বাড়ানো পর্যন্ত রাজশাহী-ঢাকা রুটে অধিকাংশ বাস চলাচল বন্ধ থাকবে বলে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আলী হোসেন বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমাদের একই বেতন দেওয়া হচ্ছে। গত ২৩ আগস্ট আমরা শুধু ন্যাশনাল ট্রাভেলসের বাস চলাচল বন্ধ করেছিলাম। তখন কর্তৃপক্ষ দুই দিনের মধ্যে বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দেয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এবার অন্য সব বাস শ্রমিকরাও আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। একতা ট্রান্সপোর্ট ছাড়া সব বাস বন্ধ থাকবে যতক্ষণ না আমাদের দাবি পূরণ হয়।’
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘শ্রমিকরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছেন। মালিকরা ১০০ টাকা বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে আমরা শ্রমিকরা খুব দ্রুত মালিকদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’
আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজায় মদ-গাঁজার আসর বসানো যাবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতি সভার আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে টানা ২৪ ঘণ্টা নজরদারি থাকবে এবং নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। পূজা উপলক্ষে বসা মেলায় কোনোভাবেই মদ-গাঁজার আসর চালানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকায় পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে সারাদেশের প্রতিটি মণ্ডপেই আনসার মোতায়েন থাকবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ঢাকায় প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কার পর কে বিসর্জন দেবে তার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, এ বছর সারাদেশে প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ রয়েছে। পূজা আয়োজন কমিটি কোনো ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। গতবার শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করা হয়েছিল। এবার আরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মোটরসাইকেল ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে জসিম মোল্যা (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে নড়াইল-মাগুরা সড়কের নড়াইল ব্রাক অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জসিম মোল্যা সদর উপজেলার হবখালি ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামের জাফর মোল্যার ছেলে। সে স্থানীয় একটি মদরাসার শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান জসিম মোল্যা নিজ বাড়ী থেকে নড়াইল শহরের দিকে আসছিল। দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে পৌছালে নড়াইল শহর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রলির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। এলাকার মানুষ উদ্ধার করে আহত জসিমকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতিতে চিকিৎসকরা তাকে অন্যত্র নেবার পরামর্শ দিলে খুলনায় নেবার পথে সে মারা যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মর্তা (ওসি) মো.সাজেদুল ইসলঅম বলেন সড়ক দুর্ঘটনার কথা জানা গেছে। শুনেছি তাকে খুলনায় নেবার পথে ছেলেটি মারা যায়। এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে পরকীয়ার অভিযোগে এক নারীকে প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে গলায় জুতার মালা ও চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগে ৪ জনকে আটক করেছে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ওই ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে রবিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বড়মানিকা ইউনিয়ন বিএনপির ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির নিজ হাতে ওই নারীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করাসহ ওই নারীর মাথার চুল কাটছে।
স্থানীয়রা জানান, পরকীয়ার অভিযোগে শাস্তি দেওয়ার নামে এ নারীকে প্রকাশ্যে চুল কেটে জুতার মালা পড়ানো হয়।
তবে ঘটনাটিকে অনেকেই বিচারবহির্ভূত নির্যাতন বলে আখ্যা দিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সমাজে নারী নির্যাতনের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
অভিযুক্ত ওয়ার্ড সভাপতি হুমায়ুন কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা বহুদিন ধরেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। কয়েক মাস আগেও হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। তাই এবার বিচার করেছি ও চুল কেটে জুতার মালা দিয়েছি। এরপর তাদের বিয়ে হবে।
এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান জনান, নারীকে প্রকাশ্যে হেনস্থার ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বরিশাল পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি জনাব মঞ্জুর মোর্শেদ আলম জানান, এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। অন্য আসামীদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।
রাজশাহী মহানগরীতে অভিযান চালিয়ে ১৩ মাদক কারবারিকে আটক করেছে র্যাব-৫।
রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানাধীন দাসপুকুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, সেলিম রেজা (৫৫), বুলেট অরফে রুবেল (৩০), রিদয় (২৫), শিহাব আহমেদ শিশির (২২), আনোয়ার হোসেন (৪৭), জয়নাল আবেদীন জনি (২৫), জীবন বিশ্বাস (২৩), সাজিদ আলী (২২), জাফর সাদিক অভি (২২), সৌরভ হোসেন (২৪), আরিফুল ইসলাম (৩৬), আলমগীর হোসেন (৫০) ও ইউনূস আলী (৪২)।
আটককৃতদের মধ্যে অধিকাংশ রাজপাড়া থানার বাসিন্দা। এছাড়া একজন পুঠিয়া উপজেলা ও একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট এলাকার বাসিন্দা। এ সময় তাদের কাছ থেকে গাঁজা, মোবাইল ও টাকা জব্দ করা হয়।
আজ সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫, সিপিএসসি এর একটি দল জানতে পারে দাসপুকুর এলাকায় ব্যাপকহারে মাদকের কেনাবেচা চলছে। পরবর্তীতে র্যাবের গোয়েন্দা দল ওই স্থানে নজরদারি বাড়ায় ও রাত সোয়া ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে ১৩ মাদক কারবারিকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ মাদক জব্দ করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, আটককৃতরা এলাকার সংঘবদ্ধ মাদক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সংগ্রহ করে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করা হয়েছে।
নানা সমস্যা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে জয়পুরহাটের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে নেই ওষুধ সরবারাহ। নেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। একই সঙ্গে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসাসেবায় একেবারেই ধস নেমেছে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পুরনো ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা। তাই দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করে কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করার দাবি রোগী ও স্বজনদের। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা সংকট থাকায় কাঙ্খিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলো সমাধান করলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জয়পুরহাট শহরের ধানম-ি এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এটি জয়পুরহাট মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল নামেও বেশ পরিচিত। চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালটি এক সময় ব্যাপক সুনাম কুড়ালেও বর্তমানে নানা সমস্যায় চিকিৎসাসেবায় ধস নেমেছে। এ হাসপাতালটিতে গত ৮ মাস ধরে নেই কোনো ওষুধ সরবরাহ। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। আর প্রয়োজনীয় জনবল সংকটসহ অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রায় দুই বছর ধরে সব ধরনের অপারেশনও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র নরমাল ডেলিভারি করানো হচ্ছে এখানে। এছাড়া পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিছু জায়গায় খুলে পড়েছে পলেস্তেরা। এতে রোগীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের। দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করার দাবি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।
জয়পুরহাট শহরের সবুজ নগরের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলাম। এ পর্যন্ত চারবার চেকআপ করালাম, কিন্তু একবারও ওষুধ পাইনি। মেশিন না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম করাতে পারিনি। রক্ত পরীক্ষাও করাতে পারিনি। এক কথায় এখানে ল্যাবই নেই। নামে শুধু হাসপাতাল।
জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার রিমা আক্তার বলেন, এ হাসপাতালে আগে যে সেবা পাওয়া যেত, এখন তার কিছুই পাওয়া যায় না। আগে ওষুধ পাওয়া যেত, সিজার হতো, এখন কিছুই হয় না। এখানে ওষুধ লিখে দেয়, আর বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসতে হয়।
পাঁচবিবির রতনপুর গ্রামের লাভলী খাতুন বলেন, আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এখানে ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ, বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে। এছাড়া ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ, কখন যে ভেঙে পড়বে তা বলা যায় না। তাই ভবনটি নতুন করে তৈরিসহ সব সমস্যা সমাধান করা হলে হাসপাতালটি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
ক্ষেতলালের বানিয়াপাড়ার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল মানে জয়পুরহাটে বিখ্যাত একটি হাসপাতাল বলে সবাই চিনত। এখন হাসপাতালের নাম থাকলেও সেবার মান একেবারেই ধ্বংস। এখানে এলেই শুনি কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হবে, কিন্তু কিছুই হয় না। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। এটি ভালো করে চালু করা হোক, না হলে বন্ধ করে দেওয়া হোক।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স চম্পা পারভিন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা বেতনভাতা পাই না। হাসপাতালে ওষুধ নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। অ্যনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এজন্য সিজারিয়ান সেকশন থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আগে রোগীরা অনেক ভিড় করলেও এখন আর রোগী তেমন আসে না। জনবল কম হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের অনেক সময় ডাবল ডিউটি করতে হয়। এতে রোগীদের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালের স্টাফদের।
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহানা পারভীন বলেন, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এখানে দেড় বছর ধরে কোনো অপারেশন করতে পারছি না। জনবল সংকটের কারণে রোগীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছি না। ওষুধের সরবারহ এখনো পাইনি। এখন শুধু আমরা রোগীদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেয় তাহলে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।