পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব। সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলা জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়িতে দিন দিন বেড়েই চলেছে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই চার উপজেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। অন্যদিকে পুরো জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৬৭৬ জন ছাড়িয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসের আংশিক প্রতিবেদনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে ৯৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে বাঘাইছড়িতে ১৬৪ জন, জুরাছড়িতে ২৪৭ জন, বিলাইছড়িতে ১৮৫ জন ও বরকল উপজেলায় ১৮০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ছয় উপজেলায় জুন মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৮ জন।
চলতি বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাড়তে থাকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বছরই এ রোগের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা জানান, আগে বর্ষাকালেই ম্যালেরিয়া বেশি হতো। এখন বছরের অন্য সময়েও বৃষ্টির কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় মশার বিস্তার হচ্ছে। ফলে সারা বছরই রোগী পাওয়া যাচ্ছে।এখন সেটি হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে জেলার মোট ৪ হাজার ৭১৪ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৭৬৮ জন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৬ জন।
এদিকে সীমান্তবর্তী দুর্গম উপজেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এই অবহেলা প্রাণঘাতী পরিণতি ডেকে আনছে।
রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের নোয়াদম গ্রামের স্কুলছাত্রী সুদীপ্তা চাকমা (১০) ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার (১২ জুলাই) রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানান, স্কুল ছাত্রীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে তার জ্বর বেশি ওঠে। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে হাসপাতালে আনার পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শওকত আকবর খান জানান, হাসপাতালে বতমানে ২ জন ম্যালরিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়ার জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর জ্বর, মাথাব্যথা, কাঁপুনি, শারীরিক দুর্বলতা, রক্তাল্পতা, জন্ডিস, খিচুনি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি বিকল, কোমা এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নির্ণয় ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়া বাড়ে। এবছর আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে সরকার ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় টিম পাঠানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা।’ শনিবার (১২ জুলাই) সকালে সুদীপ্তা চাকমা নামে এক স্কুল ছাত্রী ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীটি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে জ্বর বেশি আসার পর শনিবার (১২ জুলাই) সকালে যখন তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তখন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না।
ডা. নূয়েন খীসা আরো বলেন, ‘ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্গম ও অসচেতনতার কারণে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েটি মারা গেছে। আমরা চিকিৎসা করার সুযোগ পাইনি। ‘জ্বর হলে কেউ অবহেলা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখলেই পরীক্ষা করানোই এর প্রতিরোধের উপায়।’ ২০১৬ সাল থেকে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়া শূন্য কোটায় নিয়ে আসা হয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।’
কক্সবাজারে সাগরে গোসলে নেমে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকাল ১১ টার দিকে সৈকতের কবিতা চত্ত্বর পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটেছে।
মৃত্যু হওয়া রাইয়ান নূর আবু সামি (১৪) কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে। সে কক্সবাজার বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।
মৃতের বাবা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সকালে বাসায় কাউকে না জানিয়ে প্রতিবেশী বন্ধুদের সাথে সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলতে যায়। খেলার এক পর্যায়ে তারা সৈকতে কবিতা চত্ত্বর পয়েন্ট সাগরে গোসলে নামে। এতে স্রোতের টানে ৩ জন ভেসে যেতে থাকে। এসময় সেখানে থাকা অন্য বন্ধুরা এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, “ পরে তাদের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। “
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক ( এডিআইজি ) আপেল মাহমুদ জানান, খবরটি তিনি শুনেছেন। কক্সবাজার সৈকতে ফুটবল খেলা নিষেধ থাকলে অনেকে তা অমান্য করে খেলাধুলা করছেন। এতে সৈকতের নজরদারি কম থাকা পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্কুলছাত্রের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন ও যশোর মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে আগামী ২২ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন হতে যাচ্ছে।
এদিন সকাল ১১ টায় র্যালি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে সফল মৎস্য চাষি/ উদ্যোক্তাদের পদক প্রদান ও পৌর পার্কের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে মধ্য দিয়ে আগামী ২৮ জুলাই এই মৎস্য সপ্তাহ শেষ হবে।
মঙ্গলবার যশোর কালেক্টরেট সভা কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপত্বি করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল আলম, সভাটি পরিচালনা করেন জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মো:রফিকুল আলম। সভায় উপস্থিত ছিলেন সদরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ। এ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, জেলা সমবায় কর্মকর্তা, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রতিনিধি, জেলা সির্ভিল সার্জনের প্রতিনিধি, জেলা আনসার ভিডিভির প্রতিনিধি, আরআরএফ এনজিও প্রতিনিধি, জাগরনি চক্র প্রতিনিধি, হেচারী মালিক সমিতির সভাপতি প্রমুখ। এসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এনসিপির মাসজুড়ে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ (বুধবার) গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনের কথা রয়েছে। তাদের পদযাত্রা বানচাল করতে সদর উপজেলার উলপুর এলাকায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) আহমেদ বিশ্বাস, কনস্টেবল কাওছার ও মিনহাজ। তাদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা এখন পর্যন্ত জানি না। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন এবং একটি গাড়ি পুড়ে গেছে। আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। এর মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা করবে দলটি।
মিজানুর রহমান জানান, আজ গোপালগঞ্জ শহরে এনসিপির পথসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। উলপুর-দুর্গাপুর সড়ক দিয়ে তাদের গাড়িবহর যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ওই এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুর হোটেল বাজারে ট্রাকের ধাক্কায় সরফরাজ খান সোনা(৫৫) নামের ১ মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছে।
আজ বুধবার ১৬ জুলাই সকাল ৮ টায় মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার রনি রেস্তোরার সামনে এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সরফরাজ খান সোনা মেহেরপুর শহরের পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার মৃত শামসুল আলম খান মোংলার ছেলে। সোনা মেহেরপুরে কাচ (গ্লাস)ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে সোহাগ সোহেল নামের একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজারের দিকে আসছিল কলেজ মোড়ের দিক থেকে, এ সময় সরফরাজ খান সোনা শহরের হোটেল বাজার থেকে কলেজ মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। রনি রেস্তোরার সামনে পৌঁছালে ট্রাকটি মোটরসাইকেল চালককে ধাক্কা মারে।
এতে মোটরসাইকেল চালক সরফরাজ খান সোনার ট্রাকের চাকার নিচে ছিটকে পড়ে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর পরই সোহাগ -সোহেল নামের ট্রাকটি পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
পাবনার বেড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় মোঃ মোজাম্মেল (৫৫) নামে অটোভ্যান চালক নিহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন ও আমিনপুর সিন্দুরী গ্রামের মৃত আমজাদ শেখের ছেলে।
বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল সাতটার দিকে উপজেলার আমিনপুর থানার অন্তর্গত কাজিরহাট সড়কে পদ্মা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, কাশিনাথপুর বাজার থেকে কাজিরহাট সড়কে মোজাম্মেল তার নিজের অটোভ্যান নিয়ে নিজ গ্রাম সিন্দুরী এলাকায় যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পেছন থেকে কাজিরহাটগামী একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়ে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার দেহ ছিন্নবিছিন্ন হয় এবং দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু মোজাম্মেল সিন্দুরী গ্রামের মাজার মসজিদের মোয়াজ্জেম ছিলেন। সকালে তিনি যাত্রী নিয়ে কাশিনাথপুর আসেন। বাড়ি ফেরার পথে এ দূর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কাশিনাথপুর ফায়ার সার্ভিস একটি দল এসে রাস্তায় পড়ে থাকা মৃত্যু দেহ উদ্ধার ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেন।
এ বিষয়ে আমিনপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ গোলাম মোস্তফা জানায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হয়, তবে চালক পালিয়ে যায়। ময়নাতদন্তের জন্য মরা দেহটিকে থানায় রাখা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হাতকড়াসহ এক আসামি পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পলাতক আসামি কবির আহম্মদ চৌধুরী প্রকাশ একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামি। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফুলগাজীর আমজাদহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত পুলিশ সদস্যরা ছাগলনাইয়া থানায় কর্মরত। এ ঘটনায় হামলাকারী ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন— ফুলগাজী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাফিদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দিদার ও কনস্টেবল সুমন।
পুলিশ জানায়, পলাতক আসামি কবির আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ছাগলনাইয়া থানায় করা একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামি।
মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের একটি দল। এ সময় তারা কবিরকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে তার সহযোগী ও স্বজনদের হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আসামির স্বজনদের হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম জানান, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে গত বছরের ৬ অক্টোবর কবিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছিল। তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তখন তার সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।
রুমা অধিকারীর শৈল্পিক শখ এখন পরিণত হয়েছে এক সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্যোগে। স্বামী পুলিশের চাকরির সুবাদে তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন রংপুরে। সেখানে বসবাসকালে ইউটিউবে বড় বড় বিদেশি আমের ভিডিও দেখে তার মনে জাগে আম চাষের আগ্রহ। শখ থেকেই শুরু। ২০২৩ সালের শেষের দিকে রংপুর থেকে ফিরে স্বামীর বাড়ি, নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়ায় এক একর জমিতে শুরু করেন নানা জাতের আমের চাষ।
রোপণকৃত ৩০০টি আমগাছের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ১০টি ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের কিং অফ চাকাপাত, চীনের চ্যাং মাই, ডকমাই, ব্যানানা আম এবং আমেরিকার রেড পালমার, হানি ডিউসহ আরও নানা জাতের উন্নত মানের আম।
এই আমগাছগুলোতে মার্চ মাসে মুকুল আসে এবং জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ব হয়। লেট ভ্যারাইটির হওয়ায় এসব আম তুলনামূলক দেরিতে পাকে, ফলে দেশীয় আমের মৌসুম শেষে বাজারে এই আমের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। বাজারে দেশীয় আমের সরবরাহ যখন কমে যায়, তখন রুমার বাগানের আমই হয় বিকল্প উৎস। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি বাজারেও মেলে উন্নত জাতের আম।
আজ তার সেই আমবাগান যেন রঙিন এক আমের স্বর্গরাজ্য। যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই নানা আকৃতি, রং ও স্বাদের আম। রুমা অধিকারী নিজেই পরম যত্নে গাছগুলো পরিচর্যা করেন। স্বামী দুলাল অধিকারী ছুটিতে বাড়ি এলে তিনিও সহায়তা করেন এই কর্মযজ্ঞে। শুরুটা ছিল স্বল্প পুঁজি নিয়ে, কিন্তু রুমা অধিকারীর স্বপ্ন অনেক বড়।
জানতে চাইলে রুমা অধিকারী বলেন, ‘প্রথমে তো এটা ছিল শুধুই একটা শখ, কিন্তু এখন এটা আমার স্বপ্ন। আমি চাই, দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন জাতের উন্নতমানের আম পৌঁছাক, যেন আম আমরাও বিশ্বমানের ফল চাষে পিছিয়ে না থাকি। নিজের হাতে গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা, আর একেক সময় ফল আসতে দেখা- এই আনন্দ ভাষায় বোঝানো যায় না। আমি বিশ্বাস করি, নারী হয়েও সফল কৃষি উদ্যোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার স্বপ্ন হলো- এই আমবাগানকে আরও বড় করে তোলা, যাতে এলাকার আরও মানুষ কাজের সুযোগ পায়। সরকার যদি সুদমুক্ত ঋণ দেয়, তাহলে আমি এই উদ্যোগকে বাণিজ্যিকভাবে আরও শক্ত অবস্থানে নিতে পারব।’
রুমা অধিকারীর স্বামী দুলাল অধিকারী বলেন, ‘আমি যখনই ছুটি পাই তখনই বাসায় আসি। এখানে এসে আমার স্ত্রীকে আম বাগানের পরিচর্যায় সহযোগিতা করি।’
স্থানীয় উত্তম রায় নামে এক যুবক বলেন, ‘রুমা বৌদি যে পরিশ্রম করে তার আম বাগান সাজিয়েছে, তা আমরা যুবকরাই পারব কি না, সন্দেহ। তার আম চাষ দেখে আমাদেরও আম চাষের অনুপ্রেরণা জুগছে।’
শওকত ইসলাম নামে আরেক যুবক বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছিলাম এখানে বিভিন্ন ধরনের আম গাছ আছে। তাই আমগুলো দেখতে এবং খেতে এসেছিলাম। আমগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, ‘আম চাষে রুমা অধিকারীকে শুরু থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার সফলতা শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং এটি একটি উদাহরণ। যা দেখিয়ে দেয় পরিকল্পনা, শ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে কৃষিতেও গড়ে তোলা সম্ভব টেকসই ভবিষ্যৎ। যদি এমনভাবে তরুণ-তরুণীরা কৃষি খাতে এগিয়ে আসে, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় করে তুলবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়েছি, আর কোনো নব্য স্বৈরাচারের স্থান এ বাংলার মাটিতে হবে না।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমরা ইনসাফের বাংলাদেশ গড়বো, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবেনা। যেখানে মানুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ থাকবেনা, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, লুটেরাদের স্থান থাকবেনা, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই।’
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৪টায় ভোলা শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এনসিপির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে চলমান সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্যাসের শহর ভোলা। এ জেলার গ্যাস দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় অথচ ভোলার জনগণকে গ্যাস থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। ভোলাবাসীর সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবে দ্বীপ জেলা ভোলার ৫৭ শহীদকে স্মরণ করে নাহিদ বলেন.‘কোনো একক জেলা হিসেবে জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন ভোলাতে। তাই আজ আমরা এসেছি ভোলাবাসীকে আপন করে নিতে। ভোলাবাসীর সাথে আর বৈষম্য করা হবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের পাশে থাকবে।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা স্বৈরাচার হাসিনাকে তাড়িয়েছি আর কোনো স্বৈরাচারের স্থান এ দেশের মাটিতে হবে না। প্রতিবাদের জায়গা হলো ভোলা। ভোলার বীর সেনারা জুলাই আগস্টের আন্দোলনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, সেই ভোলার মানুষ কোন চাঁদাবাজ, ধর্ষককে স্থান দেবে না।
তিনি বলেন, ‘ভোলায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ। এখানকার হাসপাতালটি অকেজো। ভোলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা পিছিয়ে যা অন্য কোথাও নেই। আপনাদের জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এ ভোলা হবে একটি সুন্দর সমৃদ্ধশালী জেলা।’
ভোলা জেলা এনসিপি আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শরীফের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আক্তার মিতু, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন। জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত হাসনাইন, সংগঠনের ভোলা জেলা সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও সমন্বয়কারী ইয়াসির আরাফাত।
ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলার ৭ উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ গ্রহণ করে।
এর আগে এনসিপি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ ভোলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকা থেকে শুরু করে সমাবেশস্থল পর্যন্ত এক পদযাত্রায় অংশ নেন।
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান এ আদেশ দেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
রিমান্ড শেষে এদিন আদালতে হাজির করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরোনো ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে।
এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মামলা করেন। এরপর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার (১১ জুলাই) কেরানীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার (১১ জুলাই) গভীররাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে কাজী নান্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নান্নুকে ধরার মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির সংখ্যা আটজন।
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও রাজবাড়ী জেলার সরকারী কোনো হাসপাতালেই নেই করোনা পরীক্ষার কিট। এমনকি হাসপাতালে কর্মরতরাও পায়নি সুরক্ষা সামগ্রী। এখনও প্রস্তুত করা হয়নি আইসিইউ ইউনিট। এতে হতাশ রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে কিট চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সিভিল সার্জন দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিটের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে এখনও শুরু হয়নি কার্যক্রম। অথচ হাসপাতালের প্রবেশপথেই টাঙিয়ে রাখা হয়েছে আইসিইউ সেবার সাইনবোর্ড। বিয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, ‘প্রতিদিনই জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথাসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসছেন রোগীরা। কিন্তু করোনা পরীক্ষার কীট ও জনবল সংকটের কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। কোনো প্রকার উপায় না পেয়ে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া ও ঢাকায়।
হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হতাশা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে ফেরা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, সংকটের কারণে সুচিকিৎসা হচ্ছে না। করোনা পরীক্ষা না করায় আরো বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে এ জেলার মানুষ।
এদিকে যারা রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিবেন সেই সব সেবিকা ও কর্মীদেরও দেওয়া হয়নি কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী। ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন তারা।
এ সময় স্যাম্পল সংগ্রহকারী সেবিকা হিরা আক্তার বলেন, ‘এর আগে করোনার সময় হাসপাতাল থেকে মাস্ক, পিপি, হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ নানা ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যাথাসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। কীট নেই করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষা হচ্ছে। যে কারণে হাসপাতালের সেবিকাসহ সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। নিজেরা নিজেদের মত করে সুরক্ষা মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. ফরিদ শেখ বলেন, এত বড় হাসপাতাল শত শত রোগী। এত সব রোগীর পরীক্ষার জন্য মাত্র দুজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে রিপোর্ট প্রদান করতেও সময় লাগছে বেশি।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আগের সুরক্ষা সামগ্রীগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে নষ্ট হয়েছে। নতুন করে ৩০ হাজার কীট চেয়ে আবেদন করা হলেও পাওয়া যায়নি। ওই কীটগুলো পাওয়া গেলে করোনা টেস্ট কার্যক্রম শুরু হবে। আর আইসিইউ ইউনিটের কাজ শেষে দিকে জনবল না থাকায় সেটিও চালু করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, রাজবাড়ী জেলার শুধু সদর হাসপাতাল নয়! কোনো হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষার কীট নেই। জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কীট না পাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা প্রতিহত করতে হবে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শতবর্ষী একটি খাল দখলের মহোৎসব চলছে। সিনেমা হল সড়ক থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে অবৈধভাবে দখল করায় খালটি আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ড চললেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় খালটির অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এর ফলে খালের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং হাজার হাজার কৃষক মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। খাল দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
সিনেমা হল সড়ক সংলগ্ন বাজার থেকে পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রাম পর্যন্ত খালটি এক সময় চন্দ্রখালী নদীর শাখা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অতীতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় পণ্য পরিবহন ও মানুষের চলাচলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। কৃষকদের শস্য উৎপাদন ও পরিবহনে এই খালটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু দখলদারদের আগ্রাসনে খালটি তার প্রাণ হারিয়েছে।
পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘এই খালই ছিল প্রায় সারাবছর একমাত্র যানবাহন নৌকার পথ, যা কৃষকদের ফসল হাটে নিয়ে যেতে এবং গ্রামের মানুষকে সাপ্তাহিক বাজার-সদাই করে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করত।’
কুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক মো. আতাউর রহমান বলেন, বর্ষার পানি নিষ্কাশন এবং প্রয়োজনে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য এই খাল অপরিহার্য ছিল। কিন্তু এখন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পার্শ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার জোয়ার আমতা গ্রামের মোহাম্মদ জুলহাস জানান, একসময় তারা বালিয়াটি হয়ে এই খাল দিয়ে সাটুরিয়া হাটে আসতেন। কিন্তু বর্তমানে খালের বিভিন্ন অংশে বাধ দেওয়ায় খালটিকে আজ মেরে ফেলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাটুরিয়া সিনেমা হল সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই খালটির দুই পাশে বসবাসকারীরা প্রথমে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করত। এরপর মাটি ফেলে ভরাট করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছে। দুই কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় ২০-৩০টি স্থানে বাঁধ দিয়ে সম্পূর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গা এখন ময়লার ভাগাড়। জমে থাকা পানিতে মশা, রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে, তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
উত্তর কাওন্নারা গ্রামের মো. আক্কাছ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় খালটি দখল হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই এলাকার পাশ দিয়ে চলাচল করলেও মৌখিক অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দখলদাররা সুবিধা পাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।’
খাল দখল হওয়ায় বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, উত্তর কাওন্নারা গ্রামের কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সামাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং মোকাদছ আলী, শাহ আলম ও তানি আলমরা বাঁধ দিয়ে খালের প্রবাহ আটকে দিয়েছেন। এর ফলে জমাট বাঁধা দূষিত পানিতে রোগবালাই বাড়ছে এবং মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে।
আব্দুস সামাদ মিয়া অবশ্য দাবি করেন যে একসময় এই খালে স্রোত থাকায় তাদের জমি ভেঙে খাল প্রসারিত হয়েছিল এবং সেই জায়গা ভরাট করে তিনি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সিনেমা হল রোড থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিজের টাকায় অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে রাস্তা বানিয়েছেন।
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শহর আলী জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। দখলদাররা নির্বিঘ্নে দখল চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করা অপরাধ। তিনি জানান, তার দপ্তরে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা প্রমাণিত হলে উচ্ছেদ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ এই প্রতিপাদ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও ড্রোন শো। সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় এই আয়োজনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্মৃতিচারণা ও সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও ছিল ব্যতিক্রমী ড্রোন প্রদর্শনী।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। সহায়তায় ছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন সোনিয়া মুরশিদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস শেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ এবং জনপ্রিয় শিল্পী সায়ান সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সায়ান এককভাবে পরিবেশন করেন গণসংগীত ও জনপ্রিয় সংগীত।
‘জুলাই নারী দিবস’ উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসব প্রামাণ্যচিত্রে জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এরপর দেখানো হয় ‘দীপক কুমার গোস্বামী বলছেন’ এবং ‘জুলাই বিষাদসিন্ধু’ চলচ্চিত্র দুটি।
এ সময় শহীদ মিনারে বেশ কয়েকটি ডিসপ্লেতে জুলাই অভ্যুত্থানের এসব প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি ও শামসুন্নাহার হলের সামনেও শিক্ষার্থীদের উপভোগের জন্য বেশ কয়েকটি ডিসপ্লে লাগানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ, আনসার, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যসহ বেশ কিছু নিরাপত্তা টিম কাজ করে।
আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ড ‘ইলা লা লা লা’। তবে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে ড্রোন শো, যা শহীদ মিনারের আকাশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় উপস্থিত দর্শকদের।
ড্রোন শোর প্রথম অংশে তুলে ধরা হয় কীভাবে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে জুলাই পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। দ্বিতীয় অংশে ফুটিয়ে তোলা হয় ১৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ।
উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্ত আন্দোলনে নতুন গতি আনে। সেই দৃশ্য পুনর্নির্মিত হয় ড্রোনের মাধ্যমে, যা আন্দোলনের ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরে।
এই আয়োজন ছিল জুলাই মাসব্যাপী চলমান স্মরণ ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একটি অংশ। আয়োজকেরা জানান, তরুণ প্রজন্মের মাঝে জুলাইয়ের আত্মত্যাগ ও চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অনুষ্ঠান। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নারী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এ আয়োজন অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকেরা মনে করেন।