সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। পুকুর, কৃষি জমি ও বীজতলা পানিতে ভেসে একাকার। আর ধানের জমিতে জন্ম নেয় বড় বড় কচুরী পানা। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজে আসছে না সরকারি খালগুলো। হচ্ছে না পানি নিস্কাশন, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কৃষি আবাদ। আর এভাবেই অনাবাদে পড়ে থাকছে শতশত বিঘা দুই ফসলি আবাদী জমি। এ যেন কৃষির সর্বনাশ। সেই সাথে বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজারো পরিবার। রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া-ভুলতা-গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বেড়িবাধেঁর অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২০ গ্রামে এমন চিত্রের দেখা মিলে।
* সরকারি খালে পাকা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি নির্মাণ
* আটকে যাচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা
* কৃত্রিম জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
* মাছ চাষেও নেই সুবিধা, যখন তখন পুকুর ভেসে যায় কৃত্রিম বন্যায়
* ভারী বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তার ৩/৪ ফুট পানি জমে, শিল্পকারখানার দুষিত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের রাস্তাঘাটে
* ভোগান্তি পোহাচ্ছে পৌরসভা ও তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার
* ইরিগেশন প্রজেক্ট হওয়া স্বত্তেও অনাবাদি পড়ে থাকছে শতশত হেক্টর কৃষি জমি
* পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে নেই নজধারী
* সরকারি অর্থে অধিগ্রহনকৃত খাল উদ্ধারে নেই প্রশাসনিক উদ্যোগ
* নাম সর্বস্ব আবাসনে গিলে খাচ্ছে ইরিগেশন প্রকল্পের শতশত বিঘা জমি
সরেজমিনে ঘুড়ে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ২০ গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এ সকল এলাকার কোথাও ৬ মাস কোথাও আবার সারাবছরই কৃত্রিম জলাবদ্ধতা থাকে। তাতে শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষি জমিই অনাবাদি পড়ে থাকে। হাটাব বারৈপাড় এলাকায় কানি বিলের পিঠাগুড়ি অংশে খালের উপর বাগান বাড়ি নির্মাণ করায় বাধাঁপ্রাপ্ত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে টাটকির খাল, সুতালরির খাল, দাগিরমার খাল, কালাদী থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত ১৮০ ফিট এশিয়ান হাইওয়ে সংলগ্ন সরকারি খাল দখল হয়ে আছে সড়ক নির্মানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের অবহেলায়। এছাড়াও অবৈধভাবে সরকারি খালের উপর কালাদী, নলপাথর, কুশাবো এলাকায় গড়ে ওঠেছে একাধিক বালুর গদি, হান্ডিমার্কেট এলাকায় খালের উপরে গড়ে ওঠেছে সাবানের ফ্যাক্টরি, এনডিই রেডিমিক্স, ম্যাংসাং সার্ভিসিং সেন্টারসহ একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্ধশত বসতবাড়ি।
তাতে একদিকে পানি স্বাভাবিক চলাচল বাধাঁগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বালুর গদির শতশত টন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাশয় আর ভারী বর্ষণে রূপ নিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ওই সমস্ত এলাকায় ইরিগেশন প্রজেক্ট বা বেড়ি বাধেঁর ভেতরে এমন জলাবন্ধতায় শুধু কৃষি আবাদই ব্যহত হচ্ছে না মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এছাড়াও কারখানার দুষিত বর্জ্য খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়ায় পানিবাহিত রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে এলাকার মানুষের মধ্যে।
টেকপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকার ৪/৫ টি খাল বেইনিভাবে দখল করে খালের উপরে অর্ধশত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিপুর্বে গ্রামবাসীর পক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের লিখিত দরখাস্ত দিয়েও কোন সুফল পাইনি। যারা খাল দখল করছে তারাই আবার জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে।
বেলতলা এলাকাল শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকারি খাল ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে এনডিই রেডিমিক্স, মেট্রো ওয়ার্কশপ, ইনডেক্স পাওয়ারপ্ল্যান্ট ও এটলাস টয়লেট্রিস নামক প্রতিষ্ঠান। খালের পানি চলাচল বন্ধ করে দেদারচে ব্যবসায় করছে কতিপয় মহল। জলাবদ্ধতায় ভুগছে গ্রামের সাধারণ মানুষ, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস টুকু পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, কৃষি প্রধান দেশে এখন চলছে আবাসন ব্যবসা। প্রশাসনের লোকজন কিছুই বলে না, জোড়পুর্বক জমি দখল করে। কিছু বললেই বাড়িঘরে হামলা দেয়। আ.লীগ থাকতেও জমি জবরদখল করতো এখনও করে।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া- ভুলতা- গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে “নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রজেক্ট”র (এনএনডি) আওতায় এনে বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে “জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি” (জাইকা) নামক প্রতিষ্ঠান। বেড়িবাধেঁর ভেতরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে (একোয়ার) সরকারিভাবে খনন করা হয় খাল। খালের পানি নিস্কাশন ও উত্তোলনের কাজে স্থাপন করা হয় বানিয়াদী সেচ প্রকল্প। বসানো হয় ৪ টি সেচ পাম্প। তাতে বর্ষাকালে বা ভারী বর্ষনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিস্কাশন ও আবাদ মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরধারী না থাকায় অধিগ্রহনকৃত জমিতে গড়ে ওঠেছে শতশত স্থাপনা। বছরের পর বছর এমন দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্তমানে অধিকাংশ খালগুলোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
অধিগ্রহণকৃত সরকারি খালের জমি অবৈধভাবে দখল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমি অল্প দিন হয় এখানে যোগদান করেছি। এরই মধ্যে ইরিগেশন প্রকল্পের সকল খাল উদ্ধারে প্রধান উপদেষ্ঠা ও জেলা প্রশাসকের বরাবরে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খালগুলো উদ্ধার করা হবে। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাজীপুর- মদনপুর বাইপাস সড়ক প্রশস্তকরনে সময় রাস্তার পাশের খালটি ভরাট হয়ে গেছে। তবে তারা খালের বিকল্প খাল খনন করে দেয়া কথা ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, আমরা সরকারি খাল, রাস্তা ও খাস জমি উদ্ধারে কাজ করছি। ইতিপুর্বে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি খাল ও রাস্তা উদ্ধার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমার মোবাইল কোর্ট টিম সর্বদা কাজ করছে।
কথা ছিল পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে সমুদ্র দেখতে যাবেন। তাই তো মনের আনন্দে সকলে রওয়ানাও দিয়েছিল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সবাইকে সমুদ্রে না নিয়ে পরপারে নিয়ে গেলেন। এমনই এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটলো কক্সবাজারের চকোরিয়ায়।
সেখানে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের পাঁচজন আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে পুলিশ নিশ্চিত করে।
বুধবার সকাল নয়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
পুলিশ জানায়, নিহতরা সবাই একই পরিবারের সদস্য এবং তারা সবাই মিলে কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই থেমে গেল সেই যাত্রা চিরতরে।
নিহতরা হলেন, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল হকের স্ত্রী রুমানা আকতার (৬০), তার মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সাদিয়া হক (২৪), আমিনুল হকের স্ত্রী লিজা মজুমদার (২৫), তার মা রাশেদা শিল্পী (৫০), বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ফারজানা মজুমদার (২৪)। আহত ব্যক্তিরা হলেন এনামুল হক, তার ছেলে মাইক্রোবাসের চালক আমিনুল হক ও তার শিশুসন্তান সাদমান (৬)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসটি হাঁসের দিঘী ঢালায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির মারসা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে–মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান একই পরিবারের পাঁচজন।
নিহতদের স্বজন জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮) বলেন, বুধবার ভোরে আমিনুল হক তার স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা–বোন, শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। আমিনুল হক নিজেই ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসটি চালাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর ঢালা এলাকায় পৌঁছালে চট্টগ্রামমুখী মারসা পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আমিনুল হকের মা, বোন, স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালিকা মারা যান। আমিনুল, তার বাবা ও তার শিশু সন্তান গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘তাদের কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা ফেরার পথে চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকায় আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু পথে সব শেষ হয়ে গেছে। দেখা হলো না সমুদ্র, আসা হলো না আমাদের বাড়িতে।’
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, নিহত পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন নিহত রুমানা আকতারের ছেলে মুনীরুল হক। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
নেত্রকোণায় সেরা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে নেত্রকোনার পাবলিক হলে ‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোণার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল আজম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবস্থিত স্কুলগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে ঐ জনগোষ্ঠী থেকে একজন করে আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া গেলে তাঁদের ভাষা যেমন সংরক্ষণ হবে তেমনি মাতৃভাষায় তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাও নিশ্চিত হবে। এছাড়াও দেশের যেসব এলাকায় কালচারাল একাডেমি হয়েছে, সেগুলো শুধু কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে কাজ করতে পারে, গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। সভায় ‘নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা: অংশীজনের প্রত্যাশা’ বিষয়ক মুল আলোচনা পত্র উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একেএম মাজহারুল ইসলাম। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর বেসিক এন্ড অ্যাডাল্ট এডুকেশন এর ক্যাপাসিটি সাপোর্ট অ্যাডভাইজার কেএম এনামুল হক।সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা বিনতে রফিক, নেত্রকোণা রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, লেখক ও গবেষক আলী আহমেদ খান আইয়ুব, সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার পাল, গণসাক্ষরতা অভিযান ঢাকার প্রোগ্রাম অফিসার সিজুল ইসলাম, নেত্রকোণা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সরোজ মোস্তফা, জাগরণ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কেএমএ জ্যামী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেরা’র নির্বাহী পরিচালক এসএম মজিবুর রহমান। সেরা’র পরিচালক (প্রোগ্রাম) আলী উসমানের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা অর্জনে চ্যালেঞ্জ, সীমাবদ্ধতা এবং করণীয় নিয়ে তাদের মতামত এবং সুপারিশ তুলে ধরেন।
বগুড়া সারিয়াকান্দির অন্যতম প্রধান সড়ক বগুড়া-কড়িতলা সড়কের বেহাল দশা। সড়কটিতে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুই উপজেলার লাখো মানুষের ভোগান্তি। কর্তৃপক্ষ বলছে সড়কটি মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কিন্তু পাশ হওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ। এদিকে আবারো নতুন করে মেরামতের প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া-কড়িতলা সড়কের জোরগাছা সেতুর পশ্চিম থেকে কড়িতলা বাজার পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কটিতে বিশালাকার হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কটির কিনারা ভেঙে বেশ বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাকসহ সকল ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে গাবতলি এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ বগুড়া জেলা সদরে যাতায়াত করেন। সড়কটির হাজারো গর্ত ডিঙিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে এলাকাবাসীর ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। বৃষ্টি হলে এসব গর্তগুলোতে পানি দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা অনেক সময় কাঁদামাখা হয়ে চলাচল করেন। বিশেষ করে জোড়গাছা, সোনাপুর, গুলারতাইড়, কাশাহার উল্লেখযোগ্য।
জোড়গাছা গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এম. তাজুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করার কোনও জোঁ নাই। দীর্ঘদিন ধরেই সড়কের বেহাল দশা হলেও সড়কটির মেরামতের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। সড়কটির বেহাল দশার কারণে এলাকাবাসীর ভোগান্তির কোনও শেষ নেই। দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার প্রয়োজন।
উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সিপন বলেন, সড়কটির সংস্কারের জন্য সরকারের এমন কোনও দপ্তর নেই, যেখানে তিনি যাননি। তারপরও সড়কটির সংস্কার কেন হচ্ছে না। সড়কটির সংস্কার এলাকাবাসীর প্রধান দাবি। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হোক।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী তুহিন সরকার বলেন, সড়কটি সংস্কার করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবনাটি পাশ হয়নি। সারিয়াকান্দি থেকে ৯টি সড়ক সংস্কারের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৪ টি রাস্তা সংস্কারের জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। তার মধ্যে এ সড়কটি নেই। সড়কটির সংস্কারের জন্য পুনরায় প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে গত বুধবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা শুরু হয়েছে। দুপুরে তুমুল আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখী রাধার লীলাকে ঘিরে এ উৎসব শুরু হয়। শিশুদের রাখাল নৃত্য পরিবেশ করতে দেখা যায়। ভক্তরা নৃত্যরত শিল্পীদের বাতাসা ও টাকা উপহার দেন। উৎসব উপলক্ষে নানা ঐতিহ্যবাহী সাজে মেতেছে মণিপুরীপাড়া। মূল রাসলীলা রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে পরের দিন ভোর পর্যন্ত চলবে।
বাঁশ ও কাগজ কেটে বিশেষ কারুকাজে রাসের মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসেন রাসধারী বা রাসের গুরু, সূত্রধারী ও বাদকরা। পাশাপাশি তিনটি মণ্ডপে তরুণীরা রাসলীলায় অংশ নিয়ে থাকেন।
রাসের সাধারণ ক্রম হচ্ছে সূত্রধারী কর্তৃক রাগালাপ ও বন্দনা, বৃন্দার কৃষ্ণ আবাহন, কৃষ্ণ অভিসার, রাধা ও সখীদের অভিসার, রাধা ও কৃষ্ণের সাক্ষাৎ ও মান-অভিমান, ভঙ্গীপারেং, রাধার কৃষ্ণ-সমর্পণ, যুগলরূপ প্রার্থনা, আরতির মতো বিষয়গুলো।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাত ১১টায় জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা।
এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতেই সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৪০তম রাসোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জ মণিপুরী সংস্কৃতির এক বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম মহারাসলীলা উপলক্ষে বিকাল সাড়ে তিনটায় শুভেচ্ছা বিনিময় ও প্রদীপ প্রজ্বালনে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।’
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা পরিষদ হলরুমে বুধবার উপজেলা শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভা ও উপজেলা পর্যায়ে পঠন দক্ষতা যাচাই প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওবায়দুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবু ইউসুফ খান এবং সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল বাকী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রেবেকা সুলতানা ডলি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসাররা, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর, উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা। সভায় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত পঠন দক্ষতা যাচাই প্রতিযোগিতা বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা। অনুষ্ঠানটি সার্বিকভাবে পরিচালনা করেন নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা অফিস।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিকমিশনের প্রধান কার্যালয়ে “দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরমাণু শক্তি ও প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ প্রসারের গুরুত্ব, সম্ভাবনা ও কৌশল” সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানীগণ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরমাণু শক্তি ও প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগের সম্ভাবনা ও কৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ পরমাণু কৌশল ও নীতি নির্ধারণে দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোঃ মজিবুর রহমান এবং বর্তমান সদস্য (ভৌত বিজ্ঞান) ড. দেবাশীষ পাল উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন মতবিনিময় সভায় দেশে জনকল্যাণে পরমাণু প্রযুক্তির প্রসার এবং একটি টেকসই পরমাণু কৌশল ও নীতি নির্ধারণে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মজিবুর রহমান মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব এবং কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দকে প্রাণবন্ত আলোচনায় অংগ্রহণ ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নির্ধারণে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
টাঙ্গাইলের ছয়আনী বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ভেজাল ও প্রতারণার অভিযোগে দুইটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রোমেল এর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দেখা যায়, বাজারের কিছু ব্যবসায়ী মুগ ডালের নামে মথ ডাল বিক্রি করছে, পাশাপাশি ওই ডালে রং মিশিয়ে বাজারজাত করার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ছয়আনী বাজারের ‘মা লক্ষী এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘অনিক এন্টারপ্রাইজ’ নামের দুই দোকানকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রোমেল বলেন, ‘মুগ ডাল বলে মথ ডাল বিক্রি করা এবং তাতে রং মেশানো স্পষ্ট প্রতারণা। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন মিয়া।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, তারা পাইকারি বাজার থেকে যেভাবে ডাল সংগ্রহ করেন, সেভাবেই বিক্রি করেন। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
সাধারণ ক্রেতারা বলেন, বাজারে আসল ও নকল পণ্যের পার্থক্য করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি থাকলে এমন প্রতারণা অনেকটাই বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
অভিযান শেষে ভোক্তা অধিদপ্তর জনস্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার আশ্বাস দিয়েছেন।
বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ সেকান্দার খালী গ্রামে প্রতিবেশীর ছাগলে কলমি শাক খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে মামুন মিয়া, তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, বাবা হুমায়ুন কবির বয়াতি ও মা মোরশেদা বেগম রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে মামুন মিয়ার একটি ছাগল প্রতিবেশী নসা পঞ্চায়েতের খেতে লাগানো কলমি শাক খেয়ে ফেলে। এ ঘটনায় মামুনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও নসার স্ত্রী তাসমিমা বেগমের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা একে অপরকে লাথি মারেন। পরে তাসমিমা বেগম হুমকি দিয়ে চলে যান। বিকেল তিনটার দিকে মামুন মিয়া ও তার স্ত্রী দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় ২০ থেকে ২৫ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘরে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জানালা ও দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বেধড়ক মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ছাগল খেতে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। বিকেলে হঠাৎ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী আমাদের ঘরে ঢুকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। তার ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার আর নগদ টাকা নিয়ে যায়।
মামুন মিয়া অভিযোগ করেন, নসা পঞ্চায়েত ও জালাল আহমেদ মৃধার নেতৃত্বে আল-আমিনসহ ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। বাবা-মা তাদের বাঁচাতে এলে তাদেরও কুপিয়ে আহত করে।
আহত হুমায়ুন কবির বয়াতি বলেন, ছেলে-বউয়ের চিৎকার শুনে ছুটে যাই, তখন আমাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত ছিল এবং তারা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি উন্মত্ত শিয়ালের আক্রমণে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আশিদ্রোন ইউনিয়নের শংকরসেনা, ফটকি, রামনগর এবং সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামে ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, অস্বাভাবিক আচরণকারী শিয়ালটি হঠাৎ করে পথচারী ও বাড়ির সামনে থাকা মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়াতে শুরু করে। কেউ তাড়িয়ে দিতে গেলে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন, রাহিদ মিয়া (১০), আমেনা বেগম (৩০), নুরে আলম ফেরদাউস (১৩), মামুন মিয়া (২৫), রেহেনা আক্তার (২০), হোসাইন আহমদ (১৩), সুমন মিয়া (২৩), মো. আতিকুল (২১), নাঈম মিয়া (১৭), নাজমা বেগম (৪০), লুবনা বেগম (১৬) এবং রনি কুর্মী (২১)।
ভুক্তভোগীরা জানান, শিয়ালটি দ্রুত এসে পা, হাঁটু ও পায়ের পাতা লক্ষ্য করে কামড় দেয় এবং সরে যায়। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, আহত ১২ জনকেই হাসপাতালে আনা হয়েছে। সবাইকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অবস্থাও স্থিতিশীল।
স্থানীয়রা ধারণা করছেন, শিয়ালটি হয়তো জলাতঙ্কে আক্রান্ত ছিল। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিয়ালটি শনাক্ত ও ধরা নিয়ে তৎপরতা চলছে।
কক্সবাজারের টেকনাফে মোহাম্মদ ইউনুস সিকদার (৪৮) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী সংলগ্ন সড়কের আনোয়ার প্রজেক্ট নামক স্থান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইউনুস সিকদার সাবরাং ইউনিয়নের চান্দলী পাড়া এলাকার মো. কাশেমের ছেলে। তিনি সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য (মেম্বার) এবং উপজেলা আরাফাত রহমান খোকো ক্রীড়া সংসদের টেকনাফ উপজেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।
জানা গেছে, সকালে পথচারীরা রঙ্গিখালী আনোয়ার প্রজেক্ট এলাকার পাশে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। তার পরনে শুধু একটি ফুল প্যান্ট ছিল, তবে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, ইউনুস সিকদার দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি আরাফাত রহমান খোকো ক্রীড়া সংসদের উপজেলা সভাপতি হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। তবে তিনি কীভাবে রঙ্গিখালী এলাকায় গিয়েছিলেন এবং মৃত্যুর কারণ কী- তা তারা জানাতে পারেননি। স্বজনরা দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, ‘সকালে রঙ্গিখালী মৎস্য ঘেরের পাশে স্থানীয়রা এক ব্যক্তির মৃতদেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।’
এদিকে, মোহাম্মদ ইউনুস সিকদারের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী। তিনি এক বিবৃতিতে দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা-বাগুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করেছে সওজ বিভাগ। বুধবার সকাল ১১টার দিকে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের উভয় পাশে সওজের জায়গা দখল করে প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। এসব দোকানিদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করত প্রভাবশালীরা।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর একই স্থানে প্রথমবারের মতো অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় একই স্থানে নতুন দোকান গড়ে ওঠে। পরে গত ১৮ মে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে আবারও প্রায় দুই শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
তবে মাত্র ছয় মাস না যেতেই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পুনরায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় তৃতীয়বারের মতো এই অভিযান পরিচালনা করে সওজ বিভাগ।
উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম ভূইয়া। অভিযানে সহযোগিতা করেন হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ থানার ওসি রুহুল আমিন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর একটি টিম।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘মহাসড়কের চলাচল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কেউ যেন পুনরায় সরকারি জায়গা দখল না করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা নিয়মিত নজরদারি রাখব।’
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসনের বারবার উচ্ছেদ অভিযানের পরও একই স্থানে অবৈধ দোকান গড়ে ওঠা দুঃখজনক। তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, সরকার দেশীয় শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি চলমান ব্র্যান্ড সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য এটলাসের নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এটলাস ইভি’ ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন ও বিপণনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে টঙ্গীর এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানায় নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এটলাস ইভি’ নামক ইলেকট্রনিক মোটরসাইকেল বাজারজাতকরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্তিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থা প্রবর্তনে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটলাস বাংলাদেশের মতো একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগটি ইলেকট্রিক ভেহিকেল সংক্রান্ত জাতীয় নীতি বাস্তবায়নে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কেবল আমাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করবে না জীবাশ্ম জ্বালনির পেছনে ব্যয় হওয়া মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আলমসহ এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিলাররা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা কারখানা সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা সেতুর প্রত্যাশিত সুফল থেকে বঞ্চিত হলেও অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের অধীনে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদ্যোগে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি, রহমতপুর ও মাধবপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় মোট ৪০.৭৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জমির মালিকদের দ্রুত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দাবির আবেদন দাখিলের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেন বরিশালের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সমাপ্তি রায়।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন এলাকার জমি অধিগ্রহণের নোটিশ উপজেলা নির্বাহী অফিসে সাঁটানো হয়েছে। জনগণের সুবিধার্থে নোটিশ বোর্ডে সংশ্লিষ্ট জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেওয়া হয়েছে, যাতে জমির মালিকরা সহজেই নিজেদের জমি শনাক্ত করে আবেদন করতে পারেন। আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও জনবান্ধবভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে আরও গতিশীল, এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল-ফরিদপুর এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার মানুষের মূল যোগাযোগ পথ। ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু ও সংযুক্ত এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পুরোপুরি পেতে হলে এই মহাসড়কের উন্নয়ন অপরিহার্য।
২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বরিশাল অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনা, যানজট ও ভোগান্তি বেড়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় যাত্রীদের সময় ক্ষয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি খুব শিগগিরই চারলেনে উন্নীত হবে বলে আমরা আশাবাদী। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। ঢাকা থেকে বরিশাল ও উপকূলীয় জেলাগুলোর যাতায়াত সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আশা করছে, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা ৪ লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল অবশেষে তারা ভোগ করতে পারবে।