নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে টেঁটাযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। এসময় আরও দুই বৃদ্ধসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।
নিহতের নাম আজগর আলী (৫৫)। কৃষক আজগর আলী গজারিয়াকান্দি গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
আহতরা হলেন, একই গ্রামের মঞ্জুর আলীর ছেলে জামির আলী (৬০), তাহের আলীর ছেলে শাহীন মিয়া (২৬), সামসুল হকের ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪৫), আশ্রাব আলীর ছেলে চান মিয়া (৬০) ও জিলানীর ছেলে লিয়াকত আলী (৩০)।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে গজারিয়াকান্দি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলমের লোকজন বর্তমান ইউপি সদস্য খালেকের সমর্থকদের গ্রামছাড়া করে। শনিবার সকালে খালেক গ্রুপ গ্রামে ফেরার চেষ্টা করলে দুই গ্রুপে টেঁটাযুদ্ধ বাধে। এসময় টেঁটাবিদ্ধ হয়ে খালেক গ্রুপের আজগর আলীর মৃত্যু হয়। আহত হন দুই গ্রুপের আরও ৫ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মো. নাসির বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহ আলম মেম্বার ও খালেক মেম্বারের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষে নিহত আজগর আলীর শরীরে ছয়টি টেঁটা বিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে আমরা ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি।
মৃত্যুর ১০ মাস পর চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ওই ইউনিয়নের শোরসাক মজুমদার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে তাঁর লাশ তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার থানা-পুলিশের সহযোগিতায় এ লাশ উত্তোলন করেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট গভীর রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডোবায় ডুবে মোস্তফা কামালের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বাড়ির পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়। মৃত্যুর ছয় মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি মোস্তফা কামালের স্ত্রী ফাতেমা কামাল বাদী হয়ে শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার বাদী ফাতেমা কামালের দাবি, তাঁর স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা সংঘবদ্ধভাবে বাড়িতে হামলা করে হত্যা করেছে। দেশের তৎকালীন পরিস্থিতি ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তাঁর স্বামীর হত্যার বিচার দাবিতে দেরিতে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মোস্তফা কামালের ভাই হুমায়ূন কবির মজুমদার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই।’ নিরপরাধ কেউ যেন এ ঘটনায় হয়রানির শিকার না হয়, প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার গণমাধ্যমকে জানান, মোস্তফা কামালের স্ত্রীর করা মামলা ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার বলেন, আদালতের নির্দেশে সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদারের লাশ উত্তোলন করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা ভারতীয় পণ্য কোস্ট গার্ড ও কাস্টমস-এর যৌথ অভিযানে জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১ জুন শনিবার মধ্যরাত ৩ টা হতে ভোর ৫ টা পর্যন্ত কোস্ট গার্ড স্টেশন পাগলা ও কাস্টমস্ এর সমন্বয়ে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া হতে ঢাকা গামী সন্দেহজনক একটি কালো মাইক্রোবাস তল্লাশি করে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে আসা প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের ৯ হাজার ৭ শত ১৮ পিস মোবাইলের ডিসপ্লে জব্দ করা হয়। পাচারকারীরা কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে জব্দকৃত মালামাল ও মাইক্রোবাসের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ২৪ ঘন্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে গেল কয়েক বছর ধরে নানামুখী প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তীরবর্তী অংশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ব্যাপক নির্ভরশীলতার পাশাপাশি রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো ক্ষতিকর প্রভাব। এছাড়া সুন্দরবনকে আবর্তিত করে ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস এখন নিত্যকার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তবে এতসব শত্রুর মোকাবিলা করে টিকে থাকা এ বনাঞ্চলের উপর মনুষ্যসৃষ্ট নতুন প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহার যোগ হয়েছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপচনশীল বস্তু হিসেবে প্লাস্টিক-পলিথিন সুন্দরবনের প্রাণীকুল ও প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। যা পরোক্ষভাবে মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন গাছ-গাছালি বিস্তারের ক্ষেত্রেও তা খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এলাকার অসচেতন লোকজনের কারণে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সুন্দরবনে প্রতি লিটার পানিতে অন্তত দু’টি এবং প্রতি কেজি মাটিতে প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন নদ-নদী এবং খাল হতে শিকারকৃত প্রতি কেজি মাছ গড়ে ১০–১৫ মিলিগ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক বহন করছে। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি থাকার পাশাপাশি কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম উক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক সুন্দরবনের প্রকৃতি ও পরিবেশসহ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলেরও মারাত্মক ক্ষতি করছে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কদমতলা, হরিনগর, নীলডুমুর ও কৈখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাশের নদীসমূহে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক-পলিথিন ভেসে বেড়াচ্ছে। খাবারের কাজে ব্যবহৃত প্লেটের (একবার ব্যবহারযোগ্য) পাশাপাশি ভাসমান সেসব প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয়সহ খাবার পানির বোতল। এছাড়া চানাচুর, চিপস, বিস্কুটসহ নানা প্রকার খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট ছাড়াও উপকরণাদি বহনের কাজে ব্যবহৃত পলিথিন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট ও গ্লাস ব্যবহারের জনপ্রিয়তা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক সকল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারসমূহে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিন। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত সেসব প্লাস্টিক-পলিথিন ধ্বংস না করে বরং নানাভাবে তা পাশের নদী ও খালে ফেলা হচ্ছে।
পরক্ষণে জোয়ার-ভাটার সুযোগে সেসব পরিত্যক্ত বস্তুসমূহ সুন্দরবনসহ আশপাশের নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন নদ-নদী মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় জীব ও প্রাণবৈচিত্র্য। শিকার করা মাছের পেটে প্লাস্টিক-পলিথিনের অস্তিত্ব পাওয়ার দাবি করে স্থানীয়রা জানান, পলিথিনে আটকে মাছ ও কচ্ছপের মৃত্যুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারা। এছাড়া অপচনশীল এসব বর্জ্যের আধিক্যে সুন্দরবনের চর ও ফাঁকা জায়গায় গাছের বিস্তৃতি ভয়ংকরভাবে হ্রাস পেয়েছে।
প্লাস্টিক-পলিথিনের মারাত্মক উপস্থিতি সেখানকার প্রাণীকুলের জন্য নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সুন্দরবনের নদ-নদীসমূহকে প্লাস্টিক-পলিথিনের দূষণমুক্ত করা দরকার। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ আইনের কঠোর প্রয়োগ খুবই জরুরি। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা মাসুদুল আলম বলেন, প্লাস্টিক-পলিথিনে সুন্দরবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকসহ পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সুন্দরবনের অস্থিত্বকে রীতিমতো ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাচ্ছে। উপকূলের সুরক্ষা ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা এ তরুণের দাবি, সুন্দরবনের নদ-নদীতে থাকা প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণে মাছসহ উদ্ভিদের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি বৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবন তার অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ব্যাংক থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে জাল নোট দিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক। চাঞ্চল্যকর এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখায়। তবে এ ঘটনায় জড়িত প্রতারকের সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও তার পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি ব্যংক কর্তৃপক্ষ।
জানাগেছে, গত সোমবার ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখায় টাকা তুলে গণনা ও ছেড়া ফাটা নোট চেক করার সময়ে প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েন মোছা.আছমা আক্তার নামের প্রবাসীর স্ত্রী। তিনি উপজেলার পলাশতলী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী বাবুল মিয়ার স্ত্রী।
ভুক্তভোগী মোছা.আছমা আক্তার জানান, ঈদ উপলক্ষে পারিবারিক প্রয়োজনে তার স্বামী প্রবাস থেকে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংকে ৯০ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পাঠান। পাঠানো টাকা উত্তোলন করে ব্যংকেই টাকাগুলোর ছেড়া ফাটা দেখছিলেন । এমন সময় ওই নারী কে তার কাছে থাকা খুচরা টাকাগুলোর বিনিময়ে ১ হাজার টাকার নোট দেওয়ার প্রস্তাব দেন ব্যাংকের ভিতরে অবস্থান করা এক প্রতারক। সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগী নারী প্রতারককে ৫০হাজার টাকা দিযে ৫০ টি ১ হাজার টাকার নোট বুজে নিযে বাড়ি চলে যান। পরে গতকাল ফুলবাড়িয়া কমিউনিটি পুলিশ ব্যাংকে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন প্রতারকের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ টি ১ হাজার নোটই জাল টাকা। সেখানের ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই টাকাগুলো জাল সনাক্ত করে ছিদ্র করে দেন। পরে ভুক্তভোগী নারী গতকাল বিকেলে ফুলবাড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া সোনালী ব্যাংক পিএলসি শাখার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাল টাকার বিষয়ে আজ জানতে পেরেছি, ওই প্রতারকের সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। প্রশাসন ফুটেজ চাইলে তাদেরকে সার্বিক সহায়তা করা হবে। এ ঘটনার পর থেকে তাদের নজরদারি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ায় ২১ টি বালুমহাল থেকে বছরে লোপাট হয়েছে দুই’শ কোটি টাকা, এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র আড়াই কোটি। জেলার দুইটি নদী পদ্মা ও গড়াই থেকে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও কেনাবেচা। বালুমহাল গুলোতে পাহারায় থাকে অস্ত্রধারী বাহিনী। রাতে পাহারা হয় আরও জোরদার। কোন রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দেদারসে চলছে বালু উত্তলন। এর ফলে হুমকিতে রয়েছে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু।
২১টি বালুমহালের মধ্যে বালু তোলা যায় চারটি স্পট থেকে। এর মধ্যে ইজারা আছে দুইটির। নাব্য পরিস্থিতি, পরিবেশ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ও আইনী জটিলতায় বাকি ১৭টি থেকে উত্তোলন নিষেধ। অথচ দুই নদীর পাড় ঘেষে প্রকাশ্যে চলছে বালু উত্তলনের মহোৎসব। মূলত রানৈতিক নেতারাই এ বালু স¤্রাজ্য পরিচালক বলে অভিযোগ আছে।
জেলার দুই নদীর তীরেই রয়েছে বালুর সা¤্রাজ্য। এখানকার বালুর চাহিদা পুরো বিভাগজুড়ে। নদী থেকে তোলা বালু বিক্রি হয় ঘাটেই, সেখান থেকেই প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বালু ড্রাম্প ট্রাকে করে চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরেজমিনে গিয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখান থেকে বছরে কয়েক’শ কোটি টাকার অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু একটা নির্দিষ্ট লেভেলে ফাউন্ডেশন করা। ওখান থেকে বালু তুললে গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের পিলারে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থানীয়রা জানান, সবাই ভালো বালু চায়। তাই যতদূরের লোকই হোক না কেনো, এদের প্রধান টার্গেট থাকে এই দুই নদী। আরেকজন জানান, এখানে গ্রুপ তো অনেক। ঘাট নিয়ন্ত্রণ, বালু তোলা ও ইজারা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এজন্য কেউ ঝামেলায় না গিয়ে যে যার মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বালুমহাল দখল নিয়ে এখানে বিভিন্ন সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র পাহারা থাকে প্রতিদিন, রাতে পাহারা হয় আরও জোরদার।
রাতের বেলা পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন সংবাদকর্মীরা যায় স্পটে। দেখা যায়, গভীর রাত, অথচ অবৈধভাবে বালু তোলায় কোনো বিরতি নেই। যেখানে সাধারণের প্রবেশও নিষেধ। শুধু একটি স্পট থেকে বালুবোঝাই করে বেরিয়ে যায় সাতটি ট্রাক।
এগুলোর নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে, অনুসন্ধান চলে সে বিষয়েও। যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেলো, তারা কেউ বালুমহালে আসেন না সাধারণত। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে তারা বেশ প্রভাবশালী। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হয় তেমন কয়েকজনের সঙ্গে।
কুমারখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিলন প্রামাণিক ফোনে বলেন, ওই ঘাট পাড়ে আমাদের পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বালু পাবেন। আমার কথা বললে কম দামে দেবে।
মনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও যোগযোগ করা হয়। তিনি বলেন, দাম ১৮ হাজার টাকার মতো, আপনার কাছে হয়তো একটু কম নেয়া যাবে, সাড়ে ১৭ হাজারের মতো। পরে কথা হয়, চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জানবার হোসেনের সঙ্গেও।
বালুমহালে রাজনৈতিক এই প্রভাবের বিষয় নিয়ে কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে। বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, বর্তমানে যারা বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই যোগসূত্র আছে। অবশ্য তিনি দাবি করেন, বালু উত্তোলনে তার নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দীন বলেন, আমরা অনেক কিছু অনুভব করি, কিন্তু বলাটা কঠিন। যারা অবৈধ উত্তোলনের অভিযোগ করছে, তারাই একসময় এটা করতো। আমরা বাধা দেয়ার পর তারা আর এসব অপকর্ম করতে পারছে না। তাই উল্টাপাল্টা অভিযোগ দিচ্ছে বলে দাবি তার।
তবে এসব বালুমহাল আগাগোড়াই প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। অদৃশ্য ভয় দেখিয়ে আড়ালেই থেকে যায় তারা। এই বালু যেনো স্থানীয়দের কাছে সোনার খনি। রহস্যময় সেই খনির সঙ্গে মিলিয়ে এটিকে তারা বলেন এল ডোরাডো।
কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান লাকী বলেন, এখানকার বালু মানে স্বর্ণ। তাহলে এই দামি জিনিস কীভাবে অপব্যবহার হয় প্রশ্ন রাখেন তিনি। যেই দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই দলের ছত্রছায়ায় বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, এখানে যারা ডিসি হিসেবে আসেন, তারা আর বদলি হতে চায় না। আরও থাকার চেষ্টা করে। কেনো করে? ঘুষের কোনো প্রমাণ পাবেন না। কিন্তু আমরা জানি এখানে অনেক লেনদেন হয়।
এই একটি ঘাট থেকে তিন ধরনের বালুতে প্রতিদিন লেনদেন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শুষ্ক মৌসুম তো আছেই, বালু তোলা হয় এমনকি ভরা বর্ষাতেও। একুশটি ঘাট থেকে বছরে গড়ে লেনদেন দুইশ কোটি টাকা। আর গত বছর সরকার পেয়েছে মাত্র দুই কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতো ফারাকের কী কারণ? জানতে চাওয়া হয় জেলার রাজস্ব শাখায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এখানে সরকারের বঞ্চিত হওয়ার শেষ নেই। যেখানে বালু লোড-আনলোড করে, পুলিশ সঙ্গে থাকে। তবে ওখানকার অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। ফায়ারিংয়ের প্রস্ততি নিয়ে যেতে হয়। এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এর আগে সাংবাদিকদেরও ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন, তারপরেও কীভাবে হচ্ছে প্রকাশ্যে এ চুরি? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, কেউ চুরি করলে সেটা তো চুরি। প্রকাশ্যে হচ্ছে বালু তোলার কাজ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে করাচ্ছি, বিষয়টি এমনও না।
প্রভাবশালীদের ভয়ে অভিযোগ করে না কেউই। এ ধরণের ঘটনায় মামলাও নেই। অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ থাকে প্রশাসন। যদিও অবৈধ বালু উত্তোলনে একদিকে হুমকির মুখে পরিবেশ-প্রকৃতি, অন্যদিকে মোটা অংকের রাজস্ব ক্ষতি। এছাড়াও বালুবোঝাই ডাম্প ট্রাকে সড়কে বেড়েছে মৃত্যু।
যশোরের একটি রেলস্টেশনে এক নারী সন্তান প্রসব করলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোনকলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) ভোর পৌনে চারটায় যশোরের কোতোয়ালী থানার রূপদিয়া রেলস্টেশনে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৯৯৯ নম্বরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, স্টেশন মাস্টার বাবুল আক্তার ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে জানান, স্টেশনের প্লাটফর্মে একজন নারী সন্তান প্রসব করেছেন, তখন সেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মা এবং সন্তানের জীবন বাঁচাতে দ্রুত একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য ৯৯৯ এর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কলটি রিসিভ করেছিলেন ৯৯৯ কলটেকার কনস্টেবল দ্বীন ইসলাম। কনস্টেবল দ্বীন তাৎক্ষণিকভাবে যশোর কোতোয়ালী থানায় এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে বিষয়টি দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানায়।
৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল এবং ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুল্যান্স রেলস্টেশন হাজির হয়। প্রসূতি ও নবজাতক ছেলে সন্তানকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুল্যান্সযোগে যশোর জেলা হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড-২ এ ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, প্রসূতির বয়স আনুমানিক ২৫ এবং তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়, মা এবং নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা উজানি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। এতে করে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নদী দুটির চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বইছে ১৩ দশমিক ৬২ মিটার উচ্চতায়। যেখানে বিপৎসীমা হচ্ছে ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। অমলশিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বইছে ১৭ দশমিক ২৫ মিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ মিটার। শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি ১৩ দশমিক ৫১ মিটার উচ্চতায় বইছে, যেখানে বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৪৬ মিটার ওপরে রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বইছে ৯ দশমিক ৭৯ মিটার উচ্চতায় যা বিপৎসীমার চেয়ে ০ দশমিক ৩৪ মিটার বেশি।
পাউবো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি এবং টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদনদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে উজানের ঢলের প্রভাব বেশি পড়ছে সীমান্তবর্তী পয়েন্টগুলোতে।
এদিকে, জেলার ধলাই নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—সারি, ডাউকি ও সারি-গোয়াইন নদ-নদীর পানি কমতির দিকে আছে।
জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ভারতের দিক থেকে হঠাৎ করে ঢল নামায় কুশিয়ারা নদীর পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। নদীর পাড়ঘেঁষে অনেক ঘরবাড়ি আছে, এখনই পানি না নামলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্লাবিত হওয়ার ভয় আছে। আগে থেকে যদি সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। নিচু এলাকা ও প্লাবনপ্রবণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। প্রত্যন্ত ও প্লাবনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
সুন্দরবন বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় প্রায়ই বাঘ চলে আসে। সম্প্রতি এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। তাই লোকালয়ে বাঘের প্রবেশ রুখতে বাঘ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ অংশ ঘেরা রয়েছে জালের বেড়া দিয়ে। তবে বহু অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে। আবার বেশ কিছু জায়গায় এখনও দেওয়া হয়নি জালের বেড়া। এবার বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বাঘের প্রবেশ থেকে বাসিন্দাদের সুরক্ষিত করতে পুরনো নেট পরিবর্তন করে নতুন নেট লাগানো হবে। একইসঙ্গে, এখনও পর্যন্ত যেসব এলাকা অরক্ষিত রয়েছে সেগুলি প্রথমবার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে।
বাঘ প্রকল্পের দুটি রেঞ্জে ১০০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে জালের বেড়া রয়েছে। এই পুরো এলাকা জুড়ে নতুন জাল লাগানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন আধিকারিকরা। জুলাইয়ের শেষ থেকে তাঁরা এই কাজ করতে চাইছেন। সে বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন আধিকারিকরা। এই অবস্থায় কথাটা যার প্রয়োজন? কত খরচ পড়বে? তার হিসেবে চলছে বলে জানা গিয়েছে। সেই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বন বিভাগের কাছে প্রস্তাব দেবেন আধিকারিকরা। এবিষয়ে বাঘ প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, এ নিয়ে এখনও পরিকল্পনা চলছে। জুলাইয়ের শেষ থেকে এই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে সুন্দরবনে। যার ফলে বিভিন্ন অংশে জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আর সেই সুযোগে বার বার লোকালয়ে এসে পড়ে বাঘ। তাছাড়া, বহুদিন ধরে নতুন জল লাগানো হয়নি। অনেক জায়গায় জলের বেড়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এসব কারণেই নতুন জাল লাগাতে উদ্যোগী হয়েছেন বা প্রকল্পের আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, বিশেষ করে গত বছর সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলিতে বাঘের আনাগোনা বেড়েছিল। এইসবের কারণে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সে কথা মাথায় রেখেই ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় কোনও বনাঞ্চল রাখতে চাইছেন না আধিকারিকরা। তাই বাসিন্দাদের সুরক্ষায় যাতে কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত জালের বেড়ার সুযোগে বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ না করতে পারে তারজন্য নতুন জল টাঙানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন বাঘ প্রকল্পের আধিকারিকরা।
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা।আসন্ন কুরবানীকে কেন্দ্র করে পাথরঘাটায় জমে উঠেছে গবাদি পশুর হাট।গত কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে ঝিরিঝিরি ও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে পাথরঘাটায়। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও পাথরঘাটার সব থেকে বড় গরুর হাট নাচনাপাড়া মানিকখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে গরু।আজ সোমবার(২জুন) সকাল থেকে শুরু করে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ছোট-বড়-মাঝারি আকারের গরু, কয়েক বছর লালন পালনের পর বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন খামারিরা। এদিন সরবরাহ বেশি থাকায় মূল হাটের আশেপাশেও গরু বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন ক্রেতারা।
হাটে ক্রেতা আনাগোনা থাকলেও বিক্রি ছিল কিছুটা কম। অধিকাংশই দেখেছেন, যাচাই করছেন দাম। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ছোট আকারের দুই থেকে চার মন ওজনের গরু, বিক্রি হয়েছে ষাট হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের তিন থেকে পাঁচ মন ওজনের গরুর দাম, ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। বিশাল আকারের গরু এই বাজারে তেমন ছিল না।
নাচনাপাড়া ইউনিয়নের জ্ঞানপাড়া গ্রামের রুস্তম আলী জানান, বাজারে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি। যারা ছোট গরু বাজারে এনেছেন তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় বিক্রিও কম। খুব বেশী লাভ হচ্ছে না।
নাচনাপাড়া ইউনিয়নের খামারি ফারুক "প্রতিদিনের সংবাদকে" বলেন, পশু পালনে খরচ বেড়েছ। কিন্তু সে তুলনায় মিলছে না দাম। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর ২ হাজার টাকায় যে খড় পাওয়া যেত এবছর তার দাম ৩ হাজার টাকা। ভূষি, খুদ, কুড়ার দামও প্রায় আগের তুলনায় ৫০ ভাগ বেড়েছে। খরচ বাড়লেও গরুর দাম আগের মতোই।
ক্রেতাদের ভাষ্য, বৈরি আবহাওয়ার জন্য ক্রেতা কম। এছাড়াও বিগত বছরগুলোতে যারা বড় বড় গরু কিনতেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারনে তাদের বেশিরভাগ পলাতক। ফলে বাজারে গরু বেচাকেনা কম। সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। এ কারণে বড় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।
রাসেল নামের এক ব্যাপারী "প্রতিদিনের সংবাদকে" বলেন, যারা পলাতক তারা অনেক টাকার মালিক ছিল। অনেকগুলো কোরবানি দিত। বড় থেকে শুরু করে পাতি নেতারাও গরু কিনত। সেই অংশটা বাজারে না আসায় চাঙ্গা ভাবটা নেয়।
জ্ঞানপাড়া গ্রামের নসির মীর গরু কিনতে এসে বলেন, আমি একটি গরু আগেই কিনেছি এখন, ঘুরে ঘুরে গরু দেখছি। বাজেট আর পছন্দ মতো হলে আরও একটা কিনব।তিনি আরো বলেন, কোনো হাটেই জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে না। বড় গরুর বিক্রি নেই বললেই চলে। বড় গরুর খামারিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ইজারাদার হাবিবুর রহমান "প্রতিদিনের সংবাদ"কে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর হাটে গরু বেচা কেনা খুবই কম। আগে এমন সময় হাটে প্রায় ১০০ গরু বিক্রি হতো আর এ বছর ৫০ টা ও বিক্রি হচ্ছে না। তবে শেষ দিকে গরু বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা এই ইজারাদারের।তিনি ক্রেতা- বিক্রেতাদের উদ্দেশ্য আরো বলেন, হাটে পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন তারা।
অতিবৃষ্টির কারণে সিটি নগরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম।
এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত বাড়ছে সুরমা কুশিয়ারাসহ সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও জনপদ।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। নিম্নচাপ সরে গেলেও তার প্রভাবে বৃষ্টি এখনো অব্যাহত আছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে শুক্রবার রাত থেকেই সিলেট নগরের অনেক এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। তলিয়ে যায় সড়ক। শনিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক এলাকা জলমগ্ন ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদীঘির পাড়, উপশহর, তেররতন, মাছিমপুর, তালতলা, শিবগঞ্জ, ছড়ারপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি (কক্ষ নং-২০৫) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবরকে জরুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে চালু করা এই কন্ট্রোল রুমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।
গতকাল সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৫টার মধ্যে সব ওয়ার্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের অগ্রগতির প্রতিবেদন সিসিকের আইসিটি শাখার ই-মেইলে (1gcc1@lgd.gov.bd) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নগরের চৌহাট্টা এলাকার বাসিন্দা রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জাকির আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নগর পানিতে তলিয়ে যায়। বাসার ভেতর পানি ঢুকে অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চলে আসছে।
সিসিকের কন্ট্রোল রুম চালুকে আইওয়াশ দাবি করে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিক কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এতে কাজের চেয়ে লুটপাটই বেশি হয়েছে। তাদের লুটপাট আর অপরিকল্পিত কাজের কারণেই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বন্যার শঙ্কা: এদিকে সিলেটের পাশাপাশি উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে। এ অবস্থায় সিলেটের নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে। ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারাও। তবে এই দুই নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
গত কয়েক দিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আসাম ও মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে আসে সুরমা কুশিয়ারা এবং সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছাড়ার মতো পাহাড়ি নদী হয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণ করতে না যাওয়াটাই ভালো বলে স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি পেলেও কারও পানিবন্দি অবস্থায় থাকার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে; পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলেই পানি নেমে যাবে। এখনো উপজেলার কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কিছু কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, গতকালের চেয়ে আজ পানি কিছুটা কমেছে। নিম্নাঞ্চলে পানি থাকলেও কোনো গ্রাম বা এলাকা প্লাবিত হয়নি। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কারও আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী। বঙ্গোপসাগরের গা ঘেঁষে বিস্তৃত এই জনপদের একমাত্র ঢাল হিসেবে কাজ করে বেড়িবাঁধ। কিন্তু বছরের পর বছর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নিম্নমানের নির্মাণকাজে সেই ঢাল আজ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। লক্ষাধিক মানুষ এখন প্রকৃতির করুণার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে, কারণ যেকোনো সময় একটুখানি জলোচ্ছ্বাসেই ভেসে যেতে পারে তাদের ঘরবাড়ি, চাষের জমি আর স্বপ্ন।
চলমান বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও প্রচণ্ড ঢেউয়ের ফলে বেড়িবাঁধ ভাঙা অংশ দিয়ে বানের জলের মতো হু-হু করে পানি প্রবেশ করছে। শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বিপরীতে এসব দেখে অসহায় অবস্থায় উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে উপকূলবাসীর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০১৫ সালে বাঁশখালীতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পরবর্তী সময় ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও, মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কদমরসুল, খানখানাবাদ, প্রেমাশিয়া, সাধনপুরসহ একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমস্যা শুধু কাজের মানে নয়, প্রকল্প নকশাতেও। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিউন বাসির বলেন, ‘এ ধরনের ব্যর্থতার পেছনে দুটি বড় কারণ- নিম্নমানের নির্মাণ ও নকশাগত ত্রুটি।’
তিনি আরও বলেন, যদি সঠিক নকশা অনুসরণ করে টেকসই উপকরণ ব্যবহৃত হতো, তাহলে এই পরিণতি আসার কথা ছিল না।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আজও বাঁশখালীবাসীর মনে তাজা। সেদিন শুধু বাঁশখালীতেই প্রাণ হারিয়েছিল ৩৫ হাজার মানুষ। সেই স্মৃতিতে প্রতিবছর এপ্রিল মাস এলেই নতুন আতঙ্কে ভোগেন উপকূলবাসী। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়, কারণ চলমান ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে আবারও বেড়িবাঁধ উপচে সাগরের পানি গ্রামে ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা। একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ। এমনকি অনেকে বলছেন, প্রকল্পের অর্ধেক টাকাও ব্যয়ে যায়নি, বাকিটা গেছে ভাগ-বাঁটোয়ারায়।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘যে এমপি ছিলেন, তিনিও ভাগ পেতেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা মাল সরবরাহ করতেন, সব মিলিয়ে বাঁধের এই অবস্থা।’ এই বাঁধের নির্মাণে কাজ পেয়েছে পূর্বে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ‘হাসান ব্রাদার্স’-এর মতো সংস্থাও, বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় অধিবাসী ও মেরিনার ক্যাপ্টেন মনজুরুল হক টেকসই আধুনিক বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসী যখন অসহায়, তখন বহিরাগত গোষ্ঠী উৎসবের মতো করে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ লুটছে। এদের কোনো স্থানীয় দায়বদ্ধতা নেই, অথচ তারাই এখন প্রধান সুবিধাভোগী। জেলেদের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা নিষিদ্ধ জাল ও আধুনিক ট্রলার দিয়ে মাছের ডিম ও ছোট মাছ পর্যন্ত ধরে ফেলছে, ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে। এসব কার্যকলাপ সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনছে।
ঠিকাদার ব্যবসায় জড়িত একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বলেন, দুর্নীতি শুধু রাজনৈতিক নেতাদের হাতে হয়, ঠিকাদারদের হাতে হয় তেমন নয়, এই কাজে যে সরকারি দপ্তরও জড়িত আছে, পার্সেন্টেস ছাড়া যে ফাইল নড়াচড়া হয় না এই খবর কয়জনে রাখে। টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার জন্য পছন্দের লোকজনদের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার খবর কেউ বলে না। ধাপে ধাপে পার্সেন্টেসের খেলা বন্ধ করা গেলে কাজের কাজ কিছু হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের মে মাসে নতুন করে বাঁশখালী বেড়িবাঁধ উন্নয়নে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল একনেক সভায়। সচেতন মহলের দাবি বড় বাজেট মানেই টেকসই কাজ নয়। যদি তদারকি না থাকে, দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রক্ষা না করা যায়, তাহলে ৬০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পও অদূর ভবিষ্যতে আরেকটি দুর্নীতির দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
স্থানীয়দের দাবি সেনাবাহিনী বা নৌবাহিনীর অধীনে নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। তৃতীয় পক্ষ দিয়ে নির্মাণসামগ্রী, ব্যয় ও অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে হবে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রকল্প মনিটরিং বাড়াতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী উপ-প্রকৌশলী তানজির সাইফ বলেন, ইতোমধ্যে মোট পাঁচ প্যাকেজে পাঁচটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিধিমোতাবেক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বাঁশখালীর অভ্যন্তরীণ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী বিদায় সাগরপথে মালামাল আনা হবে তার জন্য জেটি নির্মাণ করতে হবে। বেড়িবাঁধের বেহালদশার কথা বলা হলে তিনি বলেন কিছু হবে না। গত বছর কিছু হয়েছিল? এর মধ্যে আমাদের কাজ শুরু হবে।
বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ আজ শুধু একটি প্রকৌশলগত কাঠামো নয়, এটি লক্ষাধিক মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কেবল একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন নয়, এটি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং জনগণের প্রতি কর্তব্য পালনের একটি পরীক্ষা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৯ জন বাংলাদেশী নাগরিককে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ভাগজত ঘাট এলাকায় তাদের হেফাজতে নেয় ৪৭ ব্যাটালিয়ন বিজিবি। পুশ-ইন করা বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে ৪ জন পুরুষ, ২ জন নারী, ২ জন কিশোর এবং ১ জন শিশু।
শনিবার বিকেল ৫ টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড।
বিজিবি সূত্র জানান, ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) অধীনস্থ আশ্রায়ন বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৫৪ হতে আনুমানিক ৩ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভাগজত ঘাট এলাকায় একটি নৌকা থেকে ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নামতে দেখে স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি আশ্রায়ণ বিওপিকে অবহিত করে। খবর পেয়ে বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদ তারা বলেন, তারা দুটি পৃথক পরিবার এবং প্রায় ৪ (চার) বছর আগে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার বামনহাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দিল্লি রাজ্যের অন্তর্গত উত্তর-পশ্চিম দিল্লি জেলার রামপুরা থানার অধীনস্থ একটি এলাকায় ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
তারা আরও জানায়, সম্প্রতি ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানি না করার সরকারি ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে নিজেরাই স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার অভিপ্রায় প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার তাদেরকে ভারতের জলঙ্গি থানার নিকটবর্তী একটি বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে থেকে বিএসএফ কর্তৃক কাঁটাতারবিহীন চরাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা পায়ে হেঁটে ও ভাড়াকৃত মোটরসাইকেলে চলাচল করে ভাগজত ঘাট এলাকায় এসে উপস্থিত হয়।
বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে এবং তারা শারীরিকভাবে সুস্থ আছে বলে জানান বিজিবি।
বিষয়টি বিজিবি কর্তৃপক্ষ ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানা ও বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে সকাল সাড়ে ১০ টার সময় সীমান্ত পিলার ৮৫/১০-এস এর নিকটবর্তী স্থানে বিজিবি চর-চিলমারী কোম্পানি ও প্রতিপক্ষ ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের জলঙ্গি কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবি পুশ-ইনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হস্তান্তর নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। এ বিধিনিষেধ আগামী ১ জুন থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জারি থাকবে। বিষয়টি সাতক্ষীরার সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদে মাইকিং করে স্থানীয় বনজীবীদের জানানো হয়েছে। তবে কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সুন্দরবনে ওপর নির্ভরশীল পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি বনজীবী ও ট্রলারচালক বেকার হয়ে পড়বে। প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময় প্রতি জেলেকে সরকারিভাবে ৮০ কেজি করে চাল দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে সুন্দরবনের জেলেদের জন্য কোনো সহযোগিতা না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এ কারণে খাদ্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ শুক্রবার সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষণ্ন মুখে বন থেকে ঘরে ফিরছেন জেলেরা। পরের ৩ মাস কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামের বাসিন্দা ও বনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের ট্রলার সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম জানান, জুন থেকে আগস্ট ট্রলারচালক, চালক সহযোগী ও পর্যটক গাইড সাবই বেকার হয়ে পড়ে। তাঁদের বিকল্প কোনো কাজ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। তিনি এই নিষেধাজ্ঞার সময় সুন্দরবনে কর্মরত জেলে ও বাওয়ালীসহ ট্রলারচালক, চালক সহযোগী ও পর্যটক গাইডদের খাদ্য সহযোগিতা ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, সারা বছর হাজার হাজার বনজীবী সুন্দরবন থেকে মাছ, কাঁকড়াসহ গোলপাতা ও মধু আহরণ করেন। তাই সুন্দরবনের বিশ্রাম দেওয়ার মাধ্যমে সেখানকার প্রকৃতি-প্রতিবেশসহ জীবপ্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার জন্য প্রতিবছর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বেকার বনজীবীদের খাদ্যসহায়তার বিষয়ে এই বন কর্মকর্তা বলেন, বেকার জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ২ বছর আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে বনজীবীদের তালিকাও নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করছেন, প্রকৃত বনজীবীরা এ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যসহায়তা পাবেন।