গুলশানের হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পর আবারও নিজেদের সক্ষমতার জানান দিলো জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুই সহযোগীকে। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি লেখক অভিজিৎ রায় ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
সম্প্রতি নতুন করে জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত দুই বছরে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে অন্তত ৭০ তরুণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নতুন জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার কথাও বলা হচ্ছে। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সম্প্রতি একাধিক চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট একযোগে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। একই সঙ্গে দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। সারা দেশের আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সীমান্তেও জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।
সবশেষ আট বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা করে জেএমবির তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল সহযোগীরা। ওই ঘটনায় একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত, একজন ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও শীর্ষ একজন এখনো অধরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জঙ্গিদের হামলা কমে এলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মি স্টাইলে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে দিলো, জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। ভেতরে ভেতরে তারা আরও বেশি সক্রিয় এবং সংগঠিত হয়েছে। যে কোনো সময় আগের মতো হামলা চালাতে সক্ষমতা তৈরি করেছে তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। আমাদের পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। তাদের খুব শিগগিরই ধরতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা বর্ডার এলাকাগুলোতেও বলে দিয়েছি, তারা যেন দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব জিনিসই সিরিয়াসলি দেখি। সিরিয়াসলি দেখি বলেই আমরা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, জঙ্গির উত্থানও আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। কোন ফাঁক-ফোঁকরে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তদন্তের আগে বলতে পারবো না।’
যেভাবে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২ জঙ্গিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় তাদের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বেলা ১২টার একটু আগে চারজনকে একসঙ্গে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এসময় নুরে আজাদসহ দুই কনস্টেবল তাদের নিয়ে গারদখানায় যাচ্ছিলেন। চার জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মাইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির, সবুর ও আরাফাতকে একসঙ্গে আট তলা থেকে নিচে নামানো হয়। তখন আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসানকে যৌথভাবে হাতকড়া এবং সবুর ও আরাফতকে যৌথভাবে হাতকড়া পরানো ছিল। চারজন দড়ি দিয়েও বাঁধা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতের কাঠগড়া থেকে চারজনকে একসঙ্গে নামিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূলফটক দিয়ে ফুটপাতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুই কনস্টেবলের মুখে পিপার স্প্রে করে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা সহযোগী জঙ্গিরা। ওই ফুটপাত ধরে সিএমএম কোর্টের পাশের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ফুটপাতে ওঠার মুহূর্তেই ওঁত পেতে থাকা জঙ্গিদের হামলার মুখে পড়েন দুই পুলিশ কনস্টেবল। মুহূর্তেই চার জঙ্গির দড়ির বাঁধন কেটে ফেলা হয়। চারজন একসঙ্গে দৌড়ে আদালত চত্বরের বিপরীত দিকের রঘুনাথ দাশ লেনের দিকে যেতে থাকে। পুলিশ কনস্টেবলরা দৌড়ে আটকানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি চিৎকারও করেন। সড়কের মাঝখানের আইল্যান্ডে মাটিতে পড়ে যান এক পুলিশ সদস্য। তাকে জঙ্গিরা এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারে। পরে তারা রঘুনাথ দাশ লেন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পিছু নেয় পুলিশের অন্য সদস্য এবং জনতা। ওই লেনের ১৫ নম্বর কারকুন বাড়ী লেন বড় জামে মসজিদের সামনে থেকে সবুর ও আরাফাতকে ধরে ফেলে পুলিশ ও স্থানীয়রা। তবে আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসান শামীম পালিয়ে যায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিরা একাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে রঘুনাথ দাশ লেনে অপেক্ষা করছিল। তারা হাতকড়া কাটার জন্য একটি কাটার মেশিনও সঙ্গে এনেছিল। পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটি ফেলে গেছে। এছাড়া জঙ্গিদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও ফেলে গেছে। ইতোমধ্যে ওই মোটরসাইকেলের মালিককে শনাক্ত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তার নাম হাসান আল মামুন। তবে তিনি এক বছর আগে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা হাতকড়া খোলার জন্য চাবি ব্যবহার করেছে। রঘুনাথ দাশ লেন থেকে একটি নকল চাবিও উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ধারণা, হাতকড়া খোলার পর তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। রঘুনাথ দাশ লেনসহ জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়া পথের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে তিনজনকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই মোটরবাইকের পেছনের দুজনই আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসান শামীম। তাদের পাশে এক তরুণকে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। তার শরীরের সামনের অংশে একটি ব্যাকপ্যাক ছিল।
সিটিটিসির ওই কর্মকর্তার ধারণা, অন্তত ৮ থেকে ১০ জঙ্গি আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল। তারা একাধিকবার আদালত প্রাঙ্গণসহ পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা রেকি করে রেখেছিল। সঙ্গে থাকা ওই সহযোগী জঙ্গির ব্যাগে অস্ত্র বা বিস্ফোরক ছিল। কোনো ধরনের আক্রমণ বা বাধার শিকার হলে সহযোগীরা অস্ত্র বা বিস্ফোরক ব্যবহার করতো।
ডিএমপির সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বলেন, জঙ্গিদের গারদখানায় নেয়ার পথে পুলিশের ওপর হামলা করে দুইজনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাদের সহযোগীরা। আমরা দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি।
২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
প্রকাশ্য দিবালোকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া ও নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ওই বছরেরই ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হলেও পুরস্কার ঘোষণার ছয় বছরেও জিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগেও একাধিক জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো জঙ্গির বিষয়েই কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর বোমা মিজান ও সালাউদ্দিন সালেহীনকে ধরিয়ে দিতেও ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বোমা মিজান ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সালাউদ্দিন সালেহীন আট বছর ধরে অধরাই রয়ে গেছে।
রেড অ্যালার্ট, সীমান্তে সতর্কতা
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পরপরই সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দুই জঙ্গি যেন কোনো সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকা পেরিয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেত। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিও দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে অনুমান করে সীমান্ত এলাকায় কড়া সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। একইসঙ্গে দুই জঙ্গির বিষয়ে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তথ্য দেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত এই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার আগে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কারাগারকে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে কারাগারগুলোতেও বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সব আদালতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এদিকে বিচারিক আদালত থেকে দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সব আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ নির্দেশের কথা জানান।
সাঁড়াশি অভিযান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
দু্ই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট। ঢাকার সবগুলো প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি প্রতিরোধে বিশেষায়িত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক দল মাঠে তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান শুরু করেছে। এর পাশাপাশি র্যাব, পিবিআই, সিআইডির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও একযোগে কাজ শুরু করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে তারা আদালত প্রাঙ্গণে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে আসা সহযোগী জঙ্গিদের একজনের নাম-পরিচয় পেয়েছেন। তাকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে অপর একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। তাদের কোনো সদস্যকে খুঁজে বের করা অনেক কঠিন। তারা ‘স্লিপার সেল’ ও ‘কাটআউট’ পদ্ধতি অনুসরণ করে পারস্পরিক যোগাযোগ করে থাকে। এ ধরনের পদ্ধতিতে জঙ্গিরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জঙ্গিদের নিরাপত্তায় গাফিলতি
দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর কারাগার থেকে জঙ্গিদের আদালতে হাজির করা ও কারাগারে তাদের নিরাপত্তায় গাফিলতির বিষয়টিও সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কারাগারে থাকা জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে ভেতর থেকেই বাইরে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়াসহ নানা পরিকল্পনা করে আসছে। এমনকি এর আগে কারাগারের ভেতরে থেকে ডাকাতির নির্দেশনা দেয়ার তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর গারদখানাসহ আদালতে আনা নেয়ার সময়ও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় না। কারাগারের বাইরে যাত্রাপথেও জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে এবং মোবাইল ফোনও ব্যবহার করে। কারাগার ও পুলিশের কিছু সদস্যের যোগসাজশে জঙ্গিরা এই সুযোগ নেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা যদি মনে করি কারও অবহেলা থাকে, যদি কারও গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এ কাজটি ঘটিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’
২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এই ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার কোতোয়ালী থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়। কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. দুলাল মিয়া জানান, আদালতে হাজির করা ১২ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) প্রধান করে গঠিত কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিআরও)।
আদেশে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দিতে হবে।
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান লেবাননের প্রতি ‘সহায়তা’ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। লেবাননের সরকার তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা তৈরির জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পর বুধবার লেবাননে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা প্রধান এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান বলেন, তার সরকার লেবাননের প্রতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা প্রকাশ করার পর আলী লারিজানির লেবানন সফর। হিজবুল্লাহ গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে ভালো অস্ত্রে সজ্জিত বলে মনে করা হত।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান লারিজানি বৈরুতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি লেবাননের জনগণ কষ্ট ভোগ করে, তাহলে আমরা ইরানেও এই যন্ত্রণা অনুভব করব এবং আমরা সকল পরিস্থিতিতে লেবাননের প্রিয় জনগণের পাশে থাকব’।
লারিজানিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর সড়কে বহু হিজবুল্লাহ সমর্থক জড়ো হয়েছিল। লারিজানি যখন সমর্থনের স্লোগান দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের স্বাগত জানাতে গাড়ি থেকে নেমে আসেন।
লেবাননে, লারিজানি প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সংসদ স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
ইসরাইলের সাথে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইরান একাধিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। যার মধ্যে গত জুন মাসে দুই দেশের মধ্যে ১২ দিনের প্রকাশ্য যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত নতুন লেবানন সরকার গোষ্ঠীটিকে আরো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
হিজবুল্লাহ ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীসহ এই অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যারা ইসরাইলের বিরোধিতায় একত্রিত হয়েছিল।
ডিসেম্বরে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, লেবাননের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। এটি দীর্ঘকাল ধরে ইরান ও হিজবুল্লাহর মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের পথ হিসেবে কাজ করেছিল।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। এ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয় এবং মসজিদে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী পুরুষ শিশু সহ ২৩ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ৪ মাসে পঞ্চগড় সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রায় ২শতাধিক মানুষকে পুশইন করলো ভারতীয়রা।
আজ বুধবার (১৩আগষ্ট) সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়নে ঘাগড়া বিওপি সীমান্ত এলাকা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু সহ ২৩ জনকে আটক করে নীলফামী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে ভারতীয় বিএসএফ তাদের পুশইন করে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা থেকে সকালে পুশইন করা ১৩ জন নারী,৯ জন পুরুষ ও ১ জন শিশুকে আটক করে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।
আটকের পর তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাদের ভারতীয় পুলিশ আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। পরে বিএসএফ পঞ্চগড়ের ঘাগড়া সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে।
আটককৃতরা বাংলাদেশের সাতক্ষিরা, যশোর, নড়াইল ও নীলফামারী জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা দির্ঘদিন ভারতের বোম্বে শহরে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে কাজ করতো বলে জানায়।
পুলিশ বলছে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সহ পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হবে ।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ২০০ লিটার চোলাই মদসহ ডজন মামলার আসামি মো.বাবুল হোসেন ওরফে গ্যাস বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় বাবুলের বসতঘর থেকে প্লাস্টিকের বস্তা ভর্তি এসব মদ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাবুল চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের পূর্ব চরনদ্বীপ এলাকার মোজাহের মিয়ার ছেলে।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজ বসতঘরে অবৈধভাবে চোলাই মদ মজুদ রাখায় বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বাবুলের বিরুদ্ধে খুন, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ১০টি মামলা রয়েছে।
নওগাঁর সাপাহারে টিভি দেখার প্রলোভন দিয়ে দুই শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় আজিমুদ্দিন (৫৫) নামের এক আসামিকে ১০বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ৫০হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
বুধবার (১৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো: মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন। এসময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট বিকেলে উপজেলার মির্জা পুর গ্রামে আজিমুদ্দিন একই গ্রামের ছয় বছর বয়সী দুই শিশুকে টিভি দেখার প্রলোভন দিয়ে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর দুই শিশু’র পরিহিত প্যান্ট খুলে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে শিশু’র বাবা সাপাহার থানায় অভিযোগ দিলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় আদালত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ এই রায় দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আর আসামী পক্ষের কৌশলি আব্দুর রাজ্জাক উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
খুলনায় স্বামীর চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ময়না বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
আজ (১৩ আগস্ট) বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার নতুন রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ময়না বেগম সাতক্ষীরা জেলার মৌতলা গ্রামের বাসিন্দা আরিফ মোল্লার স্ত্রী।
খর্ণিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলুল করিম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সাতক্ষীরা মৌতলার বাসিন্দা আরিফ মোল্লার পিঠের টিউমার অপারেশন করার জন্য সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে তারা বাড়ি থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার নতুন রাস্তায় পৌঁছালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে অ্যাম্বুলেন্সটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চার জনের তিনজন সুস্থ থাকলেও আরিফ মোল্লার স্ত্রী ময়না ঘটনাস্থলেই মারা যান। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ডুমুরিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ময়না বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে চালক দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।
খর্ণিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফজলুল করিম বলেন, সংবাদ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে এসে তাদের সকলকে উদ্ধার করি। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য ডুমুরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আরিফ মোল্লার স্ত্রী ময়নার মৃত্যু হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে জনসংযোগ দপ্তরের আয়োজনে এই সেমিনার হয়। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম, যিনি সংবাদ পরিবেশনে বস্তুনিষ্ঠতা, নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় অনেক সময় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় থাকে না। হলুদ সাংবাদিকতা ও ফেসবুকনির্ভর সংবাদ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেক সংবাদকর্মী যেন গঠনমূলক সংবাদ উপস্থাপন করেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ পরিবেশ গড়ে ওঠে।”
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতা রক্ষা ও সমাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
প্রায় অর্ধশতাধিক সংবাদকর্মীর অংশগ্রহণে আয়োজকরা ভবিষ্যতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কুমিল্লা সরকারি কলেজ। ১৯৬৮ সালে জেলার প্রাণকেন্দ্র পুলিশ লাইনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এবং স্নাতক পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এ কলেজে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন আবদুল ওহাব। তিনি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি সহ কলেজের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তবে প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পরও কলেজটি এখনো নানা দাবি পূরণ হয়নি। যার ফলে কুমিল্লার প্রাণ কেন্দ্রে থাকা কলেজটি শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক পরিসরে অবদান রাখতে পারছে না। কলেজটিতে বর্তমানে স্নাতকে কয়েকটি বিষয়ে পাঠদান চলে। কলেজটিতে স্নাতক করে অন্য কলেজে গিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক নিয়োগে এখনো পদ সৃষ্টি হয়নি।
কলেজটির তথ্য উপাত্ত ঘেটে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র ৬ টি বিষয়ে স্নাতক বিষয়ে ভর্তি হতে পারে শিক্ষার্থীরা। যার মধ্যে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইংরেজি, গণিত ও বাংলা। এখানে রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। বর্তমানে ৬শ জন শিক্ষার্থী স্নাতকে ভর্তি হতে পারেন। আসন সংকটের কারনে অনেক শিক্ষার্থী কলেজটিতে ভর্তি হতে পারে না।
আরো যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ভবন নেই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকার কারণে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাশ নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম, যার ফলে ক্লাস পরিচালনায় সমস্যা হয়। বর্ষাকালে কলেজের ভেতরে জলাবদ্ধতা দেখা যায়, যা শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা-যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। ছাত্রদের জন্য হোস্টেলের অভাব রয়েছে, যা দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা তৈরি করে। এই সমস্যাগুলো কলেজের সামগ্রিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে।
এসব বিষয়ে শিক্ষাবিদ জহিরুল হক দুলাল বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে কলেজটির অনেক সমস্যা রয়েছে। এ কলেজটির বার্ষিক বরাদ্দ বাড়ানো হউক। এখানে স্নাতকে আরো কয়েকটি বিষয় যোগ করলে পাশের ভিক্টোরিয়া কলেজ কিংবা সরকারি মহিলা কলেজের উপর চাপ কমবে। পাশাপাশি কলেজটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নেও কর্তপক্ষ নজর দিবে এমনটা আশা করি।
কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ নুরুর রহমান খান জানান, এই কলেজটিতে মাত্র ৬ টি বিষয়ে স্নাতক শেষ করতে পারে শিক্ষার্থীরা। অন্য যেসব বিষয় রয়েছে যেমন অর্থনীতি,দর্শন, ইসলামের ইতিহাস, রসায়ন, পদার্থ ও জীববিজ্ঞানে স্নাতক করার কোন সুযোগ নেই। কারন এসব বিষয়ে এখনো স্নাতকে ভর্তির অনুমতি দেয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও এখানে প্রতিটি বিষয়ে একজন অধ্যাপক, দু’জন, সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যপক ও দুইজন প্রভাষক প্রয়োজন। আরো বিষয়টি উল্লেখ করার মতো তা হলো কলেজটি স্নাতক শেষ করে অন্য কলেজে গিয়ে স্নাতোকোত্তর শেষ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এখানে শিক্ষার্থীদের আবাসিক থাকার ব্যবস্থা নেই। এই সমস্যাগুলো সমাধান হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা প্রসারে আরো ভূমিকা রাখতে পারবে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দৃঢ়তার সাথে গবেষণায় সম্পৃক্ত হতে হবে। এ গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সহযোগিতা করব।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা গ্যালারিতে ইবি গবেষণা সংসদ আয়োজিত দ্য আনভেইলিং: গবেষণা অন্তর্দৃষ্টি ও নেতৃত্বের রূপান্তর" শীর্ষক সেমিনার ও প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের মা। উৎপাদনের জন্য দরকার গবেষণা, ভাবনা ও আবিষ্কার। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে থেকে যায়। রাষ্ট্রের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান খুঁজে বের করাই গবেষণার মূল কাজ।
এ অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল — “Navigating the Research and Higher Study Landscape: A Multi-Disciplinary Perspective”। এ অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক হাবিবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া, চারটি ভিন্ন ডিসিপ্লিনের আলোচনায় অংশ নেন — বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুর রহমান, ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান এবং চারুকলা বিভাগের সভাপতি ও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
এসময় ইবি গবেষণা সংসদের সভাপতি সানোয়ার হোসেন বলেন, আজকের কর্মশালাটি আমাদের সংগঠনের জন্য একটি স্মরণীয় মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গবেষণার মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করা তরুণ গবেষকদের দেশ ও জাতির বৃহত্তর উন্নয়নে সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম করবে। সদিচ্ছা ও সহায়তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণার প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করবে।
চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, যখন মানুষ গবেষণাকে ভয় পায়, তখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল যুবক সেই কাজটি করে যাচ্ছে। গবেষণা ছাড়া একটি দেশ সামনে এগোতে পারে না। ধারণার দাম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য, আলোচনায় প্যানেলিস্টরা গবেষণার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, কার্যকর নেতৃত্বের গুরুত্ব, ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে বাস্তব প্রভাবের রূপ দেওয়ার উপায় নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।প্যানেল ডিসকাশন, শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তর পর্ব, শিক্ষার্থীদের গবেষণা, নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে সংগঠনপর ২০২৫-২০২৬ সেশনের কমিটি গঠন করা হয় এবং সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দলকে জানানো কথা বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ ও বহিষ্কারের এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমের বরাতে আপনার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যা দলের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। এমতাবস্থায়, আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আপনাকে দলের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে এতদ্ধারা সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই বহিষ্কার আদেশ ১২ আগস্ট তারিখ হতে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে, আপনাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান জনাব, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিনের নিকট আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রদান করার জন্য এতদ্ধারা নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন বন্ধ করতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠে নিজামের বিরুদ্ধে। গত রোববার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনার আরেক ব্যক্তির সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলন বন্ধে টাকা চাইতে শোনা যায় তাকে (নিজাম উদ্দিন)। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে আফতাব হোসেন রিফাত নামে একজনকে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কলে কথা বলতে দেখা যায়, যেটি অন্য আরেকটি ফোনে ভিডিও করা হয়। শুরুতে আফতাব হোসেন বলেন, ‘যদি মীর ভাইয়েরা আন্দোলন বন্ধ না করে তখন কী করব?’ জবাবে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলন বন্ধ করাব। তোমারে দিছে, টাকা দিছে?’ এ পাশ থেকে ‘হ্যাঁ’ জবাব দেন আফতাব।
কত লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে আফতাব বলেন, ‘পাঁচ’। এরপর নিজাম উদ্দিনকে বলতে শোনা যায় ‘আরও বেশি নিতা প্রেশার দিয়ে তোমরা দেখো ওর থেকে আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না, নিতে পারলে ওদের আমি এনে, রোহান, মীরদের এসে কিছু দিয়ে দিলাম।’
ওই ঘটনার পর গত সোমবার এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) আরিফ মঈনুদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদাবজির অভিযোগ নতুন নয়। গত ৫ জুলাই নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেন এক নারী। চিঠিতে ওই নারী উল্লেখ করেন, দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় পুলিশে দিয়েছেন নিজাম উদ্দিন। নিজাম তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্য সচিব ছিলেন। অভিযোগের পর তার পদও স্থগিত করা হয়। পরে তাকে পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নিষিদ্ধ মাছ ধরার সরঞ্জাম ‘আর্টিসনাল’ ট্রলিং তৈরির অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলার শেখেরখীল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। আটককৃতদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক, যিনি এ ট্রলিং তৈরির মূল কারিগর বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বাসিন্দা পণ্ডিত বিশ্বাস (৩৮), বরগুনার অমল চন্দ্র (৪৫), মোংলার নাথন বিশ্বাস (৬০) এবং সাতক্ষীরার আকাশ বিশ্বাস (৩৮)।
কোস্টগার্ডের তথ্য অনুযায়ী, শেখেরখীল এলাকার একটি গুদামে অবৈধ ট্রলিং তৈরির গোপন কার্যক্রম চলছে—এমন খবর পেয়ে কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় চারজনকে আটক ছাড়াও গুদাম থেকে ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সাতটি অবৈধ জাল, ৩৪টি ইয়াবা, ১০ গ্রাম গাঁজা এবং ৭৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট রাফিদ-আস-সামি জানান, আটক ভারতীয় নাগরিক পণ্ডিত বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ট্রলিং তৈরি করে আসছিলেন এবং ভারত থেকে নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় এসে এই কাজ করতেন। জব্দকৃত আলামতসহ আটক ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, কাঠের তৈরি ছোট ট্রলারকে অবৈধভাবে যান্ত্রিক ‘ট্রলিং ট্রলারে’ রূপান্তর করে তাতে ছোট ফাঁসের ‘বেহুন্দি জাল’ যুক্ত করা হয়, যা আর্টিসনাল ট্রলিং নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে গভীর ও অগভীর সাগরের রেণু, ডিমওয়ালা মা মাছ এবং মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ধ্বংস হয়। এজন্য বাংলাদেশে এ ধরনের ট্রলিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
‘প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো সুনামগঞ্জে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসন ও জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সনদপত্র, যুব ঋণের চেক ও ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন রূপান্তর আস্থা প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী লাভলী সরকার লাবণ্য এবং সদর উপজেলা যুব ফোরামের আহ্বায়ক স্বর্ণালি আক্তার রিমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহনুর আলম।
জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া বলেন, যুব সমাজই দেশের অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি। দক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে তারা নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যুবদের প্রযুক্তি নির্ভর হতেই হবে। এ লক্ষ্যে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করা যায়, সে উদ্দেশ্যে লার্নিং, আর্নিং, মোবাইল অ্যাপসসহ নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করব তা নয়, বরং প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করতে পারি এমন দিকেও কাজ করছে সরকার।
সভা শেষে ৭ জন প্রশিক্ষিত যুবদের মাঝে ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ঋণের চেক বিতরণ করা হয়। জেলায় সফল সংগঠন নির্বাচিত হয়েছে ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের যুব ও সমাজকল্যাণ সংগঠন, সফল উদ্যোক্তা জামালগঞ্জের আরিফ বাদশা এবং সফল সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শহরের বড়পাড়া এলাকার এনামুল হক। উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুর আলী, শেষ্ঠ যুব সংগঠন স্বপ্ন সিড়ি যুব সংঘ, শ্রেষ্ঠ যুব উদ্যোক্তা শাহানা আক্তার এবং শ্রেষ্ঠ যুব আত্মকর্মী হয়েছেন রিনা আক্তার।
এছাড়া প্রশিক্ষিত ও সফল যুব উদোক্তাদের ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়। এর আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ প্রমুখ।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং যুব প্রশিক্ষণের সফল উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভুষন হাওলাদার। তিনি একজন গ্রাম পুলিশ। চাকুরী করেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদে।
ঠাট্টা করে তাকে অনেকে ভুষন চেয়ারম্যান বলেও ডাকেন। কারন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া, নাগরিক সনদ দেয়া এবং গুরুত্বপুর্ন কাজ তিনি করিয়ে দেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয় অর্থ।
সম্প্রতী "সরকারী গভীর নলকুপ" পাইয়ে দেয়ার জন্য ১২ জনের কাছ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা করে মোট ২১ হাজার টাকা নিয়েছেন গ্রাম পুলিশ ভৃষন হাওলাদার। ভুক্তভুগিরা জানিয়েছেন, 'জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে ১২ টি গভীর নলকুপ বরাদ্ধ দেয়া ভৈরবপাশা ইউনিয়েনে। এরজন্য প্রতিটি নলকুপের জন্য অফিস খরচ বাবদ ১৭৫০ টাকা করে দিতে হবে। একথা বলে ভুষন হাওলাদার ১২ জনের কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা বিকাশ একাউন্টে নেয়।'
একপর্যায়ে ভুক্তভুগিরা জানতে পারে নলকুপ বরাদ্ধের বিষয়টি ভুয়া। এরপর তারা টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ প্রসংগে গত ১১ আগষ্ট ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
টাকা ফেরত চেয়ে অভিযোগ পত্রে তারা লিখেছেন, "আমরা নিম্ন ঈশ্বরকাঠী গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের কাছ থেকে টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে ১২জনের কাছ থেকে ১৭৫০ টাকা করে নগদ অর্থ নিয়েছে গ্রাম পুলিশ ভুষন হাওলাদার।
ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, 'ঘটনাটি আমি অবগত হয়েছি। ভুষন টাকাটা নিজে গ্রহন করেছে নাকি ভুষন অন্যের প্রতারনার স্বিকার হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর ঐ টাকাগুলো সবাই একটা বিকাশ নাম্বারে দিয়েছে। সেই নাম্বারটি সন্ধানের জন্য থানায় সাধারন ডায়েরী করা হবে।