গুলশানের হোলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পর আবারও নিজেদের সক্ষমতার জানান দিলো জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা। প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুই সহযোগীকে। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি লেখক অভিজিৎ রায় ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
সম্প্রতি নতুন করে জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত দুই বছরে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে অন্তত ৭০ তরুণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নতুন জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতার কথাও বলা হচ্ছে। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সম্প্রতি একাধিক চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট একযোগে জঙ্গিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। একই সঙ্গে দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। সারা দেশের আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সীমান্তেও জারি করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।
সবশেষ আট বছর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা করে জেএমবির তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল সহযোগীরা। ওই ঘটনায় একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত, একজন ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও শীর্ষ একজন এখনো অধরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে জঙ্গিদের হামলা কমে এলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মি স্টাইলে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে দিলো, জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। ভেতরে ভেতরে তারা আরও বেশি সক্রিয় এবং সংগঠিত হয়েছে। যে কোনো সময় আগের মতো হামলা চালাতে সক্ষমতা তৈরি করেছে তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। আমাদের পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। তাদের খুব শিগগিরই ধরতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা বর্ডার এলাকাগুলোতেও বলে দিয়েছি, তারা যেন দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব জিনিসই সিরিয়াসলি দেখি। সিরিয়াসলি দেখি বলেই আমরা অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, জঙ্গির উত্থানও আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। কোন ফাঁক-ফোঁকরে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তদন্তের আগে বলতে পারবো না।’
যেভাবে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে ১২ জঙ্গিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় তাদের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বেলা ১২টার একটু আগে চারজনকে একসঙ্গে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এসময় নুরে আজাদসহ দুই কনস্টেবল তাদের নিয়ে গারদখানায় যাচ্ছিলেন। চার জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মাইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির, সবুর ও আরাফাতকে একসঙ্গে আট তলা থেকে নিচে নামানো হয়। তখন আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসানকে যৌথভাবে হাতকড়া এবং সবুর ও আরাফতকে যৌথভাবে হাতকড়া পরানো ছিল। চারজন দড়ি দিয়েও বাঁধা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতের কাঠগড়া থেকে চারজনকে একসঙ্গে নামিয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূলফটক দিয়ে ফুটপাতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুই কনস্টেবলের মুখে পিপার স্প্রে করে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা সহযোগী জঙ্গিরা। ওই ফুটপাত ধরে সিএমএম কোর্টের পাশের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ফুটপাতে ওঠার মুহূর্তেই ওঁত পেতে থাকা জঙ্গিদের হামলার মুখে পড়েন দুই পুলিশ কনস্টেবল। মুহূর্তেই চার জঙ্গির দড়ির বাঁধন কেটে ফেলা হয়। চারজন একসঙ্গে দৌড়ে আদালত চত্বরের বিপরীত দিকের রঘুনাথ দাশ লেনের দিকে যেতে থাকে। পুলিশ কনস্টেবলরা দৌড়ে আটকানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি চিৎকারও করেন। সড়কের মাঝখানের আইল্যান্ডে মাটিতে পড়ে যান এক পুলিশ সদস্য। তাকে জঙ্গিরা এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারে। পরে তারা রঘুনাথ দাশ লেন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পিছু নেয় পুলিশের অন্য সদস্য এবং জনতা। ওই লেনের ১৫ নম্বর কারকুন বাড়ী লেন বড় জামে মসজিদের সামনে থেকে সবুর ও আরাফাতকে ধরে ফেলে পুলিশ ও স্থানীয়রা। তবে আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসান শামীম পালিয়ে যায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিরা একাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে রঘুনাথ দাশ লেনে অপেক্ষা করছিল। তারা হাতকড়া কাটার জন্য একটি কাটার মেশিনও সঙ্গে এনেছিল। পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটি ফেলে গেছে। এছাড়া জঙ্গিদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও ফেলে গেছে। ইতোমধ্যে ওই মোটরসাইকেলের মালিককে শনাক্ত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তার নাম হাসান আল মামুন। তবে তিনি এক বছর আগে মোটরসাইকেলটি বিক্রি করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা হাতকড়া খোলার জন্য চাবি ব্যবহার করেছে। রঘুনাথ দাশ লেন থেকে একটি নকল চাবিও উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ধারণা, হাতকড়া খোলার পর তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। রঘুনাথ দাশ লেনসহ জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়া পথের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে তিনজনকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই মোটরবাইকের পেছনের দুজনই আবু সিদ্দিক সোহেল ও মাইনুল হাসান শামীম। তাদের পাশে এক তরুণকে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। তার শরীরের সামনের অংশে একটি ব্যাকপ্যাক ছিল।
সিটিটিসির ওই কর্মকর্তার ধারণা, অন্তত ৮ থেকে ১০ জঙ্গি আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল। তারা একাধিকবার আদালত প্রাঙ্গণসহ পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা রেকি করে রেখেছিল। সঙ্গে থাকা ওই সহযোগী জঙ্গির ব্যাগে অস্ত্র বা বিস্ফোরক ছিল। কোনো ধরনের আক্রমণ বা বাধার শিকার হলে সহযোগীরা অস্ত্র বা বিস্ফোরক ব্যবহার করতো।
ডিএমপির সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বলেন, জঙ্গিদের গারদখানায় নেয়ার পথে পুলিশের ওপর হামলা করে দুইজনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাদের সহযোগীরা। আমরা দুই জঙ্গিসহ তাদের সহযোগীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি।
২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
প্রকাশ্য দিবালোকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের ধরিয়ে দেয়ার বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া ও নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ওই বছরেরই ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে এক অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হলেও পুরস্কার ঘোষণার ছয় বছরেও জিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি কেউ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগেও একাধিক জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনো জঙ্গির বিষয়েই কেউ কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর বোমা মিজান ও সালাউদ্দিন সালেহীনকে ধরিয়ে দিতেও ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বোমা মিজান ভারতীয় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সালাউদ্দিন সালেহীন আট বছর ধরে অধরাই রয়ে গেছে।
রেড অ্যালার্ট, সীমান্তে সতর্কতা
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পরপরই সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দুই জঙ্গি যেন কোনো সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকা পেরিয়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেত। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিও দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে অনুমান করে সীমান্ত এলাকায় কড়া সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। একইসঙ্গে দুই জঙ্গির বিষয়ে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তথ্য দেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত এই জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার আগে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কারাগারকে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে কারাগারগুলোতেও বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সব আদালতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এদিকে বিচারিক আদালত থেকে দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের সব আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ নির্দেশের কথা জানান।
সাঁড়াশি অভিযান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
দু্ই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার পরপরই তাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিট। ঢাকার সবগুলো প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া জঙ্গি প্রতিরোধে বিশেষায়িত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক দল মাঠে তথ্য সংগ্রহ ও অভিযান শুরু করেছে। এর পাশাপাশি র্যাব, পিবিআই, সিআইডির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও একযোগে কাজ শুরু করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে তারা আদালত প্রাঙ্গণে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে আসা সহযোগী জঙ্গিদের একজনের নাম-পরিচয় পেয়েছেন। তাকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে অপর একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষ আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। তাদের কোনো সদস্যকে খুঁজে বের করা অনেক কঠিন। তারা ‘স্লিপার সেল’ ও ‘কাটআউট’ পদ্ধতি অনুসরণ করে পারস্পরিক যোগাযোগ করে থাকে। এ ধরনের পদ্ধতিতে জঙ্গিরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জঙ্গিদের নিরাপত্তায় গাফিলতি
দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর কারাগার থেকে জঙ্গিদের আদালতে হাজির করা ও কারাগারে তাদের নিরাপত্তায় গাফিলতির বিষয়টিও সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কারাগারে থাকা জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে ভেতর থেকেই বাইরে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেয়াসহ নানা পরিকল্পনা করে আসছে। এমনকি এর আগে কারাগারের ভেতরে থেকে ডাকাতির নির্দেশনা দেয়ার তথ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর গারদখানাসহ আদালতে আনা নেয়ার সময়ও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় না। কারাগারের বাইরে যাত্রাপথেও জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে এবং মোবাইল ফোনও ব্যবহার করে। কারাগার ও পুলিশের কিছু সদস্যের যোগসাজশে জঙ্গিরা এই সুযোগ নেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা যদি মনে করি কারও অবহেলা থাকে, যদি কারও গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এ কাজটি ঘটিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’
২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এই ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার কোতোয়ালী থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি করা হয়। কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. দুলাল মিয়া জানান, আদালতে হাজির করা ১২ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) প্রধান করে গঠিত কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন), যুগ্ম কমিশনার (সিটিটিসি), লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিআরও)।
আদেশে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশমালাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দিতে হবে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মীর মুগ্ধ সরোবর ঘিরে পূবালী ব্যাংকের উদ্যােগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পূবালী ব্যাংক পিএলসি কুষ্টিয়া শাখার উদ্যোগে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় নারকেল, মৌচন্দ্রা, রঙ্গন, চেরি, পবনঝাউ, রাধাচূড়া, চন্দ্রপ্রভা ইত্যাদি গাছের মোট ১৫০টি চারা রোপন করা হয়।
অফিস সূত্র, ব্যাংকিং কার্যক্রমের-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাদ্দাম হোসেন হলে টিভি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যাত্রী ছাউনি ও পানীয় সুব্যবস্থা করবে। একই সাথে আইটি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে জানা যায়।
এসময় পূবালী ব্যাংক পিএলসি’র ফরিদপুর অঞ্চলপ্রধান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জহিরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া শাখার প্রধান মো. ইসমাইল হাওলাদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ অফিসের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাহেদ হাসান, ইবি উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) গোলাম মাহফুজ মঞ্জু, ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরায় জুলাই পূনর্জাগরণে সবুজ উৎসবে বৃক্ষরোপন পদক-২০২৫ প্রদান করা হয়েছে। বুধবার মাগুরা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মাগুরা ও ‘পরিবর্তনে আমরাই’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক মোঃ হুসাইন শওকত প্রধান অতিথি হিসেবে সবুজ উৎসব-২০২৫ এর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম । এ সময় আরও ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক )আব্দুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মাহবুবুল হক,জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার শামীম কবির, মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার হাসিবুল হাসান, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন, মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক ও 'পরিবর্তনে আমরাই ' সংগঠনের পরিচসলক নাহিদুর রহমান দুর্জয় প্রমুখ ।
অনুষ্ঠানে সাতটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেরা প্রতিষ্ঠান সরকারি সিভিল সার্জন অফিস, সেরা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি মাগুরা প্রেস ক্লাব, সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রাথমিক) কুমার কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান( মাধ্যমিক) আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সেরা সংগঠন প্রতিশ্রুতি উন্নয়ন সংস্থা,ব্যক্তি পর্যায়ে সেরা বৃক্ষপ্রেমী আশীষ কুমার দে মন্ডল ও সেরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এ অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বেশি বেশি গাছ লাগানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মাদরাসা পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শিক্ষক মাওলানা জসিম উদ্দিন (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৩ আগস্ট) অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, লম্পট ওই নারীলোভী শিক্ষক উপজেলার রঘুনাথপুর মধ্যেপাড়া এলাকায় রঘুনাথপুর জামিয়া খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) মহিলা মাদ্রাসা নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। সেখানে মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব বুজিয়ে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় মেয়েকে ভর্তি নেন।
এমতাবস্থায় মাদরাসা আসা যাওয়ার পথে একা পেলেই ওই শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব দেন মাওলানা জসিম উদ্দিন। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নেওয়া আরেক নারীর সহায়তায় ওই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময় মাদরাসার অফিস কক্ষে ডেকে এনে ধর্ষণ করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠে, যা গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। তবে এবার ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক যতীন সরকার মারা গেছেন। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। যতীন সরকার (৯৯) দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এর মধ্যে গত জুন মাসে পড়ে গিয়ে উরুর হাড়ে আঘাত পান পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে নেয়ার পর সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। যতীন সরকার দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেয়া হবে। তবে শেষকৃত্যের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিপিবির ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত। প্রসঙ্গত,যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার,ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোণায়। তার প্রথম গ্রন্থ সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের কবিগান বাঙালির সমাজ তান্ত্রিক ঐতিহ্য সংস্কৃতির সংগ্রাম মানবমন,মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব। এ প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুপাঠ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থও রচনা করেন তিনি। বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। যথাক্রমে-কেদারনাথ মজুমদার চন্দ্রকুমার দেহরিচরণ আচার্য সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী প্রসঙ্গ মৌলবাদ ও জালাল গীতিকা সমগ্র। এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আরও রয়েছে পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার সাহিত্য নিয়ে নানাকথা।
কুমিল্লা নগরীতে প্রবেশ পথের প্রধান সড়কগুলো যেন এখন মরণফাঁদে রূপ নিয়েছে। কান্দিরপাড়-আলেখারচর, টমছমব্রিজ-বাখরাবাদ, কান্দিরপাড়-ধর্মপুর এবং টমছমব্রিজ-কোটবাড়ি,
সড়কে জায়গায় জায়গায় বিশাল গর্ত, উঠে যাওয়া কার্পেটিং, ভাঙাচোরা পিচ ও জলাবদ্ধতা জনদুর্ভোগের নতুন নাম হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা ও ভারী যানবাহন এসব ঝুঁকিপূর্ণ পথে চলাচল করছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। বৃষ্টির পানিতে গর্ত ঢেকে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর এমন করুণ দশা কর্তৃপক্ষের অবহেলারই প্রমাণ। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন জনসাধারণ। যদিও বর্ষার দোহাই দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কগুলোর সংস্কার নিয়ে দায়সারা কথা বলছেন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে শহরতলীর শাসনগাছা হয়ে আলেখারচর বিশ্বরোডের অন্তত এক কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত, উঠে যাওয়া পিচ ঢালাই, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথর সব মিলিয়ে সড়ক নয়, যেন মরণফাঁদে রূপ নিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গণপরিবহনের চালক ও যাত্রীরা। মাঝেমধ্যে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। অথচ এই সড়কটি নগরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। এখানে রয়েছে কুমিল্লা নগরের বৃহত্তম বাসস্ট্যান্ড 'শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড'। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় হাজার হাজার মানুষের চলাচল৷
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কুমিল্লা নগরে প্রবেশের অন্যতম এই ব্যস্ত সড়কটির কথা ভুলেই গিয়েছেন প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই গর্তগুলো সড়কে ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার সৃষ্টি করছে। এক সময় গর্তগুলো ছোট ছোট থাকলেও এখন সেগুলো বড় হয়ে রূপ নিয়েছে ভয়ংকর।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের সর্বত্র সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। বর্ষার পানিতে সেই ক্ষত আরও বেড়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। পানিতে গর্তগুলো ঢেকে যাওয়ায় না বুঝে গাড়ি সেখান দিয়ে চলাচল করলেই ঘটে দূর্ঘটনা।
বুধবার সকালে সরেজমিনে কুমিল্লা নগরী থেকে শহরতলীর শাসনগাছা হয়ে দুর্গাপুর এলাকার দিঘীরপাড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটির প্রবেশমুখেই সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্তই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা,
দুরবস্থার কারণে চালকরা গর্ত এড়িয়ে এঁকেবেঁকে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও, গর্ত থাকায় হেলে দুলে চলছে গাড়িগুলো। এতে গাড়ির ভিতরে থাকা যাত্রীরা পোহাচ্ছেন ভোগান্তি। রোগী বহনের ক্ষেত্রেও এই সড়ক প্রায় অচল। অথচ এটি কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের অন্যতম যোগাযোগপথ।
এই সড়কের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাসপোর্ট অফিস পার হয়ে ওষুধ মার্কেট এলাকা, শাসনগাছা ফ্লাইওভারের দুই পাশে, দুর্গাপুর দিঘিরপার বাজার ও আলেখারচর এলাকায়। প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, শত শত বাস, ট্রাক, পণ্যবাহী গাড়ি ও তেলের লরি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
যাত্রীদের অভিযোগ, এত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় বর্ষায় তা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে কর্মজীবীদের কর্মস্থলে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলে ভোগান্তির শিকার হওয়া অন্তত পাঁচজন পথচারী ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, বড় যানবাহন কষ্ট করে চললেও অটোরিকশা নিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ সময় অটোরিকশা হেলে পড়ে, এতে যাত্রীরা আহত হন। কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। মালামাল নিয়ে যাতায়াত এখন অনেকটাই অসম্ভব। এগুলো দেখার কি কেউ নেই?
স্থানীয়দের দাবি, যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত সড়কটির সংস্কার করা। টমসমব্রীজ-বাখরাবাদ সড়ক। বড় বড় গর্তে জমে থাকা পানি দেখে মনে হয় সড়ক নয়, যেন জলাশয়। প্রতিদিন অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স, রোগীবাহী যান, পোশাককর্মী ও শিক্ষার্থী এ পথে চলাচল করেন। পথে রয়েছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইপিজেড, পিবিআই, সদর উপজেলা পরিষদ, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড,সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই সড়ককে নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বলা চলে।
এই সড়কে কাজ শুরু হয়েছে এমন আশার দৃশ্য সিটি কর্পোরেশন থেকে দেখানো হলেও বর্ষার দোহাই দিয়ে সেটিও বন্ধ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। এতে খানাখন্দ যেন আরো বেড়ে গিয়েছে। যদিও সিটি কর্পোরেশন বলছে আগের তুলনায় এই সড়ক অনেক বেশি চলাচল উপযোগী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
বুধবার সকালে সরেজমিনে এই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড ১ নং গেইট পর্যন্ত সড়ক যেন দাঁড়িয়েছে মরণফাঁদ হয়ে। এই সড়ক দিয়ে গাড়িগুলো চলছে একপ্রকার বাধ্য হয়ে। বড় বড় গর্তে পড়ে মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির ইঞ্জিন। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এছাড়াও রোগীবাহী এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়েও সঠিক সময়ে রোগী নিয়ে পৌঁছাতে পারেন না মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনে। এতে অনেক সময় রোগীর জীবনের ঝুঁকির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
টমসমব্রীজ-মেডিকেল সড়কে প্রতিদিন চলাচল করা অন্তত ১০ জন যাত্রী এই বলেন, এই সড়কে রোগী নিয়ে গেলে গর্তে ধাক্কা খেয়ে অনেক সময় রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বৃষ্টির সময় তো গর্ত দেখা যায় না, তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ। পানি ময়লা, আবার সড়ক পিচ্ছিল। এতে যাত্রীদের অনেক সময় পড়ে যাওয়ারও ভয় থাকে। এই সড়ক দিয়ে মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে রোগী আসলে রোগীর সাথে যারা আসে তারাও অসুস্থ হয়ে যায়। দ্রুত এই সড়ক পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন।
হেলে দুলে গাড়ি চলছে নগরীর কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়কে
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ভোগান্তী চরমে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে রাণীর বাজার হয়ে ধর্মপুর সড়ক। নগর বাসীর দাবি দ্রুত সড়ক গুলো মেরামত করা হোক, এবং অবৈধ দখল, পার্কিং,অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে স্বস্তি দেওয়া হোক।
স্বামী নেই। তিন মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে। অসুস্থ হয়েও সংসার চালাতে চাকরি নেন একটি মিলে। তবে সংসারে অভাব দূর করতে পারেন নি। অসুস্থতা অভাব আর ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় নমিতা রানী পাল (৪২) ও তার মেয়ে তন্বী রানী পাল(১৮)।
বুধবার সকাল ৯ টায় হৃদয়বিদারক এমন ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক জানান, মৃত জীবন চন্দ্র পালের স্ত্রী নমিতা রাণি পালের তিন মেয়ে ছিল। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে তন্বী এখনও অবিবাহিত ছিল। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন নমিতা রাণি, যিনি স্থানীয় দেবপুর স্পিনিং মিলে চাকরি করতেন। তবে গত দুই মাস ধরে অসুস্থ থাকায় কাজে যেতে পারছিলেন না। এতে পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে যায় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে তারা চরম মানসিক চাপে ছিলেন।
বুধবার সকালে মা ও মেয়ে দুজনেই বিষপান করেন। প্রতিবেশীরা দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল্লাহ প্রধান বলেন, “খবর পেয়ে বেলা আড়াইটায় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করি।”
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক আরো জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হবে।
মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে একজনও নেই জনবল। সৃষ্ট ৬ টি পদ থাকলেও সবকয়টি পদই শূন্য। জনবলের অভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই ভঙ্গুর দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি জনবল নিয়োগ দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হউক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীকাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রটি বন্ধ। নেই কোনো চিকিৎসক। রোগী এসে ফেরত চলে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন মানুষ। প্রস্রাব ও আবর্জনার তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। রেগীরা সুস্থ হতে এসে আরো বেশি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।
শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভূতাইল গ্রামের সুজন মুন্সি (২৮) বলেন, প্রতিদিন শতো শতো রোগী এসে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফেরত যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী খুবই দরিদ্র। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নাই। বাউন্ডারি নাই। দুটি ভবন পুরোপুরি পরিত্যাক্ত। চারদিকে খোলা মেলা ও ঝোপঝাড় থাকায় এটি এখন জনসাধারণের নিরাপদ প্রস্রাব কেন্দ্র।
তৃণমূলের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতলটি চালু করা খুবই জরুরি।
স্বাস্য কেন্দ্রের পাশের বাড়ীর তাজুল ইসলাম (৬০) জানান, যেকোনো রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শ্রীকাইল স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রই একমাত্র ভরসা। শ্রীকাইল থেকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। জেলার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাকে উপজেলা কিংবা জেলায় পৌঁছানোর আগে মৃত্যুর কোলে ঢলে যায়।
সোনাকান্দা বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান, ১ নং শ্রীকাইল ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাধীনতার পূর্বে শ্রীকাইলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি চালু করা হয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে নামেরও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান নাম ইউনিয়ন উপস্বাস্হ্য কেন্দ্র। চিকিৎসক না থাকায় কেন্দ্রটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। একারণে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত থেকে হচ্ছে।
এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটি ভবনই পরিত্যক্ত। ঝরাজীর্ণ একটি কক্ষে সপ্তাহে দুই দিন বসে রোগী দেখেন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম। তিনার কর্মস্থল রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মাজহারুল ইসলাম জানান, রোগীর চাহিদা আছে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। গড়ে প্রতিদিন ১'শ রোগী দেখা হয়। জনবলের অভাবে রোগীরা এসে ফিরে যায়। সরকার নতুন করে সৃষ্ট পদসমূহে জনবল দিলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনবল শূণ্য হওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যবহত হচ্ছে। আমরা চাহিদা দিয়ে রাখছি। নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে দির্ঘ ৬ ঘন্টা ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের পর এবার উত্তরবঙ্গের রেলপথ আটকে দিয়েছিলো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৩ আগষ্ট) সকাল ৯টায় জেলার উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় উত্তরাঞ্চলের রেলপথ আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন তারা। টানা ৬ ঘন্টা আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে মহা সড়ক ও রেলপথ বন্ধ করে দেয়ার হুশিয়ারি দিয়ে অবরোধ স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই দিন ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপরও সরকারের কোন পক্ষের ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ৪৮ ঘণ্টা শেষ। আমাদের দেওয়া সময় শেষ হওয়ায় আজ বুধবার সকাল থেকে উল্লাপাড়া স্টেশনে শিক্ষার্থীরা অবস্থন নিয়ে রেলপথ ব্লকেড করা হয়।
জাকারিয়া ও হৃদয়সহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৮ বছরেও ক্যাম্পাস নির্মিত হয়নি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ কর্মচারী-কর্মকর্তাদের চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাস চাই। ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরব না। এদিকে রেলপথ অবরোধ করায় উভয় প্রান্তে একাধিক ট্রেন আটকা পড়েছে।
উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মনিরুল ইসলাম জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ৩৯ মিনিটে, চিলাহাটি থেকে ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস সকাল ১১টা ২৮ মিনিটে এবং ঢাকাগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। আপাতত ঢাকা-উত্তরবঙ্গের সাাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দুই পাড়ে মোট ৫ টি ট্রেন আটকে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মনিরুল ইসলাম জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ৩৯ মিনিটে, চিলাহাটি থেকে ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস সকাল ১১টা ২৮ মিনিটে এবং ঢাকাগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। আপাতত ঢাকা-উত্তরবঙ্গের সাাথে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক তপন ঘোষ জানান, জামতৈল স্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ও রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশনে আটকা পড়েছে। অন্যান্য স্টেশনেও আরও ট্রেন থাকতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটির পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ ও জেলার আইকন খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি টানা ১৫ দিন ধরে পানির নিচে ডুবে রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর উপর চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক সেতুতে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরছেন।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন জানিয়েছেন, গত ৩০ জুলাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায়। বুধবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত সেতুর পাটাতন ৬ ইঞ্চি পানির নিচে রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও ছাড়া হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেতুটি পানির উপরে উঠে আসতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুতে পর্যটক কম থাকায় একপাশে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে পর্যটন বোটগুলো। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বোটচালকরা। তবে সেতুতে উঠতে না পারলেও অনেকে সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন এবং বোটে করে আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত পর্যটকরা।
রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রুবিনা ও মাসুদ রানা বলেন, “অনেক দূর থেকে সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু উঠতে না পারায় খারাপ লাগছে। তবে রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রাহুল বলেন, “ছবি ও টিভিতে দেখা এই সেতুটি দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সম্ভব হলো না, যদিও এটা প্রাকৃতিক ঘটনা, তাই কিছু করার নেই।”
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হ্রদের পানি উচ্চতা ১০৭.০৭ ফুট মিনস সি লেভেল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল রয়েছে এবং সর্বোচ্চ ২২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “সেতুটি নির্মাণের সময় পানির উচ্চতা বিবেচনা না করায় বর্ষায় প্রতি বছরই ডুবে যায়। এতে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও কোনো সংস্কার হয়নি। নতুন বা আধুনিক সেতু নির্মাণে পর্যটন করপোরেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদ এগিয়ে আসা উচিত।”
পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “সেতুটি ৪০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে পর্যটকদের জন্য উন্নত মানের ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কাপ্তাই হ্রদের উপর এই আইকনিক ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে, যা রাঙামাটির পর্যটনের অন্যতম প্রতীক।
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান লেবাননের প্রতি ‘সহায়তা’ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। লেবাননের সরকার তেহরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা তৈরির জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পর বুধবার লেবাননে ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা প্রধান এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইরানের নিরাপত্তা প্রধান বলেন, তার সরকার লেবাননের প্রতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার সরকারি পরিকল্পনার বিরোধিতা প্রকাশ করার পর আলী লারিজানির লেবানন সফর। হিজবুল্লাহ গত বছর ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের আগে লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে ভালো অস্ত্রে সজ্জিত বলে মনে করা হত।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান লারিজানি বৈরুতে অবতরণের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি লেবাননের জনগণ কষ্ট ভোগ করে, তাহলে আমরা ইরানেও এই যন্ত্রণা অনুভব করব এবং আমরা সকল পরিস্থিতিতে লেবাননের প্রিয় জনগণের পাশে থাকব’।
লারিজানিকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দর সড়কে বহু হিজবুল্লাহ সমর্থক জড়ো হয়েছিল। লারিজানি যখন সমর্থনের স্লোগান দিচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের স্বাগত জানাতে গাড়ি থেকে নেমে আসেন।
লেবাননে, লারিজানি প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সংসদ স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
ইসরাইলের সাথে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইরান একাধিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। যার মধ্যে গত জুন মাসে দুই দেশের মধ্যে ১২ দিনের প্রকাশ্য যুদ্ধও অন্তর্ভুক্ত।
২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত নতুন লেবানন সরকার গোষ্ঠীটিকে আরো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
হিজবুল্লাহ ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীসহ এই অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যারা ইসরাইলের বিরোধিতায় একত্রিত হয়েছিল।
ডিসেম্বরে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, লেবাননের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেয়। এটি দীর্ঘকাল ধরে ইরান ও হিজবুল্লাহর মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের পথ হিসেবে কাজ করেছিল।