মোগল সাম্রাজ্যের প্রায় পৌনে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুমিল্লার শাহ সুজা জামে মসজিদ। মসজিদটির অবস্থান কুমিল্লা শহরের মোগলটুলি এলাকায়। ১৬৫৮ সালে এটি নির্মাণ করেন মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ছয়টি মসজিদের একটি শাহ সুজা জামে মসজিদ।
আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশি বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। এর বাহ্যিক কারুকাজ প্রমাণ করে তৎসময়ে এর প্রতিষ্ঠাতাদের স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য। মোগল আমলের ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদ যেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রদীপ।
জানা গেছে, বাংলার ইতিহাসে মোগল অধ্যায়ের একটি উজ্জ্বল নাম ছিলেন শাহ সুজা। তিনি মোগল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে। তিনি ১৬৩৯ সাল থেকে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়। এ মসজিদটি কুমিল্লা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হিসেবে খ্যাত। ইতিহাস-ঐতিহ্যে জেলার তথ্য বাতায়নে এই মসজিদের নাম ও ছবি স্থান করে নিয়েছে।
এ মসজিদের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কৈলাসচন্দ্র সিংহ তার রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস গ্রন্থে বলেন, ‘গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরীতে সুজা মসজিদ নামক একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ অদ্যাপি দৃষ্ট হয়ে থাকে। এ মসজিদ সম্পর্কে দুই ধরনের মতবাদ রয়েছে। প্রথমত, সুজা ত্রিপুরা জয় করে বিজয় বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করার জন্য এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করার জন্য নিমচা তরবারি ও হিরকাঙ্গুরীয়ের বিনিময়ে বহু অর্থ ব্যয় করে এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, মসজিদটির বাইরের আয়তাকার দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৬৮ মিটার, প্রস্থ ৮ দশমিক ৫৩ মিটার। প্রাচীরগুলো ১ দশমিক ৭৫ মিটার পুরু। মসজিদের চার কোণে চারটি অষ্টকোণাকার বুরুজ রয়েছে। এগুলো কার্নিশের বেশ উপরে উঠে গেছে এবং এর শীর্ষে রয়েছে ছোট গম্বুজ।
মসজিদের পূর্ব প্রাচীরে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং এতে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোর উভয় পাশে ও উপরে প্যানেল নকশা অলংকৃত। কিবলা প্রাচীরে রয়েছে তিনটি মিহরাব, কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড় ও অধিক আকর্ষণীয়। এটি ফুল, লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত। দুইটি পার্শ্ব খিলান দ্বারা মসজিদের অভ্যন্তর তিন ভাগে বিভক্ত। মধ্যের অংশটি বাইরের দিকে পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুটা উদ্গত করে নির্মিত। এ অংশের চার কোণে চারটি সরু মিনার কার্নিশের উপরে উঠেছে। অষ্টকোণাকার ড্রামের ওপর নির্মিত তিনটি গোলাকার গম্বুজ দ্বারা মসজিদের ছাদ ঢাকা। মধ্যেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজগুলোর শীর্ষদেশ পদ্মনকশা ও কলস চূড়া দ্বারা শোভিত।
মসজিদের কার্নিশের নিচের অংশ মারলোন নকশায় অলংকৃত। বিভিন্ন সময়ে মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। একটি শিলালিপির পাঠ অনুযায়ী ১৮৮২ সালে হাজী ইমামউদ্দিন ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের সমতল ছাদবিশিষ্ট বারান্দাটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে মসজিদটি আরও সম্প্রসারিত ও দুই পার্শ্বে মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই। প্রাচীন এ মসজিদটি দেখতে মহানগরীর মোগলটুলী এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। বিশেষ করে জুমা, শবে বরাত, শবে কদরসহ বিশেষ দিনগুলোয় এখানে মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় হয়।
স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লি বলেন, মসজিদটি সংস্কারের নামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নষ্ট করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে অনুরোধ তারা যেন মসজিদটির ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখে।
মসজিদের ইমাম মুফতি খিজির আহমদ বলেন, কালের সাক্ষী এ মসজিদে অসংখ্য দর্শনার্থী এবং মুসল্লি এসে নামাজ আদায় করতে চান, কিন্তু স্থান সংকুলানের কারণে আমরা আগত মুসল্লি এবং দর্শনার্থীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারি না। মূল কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটির পরিধি বাড়ানো খুবই দরকার।
শাহ সুজা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি শুধু কুমিল্লা নয়, সারা দেশের মধ্যে অন্যতম। এখানে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা ও সমাজ সেবক মাহবুবুল আলম চপল জানান, মসজিদটি অনেক বার সৌন্দর্য বর্ধনে স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় উভয় দিকে সম্প্রসারণ করা হয় এবং সাথে মাদ্রাসা, পানির ঝর্ণা, অযুখানা নির্মাণ করা হয়। প্রধান ফটক কারুকার্য শোভিত করে তৈরি করা হয়। আমরা ছোট বেলা এই মসজিদেই বাবা সাথে নামাজ পড়তে যেতাম, তখন এখনকার মতো ঘনঘন মসজিদ ছিল না।
চুয়াডাঙ্গায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে মামুনুর রহমান মাসুম (৩৫) নামে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে মামুনের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। নিহত মামুনুর রহমান মাসুম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কেদারগঞ্জ সবুজপাড়ার মুজিবর রহমানের ছেলে। তিনি পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। অতিরিক্ত নেশা করার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মামুনুর রহমান পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন। গত বৃহস্পতিবার মামুন তিন বন্ধুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঘুরতে এসে আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তারা তিনজনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে মামুনের দুই বন্ধু চলে গেলেও তিনি হোটেলেই থেকে যান।
হোটেলের ম্যানেজার সাগর আলী জানান, সকালে হোটেলে এসে মামুনের মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখেন স্বজনরা। তখন জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে খবর দেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক তদন্তে মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সিআইডি ও পিআইবির টিম তদন্ত করবে।
চীনে উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুটি জাহাজ কিনছে সরকার। আজ রোববার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সঙ্গে জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসির চুক্তি স্বাক্ষর হবে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। গত ১৭ আগস্ট দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে। গত ৩ জুন এক হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় জাহাজ কেনার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরদিন অর্থাৎ ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিএসসি। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়বে।
চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, আগামী ৫ বছরে আমাদের মোট ২২টি জাহাজ সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। দুটি জাহাজ সংগ্রহের মধ্যদিয়ে এই কাজে গতি বাড়ছে। এরই মধ্যে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা ফরেন কারেন্সি (বৈদেশিক মুদ্রা) আয় বাড়বে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা দক্ষ শিপিং সেবা দিতে পারব। একই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসি সূত্র বলছে, প্রস্তাবে আসা জাহাজগুলোর বিভিন্ন কারিগরি বিষয়াদি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি সরেজমিনে জাহাজের নির্মাণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। জাহাজের স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত এবং জাহাজের কারিগরি মূল্যায়নে বিশেষজ্ঞ সেবা গ্রহণ করা হয়। তারপর কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন পরবর্তীতে হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারসের প্রস্তাবিত দুটি জাহাজের মোট দাম ৭৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮০.৪০ মিলিয়নের চেয়ে ৪.৬০ শতাংশ কম।
বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে- জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি; বাতাসের বাধা কমিয়ে গতি ও জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করে; হাইড্রোডাইনামিক ড্র্যাগ কমিয়ে জাহাজের গতি বৃদ্ধি ও জ্বালানি সাশ্রয় করে; প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়; নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে। জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের পর আগামী অক্টোবরে প্রথম জাহাজ এবং আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় জাহাজ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে। আধুনিক কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই দুটি জাহাজ বহরে যুক্ত হলে বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে।
৫৩ বছর আগে যাত্রা করা বিএসসির বহরে শুরুর দিকে মাত্র দুটি জাহাজ ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৪টি যুক্ত হয়। তবে আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়ায় নব্বইয়ের দশকের শেষে ৩৬টিকেই পাঠানো হয় অবসরে। কমতে কমতে জাহাজের সংখ্যা আবারও দুটিতে নেমে আসে। ২০১৮ সালে চীনের কাছ থেকে কেনা ছয়টি যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় আটটিতে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। পরে এ দুটি জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে এসেছে, যা সংস্থাটির নতুন জাহাজ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তুলে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরেও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে আরও ছয়টি জাহাজ কেনার বিষয়েও প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বিএসসির পর্ষদ।
ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় এলাকাবাসী নানামুখী দুর্ভোগে পড়ছেন প্রতিনিয়তই ।
ভুক্তভোগীরা জানান, পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের তাহমিনা হাসপাতাল থেকে বাংলালিংক টাওয়ার পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বাসার নিচতলায়ও পানি প্রবেশ করছে। জলাশয় ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এ দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, আগে এই এলাকায় এমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন চারপাশের জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে, ড্রেন নেই, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে যায়।
গৃহিণী সালমা আক্তার জানান, রান্নাঘরে পানি ঢুকে গেলে চুলা জ্বালানোই যায় না। কখনো কখনো আমাদের বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। খরচও বাড়ে, কষ্টও হয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার জানান, পানি জমলে রাস্তায় হাঁটা যায় না। স্কুলে যেতে জামা-জুতো ভিজে যায়। অনেকে তাই স্কুলেই যায় না।
ভালুকা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, এই সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে কিছু জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। এডিপির বরাদ্দ এলে আগামী অর্থবছরে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু করা হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।
অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।
নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপজেলার উপকূলবর্তী এলাকা পারকির চরে আটক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, দালাল চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা পর্যটন ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় রোহিঙ্গা আটক হলেও, পালানোর এই প্রবণতা কমছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি সক্রিয় দালাল চক্র দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচর থেকে পালিয়ে পারকির চর হয়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সাধারণত ছোট ট্রলার বা নৌকায় করে হাতিয়া চ্যানেল অতিক্রম করে রাতের আঁধারে পারকির চর ও তার আশপাশের এলাকায় ওঠে।
বিশেষ করে বর্তমানে পারকির চর টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা রোহিঙ্গা পাচারের একটি ‘মূল রুটথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর পারকির চর এলাকা থেকে ২৫ জন, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি ২০ জন, ১৬ সেপ্টেম্বর ৩১ জন এবং সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর আরও ৮ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুরাও রয়েছে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা পারকি বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পাচার চক্রের তৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। টানেল সার্ভিস এরিয়ার আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ট্রলার থেকে নামার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা দালাল চক্রের সদস্যদের অনেকবার ধরার চেষ্টা করেছি,কিন্তু তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও জানান, দালাল চক্রের একজনকে চিহ্নিত করে তার নাম ও ফোন নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন বিরূপ মন্তব্য ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমাদের ব্যবসা এবং পর্যটন খাতের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, পারকির চর ও আশপাশের এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে আমরা তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করি। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই পাচার বন্ধ করতে শুধু প্রশাসনের নয়, স্থানীয়দেরও সতর্ক থাকতে হবে।
আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনোয়ারা উপকূল এলাকা থেকে আটক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পাচার চক্রের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়মিত টহলও চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় এলাকাবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের জৈয়ার গ্রামের আবুল কালাম ঢালীর পুত্র জীবন ঢালী (২২)। স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যাবার জন্য দালালদের মাধ্যমে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়িয়ে দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন লিবিয়ায়। সেখান থেকে ইতালিতে যাবেন, ফিরিয়ে আনবেন পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা- এমন আশা বুকে বেঁধে প্রায় ৬ মাস আগে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন মাদারীপুরের সেই যুবক। দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় অনেকের সাথে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বসেছিলেন তিনি। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস, শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এরইমধ্যে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতেই নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তার জীবন প্রদীপ।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর লিবিয়ায় মাফিয়াদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারায় জীবন ঢালী। এমন একটি খবর ১৯ সেপ্টেম্বর তার নিজ বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড জৈয়ার গ্রামে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম।
বিষয়টি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেসরে জমিনে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরা।
শনিবার নিহতের পিতা আবুল কালাম ঢালী জানান, আমার ছেলেকে বিগত ছয় মাস আগে মানবপাচারকারী চক্র ভুলিয়ে-ভালিয়ে ইতালি যাবার প্রলোভনে মাথা নষ্ট করে ফেলে, আমরা তাকে প্রথমে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালি পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করি। কিন্তু সে তাতে রাজি না হয়ে আমাদের চাপাচাপি করতে থাকে। একপর্যায়ে আমরা রাজি হই, যেটা ছিলো আমাদের চরম ভুল। আজ আমরা সেই ভুলের খেসারত পুত্রের জীবনাবসানের মাধ্যেম পেলাম। আর যেন কোনো বাবা-মা তাদের ছেলেকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দেয়। আমরা এ হত্যার জন্য দায়ী মানব পাচারকারীদের কঠিন শাস্তি চাই।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, জীবন ঢালীর মৃত্যুর বিষয়টি লিবিয়ায় থাকা তার সফর সঙ্গীরা ফোন করে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন, গত ৮ সেপ্টেম্ব সাগরপথে গেম দিতে গিয়ে ঐ দিনই সে লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন- যা তারা ধীরে-ধীরে জানতে পেরেছেন এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে জীবন ঢালির নহতের বিষয়টি দেশে খবর আসে। প্রায় ৬ মাস আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘাটমাঝি ইউনিয়নের ঝিকরহাটি গ্রামের মানবপাচারকারী দালাল জনৈক রাসেল নামের একজন ও তাদের এজেন্ট হয়ে এলাকায় কাজ করা আরো কিছু দালালের প্রলোভনে পড়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাবার উদ্দেশ্য লিবিয়া যান জীবন ঢালী। দালাল রাসেল দেশে থাকেন না, তিনি বিদেশে বসে তার দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমেই সাগর পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা অন্যান্য বোটে লিবিয়া, তিউনিসিয়া রুটের ভুমধ্যসাগর পথ দিয়ে ইতালি-স্পেন সহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লিবিয়ায় নেবার পরে সেখানে কয়েকমাস গেম ঘরে রাখা হয় ইতালি-স্পেন সহ ঐসব দেশে গমনেচ্ছু যুবক-তরুন ও বিভিন্ন বয়সের লোকদের। অনেক সময় গেম ঘরে রেখে বিভিন্ন কৌঁশলে তাদের মারধরও করা হয় কন্ট্রাক্ট করা টাকার চাইতে আরো বেশী টাকা আদায় করার জন্য। যে সব ভিডিও করেও বাংলাদেশে থাকা অভিভাবকদের দেখিয়েও অনেক সময় দূর্বল করে আরো অধিক টাকা আদায় করা হয়।
মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হওয়া জীবন ঢালী সম্পর্কে এলাকাবাসী জানায়, সে অত্যন্ত একজন সহজ-সরল ও মিশুক ধরণের ভালো ছেলে ছিল। দালালদের খপ্পরে পড়ে এভাবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে বিষয়টি জানার পর থেকে তার পরিবারের আপনজনের পাশাপাশি আমরাও অত্যন্ত মর্মাহত, আমরা দায়ী দালালদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এছাড়াও এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে নিহতের পরিবারকে সহায়তা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো গ্রামবাসি
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আদিল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন। মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দালালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সেতুর পাশে দীর্ঘদিনের পানি নিষ্কাশনের পথ মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়ায় কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ফসলহানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় কৃষক ও গ্রামবাসী। শনিবার হরগজ বাজার চৌরাস্তায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়। এর আগে বাজার প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কৃষকরা।
মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ, কৃষক সাইদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন ও স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন বক্তব্য দেন। তারা অভিযোগ করেন, গত বছর ৫ আগস্ট রাতের আঁধারে বালুর চর এলাকায় সেতুর উত্তর পাশে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথটি কয়েকজন প্রভাবশালী মাটি ফেলে বন্ধ করে দেন। ফলে সড়কের দুই পাশের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে পানি আটকে গিয়ে ধান, ভুট্টা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মানববন্ধনে কাজী শহিদুল্লাহ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আনোয়ার, ফরিদ ও আলতাফ মাটি ভরাটে সহযোগিতা করেছেন। এর ফলে সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার একর জমিতে পানি আটকে থেকে ধান ও সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগে এ পানি খাল হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ত, কিন্তু এখন জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাইদুর রহমান জানান, তার জমির পানি বের হতে না পারায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মাঠে পানি জমে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সামনে শীতকালে রবিশস্যও চাষ করা সম্ভব হবে না, যদি দ্রুত এর সমাধান না হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই বালুর চকে শত শত কৃষকের ভুট্টা, ধান ও বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে বেলাল হোসেন বলেন, সেতুর পাশে হানিফ আলী, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েকজন জমি কিনেছেন। কিনে নেওয়া জমির চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে নিষ্কাশন পথ ভরাট করা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে ফসল নষ্ট হচ্ছে।
মানববন্ধনে কৃষকরা দ্রুত নিষ্কাশন পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জমির মালিক হানিফ আলী ও ঝর্ণা বেগম দাবি করেন, তারা নিজেদের কেনা জমিতেই মাটি ভরাট করেছেন। অপরদিকে মাটি ভরাটে সহায়তাকারী ফরিদ বলেন, জমির মালিক খুব গরিব, নিজেদের জমি ভরাট করেছে। কিন্তু একটি পক্ষ চাঁদা না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
স্ত্রী সন্তানের অবহেলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ফায়ার সার্ভিস কর্মীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী স্ত্রী। এ সময় তার দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। শনিবার দুপুর সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও শফিউল্লার মেয়ে রোজিনা আক্তার পশ্চিমপাড়া বায়তুল হুদা তালিমূল নূরানী মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১৩ সালে পার্শ্ববর্তী বজরা ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এর পুত্র আব্দুল্লাহ বিজয়ের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। তাদের মেহেদী হাসান (১১) ও রেজওয়ান হাসান (৫) নামে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্বামী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত আছে। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করার কথা বলে তার কাছ থেকে ৪ লাক টাকা নেয়। ২০২১ সালে সে গোপনে অন্যত্রে আরেকটি বিবাহ করে। বিয়ে করার পর থেকে ওই দুই ছেলে এবং তার স্ত্রীর কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। উল্টো মানসিক নির্যাতন শুরু করে। মাঝে মধ্যে এখানে এসে শারীরিক নির্যাতনও করেছে। এ নিয়ে ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কূলকিনারা পাননি। ফায়ার সার্ভিস কর্মী চাকরির পূর্বে বিয়ে করার বিষয়টি গোপন করে।
ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার আরও জানান, তার স্বামীর এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় মাতব্বর, সোনাইমুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কয়েকবার এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার স্বামীর বিচার দাবি করেন।
নেত্রকোনার ধলাই নদীর প্রাণ ফেরাতে পৌরসভার উদ্যোগে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরু করা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা ধলাই নদী আজ আর আগের মতো নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নদীটি কচুরিপানায় ভরে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক গতি ও সৌন্দর্য। তবে এবার নদীটিকে তার হারানো প্রাণ ফিরিয়ে দিতে শুরু হয়েছে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান। শনিবার সকাল ১০টায় নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় এই মহৎ উদ্যোগের সূচনা হয়। নদীটির পুনর্জাগরণে এই সম্মিলিত প্রয়াস শুধু পরিবেশ নয়, বরং জনজীবন, কৃষিকাজ ও স্থানীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান অতিথি হিসেবে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধন করেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু জেলা বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন খান চঞ্চল। কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্যে নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, ধলাই নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে এবং দূষণমুক্ত করতেই পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। পৌর নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়ন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সবুজ প্রকৃতি ও পরিষ্কার নদী রক্ষায় পৌরসভা সবসময় জনগণের পাশে আছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মাঝে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জানিয়েছেন, ধলাই নদী তার প্রাকৃতিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করেছে, যা কৃষিকাজ, নৌযান চলাচল এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নদী রক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি, জনগণের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থ হাছনদণ্ডী মাজিরপাড়া উত্তরপাড়ার আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশায় পরিণত হয়ে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকায় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবনযাত্রার মান এবং সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে আরও বেশি দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে বলে জানান স্থানিয়রা। দোহাজারী-পৌরসভার মাজিরপাড়ার বৈলতলী সড়ক থেকে উত্তরপাড়ার আবদুল হক সওদাগরের দোকান পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির দুই পাশে কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করে।
যাতায়াতের বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় স্থানীয়রা এই সড়কটির ওপর নির্ভরশীল। এটি সংস্কার না হওয়ায় স্থানীয়দের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে স্থানীয়রা জানায়, এ সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত।
একটু বৃষ্টিতে বড় বড় খানাখন্দে সড়কটি কাঁদা-পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচল দূরের কথা। পায়ে হেঁটে চলতেও ভোগান্তির শিকার হন বৃদ্ধ ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। গর্ভবতী মহিলা ও জরুরি রোগী পরিবহন, কৃষকের উৎপাদিত শাক-সবজি পরিবহনে ভোগান্তির শেষ নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌর সভার প্রকৌশলী নাইশ উদ্দিন প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার সড়কটি মাপামাপি করলেও কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি দোহাজারী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আগামী দিনের সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বিএনপি নেতা তছলিম উদ্দিন জানান, ‘সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী অনেকবার আবেদন করেছে। অথচ কোনো কাজ হয়নি। পশ্চিম হাছনদণ্ডী এলাকার মানুষের এই ভোগান্তি যেন নিয়তি হয়ে দাড়িয়েছে তাই নিজেস্ব অর্থায়নে স্বেচ্ছামর্মে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার উদ্বোগ নিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে দোহাজারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাঈম উদ্দি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘জনদুর্ভোগ এবং জনগুরুত্ব বিবেচনা করে দোহাজারী পৌরসভার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালিত হচ্ছে। উত্তরপাড়া মাজিরপাড়া সড়কটির বিষয়ে আমাদের নজরে আছে। ভবিষ্যতে বরাদ্দ আসলে প্রথমে ওই সড়কটির আর সিসি ঢ়ালাই দ্বারা উন্নয়ন করা হবে।
বসুন্ধরা টয়লেট্রিজ লিমিটেডের সেলস মিট ২০২৫ সম্প্রতি কক্সবাজারের একটি স্বনামধন্য হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বসুন্ধরা টয়লেট্রিজ বাজারে যাত্রা শুরুর মাত্র দুই বছরের মধ্যেই একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। এই অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে নতুন উদ্দীপনা যোগ করতে, প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করেছে তাদের বার্ষিক সেলস মিট ২০২৫।
“ফুরফুরে মনে একসাথে, চলো সফলতার পথে”—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কক্সবাজারের একটি স্বনামধন্য হোটেলে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন কোম্পানির সেলস ও মার্কেটিং টিমের সদস্য, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চিফ অপারেটিং অফিসার (COO), SBG, শাহেদ জাহিদ বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপ সবসময় দেশ ও মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলছে। বসুন্ধরা টয়লেট্রিজও সেই লক্ষ্যেই গুণগতমান সম্পন্ন পণ্য দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
বসুন্ধরার অন্যান্য পণ্যের মতোই, টয়লেট্রিজ ইউনিটও মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কারণ দেশের মানুষ বসুন্ধরার পণ্যের উপর আস্থা রাখে।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর প্রভাব থাকলেও দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর অগ্রগতি স্পষ্ট। সঠিক কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাজারে আরও বড় অংশ দখল করতে পারব। এই সেলস মিটে শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ নয়, বরং টিম স্পিরিট, মোটিভেশন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গুরুত্ব পেয়েছে। আপনারাই এই ব্র্যান্ডের মুখ। আপনারাই সেই শক্তি, যাঁরা আমাদের পণ্য দেশের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেন। এখন সময় একসাথে এগিয়ে যাওয়ার।”
সিনিয়র ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, SBG মোস্তাফিজুর রহমান, ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন “আমরা টয়লেট্রিজ চ্যানেলের প্রবৃদ্ধিতে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। বসুন্ধরা টয়লেট্রিজকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টয়লেট্রিজ ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এজন্য আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ করছি, যাতে বাজারে আমাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়।”
মোঃ মাসুদুর রহমান, চিফ সেলস অফিসার (টিস্যু, পেপার, হাইজিন, টয়লেট্রিজ), (CSO), SBG বলেন “আমরা চাই, এই মিলনমেলা হোক নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ইনশাআল্লাহ, ২০২৫ সালের বিক্রয় লক্ষ্য আমরা একসাথে অর্জন করব।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইমরান বিন ফেরদৌস, চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার (CHRO), ইঞ্জিনিয়ার এস.এম. সরোয়ার, হেড অব প্রজেক্ট, টয়লেট্রিজ ইউনিট , মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, জিএম, মার্কেটিং, মোঃ আমিনুল ইসলাম, জিএম, একাউন্টস এন্ড ফিনান্স, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারেস, জিএম, সেলস, টয়লেট্রিজ, মোঃ শোয়েব মাহমুদ, ডেপুটি ম্যানেজার, মার্কেটিং সহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানের শেষে একটি মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সেলস মিটের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মুশরিয়া বিলে চোখ যত দূর যায়, শুধু লাল-গোলাপি পদ্ম ফুলের সমারোহ। প্রকৃতির এ অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারও দর্শনার্থী। বিলজুড়ে প্রস্ফুটিত ফুলে মুগ্ধ হয়ে কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা নৌকায় ভেসে উপভোগ করছেন পদ্মবিলের অপরূপ দৃশ্য। পদ্মবিল যেন পদ্ম ফুলের রঙিন উৎসবে মেতে উঠেছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে রামশীল ইউনিয়নের মুশরিয়া, কাফুলাবাড়ি ও জহরের কান্দি গ্রাম ঘিরে বিস্তৃত এ পদ্মবিল। তবে সবার কাছে এটি পরিচিত মুশরিয়া পদ্মবিল নামেই।
বর্ষা মৌসুম এলে মুশরিয়া, জহরের কান্দি ও কাফুলাবাড়ি এলাকার ৪টি ঘাটে নৌকা সাজিয়ে রাখেন মাঝিরা। দর্শনার্থীরা এসে সেই নৌকায় ওঠে বিলের বুকচিরে ঘুরে বেড়ান পদ্ম ফুলের কোলঘেঁষে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় বর্ষা মৌসুমে এই বিলে আউশ-আমন ধানের আবাদ হতো। পরে উৎপাদন বেশি হওয়ায় ইরি-বোরো ধানের চাষ শুরু হয়। বর্ষাকালে চাষাবাদ বন্ধ থাকায় মানুষ তখন শাপলা ফুল ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রায় ১৫ বছর আগে ভক্ত মধু নামে এক ব্যক্তির জমিতে শাপলার চেয়ে বড় আকৃতির গোলাপি ফুল ফোটে। প্রথমে এটিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু বছর দুই যেতেই ফুলটি আশপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো বিল পদ্ম ফুলে ভরে যায়। তখন থেকেই বর্ষাকালে বিলজুড়ে পদ্ম ফুল দেখতে ভিড় জমাতে শুরু করেন আশপাশের মানুষ। প্রায় হাজার বিঘার জলাভূমির এই পদ্মবিল দেখতে ছুটে আসেন দেশের নানা প্রান্তের পর্যটকরা।
শনিবার সকালে সরেজমিন পদ্মবিল ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে এখানে। বরিশালের উজিরপুর থেকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসা আরিফুল ইসলাম জানান, ছবিতে পদ্ম ফুল অনেক দেখেছি, কিন্তু এত বিশাল জায়গাজুড়ে পদ্ম ফোটে তা কল্পনাও করিনি। এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন ফুলের সমুদ্রে ভাসছি।
আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে আসা গৃহবধূ সুনিতা বিশ্বাস ও কলেজ ছাত্রী অনিন্দিতা বলেন, আমরা তো এতদিন জানতাম না আমাদের কাছেই এত সুন্দর একটি পদ্মবিল আছে। এখানে এসে খুব আনন্দিত। তবে ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে ভিজতে হয়। কোনো ঘাট নেই। নৌকায় উঠতে কষ্ট হয়।
কোটালীপাড়ার ক্লিনিক ব্যবসায়ী মন্টু বাইন বলেন, সুযোগ পেলেই বর্ষা মৌসুমে আমরা এখানে ঘুরতে আসি। তবে পদ্মবিলকে একটি স্থায়ী পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাই।
পদ্মবিল ঘুরিয়ে দেখানোর প্রধান ভরসা মাঝিরা। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের নিয়ে ঘুরিয়ে বেড়ান তারা। মাঝি নিখিল বাড়ৈ বলেন, ‘আগে বর্ষায় মাছ ধরে সংসার চলত। এখন মানুষ পদ্ম দেখতে আসে, দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে ভালো আয় হয়। আমাদের জীবন বদলে গেছে।’
মুসরিয়া ঘাটের আরেক মাঝি সনাতন বৈদ্য বলেন, পদ্মবিলের মাঝখানে একটি গঙ্গা মন্দির আছে। সরকারিভাবে মন্দিরটির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা গেলে পদ্মবিল আরও দর্শনীয় হয়ে উঠবে। এখানে একটি মনোরম গোল ঘর নির্মাণ করলে দর্শনার্থীরা বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। একটি পাবলিক টয়েলেট ও ঘাট প্রয়োজন।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, কয়েকদিন আগে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মুশরিয়া পদ্মবিল থেকে ঘুরে এসেছি। পদ্মবিলকে ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমরা এটিকে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেখছি। নৌকা ঘাট, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গঙ্গা মন্দির সংস্কারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই পদ্মবিল স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতির জন্য বড় অবদান রাখতে পারবে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা বিনোদ চৌধুরীর বাড়ির পাশে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে একটি ১০ ফুট লম্বা বার্মিজ প্রজাতির অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের সদস্য আমির হোসাইন শাওন জানান, সাপটি বসতবাড়ির পাশে ঘেরা দেওয়া জালে আটকা পড়েছিল। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে জাল কেটে সাপটিকে উদ্ধার করেন।
সাপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন আনুমানিক ৮-৯ কেজি। জালে আটকা পড়ার কারণে সাপটি কিছুটা আহত হয়েছে। উদ্ধারের পর সাপটিকে সুস্থ করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে অবমুক্ত করা হবে।