হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন ।
জানাগেছে, পূজা মন্ডপ গুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মন্ডপগুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন পুলিশ । এছাড়াও প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে কাজ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। একইসাথে প্রতিদিন একজন করে সরকারি কর্মকর্তা এসব মন্ডপগুলো মনিটরিং করার কথা রয়েছে।
এবছর ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ৬৫ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। সাচ্ছন্দ্যে পূজা পালনের জন্য পুলিশ মন্ডপগুলোকে সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরে ভাগ করে নিরাপত্তার চাদরে ডেকে রেখেছেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম আছে তারাও নিয়মিত তদারকি করবেন। একইসাথে প্রতিটি মন্ডপে ৬ জন করে আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
শ্রী অভিলাস চন্দ্র পাল বলেন,এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রসাশন আমাদের মুহুর্মুহু খবর নিচ্ছেন। অতীতের তুলনায় এবছর প্রশাসন সর্বোচ্চ তদারকি করছেন।
বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জিব জানান, বরবরের চেয়ে এবার আমাদের বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ তারিখ থেকে পূজার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। পূজার ৪ দিন আগে থেকেই এবার আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের একটি টিম ৩ ঘন্টা পরপর মন্ডপগুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রশাসনের এমন নিরাপত্তা কার্যক্রমে আমরা তাদের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন,দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকেও রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত আমাদের এই তদারকি অব্যাহত থাকবে। কেউ যদি অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করে, তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কাজেই কোন প্রকার হুমকি নেই। এসময় তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের ব্যাপারেও আশ্বস্ত করছেন।
পাঁচশত টাকায় সদস্য হলেই মিলবে হাইব্রিড জাতের ২০টি মুরগি, ও ২১ মাস পর্যন্ত ফ্রি খাদ্য, ঔষধ এবং ভ্যাকসিন। এই মুরগি ৬০০টি পর্যন্ত ডিম দিবে। আর ১শ টাকা করে ১০ কিস্তিতে প্রতি সদস্যকে দেয়া হবে ১টি করে মুরগি পালনের দোতলা কাঠের ঘর। ১৩০০ টাকা দিয়ে গ্রুপ লিডার হলেই প্রত্যেক মাসে বেতন পাওয়া যাবে ৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি ডিম কমিশন দেয়া হবে। লিডারকে সাথে সাথেই ৫টি ৫টি মুরগি প্রদান করা হবে।
তাদের দেয়া মুরগি মারা গেলেই ১ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে মুরগি প্রতি।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঠিক এমনই মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোটি টাকা খুইয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
জানা যায়, ‘লেয়ার মুরগি ফার্ম এন্ড হ্যাচারী’ নামে একটি কার্ডে গোপালপুর উপজেলার রামজীবনপুর, বাইশকাইল, পোড়াবাড়ী, উদ্যমপুর বর্ণী, নগদা শিমলাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসব টাকা নেয়া হয়েছে। কার্ডে প্রোপ্রাইটারের নাম লেখা রয়েছে মোছা. ফাতেমা তুজ-জান্নাত। ঠিকানায় লেখা আছে: সাবগ্রাম, উপজেলা সদর, বগুড়া, গায়ে থাকা নম্বর ০১৭৬৮৮০৫২৯৭, ০১৭৭২৬৪৩৭১১, ০১৯৪৭১২৯৮১৫ বন্ধ পাওয়া গেছে।
রামজীবনপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার থেকেও ১ হাজার টাকা নিয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে দুই জন এসে নগদ টাকা নিয়ে যায়; পরে বিকাশে ০১৭৭৩৯৩৭৩২৫ নম্বরে আরও কয়েকজনের ৪ হাজার টাকা নেয়, এখন ফোন রিসিভ করছে না। ২৫ তারিখ সবাইকে মুরগি ও খাদ্য ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল।
বাইশকাইল গ্রামের ভ্যানচালক মহির উদ্দিন জানান, দুই জন লোক এসে বললো, ৩০ জনের গ্রুপ বানাতে পারলে আমাকে মাসিক ৫ হাজার বেতন দিবে, খাদ্যের ডিলার বানাবে এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি করে ডিম দেবে। পরে আমাদের গ্রামের ৩২ জনকে সদস্য বানিয়ে দিয়েছে; বিনিময়ে শুধু আমাকে ৫টি মুরগি দিয়েছে।
পোড়াবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ স্বপ্না বেগম বলেন, দুই জন লোক এসে মুরগিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ৩৬ জন মহিলার গ্রুপ বানিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছিল; এখন তারা পলাতক। আমরা চাই দেশের আর কেউ যেনো এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে, আমাদের টাকা ফেরত ও প্রতারক চক্রের শাস্তি চাই।
গোপালপুর থানা ওসি গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, থানায় এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। স্বপ্রণোদিতভাবে আমি চেষ্টা করব এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে আইনগত কোনো কারণ দেখাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও তারা চাপের কাছে নত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, যখন আমরা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি, তখন সব আইন-কানুন যাচাই-বাছাই করে আবেদন করি। শুরুতে অনেকে বলার চেষ্টা করেছে শাপলা যেহেতু জাতীয় প্রতীক, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। কিন্তু আইনগতভাবে বিষয়টি সঠিক নয়। শাপলা জাতীয় প্রতীকের একটি অংশ, এটি এককভাবে জাতীয় প্রতীক নয়। একইভাবে জাতীয় ফল বা জাতীয় প্রতীক-সংশ্লিষ্ট আরও অনেক প্রতীক বিভিন্ন দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তাহলে শাপলা কেন দেওয়া হবে না?
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে তাদের লিস্টে শাপলা নেই। অথচ লিস্ট হালনাগাদ বা ইমপ্রুভ করার দায়িত্ব তো তাদেরই। আমরা কয়েক মাস আগে আবেদন করেছিলাম, তখন তারা কাজটা করতে পারত। আমরা নতুন করেও আবেদন দিয়েছি। তারপরও আইনগত কোনো যুক্তি না দেখিয়ে কেবল এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, নিশ্চয়ই কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মতবিনিময়কালে সারজিস আলম তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমরা সমমনা ও কাছাকাছি আদর্শের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশের মানুষ চায় তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হোক। আমরা যদি রাজনৈতিক দলের পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে মাঠ পর্যায়ের মানুষও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। পাশাপাশি এবি পার্টির সঙ্গে জোট (অ্যালায়েন্স) ভিত্তিক আলোচনাও এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা সংসদে গিয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।
আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে এনে ভাড়া করা লোক দিয়ে মাঝে মাঝে মিছিল করাচ্ছে। এগুলো আওয়ামী লীগের প্রকৃত শক্তি নয়। যদি সত্যিই তাদের এত লোকবল থাকত, তাহলে জুলাই-আগস্টে যখন সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল, তখন তারা কোথায় ছিল?
তিনি আরও বলেন, টাকা দিয়ে ভাড়া করা টোকাইদের ভোরবেলা নামিয়ে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে আসল রাজনৈতিক কর্মসূচি আর ভাড়াটে শোডাউন কাকে বলে। অভ্যুত্থানে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির চ্যাপ্টার এখন ক্লোজড।
হিমালয়-পাদদেশে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলের চা-বাগান, সীমান্ত ঘেরা প্রকৃতি- সব মিলিয়ে পর্যটনে নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে তেঁতুলিয়া। শনিবার বিশ্ব টুরিজম দিবস উপলক্ষে দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় এক নাম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। দেশের সর্বউত্তরের এ সীমান্তবর্তী উপজেলা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে রূপ নিচ্ছে জনপ্রিয় গন্তব্যে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তেঁতুলিয়া থেকে বর্ষা শেষে ও শীতের শুরুর দিকে দেখা মেলে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আন্তরিক মানুষের মিলনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য পর্যটন পরিবেশ।
এ বছর শরতের শেষভাগে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ঘিরে তেঁতুলিয়ায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান। তবে গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও আজকে মেঘের আড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তবু নেই হতাশা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা কিছুটা মেঘে ঢাকা থাকলেও হতাশ হননি আগত দর্শনার্থীরা। শান্ত প্রকৃতি, নদীর ধারে কাশফুল, চা-বাগানের সবুজ সমারোহ এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। কেউ ঘুরেছেন বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, কেউ উপভোগ করেছেন মহানন্দা নদীর সূর্যাস্ত। কেউ আবার শিশুদের নিয়ে বেড়িয়েছেন রওশনপুর শিশুপার্কে কিংবা আনন্দগ্রামে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মিথিলা জানান, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখলেও অন্যসব সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। এখানে মানুষের ব্যবহার, নিরাপত্তা ও পরিবেশ খুবই ভালো।
কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে তেঁতুলিয়ার স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে দেখা দিয়েছে আগাম বুকিংয়ের হিড়িক।
স্থানীয়রা জানান, শরৎকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা এক বিরল ঘটনা। সাধারণত অক্টোবর মাসে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং তখন সহজে দেখা মেলে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শুরুতেই টানা দুদিন এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারায় স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
তেতুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি বছরই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য অপেক্ষা করি। সাধারণত শীতের একটু আগে বা শীতের শুরুতে ভালোভাবে দেখা যায়। এবার এত তাড়াতাড়ি দেখা মিলবে ভাবিনি। গত শুক্রবার বিকালে হঠাৎই পাহাড়ের চূড়াটা দেখা গেল। মনে হচ্ছিলো, হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলবো। সত্যি, এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
তেতুলিয়া উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের মোবারক হোসেন বলেন, ডাকবাংলো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সাদা বরফে মোড়া পাহাড়টা এত সুন্দর লাগছিলো যে মনে হচ্ছিল, একেবারে হাতের কাছেই আছে।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
টুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক মো. রাব্বুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়া অত্যন্ত নিরাপদ পর্যটন এলাকা। দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্তে এখানে পর্যটক বাড়ে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, তেঁতুলিয়া ও এর আশেপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো তুলে ধরা হলো। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পয়েন্ট;
* বাংলাবান্ধা চারদেশীয় বর্ডার *জিরোপয়েন্ট
* মহানন্দা নদী ও সূর্যাস্ত * কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট * ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার * রওশনপুর শিশুপার্ক ও আনন্দগ্রাম।
এছাড়া নদী ও সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতি ও পাহাড়ি আবহে স্থানীয় সংস্কৃতিও পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে।
তেঁতুলিয়া এখন আর শুধু সীমান্তবর্তী এক উপজেলা নয়- বরং হয়ে উঠছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পর্যটন হাব। সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চল হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত গ্লোবাল হাই-টেক ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক (GHAN) শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগদান করেছেন। তিনদিনব্যাপী এই কর্মশালা চলে শনিবার পর্যন্ত।
কর্মশালার জিএইচএএন গোলটেবিল প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক হাবের জন্য বাকৃবির প্রার্থী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে উচ্চ-প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই কৃষি এবং জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি বিষয়ক শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় আরো অংশগ্রহণ করেন বাকৃবির ফোকাল পয়েন্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ভূঞা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবর রহমান।
এই আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উচ্চ-প্রযুক্তি ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, Global High-tech climate-smart agricultural university network (GHAN) হল কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও জলবায়ু-বান্ধব পদ্ধতির একটি শিক্ষামূলক ও গবেষণামূলক প্ল্যাটফর্ম যা জলবায়ু-বান্ধব, টেকসই কৃষি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
জামালপুরের ইসলামপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ও আমার দেশ পত্রিকার ইসলামপুর উপজেলা প্রতিনিধি ওসমান হারুনী (৫০)। শনিবার ইসলামপুর পৌরশহরের ধর্মকুড়া এলাকায় তার নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ওসমান হারুনী একই এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে।
ইসলামপুর থানার ওসি আ. ফ. ম. আতিকুর রহমান জানান, সাংবাদিক ওসমান হারুনীর কিছুদিন আগে কিডনি নালীর অপারেশন হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। তবে তিনি বাড়িতে থেকে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেটের ব্যথা সহ্য করতে না পেয়ে তিনি নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মেহেদী বলেন, ওসমান হারুনী মোহনা টিভি ও আমার দেশ পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সাংবাদিকরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে রেখেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
চট্টগ্রামের রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত সর্তা খাল। অন্য বছরের তুলনায় এবার ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তৃর্ণ ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ফসলি জমি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী পার্বত্য এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে ফটিকছড়ির খিরাম ও ধর্মপুর ইউনিয়ন এবং রাউজানের হলদিয়া, চিকদাইর ও নোয়াজিশপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সর্তা খালের তীব্র স্রোতে ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব অনেক পরিবার। অনেক আগে বসতভিটা হারিছে বেশ সংখ্যক পরিবার। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রাউজান ও ফটিকছড়ি অংশের দুই পাড় ভেঙে খালটি নদীর চেয়ে বড় আকৃতিতে রূপান্ত হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙনে খালের পাড়ের ফসলি জমিতে রোপণকৃত ধানের চারা খালে পতিত হচ্ছে। ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবদুল জব্বার বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন বৃদ্ধি পায়। ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তত দেড়শ পরিবারের বসতঘর খালে বিলীন হয়ে গেছে। নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ভাড়াবাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ জসিম চৌধুরী বলেন, সর্তা খালের পাড়ঘেঁষে বাপ-দাদার আমলের প্রায় ১ একর ফসলি জমি ছিল। রাক্ষুসে সর্তা আমাদের সকল জমি গিলে খেয়েছে। এখন সামন্য ফসলি জমি আছে; চাষাবাদ করার মতো পর্যাপ্ত না হওয়ায় চাষাবাদ করিনি। খালের ভাঙনের জন্য বালু উত্তোলনকে দায়ী করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী (রাউজানের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘এ বছর বরাদ্দ আছে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, ‘সর্তা খালের ভাঙনের বিষয়ে আমাদের কেউ অবগত করেননি। খবর নিচ্ছি, খবর নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের পুরান বাউশিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ভাঙচুর করা হয় স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি যাত্রীবাহী বাস। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সকাল এগারোটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মহাসড়কের পুরান বাউশিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শ্রাবন্তী আক্তার (১৪)। সে গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়া গ্রামের হানিফ মিয়া মেয়ে বলে জানা গেছে। সে গজারিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
জানা যায়, অন্যান্য দিনের মত শনিবার সকালে চর বাউশিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুলের সামনে নেমে রাস্তা পার হবার সময় ঢাকামুখী লেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সেন্ট মার্টিন পরিবহনের একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শ্রাবন্তীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রাবন্তী হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করে তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি বাস আটকে সেগুলো ভাঙচুর করে। পরে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়াও গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. হামিদা মুস্তফা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন,' বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তাদের সকল দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে'।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় মৃৎশিল্পীরা শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে ভালবাসার আঁচড়ে চলছে দিন রাত রং তুলি ও সাজ-সজ্জার কাজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ ঘরে ঘরে দেবী দুর্গার শারদীয় দুর্গোৎস দুর্গোৎসব আগমনী বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছে। দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে উপজেলার হিন্দু এলাকায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা। এবার কেশবপুর উপজেলায় ৯৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। উপজেলায় জমজমাট শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজনে দেখা যায় মৃৎশিল্পীরা কাদামাটি, খড় কাঠ সংগ্রহের কাজ শেষ করে বিভিন্ন রং তুলির আচড়ে, আবার কোথাও শাড়ি ও কাপড়, স্বর্ণালংকার এ সাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে এই কার্যক্রম। এখন শারদীয় দুর্গোৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই উৎসবকে ঘিরে মৃৎশিল্পীদের মাঝে দেখা দিয়েছে কর্মব্যস্ততা। দিনরাত কাজ করে শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। কাল রোববার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা উৎসব ও দেবী দুর্গাকে বরণ করার জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। পরবর্তী মন্ডপে মন্ডপে চলছে বরণের প্রস্তুতি। দিনগুলোতে একের পর এক অনুষ্ঠিত হবে সপ্তমী, অষ্টমী নবমী, আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসজনের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে এই মহোৎসব।
উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সাহা জানান, পূজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা। আর পুজাকে ঘিরে উপজেলায় চলছে রাতদিন প্রতিমা সাজ সজ্জার কাজ।
কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন জানান, প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে আলাদা আলাদা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূজা মন্ডবে সি সি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে পালন করা যায় সেদিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা রেনু বেগমের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ গত ২১ সেপ্টেম্বর উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার মোটিভ শনাক্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করে এবং গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে র্যাব-৪ (সিপিসি), মাদারীপুরের একটি টিম ও পুলিশর একটি সমেত শিবচর থানাধীন পাচ্চর এলাকা থেকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাজী মাহমুদ রাসেল সবুজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সবুজ জানায়, সে একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সবুজ বলেন, তাকে ও তার স্ত্রীকে দেয়া চোরের অপবাদের প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।
শুক্রবার সবুজের পাচ্চরের বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি (হাসুয়া/কাঁচি) উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় আসামি সবুজের খাটের নীচে লুকিয়ে রাখা ছুরির সাথে রেনু বেগমের বাসা থেকে চুরি হওয়া একটি রাইস কুকার, দুটি মোবাইলের একটি (স্যামসাং বাটন ফোন) উদ্ধার করা হয়। অপর একটি স্মার্ট ফোন (রিয়েলমি) হত্যাকারী সবুজ খুলনায় মোবাইলের দোকানে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিলে, সেটিও খুলনা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের আরেকটি টিম।
ভিকটিম রেনুর কানের স্বর্ণের দুল ১৪ হাজার টাকায় শিবচরের একটি জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করা হলেও উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও রেনু বেগমের আলমারী থেকে লুট করে নেয়া ১৫৩০/- টাকাও উদ্ধার করা হয় আসামি সবুজের নিকট থেকে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামি সবুজকে শুক্রবার বিকালে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সে রেনু বেগমকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর তীব্র জোয়ারের আঘাতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের বয়ারচরের তেগাছিয়া বাজারে অবস্থিত একটি পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে পড়েছে খালে। ভাঙনের মুখে রয়েছে তেগাছিয়া নামক একটি বাজারও। ইতোমধ্যে ওই বাজারের ১৫টি দোকান খালে ভেঙে পড়েছে। রামগতি-বয়ারচর সড়কের তেগাছিয়া বাজার অংশ ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় মেম্বার শেখ ফরিদ নিজ উদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখেন। বর্তমানে ওই বাজারের প্রায় ২ শতাধিক ঘরমালিক ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্ক রয়েছে। বাজারের পশ্চিম পাশের গাবতলীর খালের অংশ ভাঙছে প্রতিনিয়ত। এইভাবে চলতে থাকলে ১ মাসের মধ্যে বয়ারচরের গুরুত্বপূর্ণ এ বাজারটি তলিয়ে যাবে জোয়ারের পানিতে। বাজার ব্যবসায়ীরা রয়েছে চরম আতঙ্কে। কখন কার দোকান ভাঙবে সে চিন্তায় তাদের ঘুম নেই।
স্থানীয়রা জানান, বয়ারচরের দক্ষিণে ভুলুয়া নদী আর পশ্চিমে মেঘনা নদী। এই দুই নদীর পানি চলাচলের জন্য মাঝখানে গাবতলী নামে একটি বড় খাল রয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সকল পানি ভুলুয়া নদী দিয়ে গাবতলীর খালে এসে মেঘনা নদীতে পড়ে। এতে গাবতলীর খালের তেগাছিয়া বাজার অংশে পানির স্রোতের ধাক্কা লেগে তেগাছিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে যায়। ভাঙতে শুরু করছে বাজারটিও।
লক্ষ্মীপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ ও রামগতির ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শন করে তেগাছিয়া বাজার রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙতে শুরু করছে বাজারটি। ইতোমধ্যে ১৫টি দোকান ও রামগতি-তেগাছিয়া সড়ক ভেঙে পড়ে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ নিজ উদ্যোগে কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখেন।
তেগাছিয়া বাজারের ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলাম, মো. নুরশাদ, ডাক্তার কামাল উদ্দিন ও সাবু ব্যাপারী জানান, তেগাছিয়া বাজারটি বয়ারচরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ছিল একটি পুলিশ ফাঁড়ি। আশেপাশে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর প্রচণ্ড জোয়ারের আঘাতে পুলিশ ফাঁড়িটি ভেঙে যায়। পরে সেখান থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন বাজারটি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটি ভেঙে যাবে। তাই দ্রুত ব্লক দিয়ে বাজার রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।
চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শেখ ফরিদ বলেন, প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে মেঘনা ও ভুলুয়া নদীর পানির স্রোতে গাবতলী খালের বিভিন্ন এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। গত ৩ মাসে তেগাছিয়া বাজারের প্রায় দেড়শ ফুট ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। এতে ওই বাজারের ১৫টি দোকান ভেঙে গেছে। বর্তমানে বাজারটি ভাঙনের মুখে। কিছুদিন আগে একটি পুলিশ ফাঁড়ি তলিয়ে গেছে খালে।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, নদীর জোয়ারে তেগাছিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ঘর ভেঙে যাওয়ায় আমরা পুলিশ ফাঁড়ির আসবাবপত্র আপাতত অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রেখেছি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, স্পিডবোট আর কার্গো জাহাজের ভিড়ে এককালের দাপুটে বৈঠার নৌকা এখন স্মৃতির পাতায়। ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলো কাঠের নৌকার চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কম সময়ে বেশি পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করতে পারা এর প্রধান কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এলাকাবাসী বলছেন, আধুনিক জীবনযাত্রার দ্রুতগতির সঙ্গে তাল মেলাতে কাঠের নৌকা তাই পিছিয়ে পড়েছে। একটি কাঠের নৌকা তৈরি করা যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনই এর রক্ষণাবেক্ষণও ব্যয়বহুল। কাঠ সংগ্রহ, নকশা তৈরি এবং নিয়মিত মেরামত বাবদ খরচ অনেক বেশি। অন্যদিকে, ফাইবারগ্লাস বা লোহার তৈরি নৌযানগুলো তুলনামূলকভাবে কম রক্ষণাবেক্ষণ চায়।
তারা বলেন, একসময় নদী ছিল মানুষের জীবনরেখা। নদী ছিল পথ, নৌকা ছিল বাহন, আর মাঝি ছিল সাহসী পথপ্রদর্শক। সেতু-সড়কহীন সেই সময়ে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন ছিল যেমন ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙ্গি, ছৈওয়ালা, পাতাম, বাচারি, রপ্তানি, বউপলানোসহ ইত্যাদি নামের বাহারি সব নৌকা। নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশে নৌকায় ইঞ্জিন লাগানো শুরু হয়। তখন থেকে নৌকা একটি যান্ত্রিক বাহনে পরিণত হয়। এ যান্ত্রিক নৌকাগুলো শ্যালো নৌকা নামেও পরিচিত।
ঘাটের মাঝি হেলু মিয়া বলেন, ‘আমাগো জীবন আর চলে না। ইঞ্জিন পাইয়া বৈডার নাওয়ে মানুষ ওঠে না। আয় রোগারও নাই। চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না। ইঞ্জিনের নাও কিনতে অনেক টেহা লাগে, হেডাও তো নাই। না খাইয়া মরার বাও অইছে আমগো।,
একটা সময় নদীমাতৃক বাংলাদেশে যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম ছিল কাঠের নৌকা। ঢেউয়ের তালে দুলতে দুলতে ভাটিয়ালি সুরে মাঝিদের বৈঠা বাওয়া, দূর-দূরান্তের হাটে পণ্য পরিবহন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য- এ সবই ছিল আমাদের গ্রামবাংলার চিরচেনা দৃশ্য। খালে-বিলে বালু ফেলে ভরাট করে ফেলছে, নৌকা চলবই কেমনে মুড়াপাড়া ঘাটে কথাগুলো বলেন মাঝি কাইয়ুম মিয়া।
আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে কাঠের নৌকা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কাঠের নৌকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি আর গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাঝির ভাটিয়ালি গান, সারি গান, বা পালতোলা নৌকায় মেলা দেখতে যাওয়ার আনন্দ- এ সবই যেন আজ ধূসর স্মৃতি। এই শিল্পের বিলুপ্তি কেবল একটি জলযানের বিলুপ্তি নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের বিলুপ্তি।
ঘাটের মাঝি নিতাই বলেন, ‘সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী না হয়, তবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কাঠের নৌকা কেবল জাদুঘরের প্রদর্শনীতে বা বইয়ের পাতায় স্থান পাবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়তো কেবল ছবিতেই দেখবে, একসময় এই বাংলার বুকে ঢেউ তুলে দাপিয়ে বেড়াত কাঠের নৌকা। এই নীরব বিদায় কি রোধ করা সম্ভব নয়?’
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তনের ছোঁয়ায় আধুনিক যুগে কাঠের নৌকা বৈঠা হারিয়ে যাচ্ছে। কাঠের তৈরি নৌকা বৈঠা পরিবেশবান্ধব। চাঁদনী রাতে নদীতে নৌকা নিয়ে ঘোরার মজাই আলাদা। ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে সময় বাঁচে, বিকট শব্দে পরিবেশ দূষণ হয়।
“ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ডে, ২০২৫” উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মেরিটাইম ল' সোসাইটি (BMLS) “আওয়ার ওশান, আওয়ার অবলিগেশন, আওয়ার অপরচুনিটি” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ৩টায় সিআইআরডিএপি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি এ.এফ.এম. আব্দুর রহমান (অব.), বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (হাইকোর্ট বিভাগ) সাবেক বিচারপতি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আখতার হোসেন, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি, পিএইচডি, উপাচার্য, বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমোডর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ (অব.), মহাপরিচালক, BIMRAD এবং মি. এস. এম. মইনুল ইসলাম, কান্ট্রি ম্যানেজার, Tyser Group Services Ltd., লন্ডন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মি. মোহিউদ্দিন আব্দুল কাদির, সভাপতি, BMLS ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; মি. মোহাম্মদ আব্দুল হাই, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত, থাইল্যান্ড; এবং ড. মীর তারেক আলী, অধ্যাপক, NAME, বুয়েট। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট শ্বেতা মিশ্র, প্রধান, MCLaw Services Ltd. এবং কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম (অব.), সাবেক মহাপরিচালক, নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও প্রজেক্ট লিড, MACN
সেমিনারে বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, জাহাজ মালিক, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সামুদ্রিক বীমা বিশেষজ্ঞ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, কার্গো স্টেকহোল্ডারসহ সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসব সংস্থার মধ্যে ছিল নৌপরিবহন অধিদপ্তর, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ ও রিভার পুলিশ।
উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি দেশের মেরিটাইম সেক্টরের উন্নয়নে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি, এআই, রোবটিক্স, অটোমেশন, চ্যাটজিপিটি প্রভৃতির ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এলক্ষ্যে তিনি মেরিটাইম সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরী, মেরিটাইম পেশাজীবিদের উক্ত প্রযুক্তিসমূহে দক্ষতা উন্নয়ন এবং এই সেক্টরের উন্নয়নে একাডেমিশিয়ান, শিল্প প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ সকল মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের একযোগে কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ
করেন।
আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় সামুদ্রিক আইন ও টেকসই মহাসাগর শাসনব্যবস্থার ভূমিকার ওপর। অংশগ্রহণকারীরা একমত হন যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহাসাগরকে সুরক্ষিত রাখা সকলের যৌথ দায়িত্ব।