ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের পুরান বাউশিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ভাঙচুর করা হয় স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি যাত্রীবাহী বাস। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সকাল এগারোটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মহাসড়কের পুরান বাউশিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম শ্রাবন্তী আক্তার (১৪)। সে গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়া গ্রামের হানিফ মিয়া মেয়ে বলে জানা গেছে। সে গজারিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
জানা যায়, অন্যান্য দিনের মত শনিবার সকালে চর বাউশিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে স্কুলের সামনে নেমে রাস্তা পার হবার সময় ঢাকামুখী লেনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সেন্ট মার্টিন পরিবহনের একটি দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে শ্রাবন্তীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে আসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রাবন্তী হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করে তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্টারলাইন পরিবহনের ৩টি বাস আটকে সেগুলো ভাঙচুর করে। পরে থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়াও গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. হামিদা মুস্তফা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন,' বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তাদের সকল দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে'।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের এক শিক্ষার্থী জার্মানির Technische Hochschule Mittelhessen (THM), University of Applied Science Mittlehessen–এ তিন মাস মেয়াদি Erasmus+ MSc Exchange Program-এ অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। তিনি ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোস্তাকিম মুসুল্লী পিয়াস। তিনি ইউরোপে এ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া আইসিটি বিভাগের প্রথম শিক্ষার্থী। শনিবার তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তর বরাত এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী মাসের ২ তারিখ রাতে রওয়ানা দিবেন তিনি। তিন মাস পর ২২ তারিখ দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, Erasmus+ MSc Exchange Program ইউরোপীয় ইউনিয়নের KA171 উদ্যোগ-এর আওতায় পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বিদেশে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ পান। অংশগ্রহণকারীরা মাসিক অনুদান-সহ আর্থিক সহায়তা পান, যা বিদেশে অবস্থানকালীন জীবিকা নির্বাহে সহায়ক হয়।
মোস্তাকিম মুসুল্লী পিয়াস বলেন, ‘আমি ২ তারিখ রওনা দিচ্ছি এবং তিন মাস পর যথারীতি দেশে ফিরবো। অনেকে এ সুযোগে বাহিরে থেকে যায়। কিন্তু দেশের স্বার্থে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম শেষ করতে আবারও ফিরবো। আমার থিসিস ফিল্ড হচ্ছে ‘সাইবার সিকিউরিটি’ নিয়ে কাজ করা।’
এই সাফল্য আইসিটি বিভাগ তথা পুরো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সংযোগকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ভিশনের পথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন আইসিটি বিভাগ।
পিরোজপুরে টাইফয়েড টিকা প্রদানের বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিস গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এ কর্মশালার আয়োজন করে।
“শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এবং ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে পিরোজপুরের বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খানের সভাপতিত্ত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন - গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন -পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা তথ্য অফিসের উপ পরিচালক পরীক্ষিত চৌধুরী।
এসময় পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম শামীম, সাধারণ সম্পাদক এস এম তানভীর আহম্মেদ, জেলা প্রেসক্লাব, পিরোজপুরের সভাপতি এম এ জলিল, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর মুক্তবার্তার(সম্পাদক) এস এম সোহেল বিল্লাহ (কাজল) সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু জাফর সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, টাইফয়েড একটি সংক্রামক রোগ। টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনকে সফল করতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে সংবাদকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন রেজিঃ নং বি- ২১৪০ কে শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়ন শাখা কর্তৃক (সিবিএ) ঘোষণা করায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিকে ফরিদপুর সার্কেল থেকে সংবর্ধনা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট ওজোপাডিকো বিদ্যুৎ ভবনের ৩য় তলায় কনফারেন্স রুমে এ সভার আয়োজন করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি খন্দকার আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাজিম হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন টিটু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আশরাফ হোসেন সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান, মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আনোয়ার জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি সালেহ মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, মশিউর রহমান, আব্দুল হাকিম, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সহ প্রস্তুতি সভায় ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার এবং ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলার বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন।
ফরিদপুর জেলার সভাপতি খন্দকার আব্দুল আউয়াল জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিদপ্তর থেকে (সিবিএ) হিসেবে আমরা ডিক্লিয়ারেশন পেয়েছি। ওজোপাডিকোতে বিদ্যুৎ শ্রমিকদের নিয়ে একটি মাত্র সংগঠন পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন যারা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে কাজ করে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠান নয় সারা বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানেই শ্রমিক কর্মচারীরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারে নাই। সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীরা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরতে পারে নাই সেটাও শেখ হাসিনার সরকার বন্ধু করে দিয়েছিল। বিগত ৫ আগস্টের পরে ট্রেড ইউনিয়ন করার মত একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং সেই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে আমরা শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করছি। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলায় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের এবং সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান তাদের নেতৃত্বে এই সংগঠনটি সুশৃংখলভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের সুবিধার জন্য কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছে।
বরিশালে এ বছর রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ হতে চলেছে, কিন্তু নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দেখা মেলেনি। মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম রক্ষার জন্য আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে নির্ধারিত এই নিষেধাজ্ঞা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তালিকাভুক্ত জেলেদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই বৈঠক করা হয়েছে।
মেঘনা নদী বেষ্টিত হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, গত বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বছর পূর্ণিমা ও আমাবস্যার হিসাব অনুযায়ী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে।
বরিশালের পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে দেখা গেছে, মৌসুম শেষ হতে মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও ইলিশের সরবরাহ কম এবং দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোকামের আড়তদার নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার মোট দেড়শ’ মনের মতো ইলিশ মোকামে উঠেছে, যেখানে এর আগের দিন ছিল আড়াইশ’ মণ। দামও বেড়েছে- এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৭৫ টাকায়, এলসি সাইজের (৭০০-৯০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায় এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকায়।’
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি সংকট, ডুবোচর, নাব্য সংকট এবং অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহারের বৃদ্ধি। সাগরের উপর জেলেদের নির্ভরতা বাড়লেও, সেখান থেকেও মোট মাছের ৬০ ভাগ আসে, বাকি ৪০ ভাগ নদী ও অন্যান্য উৎস থেকে আসে। এ কারণে নদীর ৪০ ভাগ ইলিশ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া এলাকার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘নদীতে ইলিশ এখন কিছুটা মিলছে, তবে আসন্ন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এই সময়ের আয় অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম আকন্দও জানিয়েছেন, ইলিশ আহরণ কমার কারণে দামও কমছে না এবং চলতি বছরের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় আরও কম হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব আসম হান্নান শাহের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার বাদ আছর হান্নান শাহের ঘাগটিয়াস্থ নিজ বাড়ি আঙ্গিনায় আলোচনা সভা, কোরআন খানি, কবর জিয়ারত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত নেতা হান্নান শাহের সুযোগ্য উত্তরসূরী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রবীণ নেতা আব্দুল করিম বেপারী, জেলা ও উপজেলা বিএনপি নেতা আফজাল হোসাইন, আজগর হোসেন খান, জেলা মহিলা দলের সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসী, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব ফকির ইস্কান্দার আলম জানু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য ও কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফরিদুল আলম বুলু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোঃ ফরিদ শেখ, সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন শিশির, উপজেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন মেম্বার, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মেম্বার, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মজিবুর রহমান টিক্কা, সদস্য সচিব মুকুল ফকির প্রমুখ। এছাড়া উপজেলার বিএনপির ১১টি ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজের নেতৃত্বে প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহের কবরে দলীয় নেতৃবৃন্দ ফাতেহাপাঠ এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ১/১১ এর প্রথম প্রতিবাদী কন্ঠস্বর প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ্ ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হার্ট সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর আর ১১ অক্টোবর ১৯৪১ সালে গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে শুক্রবার নিউইয়র্কে তাঁর হোটেল স্যুইটে একত্রিত হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা।
তাঁরা বাংলাদেশকে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নিজামি গঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) সহ-সভাপতি ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এনজিআইসি’র নামকরণ করা হয়েছে খ্যাতনামা একাদশ শতকের পারস্য কবি নিজামি গঞ্জাভির নামে।
উচ্চপর্যায়ের এই দলে ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোসেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্তোইয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো যোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক রপ্রেসিডেন্ট ম্লাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, একাধিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহ-সভাপতি ও এনজিআইসি’র সহ-সভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি-এর ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা।
নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব ও আজীবন দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানের প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনার পাশে আছি।’
তাঁরা উল্লেখ করেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি, শোষণ ও কু-শাসনের কারণে দেশটি এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
বিভিন্ন নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো পরামর্শ বা সহায়তা প্রয়োজন হলে জানাবেন।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফরকারী কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আপনাদের অর্জন অসাধারণ।’
জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে। এনজিআইসি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনাদের প্রয়োজন হলে আমরা আছি।’
সম্মেলনে প্রফেসর ইউনূস এভাবে অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়ে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আপনাদের একসঙ্গে আমাদের সমর্থনে দাঁড়ানো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি একেবারেই মুগ্ধ।’
তিনি বাংলাদেশের অবস্থা তুলনা করেন একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে ফেরার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘দেশটি গত ১৬ বছর ধরে একটি ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল। এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।’
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, সীমিত সম্পদের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ‘মানুষ তাৎক্ষণিক পরিবর্তন দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের অবশ্যই তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে—তারা একটি নতুন বাংলাদেশ খুঁজছে।’
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমাদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য।’
সভায় এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য। একই সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে গলে যাচ্ছে পৃথিবীর দুই মেরুতে অবস্থিত সাগরের উপরে বিস্তীর্ণ হিমবাহের চাদর। এটা অবশ্য নতুন কোনো খবর নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, গত ২০ বছরে ওই সাগরের উপরে থাকা হিমবাহের বরফ গলার হার কিছুটা হলেও কমেছে। এতে আশার আলো দেখছেন মানুষ কিন্তু গবেষকেরা বলছেন অন্য কথাই তারা মনে করছেন, বরফ গলে যাওয়ার হার যে কমেছে, তা স্থায়ী নয়। আগামী কয়েক বছর কম হারে বরফ গলবে। তার পরে হয়তো সেই হার বৃদ্ধি পাবে। আরও দ্রুত গলে যাবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ। এ ধরনের গবেষণা করেছেন ব্রিটেনের এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআর ইংল্যান্ড। তার সঙ্গে ছিলেন জে স্ক্রিন, এসি চ্যান এবং আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএম পোলভানি। জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এই গবেষক দল ‘মিনিম্যাল আর্কটিক সি আইস লস ইন দ্য লাস্ট ২০ ইয়ার্স, কনসিস্ট্যান্ট উইথ ইন্টারনাল ক্লাইমেট ভ্যারিয়েবিলিটি। প্রতিবেদনে প্রথমেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মেরু সাগরে হিমবাহ তুলনামূলকভাবে ধীরে গলছে মানে এই নয়, যে উষ্ণায়ন নিয়ে আর সতর্ক হতে হবে না। পরিবেশ নিয়ে মানুষকে আগের মতোই সতর্ক থাকতে হবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বহু বছর আগেই জানিয়েছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়ে যাওয়ার কারণে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে পৃথিবী জুড়ে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর সাগরের উপরে থাকা বরফের স্তর ধীরে ধীরে গলছে। গবেষণা বলছে, ১৯৮০-র দশক থেকে দুই মেরুর সাগরে প্রায় ১০ হাজার ঘন কিলোমিটার এলাকার বরফ গলেছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স’-এ এই পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা উষ্ণায়নের জন্য শুধু জীবাশ্ম জ্বালানিকেই দায়ী করেন না। তারা ‘এল নিনো’-কেও দায়ী করেন। প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বলে এল নিনো। গবেষক ইংল্যান্ড মনে করেন, প্রকৃতির কারণেই উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে সাগরের উপরে থাকা হিমবাহের গলে যাওয়ার মাত্রা কমেছে। তিনি জানান, ‘পেসিফিক ডিকেডাল অসিলেশন’ এর অন্যতম কারণ। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কখনও কমে, কখনও বৃদ্ধি পায়। শীতল থেকে উষ্ণ আবার উষ্ণ থেকে শীতল হয়ে ওঠাকেই বলে ‘পেসিফিক ডিকেডাল অসিলেশন’। তিনি জানান ‘পেসিফিক ডিকেডাল অসিলেশন’-এর কারণেও মেরুতে হিমবাহ গলে যাওয়ার গতি কমেছে। একইভাবে ‘আটলান্টিক মাল্টিডিকেডাল ভ্যারিয়েবিলিটি’-ও মেরু অঞ্চলের আবহাওয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলে মেরু অঞ্চলে ঠান্ডা স্রোত প্রবাহিত হয়। সে কারণে মেরু এলাকায় বরফের গলা ধীর গতিতে হয়।
গবেষণা বলছে, গত ২০ বছরে প্রতি দশকে মেরু অঞ্চলে ৩.৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকার বরফ গলেছে। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল অনেক বেশি। ওই সময়ে প্রতি দশকে মেরু অঞ্চলে ১৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকার বরফ গলে গিয়েছে। মেরুতে সমুদ্রের উপরে থাকা বরফের স্তর ধীর গতিতে গলছে বলে দাবি করেন গবেষকেরা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে জলবায়ুর পরিবর্তন কি ধীর গতিতে হচ্ছে ? গবেষকেরা জানান, মেরু অঞ্চলে বরফ ধীর গতিতে গলছে মানে এই নয় যে, উষ্ণায়নও কমেছে বা জলবায়ুর পরিবর্তন ধীরে হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন যে ধীর গতিতে হচ্ছে, তার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা পাননি। অন্যদিকে ইংল্যান্ড এবং তার সহযোগীরা মনে করছেন, মেরু অঞ্চলে বরফ যে ধীর গতিতে এখন গলছে, তা সাময়িক। আগামী পাচ বছর হয়তো এভাবে গলবে। সেই সম্ভাবনা রয়েছে ৫০ শতাংশ। ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ১০ বছর এ ভাবে ধীর গতিতে গলবে মেরু অঞ্চলের বরফ। তিনি বিষয়টিকে পাহাড় থেকে বল পড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ধরুন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে একটা বল গড়িয়ে পড়ছে। যেখানে ঢাল বেশি থাকে, সেখানে বলটি দ্রুত গড়িয়ে নামতে থাকে। পাহাড়ের যে অংশ তুলনামূলক সমতল, সেখানে বলটি ধীর গতিতে নামতে থাকে। কিন্তু সর্বশেষে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে বলটিকে কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে নামতেই হবে।’
অবশ্য প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার জন্য মানুষের কর্মকান্ডই প্রধানত দায়ী। মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করল সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। পৃথিবীর আদি থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনশীল, অন্তত ভূতাত্ত্বিক সময়পঞ্জিকা আমাদের তা-ই বলে। ফলে এক মিলিয়ন বছর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে কয়েকটি বরফ ও উষ্ণ যুগ এসেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন সমীক্ষা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে পৃথিবীর জলবায়ু পদ্ধতির পরিবর্তনে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর অবদান রয়েছে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ পৃথিবীর তাপমাত্রার চড়াই-উৎরাইয়ে অতীতে যেমন মুখ্য নিয়ামক ছিল কার্বন ডাই-অক্সাইড, ভবিষ্যতেও তেমন থাকবে।
এখন কথা হচ্ছে, বরফ ও উষ্ণ যুগ পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে ছিল, তাহলে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন কেন এত বেশি আলোচিত? এর একমাত্র কারণ, বিশ্বব্যাপী মনুষ্য কর্মকাণ্ড, যেমন নগরায়ণের হার, কলকারখানার পরিমাণ, বনভূমির উজাড় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্প্রতি এতটাই বেড়েছে, যার ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হচ্ছে।
বর্তমান জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে আমরা ‘মানবসৃষ্ট’ বলি। কারণ, অতীতের জলবায়ুর পরিবর্তনগুলো ছিল প্রাকৃতিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমাদের সুন্দর এই ধরিত্রী নিকট ভবিষ্যতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। কারণ, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার বৃদ্ধি বায়ুমণ্ডলের উচ্চ ও নিম্নস্তরে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আর তাই আর্দ্র অঞ্চল আর্দ্রতর ও শুষ্ক অঞ্চল শুষ্কতর হবে। ফলে মানুষের জীবনধারণ বা টিকে থাকাই হয়ে উঠবে দুরূহ। যদিও জলবায়ুর পরিবর্তন একটা বৈশ্বিক সমস্যা, তবু উন্নয়নশীল বা অনুন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব হবে ভয়ংকর ও অসামঞ্জস্যহীন। কেননা, এসব দেশে পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপাদান, জ্ঞানবিজ্ঞান ও কলাকৌশলের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোর জনগণের উন্নত জীবনযাপনের বলি হচ্ছে বা হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। জ্বলন্ত একটা উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। যেমন বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরাই হব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। মূলত ভৌগোলিক অবস্থান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষার অপ্রতুলতা বাংলাদেশের ঝুঁকিকে দিন দিন প্রসারিত করছে। ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন খাত, যেমন বৃষ্টিপাত ও গড় তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের অভিঘাত বৃদ্ধিতে অর্থনীতির খাতওয়ারি প্রভাব ধীরে ধীরে তীব্রতর হচ্ছে, যা সামনের দিনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বাইরে চলে যেতে পারে।
মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সম্পর্কে গবেষণায় দেখা যায়, দেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা ব্যাপক, যা খুবই উদ্বেগের। গত ৫০ বছরে (১৯৬৮-২০১৮) দেশে দিন ও রাতে উষ্ণতার হার বেড়েছে। একইভাবে দিন ও রাতের শীতলতা ভীষণ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ দশকে উষ্ণ দিনের সংখ্যা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় প্রতিবছরে গড়ে শূন্য দশমিক ৩৯৪ দিন এবং দেশের অভ্যন্তরভাগে শূন্য দশমিক ১৫ দিন করে বেড়েছে। এ ছাড়া উষ্ণ দিনের সময় উপকূলীয় অঞ্চলে শূন্য দশমিক ৫০৭ দিন করে প্রতিবছর বাড়ছে। তাপমাত্রার তুলনায় বৃষ্টিপাতের সূচকগুলো অপেক্ষাকৃত ভাবে কম পরিবর্তিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারী ও প্রচণ্ড ভারী বর্ষণের পরিমাণের সংখ্যা। বরিশাল, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও রাজশাহীতে বার্ষিক ভারী বর্ষণের দিন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে উত্তরবঙ্গের এলাকাগুলোয় খরা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মতো পুরো দেশে বৃষ্টিপাত কমলেও নগর এলাকাগুলোতে ভারী ও চরম বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা বাড়ছে, প্রকট হচ্ছে জলাবদ্ধতা। গত পাঁচ দশকে দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ টানা শুষ্ক দিনের সংখ্যাও কমেছে। আরও শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, উপকূলীয় নিম্নভূমির এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাতের হার দিন দিন বাড়ছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অনিয়মিত আচরণ কৃষিক্ষেত্রে ফসলের উৎপাদন যেমনি ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি চিরায়ত কৃষিচিত্র পাল্টে যাওয়ায় কর্মসংস্থান হ্রাসে জীবিকার সংকট তীব্রতর হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ বছর এপ্রিলে তাপমাত্রার অভিঘাতে ধানের উৎপাদন কিছু কিছু জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার হিটশক কৃষির জন্য একটা নতুন চ্যালেঞ্জ, যা অতীতে ছিল না বা থাকলেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমনি অবস্থায় বিশ্বকে, বিশ্বের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং জীবনযাত্রায় বিলাসিতা ও আয়েশ কমিয়ে আনা,অধিক হারে বৃক্ষরোপণ পাশাপাশি প্রয়োজন বৈশ্বিক উদ্যোগ।
মোতাহার হোসেন: সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম। ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ইং।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের’ দিকে তাকিয়ে আছে রোহিঙ্গারা। আর ওই সম্মেলন ঘিরে সংকট সমাধানের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়ে এবং সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার ব্যাকুলতার কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় সমাবেশ করছে রোহিঙ্গারা। শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালীর ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সকাল ৯টা বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আর সমাবেশের আয়োজন করে 'রোহিঙ্গা ইলেক্টেড সিভিল সোসাইটি' নামে একটি সংগঠন।
সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের তাদের ফেরার নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান। একই সাথে মিয়ানমারের সংগঠিত গণহত্যার ন্যায়বিচারেরও দাবি করেন।
এসময় দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় ধরে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের আশা করছেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও প্রকৃত সমাধান খুঁজে বের করার পথ দেখাবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়ে রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার জেরে পালিয়ে আসা।
পাঁচশত টাকায় সদস্য হলেই মিলবে হাইব্রিড জাতের ২০টি মুরগি, ও ২১ মাস পর্যন্ত ফ্রি খাদ্য, ঔষধ এবং ভ্যাকসিন। এই মুরগি ৬০০টি পর্যন্ত ডিম দিবে। আর ১শ টাকা করে ১০ কিস্তিতে প্রতি সদস্যকে দেয়া হবে ১টি করে মুরগি পালনের দোতলা কাঠের ঘর। ১৩০০ টাকা দিয়ে গ্রুপ লিডার হলেই প্রত্যেক মাসে বেতন পাওয়া যাবে ৫ হাজার টাকা এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি ডিম কমিশন দেয়া হবে। লিডারকে সাথে সাথেই ৫টি ৫টি মুরগি প্রদান করা হবে।
তাদের দেয়া মুরগি মারা গেলেই ১ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে মুরগি প্রতি।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঠিক এমনই মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কোটি টাকা খুইয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
জানা যায়, ‘লেয়ার মুরগি ফার্ম এন্ড হ্যাচারী’ নামে একটি কার্ডে গোপালপুর উপজেলার রামজীবনপুর, বাইশকাইল, পোড়াবাড়ী, উদ্যমপুর বর্ণী, নগদা শিমলাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসব টাকা নেয়া হয়েছে। কার্ডে প্রোপ্রাইটারের নাম লেখা রয়েছে মোছা. ফাতেমা তুজ-জান্নাত। ঠিকানায় লেখা আছে: সাবগ্রাম, উপজেলা সদর, বগুড়া, গায়ে থাকা নম্বর ০১৭৬৮৮০৫২৯৭, ০১৭৭২৬৪৩৭১১, ০১৯৪৭১২৯৮১৫ বন্ধ পাওয়া গেছে।
রামজীবনপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার থেকেও ১ হাজার টাকা নিয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে দুই জন এসে নগদ টাকা নিয়ে যায়; পরে বিকাশে ০১৭৭৩৯৩৭৩২৫ নম্বরে আরও কয়েকজনের ৪ হাজার টাকা নেয়, এখন ফোন রিসিভ করছে না। ২৫ তারিখ সবাইকে মুরগি ও খাদ্য ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল।
বাইশকাইল গ্রামের ভ্যানচালক মহির উদ্দিন জানান, দুই জন লোক এসে বললো, ৩০ জনের গ্রুপ বানাতে পারলে আমাকে মাসিক ৫ হাজার বেতন দিবে, খাদ্যের ডিলার বানাবে এবং প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি করে ডিম দেবে। পরে আমাদের গ্রামের ৩২ জনকে সদস্য বানিয়ে দিয়েছে; বিনিময়ে শুধু আমাকে ৫টি মুরগি দিয়েছে।
পোড়াবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ স্বপ্না বেগম বলেন, দুই জন লোক এসে মুরগিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ৩৬ জন মহিলার গ্রুপ বানিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছিল; এখন তারা পলাতক। আমরা চাই দেশের আর কেউ যেনো এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পড়ে, আমাদের টাকা ফেরত ও প্রতারক চক্রের শাস্তি চাই।
গোপালপুর থানা ওসি গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, থানায় এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। স্বপ্রণোদিতভাবে আমি চেষ্টা করব এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে আইনগত কোনো কারণ দেখাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও তারা চাপের কাছে নত হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যা আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, যখন আমরা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি, তখন সব আইন-কানুন যাচাই-বাছাই করে আবেদন করি। শুরুতে অনেকে বলার চেষ্টা করেছে শাপলা যেহেতু জাতীয় প্রতীক, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। কিন্তু আইনগতভাবে বিষয়টি সঠিক নয়। শাপলা জাতীয় প্রতীকের একটি অংশ, এটি এককভাবে জাতীয় প্রতীক নয়। একইভাবে জাতীয় ফল বা জাতীয় প্রতীক-সংশ্লিষ্ট আরও অনেক প্রতীক বিভিন্ন দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তাহলে শাপলা কেন দেওয়া হবে না?
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে তাদের লিস্টে শাপলা নেই। অথচ লিস্ট হালনাগাদ বা ইমপ্রুভ করার দায়িত্ব তো তাদেরই। আমরা কয়েক মাস আগে আবেদন করেছিলাম, তখন তারা কাজটা করতে পারত। আমরা নতুন করেও আবেদন দিয়েছি। তারপরও আইনগত কোনো যুক্তি না দেখিয়ে কেবল এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, নিশ্চয়ই কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মতবিনিময়কালে সারজিস আলম তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমরা সমমনা ও কাছাকাছি আদর্শের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশের মানুষ চায় তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হোক। আমরা যদি রাজনৈতিক দলের পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে মাঠ পর্যায়ের মানুষও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। পাশাপাশি এবি পার্টির সঙ্গে জোট (অ্যালায়েন্স) ভিত্তিক আলোচনাও এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা সংসদে গিয়ে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব।
আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে এনে ভাড়া করা লোক দিয়ে মাঝে মাঝে মিছিল করাচ্ছে। এগুলো আওয়ামী লীগের প্রকৃত শক্তি নয়। যদি সত্যিই তাদের এত লোকবল থাকত, তাহলে জুলাই-আগস্টে যখন সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল, তখন তারা কোথায় ছিল?
তিনি আরও বলেন, টাকা দিয়ে ভাড়া করা টোকাইদের ভোরবেলা নামিয়ে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে আসল রাজনৈতিক কর্মসূচি আর ভাড়াটে শোডাউন কাকে বলে। অভ্যুত্থানে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির চ্যাপ্টার এখন ক্লোজড।
হিমালয়-পাদদেশে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলের চা-বাগান, সীমান্ত ঘেরা প্রকৃতি- সব মিলিয়ে পর্যটনে নতুন গন্তব্য হয়ে উঠছে তেঁতুলিয়া। শনিবার বিশ্ব টুরিজম দিবস উপলক্ষে দেশের পর্যটন মানচিত্রে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সম্ভাবনাময় এক নাম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। দেশের সর্বউত্তরের এ সীমান্তবর্তী উপজেলা বর্তমানে পর্যটকদের কাছে রূপ নিচ্ছে জনপ্রিয় গন্তব্যে।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তেঁতুলিয়া থেকে বর্ষা শেষে ও শীতের শুরুর দিকে দেখা মেলে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আন্তরিক মানুষের মিলনে গড়ে উঠেছে এক অনন্য পর্যটন পরিবেশ।
এ বছর শরতের শেষভাগে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ঘিরে তেঁতুলিয়ায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে তেঁতুলিয়ার প্রতিটি দর্শনীয় স্থান। তবে গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও আজকে মেঘের আড়ালে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তবু নেই হতাশা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা কিছুটা মেঘে ঢাকা থাকলেও হতাশ হননি আগত দর্শনার্থীরা। শান্ত প্রকৃতি, নদীর ধারে কাশফুল, চা-বাগানের সবুজ সমারোহ এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। কেউ ঘুরেছেন বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, কেউ উপভোগ করেছেন মহানন্দা নদীর সূর্যাস্ত। কেউ আবার শিশুদের নিয়ে বেড়িয়েছেন রওশনপুর শিশুপার্কে কিংবা আনন্দগ্রামে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মিথিলা জানান, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখলেও অন্যসব সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। এখানে মানুষের ব্যবহার, নিরাপত্তা ও পরিবেশ খুবই ভালো।
কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে তেঁতুলিয়ার স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলোতে দেখা দিয়েছে আগাম বুকিংয়ের হিড়িক।
স্থানীয়রা জানান, শরৎকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা এক বিরল ঘটনা। সাধারণত অক্টোবর মাসে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং তখন সহজে দেখা মেলে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শুরুতেই টানা দুদিন এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারায় স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
তেতুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি বছরই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য অপেক্ষা করি। সাধারণত শীতের একটু আগে বা শীতের শুরুতে ভালোভাবে দেখা যায়। এবার এত তাড়াতাড়ি দেখা মিলবে ভাবিনি। গত শুক্রবার বিকালে হঠাৎই পাহাড়ের চূড়াটা দেখা গেল। মনে হচ্ছিলো, হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলবো। সত্যি, এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।
তেতুলিয়া উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের মোবারক হোসেন বলেন, ডাকবাংলো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সাদা বরফে মোড়া পাহাড়টা এত সুন্দর লাগছিলো যে মনে হচ্ছিল, একেবারে হাতের কাছেই আছে।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
টুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক মো. রাব্বুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়া অত্যন্ত নিরাপদ পর্যটন এলাকা। দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সে জন্য আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, প্রতি বছর শরৎ-হেমন্তে এখানে পর্যটক বাড়ে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। গত দুই দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম। তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, তেঁতুলিয়া ও এর আশেপাশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো তুলে ধরা হলো। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন পয়েন্ট;
* বাংলাবান্ধা চারদেশীয় বর্ডার *জিরোপয়েন্ট
* মহানন্দা নদী ও সূর্যাস্ত * কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট * ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার * রওশনপুর শিশুপার্ক ও আনন্দগ্রাম।
এছাড়া নদী ও সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতি ও পাহাড়ি আবহে স্থানীয় সংস্কৃতিও পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে।
তেঁতুলিয়া এখন আর শুধু সীমান্তবর্তী এক উপজেলা নয়- বরং হয়ে উঠছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পর্যটন হাব। সঠিক পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে এই অঞ্চল হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত গ্লোবাল হাই-টেক ক্লাইমেট-স্মার্ট এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক (GHAN) শীর্ষক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগদান করেছেন। তিনদিনব্যাপী এই কর্মশালা চলে শনিবার পর্যন্ত।
কর্মশালার জিএইচএএন গোলটেবিল প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে অধ্যাপক ড. ভূঁইয়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক হাবের জন্য বাকৃবির প্রার্থী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে উচ্চ-প্রযুক্তি নির্ভর টেকসই কৃষি এবং জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি বিষয়ক শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় আরো অংশগ্রহণ করেন বাকৃবির ফোকাল পয়েন্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ভূঞা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবর রহমান।
এই আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উচ্চ-প্রযুক্তি ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, Global High-tech climate-smart agricultural university network (GHAN) হল কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও জলবায়ু-বান্ধব পদ্ধতির একটি শিক্ষামূলক ও গবেষণামূলক প্ল্যাটফর্ম যা জলবায়ু-বান্ধব, টেকসই কৃষি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
জামালপুরের ইসলামপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ও আমার দেশ পত্রিকার ইসলামপুর উপজেলা প্রতিনিধি ওসমান হারুনী (৫০)। শনিবার ইসলামপুর পৌরশহরের ধর্মকুড়া এলাকায় তার নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ওসমান হারুনী একই এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে।
ইসলামপুর থানার ওসি আ. ফ. ম. আতিকুর রহমান জানান, সাংবাদিক ওসমান হারুনীর কিছুদিন আগে কিডনি নালীর অপারেশন হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। তবে তিনি বাড়িতে থেকে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেটের ব্যথা সহ্য করতে না পেয়ে তিনি নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মেহেদী বলেন, ওসমান হারুনী মোহনা টিভি ও আমার দেশ পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। তিনি জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সাংবাদিকরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে রেখেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।