ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও ৪ থেকে ৫ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তারা। চাকরিতে পুনর্বহালসহ ছয় দফা দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন।
শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের ফৌজদার হাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থান নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের শত শত কর্মকর্তা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর পৌনে ১২টার দিকে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক অবরোধের কারণে দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাতায়াতকারী লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অবরোধকারীরা অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৪ থেকে ৫ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, পরিবার নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
এর আগে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা রবিবার থেকে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে শনিবার সকাল থেকেই মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আন্দোলন শুরু হয়।
আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহারসহ মোট ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মিজানুর রহমান নামের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে আমাদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। আমাদের অ্যাকাউন্টে থাকা বেতনের টাকাও আমরা তুলতে পারছি না। এ ছাড়া আইডি কার্ড ব্লক করার পাশাপাশি আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। চাকরি হারিয়ে আমরা এখন পথে বসে গেছি।’
৬ দফা দাবি হলো
১. চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে।
২. প্রহসনমূলক পরীক্ষা বয়কটের জন্য আমাদের কর্মকর্তাদের যে পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হচ্ছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩. বৈষম্যহীন ও রাজনীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৪. শর্ত আরোপ করে সব ধরনের অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট বন্ধ করতে হবে।
৫. চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের ওপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পুনরায় কর্মস্থলে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
৬. পরীক্ষা বর্জনের জন্য আমাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও সাইবার ক্রাইমে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
চট্টগ্রামে দরপত্রের মাধ্যমে রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার সময় দরপত্র বাক্স খোলা ও যাচাই-বাছাইসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর হঠাৎ মধ্যরাতে দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা অভিযোগ করছেন- নিয়ম মেনে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ স্থগিতাদেশ দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তারা মনে করছেন, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পক্ষকে সুবিধা দিতে এই দরপত্র হঠাৎ স্থগিত করেছে। এমন সিদ্ধান্ত রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফসল। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশল-১ এর কার্যালয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের গণশৌচাগার ইজারা দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইজারায়- নতুন রেলস্টেশনে থাকা ৬টি টয়লেট, বেসিন, ৩টি ওজুখানা ও ২টি প্রস্রাবখানা ইজারা দেওয়ার আহবান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্রের শিডিউল ক্রয়ের শেষদিন ও ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় দরপত্র শিডিউল জমা দেওয়ার শেষদিন উল্লেখ করা হয়। একইদিন সাড়ে ১২ টায় দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে দরপত্র বাক্স খোলার কথা বলা হয়।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দরপত্র কেনার শেষ দিন পর্যন্ত ৯টি সিডিউল বিক্রি হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় সকলের উপস্থিতিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী বিভাগীয় প্রকৌশলী ডিইএন-১ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিমের কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সটি খোলা হয়। ওই বাক্সে সাতটি দরপত্র জমা পড়ে।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারেরা জানান, বাক্সে থাকা সাতটি দরপত্র শিডিউল সকলের উপস্থিতিতে খোলা হয়। এ সময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দরপত্রে অংশগ্রহণকারীরা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দেখানো হয় মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালকে। পর্যায়ক্রমে সাবির মোটরস সর্বোচ্চ দর আড়াই লক্ষ টাকা ও ব্লু প্রিন্ট ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু রাত ১০টায় হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করে বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়। স্থগিতের নোটিশে স্বাক্ষর ছিল বিভাগীয় প্রকৌশলী-১- (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রহিম। চিঠির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতনদের কাছে পাঠানো হয়। তবে ওই চিঠিতে দরপত্র স্থগিতের বিষয়ে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভীরুল ইসলাম বলেন, যিনি দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করেছেন ওনার কাছে বিষয়টি জেনে নেন। বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। এসময় প্রতিবেদককে অফিসে আসতে বলেন।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স এম আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের একজন নেতা এই গণশৌচারগারটি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করে আসছে। নির্ধারিত সময়ে এটার টেন্ডার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
আমরা ধারণা করছি, এবারও গণশৌচাগারটি ওই ফ্যাসিস্টের দখলে দিতে দরপত্র নিয়ে এমন কারসাজি করেছে রেল কর্মকর্তারা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরপত্র খোলার পর বৈধ কারণ ছাড়া প্রক্রিয়া স্থগিত করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুযায়ী স্বচ্ছতার পরিপন্থি।
রেলওয়ের ভেতরের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রেলওয়ের বিভিন্ন ইজারা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এবারও একই কৌশলে দরপত্র স্থগিত করে সুবিধাভোগী পক্ষকে সুযোগ দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে লেবু জাতীয় ফসল ‘মালটা’ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চা, পান এবং কমলার মতো বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকেরা। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টার বাগানও রয়েছে এ জেলায়। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী এ জেলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে চা চাষের জন্য তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু চা নয়, বাণিজ্যিকভাবে নানা রকম ফল ও ফসল চাষ হচ্ছে এ জেলায়। এদিকে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায়ও দেশি মালটা চাষেরও ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড় বোদা উপজেলার ২ নং ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে প্রায় ২১৭টি মালটা গাছ রোপণ করেছে। দেশি প্রজাতির প্রতিটি মালটা গাছে ফলন হয় ৫০ থেকে ৮০ কেজি।
কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, মালটা গাছ রোপণ করার দুই বছরের মধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লক্ষ টাকা। চলতি বছরে তিনি ৪ লক্ষ টাকার মালটা বিক্রি করার আশা করছেন।
ভিমপুকুর এলাকার কৃষক সাদেকুল আরও জানান, গত ২০২২ সালে বোদা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রায় ২১৭টি দেশি মালটা গাছ ফ্রী পান। সেই সাথে মালটা বাগান করতে রাসায়নিক সারসহ পরিচর্যা করার বিষয় নিয়ে একটি ট্রেনিংও করান উপজেলা কৃষি অফিস।
এদিকে, উপজেলার ৩নং বনগ্রাম বেংহাড়ী ইউনিয়নের তেপুখুরিয়া টোকরা পাড়া এলাকার কৃষক শাহিনুর বলেন, ২১ একর জমিতে দেশি মালটার চাষ করি, এবং দেশি মালটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কৃষক শাহিনুর আরো বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে ২৫০০ টাকা দরে মণ বিক্রি যাওয়ার কথা, প্রতি বছর এ মাসে ফলের দাম বেশি থাকে, তাই আমি নভেম্বর মাসে বিক্রি করবো।
কৃষি বোদা উপজেলা কৃষি অফিসার আহমেদ রাশেদ উন-নবী বলেন, মালটা চাষের জন্য এলাকার মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। তারা কৃষকদের মালটা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফলের চাষে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। এতে কৃষকদের আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারে দেশি ফলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। এ বছর ৪৭ হেক্টর মালটা চাষ হচ্ছে বোদা উপজেলায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে পঞ্চগড়ে। মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা চাষিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছি।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান। পঞ্চগড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা বাগান। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় পঞ্চগড়ের মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে।
সৈয়দ মাহফুজার রহমান সেলিম নামের অপর আরেক কৃষক জানান, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি ১৫ বছরের জন্য ৬০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বারি ১ মাল্টা চাষ শুরু করেন। এরপর ৯ হাজার গাছ লাগিয়েছেন তিনি।
প্রতিবছর প্রত্যেক গাছ থেকে ২০ কেজি মাল্টা পান। প্রতিবছর তিনি ১ লক্ষ ৮০ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, পঞ্চগড়ের স্থানীয় ফল ব্যবসায়িরা বাগান থেকে মাল্টা কিনছেন।
পঞ্চগড়ের আবহাওয়া এবং মাটির গুণাগুণ বিচার করে কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এই জেলায় মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা চাষ। অনেকে চা বাগানে মাল্টা চাষ করছেন। অনেকে আবার মাল্টা বাগানে পেপে, কলাসহ অন্যান্য আবাদ করে বাড়তি আয়ও করছেন। প্রথমদিকে বাড়ির আঙ্গিনা বা খোলা যায়গায় নিতান্ত শখের বসেই মাল্টা চাষ করছিলেন এই জেলার অধিবাসিরা। পরে মাল্টা চাষ বাণিজ্যিক আকারে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বোদা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক জানান, শখের বসেই ৪০টি মাল্টা গাছ লাগিয়ে শুরু করেছিলাম। ভালো ফল পেয়ে এখন প্রায় ১ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি।
ভিটামিন সি এবং ব্যাপক পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাজারে মাল্টার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। খুব অল্প সময়ে গাছে ফল ধরে। আর ব্যবসায়িরা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় মাল্টা। পঞ্চগড়ের মাল্টা এখন রপ্তানি হচ্ছে সারাদেশে।
অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের রাস্তা ও বাড়ির আঙিনা। ফলে তাদের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলে ওই এলাকার মানুষের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মার্স ফিড নামে একটি কোম্পানির অপরিকল্পিত বালু ভরাট করে চারিদিকে ঘিরে ওই এলাকার পানি নদীতে নামতে না পাড়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী। এ জলাবদ্ধতায় পানিবন্ধী হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে ওই এলাকার লোকজন। এলাকাবাসী অবিলম্বে এর স্থায়ী নিরসন চায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাতভাইয়া পাড়া গ্রামে পাশে পশু খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘মার্স ফি’ নামের একটি কোম্পানি গড়ে উঠে। এ কোম্পানি গড়ে উঠার পর থেকে এ এলাকার মানুষ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেই বসবাস করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে এ কোম্পানির পশু খাদ্য তৈরির কাঁচামালের দুগর্ন্ধে এ এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও এ কোম্পানি অপরিকল্পিতভাবে বালু ভরাট করার ফলে এ এলাকার পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। গত কয়েকদিনে অতি বৃষ্টির কারণে পানি জমে রাস্তা ও বাড়িঘর তলিয়ে গিয়ে এলাকার প্রায় ২ শতাধিক মানুষের ঘরে পানি ঢুকে যায়। ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়ে মানুষ।
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পানি জমে আছে। অনেক ঘরে পানি ঢুকে তাদের আসবাবপত্র, কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে আছে। এমনকি রান্নাঘর ও বসবাসের ঘরেও হাঁটু সমান পানি উঠে গেছে। ওই এলাকার বাসিন্দরাও ঘরে উঠা নষ্ট পানিতে থালা বাটি ধৈত করছেন। ওই এলাকার মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি জমে ময়লা ও আবর্জনায় পরিনত হয়েছে ওই এলাকার প্রতিটি ঘরবাড়ির চারপাশ। সকলেই পানি দিয়ে হেঁটে প্রয়োজনীয় কাজে ও গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারনে পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পানির দুর্গন্ধে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ওই এলাকার লোকজন। এলাকাবাসী তাদের কষ্টের পরিত্রাণ চায়।
সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের আব্দুল কালাম জানান, আমরা এ পানি নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত অনেক কষ্টে আছি। বৃষ্টির সময় আসলে এ গ্রামের মানুষজন জলাবদ্ধতায় শিকার হই। কেউ আমাদের কষ্ট দেখছে না, এলাকায় যেন লোক নেই। চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ দেখে না। ভোটের সময় আসলেই তারা আসে।
সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের গৃহবধূ পুজা রানী জানান, কোম্পানির বালু ভরাট করায় এ অঞ্চলের বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে না পারায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এ পানি ঘরে ঢুকে পড়েছে। ফলে আমাদের ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় মালপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে বালু ভরাট করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
ওই গ্রামের বৃদ্ধ সামসুল ইসলাম জানান, এ কোম্পানি হওয়ার আগে আমাদের জলাবদ্ধতার কোন সমস্যা ছিল না। বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি মেঘনা নদীতে নেমে যেত। বর্তমানে বালু ভরাট করায় আমাদের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমাদের রান্না বান্না, বাথরুমসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের বিসু সরকার, নিপা রানী সরকার জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঘরে পানি উঠে আমাদের খাবার দাবার, রান্না বান্না করা যাচ্ছে না। আমাদের না খেয়ে শিশুরা অনেক কষ্ট করছে।
মার্স ফিডের জেনারেল ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, আমাদের জায়গা ভরাট করলে যদি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমাদের কিছুর করার থাকে না। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেন নির্মান করে দেয়া হবে।
বৈদ্যেরবাজারে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মটরের মাধ্যমে ওই এলাকার পানি নিষ্কাশন কাজ শুরু করেছি। দ্রুত এর স্থায়ী নিরসন করা হবে।
মিরপুর পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের বহির্বিভাগ উদ্বোধন করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
গতকাল শুক্রবার মিরপুর পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট পুলিশ লাইন্সে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সার্বিক সহযোগিতায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার-এর তত্ত্বাবধানে পুলিশ সদস্যদের জন্য এই সুবিধা চালু করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের সার্বিক কল্যাণে এটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে রোগীর চাপ কমার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা একই স্থানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন এবং রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় নমুনাও সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া অন্যান্য সেবার মধ্যে থাকবে সরকারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ, ফিজিওথেরাপি এবং অবজারভেশন সুবিধা।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক (ডিআইজি) মো. সায়েদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জিললুর রহমানসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজা এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। কর্মস্থলে যোগ দিতে অনেকেই শহরে ফিরেছেন। ফলে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। তবে প্রধান সড়কগুলোতে তেমন যানজট দেখা যায়নি।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল এলাকায় সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা কিশোর অধিকারী রংপুর থেকে ট্রেনে ফিরেছেন ঢাকায়। তিনি জানান, বছরে একটি ঈদ আর পূজায় বাড়ি যাওয়া হয়। পূজার সময় আত্মীয়-স্বজন সবাই বাড়িতে আসে। গত মঙ্গলবার অফিস করে বাড়ি গিয়েছি। আগামীকাল আবার অফিসে যেতে হবে, তাই আজ চলে এসেছি। যাওয়া-আসায় তেমন কষ্ট হয়নি। আনন্দ নিয়েই পূজা উদযাপন করতে পেরেছি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বোরহান উদ্দিন চাঁদপুর থেকে ফিরেছেন সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে। তিনি জানান, ঈদের মতোই ঢাকা ফিরতি যাত্রীর চাপ রয়েছে। দুর্ভোগ এড়াতে সকাল সকাল ঢাকায় ফিরেছি। আগামীকাল অফিস করতে হবে, তাই আজ চলে এসেছি।
এ দিকে সরেজমিনে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে যানজট দেখা যায়নি। মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টনে ছুটির দিনের মতোই যাত্রীবাহী গাড়ির চাপ কম। তবে অটোরিকশার পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। তবে সায়দাবাদ, দয়াগঞ্জ, ধোলাইপাড় এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে দুর্গাপূজার ছুটি মিলিয়ে গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ছুটি রয়েছে সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ১ ও ২ অক্টোবর (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) দুর্গাপূজার ছুটি এবং ৩ ও ৪ অক্টোবর (শুক্রবার ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। তাই সরকারি অফিস আগামীকাল রোববার (৫ অক্টোবর) থেকে পুনরায় শুরু হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে টানা পাঁচ দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার সকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হওয়ায় দু'বন্দরে কর্মচঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চালু হওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস এর কার্গো সুপারিনটেনডেন্ট আবু তাহের ।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী বলেন, “শারদীয় দুর্গাপূজায় ২৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) থেকে ০২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত পেট্রাপোল - বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে আজ শনিবার সকাল থেকে দুই দেশে মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে বান্দর এলাকায়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, পূজার ছুটি শেষে আজ সকাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় চালু হয়েছে। তবে পেট্রাপোল বন্দরে সিএন্ডএফ অফিসের স্টাফদের উপস্থিতি কম থাকায় আমদানী রপ্তানি বাণিজ্যের গতি অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে পাঁচ দিন সরকারি ছুটি ছিল । ৫ দিন সরকারি ছুটি থাকার কারণে এ পাঁচ দিন বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ছুটি শেষে আজ শনিবার (৪ অক্টোবর )সকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় চালু হয়েছে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য চালু হওয়ায় কর্মচঞ্চলতা ফিরে এসেছে উভয় বন্দর এলাকায়। তবে বন্ধের এ কয়দিন বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও বেনাপোল বন্দর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালু রেখে শুল্কায়ন কার্যক্রম চালু সহ ও বন্দরে লোড আনলোডের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর।
উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড় মাটি ও আবহাওয়ার কারণে চা চাষের জন্য ইতিমধ্যেই তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে।
শুধু চা নয়, বাণিজ্যিকভাবে নানা রকম ফল ও ফসল চাষ হচ্ছে এ জেলায়। এরই ধারাবাহিকতায় বোদা উপজেলায় দেশি মালটা চাষেরও ব্যাপক সাফল্য দেখা যাচ্ছে।
পঞ্চগড় বোদা উপজেলার ২ নং ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ভিমপুকুর এলাকার সাদেকুল ইসলাম নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে ২১৭ টি মালটা গাছ রোপণ করেন। প্রতিটি গাছে দেশি মালটা ফলন হয়, ৫০ থেকে ৮০ কেজি, রোপণ করার দুই বছরের মধ্যে বিক্রি করেন দুই লক্ষ টাকা,এ বছরে ৪ লক্ষ টাকার বিক্রি করার আশা করেন।
সাদেকুল আরও জানান গত ১/১/২০২২ সালে বোদা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২১৭ টি দেশি মালটা গাছ ফ্রী পান এবং রাসায়নিক সার সহ কিভাবে পরিচর্যা করবেন সেই বিষয় ট্রেনিং করান।
উপজেলার ৩ নং বনগ্রাম বেংহাড়ী ইউনিয়নের তেপুখুরিয়া টোকরা পাড়া এলাকায় শাহিনুর তিনি জানান ২১ একর জায়গায় দেশি মালটার চাষ করি, এবং দেশি মালটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নভেম্বর মাসে ২৫০০ টাকা মণ বিক্রি যাওয়ার কথা, প্রতি বছর এ মাসে ফলের দাম বেশি থাকে, তাই আমি নভেম্বর মাসে বিক্রি করবো।
আহমেদ রাশেদ উন -নবী , উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, মাটি ও আবহাওয়া মালটা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তারা কৃষকদের মালটা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফলের চাষে উৎসাহিত করছেন। এতে কৃষকদের আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় বাজারে দেশি ফলের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। এ বছর ৪৭ হেক্টর জায়গায় মালটা চাষ হচ্ছে বোদা উপজেলায়।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে জোনায়েদ শেখ নামের ১৪ বছর বয়সী মাদ্রাসাপড়ুয় এক শিশু আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার তারাশী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জোনায়েদ তারাশী গ্রামের মৃদুল শেখের ছেলে ও পিনজুরী কওমী মাদ্রাসার তৃতীয় জামাতের ছাত্র।
শুক্রবার বিকেল ফাঁকা ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেয় জোনায়েদ। বিকেল ৫ টার দিকে জোনায়েদের মা আছিয়া বেগম ঘরের বন্ধ দেখে ও কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের নিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে গিয়ে আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় জোনায়েদ কে দেখতে পান। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।
নিহত জোনায়েদের চাচা রাসেল শেখ বলেন, কয়েকদিন আগে জোনায়েদ মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আসে। এরপর আর মাদ্রাসায় যেতে চাচ্ছিল না। এ নিয়ে মায়ের সাথে তার মনোমালিন্য ছিল। ধারণা করা হচ্ছে মায়ের উপর অভিমান করে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার হাফিজুর রহমান জানান, পরিবার ও এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ না থাকায় উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার সকালে তারাশী কবরস্থানে শিশু জোনায়েদের দাফন সম্পন্ন হয়।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সাগর নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয়ে বেপরোয়া চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাগর রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ও রামগতি বাজারের ইলেকট্রনিক ব্যাবসায়ী।
ভুক্তভোগী বড়খেরী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মোঃ মেহেরাজ অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাগর নিজেকে কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকাতে বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবি করে যাচ্ছে। তিনি নিজেই একজন ভুক্তভোগী। সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। তার ভয়ে রামগতি মাছঘাটের সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবসময় আতঙ্ক থাকেন।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম মাছ ব্যাপারী বলেন, সাগরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। সাগর কিছুদিন আগে তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। তার চাহিদা মাফিক চাঁদা না দেওয়ায় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হেনস্তা করেন। বিশেষ করে মাছঘাটের ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণায় তটস্থ। সে নিজেকে সেনাবাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। মুলত ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাই সাগরের মুল উদ্দেশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, ৫ আগস্টের পর বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের রামগতি বাজার, রামগতি মাছঘাট এলাকার সাধারণ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত সাগর। সাগরের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অনেকটা অসহায় তারা। এমন অবস্থায় সাগরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ মানুষ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাগর বলেন, অভিযোগকারী কাউকে আমি চিনিনা। তারা কেন এসব মিথ্যা অভিযোগ করলো? তাছাড়া আমি তো এলাকায় থাকিনা। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।
রামগতি সেনাক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর কোন সোর্স নেই। এগুলো এক প্রকার প্রতারণা। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ কবির হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে এই ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এ উপজেলা এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। আকাশ পরিষ্কার থাকলেই এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব সৌন্দর্য। সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, মহানন্দা নদীর তীর, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ও তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নারসহ নানা দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।
কিন্তু এসবের বাইরে সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে একটি গাছ। তেঁতুলিয়ার প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছ এখন সেজেছে একেবারে নতুন সাজে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।
স্থানীয়রা বলছেন,বহু বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই তেঁতুল গাছ স্থানীয়দের কাছে যেমন ঐতিহ্য, ছায়া ও বিশ্রামের প্রতীক ছিল, পর্যটকদের কাছেও এটি এক ধরনের ঐতিহাসিক কৌতূহল। কিন্তু দীর্ঘদিন তেমন গাছটি অবহেলিত থাকায় গাছটির প্রতি তেমন কোনো নজর দেয়া হয়নি।
সম্প্রতি তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গাছটির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পাশাপাশি নেওয়া হয় ব্যতিক্রমী আলোকসজ্জার উদ্যোগ। এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা নামতেই গাছটি ভরে ওঠে নানা রঙের ঝলমলে আলোয়। দূর থেকে মনে হয়, যেন কোনো শিল্পকর্ম সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এই দৃশ্য পর্যটকদের নজর কেড়েছে দারুণভাবে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে আলোকিত তেঁতুল গাছের ছবি।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আব্দুর রহমান নামে এক পর্যটক বলেন,আগেও তেঁতুলিয়ায় এসেছিলাম, তখন এই তেঁতুল গাছ অবহেলিত অবস্থায় ছিল,তেমন কোন উদ্যােগ চোখে পড়েনি। এবার এসে দেখি একেবারে অন্যরকম রূপ। রাতে আলো জ্বললে মনে হয় না এটি সেই পুরোনো গাছ। বরং যেন নতুন এক সৃষ্টি। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক মালিয়া খানম জানান,তেঁতুলিয়ায় এসে প্রথমেই চোখে পড়েছে ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছটি। দিনের বেলায় সাধারণ মনে হলেও রাতে আলোকসজ্জার কারণে একেবারে অন্যরকম লাগে। অনেক ছবি তুলেছি।
স্থানীয়রা মনে করেন, এই উদ্যোগ শুধু একটি গাছকে আলোকিত করেনি, বরং তেঁতুলিয়ার পর্যটন খাতেও এনেছে নতুন মাত্রা।
পর্যটন নিয়ে কাজ করা তেঁতুলিয়ার নর্থবাংলা ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজমের পরিচালক আহসান হাবিব বলেন,এই ঐতিহাসিক গাছটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। উপজেলা প্রশাসন সেটিকে নতুন সাজে সাজিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। আমরা চাই, এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে তেঁতুলিয়ার পর্যটন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হোক।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন,ঐতিহাসিক তেঁতুল গাছটি এই অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্মৃতি বহন করে। দিনে মানুষ গাছের ছায়ায় বসে, আর রাতে আলোকসজ্জার কারণে উপভোগ করে ভিন্ন এক সৌন্দর্য। আমরা গাছটির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি এবং আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করেছি। পর্যটকরা এতে দারুণ আনন্দ পাচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, তেঁতুলিয়ার পর্যটনকে নতুন রূপ দিতে শুধু তেঁতুল গাছ নয়, পাশাপাশি আরও নানা প্রকল্প নেয়া হয়েছে।আমরা ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার ও মহানন্দা পার্ক ঢেলে সাজাচ্ছি। মহানন্দা নদীর ধারে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। শিশুদের জন্য নির্মিত হচ্ছে আলাদা পার্ক। আমরা চাই, তেঁতুলিয়া পর্যটকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গন্তব্য হয়ে উঠুক।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে রোগাক্রান্ত গরু জবাই করার পর একই গ্রামের অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে সাত জন গাইবান্ধা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আক্রান্তরা গাইবান্ধা রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম ও রাবেয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন- মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহবুর রহমান।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স আক্রান্তদের চিকিৎসা দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক ডা. মো. মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স জানান, সাত জন রোগীর শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদের হাতে, মুখে, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকা ও পচন ধরেছে। জ্বর, ব্যথা, ঘা ও চুলকানিতে ভুগছেন তারা। প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে আক্রান্তদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত বা রোগাক্রান্ত পশু থেকেই এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্তরা একটি অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটি কোনও ছোঁয়াচে রোগ নয়। আক্রান্তরা এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকেও জানানো হয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠবেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
কিশামত সদর গ্রামে বাসিন্দা বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. হাফিজার রহমান জানান, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গ্রামের মাহবুর রহমানের একটি অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামের অন্তত ১২০ জনের মধ্যে ভাগ করা হয়। জবাই ও মাংস কাটাকাটির কাজে ১০–১৫ জন সরাসরি যুক্ত ছিলেন। চার দিন পর থেকেই তাদের শরীরে ফোসকা ও ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে আক্রান্ত কয়েকজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শহরের ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪-৫ জন অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাইবান্ধা ও রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তাদের উপসর্গ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অ্যানথ্রাক্স।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোজাম্মেল হক জানান, পাশের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ ছিল, এখন সুন্দরগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘাঘট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা ও পৌরসভা এলাকায় এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় টিকা প্রদান চলছে।
তার ভাষায়, ‘আক্রান্ত পশু পরিচর্যা বা জবাই করলে মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। তবে মাংস খেলে এ রোগ ছড়ায় না। তাই কোনও অবস্থাতেই রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা যাবে না।’
এদিকে, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে এলাকায় লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি আক্রান্ত পশু জবাই না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টির অজুহাতে ফের দামে চড়া কৃষি নির্ভর সবজি উৎপাদনে সেরা জেলা মেহেরপুরের সবজির বাজার। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজি দাম।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
তবে কৃষকরা বলছেন, অতি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ফসল নষ্টের পাশাপাশি কমেছে উৎপাদন। তারপরও ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত।
আর সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টি কিংবা পূজা যেকোনো অযুহাত পেলেই চলবে। অটোমেটিক সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বলা কিংবা দেখার কেউ নেই।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার জেলার ঐতিহ্যবাহী সবজি বাজার বামন্দী বাজারে, প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৫০-৬০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ঝিঙা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৩৫-৪০ টাকায়, পাশাপাশি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, উস্তা ১২০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে,বাধা কপি ৬০ টাকা করে, আর সবচেয়ে আকাশ চুম্বি দামে বিক্রি হচ্ছে সাদা ও লাল আলতাপাটি আলু, আলতা পাটি লাল আলু ৩৫০ টাকা ও সাদা আলতাপাটি আলু ২৫০ টাকা কেজি, এবং আঞ্চলিক টমেটো ১৭০ টাকা,কাচ কলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা ইকবাল বলেন, পূজার ছুটির কারনে দেশের বাহির থেকে কাঁচামরিচ আমদানি কমে গেছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে এই এলাকার মাঠ থেকেও মরিচ কম উঠেছে। যার ফলে মরিচের দাম বেড়েছে।
সবজি বিক্রেতা নাঈম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাজারে দেশীয় সবজির সরবরাহও কিছুটা কম। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। তাছাড়া চাষিরা ক্ষেত থেকে সবজি কম সংগ্রহ করতে পারছে। সেজন্যও তারাও বাড়তি দাম ছাড়া সবজি দিতে চাইছে না।
বেগুন চাষি গোলাম হোসেন বলেন, বৃষ্টির সাথে বাতাস হওয়াই মাঠে এবার গাছ মরে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। তারপর বেগুনে প্রচুর পরিমাণে পোকা লাগছে। কিটনাশক প্রয়োগেও মিলছে না সমাধান।
যার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য দাম কিছুটা বেশি। আমরা বাজারে যে দামে বেগুন বিক্রি করে আসলাম। পরে শুনি তার দ্বিগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক সবজি চাষি আইনাল হক বলেন,বেশ কয়েকদিন বৃষ্টির সাথে বাতাস বইছে। বৃষ্টি আর বাতাস এক সাথে হলে ঝাল গাছের গোড়া নড়ে গিয়ে গাছ মারা যায়। যার ফলে গাছ বাচাতে গেলে মরিচ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যায়। তারপরও এখন বামন্দী বাজারে মরিচ পাইকারি বিক্রি করে আসলাম ২৫০ টাকা কেজি হিসেবে। আর এখন বাড়ি এসে শুনছি খুচরা কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা করে। আর বেগুন পাইকারি বিক্রি করলাম ৪০ টাকা করে। আর বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা করে। আমরা চাষিরা কষ্ট করেও ন্যায্য দাম পাইনি। অথচ ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কিনে আমাদের সামনেই ডবল দামে বিক্রি করছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত একটু বেশিই হয়েছে। অনেক মাঠে জলাবদ্ধতা আছে এটা ঠিক। তবে আমরা চাষিদের সব সময় বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে আসছি। এবং ফসলের রোগ বালায় দেখা দিলে তা থেকে কিভাবে প্রতিকার পাবে।