শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
২৬ আশ্বিন ১৪৩২

গাইবান্ধায় তৈরি হচ্ছে ধানের কুড়া থেকে ভোজ্য তেল সাশ্রয়ী মূল্য আর কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত

মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা
প্রকাশিত
মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা
প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:০০

গাইবান্ধায় ধানের কুড়া থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে ভোজ্য তেল। পুষ্টিগুনে ভরপুর এই তেল স্থানীয় বাজার ছাড়াও সরকারি সহায়তায় টিসিবির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করছে উৎপাদনকারী মিল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, এই তেল রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। শুধু তেলই নয়, কুড়া থেকে তেল নিষ্কাশনের পর অবশিষ্ট অংশকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য। ফলে ধানের কুড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে।

উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধানের কুড়ার তেল অন্যান্য সাধারণ ভোজ্য তেলের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এতে রয়েছে ওরিজানল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোলেস্টেরল কমায়। এই তেল প্রচুর ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে মনো ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জে মহিমাগঞ্জ এলাকার পুনতাইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে "প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিল"। অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সেখানে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। বিভাগ ভিত্তিক কর্মচারীরা কাজ করছে যান্ত্রিক মেশিনের সাথে সমান তালে। হাজার হাজার বস্তায় স্তুপ করা ধানের কুড়া। শ্রকিকরা বস্তাভর্তি ধানের কুড়া ঢেলে দিচ্ছেন মাটির নিচে স্থাপন করা কনভেয়ার নামক মেশিনে। সেখান থেকে কয়েকটি মেশিনের ধাপ পেরিয়ে সর্বশেষ রিফাইনারিতে যাচ্ছে ভোজ্য তেল।

সেকশান ভিত্তিক তেল উৎপাদন সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা দায়িত্বপালন করছেন অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে থেকে। উৎপাদনের একেবারে শেষ পর্যায়ে কোনো রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই বোতলজাত হচ্ছে এই তেল। যে সেকশানে কাজ করছে মিলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মচারী।

তেল ছাড়িয়ে অবশিষ্ট কুড়ার অংশ যাচ্ছে আলাদা এক সেকশানে। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে মৎস ও প্রাণি খাদ্য। সমান তালে লোড করা হচ্ছে ট্রাক। ওইসব ট্রাকে করে এই প্রাণি খাদ্যগুলো যায় দেশের নাম করা বিভিন্ন মৎস ও প্রাণি খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান ২০১৩ সালে ইন্ডিয়া থেকে কুড়া থেকে তেল উৎপাদনকারী একটি ক্যাপিটাল মেশিন নিয়ে এসে স্থাপন করেন। যেটির মাধ্যমে ২০১৬ সালে তেল উৎপাদনে শুরু করেন। একই বছর থেকে উৎপাদন করা অপরিশোধিত তেলের সিংহভাগ বিদেশে রপ্তানি শুরু করেন। তবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশে তেল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের মেশিনারী সেকশানের ইনচার্জ কমলকান্তিপাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, এখানে তেল উৎপাদনে কোনো হাতের স্পর্শ নেই। সকল প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, প্রথমে কুড়া কনভেয়ারের মাধ্যমে প্রেপ মেশিনে উঠানো হয়, এরপর সেটি স্টিভারের মাধ্যমে গুটি করে নেওয়া হয়। পরে সলভেন চাইনিজ মেশিনে বডি থেকে তেল করা হয়। সর্বশেষ তেলটি রিফাইনারিতে যায়। সেখানে ডাবল রিফাইন করে বোতলজাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

এটি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ এবং দামেও সাশ্রয়ী।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের প্যাকেজিং সেকশানের সুপারভাইজার আব্দুল মোত্তালিব বলেন, সারা দেশের অটো রাইচ মিল এবং সেমি অটো রাইচ মিল থেকে কুড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন কুড়া থেকে উৎপাদিত হচ্ছে এক লাখ ১০ হাজার লিটার অপরিশোধিত তেল। আর সেখান থেকে রিফাইন করা হচ্ছে ৪০ হাজার লিটার তেল। প্রতিলিটার তেল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

এসময় তিনি জানান, ধানের কুড়া থেকে শুধু তেলই উৎপাদন করা হচ্ছে না। তেল নিষ্কাশনের পর অবশিষ্ট অংশকে কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরি করা হচ্ছে মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য। যা ক্রয় করছেন দেশের নামকরা বড় বড় মৎস ও প্রাণীখাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো । ফলে ধানের কুড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এই শিল্পে।

তিনি আরও বলেন, এসবের উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিলে স্থানীয় ৩০০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও দামে সাশ্রয়ী হলেও প্রচারণার অভাবে এখনো আশানুরুপ সাড়া পড়েনি ভোক্তা পর্যায়ে। ২০১৬ সাল থেকে এই তেল বিদেশ রপ্তানি করা হতো বিশেষ করে ইন্ডিয়ায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রপ্তানি বন্ধের কথা জানানো হয়েছে। তবে তাদের সরকারি সহায়তায় টিসিবিতে তেল সরবরাহ করছি। যা উৎপানের তুলনায় অনেক কম।

তিনি বলেন, কৃষি-শিল্পভিত্তিক এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতি ছাড়াও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসচেতনতায়। এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগামী বছর হয়তো সেকশান-২ চালু করলে সেখানো আরো ১৫০০ থেকে ২০০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রচারণার অভাবে আমরা বিক্রিতে তেমন সাড়া পাচ্ছিনা।

এসময় দেশের ২০ টি রাইচ ব্রান অয়েল মিলকে টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ ও প্রচারণায় সরকারি সহায়তা চান তিনি। অন্যথায় ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই শিল্প মুখ থুবরে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানান এই স্বত্বাধিকারী।


মাগুরায় গোসল করতে গিয়ে একই পরিবারের ৩ কন্যা শিশুর মৃত্যু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের খালের পানিতে গোসলের সময় এক সাথে পানিতে ডুবে একই পরিবারের তিন কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এলাকায় শোকের মাতম চলছে।

মারা যাওয়া শিশুরা হলো মহম্মদপুর চাপাতলা গ্রামের তিন সহোদর আনারুলের মেয়ে তারিন (৯), সাজ্জাদের মেয়ে সিনথিয়া (৮) ও মো: তরীকুলের মেয়ে তানহা (৯) বছর।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজন জানান, শনিবার দুপুরে গোসলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে শিশু তিনটি বেরিয়ে যায়। পরে দুপুর ২টার দিকে চাপাতলা খালের পানিতে শিশু তিনটি গোসল করতে নামে। খালে প্রচন্ড গভীর ছিল এবং পানিতে প্রচুর স্রোত থাকায় তারা একে একে পানিতে ডুবে যায় । পানিতে পাট ধোয়ার কাজে ব্যাস্ত থাকা কয়েকজন হঠাৎ জানতে পারে একটি বাচ্চা পানিতে ডুবে গেছে । পরে তারা তাকে খুজে পায় এবং আরও জানতে পারে ২টি বাচ্চাকেউ পাওয়া যাচ্ছেনা। এর পর লোকজন পানিতে নেমে ৩টি শিশুকেই উদ্ধার করেন। দ্রুত তাদের মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরএমও ডা. আসাদুর রহমান তিনটি শিশুকেই মৃত ঘোষনা করেন।

স্থানীয় ও শিশুদের প্রতিবেশীরা বলেন, শিশু তিনটি সাতার জানতো তবে পানিতে প্রচন্ড স্রোত থাকায় এবং গভীরতা বেশি হওয়ায় তারা পানিতে ডুবে যায় এবং মারা যায় । ঘটনাটি নিয়ে মুহুর্তেই এলাকায় ও পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিষয়টি জেনেছি এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পেছনে কারও কোনো হাত না থাকলে এবং পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।


ভিক্ষুকের মৃত্যুর পরে ঘরে মিলল বস্তা ভর্তি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের দলাগাঁও গ্রামে এক ভিক্ষুকের মৃত্যুর পর তার ঘর থেকে মিলেছে এক বস্তা ভর্তি টাকা! এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নাসির মিয়া (৬৫) দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ৯ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরের দিন তার পরিবারের সদস্যরা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি বস্তা দেখতে পান। কৌতূহলবশত বস্তাটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকাভর্তি নোট। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের উপস্থিতিতে টাকা গুনে দেখা যায়, মোট ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা রয়েছে বস্তাটিতে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কেউ কেউ মনে করছেন, নাসির মিয়া জীবনের বহু বছর ধরে ভিক্ষা ও মানুষের দেয়া সাহায্যের টাকা অল্প অল্প করে জমিয়ে রেখেছিলেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি হয়তো কাউকে বিশ্বাস করতে না পেরে সেই টাকাগুলো ঘরেই লুকিয়ে রেখেছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাসির মিয়া ছিলেন অত্যন্ত মিতব্যয়ী ও সৎ মানুষ। কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এত টাকা তিনি ঘরে রেখে গেছেন, অথচ কেউ জানত না!

বহরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ঘটনাটি সত্যি এবং এটি পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না, একজন ভিক্ষুকের ঘরে এত টাকা থাকতে পারে!

ঘটনাটি এখন দলাগাঁও গ্রামসহ পুরো মাধবপুরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।


নবীনগরে প্রধান শিক্ষিকাকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটঘর (উত্তর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা পারভীন চাকরি জীবনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবসরে গেছেন। এই উপলক্ষে শনিবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী জাফর দস্তগীর।প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আতিক মাষ্টার ও মেজবা উদ্দিন।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তফা কামাল, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি পুলিশের উপপরিদর্শক নোমান মুন্সী, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী খান মাষ্টার,বিদায়ী প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা পারভীন ও তার স্বামী নুরুল আমিন মাষ্টার,বিটঘর (দক্ষিণ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগম,ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন সেলিম, মাহমুদ আক্তার, ইকবাল হোসেন, ডা. শামিম হাসনাইন ভূইঁয়া, ডা. সুমির সাহা, কামরুল হাসান শিমুল ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ রতন প্রমুখ।

বক্তারা বিদায়ী প্রধান শিক্ষিকার চার দশকের কর্মজীবনের নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অবদান তুলে ধরে তার আদর্শিক জীবনদর্শন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাগ্রহণের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠান শেষে রাজকীয় আয়োজনে ঘোড়ার গাড়িতে করে রেহেনা পারভীনকে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন। এ সময় উপস্থিত সবাই এক আবেগঘন পরিবেশে তাকে শেষ বিদায় জানান।


শিশুদের নোবেল পুরুস্কার পাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের সমাজকর্মী মাহবুব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাকিবুল হাসান রোকেল, কিশোরগঞ্জ

আন্তর্জাতিকভাবে শিশুদের ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের তরুণ সমাজকর্মী মাহবুব। তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু কার্যক্রম, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যসেবা এই তিনটি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছেন।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থা কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর শিশুদের অধিকার ও মানবতার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করা একজন শিশুকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ১৭২ জন শিশুকে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

১৭ বছর বয়সী মাহবুব কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা। শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজের উদ্দেশ্যে তিনি ২০২২ সালে ‘দি চ্যাঞ্জ বাংলাদেশ’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির মাধ্যমে তিনি শিশুদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, বৃক্ষরোপণ, এবং গাছের চারা, খাতা, কলম ও পেন্সিল বিতরণের মতো নানা উদ্যোগ পরিচালনা করছেন।

এছাড়া হাওর এলাকার শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায়ও তিনি নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।

শিশু অধিকার রক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ মাহবুব অসুস্থ শিশুদের রক্তের সংকট মোকাবিলায় ‘ব্লাড খুজি’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি শিশু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত জোগাড়ে সহায়তা করে থাকেন।

শুধু তাই নয়, হাওর অঞ্চলের শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের প্রেরণা সম্পর্কে মাহবুব বলেন, “শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে।”


নড়াইলে সংস্কৃতিক পরিষদ বাংলাদেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নড়াইল প্রতিনিধি

নানা আয়োজনে শনিবার সকালে নড়াইল জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে সংস্কৃতি পরিষদ বাংলাদেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে । অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের মধ্যে ছিল শিশুদের চিত্র প্রদর্শনী,সাধারণ সভা, প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক প্রতিবেদন উপস্থাপন,আলোচনা সভা। দ্বিতীয় অধিবেশনে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নড়াইলের সারেগামাপা সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে । সম্মেলনে সংস্কৃতি পরিষদের ১০১টি সঙ্গীত বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন ।

নড়াইল শিল্পকলা অ্যাকাডেমির খোলা মঞ্চে শিশুদের আকা শতাধিক ছবি প্রদর্শণ করা হয় । বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের শিষ্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান (ড্রইং ও পেইন্ট)শিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ।

পরে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে শুরু হয় সাধারণ সভা । সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অর্ধেন্দু ব্যাণার্জি সভায় সভাপতিত্ব করেন । সাধারণ সম্পাদক পান্নালাল দে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ।

অনুষ্ঠানে চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন,চারুকলা এবং সঙ্গীত অনেকটা একই সূত্রে গাথা । এই অনুষ্ঠানে শিশুদের আকা ছবি গুরুত্ব বহন করে । তিনি বলেন,বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানের পরবর্তী প্রজন্ম বর্তমানে চারুকলা এবং সঙ্গীতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । দেশের বিভিন্ন জেলাসহ সমাজের তৃণমুল প্রান্তে গড়ে উঠছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান । তিনি মনে করেন,দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সন্তানরা এদিক থেকে এগিয়ে আছে । ছোটরা ক্যানভাসে ছবি আকছে । নড়াইলের শিল্পাঞ্জলীর শিশুরা পাচ বছর ধরে ৬ হাজার বর্গফুট ছবি একেছে ফেলেছে । যা ওয়েবসাইটে যাবার পথে ।

তিনি বলেন, দেশের নাম করা প্রতিষ্ঠান সঙস্কৃতি পরিষদ বাংলাদেশ নড়াইলে এমন একটি প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান করেছে এর গুরুত্ব বহন করে ।


কুঁচিয়া মাছ ধরতে ‘রুহুঙ্গা’ ফাঁদ; বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সালাহউদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির পানিতে খেতের আইলে,খালে ও বিলে কুঁচিয়া (কুইচ্চা) শিকারীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। শিকারীরা (ফাঁদ) পেতে রাখছেন এসব স্থানে। কুঁচিয়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। পরিবারের ভাত-কাপড়ের জোগান আসে প্রাকৃতিক উৎসের এই মাছ কুঁচিয়া ধরেই। মাছটির নাম ‘কুঁচিয়া’ হলেও বিভিন্ন স্থানে কুঁইচা, কুইচ্চা, কুঁচে, কুঁচো নামেও পরিচিতি আছে। কুঁচিয়া মাছ ধরার ফাঁদটির নাম ‘রুহুঙ্গা’। এটি বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি। এটি দেখতে অনেকটা মাছ ধরার চাঁইয়ের মতো হলেও চাঁই না। তবে কোনো কোনো এলাকায় এই ফাঁদকে ‘উকা’ নামেও ডাকা হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ এলাকা ১৫০টির ও অধিক রুহুঙ্গা নিয়ে এসেছেন শিকারীরা। আগের দিন বেলা তিনটা থেকে চারটার দিকে স্যাঁতসেঁতে জমি, খালের যেখানে কিছু পানি লেগে আছে; তেমন স্থানে কেঁচো টোপ দিয়ে রুহুঙ্গা পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। সারা রাত এগুলো ওই জায়গাতেই থাকে। জিরের টোপ খেতে এসে রুহুঙ্গার ফাঁদে আটকা পড়ে কুঁচিয়া। আর বের হতে পারে না। পরদিন সকাল ৬টার দিকে এসে রুহুঙ্গা তোলেন শিকারীরা। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি রুহুঙ্গা পেতে রাখেন তারা। সব কটিতেই কুঁচিয়া ধরা পড়ে না। কোনো কোনো দিন অনেকগুলো কুঁচিয়া পাওয়া যায়, কোনো কোনো দিন কম। তবে খালি হাতে কোনো দিনই বাড়ি ফিরতে হয় না তাদের। কুঁচিয়াগুলোকে জীবিত রাখতে ড্রামের মধ্যে পানিতে রাখা হয়। সপ্তাহে দুই দিন পাইকার এসে বাড়ি থেকে তা নিয়ে যান। এক কেজি কুঁচিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি করেন।

কুঁচিয়া অনেকটা বাইম মাছের মতো। সাধারণত পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল বা ধানখেতের তলদেশে, মাটির গর্তে এগুলো থাকে। স্থানীয় মানুষের খাদ্যতালিকায় মাছটি না থাকলেও বিদেশে এই মাছের বেশ চাহিদা আছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে এই মাছ সংগ্রহ করে তাদের মতো অনেকেই বিক্রি করেন।

কুঁচিয়া শিকারী নিকলেস সরকার বলেন, ‘কুঁচিয়া ধরায় কষ্টও আছে। জির (কেঁচো) তোলা, এগুলা (রুহুঙ্গা) বিভিন্ন জায়গায় নিয়া (নিয়ে) পাতানি (পাতানো)। কোনো মাসে ভালো চলা যায় আবার কোনো মাসে অয় (হয়) না। ওটার (কুঁচিয়া বিক্রি) আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। কুঁচিয়া মাছ ধরতে কোনো বাধা নাই। মাঝেমধ্যে নিজেও খাই। খুব স্বাদ।’

স্থানীয় বাসিন্দারা অরুন মল্লিক জানান, অনেকটা বাইম মাছের মতো কুঁচিয়া। সাধারণত পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল বা ধানখেতের তলদেশে, মাটির গর্তে এগুলো থাকে। স্থানীয় মানুষের খাদ্যতালিকায় মাছটি না থাকলেও বিদেশে এই মাছের বেশ চাহিদা আছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে এই মাছ সংগ্রহ করে সমীরণের মতো অনেকেই বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা ৪ মাস হয়েছে শিকারীরা বাসা বাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বিকাল হলে জীবিকা নির্বাহের জন্য এলাকার বিভিন্ন খালে বিলে শিকারীরা রুহুঙ্গা নিয়ে এসে কুঁচিয়া শিকার করেন। এসব বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়।

শ্রীমঙ্গল থেকে আসা পাইকার সমিরন শীল বলেন, আমি সম্পাতে ২বার শিকারীদের কাছ থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করি। মূলত স্থানীয় বাজারেই তা বিক্রি করি। তাদের কাছ থেকে ২৫০-৩০০টাকা কেজি ধরে ক্রয় করে থাকি। ১০-২০ টাকা লাভে খুচরা বাজারে বিক্রি করে ফেলি।


জনবল সংকটে ধুঁকছে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

৩১ চিকিৎসকের স্থলে কাজ করছেন ৪ জন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাসরিন সিপু, বরগুনা

বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চরম জনবল সংকটে পড়েছে। উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের একমাত্র ভরসার এই সরকারি হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার জন্য ৩১ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। ফলে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে ধার-কর্জ করে পটুয়াখালী, বরিশাল বা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় আবুল কালাম বলেন, ‘গত বছর মেয়ে অসুস্থ হইলে কিস্তি কইরা বরিশাল নিয়া চিকিৎসা করাইতে হইছে। গরিব মানুষরে চিকিৎসা নেই, আমরা নাপা খাইয়া ঘরে বইসা থাকি।’

উপজেলা সদর ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর বাজারে একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারে ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী বাজারে একটি করে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে এসব কেন্দ্র কার্যত অচল।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি চিকিৎসাসেবাও দিচ্ছেন।

চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি কর্মচারী সংকটও ভয়াবহ। হাসপাতালের ৮৮টি তৃতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে ৫২টি, ৩৪টি চতুর্থ শ্রেণির পদের মধ্যে ১৬টি শূন্য। ফলে প্রশাসনিক কাজ, পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা অভিযোগ করেন, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। কিছু নার্সের অসৌজন্যমূলক আচরণ রোগীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।

জনবল না থাকার কারণে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি অচল। প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বা অন্য জেলায় রেফার হচ্ছেন। ফলে উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি বোঝা তৈরি হচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মী জোসেফ মাহতাব বলেন, আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট কেবল প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক সংকট। তবে আমতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিলে মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। এখানে চিকিৎসাসেবা শক্তিশালী করা মানে শুধু হাসপাতাল সচল রাখা নয়, এটি মানুষের মানবিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয় ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে জরুরি বিভাগসহ সব দিক সামলাতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক চেয়েছি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ জানান, আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছি এবং দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের জন্য অনুরোধ করেছি।


গাইবান্ধায় ধানের কুড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

সাশ্রয়ী মূল্য আর কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা

গাইবান্ধায় ধানের কুড়া থেকে উৎপাদন হচ্ছে ভোজ্যতেল। পুষ্টিগুনে ভরপুর এ তেল স্থানীয় বাজার ছাড়াও সরকারি সহায়তায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে সরবরাহ করছে উৎপাদনকারী মিল কর্তৃপক্ষ। এই তেল রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। এছাড়াও কুড়া থেকে তেল নিষ্কাশনের পর অবশিষ্ট অংশকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য। ফলে ধানের কুড়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে।

উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধানের কুড়ার তেল অন্যান্য সাধারণ ভোজ্যতেলের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। এতে রয়েছে ওরিজানল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোলেস্টেরল কমায়। এই তেল প্রচুর ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে মনো ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জে মহিমাগঞ্জ এলাকার পুনতাইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ‘প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিল’। অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সেখানে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। বিভাগ ভিত্তিক কর্মচারীরা কাজ করছে যান্ত্রিক মেশিনের সাথে সমান তালে। হাজার হাজার বস্তায় স্তুপ করা ধানের কুড়া। শ্রকিকরা বস্তাভর্তি ধানের কুড়া ঢেলে দিচ্ছেন মাটির নিচে স্থাপন করা কনভেয়ার নামক মেশিনে। সেখান থেকে কয়েকটি মেশিনের ধাপ পেরিয়ে সর্বশেষ রিফাইনারিতে যাচ্ছে ভোজ্যতেল।

সেকশানভিত্তিক তেল উৎপাদন সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ান কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা দায়িত্বপালন করছেন অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে থেকে। উৎপাদনের একেবারে শেষ পর্যায়ে কোনো রকম হাতের স্পর্শ ছাড়াই বোতলজাত হচ্ছে এই তেল। যে সেকশানে কাজ করছে মিলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মচারী।

তেল ছাড়িয়ে অবশিষ্ট কুড়ার অংশ যাচ্ছে আলাদা এক সেকশানে। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে মৎস ও প্রাণি খাদ্য। সমান তালে লোড করা হচ্ছে ট্রাক। ওইসব ট্রাকে করে এই প্রাণি খাদ্যগুলো যায় দেশের নাম করা বিভিন্ন মৎস ও প্রাণি খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান ২০১৩ সালে ইন্ডিয়া থেকে কুড়া থেকে তেল উৎপাদনকারী একটি ক্যাপিটাল মেশিন নিয়ে এসে স্থাপন করেন। যেটির মাধ্যমে ২০১৬ সালে তেল উৎপাদনে শুরু করেন। একই বছর থেকে উৎপাদন করা অপরিশোধিত তেলের সিংহভাগ বিদেশে রপ্তানি শুরু করেন। তবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশে তেল রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের মেশিনারী সেকশানের ইনচার্জ কমলকান্তিপাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, এখানে তেল উৎপাদনে কোনো হাতের স্পর্শ নেই। সকল প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এটি পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ এবং দামেও সাশ্রয়ী।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের প্যাকেজিং সেকশানের সুপারভাইজার আব্দুল মোত্তালিব বলেন, সারা দেশের অটো রাইচ মিল এবং সেমি অটো রাইচ মিল থেকে কুড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন কুড়া থেকে উৎপাদিত হচ্ছে এক লাখ ১০ হাজার লিটার অপরিশোধিত তেল। আর সেখান থেকে রিফাইন করা হচ্ছে ৪০ হাজার লিটার তেল। প্রতিলিটার তেল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, এসবের উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিলে স্থানীয় ৩০০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে।

প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিলের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও দামে সাশ্রয়ী হলেও প্রচারণার অভাবে এখনো আশানুরুপ সাড়া পড়েনি ভোক্তা পর্যায়ে। ২০১৬ সাল থেকে এই তেল বিদেশ রপ্তানি করা হতো বিশেষ করে ইন্ডিয়ায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রপ্তানি বন্ধের কথা জানানো হয়েছে। তবে তাদের সরকারি সহায়তায় টিসিবিতে তেল সরবরাহ করছি। যা উৎপানের তুলনায় অনেক কম।

তিনি বলেন, কৃষি-শিল্পভিত্তিক এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতি ছাড়াও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতায়। এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগামী বছর হয়তো সেকশান-২ চালু করলে সেখানো আরো ১৫০০ থেকে ২০০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু প্রচারণার অভাবে আমরা বিক্রিতে তেমন সাড়া পাচ্ছি না।

এসময় দেশের ২০টি রাইচ ব্রান অয়েল মিলকে টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ ও প্রচারণায় সরকারি সহায়তা চান তিনি। অন্যথায় ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই শিল্প মুখ থুবরে পড়ার আশঙ্কার কথাও জানান এই স্বত্বাধিকারী।


কাঁকড়া বিক্রি করে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেল প্রবাস ফেরত জোনায়েদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তরিকুল ইসলাম তরুন, কুমিল্লা দক্ষিণ

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের ফল ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম মিয়ার পুত্র জোনায়েদ অর্থের অভাবে তেমন লেখা পড়ায় আগাতে পারেনি। জোনায়েদ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জুনিয়র পরিক্ষা দিয়ে নবম শ্রেণিতে উঠলেও অভাব অনটনে কারণে আর লেখাপড়া চালাতে পারেনি। পরে আর্থিক স্বচ্ছলতা করারে আশায় প্রবাসে পাড়ি জমায়। বিদেশের মাটিতে গিয়েও ভাগ্যের পরিহাসে ভালো চাকরি না পাওয়ার পাশাপাশি আকামা জটিলতার কারণে বাংলাদেশে ফিরে আসে তিনি। জোনায়েদের পরিবারে রয়েছে ৬ বোন এবং দুভাই। জোনায়েদের বাবা সেলিম মিয়াকে সংসারে সবার খাবার জোগাতে হিমসিম খেতে হয়। বাবার অভাবের সংসারে অর্থ যোগান দিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাস ফেরত জোনায়েদ বেছে নেয় কাঁকড়া ব্যবসা।

জোনায়েদ এবিষয়ে তার জীবন কাহিনী বর্ননা দিতে গিয়ে চোখের জল ছেড়ে দেন। জোনায়েদ ৬০ কেজি দেশীয় কাঁকড়া নিয়ে তার কাছের বন্ধু কাঁকড়া ব্যবসায়ী উজ্জ্বলকে সাথে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার উদ্দেশ্য আসে। দুই বন্ধু কুমিল্লা নগরীর মধ্যে দুটি পয়েন্ট বেছে নিয়ে উজ্জল ৬০ কেজি দেশীয় কাঁকড়া নিয়ে ক্যান্টনম্যানের দিকে চলে যায়। আর জোনায়েদ ৬০ কেজি কাঁকড়া নিয়ে চলে আসে কান্দিড়পাড়। জোনায়েদ কান্দিড়পাড় টাউন হলের গেইটের পূর্ব পাশে বসে কাঁকড়ার ব্যাগ খুলতেই ক্রেতাদের ভীড় জমে যায় বলে জোনায়েদ জানান।

কাঁকড়া বিক্রি ও সংরক্ষণ বিষয়ে জোনায়েদ বলেন, নবীনগর উপজেলার কৃষ্টপুর এলাকায় তার বাড়ি আর এসব কাঁকড়া পাগলা নদীর প্রাকৃতিক দেশীয় প্রজাতির।

তিনি আরো বলেন, নদীতে জেলেরা মাছ ধরার সময় মাছের সাথে জালে আটকা পড়ে এসব কাঁকড়া। তখন জেলেরা এসব কাঁকড়া সংরক্ষণ করে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করে।

জোনায়েদ বলেন, আমরা তিন বন্ধু প্রথমে তাদের সাথে কাঁকড়া বিক্রি বিষয় নিয়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেই নবীনগর থেকে কাঁকড়া ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে খুচরা বিক্রি করব। তাই সেদিন তৃতীয় দিন বিক্রি করতে এসেছেন কুমিল্লা নগরীতে।

কাঁকড়া বিক্রি প্রসঙ্গে জোনায়েদ বলেন, এখানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে কতক্ষণেই অর্ধেক বিক্রি শেষ।

এ বিষয়ে ইসলামী চিন্তা বিদদের মতে মুসলিমদের জন্য কাঁকড়া খাওয়া হালাল নয়, খাওয়া যায় তা মাকরু হিসাবে গণ্য হবে।

কাঁকড়ার বিষয়ে প্রাণীবিদরা যা বলছেন, কাঁকড়া যে কোনো দিকে হাঁটতে পারে কিন্তু হাঁটতে এবং পাশ দিয়ে দৌঁড়াতে পছন্দ করে। কাঁকড়া হল ডেকাপড, যার মানে তাদের দশ পা আছে। স্ত্রী কাঁকড়া একবারে ১০০০ থেকে ২০০০ডিম পাড়তে পারে। একটি ছোট কাঁকড়ার গড় আয়ু ৩-৪ বছর, কিন্তু বড় প্রজাতি যেমন জাপানি মাকড়সা কাঁকড়া ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।


২৩ বছর কারাভোগের পর নতুন জীবনে নওগাঁর ইসমাইল

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সাথে ইসমাইল।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সবুজ হোসেন, নওগাঁ

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন। ইসমাইলের বাবা ছিলেন একজন গ্রাম পুলিশ। গরিব পরিবারের সন্তান ইসমাইল হোসেন কলমুডাঙ্গা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন নৈশ্যপ্রহরী ছিলেন। নিজের শরিকানদের সঙ্গে সামান্য জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল ইসমাইলের পরিবারের। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে শরিকানরা ইসমাইলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে মিথ্যে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলার আসামি হিসেবে ইসমাইলকে আটক করে ২০০০ সালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

ইসমাইলের গরিব পরিবার অর্থের অভাবে তার জন্য একজন উকিল নিযুক্ত করতে পারেনি। ফলে ২০০৩ সালে আদালত ইসমাইলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এরপর থেকে জেলখানার চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি থাকার ২৩ বছর ৩ মাস ৭ দিন পর গত বছরের ডিসেম্বরের ১৫ মুক্ত হয় ইসমাইল। এই দীর্ঘ সময়ে ইসমাইল তার বাবাসহ পরিবারের অনেককেই হারিয়ে ফেললেও নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের জেলখানা পরিদর্শনে পাল্টে যায় জীবনের সবকিছু। জেলখানার মাঝে ইসমাইলকে দেওয়া জেলা প্রশাসকের প্রতিশ্রুতি একজন সব হারানো কয়েদী ইসমাইলকে নতুন করে বেঁচে থাকার রঙিন স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়। মুক্তির দিনে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পুর্নবাসনের উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ভ্যানগাড়িও জীবন সংসারের চালিকা শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ইসমাইল নতুন জীবন সঙ্গিকে সাথে নিয়ে সংসার সাজানো আর গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সম্প্রতি সেই ইসমাইলকে নিয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের আবেগঘন অনুভূতির কথা লেখেন। সেই লেখাটি হচ্ছে- জীবন বড় বিচিত্র। ছবিতে যাদের সঙ্গে কথা বলছি, ছবি তুলছি তারা ইসমাইল দম্পতি। এই সেই ইসমাইল যার ২৬ বছর জেল হয়েছিল। নওগাঁতে দায়িত্ব গ্রহণের পর জেলখানা পরিদর্শনের প্রথম দিন সাহস করে সে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার পুনর্বাসনের আবদার করে। সেদিন কথা দিয়েছিলাম তার মুক্ত হওয়ার দিন পর্যন্ত আমি যদি নওগাঁতে অবস্থান করি তবে অবশ্যই তার আবদার বিবেচনা করব। কাঙ্ক্ষিত মুক্তির দিনে ইসমাইল আর কোথাও যায়নি, যাবেই বা কোথায়? সেদিন সে সোজা চলে এসেছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তার আবদার বৃথা যায়নি। তার সকল কিছু পর্যালোচনা করে নতুন জীবনে ফিরে আনার চেষ্টা করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সফল হয়েছে কি না, বলা মুশকিল। তবে ইসমাইল নতুন জীবনে ফিরেছে। বিয়ে করেছে ইসমাইল। দাপ্তরিক চাপে, তার বিয়েতে যেতে পারিনি। তাই সে সস্ত্রীক জেলা প্রশাসনকে তার নববধূকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আজ এসেছিল। তাকে এবং নববধূকে যখন মিষ্টিমুখ করাচ্ছিলাম, যখন তাকে ফুল দিয়ে বরণ করছিলাম তখন দেখলাম তার চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার এমন ভাষা যা সে প্রকাশ করতে পারল না। হয়তো আরও কিছু দাবি ছিল আমার কাছে কিন্তু কৃতজ্ঞতার ভাষায় তার মনের কথা অব্যক্তই থেকে গেল। কিন্তু আমি বুঝে নিয়েছি তার মনের কথা, সে আমার আজন্ম সাথী হয়ে থাকতে চায়। তার স্ত্রীকে শুধু বললাম আশীর্বাদ, দোয়া, ভালোবাসা এগুলো দেখানোর জিনিস না। যে ইসমাইল তার যৌবনের পুরোটা সময় চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দি রেখেছিল সেই ইসমাইল তার বাকি জীবন তার প্রিয় সঙ্গিণীর সঙ্গে হেসে খেলে আনন্দে কাটাক এ প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। ইসমাইলকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছি যাতে ভবিষ্যতে বিপদের সময় আর কারও কাছে তার মুখাপেক্ষী হতে না হয়। আমাদের ইসমাইলের জন্য সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী। ইসমাইলের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আমাদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা দারুণ ভূমিকা রেখেছে। ইসমাইল আমার প্রতি যে কৃতজ্ঞতা পোষণ করেছে, তার চোখে-মুখে যে অস্ফুট উচ্চারণ তার ভাগীদার আমার প্রিয় সহকর্মীরা। ভালো থাকুক ইসমাইল, ভালো থাকুক আমাদের প্রিয় মানুষগুলো। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সম্পর্কে ইসমাইল হোসেন তার অনুভতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল স্যার ভালো মনের একজন মানুষ। স্যার তাকে সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মোড়ে ছয়শতক জমি দিয়েছেন বলেও জানান। তবে, সামর্থ না থাকার কারণে সেখানে এখনো ঘর নির্মাণ করতে পারেননি বললেন ইসমাইল। বর্তমানে ইসমাইল সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ভেলাকুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়িতে নতুন বউকে নিয়ে বসবাস করছেন।


জীবন সংগ্রামে দাউদকান্দির অর্ধশতাধিক প্রান্তিক মুচিরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌর এলাকার ব্যস্ত বাজারের এক কোণে বসে আছে কয়েক প্রজন্মের শ্রমের গল্প। এই বাজারে এখনো টিকে আছেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন পাদুকা মেরামত কারিগর। যাদের জীবন চলছে এক অনিশ্চিত ছন্দে। সমাজের প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীকে কেউ বিশেষভাবে মনে রাখে না। তাদের খোঁজ নেয় না কোনো সংস্থা বা সরকারি দপ্তর। তবুও তারা কাজ থামাননি। কারণ, জীবন থামেনি তাদের জন্য।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ পায়ের জুতা সেলাই করেন, কেউ পুরনো স্যান্ডেল নতুন করে জোড়া লাগান। একসময় দাউদকান্দির প্রায় প্রতিটি বাজারেই মুচিদের দেখা মিলত, এখন সেই সংখ্যা দ্রুত কমে এসেছে।
বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশা এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আধুনিক জুতার দোকানের জন্য কারিগরদের চাহিদা যেমন কমছে, তেমনি আয়ও ক্রমেই সীমিত হয়ে পড়ছে।
তাদের জীবনযাপন প্রায় সব দিক থেকেই বঞ্চনার প্রতীক। শিক্ষার আলো তেমনভাবে ছুঁতে পারেনি এই সম্প্রদায়কে। সন্তানদের বেশিরভাগই অন্য পেশায় যেতে চায়, কারণ তারা জানে পাদুকা মেরামতের কাজে টিকে থাকা মানে অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুদ্ধ করা। তবুও কারিগরদের কেউ কেউ এখনো এই পুরনো পেশাকেই আঁকড়ে আছেন। কারণ এটিই তাদের পরিচয়। এটিই তাদের জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই জুতা মেরামত করেন স্বপন সাহা। তিনি বলেন আমরা জীবিকার সাথে সংগ্রাম করেই কোনমতে টিকে আছি। আমাদের সরকারী সহায়তা নেই। ঘরে পর্যাপ্ত খাবার নেই। যেদিন কাজ করি সেদিন খাবার জুটে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে জীবন চলে কোনোরকমে সেখানে সন্তানদের পড়াশোনা আমাদের জন্য এক রকম বিলাসিতা।
পরিমল নামে আরেক পাদুকা মেরামতকারী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এ পেশায় জড়িত। অন্য কোনো কাজ শেখা হয়নি। আগের মত নেই ব্যবসা। সম্মান না থাকায় এবং আয় কমে যাওয়ায় সন্তানরা এ পেশায় আসতে আগ্রহী নয়।
বহু বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে স্থানীয় পৌর প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে তাদের কর্মস্থলে নির্মিত হয়েছে ছাউনি। ছোট এই উদ্যোগ তাদের জীবনে এনে দিয়েছে বড় স্বস্তি। ঝড়বৃষ্টি এলে এখন আর কাজ বন্ধ রাখতে হয় না, মাথার উপর আছে একটি নিরাপদ আশ্রয়।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন সুমন বলেন, তারা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘদিন পর তাদের মাথার উপর ছাউনি নির্মাণ করে দিতে পেরে নিজের দায় কিছুটা পরিশোধ করেছি। শিক্ষাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে তাদের সমাজের মূল স্রোত ধারায় যুক্ত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
কিন্তু সমস্যার শেষ এখানেই নয়। জীবিকা অনিশ্চিত, আয় সামান্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ সীমিত। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তাদের জীবনে তেমনভাবে পৌঁছায়নি। বাজারে বসে তারা প্রতিদিন মানুষের ভাঙা জুতা মেরামত করেন, কিন্তু নিজেদের ভাঙা জীবনের জোড়া মেলানোর কোনো উপায় খুঁজে পান না।
দাউদকান্দির স্থানীয়রা মনে করেন, এই পেশাটি শুধু জীবিকা নয়—এটি ঐতিহ্যের অংশ। মুচিরা সমাজের নীরব কর্মযোদ্ধা, যারা বিনিময়ে খুব বেশি কিছু আশা করেন না। অথচ তাদের উপস্থিতি ছাড়া সমাজের একটি মৌলিক চাহিদাই অপূর্ণ থেকে যায়।
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই স্থানে বসে কাজ করছেন এই মুচি সম্প্রদায়ের সদস্যরা। সরকারি নজরদারির অভাবে তারা ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছেন। তবুও নিরবে, নিয়মিতভাবে তারা মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের হাতের ছোঁয়ায় পুরনো জুতা নতুন রূপ পায়, কিন্তু তাদের নিজের জীবনে আসে না নতুন কোনো ভোর।
তাদের গল্প আসলে টিকে থাকার গল্প—অভিযোগহীন, অনুযোগহীন এক শ্রেণির মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস। তারা সমাজের অবহেলিত প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন প্রমাণ করে চলেছেন, সামান্য আয়, ভাঙা যন্ত্রপাতি আর জীর্ণ ঘর নিয়েও বেঁচে থাকা যায় সম্মানের সঙ্গে, যদি থাকে পরিশ্রম ও স্থিতির বিশ্বাস।


বাবর আলী ও তানভীর হোসাইন এর সাথে মাউন্ট মানাসলু এর শীর্ষে দেশের অন্যতম এডহেসিভ ব্র্যান্ড স্যাম বন্ড

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের গর্বিত পর্বতারোহী বাবর আলী ও তানভীর হোসেন সফলভাবে আরোহন করেছেন বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত মাউন্ট মানাসলু (উচ্চতা ৮,১৬৩ মিটার)। এই অভিযানে তাদের সহযোগী ও স্পন্সর হিসেবে ছিল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এডহেসিভ ব্র্যান্ড স্যাম-বন্ড।
“জোড়ায় শতভাগ আস্থা”— এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে স্যাম-বন্ড বিশ্বাস করে, প্রকৃত শক্তির প্রকাশ শুধু পণ্যের মানেই নয়, বরং সেই মানসিক দৃঢ়তায়, যা মানুষকে অসম্ভবকে সম্ভব করতে উদ্বুদ্ধ করে। বাবর আলী ও তানভীর হোসেনের এই অভিযাত্রা সেই দৃঢ় মানসিকতা ও সাহসিকতার এক অনন্য প্রতীক।
স্যামুদা স্পেক-কেম লিমিটেড ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের কেমিক্যাল ও আঠা শিল্পে নির্ভরযোগ্য নাম। ২০২১ সালে স্যাম-বন্ড ব্র্যান্ডের সূচনা হয়, যা অল্প সময়ের মধ্যেই আঠা, থিনার, উড ল্যাকার এবং DOP বাজারে শীর্ষস্থান দখল করেছে।
এই অভিযানের মাধ্যমে স্যাম-বন্ড শুধু একটি ব্র্যান্ড নয়, বরং দেশের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। মাউন্ট মানাসলু অভিযানে বাবর ও তানভীরের সাফল্য বাংলাদেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে এবং মেইড ইন বাংলাদেশ চেতনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ।
স্যাম-বন্ড পরিবার আশা করছে তাদের এই অর্জন দেশের তরুণ সমাজকে আরও সাহসী ও ইতিবাচক স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করবে।


বিষমুক্ত টমেটো চাষে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক ইয়াকুব আলী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সালাহ্উদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় শীতকালীন বিষমুক্ত টমেটো চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। কম পুঁজিতে লাভজনক টমেটো চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তাই শীত মৌসুমের মধ্যকালীন আগাম শাক-সবজির পাশাপাশি উন্নত জাতের টমেটো চাষ বাড়ছে। উপজেলার পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের নগর গ্রামে অনেকেই ৮০-৯০ দিনের টমেটো চাষে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলার মাধবপুর, মুন্সিবাজার, আদমপুর, আলীনগর ও ইসলামপুর গ্রামের বিভিন্ন জমিতে দেখা যায় বিষমুক্ত টমেটোর আবাদ। ক্ষেতজুড়ে সারিসারি গাছে থোকায় থোকায় ছোট-বড় টমেটোর সমারোহ। অসংখ্য টমেটো পরিপক্ক হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই ক্ষেতে সুস্বাদু এসব টমেটো পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি শুরু হবে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ইয়াকুব আলী এই সাফল্য এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারণে আগ্রহী। শুধু আর্থিক লাভ নয়, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও সরকারি সহায়তার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কিভাবে কৃষি খাতে পরিবর্তন আনা যায়- ইয়াকুব আলীর বাগান এখন তারই জীবন্ত উদাহরন। কৃষক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘৬০ শতাংশ জমিতে টমেটো ও বেগুন চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা। ফুল-ফলনে তার জমি এখন ভরপুর। আশা করছেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে উৎপাদিত টাটকা বিষমুক্ত টমেটো বাজারজাত শুরু হবে। বর্তমানে টমেটোর বাজার মূল্য ১২০-১৩০টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। এতে করে খরচ বাদে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তার মুনাফা হবে বলে জানিয়েছেন।
সবজির আবাদ খুবই লাভজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষিতে তেমন লাভ নেই এমন যারা বলেন, তাদের এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সঠিক পদ্ধতি জেনে চাষাবাদ করলে অবশ্যই কৃষিতে মুনাফা হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘গত কয়েক বছরে টমেটোর বাজার সন্তোষজনক হওয়ায় চাষ বাড়ছে। আমন ধান ওঠার পর পরই শীতের আগাম জাতের টমেটো উৎপাদন করা যায়। স্থানীয় বাজারে প্রথম দফায় বেশি দাম পেয়ে বেশ লাভবান হন কৃষকরা। গাছে গাছে ফলনও সন্তোষজনক। তাই টমেটো বিক্রি করে ভালো আয়ের আশা করছেন কৃষকরা। লাভের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাষিদের উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের টমেটো চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’


banner close