আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা সামাল দিতে সরকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গ্যাস ও তিনটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলে বন্ধ রাখা হবে ডিজেল ও ফারনেস তেলভিত্তিক এবং ছোট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে সরকারকে চিন্তায় পড়তে হবে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। এ কারণে সরকার তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখে লোডশেডিং করে। চাহিদার অন্তত ২৫ শতাংশ লোডশেড বা কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে জনজীবন। এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি বন্ধে এবারই বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘২০২৩ সালের গ্রীষ্মে লোডশেডিং না করার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। ইউনিক মেঘনাঘাট, সামিট মেঘনাঘাট, রিলায়েন্স মেঘনাঘাট, রামপাল, আদানি এবং এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আনা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের পরিকল্পনা আছে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনা। সেটি করা গেলে আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং থাকবে না।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় ফারনেস ও ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে অনেক কম। এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয়ও কমে আসবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালানোর প্রয়োজন হবে না। এসবের পাশাপাশি দেশীয় গ্যাসেরও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৪৬টি কূপ খনন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কূপ খনন করে গ্যাসও পাওয়া গেছে। আশা করছি আগামী গ্রীষ্মে এসব পরিকল্পনা কাজে দেবে, মানুষ স্বস্তিতে থাকবে।
ছয় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র সাশ্রয়ী হবে
পিডিবির প্রকৌশলীরা দৈনিক বাংলাকে জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার। কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আগামী জুনে কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিকের ৫৮৪ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে। এতে স্থানীয় দুটি বিনিয়োগকারী সংস্থা ছাড়াও বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক ও কাতারের সরকারি সংস্থা নিবরাস পাওয়ার। প্রকল্পটিতে ঋণ দিয়েছে চীনের এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইইবি), সুইজারল্যান্ড সরকারের এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি, এসইআরভি-এর গ্যারান্টির আওতায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ১৩টি পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশ বা ওপেকভুক্ত দেশ নিয়ে গঠিত ওপেক তহবিল এবং জাপানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিইজি।
সামিট মেঘনাঘাট গ্যাসভিত্তিক ৫৮৪ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির নির্মাণকাজও শেষের দিকে। এ কেন্দ্রটি আগামী জুনে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এটি সামিট ও জাপানের জেরার যৌথ অংশীদারত্ব রয়েছে। এই প্রকল্পটিতে ঋণ দিয়েছে সুইজারল্যান্ড সরকারের এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি, এসইআরভি-এর গ্যারান্টির আওতায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। কেন্দ্রটি0 নির্মাণে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
ভারতের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স মেঘনাঘাটে ৭১৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। রিলায়েন্সের সঙ্গে এটির মালিকানায় জাপানের জেরা রয়েছে। কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী জুনে এটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে।
আগামী জুনে যেসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে সেগুলো বিদ্যমান গ্যাসব্যবস্থার আওতায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ইউনিক ও সামিটের কেন্দ্র দুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) নাইনএইচএ টারবাইন ব্যবহার হবে, যা সংক্ষেপে এইচ ক্লাস বলা হয়ে থাকে। জিইর নাইনএইচএ টারবাইনের দক্ষতা ৬৪ শতাংশ। অন্যান্য গ্যাস টারবাইনের দক্ষতা ৩৫-৪০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, এতে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য যেমন অনেক কমে আসবে পাশাপাশি অল্প পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে বেশি পরিমান বিদ্যুৎ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা যাবে। এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। মূলত গ্যাস দিয়ে টারবাইন ঘোরানোর সময় গ্যাস উত্তপ্ত হয়। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উত্তপ্ত গ্যাসকে বয়লারের মাধ্যমে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়, সেই বাষ্প দিয়ে আরেকটি টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাংলাদেশে এখনো অনেক সিম্পল সাইকেল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের অনেক অপচয় হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রিলায়েন্সের টারবাইনটি কম্বাইন্ড সাইকেল হলেও এইচ ক্লাসের নয়। এইচ ক্লাসের টারবাইনগুলো সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মধ্যে কম্বাইন্ড সাইকেলে থাকা দ্বিতীয় টারবাইনটি চালু করতে পারে।
পিডিবির প্রকৌশলীরা বলেছেন, ভারতের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ দুটি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে দেশটির ঝাড়খণ্ডের কোড্ডায়। কেন্দ্রটির ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটেরই নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এটি থেকে সরকার আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ আনতে চায়।
চট্টগ্রামের কয়লাভিত্তিক এস আলমের ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। এটির ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটি আগামী বছর বাণিজ্যিক উৎপাদনে আনতে চায় সরকার।
এ ছাড়া বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও নির্মাণ শেষ। কেন্দ্রটি থেকে আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে বিদ্যুৎ নিতে চায় সরকার।
ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে এর সম্মিলিত ক্ষমতা হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। এ ছাড়া পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের অভাবে ঢাকায় আসছিল না, এটির সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রায় শেষ। এই বিদ্যুৎ ঢাকার আমিনবাজারে আসবে। এর ফলে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ফারাক থাকবে না, ফলে লোডশেডিংয়ের চাপেও পড়বে না সরকার। এ ছাড়া এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ও অনেক কম হবে, সে কারণে গড় বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও কমে যাবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
দেশে ১৪৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত স্থাপিত ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে পিক পাওয়ার (সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) ঘণ্টাপ্রতি গড়ে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সময় গড়ে ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এতে ঘাটতি থেকেছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে এই সংকট থাকবে না, সাশ্রয়ী মূল্যেও পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেইন টেলিফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, আগামী গ্রীষ্ম মোকাবিলা করার জন্য আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এসবের মধ্যে রয়েছে রামপাল, আদানি, এস আলমের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পায়রার সঞ্চালন লাইন ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে, সেটিও যোগ হবে। এ ছাড়া গ্যাসভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আনা হবে। এসবই সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে, সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। আগামী বছর সেচের জন্য বিদ্যুৎ, গ্রীষ্মের চাহিদা থেকে শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হয়। এর অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ (১১ কোটি ৫০ লাখ) কর্মক্ষম বয়সী, যাদের বয়স ১৫-৬৪ বছরের মধ্যে। জনসংখ্যার এমন সংখ্যাগত অবস্থা লাভজনক কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেয়।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বার্ষিক প্রধান প্রকাশনা—বিশ্ব জনসংখ্যার অবস্থা (এসডব্লিউওপি) ২০২৫-এ এই অনুমান করা হয়েছে।
সোমবার(৭ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ক্যাথেরিন ব্রিন কামকং আনুষ্ঠানিকভাবে এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
ক্যাথেরিন কামকং বলেন, ‘২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে জনসংখ্যা ৮২০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ বলে অনুমান করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেক নারী। আর দুই-তৃতীয়াংশ (সাড়ে ১১ কোটি) কর্মক্ষম বয়সী। এটি জনসংখ্যাগত লাভজনক কাজে লাগানোর একটি সুযোগ।’
তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশের এই জনসংখ্যার ৭ শতাংশ (১ কোটি ২০ লাখ) ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী—যা জনসংখ্যার বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার শুরুর ইঙ্গিত দেয়।
ক্যাথেরিন কামকং বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী (প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ)। যাদের বয়স ১০ থেকে ২৪ বছর। আর বৃহত্তর যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৮ শতাংশ (প্রায় ৫ কোটি)।
এ বছরের প্রকাশনার প্রতিপাদ্য ‘আসল প্রজনন সংকট – পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রজনন অধিকার অর্জনের প্রয়াস’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ‘অতিরিক্ত জন্ম’ বা ‘কম জন্ম’– এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। প্রকৃত সংকট সংখ্যার নয়, এটি প্রজনন অধিকার বা ক্ষমতার সংকট।
ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি বলেন, ‘সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে নারী এবং তরুণরা পদ্ধতিগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বাধার কারণে তাদের প্রজনন উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারছেন না।’
এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) পরিচালিত একটি বৈশ্বিক জরিপের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটির সঙ্গে একাডেমিক গবেষণা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রজনন ক্ষমতা ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের মতো উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে নারীদের প্রজনন ক্ষমতা জনপ্রতি মাত্র ০.৮ সন্তানের মধ্যে নেমে এসেছে— যা বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন।
অন্যদেকে আফ্রিকার কিছু দেশে উচ্চ প্রজনন হার রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী নাইজারে সর্বোচ্চ মোট প্রজনন হার (টিএফআর) (প্রতি নারীর ৫.৮ শিশু) রেকর্ড করেছে।
বাংলাদেশও এর মধ্যে রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে। যেখানে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১ শতাংশ। বাংলাদেশের কিছু অংশে কিশোর বয়সে জন্মহার উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে— যার কারণ হলো বাল্যবিবাহ, গর্ভনিরোধের সীমিত সুবিধা এবং যৌন শিক্ষার অভাব।
১৪টি দেশের প্রমাণের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি অপূর্ণ প্রজনন আকাঙ্ক্ষার উপর আলোকপাত করেছে।
যদিও বেশিরভাগ মানুষ দুইটি সন্তান চায়, তবে অনেকেই ইচ্ছার চেয়েও কম সন্তান নিতে পারেন—বিশেষত বয়স বেশি হওয়া ব্যক্তিরা। অন্যদিকে, কেউ কেউ পরিকল্পনার চেয়েও বেশি সন্তানের প্রত্যাশা করেন, কিন্তু তারা পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান বা সুযোগ-সুবিধা পান না।
ক্যাথেরিন কামকং বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় অনেক বেশি, যার অর্থ হলো যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নাও পেতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকার বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ০.৭ শতাংশ এবং সাধারণ বাজেটের ২ শতাংশ বিনিয়োগ করছে। আমরা আশা করি, এটি বাড়িয়ে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং সাধারণ বাজেটের ১৫ শতাংশ করা হবে, কারণ দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে স্বাস্থ্য ও কল্যাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ ‘এর ফলে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে মিডওয়াইফ বা ধাত্রী নিয়োগ, মোতায়েন এবং টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং বিভিন্ন ধরণের গর্ভনিরোধক সরবরাহের নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ তৈরি করবে, যা নারীদের পছন্দের সুযোগ করে দেবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুমিল্লার মুরাদনগরের একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আট আসামির মধ্যে ৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি মামলার এজাহারের ৩ নম্বর আসামি বাচ্চু মিয়া মেম্বার আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তার বক্তব্য রেকর্ডের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।
রবিবার (৬ জুলাই) বিকালে চাঞ্চল্যকর তিন খুনের ঘটনায় ঢাকায় র্যাবের হাতে আটক ৬ জনকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করে পুলিশ। আসামি ৬ জন হলেন—বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান, বায়েজ মাস্টার, দুলাল ও আকাশ।
৫ নং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিদ্দিক আজাদ এসব আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হাতে আটক ২ আসামি— নাজিমুদ্দিন বাবুল ও ছবির আহমেদকে পুলিশের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হলে আমলি আদালত ১১ এর বিচারক মমিনুল হক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ৪ জুলাই বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার কড়ইবাড়িতে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে নিজ বাড়ির সামনে রোখসানা বেগম রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনায় রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত এই মামলায় সেনাবাহিনী ও র্যাব মোট আটজনকে গ্রেফতার করেছে।
কুমিল্লার আদালত পরিদর্শক সাদেকুর রহমান বলেন, এ মামলায় মোট আটজনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় দুজনকে এবং রবিবার বিকেলে ছয়জনকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে মামলার তিন নম্বর আসামি বাচ্চু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ শিশুদের যুগের পর যুগ জাতি স্মরণ করবে।
রোববার নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটিতে শিশু শহীদ রিয়া গোপ ও সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় শহীদ সুমাইয়ার বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, জুলাই আন্দোলনে যে সকল নারী ও শিশুরা নিহত হয়েছে, তাদের হারিয়ে যেতে দেব না। তাদের নিয়ে সংকলন করা হবে। যারা শহীদ হয়েছে, তাদের সব অধিকার রাষ্ট্র থেকে নিশ্চিত করা হবে। এটার জন্য জেলা প্রশাসক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, শহীদ এই নারীদের পরিবারগুলো কেমন আছে এবং তাদের সংকটগুলো কী, সেটা জানার চেষ্টা করছি। আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে যতটুকু শক্তি আছে, রিসোর্স আছে, সেগুলো দিয়ে শহীদ পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা শহীদ পরিবারের চোখের জল মুছে দিতে চাই।
এসময় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে স্থানীয় মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবের উদ্যোগে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুরু হয়েছে । উক্ত খেলা উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির ১ নং সদস্য , জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির ।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকাল ৪ টায় শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্ট উদ্বোধন করা হয় ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, জেলা বিএনপির সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপি'র সহ-সভাপতি এবং জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো: লোকমান হোসেন, উপজেলা বিএনপি সভাপতি রহমত আলী লাভলু, সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন, জেলা কৃষকদলের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ,জেলা বিএনপির সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: ফেরদৌস রহমান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো: হোসেন আলী, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো: শহিদুল ইসলাম ।
এছাড়া উপস্থিত ঘিওর উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মো: রাজা মিয়া মেম্বার, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আসিফ ইকবাল রনি, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আখতারুজ্জামান আক্তার, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মামিনুল ইসলাম মমিন, জেলা যুবদলের সদস্য মোসলেম উদ্দিন,জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব খান অয়ন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জিহাদ প্রমূখ । সভাপতিত্ব করেন,মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার মহিদুর রহমান কাজল ।
প্রধান অতিথি এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমান এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এদেশে প্রথম ফুটবল খেলাকে আন্তর্জার্তিক পর্যায়ে নিয়ে যান। তাদের চেষ্টায় সার্ফ ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করার সম্ভব হয়। মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে যুব সমাজকে খেলার মাঠে আনতে হবে । মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে হলে খেলাধুলার বিকল্প নাই ।
স্থানীয় মোহামেডান ইয়ুথ ক্লাব আয়োজিত টুর্ণামেন্টে নক-আউট পদ্ধতিতে আটটি দল অংশ নিচ্ছে। উদ্বোধনী খেলায় টাইব্রেকারে মানিকগঞ্জ কৈট্রা ফিউচার ফুটবল একাডেমী ৫-৪ গোলে পাবনার নবযুগ মিলন সমিতিকে হারায়। রেফারি ছিলেন আবুল কালাম।
সিলেটে নতুন করে একজনের করোনা ও একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছর ২৭ জনের করোনা ও ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এই বছর ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জুলাই মাসে পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো। বর্তমানে ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছর ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনজন, মৌলভীবাজার জেলায় ১১ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ১৪ জন। তবে, ডেঙ্গুতে সিলেট অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
ভোলা জেলা শহরের কালিনাথ বাজারে ঢাকা থেকে আসা ভোলাগামী এস এ পরিবহনের পন্য বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের ২০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৮০ কেজি পলিথিন, ৫ হাজার ৮৮৯ পিস আতশবাজি ও ১৯ হাজার ৬০০ শলাকা বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভোলা বেইস।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কোস্টগার্ড ভোলা বেইসের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় কোস্টগার্ডের ভোলা বেইসের সদস্যরা শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে ৭ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, পলিথিন, আতশবাজি ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে জব্দকৃত কারেন্ট জাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুল্ক ফাকি দিয়ে আনা সিগারেট বরিশাল কাস্টমস ও আতশবাজি ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্টগার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কতৃক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।
খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।
এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।
এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।
নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’
সিলেটের ওসমানীনগরে এনা ও ইউনিক পরিবহনের দুটি বাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কুরুয়া বাজারের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রাজু মিয়ার (২৬) বাড়ি ফরিদপুর জেলার তারাকান্দা থানায়। তিনি ইউনিক বাসের হেলপার ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ইউনিক পরিবহনের বাসের সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের বাসটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ইউনিকের হেলপার রাজু মিয়ার নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে ভুল পাশ থেকে এসে এনা পরিবহনের ওই কোচটি এ দুর্ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়াস সার্ভিস, ওসমানীনগর থানা পুলিশ ও শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ এসে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর কুরুয়া বাজারের দুই পাশে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে যানজট নিরসন করে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, দুই গাড়ির সংঘর্ষ হলে বিকট শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাতে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, হাইওয়ে পুলিশ রাজুর লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। বাস দুটিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বাইগুনি গ্রাম। নিজের অসম্পূর্ণ ইটের বাড়ির সামনে বসে আছেন ৪৫ বছর বয়সি সফিরুদ্দিন। পেটের নিক্সের অংশে ডান পাশটা চাপলে এখনো ব্যথা অনুভব করেন তিনি। পরিবারকে অনটন থেকে মুক্ত করতে এবং তিন সন্তানের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করতে ২০২৪ সালে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করে দেন ভারতের এক ব্যক্তির কাছে। বিনিময়ে তিনি পান সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
কিন্তু সেই টাকা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাড়ির নির্মাণকাজ থেমে আছে। আর শরীরের এই অসহ্য ব্যথা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয়—সেই সিদ্ধান্তের মূল্য কতটা চড়া ছিল।
সফিরুদ্দিন এখন একটি হিমাগারে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া শরীর নিয়ে দিন পার করছেন কষ্টে। নিয়মিত কাজে অংশ নেওয়াটাও হয়ে উঠছে দুঃসাধ্য। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী আর সন্তানদের জন্যই সব করেছি।’
শুরুতে ভয় থাকলেও দালালের কথায় পরে রাজি হয়ে যান তিনি। ভিসা, ফ্লাইট, হাসপাতাল সংক্রান্ত সব কাগজপত্রই ঠিক করে দেয় তারা। মেডিকেল ভিসায় ভারতে যাওয়ার সময় পাসপোর্ট ছিল নিজেরই, কিন্তু হাসপাতালের কাগজপত্রে তাকে রোগীর আত্মীয় হিসেবে দেখানো হয়। এমনকি, ভুয়া আইডি, নকল জন্মসনদ বা নোটারি সার্টিফিকেটও বানানো হয়। অথচ যাকে কিডনি দিয়েছেন, তিনি কে—সেটাও জানেন না সফিরুদ্দিন।
ভারতের আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করা বৈধ। তবে সরকারি অনুমোদন থাকলে অন্য কেউ দান করতেও পারেন। কিন্তু দালালরা এসব আইন পাশ কাটিয়ে ভুয়া পরিবারিক সম্পর্ক তৈরি করে, এমনকি কখনও কখনও ভুয়া ডিএনএ রিপোর্টও বানিয়ে দেয়।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গসংগঠন ‘অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশন টাস্কফোর্স’-এর সদস্য মনির মোনিরুজ্জামান জানান, ‘প্রতারণার নিয়মটা মোটামুটি একই—নাম বদল, ভুয়া নোটারি সার্টিফিকেট, আত্মীয় প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের জাল কপি ইত্যাদি।’
বাইগুনি গ্রামে সফিরুদ্দিনের অভিজ্ঞতা আলাদা কিছু নয়। প্রায় ছয় হাজার মানুষের এই গ্রামে এত বেশি মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন যে জায়গাটিকে অনেকে বলেন ‘এক কিডনির গ্রাম’। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গ্লোবাল হেলথে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কালাই উপজেলায় প্রতি ৩৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন। বেশিরভাগ বিক্রেতাই ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সি পুরুষ, যারা দারিদ্র্যের কারণে এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউবা ঋণের বোঝা, মাদকাসক্তি কিংবা জুয়ার আসক্তি থেকেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সফিরুদ্দিন জানান, অপারেশনের পর তার পাসপোর্ট, প্রেসক্রিপশন কিছুই ফেরত দেয়নি দালালরা। এমনকি ওষুধটুকুও জোটেনি। অপারেশনের পরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা বা পর্যবেক্ষণ ছাড়াই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমন অনেক সময় দালালরা কিডনি বিক্রেতাদের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে কোনো প্রমাণ রাখে না, যাতে তাদের কোনো চিকিৎসা দাবি বা অভিযোগ করাও সম্ভব না হয়।
এই অঙ্গগুলো মূলত বিক্রি হয় ভারতের ধনী রোগীদের কাছে, যারা বৈধ প্রক্রিয়ায় কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকতে চান না। ভারতে ২০২৩ সালে মাত্র ১৩,৬০০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, অথচ বছরে প্রায় ২ লাখ মানুষ শেষ ধাপের কিডনি রোগে আক্রান্ত হন।
ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ‘কিছু মানুষ জানাশোনা সত্ত্বেও বিক্রি করেন, তবে অনেকেই প্রতারিত হন।’
এমনকি কেউ কেউ কিডনি বিক্রির টাকাও পুরোপুরি পান না। যেমন, মোহাম্মদ সাজল (ছদ্মনাম) ২০২২ সালে দিল্লির ভেঙ্কটেশ্বর হাসপাতালে নিজের কিডনি বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকা চুক্তিতে, কিন্তু তিনি পান মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকা। প্রতারিত হয়ে পরে তিনিও এই চক্রে যুক্ত হন, বাংলাদেশ থেকে কিডনি বিক্রেতা খুঁজে বের করে ভারতে পাঠাতে থাকেন। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়ায় কিছুদিন পর তিনি এ চক্র থেকে বেরিয়ে আসেন। এখন ঢাকায় রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন তিনি, কিন্তু সেই অতীতের ক্ষত তাকে আজও তাড়িয়ে ফেরে।
অন্যদিকে যেসব হাসপাতাল এসব অবৈধ প্রতিস্থাপন করে, তাদের বিরুদ্ধে ভারত বা বাংলাদেশ দুই দেশেরই কোনো সমন্বিত তথ্য বা ব্যবস্থা নেই বলে জানান ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার বিভাগের মহাপরিচালক শাহ মুহাম্মদ তানভির মনসুর। ভারতের হাসপাতালগুলো মাঝেমধ্যে দায় এড়িয়ে চলে এই বলে যে, কাগজপত্র যাচাই করে তবেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
তবে মনিরুজ্জামান বলেন, অনেক হাসপাতালই জেনে-বুঝেই জাল কাগজ গ্রহণ করে কারণ ‘অধিক কিডনি প্রতিস্থাপন মানে অধিক আয়’। ভারতের হাসপাতালগুলো বছরে কয়েক হাজার বিদেশি রোগীকে চিকিৎসা দেয়, যা দেশটির ৭.৬ বিলিয়ন ডলারের মেডিকেল ট্যুরিজম শিল্পের অংশ।
২০১৯ সালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিডনি চক্র নিয়ে তদন্তের পর কিছু চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। ২০২৪ সালে দিল্লিতে ড. বিজয়া রাজাকুমারিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশির কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। তবে এই তদন্তগুলো এতটাই বিচ্ছিন্ন যে পুরো ব্যবস্থায় বড় কোনো পরিবর্তন আনা যায়নি।
দালাল মিজানুর রহমান জানান, প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রেতারা পান মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা দালাল, কাগজপত্র তৈরি করা কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের পকেটে যায়। কখনও কখনও কাজের প্রলোভন দেখিয়েও মানুষকে কিডনি বিক্রির ফাঁদে ফেলা হয়। অনেকেই কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়ে সেখানে অপারেশনের পর ফেলে রাখা হন।
ভারতের কিডনি ওয়ারিয়ার্স ফাউন্ডেশনের প্রধান বাসুন্ধরা রঘুবংশ বলেন, ‘আইন থাকলেও বাস্তবতা হলো, এটা এক কালোবাজারে পরিণত হয়েছে। যেহেতু চাহিদা থেমে নেই, সেহেতু এ ব্যবসাও চলছেই।’ তিনি মনে করেন, অঙ্গ দান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না হলে একটি সুশৃঙ্খল ও মানবিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলাই হতে পারে একমাত্র সমাধান। যেখানে কিডনি বিক্রেতাদের জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
আর বাইগুনি গ্রামে, সফিরুদ্দিন এখনো অর্ধনির্মিত ঘরের বারান্দায় বসে ভাবেন, কবে শেষ হবে তার স্বপ্নের ঘর। তিনি ভেবেছিলেন, এই পথ হয়তো পরিবারকে একটু স্বস্তি এনে দেবে। কিন্তু এখন তিনি একজন অসুস্থ বাবা, যার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। তার কণ্ঠে শুধু তিক্ততা—‘তারা কিডনি নিলো আর আমাকে ফেলে চলে গেল।’
কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এখনো মনে রেখেছেন নড়াইল সদর হাসপাতালের রোগী, সেবিকা, চিকিৎসকসহ আম জনতা । মুমূর্ষু রোগীদের বাচাতে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে তখন ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে স্থাপন করা হয় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই তা মানুষের কাজে আসেনি। অক্সিজেন নিয়ে রোগী, সেবিকা আর চিকিৎসকদের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
সরেজমিন হাসপাতালের রোগী, সেবিকা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর প্রাক্কালে নানা উপসর্গ আর জটিল শ্বাসকষ্ট থেকে পরিত্রান পেতে আমজনতা ছুটে আসেন জেলার একমাত্র আধুনিকায়িত সদর হাসপাতালে। তখন হাসপাতালের বেড, কেবিন, জরুরী বিভাগসহ ১৭৩টি স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ পয়েন্ট স্থাপন করা হয় । কিন্তু কোনো পয়েন্ট দিয়েই সে সময় অক্সিজেন নির্গত হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের কাজ চলছে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে। এ ব্যবস্থার কারণে রোগী ও স্বজনদের রয়েছে ক্ষোভ। জরুরী অক্সিজেনসেবা দিতে নিত্যদিন হিমশিম খেতে হয় সেবিকা আর চিকিৎসকদের। সিলিন্ডার সংকটের পাশাপাশি সিলিন্ডার ভরে রাখা, আর হঠাৎ সিলিন্ডার শেষ হবার আশঙ্কা তো রয়েছেই। এসব সেবা ব্যাহত হওয়ার বিড়ম্বনায় থাকতে হয় সেবিকাসহ চিকিৎসকদের। করোনার প্রকোপ বাড়লে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে আছে দুশ্চিন্তা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতেও তা সময়োপযোগি কাজে আসছে না। বেডেই রোগী মারা যাবার শঙ্কায় থাকেন স্বজনরা। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সেবিকা বলেন, হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার কখন ফুরিয়ে যায় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সিলিন্ডার টানাহ্যাচড়া করতে অনেক ঝামেলা হয়। মিটার নষ্ট হয়ে যায়। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড ও জরুরী বিভাগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু থাকা খুবই প্রয়োজন। করোনা আসলে রোগীদের সঙ্গে নানা ধরণের তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞা ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, কেন্দ্রীয় অক্সিজেনসেবার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে শিশু রোগীদের অনেক কষ্ট পেতে হয়। অক্সিজেনের অভাবে অনেক শিশু মারাও যায়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে এই ভোগান্তি থাকতো না। তিনি বলেন, সামনে কোভিড বেড়ে গেলে জটিলতা আরো বাড়বে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে সদর হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ চালু হয়। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ লিটারের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অক্সিজেন সরবরাহ কয়েকমাস চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেটা হাসপাতালের পেছনের দিকে লতাপাতার মধ্যে পড়ে আছে ট্যাঙ্কটি। হাসপাতালের ভিতরের সঞ্চালন লাইনে কোথাও মরিচা ধরেছে সকেটগুলো ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন বেডের বিছানার ওপর।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, এই কর্মস্থলে যোগদানের পর কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ট্যাঙ্কটিতে দুই দফায় অক্সিজেন ঢালা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারের আগেই অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। কোথাও লিকেজ আছে হয়তো । আমি কোম্পানীকে বিষটি জানিয়েছি। তারা ঠিক করেনি। উপায় না পেয়ে আমরা বোতল অক্সিজেন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কোম্পানীকেও জানিয়েছি। এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমপক্ষে ২৩ থেকে ২৬ টি জেলার একমাত্র প্রবেশপথ টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু। এটি যমুনা নদীর উপর নির্মিত। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। চলতি বছরের ১৮ সার্চ যমুনা নদীর উপর নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় রেল চলাচল। ফলে যমুনা সেতুতে থাকা রেললাইন আর ব্যবহার হচ্ছে না, এটি এখন পরিত্যক্ত। তাই সেতুর ওপর থাকা পরিত্যক্ত রেললাইন সরিয়ে ফেলতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে যমুনা সেতু বিভাগ। যমুনা সেতুর উপর সড়কপথকে আরও প্রশস্ত করতে নেওয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ।
যমুনা সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতিটি লেনের প্রস্থ ৬ দশমিক ৩ মিটার। যেখানে প্রস্থ হওয়া উচিত ৭ দশমিক ৩ মিটার। রেললাইনটি সরিয়ে ফেললে যে সাড়ে ৩ মিটার অতিরিক্ত জায়গা পাওয়া যাবে, তা দুই লেনে ভাগ করে সড়কপথকে আরও প্রশস্ত করা যাবে। এতে করে ঈদের মতো যানবাহনের চাপে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজট অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং যমুনা সেতু বিভাগ পৃথকভাবে রেললাইন অপসারণের জন্য প্রস্তাব দেয়। এরপ্রেক্ষিতে শুরু হয় এই অপসারণ প্রক্রিয়া।
এতে সেতুর উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার করে জায়গা বাড়বে। বর্তমানে সেতুর লেনগুলো প্রশস্ততা রয়েছে ৬ দশমিক ৩ মিটার। এটি সম্প্রসারণ করা হলে প্রশস্ততা বাড়বে। এতে সেতুর ওপরের যানজট ও জনদুর্ভোগ কমবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যমুনা সেতুর পূর্বের সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কারিগরি স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এটি কার্যকর করতে কিছু সময় লাগবে। অপসারণের কাজ শেষে রেললাইন ও অন্যান্য মালামাল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীতে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা সেতু উদ্বোধন করা হয় এবং ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। পরে ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার করা হয়। এতে প্রতিটি ট্রেনকে সেতু পারাপার হতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগত। এ কারণে সেতুর দুই উভয় পাশে ট্রেনের জটলা বেঁধে যেত। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যার সমাধানে সরকার ২০২০ সালের যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয় করা হয়।প্রথমে নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে। গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সেতুর পূর্ব প্রান্ত টাঙ্গাইল অংশে রেলপথের নাট-বোল্ট খুলে ফেলার মাধ্যমে অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে যমুনার সেতুর উপরসহ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক এবং সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা থাকবে না।