ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আগুন দিয়েছে দুই যুবক। এতে অটোরিকশার পেছনের অংশ পুড়ে গেছে। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে লিংক রোডের জালকুড়ি এলাকায় যুব উন্নয়নের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। অটোরিকশায় আগুন দেওয়া ওই দুই যুবকের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে দুইজন যুবক সাইনবোর্ড যাবার কথা বলে চাষাড়া থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ১২০ টাকায় ভাড়া করেন। জালকুড়ি এলাকায় পৌঁছানোর পর যাত্রীরা তাদের সঙ্গে আরও একজন উঠবেন বলে চালককে থামাতে বলেন। এ সময় ফোনে কথা বলার অজুহাতে অটোরিকশা থেকে নেমে নিচে দাঁড়ান ওই দুই যুবক। পরে তারা কৌশলে অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর চালক অটোরিকশার পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখেন আগুন জ্বলছে, আর আশেপাশে যাত্রীরা নেই।’
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় চালক অটোরিকশার আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে অটোরিকশার ছাউনি আর পেছনের আসনটি পুড়ে গেছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, যাত্রী সেজে দুই যুবক কৌশলে সিএনজিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধে সাঁতার প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। দুপুরে গাংনী উপজেলার ধানশিঁড়ি রিসোর্টের সুইমিংপুলে এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল সালাম।
সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো আনোয়ার হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট হাবিবুর রহমান, গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাবিদ হোসেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি ও লুৎফন নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জাকির হোসেন, গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নুরানি, সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান।
প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, ‘পর্যাপ্ত জলাশয় ও পুকুর না থাকায় আমরা সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে এই আয়োজন করায় আমরা উপকৃত হব।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল সালাম বলেন, প্রতি বছর মেহেরপুর জেলায় পানিতে ডুবে অনেক শিশু মারা গেছে। মৃত্যুর ঘটনা হৃদয়বিদারক। জেলায় পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকায় শিশুরা সাঁতার শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে পানিতে ডুবে বারবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এতে সচেতন মহল ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। এ কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা শহরে ও গাংনীতে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এক ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে কী কারণে এবং কারা তাকে হত্যা করল এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটেরচর ব্রিজ-সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। নিহত ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের নাম রতন আহমেদ (২২)। তিনি বড়ইকান্দি ভাটেরচর গ্রামের ভাড়াটিয়া আব্দুল জলিলের ছেলে। স্থায়ী ঠিকানা বগুড়াতে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি বড়ইকান্দি ভাটেরচর গ্রামে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বলে জানা গেছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, নিহত রতন আহমেদ ভাটেরচর বাস স্ট্যান্ড-সংলগ্ন গজারিয়া জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। সাম্প্রতি তিনি এই হাসপাতাল ছেড়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর এলাকার বারাকা হাসপাতলে যোগ দেন। পরিবার নিয়ে গজারিয়া উপজেলার বড়ইকান্দি ভাটেরচর গ্রামে ভাড়া থাকায় নিয়মিত এখান থেকে মদনপুরে যাতায়াত করতেন। রাত ১০ পর্যন্ত ডিউটি শেষ করে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০-১১টার দিকে বাসায় ফিরতেন তিনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার রাত ১১টার দিকে ভাটেরচর ব্রিজের পশ্চিম দিকের ঢালে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান কয়েকজন। ছুরি জাতীয় কিছু দিয়ে কুপিয়ে তাকে জখম করা হয়েছিল। স্থানীয়দের মধ্যে একজন ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ গজারিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গজারিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়। তার হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতের পিতা আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা যা যা ছিল কিছুই পাওয়া যায়নি। হামলাকারীরা তাকে কুপিয়ে তার সাথে থাকা জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে থানায় মামলা করব।’
গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম বলেন, ‘রাত ১১টার পর-৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে আমরা সেখানে ছুটে যাই। আমরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই। কেউ তাকে ধারালো ছুরি জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করে ফেলে গেছে বলে মনে হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
‘আমি জেলে না। দিন মজুরি কাজ করে সংসার চালাই। রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে আমার নামে একটি জেলে কার্ড করিয়েছি। এই বছর আমার এলাকার আকতার মেম্বারকে তিন হাজার টাকা দিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে একটি বকনা বাছুর পেয়েছি।’ এই কথাগুলো অকপটে স্বীকার করেছেন চরফ্যাশন উপজেলার আমিনাবাদ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী আকবর। আকতার একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। টাকার বিনিময়ে বকনা বাছুর দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। এসব তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়েছে। এসবের সাথে আমি জড়িত না।’
জেলে না হয়েও জেলে তালিকায় নাম উঠেছে কৃষক বাবুল রাড়ীর। পেয়েছেন বকনা বাছুর। তিনি আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এমন তথ্য অনুসন্ধানে সরজমিনে দেখা গেছে বকনা বাছুরটি তার গোয়াল ঘরে বাঁধা রয়েছে। বাছুরটি কোথা থেকে এবং কিভাবে পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৯ মাস আগে মৎস্য অফিস থেকে একটি বাছুর দিয়েছে। মৎস্য অফিসে স্ট্যাম্প বাবত ৬০০ টাকা দিয়েছি ও নিজাম ভাইকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে চাল দিবে বলে আমার নামের জেলে কার্ডটি নিজাম ভাই নিয়ে গেছে। আমাকে চাল দেয়নি এবং কার্ডটিও ফেরত দেয়নি। আমি ২০ বছর যাবত কৃষি কাজ করছি।’ কার্ডটি কিভাবে আপনার নামে হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার মিঠু চেয়ারম্যান জেলে তালিকায় আমার নাম লেখাইছে এবং আমার নামে জেলে কার্ড হয়।’
কৃষক বাবুলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে বকনা বাছুর দিয়েছেন? জানতে চাইলে নিজাম বলেন, আমি বাবুলের কাছ থেকে টাকা নেইনি। তবে অন্য লোকের মাধ্যমে মৎস্য অফিসে তার কাগজপত্র পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে সে কিভাবে অফিস থেকে বাছুর এনেছে তা আমার জানা নাই।
দিনমজুর আলী আকবর ও কৃষক বাবুলের মতো অনেকেই টাকার বিনিময়ে বকনা বাছুর বিতরণ তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশই জেলে নয়, অন্য পেশার মানুষ। জেলে তালিকায় দেখা গেছে, ওয়ার্ড নম্বরবিহীন কিছু জেলের নাম রয়েছে। যদিও সরেজমিনে ওই জেলেদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পৌরসভাসহ ২১ ইউনিয়নে ১৭৪ জন তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে ৪ কিস্তিতে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের লক্ষ্যে উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে, তখন তারা বেকার হয়ে যায়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সরকার এই উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘বকনা বাছুর বিতরণ হয়েছে কয়েক মাস আগে। টাকার নেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে এই বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথিকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০২৩ সালে শুরু করা হয় ৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পটি চলমান অবস্থায় নদীতে একের পর মা মাছ ও ডলফিন মরে যাচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে যেসব কর্মপরিকল্পনা ছিল সেসব কর্মসূচিতে বারবার পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ২৩ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু করে আড়াই বছর শেষ করা হলেও মূল কাজের কিছুই করা হয়নি। অথচ প্রকল্পটির মেয়াদ ২৭ সাল পর্যন্ত।
জানা যায়, ‘প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়’ নামের এই প্রকল্পের মাধ্যমে হালদা নদী সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণ ও সুযোগ—সুবিধা বৃদ্ধি, হালদার দুই পাড় রাউজান ও হাটহাজারীর ৬টি পুরাতন হ্যাচারি সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, হ্যাচারির পুকুর সংস্কার, ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, হালদা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা ও আইন বাস্তবায়ন, দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও গবেষণা করার কথা। বর্তমানে ২০২৫ সালে এসেও এর কোনোটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দেখছেন না নদীপাড়ের মানুষ।
হালদাপাড়ের মানুষ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক নজরদারির অভাবে মানব সৃষ্ট দুর্যোগে গত আট বছরে এই নদীতে মরেছে অন্তত ৪৬টি ডলফিন ও শতাধিক মা মাছ। নদীতে রাত-দিন সক্রিয় থাকা চোর চক্র শিকার করছে ছোট-বড় মাছ। চোর চক্র নানা শ্রেণির জাল ও বড়শি ফেলে নদীর মাছ মারা অব্যাহত রেখেছে।
পরিবেশ ও জলজ প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষায়িত এই নদীটি ভয়াবহ দূষণের শিকার। এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। তার ওপর মাছ শিকারিদের বেপরোয়া তৎপরতায় প্রাকৃতিক এই মৎস্য ভান্ডারটি এখন মাছশূন্য হতে চলেছে।
গবেষকরা বলছেন, অনেক বছর ধরে হালদা রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশমালা দিয়ে আসছেন। কিন্তু ওইসব সুপারিশ পাশ কাটিয়ে হালদার উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বারবার প্রকল্প তৈরি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্প হ-য-র-ল অবস্থায় রেখে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় বন্ধ করে দেয়ার নজিরও রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদার জলজ প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের কাছে আটটি সুপারিশ করা হয়েছিল।
তিনি জানান, ২৮ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে এক বৈঠকে এসব প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মূল্যায়নে প্রকল্পের কিছু সংশোধনী আনা হবে। পাশাপাশি মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু রোধে কর্মপন্থা সংযুক্ত করবেন।
তিনি বলেন, হালদা এমন একটি নদী, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক কার্প প্রজননের উর্বর ক্ষেত্র। আদিকাল থেকে এই নদীটি গাঙ্গেয় ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই প্রজাতির ডলফিন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এখন এই শ্রেণির ডলফিনের সংখ্যা আনুমানিক ১২শ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জরিপে হালদায় প্রায় ১৬৭টি ডলফিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০২০ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে ১২৭টিতে। তবে ২০২২ সালের অন্য এক জরিপে ১৪৭টি ডলফিন থাকার কথা বলা হচ্ছে। সূত্র মতে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত হালদা নদীতে ১৮টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। মার্চ ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২০—এর মধ্যে আরো ১০টি উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২১ সালে পাঁচটি এবং ২০২২ সালে ছয়টি ডলফিন মারা গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যেসব মৃত ডলফিন নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে নব্বই শতাংশের দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
গবেষকদের মতে, যান্ত্রিক নৌকার ডুবন্ত পাখা আর জালে আটকে এসব ডলফিনের মৃত্যু হেয়েছে।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে তাকে ডাকা হয় না। তার অভিযোগ, আইআইইউসির উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী হালদা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাকেও ডাকা হয় না। নেয়া হয় না কোনো পরামর্শ।
চলমান হালদা প্রকল্প নিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সালমা বেগম বলেন, ২৭ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ আছে। আড়াই বছরে প্রকল্পের কত শতাংশ কাজ হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
দেশের বর্তমান জ্বালানি সংকট নিরসনে দেশীয় উৎস হতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করে জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে স্থিতিশীল ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পেট্রোবাংলা বদ্ধপরিকর। এলক্ষ্যে পেট্রোবাংলা কর্তৃক ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ৫০টি ও ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন ব্লকে অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খনন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স) কর্তৃক জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মত ব্লক-৮ এ বাণিজ্যিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। জামালপুর স্ট্রাকচারে গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ ও বিস্তৃতি মূল্যায়নের লক্ষ্যে আরও ২টি (১টি উন্নয়ন ও ১টি অনুসন্ধান) কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করত: তদানুযায়ী ডিপিপি প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর অর্ন্তগত হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে সিলেট-১০ কূপ খননের সময় উক্ত এলাকায় জ্বালানি তেলের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরিপুর স্ট্রাকচারে মজুদকৃত জ্বালানি তেলের বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে সিলেট-১২ তেল কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ ভোলা এলাকায় প্রাপ্ত গ্যাসের মজুদ ও বিস্তৃতি নির্ণয়ের লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় আরও ১৯টি নতুন কূপ খননের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভোলা এলাকায় প্রাপ্ত গ্যাস ভোলায় প্রতিষ্ঠিতব্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব এ সরবরাহ করা হবে, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কর্মস্থানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও আবিষ্কৃত ভূতাত্বিক স্ট্রাকচারের গভীর স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ মূল্যায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিমিটেড (বিজিএফসিএল)-এর আওতায় তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে ২টি এবং বাপেক্সের আওতায় শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড ও মোবারকপুর স্ট্রাকচারে ২টি সহ মোট ৪টি গভীর কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ব্লকে নতুন নতুন লিড/প্রসপেক্টসহ খননযোগ্য কূপের লোকেশন চিহ্নিতকরণের জন্য বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল কর্তৃক স্ব স্ব ব্লকে সাইসমিক ডাটা আহরণ ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সময়াবদ্ধ পরিকল্পনার মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য বাপেক্স এর নিজস্ব ৫টি রিগ এবং টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের ৩টি রিগসহ মোট ৮টি রিগ এর মাধ্যমে কূপ খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ হতে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের রিগ দ্বারা তিতাস-২৮ উন্নয়ন কূপ খনন কার্যক্রম শুরু হবে। জানুয়ারী, ২০২৬ এর মধ্যে বিজিএফসিএল-এর সাথে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের আরও ১টি রিগের মাধ্যমে তিতাস-৩১ ডীপ অনুসন্ধান কূপের খনন কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যয়ে পেট্রোবাংলা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ভোলা এলাকায় ৫টি কূপ খননের লক্ষ্যে বাপেক্স ও টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের মধ্যে অতি শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে ভোলা এলাকায় কূপ খননের লক্ষ্যে আরো একটি রিগ নিয়োজিত হবে। আশা করা যাচ্ছে, জানুয়ারী, ২০২৬ সময়ে বাপেক্সের ৫টি রিগ এবং টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের ৬টি রিগসহ মোট ১১টি রিগ এর মাধ্যমে একই সাথে মোট ১১টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম চলমান থাকবে। বাপেক্স কর্তৃক খনন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাপেক্সের ৫টি রিগের পাশাপাশি আরো ২টি নতুন রিগ ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লিখিত ১১টি কূপের খনন কার্যক্রমের সফল সমাপ্তিতে আনুমানিক দৈনিক ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান নিশ্চিত করা যাবে মর্মে আশা করা যায়। ফলশ্রুতিতে দেশের নিজস্ব গ্যাস ক্ষেত্রসমূহ হতে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের বিদ্যমান গ্যাস সংকট হ্রাস করে দেশের অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক ‘বিষাদ সিন্ধু’-এর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী আজ । দিবসটি উপলক্ষে তার স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালির লাহিনীপাড়ায় দুই দিনব্যাপী জন্মোৎসব শুরু হচ্ছে আজ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসব চলবে ১৩ ও ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
এ উৎসবকে ঘিরে বসেছে গ্রামীণ মেলা। বাহারি রঙের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। স্থানীয় শিল্পী, সাহিত্যপ্রেমী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছেন এ আয়োজনে।
এদিকে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ায় কবির বাস্তুভিটায় দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে লাঠিখেলা ও আলোচনা শেষে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাট্যানুষ্ঠান। এদিন মঞ্চায়িত হবে কবির লেখা নাটক ‘জমিদার দর্পণ’। পরিবেশনা করবেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। শুক্রবার মধ্যরাতে কবির কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’ অবলম্বনে নাটক ‘এজিদের পরিণতি’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জন্মোৎসব।
১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গৌর নদীর তীরে লাহিনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের এই পথিকৃৎ।
তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মহান এই মনীষী মৃত্যবরণ করলে তাকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে সমাহিত করা হয়।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘কবির ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নিবন্ধিত ১২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রথম দফায় ছয়টির সাথে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কমিশন যে ছয়টি দলের সাথে মতবিনিময় করেছে সেসব দল হল- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
একই দিনে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এর সাথে মতবিনিময় করবে ইসি।
এতে চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবলায়ের সিনিয়র সচিব উপস্থিত থাকছেন।
ইসি সচিবলায়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত বিশাল কর্মযজ্ঞ যথাযথভাবে সম্পাদনে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, নারীনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিবৃন্দের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ বিষয়ক এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিতে আনা পরিবর্তন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা করাই এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য।’
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারী নেত্রী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেছে। এসব মতবিনিময় থেকে পাওয়া পরামর্শ ও প্রস্তাব আচরণবিধি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় ঢাকার উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে জেলার সড়ক-মহাসড়কজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
নাশকতা প্রস্তুতির অভিযোগে গত ৩৬ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
জেলা শহর থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও আঞ্চলিক সড়কগুলোয় চলছে কড়া তল্লাশি। একই সঙ্গে পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘এটা যেহেতু পূর্বঘোষিত কর্মসূচি, তাই আমরা ১০ তারিখ থেকেই বিশেষ অভিযান শুরু করেছি। নিরাপত্তা জোরদারে রিজার্ভ ফোর্স থেকেও ৫০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২৬টি চেকপোস্টের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে।’
পুলিশ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকে জেলাজুড়ে ধারাবাহিক অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাশকতার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে পুলিশ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘিরে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দেয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস আরেক বাসের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে উভয় বাসের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিউ রাজন নামের একটি লোকাল বাস রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ভবানিপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। এমন সময় কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এসবি পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাজন পরিবহন নামের লোকাল বাসকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে লোকাল বাসটি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পাংশা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেহাল উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১১ জনের মধ্যে ৮ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, আর ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে ও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্য লিপ্ত গণহত্যাকারীদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সর্বস্তরের জনগণ।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ভৈরব পৌর শহীদ মিনার চত্বরে ভৈরবের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ।
সমাবেশে বক্তরা তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশের শান্তি বিনষ্ট ও নির্বাচনকে ভাংচাল করতেই ফ্যাসিস্ট দল অনলাইন মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টির করছে। নিরীহ জনগণের সম্পত্তি আগুনে পুড়ে ধ্বংস করছে।
দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পলাতক আওয়ামী দোষরদের লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহত করতে আমরা ভৈরবের জনগণ মাঠে আছি কোন ষড়যন্ত্রকারী দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে দেয়া হবে না।
সমাবেশে বক্তব্যে রাখেন, আজহারুল ইসলাম রিদম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম শাহরিয়ার, জাহিদুল হক , মহিউদ্দিন, শেখ মহিউদ্দিন চিশতী প্রমূখ।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ও জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইইনিট। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা হামলা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের উপস্থিতি ছিল কম। বুধবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড়ে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এর আগে এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের ও ৫০ জন গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় ডিএমপি।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১২টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকায় আলম পরিবহন নামে একটি বাসে আগুনের ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় এক হেলপারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী ও সোনারগাঁও জনপদ, ধানমন্ডি সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, বাড্ডা ও বসুন্ধরার ১০০ ফিট এলাকায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যদিও ঢাকার এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন। মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একইভাবে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একইদিন ভোরে মোহাম্মদপুরে সরকারের একজন উপদেষ্টার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের গেটে দুটি পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চোরাগুপ্তা মিছিল ও নাশকতার অপচেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪টি ঝটিকা মিছিল হয়েছে এবং ৫৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
কমিশনার বলেন, ‘এদের বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। টাকার বিনিময়ে তারা মিছিলে অংশ নেয়, তারপর ঢাকার বাইরে চলে যায়।’
রায় ঘোষণার দিন ঘিরে বাড়তি সতর্কতা: আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হতে পারে। পুলিশ বলছে, ওই দিন আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছে। নাশকতা ঠেকাতে হোটেল, মেস ও গেস্টহাউসে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার আগে পরিচয় যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির সদর দপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সদরদপ্তর সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছে যেন বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢোকতে না পারে। এ জন্য গণপরিবহন, রেল ও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী নাশকতার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়ে মাঠে আছি। কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা করে, কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র করে আমরা সাইবার মনিটরিং, টহল এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি। এটি গুজব হোক বা বাস্তব পরিকল্পনা- আমরা প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সতর্ক আছি।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব ও পুলিশ উভয় সূত্রই মনে করছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এখন বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির সক্ষমতা নেই, তবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলটির বিদেশে পালিয়ে থাকা কয়েকজন নেতা অনলাইনে ‘লকডাউন’ ঘিরে নাশকতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের ভেতরে তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক দুর্বল হলেও, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে সব দোকান, বাণিজ্য এবং শপিংমল খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কার্যক্রম চালাবে। তবে একই দিনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল সারাদেশে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে বাস ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি মূলত রাজনৈতিক প্রতীকী প্রতিবাদ হলেও এর আড়ালে থাকতে পারে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কৌশল। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের লকডাউন কোনো বাস্তব আন্দোলন নয়, বরং এটা তথ্যযুদ্ধের অংশ। সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে এখন তাদের সংগঠিত কোনো শক্তি নেই।
তবে, গুজব বা অনলাইন প্রচারণা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই গোয়েন্দা নজরদারি ও জনসচেতনতা দুটোই এখন সমান জরুরি বলে মত তাদের।
ফ্যাসিবাদীদের গণপ্রতিরোধের ডাক; কথিত ‘লকডাউন’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এ ধরনের নাশকতা ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ১৩ নভেম্বর রাজপথে থাকার কথা জানিয়েছেন। ঢাকায় জাতীয়তাবাদী যুবদল আওয়ামী লীগের নাশকতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
এছাড়া ‘জুলাই ঐক্য’ ১৩ নভেম্বর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। আগের দিন ১২ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে’ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা।
সহিংসতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার পরামর্শ: অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসে আগুন ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করছে। যারা অতীতে অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বক্তব্য-বিবৃতিবাজি করেছে, তারাই এখন সে ধরনের নাশকতায় জড়িত হওয়ায় জনমনে তাদের অতীতের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজধানীতে কয়েকটি বাসে আগুন এবং ধর্মীয় স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। হাজিরা দিতে এসে দিনে-দুপুরে সবার সামনে একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হলেন, যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে। অতীতে সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি করে মানুষকে আতঙ্কিত করে এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সহিংস পন্থা বেছে নিয়েছে বলে উদাহরণ আছে, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত।
এই পরিস্থিতি যত বেশি সৃষ্টি হবে সাধারণ মানুষ তত বেশি আতঙ্কিত থাকবে উল্লেখ করে তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে রাজনৈতিক পরিচয়সহ কোনো ধরনের বিবেচনা গণ্য না করা।
নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রশ্নে সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন জানিয়ে ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাধারণ মানুষকে নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকা এবং কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতার উপস্থিতি লক্ষ্য করলে একত্র হয়ে মোকাবিলা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দায়িত্বশীল ভূমিকা সব প্রকার সংঘাত-সহিংসতা থেকে পরিত্রাণের ও প্রতিরোধের শক্তিশালী উপায়।
ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মতো অপতৎপরতা রোধে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজধানীসহ ঢাকায় ১২ প্লাটুন ও আশপাশের জেলায় দুই প্লাটুনসহ মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত বিজিবি মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১৩ নভেম্বর। এই রায়কে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
ঢাকায় পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা: ডিএমপি
এদিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইল মোড়-সংলগ্ন রমনা থানার সামনে পুলিশের একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হলে তা মেরামতের জন্য মেকানিক আনা হয়। পরবর্তীতে গাড়িটি সারানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেও চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে গাড়ির ইঞ্জিন গরম হয়ে গাড়িটিতে আগুন ধরে গেলে মেকানিক সামান্য আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি অনেকে ভিন্নভাবে প্রচার করছেন, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা।
চরাঞ্চলে এগ্রোইকোলজিক্যাল ফামিং পদ্ধতিতে মিশ্র ও আন্তঃফসল চাষের মাধ্যামে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালুচেইন উপপ্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরে কৃষকের মাঝে উন্নত মানের সোলার প্যানেল ও সেচ মেশিন বিতরণ করেছে একেকে।
বুধবার ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা আমরা কাজ করি- একেকের প্রধান কার্যালয়ে চরাঞ্চলের নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের মাঝে ২০টি সেচ মেশিন ও ৫টি সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে।
একেকে নির্বাহী পরিচালক এম এ জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেচ মেশিন ও সোলার প্যানেল বিতরণ করেন ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহিদুজ্জামান। এ সময় ফরিদপুর বিএসটিআই উপপরিচালক মো. কামাল হোসেন, একেকের প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর এম এ কুদ্দুস মিয়াসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।