সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
১ পৌষ ১৪৩২

গোয়ালন্দে টমেটোর বাম্পার ফলন, ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৬:৫৬

রাজবাড়ী জেলায় পদ্মার তীরে বন্যা পরবর্তিতে জেগে ওঠা চরে চাষ করা হয়েছে উন্নত জাতের টমেটো। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম চাষ করা এই টমেটোর এবার বাম্পার ফলন ফলেছে। দামও ভালো পাওয়ায় লাল সবুজ টমেটো হাসি ফুটিয়েছে কৃষকের মুখে। ক্ষেতে উৎপাদিত এই টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও সঠিক দিক নির্দেশনায় উন্নত জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের টমেটো বিউটি প্লাস বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকার মত। হাইব্রিড জাতের টমেটো যেমন বিউটি প্লাস আবাদ করে কৃষকের প্রতি বিঘায় টমেটোর ফলন পাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ মন করে। এছাড়াও বাজারে টমেটোর ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছে কৃষকেরা।

কৃষক শুকুর আলি জানান, এবার মাচা পদ্ধতিতে হাইব্রিড বিউটি প্লাস টমেটো চাষ করেছি ফলন ভালো হয়েছে আর বাজারে ভালো দামও পাচ্ছি। প্রতি কেজি টমেটো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। এবার আমি আধুনিক পদ্ধতিতে পাঁচ বিঘা জমিতে হাইব্রিড টমেটো আবাদ করেছি। হাইব্রিড টমেটো আবাদে খরচ কম লাভ বেশি।

আরেক কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছরে ৭ বিঘা জমিতে হাইব্রিটি বিউটি প্লাস আগাম জাতের টমেটো আবাদ করেছি এবং ভালো ফলনও হয়েছে। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে টমেটোর ফলন হচ্ছে প্রায় ১ শত থেকে ১২০ মন করে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছে। ক্ষেতের৷ খরচ বাদ দিয়ে এবার অনেক টাকা লাভ হবে আশা করা যাচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়াজানি গ্রামের চাষি সোবান শেখ বলেন, ‘এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়াও আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা দমন করা হয়েছে। আমরা ভালো দাম পেয়ে খুশি।’

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার জানান, চলতি বছরে এই উপজেলায় ২১৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে এছাড়াও টমেটোর ফলনও ভালো হয়েছে, বাজারে দামও বেশি পাচ্ছে কৃষককেরা।

তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সেক্স ফরোমোন ফাঁদ দ্বারা ক্ষতিকর পোকা দমন, টমেটোর বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই, উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা ও সুষম মাত্রায় সার, কীটনাশক ব্যাবহারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে কৃষক লাভের মুখ দেখছেন। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন কৃষকরা।


মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন খোকনের

বছরে ৩০ লাখ টাকা আয়ের আশা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়েনের গাঁয়ের সরু মেঠোপথ ধরে কদমতলী গ্রামে ঢুকলেই দেখা মেলে লতানো সবুজে ঢাকা বিশাল এক বাগান। লাউয়ের মাচাজুড়ে ঝুলে আছে ডজন ডজন ফল। ভোরের আলোয় ঝিলমিল করা শিশিরবিন্দুর মতোই ঝলমল করে ওঠে এই বাগান। আর সেই বাগানেই বাস খোকন মিয়ার।

১৫ বছর আগেও তিনি ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। সংসার টানতে হিমশিম খেতে হতো। মৌসুমি ফসল চাষ করতেন। তবে তার ভরসা ছিল না কোনো নিশ্চয়তা। সিদ্ধান্ত নিলেন লাউ চাষ করবেন মাচা পদ্ধতিতে। শুরুর প্রথম বছরেই মিলল সাফল্য। সেই সাফল্যকে আঁকড়ে ধরে তিনি আজ একজন স্বাবলম্বী কৃষক।

দিন শুরু হয় তার ভোরেই। হাত ভর্তি ঘাম শরীরে সূর্যের উত্তাপ আর মনোযোগের সাথে একের পর এক লাউয়ের পরিচর্যা। তার পাশে সমানতালে কাজ করেন ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক। শুধু লাউ নয় চাষ হচ্ছে জীবনযুদ্ধ জয়ের গল্পও।

বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে লাউ চাষ করছেন তিনি। এই ফসলই তার আয়ের প্রধান উৎস। খোকন জানান, বছরে এখান থেকেই সব খরচ বাদে আয় হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, তিনি আরও ১০ বিঘা জমি প্রস্তুত করছেন। তার আত্মবিশ্বাস একই পদ্ধতিতে পুরো বছরই চাষ করলে আয় হবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

পাইকারি বিক্রি নয় লাউ তুলে নিজেই বাজারে নিয়ে যান খোকন। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে তার দোকানে। ক্রেতারা বলেন, টাটকা আর সুস্বাদু খোকন মিয়ার লাউ। লাউ গাছ প্রকৃতির কাছে একটু বেশিই সহজ-সরল। রোগ কম কীটপতঙ্গও তেমন আক্রমণ করে না। ফলে খরচও হয় কম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, উপজেলায় প্রতি বছর বাড়ছে লাউয়ের বাণিজ্যিক আবাদ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, খোকনের লাউ বাগানে তারা নিয়মিত পরামর্শ দেন। উন্নত বীজ ও সার দিয়ে চাষাবাদে সহায়তাও করেছে কৃষি বিভাগ। তিনি আরও জানান, এবার উপজেলায় ১২০ একর জমিতে লাউয়ের আবাদ হচ্ছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি টাকার উপর।


ভেড়ামারায় তুলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

*বীজ বপনের ৬ মাস পর সংগ্রহ করা যায় তুলা *এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪৭ হেক্টর জমি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৪৭ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। এ অঞ্চলে দিন দিন তুলা চাষ অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তুলা গাছে ব্যাপক ফলন দেখে বোঝা যাচ্ছে খরচের তুলনায় এবার কৃষকের কয়েকগুণ বেশি মুনাফা হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে কম খরচে বেশি মুনাফার কারণে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

ভেড়ামারা কটন ইউনিট কর্মকর্তা মঞ্জুয়ারা বেগম জানান, হোয়াইট হোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২, রুপালী-১, ডিএম-৪, সিবি-১ হাইব্রিড ও বিটি কটন, উফশী জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। উচ্চফলনশীল তুলার এ জাতগুলো প্রতি বিঘায় ১৬-২০ মণ হারে ফলন হয়।

এ উপজেলায় চলতি বছরে ১৪৭ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কৃষকের নিজ অর্থায়নে চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা। তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে জুনের প্রথমাংশ পর্যন্ত জমিতে তুলা বীজবপন করতে হয়। বীজ বপনের ৬ মাস পর তুলা সংগ্রহ করা যায়। তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে সরকার।

ভেড়ামারা উপজেলায় কম পুঁজিতে নামমাত্র শ্রমে ও সরকারি সহযোগিতায় তুলা চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাদের উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নেয়। ফলে কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় তুলাতে অধিক লাভবান হচ্ছেন। সরকারি সহায়তায় কৃষকরা সিবি-১২ এবং হাইব্রিড প্রজাতির রুপালি-১ জাতের তুলার চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়াতে এ বছর কৃষকের আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু খেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এতে তুলা চাষিরা কীটনাশকের বদলে ফেরোম্যান ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন। কৃষকেরা গত বছর বীজ তুলার দাম পেয়েছিল মণ প্রতি ৪ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ১শত টাকা। কৃষকদের তুলা চাষে সরকার বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, প্রশিক্ষণ ভাতা, প্রদান করে থাকেন। এর মধ্যে তুলা প্রদর্শনীসহ প্রণোদনাও দিয়ে আসছে।

হাসান আলি নামে একজন কৃষক জানান, বর্তমানে তুলা চাষ করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। তিনি তার ৪ বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তুলা চাষ করেছেন। তার আশা এ বছর তিনি ভালো মুনাফা পাবেন। তুলা চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অনেক অনুর্বর, নিস্ফলা বা অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব।

মসলেম উদ্দিন জানান, নিস্ফলা জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা বেশ টাকা পাচ্ছেন, তাদের পরিবারে আসছে স্বচ্ছলতা। তাই অনেকে ধান ও গমসহ বিভিন্ন আবাদ ছেড়ে তুলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

তুলা চাষিরা জানান, রুপালী-১, হোয়াইট গোল্ড-১, হোয়াইট গোল্ড-২, ইস্পাহানি শুভ্র-৩, লালতীর ডিএম-৪, সিবি-১, উফশী, বিটি তুলা জাতের তুলা প্রতি বিঘাতে বীজসহ উৎপাদন হয় ১৫ মণ থেকে ২০ মণ করে। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। এমন অনুর্বর জমিতে অন্য কোনো ফসলে এই লাভ পাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। আবার একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেও বাড়তি আয় করা যায় বলে অনেক চাষি তুলা চাষের দিকে মনোনিবেশ করছেন। স্বল্পপুঁজি ও স্বল্প পরিশ্রমে তুলা চাষে অনায়াসে লাখপতি বনে যাওয়া যায় বলে অনেক কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন।

তুলা চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন, এমনটাই কৃষি সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।


দৌলতপুরে ফুলকপি চাষ করে কৃষকের বাজিমাত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি, সবজি খ্যাত কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় এ সবজির চাষ করছেন কৃষকরা। প্রাকৃতিকভাবে মাটি উর্বর হওয়ায় বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষে সফলতা পেয়েছেন এ উপজেলার চাষিরা।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব কপি চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমানে প্রতি বিঘা জমিতে কপি বিক্রি করে লাভ হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি বিঘা কপি চাষ করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা জমির কপি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারে দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তাই লাভও বেশি।

উপজেলার গরুড়া গ্রামের বাসিন্দা মহি উদ্দিন বলেন, ‘শীতে আগাম জাতের ৭ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২ বিঘা জমির কপি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার। আরও ৫ বিঘা কপি বিক্রির উপযোগী হয়নি।’

এ কৃষক আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘাতে লাভ হবে ৫০ হাজার টাকা।’

আমিরুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘৭ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি এবং ফুলকপি চাষ করেছিলাম। খরচ হয়েছিল বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা। বিক্রি করেছি সাড়ে ৩ বিঘা ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। এখনো সাড়ে ৩ বিঘা কপি আছে, বাজার দর ভালো, ভালো দামের আশা করেন তিনি।’ একই এলাকার কৃষক সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে তামাক চাষ করতাম, কপি অনেক লাভজনক আবাদ ‘২ বিঘা কপি লাগিয়েছি। ১ বিঘা বিক্রি করেছিলাম ৮০ হাজার টাকায়। আড়ায় থেকে ৩ মাসের আবাদ শীতের মৌসুমে ভালো হয়।’

এদিকে উপজেলার ধর্মদহ গ্রামের ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৩ বিঘা ফুলকপি লাগিয়েছি, তাতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাজারে বিক্রি করলে বিঘা প্রতি ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, ‘এ বছর দৌলতপুরে শীতকালীন কপির চাষের লক্ষ মাত্রা ৩৪২ হেক্টর জমিতে তা পূরণ হয়েছে ২৬০ হেক্টর জমি। চাষিদের শীতকালীন কপি চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান কৃষি বিভাগ।

প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে দৌলতপুরে সবজি চাষ তাতে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা বলে জানান এই কর্মকর্তা।


বস্তায় আদা চাষে স্বপ্ন বুনছেন ভালুকার আক্তার হোসেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ভালুকা (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ভালুকায় কৃষি খেতে যুক্ত হয়েছে নতুন উদ্ভাবনী ধারা। হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও আওলাতলী এলাকার প্রবাস ফেরত কৃষক মো. আক্তার হোসেন বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। প্রচলিত কৃষিপদ্ধতি বদলে বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে তিনি যেমন অভাবনীয় সফলতার মুখ দেখেছেন, তেমনি আশাবাদী হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও।

দেশে ফিরে ব্যবসার পাশাপাশি নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই আক্তারের এ উদ্যোগ। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে প্রথমবারের মতো তিনি শুরু করেন বস্তায় আদা চাষ। চলতি মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে মোট ৫ হাজার ৫০০ বস্তায় আদা লাগিয়েছেন তিনি। প্রতিটি বস্তায় খরচ পড়েছে মাত্র ৩৪-৩৫ টাকা। বাজারদর কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা হলে প্রতি বস্তায় গড়ে ১ কেজি আদা পেলেই সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

পদ্ধতিটির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারাও। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘বস্তায় চাষে রোগবালাই তুলনামূলক কম হয়, পানি জমে পচনের ঝুঁকিও নেই। ফলে জমির চেয়ে এ পদ্ধতি বেশি নিরাপদ ও লাভজনক।’

এরই মধ্যে বস্তায় আদা চাষ ভালুকায় নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আক্তারের সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক কৃষক নিজ বাড়ির ফাঁকা জায়গা কিংবা অল্প জমি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, ‘চলতি বছর ভালুকা উপজেলায় মোট ৮৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা- জায়গা কম লাগে, খরচ কম, রোগবালাইও কম। ঘরোয়া পরিবেশেও সহজে চাষ করা যায়। তিনি আরও জানান, যারা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী, তাদের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’


জয়পুরহাটের কৃষকের নতুন আশা পানিফল

৬ হাজার টাকা ব্যয় করে আয় ৬০ হাজার
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জয়পুরহাট প্রতিনিধি

জয়পুরহাট জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলোর পতিত জলাভূমি ও আমন মৌসুমে ডুবে থাকা নিচু জমিতে এখন ব্যতিক্রম এক চাষাবাদ চলছে। ডুবে থাকা এসব জমিতে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রাকৃতিক ফল ‘পানিফল’।

জেলার গতনশহর, পারইল, মীর্জাপুর, ধরঞ্জিসহ আশপাশের এলাকায় এ ফল চাষ হচ্ছে। জলাশয়ে ভাসমান সবুজ পাতার নিচে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে বাদামি কিংবা কালচে বর্ণের এই ফল। খরচ কম, ফলন ভালো, বাজারে চাহিদাও বাড়ছে। সব মিলিয়ে পানিফল এখন জয়পুরহাটের কৃষকের নতুন আশার নাম।

মাত্র তিন মাস সময়কালের এই ফল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, নিচু জমিতে আমন মৌসুমে পানি জমে থাকায় তারা এ বিকল্প চাষ বেছে নিয়েছেন। বিঘাপ্রতি মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

গতনশহর গ্রামের চাষি বাবুল হোসেন বলেন, ‘এবার প্রায় ২ বিঘা জমিতে পানিফলের চাষ করেছি। আগে এই জমিগুলো জলাবদ্ধ অবস্থায় ফাঁকা পড়ে থাকত। এখন পানিফলের চাষ করে প্রতিদিন বাজারে ৫০-৬০ কেজি বিক্রি করছি। প্রতি কেজির পাইকারি দাম ২৫-৩০ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এটি চাষে তেমন সার-কীটনাশক লাগে না, শুধু জলাশয় ও যত্ন থাকলেই ফলন ভালো হয়।’

পানিফল চাষে শুধু পুরুষ নয়, অনেক নারী উদ্যোক্তাও এগিয়ে আসছেন। রোকসানা বেগম বলেন, ‘সকালবেলা পুকুরে নেমে ফল তুলি, বিকেলে বাজারে বিক্রি করি। এতে সংসারের খরচ কিছুটা হলেও চালাতে পারছি।’

স্থানীয় যুবক মেহেদী হাসান জানান, ‘আমার আবাদযোগ্য জমি না থাকলেও এখান থেকে পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করি। তাতে দিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ করি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম জানান, ‘জয়পুরহাট জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ করা হয়েছে। এখনো সীমিত পরিসরে হলেও এর সম্ভাবনা বিশাল। আমরা সরকারি সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছি। চাষিদের সময়মতো পরামর্শ দিচ্ছি।’

পানিফল শুধু চাষিদের জীবিকা নয়, একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন জানান, ‘পানিফল শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে, টক্সিন দূর করে, হজম শক্তি বাড়ায়। এতে রয়েছে- ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন- সি ও বি-১২ ও আয়রন। যা হাড় ও রক্তে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস-অম্বল দূর করে।


আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত তাহিরপুরের কৃষক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলার কৃষকদের মধ্যে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ও অনিয়মিত বৃষ্টির প্রভাব পড়লেও থেমে নেই কৃষকদের শীতকালীন সবজি চাষ। উপজেলার উঁচু জমিতে নানা জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। সরজমিন দেখা গেছে, কেউ জমি তৈরি করছেন, কেউ চারা রোপণে ব্যস্ত, কেউবা আগাছা পরিষ্কার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন। এক কথায়, আগাম বাজার ধরার আশায় এখন মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাহিরপুর কৃষকরা। এ অঞ্চলের কৃষকরা মুলা, শিম, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, করলা, লাউ, কাঁচামরিচ, ঢেঁড়স ও গাজরসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। শুধু পরিবারের প্রয়োজন মেটানো নয় বাণিজ্যিকভাবে এসব সবজি চাষ হচ্ছে। আগাম মৌসুমে সবজি বাজারে তুলতে পারলে বিভিন্ন অঞ্চলে তা পাঠানো হবে বলে জানান কৃষকরা।

জানা গেছে, আগাম ফসলের চাহিদা ও দাম দুই-ই বেশি থাকে। ফলে মুনাফাও বেশি হয়। উঁচু জমি পানি না জমায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির মতো সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় এসব ফসলে ঝুঁকছেন তারা।

বাদাঘাট ইউনিয়নে এলাকার রকমতপুর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, প্রতি বছরই আমরা আগাম শিম ও অন্যান্য সবজি চাষ করি। এবারও এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করছি। আশা করছি ভালো ফলন হবে।

বিন্না কুলি গ্রামের সোহেল বলেন, আগাম চাষে লাভ বেশি হয়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন সম্ভব। এখন আমরা জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করছি ফলে সবজির গুণগত মান ভালো, চাহিদাও বেশি।

উত্তর বড় দল ইউনিয়নের বারওয়াল গ্রামের শিম চাষি জয়নাল জানান, এখন বাজারে শিম বিক্রি করছি পাইকারি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এ দামটা আগাম মৌসুমেই পাওয়া যায়। চরাঞ্চল বোরচর এলাকার কৃষকরাও জানান, শীতের আগে সবজি তোলা গেলে বাজারে দাম থাকে ভালো, তাই সবাই এখন ব্যস্ত আগাম ফসল তুলতে।

কৃষক রহিম বলেন, বাজার ধরতে আমরা এবার আগেভাগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটোর চারা রোপণ করেছি। প্রায় সাড়ে এক একর জমিতে ১৫-১৮ হাজার চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার খরচ আট থেকে দশ টাকা। তিন মাসের মধ্যে বিক্রি হবে প্রতি কপি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। আশা করছি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গত বছর উপজেলায় প্রায় ১,৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছিল। চলতি বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ১,৭৪৫ হেক্টরে পৌঁছেছে। জমিতে আগাম রবি ১৯/২০ জাতের সবজি চাষ সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পর থেকেই কৃষকরা আগাম শীতকালীন বিভিন্ন সবজির আবাদ শুরু করেছেন। এখন বাজারে এসব সবজি উঠছে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আগাম চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে, তবে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ, সুষম সার ব্যবহারে ও কীটনাশক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।


খিরা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৪শত হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ হয়। এ উপজেলার উত্তর এলাকায় খিরার জন্য বেশ সমৃদ্ধ। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নে কম বেশি খিরার আবাদ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত খিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। মূলত ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় এখানকার খিরা। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, অসময়ে বৃষ্টির কারণে অনেক নিচু জমি প্লাবিত হওয়ায় খিরার ফলন এ বছর কিছুটা কম হবে।

তিন মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। স্বল্প সময়ে অধিক ফলনে আর্থিকভাবে কৃষক হয় লাভবান। তবে বর্তমানে খিরা উৎপাদনে বীজ ও সারের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষক। তবে দিনদিন বাড়ছে খিরার আবাদ। উপজেলার অন্যতম পাইকারী খিরার বাজার দাউদকান্দি সদরের পুরাতন ফেরীঘাটে অবস্থিত। খিরার মৌসুমে বাজারটি সন্ধ্যার পর জমজমাট হয়ে ওঠে। কৃষক, আড়তদার আর পাইকারদের পদচারণায় বাজারটি হয়ে উঠে সরগরম।

সরেজমিনে দেখা যায়, জমিতে কৃষকরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। কেউ মাটি নরম করছেন কেউ মনোযোগী গাছের পরিচর্যায়। কৃষক মো. সোলায়মান কয়েক বছর ধরে সফলভাবে খিরা চাষ করছেন। এবছরও তিনি সাত কানি জমিতে খিরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও ভালো ফলনের আশা করছি। আগের বছরের চেয়ে এবার বেশি খিরা তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়েনের শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে উৎপাদন খরচ। ফলে কমছে লাভের হার। যদিও নানা সমস্যা আছে, তবু তিনি মনে করেন সঠিক পরিচর্যা করলে খিরা চাষে লাভবান হবে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফসল ওঠা শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, প্রতিবছর দাউদকান্দির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়ে থাকে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির কারণে দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলের অনেক জমি এখনো পানির নিচে রয়েছে। ফলে এবার কিছুটা কম চাষাবাদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


শেকড় প্রযুক্তি: নগরায়ণের চাপে নতুন আশার আলো

*ছাদবাগানে স্বল্প খরচে দ্বিগুণ ফলন *নতুন চাষ প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে কৃষিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
যশোর প্রতিনিধি

কাঠ ও কংক্রিট দিয়ে উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে ২২টি বেড। প্রতিটি বেড ৪ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি দিয়ে ভরাট করা। তাতে লাগানো হয়েছে লাউ, শিম, কুমড়া, বরবটি, বাঁধাকপি, পেঁপে, কাঁচামরিচসহ ২২ ধরনের সবজি। শুধু সবজি নয়, এই চার ইঞ্চি বেডেই রোপণ করা হয়েছে পেয়ারা, জলপাইসহ নানা ফলদ গাছ। এগুলো থেকে সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে নিয়মিত। যা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে।

বলছিলাম যশোর সদর উপজেলার হামিদপুরের বাসিন্দা কৃষিবিদ ইবাদ আলীর ছাদবাগানের কথা। তিনি নিজের ছাদে গবেষণার মাধ্যমে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

নাম দিয়েছেন ‘শেকড় প্রযুক্তি। তার এ সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে আশপাশসহ সারাদেশে এ প্রযুক্তিতে প্রায় এক হাজার ছাদবাগান গড়ে উঠেছে। এই শেকড় প্রযুক্তিতে শুধু ছাদে নয়, জলাবদ্ধ এলাকা ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ করেও লাভবান হওয়া সম্ভব বলে দাবি প্রায় চার বছরের গবেষণায় সফল হওয়া এই কৃষিবিদের।

কৃষিবিদ ইবাদ আলী পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি শুধু গবেষক নন, বরং একজন স্বপ্নবুননকারী। স্থানীয় সরকার বিভাগের চাকরির ব্যস্ততা সামলে তিনি ছাদে, মাটিতে, আর বইয়ের পাতায় এক নতুন কৃষি দর্শন গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি তিনি শেকড় প্রযুক্তি নিয়ে একটি বইও লিখেছেন, যাতে ছাদকৃষি করতে ইচ্ছুক মানুষ সহজেই তার পদ্ধতি শিখে নিতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইবাদ আলীর বাড়ির ছাদ যেন দিগন্তজোড়া সবজি খেতে পরিণত হয়েছে। মাচায় ঝুলছে লাউ, বরবটি ও কুমড়া। বাঁধাকপির পাতা বাঁধতে শুরু করেছে। ফলন হয়েছে কাঁচামরিচের। নিজের উদ্ভাবিত শেকড় প্রযুক্তিতে ২২ ধরনের সবজি ও ফল চাষ করেছেন তিনি।

কৃষিবিদ ইবাদ আলী বলেন, গাছের শেকড়ই ফসলের প্রাণ। শেকড় বুঝতে পারলেই গাছকে বোঝা যায়। এই বিশ্বাস থেকেই এসেছে ‘শেকড় প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে গাছের শেকড়ের গঠন ও বিন্যাস অনুযায়ী মাটি, পানি, বায়ু, আলো ও খাবারের (সার) সঠিক ব্যবহার হয়। গাছ মাটির অগভীর অঞ্চল থেকে খাবার গ্রহণ করে। গাছ সাধারণত সমবায় পদ্ধতিতে খাবার গ্রহণ করে। কিছু গাছের শেকড় মাটির অগভীর অঞ্চল থেকে মূল রোমের মাধ্যমে খাবার নেয়। সাধারণত মূল রোমের সংখ্যা উৎপাদনের সমানুপাতিক। মূল রোমের সংখ্যা যত বেশি হবে, ফসল উৎপাদন তত বেড়ে যাবে। মূল রোমের সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপায় হলো পাশে স্পেস বা জায়গা বাড়ানো এবং পরিমিত খাবার, পানি সরবরাহ।

শেকড় প্রযুক্তির মূল কথা হলো- সবজি বীজ বা চারা বেডে রোপণ করতে হবে। ফলের চারা চ্যানেল সিস্টেমে রোপণ করতে হবে। ড্রামে বা টবে রোপণ করা যাবে না। সবজির জন্য মাটির গভীরতা ৪ ইঞ্চি হতে হবে (৬ ফুট বাই ৩ ফুট মাটির গভীরতা ৪ ইঞ্চি) এবং ফলের জন্য মাটির গভীরতা ১০ ইঞ্চি। ফলের টবের ব্যাস কমপক্ষে ৩ ফুট। ফর্মুলা অনুযায়ী মাটিতে সব ধরনের খাদ্যপ্রাণ মেশাতে হবে। পরিমিত সেচ নিয়মিত দিতে হবে। ফলের গাছে চ্যানেল আকারে রোপণ করতে হবে। যে গাছের শেকড়ের জন্য যতটুকু মাটি প্রয়োজন, সেই পরিমাণ মাটি ব্যবহার করতে হবে। একটুও কম বা বেশি নয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি বর্গফুট জায়গায় ১২ কেজি মাটি লাগে।

তিনি বলেন, ১৮ বর্গফুটের বেডে ৩ দশমিক ৫ বস্তা মাটি লাগে। যার ওজন ১৫৪ কেজি। একটি সাধারণ ড্রামের মাটির সমান। একই মাটি ব্যবহার করে ছাদে ১০ গুণ বেশি ফসল ফলানো সম্ভব। বেডগুলো সুন্দর করে সাজাতে পারলেই ছাদের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। হাঁটার জন্য অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে। পুষ্টির প্রায় ৯৫ শতাংশ আসে সবজি ও মসলা থেকে, যা ড্রামে বা টবে চাষ করা সম্ভব নয়। ড্রাম বা টব পদ্ধতিতে খরচ বেশি। সে অনুযায়ী উৎপাদন কম। শেকড় প্রযুক্তিতে ফল বা সবজি রোপণ করলে ফলন দ্বিগুণ হয়।

কৃষিবিদ ইবাদ আলী বলেন, গতানুগতিক ছাদ কৃষিতে লাভ কম, খরচ বেশি। আমার উদ্ভাবিত শেকড় প্রযুক্তিতে সাশ্রয়ী খরচে কম জায়গায় বেশি উৎপাদন হচ্ছে।

ইবাদ আলীর শেকর প্রযুক্তি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাদবাগান করা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম বলেন, শেকড় প্রযুক্তিতে আমিও ছাদবাগান করেছি। পাশাপাশি টবেও সবজি লাগিয়েছিলাম। তবে ইবাদ আলী ভাইয়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে তুলনামূলক ভালো ফলন পেয়েছি।

ইবাদ আলীর স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা বলেন, শেকড় পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবেও ছাদবাগান করা সম্ভব। এতে পরিবারের সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে উপকৃত হওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ইবাদ আলী শেকড় প্রযুক্তিতে পরিকল্পিতভাবে বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করেছেন। তার নতুন চাষ প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে কৃষিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। যদি তার শেকড় প্রযুক্তি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে শহরেও মানুষ নিরাপদ ও পুষ্টিকর সবজি উৎপাদন করতে পারবে।

মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ভবদহের মতো জলাবদ্ধ এলাকাতেও ভাসমান শেডে এই পদ্ধতিতে চাষ সম্ভব। যে দেশ প্রতিদিন মাটি হারাচ্ছে নদী ও নগরায়ণের চাপে, সেখানে ইবাদ আলীর শেকড় প্রযুক্তি যেন এক নতুন আশার আলো।


কৃষকদের বিনা মূল্যে গাজর, টমেটোর বীজ দিল বাকৃবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে মাঠ পর্যায়ে গাজর ও টমেটো উৎপাদন বিষয়ে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন এবং বীজ ও চারা বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন চর নিলক্ষীয়ায় প্রায় ৪০ জন কৃষকের অংশগ্রহণে ওই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এ সময় কৃষকদের মাঝে ৩ হাজার টমেটোর চারা এবং কৃষক প্রতি দুই শতাংশ জমিতে বপনযোগ্য ৫০ গ্রাম করে গাজরের বীজ প্রদান করা হয়।

‘খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিকূল পরিবেশে সহনশীল পুষ্টিসমৃদ্ধ রঙিন গাজর ও টমেটোর উদ্ভাবন ও বিস্তার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান, প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমানের সভাপতিত্ব করেছেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক এ. এস. এম. গোলাম হাফিজ কেনেডি, কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রকল্পের কো-পি আই অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, বাকৃবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রোস্তম আলী, গাজর ও টমেটো গবেষণার প্রকল্প পরিচালক ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ এবং অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান বলেন, এখন বাজারে সব সবজির দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। গাজরের দাম এখন ১০০ টাকার উপরে। টমেটোরও দাম বেশি। কারণ এগুলোর চাহিদা অনেক। তাই গাজর টমেটো চাষ হবে কৃষকদের জন্য অধিক লাভজনক। কৃষকরা; কিন্তু এখন শিক্ষিত, এবং এখন তারা বোঝে ভালো বীজের গুরুত্ব। এ বছর অমরা বীজ দিয়ে গেলাম সামনের বছর আপনারাই বীজ সংগ্রহ করে পরবর্তী বছর লাভবান হবেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় আপনাদের পাশে থাকবে।

অধ্যাপক এ. এস. এম. গোলাম হাফিজ কেনেডি বলেন, গাজর জনপ্রিয় সবজি। এটার অনেক রোগ প্রতিরোধ গুণাবলি আছে। এর বাজার মূল্য; কিন্তু অনেক বেশি। যদি সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পোকা-মাকড় দমন করে ফসল করেন তাহলে বেশি লাভবান হবেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে গাজর রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বেশি সার দিলেই উৎপাদন বাড়বে, এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সিজনে চাষ করলে এর বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। সেই কারণেই সবজি এবং বীজ এবং সার বিতরণ কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষকদের পাশে থেকে চরাঞ্চলে উচ্চমূল্যের ও পুষ্টিকর ফসল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে। টমেটো ও গাজরের মতো ফসল চাষে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীরা কৃষি সমস্যা সমাধান ও প্রযুক্তি সহায়তায় কাজ করছেন। প্রকল্পটি কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখবে।

কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, আমরা আগে ভাবতাম রঙিন গাজর বা উন্নত টমেটো চাষ করা কঠিন হবে। কিন্তু আজকের প্রশিক্ষণে বুঝলাম সঠিক বীজ, পরিচর্যা আর সময়মতো সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এখন আশা করছি আগামী মৌসুমেই এই জাতগুলো চাষ শুরু করব।

আরেক কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাকৃবির গবেষকরা আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে কম খরচে বেশি উৎপাদন করা যায়। আগের মতো আন্দাজে চাষ না করে এখন বৈজ্ঞানিকভাবে করতে পারব। গাজর আর টমেটোর এই নতুন জাতগুলো বাজারে ভালো দাম দেবে বলেও আশা করছি।


জলাবদ্ধ জমিতে ফলছে সোনার ফসল, কৃষকের মুখে হাসি

*প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ *বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ হয়। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি  
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
জয়পুরহাট প্রতিনিধি 

অনেকটা শিঙাড়ার মতো দেখায়। আর এই পাতার নিচেই লুকিয়ে আছে ত্রিকোণাকৃতির এক ফল, যার নাম পানিফল। এখন এই জলজ ফলই জয়পুরহাটের চাষিদের কাছে ‘সোনার ফসল’ হয়ে উঠেছে। কচি অবস্থায় লাল আর পেকে গেলে কালো বর্ণ ধারণ করা এই ফল চাষ করে ভালো আয়ের মুখ দেখছেন তারা।

এ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে এই মৌসুমে পানিফলের চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর উপজেলার গতনশহর এলাকায় দেখা যায়, নিচু জলাভূমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। চাষিরা পানিফল উত্তোলন করে সড়কের পাশে বসে ক্রেতাদের হাঁক-ডাক করে বিক্রি করছেন।

সেখানকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ফলকে কেউ পানিফল, পানি শিঙাড়া, শিংড়া, শিংগাইর বা হিংগাইর বলে ডাকে। এই ফল চাষের পদ্ধতি বেশ সহজ। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসে জলাশয়ে চারা রোপণ করা হয়। ছয় মাসের মধ্যেই অর্থাৎ আশ্বিন-কার্তিক মাস থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়। এই চাষে সার ও কীটনাশক লাগে খুবই কম। প্রতি বিঘা জমিতে পানিফল চাষে খরচ হয় গড়ে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা থেকে কৃষক বিক্রি করেন ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। এতে তাদের প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। স্বল্প খরচে ভালো লাভ হওয়ায় এটি এখন এ এলাকায় লাভজনক মৌসুমি ফল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে। আর চাষিদের মুখে ফুটছে হাসি।

পানিফল চাষি মো. আজাদ বলেন, ‘এই জমিগুলোতে পানি বেশি থাকে। এ জন্য ধান আবাদ হয় না। তাই পানিফল আবাদ করি। এই ফল চাষে লাভ আছে। বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ হয়। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি করি। তাতে ধানের থেকে বেশি লাভ হয়।’

‘এ্যাসো (এসো) ভাই পানিফল, খালি ত্রিশ টাকা কেজি, এ্যাসো। টাটকা (সদ্য তোলা) ফল ভাই, এ্যাসো ভাই পানিফল, টাটকা ফল। এই যে ভিওত (জমি) থেকে তুলে দ্যাচি (দিচ্ছি), এ্যাসো।’ এমন ভাবে হাঁক-ডাক দিয়ে ক্রেতাদের ডাকছিলেন চাষি জিয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, পানিফলের আবাদ ভালো হয়। ১০ দিন পরপর তুলতে হয়। বিঘায় প্রতি টিপে ১০ মণের বেশি হয়। এক মাস সুন্দর ফল হয়, পরে কমে যায়। ফলের ওপর নির্ভর হয়। ভালো ফলন হলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সেলিম হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, ‘আমার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি আছে। পানি থাকে এক কোমর করে, আমন ধান লাগান পারি না, এ জন্য ফল লাগাচি। এই ফলে প্রচুর টাকা লাভ, লছ নাই। এখানে সর্বোচ্চ খরচ ১২ হাজার; কিন্তু এত খরচ হবেই না, কমই খরচ হয়। আর বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। কারও জমিতে আমন ধান না হলে এক হাঁটু বা এক কোমড় পানি থাকলে তাদের জন্য ভালো। একদম ওয়া (রোপণ করা) বেটার, কোনো লছ হবে না। এটি পাঁচবিবি হাটে মণ হিসেবে বিক্রি হয়। আর আমরা গিরস্তরা (চাষিরা) এখানে হাতে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আগে ৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করিচি (করা হয়েছে)।’

পানিফল ক্রেতা রায়হান কবির জনি বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদে চাকরি করি। জয়পুরহাট শহরে যাওয়ার পথে পানিফল কেনার জন্য গতনশহর এলাকায় দাঁড়িয়েছি। এই পানিফল বাচ্চা থেকে শুরু বড় সবাই পছন্দ করে। আমি ৩০ টাকায় এক কেজি পানিফল কিনেছি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একেএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ জেলায় আনুমানিক ৩০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হচ্ছে। এটা এক সময় সৌখিন পর্যায়ে ছিল, মানুষ ৫-১০ হেক্টর জমিতে চাষ করত। কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে। এটি লাভজনক হওয়ায় কৃষক ভাইয়েরা খরচ করে উৎপাদন করছে এবং বিক্রি করছে।’

সাদিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই ফলটি পুষ্টিকর ফল, ছোট-বড় সবাই খেয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশি কিছু খনিজ পদার্থ আছে, যেটা শরীরের জন্য উপকারী। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষক ভাইদের পরামর্শ দিচ্ছি, যেন তারা বাণিজ্যিকভাবে এই পানিফল আবাদ করে লাভবান হতে পারে। সেই সঙ্গে আমরা বিক্রির ব্যাপারে সহযোগিতা করছি।’


সরবরাহে কমতি নেই, তবুও কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাশেদ রহমান, বেনাপোল (যশোর)

হঠাৎ করে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোলসহ বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উপজেলার বাজারগুলোতে ৪ দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া, নাভারণ, শার্শা ও বেনাপোল বাজারের অধিকাংশ দোকানে ১১০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও পাড়া বা মহল্লার দোকানে ১২০-১৪০ টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত মঙ্গলবারেও এ পণ্যটি ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে এক লাফে দাম বেড়ে ১০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা গত মঙ্গলবার এর মূল্য ছিল ৭০-৭৫ টাকা। শনিবার বেনাপোলে তা আরও বেড়ে ১১০-১২০ টাকা হয়েছে।

শার্শার লক্ষনপুর বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, ‘দেশের পেঁয়াজের আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহে কমতি নেই। তারপরও দাম একলাফে এতটা বাড়ার কথা নয়। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ না উঠায় মজুতকারীরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পেঁয়াজের বিক্রি কমে গেছে।’

বেনাপোলের পাইকারি বিক্রেতারা বলেছেন, বছরের এ সময় এমনিতেই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়তি থাকে। এবার সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু বর্তমানে ভারতের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি বাজারে না পাওয়া যাওয়ায় প্রতিদিন দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ এভাবে কমতে থাকলে রমজান মাস নাগাদ ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, তিন দিন আগে গত মঙ্গলবার যা বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকায়।

বেনাপোলের পাইকারি বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, বছরের এ সময় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেলে আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়ছে। এদিকে পুরোনো পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে এখনো মাসখানেক সময় লাগবে। ফলে দেশের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ আর ও কমে আসবে। এর প্রভাব দামের উপর পড়বে। এদিকে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম একলাফে এতটা বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ভোক্তারা।

পেঁয়াজ ক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘মৌসুমের শেষে একটি পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। তাই বলে এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে যায় কীভাবে। এমনিতেই আগের ৭৫ টাকা কেজি কিনে খেতে কষ্ট হচ্ছিল। এখন ১২০ টাকা কেজি দরে কজন মানুষ কিনে খেতে পারবে। আগে অল্প হলে বাজারে মনিটরিং দেখা যেত, বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। এর সুযোগ নিয়েই দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক মিলন হোসেন জানান, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে বেনাপোল বন্দরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে চার দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়ে সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ফলে খুচরা বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চার দিন আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে।’

শনিবার সকালে শার্শার নাভারণ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ৭৫-৮০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে।

বেনাপোল বাজারের ক্রেতা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘চার দিন আগেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। আজ এসে দেখি ১১০-১১৫ টাকা চাচ্ছে দোকানিরা। প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চার দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি।

আরেকজন ক্রেতা আসাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো কিছুর নিয়ম নেই। এখানে খেয়াল-খুশিমতো জিনিসের দাম বাড়ে। আমরা গরিব মানুষ। বাজারে এলেই মাথা ঘুরে যায়। কয়েক দিন আগেও ৭০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ দেখছি তা ১১০ টাকা কেজি। আবার ছোট পেঁয়াজ কেউ কেউ ১০০ টাকা চাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’

উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে মোকামে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এখন আমরা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কিনে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আজ শুনলাম মোকামে পেঁয়াজের কেজি ১০৫ টাকা। তারপর খরচ আছে। পরে আবার দেখা যাবে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। দাম বেশি থাকায় বিক্রিও কমে গেছে।’

বেনাপোল বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, ‘দেশের যেসব মোকামে পেঁয়াজ আসে, সেখানেই এখন সরবরাহ কম। ভারত থেকেও কোনো পেঁয়াজ আমদানি নেই। এই ঘাটতির কারণে দাম বাড়ছে। সরকার যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলেই দ্রুত বাজার স্বাভাবিক হবে।’

বেনাপোল বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান (আজু) বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং অভ্যন্তরীণ মোকামগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে আবার কমতে শুরু করবে।’


সিদল শুঁটকি রপ্তানিতে খুলতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
তরিকুল ইসলাম তরুণ, কুমিল্লা দক্ষিণ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সলপা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে পুঁটি ও পোয়া মাছের মাচাতে শুকানো ঐতিহ্যবাহী শিদল তৈরির প্রক্রিয়া। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই গ্রামে তৈরি হয় পুঁটি শিদল, পোয়া শিদল, বাঁশপাতা শিদলসহ নানা ধরনের সুস্বাদু শুঁটকি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব শিদল এখন রপ্তানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে— আগরতলা ও সোনামুড়ার বাজারে।

সলপা গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার আজও ধরে রেখেছেন তাদের বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। একসময় অর্ধশতাধিক পরিবার যুক্ত ছিল এই পেশায়, তবে এখন মাছের সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকেই পেশা বদলে নিয়েছেন।

স্থানীয় কারিগর রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাচায় শিদল শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। অমল সূত্রধর নামে এক শুঁটকি উৎপাদক বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের শিদল তৈরি করি- পুঁটি ও পোয়া মাছের। পোয়া মাছ আসে চট্টগ্রাম থেকে, আর পুঁটি মাছ আসে মেঘনা ও সিলেট অঞ্চল থেকে। মাছের পেট কেটে তেল তোলা হয়, সেই তেল পরে শিদল তৈরির সময় ব্যবহৃত হয়।’

তিনি জানান, এ কাজে গ্রামের প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন মাছের পেট কাটার কাজে যুক্ত থাকেন। তাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি তেল ১৫০ টাকা দরে কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপর মাছগুলো এক মাস শুকিয়ে মাটির মটকায় সংরক্ষণ করা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আগে নদী-নালা, খাল-বিল উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তখন শিদলের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এখন মাছের অভাব আর খরচ বৃদ্ধির কারণে একই শিদল বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে। নির্বাচিত ভালো মানের পুঁটি শিদল প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় বর্ষা মৌসুমে পূর্বহাটি, চলনহনিয়া, ফরদাবাদ, রুপসদী এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। অতিরিক্ত মাছ নষ্ট হয়ে যেত, সেগুলো দিয়েই তৈরি হতো শিদল। এখন মাছ আনতে হয় দূর-দূরান্তের বিল থেকে।’

মন্টু সরকার জানান, তাদের তৈরি শিদল দেশের বিভিন্ন বাজারে যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, ফেনী ও কুমিল্লায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ভারতের আগরতলা ও সোনামুড়ার পাইকাররাও নিয়মিত এই শিদল কিনে নিয়ে যান।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এই ঐতিহ্যবাহী শিদল আরও বড় পরিসরে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এতে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো সিদল। বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না।


banner close