একাত্তরের ডিসেম্বর। শীতের কুয়াশা মোড়ানো সন্ধ্যা। স্থান ভারতের সোনামুড়া। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছাতে হবে পিস্তল, গুলি। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারাও সতর্ক। তাই গৃহবধূ কিশোরী রানী শর্মা রান্নার পাতিলে ভাতের ভেতরে লুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন অস্ত্র ও গুলি। কিন্তু রেহাই মেলেনি। আচমকা পাকিস্তানিরা দূর থেকে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে রানী শর্মা পড়ে যান গোমতী নদীতে। স্রোতের টানে ভেসে যান অনেক দূর। মৃত ভেবে পাকিস্তানি হানাদাররা চলে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা এসে উদ্ধার করেন তাকে। ক্যাম্পে নিয়ে গুলি বের করেন। বাম হাতের কনুইয়ের ওপর গুলির দাগ আজও সেই সন্ধ্যার বিভীষিকার কথা মনে করিয়ে দেয়।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম বিজয়পুরে কিশোরী রানী শর্মার বাড়িতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনে মুক্তিযুদ্ধের সে ভয়াল সন্ধ্যার কথা বলতে বলতে শিউরে উঠছিলেন। জানালেন, তার স্বামী অরুণ প্রসাদ শর্মাও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। নতুন অস্ত্র তৈরি ও বিকল অস্ত্র ঠিক করার দায়িত্ব ছিল তার। মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি রণাঙ্গনে কাজ করলেও স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও এই দম্পতির কেউই পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। মনে চাপা কষ্ট নিয়েই বছর দশেক আগে পরপারে পাড়ি জমান অরুণ প্রসাদ। কিশোরী রানীও বেঁচে আছেন কোনোক্রমে।
কিশোরী রানী শর্মা জানান, তার জন্ম ১৯৩৭ সালে। ২৪ বছর বয়সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বছর চারেক আগে তার একমাত্র ছেলে বাসু প্রসাদ শর্মা ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে এখন বিজয়পুর মৃৎশিল্প কারখানায় কাজ করেন। বেতন পান পাঁচ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই খেয়ে-পরে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিশোরী রানীর বাড়ির সামনে একটি খাল। নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে সামনে গেলেই ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সেখানেই শুয়ে আছেন কিশোরী রানী শর্মা।
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসতেই উঠে বসলেন। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ভাঙা কণ্ঠে বলেন, ‘শীতের রাতে কতবার বিবিরবাজার বর্ডার ক্রস করে ভারতের সোনামুড়া গেছি। সেখানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ হতো। প্রতিবার পাকিস্তানি বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে কত কৌশলের আশ্রয় নিয়েছি। গুলি খেয়ে নদীতে পড়ে গেছি। তবুও মুক্তিযুদ্ধ করে গেছি।’
এরপরই আফসোস ঝরতে লাগল কিশোরী রানীর কণ্ঠে। বলেন, ‘আমরা মেজর এনামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। অথচ আজ আমাদের স্বামী-স্ত্রীর কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। আমার ছেলেটা মারা গেল। একমাত্র মেয়ে আর ছেলের ঘরের নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। কেউ আমাদের খবর রাখে না। আমার স্বামী বেঁচে থাকতে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন। আমিও করেছি। কেউ আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি।’
মেয়ে পান্না রানী শর্মা বলেন, ‘মাকে নিয়ে কত কষ্টে আছি, কেউ না এলে বুঝবেন না। অথচ যুদ্ধ করার সময় কোনো শর্ত ছিল না। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে বিনা শর্তে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন আমার মা-বাবা। আজ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে কত শর্ত মানতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের কী আছে! আমি আশা করব, এক দিন প্রধানমন্ত্রী ঠিকই আমার মা-বাবাকে স্বীকৃতি দেবেন। কারণ, পৃথিবীতে অনেক সত্য আছে, যেগুলোর জন্য প্রমাণ লাগে না।’
বীরত্বের স্বীকৃতি না পাওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমি কিশোরী রানীর জীবনের ঘটনা শুনেছি। তিনি ও তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তবে যথাযথ নথিপত্র সংরক্ষণ করতে পারেননি বলে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। তবু আমি আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তার এই ত্যাগের বিষয়টি মূল্যায়ন করে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন। সেখানে স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরও যদি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তার স্বীকৃতি না পান, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।’
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘ভারতীয় তালিকা, দেশের গেজেট ও লাল তালিকায় কিশোরী রানী এবং তার স্বামী অরুণের নাম নেই। তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেয়া যাচ্ছে না। তবে তারা যদি মন্ত্রণালয় বা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) গিয়ে প্রমাণ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।’
কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এখনো মনে রেখেছেন নড়াইল সদর হাসপাতালের রোগী, সেবিকা, চিকিৎসকসহ আম জনতা । মুমূর্ষু রোগীদের বাচাতে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে তখন ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে স্থাপন করা হয় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই তা মানুষের কাজে আসেনি। অক্সিজেন নিয়ে রোগী, সেবিকা আর চিকিৎসকদের ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে।
সরেজমিন হাসপাতালের রোগী, সেবিকা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর প্রাক্কালে নানা উপসর্গ আর জটিল শ্বাসকষ্ট থেকে পরিত্রান পেতে আমজনতা ছুটে আসেন জেলার একমাত্র আধুনিকায়িত সদর হাসপাতালে। তখন হাসপাতালের বেড, কেবিন, জরুরী বিভাগসহ ১৭৩টি স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ পয়েন্ট স্থাপন করা হয় । কিন্তু কোনো পয়েন্ট দিয়েই সে সময় অক্সিজেন নির্গত হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের কাজ চলছে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে। এ ব্যবস্থার কারণে রোগী ও স্বজনদের রয়েছে ক্ষোভ। জরুরী অক্সিজেনসেবা দিতে নিত্যদিন হিমশিম খেতে হয় সেবিকা আর চিকিৎসকদের। সিলিন্ডার সংকটের পাশাপাশি সিলিন্ডার ভরে রাখা, আর হঠাৎ সিলিন্ডার শেষ হবার আশঙ্কা তো রয়েছেই। এসব সেবা ব্যাহত হওয়ার বিড়ম্বনায় থাকতে হয় সেবিকাসহ চিকিৎসকদের। করোনার প্রকোপ বাড়লে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে আছে দুশ্চিন্তা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতেও তা সময়োপযোগি কাজে আসছে না। বেডেই রোগী মারা যাবার শঙ্কায় থাকেন স্বজনরা। এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সেবিকা বলেন, হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার কখন ফুরিয়ে যায় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সিলিন্ডার টানাহ্যাচড়া করতে অনেক ঝামেলা হয়। মিটার নষ্ট হয়ে যায়। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড ও জরুরী বিভাগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু থাকা খুবই প্রয়োজন। করোনা আসলে রোগীদের সঙ্গে নানা ধরণের তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞা ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন, কেন্দ্রীয় অক্সিজেনসেবার ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে শিশু রোগীদের অনেক কষ্ট পেতে হয়। অক্সিজেনের অভাবে অনেক শিশু মারাও যায়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে এই ভোগান্তি থাকতো না। তিনি বলেন, সামনে কোভিড বেড়ে গেলে জটিলতা আরো বাড়বে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে সদর হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ চালু হয়। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ লিটারের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অক্সিজেন সরবরাহ কয়েকমাস চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেটা হাসপাতালের পেছনের দিকে লতাপাতার মধ্যে পড়ে আছে ট্যাঙ্কটি। হাসপাতালের ভিতরের সঞ্চালন লাইনে কোথাও মরিচা ধরেছে সকেটগুলো ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন বেডের বিছানার ওপর।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, এই কর্মস্থলে যোগদানের পর কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ট্যাঙ্কটিতে দুই দফায় অক্সিজেন ঢালা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারের আগেই অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। কোথাও লিকেজ আছে হয়তো । আমি কোম্পানীকে বিষটি জানিয়েছি। তারা ঠিক করেনি। উপায় না পেয়ে আমরা বোতল অক্সিজেন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কোম্পানীকেও জানিয়েছি। এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমপক্ষে ২৩ থেকে ২৬ টি জেলার একমাত্র প্রবেশপথ টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু। এটি যমুনা নদীর উপর নির্মিত। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। চলতি বছরের ১৮ সার্চ যমুনা নদীর উপর নবনির্মিত যমুনা রেল সেতু উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় রেল চলাচল। ফলে যমুনা সেতুতে থাকা রেললাইন আর ব্যবহার হচ্ছে না, এটি এখন পরিত্যক্ত। তাই সেতুর ওপর থাকা পরিত্যক্ত রেললাইন সরিয়ে ফেলতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে যমুনা সেতু বিভাগ। যমুনা সেতুর উপর সড়কপথকে আরও প্রশস্ত করতে নেওয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ।
যমুনা সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যমুনা সেতুর প্রতিটি লেনের প্রস্থ ৬ দশমিক ৩ মিটার। যেখানে প্রস্থ হওয়া উচিত ৭ দশমিক ৩ মিটার। রেললাইনটি সরিয়ে ফেললে যে সাড়ে ৩ মিটার অতিরিক্ত জায়গা পাওয়া যাবে, তা দুই লেনে ভাগ করে সড়কপথকে আরও প্রশস্ত করা যাবে। এতে করে ঈদের মতো যানবাহনের চাপে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজট অনেকটাই হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং যমুনা সেতু বিভাগ পৃথকভাবে রেললাইন অপসারণের জন্য প্রস্তাব দেয়। এরপ্রেক্ষিতে শুরু হয় এই অপসারণ প্রক্রিয়া।
এতে সেতুর উভয় লেনে ১ দশমিক ৭৫ মিটার করে জায়গা বাড়বে। বর্তমানে সেতুর লেনগুলো প্রশস্ততা রয়েছে ৬ দশমিক ৩ মিটার। এটি সম্প্রসারণ করা হলে প্রশস্ততা বাড়বে। এতে সেতুর ওপরের যানজট ও জনদুর্ভোগ কমবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যমুনা সেতুর পূর্বের সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কারিগরি স্টাডির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এটি কার্যকর করতে কিছু সময় লাগবে। অপসারণের কাজ শেষে রেললাইন ও অন্যান্য মালামাল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীতে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা সেতু উদ্বোধন করা হয় এবং ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকার রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। পরে ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার করা হয়। এতে প্রতিটি ট্রেনকে সেতু পারাপার হতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগত। এ কারণে সেতুর দুই উভয় পাশে ট্রেনের জটলা বেঁধে যেত। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। এই সমস্যার সমাধানে সরকার ২০২০ সালের যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয় করা হয়।প্রথমে নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে। গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সেতুর পূর্ব প্রান্ত টাঙ্গাইল অংশে রেলপথের নাট-বোল্ট খুলে ফেলার মাধ্যমে অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে যমুনার সেতুর উপরসহ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক এবং সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা থাকবে না।
রাজবাড়ীতে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন ফলাতে উৎপাদন খরচও হয়েছে বেশি। বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় লোকসানের কথা বলছেন কৃষক। এদিকে চাহিদা বাড়ায় ধানের খড় বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকেরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, রাজবাড়ীতে বছরে উৎপাদিত ধানের খড় বিক্রি হয় প্রায় তিনশ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর তথ্যমতে, রাজবাড়ীতে এ বছর ১২ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমিতে বোরো, ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আউশ, ৫৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনসহ মোট ৬৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে। এর থেকে ফলন হয়েছে অন্তত ২ লক্ষ্য ৩৫ হাজার ৫২৯ মেট্টিক টন ধান।
রাজবাড়ীর বাজারে বর্তমানে ধান বিক্রি হচ্ছে ১১ শত থেকে ১৭ শত টাকা মন দরে। আর বিঘা প্রতি ধানের খড় বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ পাজার টাকা দরে।
আবার রাজবাড়ীতে ধান উৎপাদনের জমির পরিমাণ বিঘায় রূপান্তরিত করলে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪১৫ বিঘা। এ জমির খড়ের বাজার মূল্য অন্তত ২ শত ৬০ কোটি টাকা বলে দাবি করেছেন কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখাযায়, ধান কাটা শেষ। রাজবাড়ীর মাঠে মাঠে এখন চলছে ধানের খড় শুকানো-বিক্রি ও মজুদ করনের কাজ।
গোয়ালন্দ উপজেলা চর কর্নেশনা এলাকার কৃষক আমজাদ মোল্লা বলেন, সার ওষুধ কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় ধান চাষে খরচও হয়েছে বেশি। বাজারে যে মূল্যে ধান বিক্রি হচ্ছে এতে লোকসানে পরব আমরা । তাই ধানের ক্ষেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে খড়। বর্তমানে এক বিঘা জমির কাচা খড় ৩ হাজার আর শুকনো খড় বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা দরে। যা কিনে নিয়ে যাচ্ছে জেলার খামারিরা।
শামিম হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ধান চাষে খরচ বেশি পরায় প্রতি বছরই লোকসানে পরেন তারা। তবে গত দুই বছর যাবত জেলায় খামারের সংখ্যা বেরে যাওয়ায় ধানের খড়েরও চাহিদা বেড়েছে। এ খড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, এক বিঘা জমির ধান কাটতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার শ্রমিক প্রয়োজন হয়। খড় বিক্রি করে সেই টাকা উঠে আসে। তাই কৃষক ধানের সমান যত্ন খড়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও খড় শুকানোর পর মজুত করে রাখলে বর্ষা মৌসুমে চাহিদা আরো বাড়ে দামও বেশি পাওয়া যায়। তখন একটি স্তূপ (পালা) খড়ের দাম দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
এদিকে জেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে কাচা অবস্থায় খড় কিনে ঘোরার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে খামারীরা। খামারি স্বপন দাস বলেন, রাজবাড়ীতে দিন দিন খামারের সংখ্যা বাড়ছে। ধানের খড় কেটে টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। আমরা এ মৌসুমে অন্তত ২০ লক্ষ্য টাকার খড় কিনে রাখব যা সারা বছর খামারের গরুগুলোকে খাওয়ানো হবে। আবার সেই গরুগুলোকে সামনে ঈদুল আযহায় বাজারে বিক্রি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৬৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। যা থেকে বছরে ২ লাখ ৩৫ হাজার মেট্টিক টন ধান আর সম পরিমাণ খড় উৎপাদন হয়ে থাকে। শুধু ধানের খড় বিক্রি করে জেলার কৃষক প্রায় ৩ শত কোটি টাকা আয় করেছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সোনারগাঁ ইউনিয়নের চৌরাপাড়া কবরস্থানে এ বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালন করেন। বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকেলে এ কর্মসূচী পালন করা হয়।
বৃক্ষরোপন কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল।
বিশেষ অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সালু, সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হাজি পিয়ার হোসেন নয়ন, যুগ্ম আহবায়ক আতিক হাসান লেনিন, সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এজাজ ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সানোয়ার হোসেন, যুবদল নেতা রুবেল নিলয়, সোনারগাঁ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানা বাবু, আশিকুর রহমান আশিক, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বৃক্ষরোপন শেষে সোনারগাঁ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত দেলোয়ার হোসেনের মাগফেরাত কামনা, দোয়া ও কবর জিয়ারত করেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি অম্লান রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘জুলাই ৩৬ গেইট’ উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ফটকটি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। এসময় অন্যান্যের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-ইলাহী, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, হল প্রভোস্ট, রেজিস্ট্রার, দপ্তর প্রধানসহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
‘জুলাই ৩৬ গেইট’ উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই ৩৬ গেইটটি শুধু একটি গেইট নয়, এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের এক নিরব সাক্ষী। তরুণদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা যেন তারা ভুলে না যায়, কীভাবে অধিকার রক্ষায় মানুষ তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদদের স্মরণ ও তাদের আত্মত্যাগকে চিরস্থায়ীভাবে গেঁথে রাখার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত হয়েছে এই গেইট উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি আত্মত্যাগ ও একটি স্বপ্নের প্রতীক যে স্বপ্নে ছিল একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ।’
২৪ এর জুলাইয়ের শহীদ ও আহত বীর সন্তানদের প্রতি সম্মান জানিয়ে গেইটটির নাম ‘জুলাই ৩৬’ রাখা হয়েছে। নামটির প্রতিটি অংশে নিহিত আছে স্মৃতি ও প্রতিজ্ঞা। ৩৬ জুলাই কেবল অতীতের একটি দিন নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য এক অনুপ্রেরণা, যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ন্যায়বিচারের জয়কে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
সিকৃবির প্রধান প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন জানান সিকৃবির ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
যশোরের বেনাপোল বন্দর এলাকা থেকে ২০টি বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ এক ভারতীয় ট্রাক চালককে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানায় পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পাসপোর্টগুলো দালালের মাধ্যমে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পাসপোর্টগুলোতে গত ২৪ জুন সার্বিয়ার ভিসা লাগানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) ভারতীয় ট্রাক চালক বেচারাম পরামানিকের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। ওইদিনই রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেনাপোল বন্দরে দায়িত্বরত আনসারের হাতে পাসপোর্টগুলোসহ ধরা পড়েন বেচারাম পরামানিক।
বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার কমান্ডার হেলালউজ্জামান বলেন, ভারত থেকে অবৈধপন্থায় বেশকিছু বাংলাদেশি পাসপোর্ট বেনাপোলে পাঠানো হচ্ছে- এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে তারা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন। বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ট্রাকচালক বেচারাম পরামানিক একটি ব্যাগ হাতে কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তার ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। ওই ব্যাগেই ২০টি পাসপোর্ট ছিল। পরে পাসপোর্টগুলোসহ বেচারাম পরামানিককে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়।
পাসপোর্ট আটকের খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। তারা বোঝার চেষ্টা করেন যে এভাবে ভিসা লাগিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা ইউরোপের কোন দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কি না।
তবে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া বলেন, ইউরোপের অনেক দেশের ভিসা বাংলাদেশ থেকে নেয়া যায় না, ভারত থেকে নিতে হয়। কিন্তু ভারতের ভিসা না পাওয়ায় অনেকেই দালালের মাধ্যমে ভারতে পাসপোর্ট পাঠিয়ে ভিসা করিয়ে আবার দেশে নিয়ে আসছেন।
ওসি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পাসপোর্টগুলোর মালিকরা শ্রমিক হিসেবে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা করিয়েছেন। তিনি বলেন, যে কারণেই হোক না কেন, এভাবে পাসপোর্ট অন্যের মাধ্যমে আরেক দেশে পাঠিয়ে ভিসা করার প্রক্রিয়াটাই বেআইনী। সেকারণে এ ব্যাপারে পাসপোর্ট আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
আটক হওয়া ২০টি পাসপোর্টের মালিকরা হলেন: ঢাকার দানেশ আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, গাজীপুরের আব্দুর রশিদের ছেলে আবুল হোসেন, মানিকগঞ্জের আবুল কাশেমের ছেলে শরিফুল ইসলাম, নোয়াখালীর আব্দুল মোতালেবের ছেলে আব্দুল কাদের, আলাউদ্দীনের ছেলে আব্দুল আজিজ, সাহেব উদ্দীনের ছেলে আব্দুর রহিম, অমল চন্দ্র দাসের ছেলে রুপম চন্দ্র দাস, সাতক্ষীরার রেজাউল ইসলামের ছেলে তানভীর হাসান, নজরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেনের ছেলে পলাশ হোসেন, নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে জাকারিয়া, ইউনুচের ছেলে আবু সাঈদ, ফেনির মোরশেদ আলমের ছেলে আব্দুল করিম, নরসিংদীর বাতেন মিয়ার ছেলে ফাইম মিয়া, চাঁদপুরের মনোহর গাজীর ছেলে মোজাম্মেল হোসেন, নোয়াখালীর রফিউল্লাহর ছেলে ইমরান হোসেন, কিশোরগঞ্জের রিপন মিয়ার ছেলে অপূর্ব মিয়া, ঢাকার আব্দুল মজিদের ছেলে ফয়সাল আহম্মেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাজি আব্দুল মান্নানের ছেলে ইসহাক ও সাতক্ষীরার খলিল গাজীর ছেলে হুমায়ুন কবীর।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী শুক্রবার জানিয়েছে, তারা গত তিন দিনে আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা ৩০ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে। এর আগে গত সপ্তাহে একই সীমান্ত এলাকায় একটি আত্মঘাতী হামলায় ১৬ জন সৈন্য নিহত হয়।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সেনাবাহিনী অসাধারণ পেশাদারিত্ব, সতর্কতা ও প্রস্তুতির পরিচয় দিয়েছে এবং একটি বড় বিপর্যয় রোধ করেছে।’
বিবৃতিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
নড়াইল-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক। প্রায় ৭০ কিলোমিটার প্রশস্তকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে দাবি স্থানীয়দের। কারণ পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পার হওয়ার পর নড়াইল-বেনাপোল সড়কের ৭০ কিলোমিটার খুবই সরু। ফলে এ অংশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। পঙ্গুত্ববরণ করছেন কেউ কেউ।
নড়াইলের তুলারামপুর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ও মধুমতী সেতু চালুর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত (আড়াই বছর) নড়াইল-বেনাপোল মহাসড়কে ৬৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এতে ৪১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৯৯ জন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ৭০ কিলোমিটার সড়ক অপ্রশস্ততা এবং মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল।
এ মহাসড়কে পরিবহন চালানো সোলাইমান ও রিপন শেখসহ একাধিক চালক জানান, ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক প্রশস্ত কম হওয়ায় বিভিন্ন দিক থেকে আসা গাড়ি ক্রসিং করতে হয়। এতে প্রায়ই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী জানান, দুর্ঘটনা রোধে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক প্রশস্তকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা-মাওয়া-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের কালনা এলাকায় মধুমতী নদীতে দেশের প্রথম ছয় লেনসেতু উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা, সাতক্ষীরা, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যাহবাহন পদ্মা ও মধুমতী সেতু দিয়ে নড়াইল রুটে চলাচল করছে। যানবাহনগুলো ক্রসিং কিংবা ওভারটেকিংয়ের সময় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পতিত হচ্ছে দুর্ঘটনায়। এ ব্যাপারে নড়াইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নড়াইল হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন করার জন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ ছাড়া মধুমতী সেতুর নড়াইল প্রান্ত থেকে যশোর পর্যন্ত ২৪ ফুট থেকে দুপাশে আরো ১২ ফুট প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বগুড়ায় অপহৃত তিন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের চারজনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের মালতিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার এবং জড়িতদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হচ্ছে- আবির হোসেন বিদ্যুৎ (২৭), ওয়াজ মন্ডল (৩৬), মাসুম আলম নাঈম (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৩)।
শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়া সদর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ রায়হান আকাশ।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ রায়হানের নেতৃত্বে একটি টহল দল মালতিনগরে অভিযান চালায়। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেছিল। অভিযানকালে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
অভিযান শেষে সেনাবাহিনী বেশ কিছু সরঞ্জাম জব্দ করে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:৭টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র, ১৩টি সিমকার্ড, ৩টি ফাঁকা স্ট্যাম্প, ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি চেক, একটি কম্পিউটার, বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতল, গাঁজা ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম।
তিনি আরো জানান, আটককৃতদের কাছ থেকে জব্দকৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম বগুড়া সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর আঁকা দশটি পোস্টারে ফুটে উঠবে কেনো জুলাই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল এবং জুলাইয়ে কী ঘটেছিল।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘জুলাই ২০২৪ এর অন্যতম যোদ্ধা শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে জুলাই কোমেমোরেশন প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে দশটি পোস্টার এঁকেছেন। এই দশটি পোস্টারে ফুটে উঠবে কেনো জুলাই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল এবং জুলাইয়ে কী ঘটেছিল। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে একটি করে পোস্টার প্রকাশ করা হবে।'
আজকে জুলাইয়ের চতুর্থ পোস্টারটি প্রকাশ করা হলো বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশবাসীকে তরুণ ও বিকল্প নেতৃত্ব বেছে নিতে আহ্বান করেছেন।
দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে গতকাল শুক্রবার সাড়ে ১২ টার দিকে যুক্ত হয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে এ আহ্বান করেন তিনি।
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রিয় বন্ধুগণ আমরা জানি জুলাই আগস্টে ফ্যাসিস্ট শ্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিলো। এখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এসেছিলো। তারা আহত ও শহীদ হয়েছে। আমরা তাদের স্মরণ করছি ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি জুলাই গণঅভ্যূতত্থানে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রীক বাংলাদেশ। কৃষক শ্রমিক, ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ, ইনসাফেরর ও মর্যাদার বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশর জন্য লড়াই করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এখনো হয়নি। আগের সিস্টেম রয়ে গিয়েছে। ফলে সেই সিস্টেমকে বিলোপ করে নতুন দেশ গঠনের লক্ষ্যেই এই নতুন পার্টি ও আমাদের কর্মসূচী। এনসিপির কার্যক্রম সারা দেশে চলছে। আপনারা আমাদের হাতকে শক্তিশালী করবেন। তরুণ এবং বিকল্প নেতৃত্বকে বেছে নিবেন।
তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে ঠাকুরগাঁওসহ যে অবহেলিত জেলাগুলো রয়েছে এইসব জেলাতে কোন আঞ্চলিক বৈষম্য থাকবেনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবেনা। উন্নয়ন বলতে শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক হবেনা। যেদিন এই অবহেলিত জেলাগুলোতে উন্নয়ন হবে। সেদিনই আমাদের কাছে উন্নয়ন গ্রহণযোগ্য হবে।
এরপর শহরের আর্টগ্যালারিতে জেলা মডেল মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে পীরগঞ্জ ও দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান, আবু সাঈদ লিওন ও ঠাকুরগাঁও জেলার প্রধান সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিমসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
পাবনা সাঁথিয়ায় উপজেলায় ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে উপজেলার ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পূর্ব বনগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে ২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন— পাবনার সুজানগর উপজেলার শান্তিপুর এলাকার মৃত হাসেম মোল্লার ছেলে আবেদ আলী (৩৭) এবং আতাইকুলা থানার এলাকার কারিগর পাড়ার ইরাদ আলী প্রামানিকের ছেলে মনসুর আলী (৪০)।
মাধপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাসটি ঢাকা থেকে পাবনার দিকে যাচ্ছিল, বিপরীত দিক থেকে আসছিল পাথরবোঝাই ট্রাকটি। এরপর ঘটনাস্থলে এসে যানদুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের ৩ যাত্রী নিহত হন এবং আহত হন আরও অন্তত ১০ জন।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে ওসি বলেন, তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ভুয়া পাসপোর্ট ও কাগজপত্র তৈরি করে নারীদের বিদেশে পাচারের অভিযোগে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক স্বপন কুমার রায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিএমইটি'র উপপরিচালক (বহির্গমন) মো. সাজ্জাদ হোসেন সরকার, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন উল্লাহ আকন্দ, জনশক্তি জরিপ কর্মকর্তা মো. নিজামউদ্দিন পাটোয়ারি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আজাদ হোসেন, এইচ. এ. ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার, মো. আনোয়ার হোসেন, কে. এইচ. ওভারসিজের ম্যানেজিং পার্টনার মো. সালাউদ্দিন, মক্কা ওভারসিজের মালিক মো. জামাল হোসেন, ম্যানেজিং পার্টনারের তাসনিম ওভারসিজ মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা এবং এস. এম. ম্যানপাওয়ারের পার্টনার একরামুল হক।
এর আগে বৃহস্পতিবা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও বিভিন্ন এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।
দুদক সূত্র জানা যায়, বিভিন্ন এজেন্সি পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে গমনেচ্ছু নারীদের ‘প্রত্যাগত’ হিসেবে দেখানোর জন্য ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে। প্রকৃত আবেদনকারীর পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে আবেদন দাখিল করা হয়। এসব জাল পাসপোর্টকে আসল হিসেবে উপস্থাপন করে বিএমইটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সংরক্ষিত ডাটাবেজ যাচাই না করে, এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশে, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশে ৯ জন জাল পাসপোর্টধারী নারীকে ছাড়পত্র প্রদানে অনুমোদনের জন্য নোট উপস্থাপন করেন।
সূত্র আরও জানায়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে ২৫ বছরের কম বয়সি ৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে ছাড়পত্র প্রদানে অনুমোদনের জন্য নোট উপস্থাপন করা হয়। এই কার্যকলাপে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে জালিয়াতি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ছাড়পত্র গ্রহণে সহায়তা করা হয়।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।