কুমিল্লার কোটবাড়িতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮টি দেশের গবেষকদের নিয়ে ব্যবসা, উদ্ভাবন এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স গত রোববার সম্পন্ন হয়েছে।
সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শনিবার ওই কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মালয়েশিয়ার বাইনারি ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপের গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফ মাহবুব করিম, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য একুশে পদক প্রাপ্ত ভাষা গবেষক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জামাল নাছের, অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি ফর বিজনেস লিডারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শফিকুর রহমান।
সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কনফারেন্সের প্রধান উপদেষ্টা ড. আলী হোসেন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খলিফা মো. হেলাল, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন সরকার, ইংরেজি বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. এম. এম. শরিফুল করীম, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবু জাফর খানসহ কুমিল্লার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও গবেষকরা।
প্রধান অতিথি বেস্ট পেপার প্রেজেন্টার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন তিনজনকে। তারা হলেন, বিজনেস ট্র্যাকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি ট্র্যাকে-চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিয়া চৌধুরী ও সোস্যাল সায়েন্স ট্র্যাকে-মালয়েশিয়ার বাইনারি ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপের গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফ মাহবুব করিম।
কনফারেন্সে বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, ওমান, জাম্বিয়া, রাওয়ান্ডা ও ইসওয়াতিনিসহ বিশ্বের আটটি দেশের গবেষকরা অংশ নিয়েছেন।
সিসিএন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দুইদিনের সম্মেলনের শেষদিনে শতাধিক গবেষক একত্রিত হয়েছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সমস্যা আছে, তা নিয়ে গবেষকরা যে কাজ করেছেন, তার ফলাফল বিভিন্ন দপ্তরে পৌঁছে দেব।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মুল আসামি আলাউদ্দিন সহ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যুবদল কর্মী মো. আলাউদ্দিন ও শ্রমিক দল নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন। তারা ওই মামলার এজাহার নামীয় ১ ও ২ নম্বর আসামি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মধ্যরাতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া থেকে আলাউদ্দিন এবং ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে, বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে মামলার ৫ নম্বর আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব। এছাড়াও, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীর সতিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ নিয়ে এই মামলার ৭ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহব্বত খান জানান, রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ও ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, বুধবার (০২ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) বিকাল ৩ টায় জেলা পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এখন পর্যন্ত এই মামলায় এজহারনামীয় ৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৩০ জুন) রাতে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের মোল্লার পুকুর পাড় এলাকায় চাঁদার দাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে মারধর করে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা স্থানীয় শ্রমিকদল, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
কেশবপুরের ঐতিহ্য কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকট ও বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে মারাও যাচ্ছে। কালোমুখো হনুমান রক্ষার দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, একসময় কেশবপুরে ছিল কালোমুখো হনুমানের অভয়ারণ্য। বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে সময়ের গতির সঙ্গে কমে যাচ্ছে হনুমান। বর্তমানে ১৮০ থেকে ২০০টি হনুমান কেশবপুরে রয়েছে বলে স্থানীয় বন বিভাগ জানায়। এখান থেকে ৪/৫ বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশ বিভক্তির আগে ভারতের মাড়োয়াররা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যশোরের কেশবপুরে বসবাসের পাশাপাশি আসা-যাওয়া করত। এ সময় তাদের যানবাহনে করে দুটি কালোমুখো হনুমান ভারত থেকে কেশবপুরে আসে। সেই থেকে হনুমানের এখানে পত্তন শুরু হয়। ওই এক জোড়া হনুমান থেকে এখানে শত শত হনুমানের কালের আবর্তনে ওরা আজ বিলুপ্তির পথে। একসময় কেশবপুর অঞ্চলে ঘন বনজঙ্গল ছিল। এসব বনের ফল ও লতাপাতা খেয়ে ওরা জীবিকা নির্বাহ করত। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বন উজাড়সহ ঘনবসতি এবং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় গিলে খাচ্ছে এসব বনের কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন। এদিকে কেশবপুর উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে কভার সিস্টেম না থাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওরা মারা যাচ্ছে। খাদ্য সংকটের কারণে কেশবপুরের হনুমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, কেশবপুর এলাকায় বনজঙ্গল কমে যাওয়ার কারণে হনুমানের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, হনুমান রক্ষায় সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তি গত ভাবেও অনেকেই খাদ্য দেয়, যার কারণে ওরা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বর্তমানে শহরে বেশি বিচরণ করছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে একটি পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর মরা মুরগির বাচ্চা ও পঁচা ডিম। পুকুরের মাছকে সস্তা খাবার দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব উপায়। এতে দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। দিনের পর দিন ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক হুমকি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের এমদাদুল হক তার পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করেছেন। সেই পুকুরটি পরিচালনা করেন তার ছেলে আবু সালেক। সেই পুকুরের মাছকে সাধারণ খাবারের বদলে খাওয়ানো হচ্ছে জীবন্ত, মরা মুরগির বাচ্চা ও নষ্ট-পঁচা ডিম। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সংগ্রহ করে পুকুর পাড়ে নিয়ে এসে রাখা হয়। এরপর সেগুলো একটি ব্রেন্ডার মেশিনে সেদ্ধ করে পুকুরে মাছকে খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। এতে পুকুরের আশেপাশে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এই দৃশ্য যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী এই এলাকার মানুষ।
তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে পুকুরের মালিককে বারবার বলেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয় তাদের। এদিকে পঁচা ডিম ও মুরগির বাচ্চার অভিযোগ পুকুরের কর্মচারিরা স্বীকার করলেও অস্বীকার করছেন পুকুর মালিক।
পশ্চিম দূর্গাপুর গ্রামের মোহন কুমার বলেন, হ্যাচারী থেকে নষ্ট ও পঁচা ডিম নিয়ে এসে মাছকে খাওয়ায়। এতে করে পুকুরের পানি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গোসল করা যায়না। প্রচুর দুর্গন্ধ হয়। নিষেধ করলে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, পঁচা ডিম ও মুরগির বাচ্চা নিয়ে এসে পুকুরের পাড়ে রাখা হয়। তখন দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া এরপর যখন আগুনে জ্বাল দেওয়া হয় তখন প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়ায়। বাড়িতে থাকায় মুশকিল হয়ে পড়ে। আমরা অনেক বার নিষেধ করেছি, কিন্তু আমাদের কথা শোনেনা।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রিফাত ইসলাম বলেন, দিনের পর দিন আমরা এই দুর্গন্ধে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এই পঁচা ডিম আমাদের এখানকার পরিবেশ দূষণ করছে। এর থেকে আমরা মুক্তি চাই। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
পুকুরের কর্মচারী বিশ্বনাথ চন্দ্র বলেন, আমরা জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার হ্যাচারী থেকে পঁচা ডিম নিয়ে আসি। সেই ডিমের সাথে কিছু বাচ্চাও থাকে। তারপর সেগুলো ব্রেন্ডারে সেদ্ধ করে মাছকে খাওয়াই।
পুকুরের মালিক আবু সালেক বলেন, এই পুকুরটি আমি পরিচালনা করি। এখানে রুই, কাতলা, পাঙাসসহ বিভিন্ন মাছ চাষ করেছি। গ্রামবাসীরা যে মরা মুরগি বা পঁচা ডিমের অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন বলেন, আমাদের পুষ্টির বিশাল একটা অংশ পূরণ করে মাছ। যদি মাছকে অস্বাস্থ্যকর কোন খাবার দেওয়া হয় তাহলে সেই মাছ খেলে মানবদেহে জীবাণু ও বিষাক্ত উপাদান প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। এটা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়া দুর্গন্ধে মানুষের বিভিন্ন রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, কোথাও পরিবেশ দূষণ সংস্ক্রান্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, মাছ চাষের ক্ষেত্রে কোন চাষী যদি সরকারি বিধি বিধান অনুসরণ না করে বা অপদ্রব্য ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড অথবা ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। কোন মাছ চাষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আছিরউদ্দিন মুন্সির ডাঙ্গী গ্রামে পরকীয়ার জের ধরে প্রবাসী স্বামী আলমাস খান কে (৪০) হত্যা করার অভিয়োগ উঠেছে খোদ স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৩৩) এর বিরুদ্ধে। গত শনিবার দিবাগত রাতে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ । ঘটনার পর থেকে আরেক আসামী পরকীয়া প্রেমিক আলী শেখ (৫৫) রয়েছে আত্ম গোপনে ।এ নিয়ে নিহতের পিতা হাতেম খান বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে হত্যার সঙ্গে জড়ীত পরকীয়া প্রেমিক আলী শেখকে আটকসহ তাদের ফাঁসির দাবিতে বুধবার (০২ জুলাই) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
এ সময় নিহতের পিতা হাতেম খান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী প্রবাসীদল ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি মির্জা প্রিন্স আলী সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন ।
তারা বলেন, পুলিশ ঘটনার সাথে জড়ীত থাকার সন্দেহে স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম কেআটক করলেও কথিত পরকীয়া প্রেমিক আলী শেখকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। অতি দ্রত আলী শেখকে গ্রেফতার করে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি জানান মানববন্ধন থেকে।
পরে এলাকার কয়েকশত নারীপুরুষ বিচারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মামলার প্রধান আসামি হোসনেয়ারা বেগমকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য আসামি আলী শেখকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। হোসনেয়ারা বেগমের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে । এই ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানগর ইউনিয়নের কাঠালতলী গ্রামে একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (০২ জুলাই) গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, আব্দুল আজিজের মালিকানাধীন ডুপ্লেক্স বাড়িতে ছাদের মাধ্যমে ৬-৮ জনের একটি ডাকাতদল প্রবেশ করে। তারা ঘরের সদস্যদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। এসময় আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তারা বাড়ির চাবি আদায় করে এবং ঘরের ভেতরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ লুট করে নেয়।
ডাকাত দল প্রায় ৬.৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকা নগদ অর্থ এবং একটি সনি ব্র্যান্ডের ক্যামেরা নিয়ে যায়। তবে সৌভাগ্যবশত এই ঘটনায় বাড়ির কোনো সদস্য শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
ভুক্তভোগী ও বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাত আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ছাদের দিক থেকে কয়েকজন লোক ঘরে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই আমাদের সবাইকে হাত-পা বেঁধে ফেল পরে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরের চাবি নিয়ে যায়। তারা ঘর তছনছ করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে তারা আমাদের কোনো শারীরিক ক্ষতি করেনি। তবে পরিবারের সবাই এখন আতঙ্কে আছে।
ঘটনার খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক ডাবলু, সিআইডি এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল হক ডাবলু জানান, অপরাধীদের শনাক্ত করতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অনুসন্ধান চলছে। খুব শিগগিরই ডাকাত চক্রকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
ময়মনসিংহের পাগলায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ২২ ঘন্টা পর নিখোঁজ দুই শিশু মরদেহ উদ্ধার করেছে নিহতের স্বজনেরা। বুধবার (০২ জুলাই) পাগলা থানার টাংগাব ইউনিয়নের বাঁশিয়া এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে তাদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশুরা হলো, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী এলাকার বাসিন্দা হাবিব মিয়ার ছেলে আবির (৬) এবং মুমতাজ উদ্দিনের ছেলে জুবায়েদ (৬)। তারা দুজনই বিরুই নদীর পাড় দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (০১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯ টার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরআলগী এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে মাদ্রাসায় যেতে ছোট একটি নৌকায় উঠেন ৯ শিক্ষার্থী। ময়মনসিংহের পাগলা থানার দত্তের বাজার সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছানোর পূর্বেই ডুবে যায় নৌকাটি। এর মধ্যে ৬ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ডুবে যায় তিন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে শাপলা আক্তারের (১৫) মরদেহটি ঘটনাস্থলের খানিকটা দুর থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভোরে নিহতের স্বজনরা নৌকা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নিখোঁজ আবির ও জুবায়েদকে খোঁজতে বের হয়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে টাংগাব ইউনিয়নের বাঁশিয়া এলাকায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদে দুজনের মরদেহ ভাসতে দেখে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে তাদের মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
প্রথমবারের মতো স্বামী সাইফ আলী খানের উপর হওয়া ভয়াবহ হামলা নিয়ে মুখ খুললেন বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুম্বাইতে তাদের বাসভবনে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারিনা জানান, সেই দিনের স্মৃতি এখনো তার মনে তাজা।
কারিনা বলেন, আমি এখনো মানসিকভাবে পুরোপুরি বিষয়টা মেনে নিতে পারিনি। প্রায় সময় ভাবি, কীভাবে একজন ব্যক্তি ঢুকে আমার সন্তানের ঘরের সামনে সাইফকে ছুরিকাঘাত করতে পারে। এটা মুম্বাই শহরের জন্য খুবই অস্বাভাবিক একটি ঘটনা।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই কয়েক মাস তার জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন। রাতে ঘুমাতে পারতেন না, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সময় লেগেছে। এখনো সেই ভয় তার মনে রয়ে গেছে। তবে তিনি চান না, এই আতঙ্ক তার সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক।
কারিনা বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমি আমার সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখছি। ওরা যেটা দেখেছে, সেটা তাদের বয়সের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তবুও এই অভিজ্ঞতা হয়তো ওদের জীবনের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি হয়ে থাকবে। আমার ছোট ছেলে এখনো ভাবে তার বাবা ব্যাটম্যান বা আয়রনম্যান— যে সবাইকে হারিয়ে দিতে পারে। আমাদের চোখেও সাইফ তাই, কারণ সে সেই আঘাত সহ্য করেছে।
অভিনেত্রী আরও জানান, তিনি সচেতনভাবে চেষ্টা করছেন নিজের আতঙ্ক যেন সন্তানদের মধ্যে না ছড়িয়ে পড়ে। তার ভাষায় সাইফ বলেছে— ভয়ে বাঁচা যাবে না। যা হয়েছে, সেটা হয়ে গেছে। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী পরিবার। আমার বিশ্বাস, ছেলেরা একদিন এমন মানুষ হয়ে উঠবে, যারা জীবনের কঠিন সময়েও সাহসের সঙ্গে লড়তে পারবে।
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বুধবার (০২ জুলাই) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম বাবু (৩২) ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ওই ঘটনায় পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিজিবি।
নিহতের পিতা নুর ইসলাম জানান, দুপুরে আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন গরুর ঘাস কাটার জন্য সীমান্তের গালার মাঠে যায়। এ সময় অসাবধনতাবশত সীমান্তের ৭৯ নম্বর মেন পিলার পার হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে সেখানকার ৩২ বিএসএফ হালদারপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় বাবু।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান গুলিবর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারির ওপর বিএসএফ গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বিকালে শ্রীঘর বাজারের নজরুল ইসলামের দোকানের সন্মুখ থেকে ১৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় আক্কাছ মিয়া (৩২) ও ছিদ্দিকুর রহমান (২১) নামের দুই মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ শ্রীঘর বাজারের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন কালে সন্দেহ জনক একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি করে। আক্কাছ মিয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকার মৃত শহীদ মিয়ার ছেলে। ছিদ্দিকুর রহমান নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান- এ ঘটনায় নবীনগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফেনীর পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকটি গরুসহ কোটি টাকার ভারতীয় মালপত্র জব্দ করেছে বিজিবি। বুধবার (০২ জুলাই) উপজেলাদ্বয়ের ভারত সীমান্ত এলাকায় এসব মালপত্র জব্দ করা হয়। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম সীমান্ত এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিজিবি। টহল দলকে দেখে চোরাকারবারিরা বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে ভর্তি কার্টন ও কয়েকটি গরু রেখে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা মালপত্র ও গরুগুলো জব্দ করে। এসবের আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জব্দকৃত মালপত্র স্থানীয় কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়েছে ।
ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানান, সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির অভিযানিক কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঝিনাইদহে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল মাহাফুজুর রহমান (১৬) নামের এক কিশোরের। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালীর কেশবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত কিশোর মাহাফুজুর রহমান ওই গ্রামের মত. মতিয়ার রহমান মতির একমাত্র ছেলে।
স্বজন ও বন্ধু সোহান জানায়, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাছের একটি তালগাছ থেকে সোমবার (৩০ জুন) বিকালে মাহাফুজুর রহমান একটি সাপ ধরে টিফিন বাটিতে করে আটকে রাখে। যা পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে ওই তালগাছের কাছে গিয়ে সাপ নিয়ে খেলা করতে গিয়ে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) তার হাতে ছোবল দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ঝিনাইদহ হাসপাতালে ভর্তিরপর অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
জুয়া খেলারত অবস্থায় শিবপুর মডেল থানা পুলিশ ৭ জুয়ারিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের লাখপুর বাজারের পাশে বাবুল নাজিরের কলাবাগানের ভেতর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- দৌলত হোসেন (৩৮) সাং-চরআলিনগর, খোরশেদ আলম (২৪) সাং-চরসিন্দুর, ফারুক (৪৫) সাং-হরিনারায়নপুর, আলামিন (৩৮) সাং-মানিকদী, মুকসিন (৪৪) সাং-শিমুলিয়া, সেলিম (৩৫) সাং-লাখপুর ও সুরুজ (৫২) সাং-লাখপুর। পুলিশ তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃত: জুয়ারীদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার সীতাকুণ্ডে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান বনায়ন কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানাটিতে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার (০২ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এ অভিযান শুরু করে। এর আগে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় উচ্ছেদ করে কারখানাটির স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কারখানা এলাকায় গড়ে ওঠা আরও কিছু স্থাপনা এবং ভবনের অবশিষ্টাংশে বুধবার (০২ জুলাই) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
উচ্ছেদের পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজার জায়গাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে বন বিভাগ। বিভিন্ন প্রজাতির দুই হাজার গাছ লাগানো হবে ওই স্থানটিতে। প্রথম দফায় সেখানে দুই হাজার বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করা হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।
সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাহাজভাঙা কারখানাটি উচ্ছেদের পাশাপাশি সেখানে আমরা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছি। এ জন্য চারা এনেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া কারখানার অবশিষ্ট অংশটিতে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।’ এই উচ্ছেদ অভিযানে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কালাম আজাদ, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ঝাউ, করঞ্জা ও হিজল- এই তিন প্রজাতির দুই হাজার গাছের চারা এনেছি। এখানে লাগানো হচ্ছে। এর আগে এখানে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ ধ্বংস করেন জাহাজভাঙা কারখানার লোকজন।’
জেলা প্রশাসনই বনের জায়গাটিতে জাহাজভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানা স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে-কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এ ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে; কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তার স্ত্রী কোহিনূর আকতার নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।
এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘কৌশলে’ বন ইজারার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামের ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।