দফায় দফায় বৈঠকেও চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে কোনো সমাধান হয়নি। ১২০ টাকার দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হলেও দাবি আদায়ে অনড় শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে আজ শনিবারও কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
শনিবার সকাল থেকে হবিগঞ্জের বিভিন্ন বাগানের কারখানার সমানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন চা শ্রমিকরা। তারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সমস্যা সমাধানে গত বুধবার ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরে চা শ্রমিক এবং বাগান মালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন। বৈঠকে মজুরি বৃদ্ধির কোনো সমাধান না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
এর আগে গত ১৬ আগস্টও শ্রীমঙ্গলের লেবার হাউসে খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে সময় তিনি শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান বলেন, ‘২৫ টাকা বাড়িয়ে শ্রমিকদের মজুরি ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। আপাতত এই মজুরিতে কাজে ফিরতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বিকেলে আলোচনায় বসা হবে।’
৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। এ সময়ে তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় ১৩ আগস্ট থেকে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করে আসছেন তারা।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়ন। সেখানকার উত্তর তারাবুনিয়া গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তা ৫০ বছর ধরে ভোগাচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, কত সরকার বদল হলো কিন্ত আমাদের দুর্ভোগের কথা শোনেননি কেউ।
শনিবার ২ আগস্ট সকালে ঐ রাস্তায় কচুগাছ রোপন করে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানায় স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। একই সময় চার কিলোমিটার দৈর্ঘের এই কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের দাবিতে সেখানে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। এ মানববন্ধনে অংশ নেন সাতুরিয়া ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সমাজসেবীরা।
কচুগাছ রোপন এবং মানববন্ধন শেষে গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন স্থানীয় আব্দুল লতিফ মোল্লা, আবুল বাশার, ইয়াসিন, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, নাজমিন বেগম এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবিদ ও মাহিম।
তারা বলেন, সাতুরিয়া ইউনিঢনের মোল্লাবাড়ি থেকে জোড়াপোল হয়ে গোয়ালবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি স্বাধীনতার পর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ৫০ বছরের অধিক সময় পেড়িয়ে গেলেও এই সরকটি অদ্যাবধি পাকা করা হয়নি। বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তা পানি ও কাদায় একাকার হয়ে যায়।'
দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোল্লাবাড়ি থেকে জোড়াপোল হয়ে গোয়ালবাড়ি পর্যন্ত কাঁচা সড়কটি প্রশস্ত করে পাকা করার আহ্বান জানিয়েছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়)-১ম সংশোধিত শীর্ষক প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের কনফারেন্স কক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ’র সভাপতিত্বে উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়)-১ম সংশোধিত শীর্ষক ৫৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভায় উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) এ.কে.এম শরীফ উদ্দীন, প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ নওয়াব আলী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, উপ-পরিচালক রোকসানা লায়লা, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) মীর্জা মোহাম্মদ আলী রেজা, যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা-৩) আহমেদ শিবলী, একনেক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্নিগ্ধা তালুকদার, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উপ-পরিচালক নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য্যক্রম বিভাগের ডেপুটি চীফ বাবুলাল রবিদাস প্রমুখ।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পের বিভিন্ন সাইট সরেজমিন পরিদর্শনে করেন। প্রতিনিধি দল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা কাজের সময় শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, উপ-পরিচালক রোকসানা লায়লা এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন।
ফরিদপুরে মাদার অফ জুলাই উপলক্ষে আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বেলা বারোটার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও মহিলা অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপ-পরিচালক মাশউদা হোসেন । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল. বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আজম ।
এসময় বক্তব্য রাখেন এডভোকেট মেহেরুন নেছা স্বপ্না । জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ জান শরিক মিঠুর মা হানুফা আলম , শহীদ সিরাজুল বেপারীর মা তার স্ত্রী , শহীদ শামসু মোল্লার স্ত্রী মেঘলা বেগম। জুলাই যোদ্ধা আহত সজীব ইসলামের মাতা, কাজী রিয়াজের মাতা, জুলাই যোদ্ধা জাকিয়া ফারজানা, কাজী জেবা তাহসিন আর এম হৃদয়, সোহেল রানা
কাজি রিয়াজ, সাব্বির হোসেন খান, রাফিউল ইসলাম সিয়াম , জান্নাতি খানম প্রমুখ।
সভায় বক্তারা তুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরেন । তাতে অংশগ্রহণকারী তাদের পরিবারের সদস্যদের হারানোর দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, পরিবারের একজন সদস্য হারানো যে কতখানি কষ্টর তা পরিবারের বাকি সদস্যরা বুঝতে পারেন।
একজন মা তার সন্তানের না থাকার অভাব বুঝতে পারেন। ।
তারা বলেন, যে প্রত্যাশা করে আমাদের ছেলেরা জুলাই গণ অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল তা পূরণ হয়নি। আমরা আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার এখনো পাইনি, তাদের উপর মারধর করারও বিচার পাইনি । বক্তারা অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে সরকারের নিকট জোড় দাবি জানান।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সকল সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিন দফা দাবিতে কফিন নিয়ে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ ছাত্র-জনতা।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর সদর রোডস্থ অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশালের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই প্রতীকী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, শুধু শের-ই-বাংলা মেডিকেল নয়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার চরমভাবে হুমকির মুখে পড়বে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।
তাদের তিন দফা দাবি হলো:
১. সরকারি হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন,
২. পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ,
৩. আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিক্ষোভ শেষে অংশগ্রহণকারীরা কফিন নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থান নেন। পরে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভেতরে গিয়েও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিক্ষোভে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।
সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অর্ধ-বার্ষিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালত সম্মেলন কক্ষে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবির, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ কামাল খাঁন, ২৮ বিজিবির সিও লেফটেন্যান্ট কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির, পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ, সিভিল সার্জন ডা. মো. জসিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার (পিবিআই) মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) তাপস শীল সহ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজবৃন্দ, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজবৃন্দ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিজ্ঞ জিপি ও পিপি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
সম্মেলনে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন স্বাগত বক্তব্যে ১৯৫২, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণ করেন। তিনি উপস্থিত সকলকে প্রাণবন্ত আলোচনার মাধ্যমে সুনামগঞ্জ বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বেগবান করার অনুরোধ জানান।
এরপর বিগত জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জাজশিপে মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি সংক্রান্তে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আকবর হোসেন। ম্যাজিস্ট্রেসির পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলমগীর। পরবর্তীতে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সহকারী জজ মো. জুনাইদ এবং এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম। প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আদালতের অপর্যাপ্ততা, অপ্রতুল লোকবলসহ বেশ কিছু দিক চিহ্নিত করা হয়।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দসহ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক, পুলিশের জেল সুপার, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের জেলা পরিদর্শক ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। বক্তারা আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সম্মেলনের সভাপতির বক্তব্যে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ হেমায়েত উদ্দিন বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও কার্যকর সমন্বয় অপরিহার্য।
দিঘিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। প্রায় চারশ’ বছর আগে মুঘল স্থাপত্যের আদলে নির্মিত হয় মসজিদটি। ইয়েমেন দেশ থেকে আসা তিনজন ইসলাম ধর্মের প্রচারক এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মূল মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে নানা কারুকার্য। এটি নির্মাণে কেবল চুন-সুরকির ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে শুরুতে কেবল নয়জন ব্যক্তি নামাজ আদায় করতেন। তবে এর ধারণ ক্ষমতা তখন ছিলো ২৭ জনের। পুরনো মসজিদের স্থাপত্য ঠিক রেখে ২০০৬ সালে মসজিদটির পূর্বপাশ ধরে এর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংস্কারের পর এটি দুই গম্বুজ ও চার মিনার বিশিষ্ট করা হয়েছে। এখানে দুই শতাধিক মানুষ এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে বিশাল পুকুর। এর পাশে নির্মাণ করা নান্দনিক ঘাট। এটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। কথিত আছে, মসজিদের সামনের বিশাল দিঘির নামেই এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে।
মসজিদের খাদেম মাওলানা রুকুন উদ্দিন বলেন, ’শেখ রহিম, শেখ সুমন, শেখ মঙ্গল নামে তিনজন ইসলাম ধর্মের প্রচারক ইয়েমেন দেশ থেকে এখানে আসেন। তারা এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচার করেন। এই ধর্ম প্রচারকরা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের পাশে বর্তমানে ভূইয়া বাড়িতে তারা বসতি স্থাপন করেন। এটি যখন নির্মাণ করা হয় আশেপাশের গ্রাম গুলোতে মসজিদ ছিলো না। জন বসতিও ছিলো অনেক কম। তাই ২৭ জন মানুষের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও নামাজ পড়তেন নয়জন মানুষ।’
প্রজাপতি বাজার হতে লাড়ুচৌ গ্রামের পথ ধরে কিছু পথ হাঁটলেই দিঘিরপাড় গ্রাম। সড়কের পশ্চিম পাশে দিঘিরপাড় খেলার মাঠ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। বয়ে চলা খালের উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো পার হলেই চোখে পড়বে নান্দনিক এই মসজিদটি। নানান গাছের ছায়ায় গ্রামীণ পরিবেশে মসজিদটি অবস্থিত। দেবিদ্বার উপজেলার মুগসাইর গ্রাম থেকে মাসুক মিয়া, আদিল আহনাফ রবি ও পশ্চিম পোমকাড়া গ্রাম থেকে আনোয়ার পারভেজ নিলয় মসজিদটি দেখতে এসেছেন। তারা জানান, ‘গ্রামীণ পরিবেশে এত সুন্দর একটি মসজিদ দেখে ভালো লাগছে। এর নির্মাণ শৈলী একেবারে আলাদা। মসজিদে নামাজ আদায় করে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পুকুর ও ঘাট মসজিদের সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দিয়েছে। এটি নির্মাণের ইতিহাস জেনে অবাক হয়েছি। এমন প্রত্যন্ত গ্রামে ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা সুদূর ইয়েমেন দেশ থেকে এসেছেন।’
ইয়েমেন থেকে আসা ধর্ম প্রচারকদের বংশদূত ও প্রজাপতি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক মো ইউনুস ভূইয়া বলেন, ‘মূল মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে চুন-সুরকি দিয়ে। এর দেয়ালের পুরুত্ব ৪৩ ইঞ্চি। মূল মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট হলেও দুই গম্বুজ বিশিষ্ট হয়েছে। যারা মসজিদটি নির্মাণ করেছেন তাদের বংশধরেরা এখনো এই গ্রামে আছেন। এখানে দর্শনার্থীরা মসজিদটি দেখতে নানা জায়গা থেকে আসেন।’
মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘১৬'শ শতাব্দীতে ইয়েমেন থেকে আসা আপন তিন ভাই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি একটি সুবিশাল পুকুর খনন করেন। এখানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় করা হয়। এটি গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদ। দুই শতাধিক মানুষ মসজিদটিতে এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেছেন, শহিদ পরিবার ও যোদ্ধাদের পাশে সরকার সবসময় আছে এবং আমরাও পাশে থাকবো। সরকার জুলাই সনদের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে পাঁচ আগস্ট হয়তো ঘোষণা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ছোটখাটো দ্বিমত থাকলেও তারা ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এই ঐক্যমত বাংলাদেশের জন্য একটি শুভ সংবাদ।
গতকাল রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ ও জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গত বছর জুলাইয়ে কী হয়েছিল তা আমাদের সকলের স্মৃতিতে সংরক্ষিত আছে। আজ আপনারা সেই স্মৃতিগুলো শেয়ার করে আবার জাগিয়ে তুললেন। এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে দেশকে সংস্কার করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের একটা পরিচয় হওয়া দরকার এবং সে পরিচয়ে সকলে এক থাকবে। সে পরিচয়ের বিভিন্ন নাম দিলে তা আবার বিভিন্ন রকম মনে হবে। নামটা যদি হয় জুলাইযোদ্ধা তাহলে সবাই এক প্লাটফর্মে থাকবে। একেক জনের দল মত ভিন্ন হতেই পারে কিন্তু নাম একটা হওয়া দরকার বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরিন উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জুলাই আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও গুরুতর আহতদের দ্রুত সুস্থতা এবং আরোগ্য কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া শেষে জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। এসময় জুলাই আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ছোট্ট সিয়াম(১১)বাসার হেলিকপ্টারের আওয়াজ শুনে জানালার পাশে গিয়ে বাবাকে ডেকে দেখাচ্ছে বাবা দেখ হেলিকপ্টার অমনি একটি বুলেট এসে লাগল রায়হানের বুকে, বাবার চিৎকার! শাহবাগ উত্তাল,ছাত্র জনতার শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর রাজপথ,উত্তপ্ত রোধে হাঁপিয়ে উঠেছে সবাই,এসময় পানির বোতল নিয়ে হাজির মুগ্ধ,পানি লাগবে পানি...মুহুর্তেই বুলেটে ঝাঝড়া হয়ে গেলে মুগ্ধের বুক, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুগ্ধ। রংপুরে ছাত্র জনতার মিছিলে নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে পুলিশ,মিছিলের সামনে গিয়ে বুক পেতে দিয়ে বুলেট বুকে নিয়ে সবাইকে রক্ষা করল আবু সাঈদ। আবু সাইদের বুকে বুলেট আটকে বেঁচে গেল গণতন্ত্র,রক্ষা পেল দেশ আর এতেই পালাতে হল ১৬ বছরের স্বৈরাশাসককে।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অংগ্রহণে চট্টগ্রামে ২৪ এর রঙে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এভাবেই তোলে ধরেন আনোয়ারা উপজেলার বখতিয়ার পাড়া চারপীর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। আর এতেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে কলেজ পর্যায়ে ১৯৩ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মাদ্রাসাটি। এতে প্রথম স্থানে ব্রাক্ষ¥ণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ পেয়েছে১৯৭ নম্বর ও তৃতীয় স্থান অধিকারী খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ পেয়েছে ১৯০ নম্বর।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১১ জেলা ৩৩ টি কলেজ ও মদ্র্রাসার শিক্ষার্থী দল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা চেতনায় জুলাই ধারণ করে গ্রাফিতি তুলে ধরে।
পরে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মায়া, উম্মে জান্নাতুল মাওয়া সাইমা,নুসরাত শাহীন জেরিন,সুমাইয়া আক্তার মাহি ও মেহেরন্নেসা। প্রতিযোগী সকলেই খুবই স্বত:স্ফুর্ত অনুভূতি প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়,গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জুলাই শহীদদে প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁদের স্মরণ করতে পেরে আমরা গর্বিত।
উম্মে হাবিবা মায়া বলেন,জুলাই গণঅভ্যুথানের চেতনা আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে গ্রাফিতি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। গত বছর এই সময় যে সংগ্রামী যোদ্ধারা রক্তা দিয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে, আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে তাদেরকে স্মরণ করি। আর সেই চিত্রই এই গ্রাফিতিতে ফুটে তোলার চেষ্ঠা করেছি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী আবদুল হান্নান বলেন,প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা সব ধরণের সহযোগিতা করেছে। আমার আনন্দিত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌস হোসেন বলেন, বখতিয়ার পাড়া চারপীর আউলিয়া মাদ্রাসার এই অর্জনে পুরো উপজেলা গর্বিত। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই চেতনা ধারণ করে রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও বালাইনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপদে পড়েছে। বিষাক্ত এসব বালাইনাশক মানব স্বাস্থ্য, মাটি, পানি ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। দেশে বালাইনাশকের মধ্যে ছত্রাকনাশকের ব্যবহার সর্বাধিক ৪৫-৪৬ শতাংশ, এরপর কীটনাশক ৩৩ শতাংশ এবং আগাছানাশক ২০-২১ শতাংশ। এগুলোর বেশির ভাগই মাটি, পানি ও বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানে দেশে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও অনুজীব দিয়ে ফসলের উৎপাদন বর্ধক ও পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশক উদ্ভাবনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
বাকৃবির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিলের নেতৃত্বে গবেষক দলটি ট্রাইকোডার্মা এসপেরেলাম নামক ছত্রাক ব্যবহার করে একটি নতুন ছত্রাকনাশক উদ্ভাবন করেছেন যার নাম পি.জি. ট্রাইকোডার্মা। অধ্যাপক মঞ্জিল ছত্রাকটি আইসোলেট ও বায়োফর্মুলেশন উন্নয়ন করেন। গবেষক দলের অন্য দুই গবেষক- কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কে. এম. মহিউদ্দিন এর গুণগত মান ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেন এবং ফার্ম স্ট্রাকচার ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ উৎপাদন ও পরিবেশগত মূল্যায়ন পরিচালনা করেন। গবেষণাটি বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োকন্ট্রোল ল্যাবে সম্পন্ন হয়।
পরিবেশবান্ধব এই ছত্রাকনাশক সম্পর্কে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, ছত্রাকনাশকটির মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম যা আমাদের দেশের মাটি থেকে গবেষণার মাধ্যমে শনাক্ত ও আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা এবং বাংলাদেশের জলবায়ুতে অনুজীবটি ভালোভাবে অভিযোজিত। গবেষণার শুরুতে দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার মাটি ও রাইজোস্ফিয়ারের (শিকড়ঘেঁষা) মাটির নমুনা সংগ্রহ করে শতাধিক ট্রাইকোডার্মা ছত্রাক পৃথক করা হয়েছে। ট্রাইকোডার্মার শতাধিক প্রজাতি থাকলেও আমরা ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম বেছে নিয়েছি কারণ এটি আমাদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে সবচেয়ে ভালোভাবে অভিযোজিত এবং অধিক কার্যকর। এছাড়া দেশীয় অণুজীব থেকে এই ছত্রাকনাশকটির উন্নয়ন করা হয়েছে বিধায় বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য আমদানিকৃত ট্রাইকোডার্মার চেয়ে এটি বেশি কার্যকর।
ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম সম্পর্কে অধ্যাপক শাহজাহান মঞ্জিল আরও বলেন, ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি একযোগে ছত্রাকনাশক এবং জৈব সার হিসেবে কাজ করে। এটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জৈব ছত্রাকনাশক যা এনজাইম, উদ্বায়ী যৌগ ও সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসহ বিভিন্ন জৈব উপাদান উৎপাদনে সক্ষম। এই উপাদানগুলো উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, শিকড়ে বসবাস করে পুষ্টি গ্রহণ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং তাপ, অম্লতা ও লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। আমাদের এই গবেষক দলই দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা ট্রাইকোডার্মা এস্পেরেলাম প্রজাতির জিন সিকুয়েন্সিং করতে সক্ষম হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও তা নথিভুক্ত হয়েছে। NCBI Gene Bank-এ এটি সংরক্ষণ করা হয়েছে (এর একসেশন নম্বর: OR125623)।
পি.জি. ট্রাইকোডার্মা ব্যবহারে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি সম্পর্কে অধ্যাপক শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, ছত্রাকনাশকটির প্রয়োগে আমরা ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের উল্লেখযোগ্য ফলন বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছি। টমেটো, আলু ও বেগুনে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ, পালং ও পুঁইশাকে ফলন বেড়েছে ৪০-৫০শতাংশ, পানে ফলন বেড়েছে প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ, চা গাছে ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০-১০০ শতাংশ, ঢেঁড়স, মরিচ ও শসায় ফলন বেড়েছে ১৫-২০ শতাংশ। ডাল, ধান ও ফলগাছে রোগ দমন ও গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকায় ফলন স্থিতিশীল বা ধীরে ধীরে বৃদ্ধির ধারা দেখা যাচ্ছে। অধ্যাপক মঞ্জিল আরও বলেন, পি.জি.ট্রাইকোডার্মা গোড়াপচা, কান্ডপচা, পাতাপচা ও ব্লাইট দমনে কার্যকর, শিকড়ের বৃদ্ধি ও পুষ্টি গ্রহণ বাড়িয়ে ফসলের উৎপাদন ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এটি ছাদ কৃষি ও মৎস্য চাষেও উপযোগী যা কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক।
অধ্যাপক মহিউদ্দিন বলেন, ছত্রাকনাশকটি জৈব সার হিসেবেও কাজ করার কারণে মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কম ব্যবহার করেও প্রায় একই বা বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব হয়েছে। জৈব সার হিসেবে এটি ফসফেট দ্রাব্যকরণ করে, নাইট্রোজেন ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায়, মাটির অম্লতা ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে। শিশা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি ভারী ধাতু সম্বলিত দূষিত মাটিতে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণায় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তাই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণে এটি টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত জৈবিক বিকল্প হতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশকটি জলজ পরিবেশের জন্যও নিরাপদ। এটি কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বহন করে না এবং প্রয়োগের পর পানিতে পড়ে গেলে মাছ, ব্যাঙ, শামুক বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। আমাদের গবেষণায়ও এ পর্যন্ত জলজ প্রাণীতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাকৃবির অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহযোগিতায় তেলাপিয়া মাছের ওপর একটি যৌথ গবেষণা পরিচালনা করেছি। এই গবেষণায় পি.জি. ট্রাইকোডার্মা-এর প্রয়োগ শুধুমাত্র জমির ফসল নয়, বরং জলজ পরিবেশ ও মাছের চাষেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফিড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পি.জি. ট্রাইকোডার্মার প্রয়োগে মাছের ওজন ও আকার বৃদ্ধি, পানির গুণমান উন্নয়ন, ক্ষতিকর রাসায়নিক ও প্যাথোজেনিক ছত্রাক কমেছে এবং দূষণ হ্রাস পেয়েছে। বড় পরিসরে ব্যবহারের আগে মাছ চাষের ধরন ও পুকুর পরিস্থিতি বিবেচনা জরুরি। আমাদের গবেষণা চলছে, আশা করি ভবিষ্যতে এটি টেকসই অ্যাকুয়াকালচারের সমাধান হতে পারে।
গবেষকবৃন্দ বলেন, এই উদ্যোগটি ২০০১ সাল থেকে শুরু হয়। তখন থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ছোট ছোট অনুদানের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গত বছর বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) এর মাধ্যমে এই প্রযুক্তির প্রসার ও প্রচারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। বর্তমানে এটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে এবং বাণিজ্যিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহৃত হওয়ায় এটি সহজলভ্য ও কম মূল্যে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ পেলে ভবিষ্যতে আমাদের বায়ো-ইনসেক্টিসাইড এবং বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন জৈব বালাইনাশক তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
ইতোমধ্যে ছত্রাকনাশকটির বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে। ছত্রাকনাশকটির ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এটির বাস্তবিক সুফলতা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন।
মৌলভীবাজারের ফুলতলা টি এস্টেটের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার শিহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি আমার চা বাগানে পিজি ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করে পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ফলন পেয়েছি। আগে যেসব রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতাম সেগুলোর ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। ট্রাইকোডার্মা একদিকে যেমন ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে গাছের শুটিং বিহেভিয়ারও (নতুন কুঁড়ি আসার প্রবণতা) বাড়িয়ে দেয়। আমি সাধারণত প্রতি লিটারে ৩ গ্রাম ব্যবহার করি, তবে ৫ গ্রাম দিলে ফল আরও ভালো হয়। এছাড়া এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা।
নরসিংদীর পান চাষি কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, পান চাষে গোড়া পচা মারাত্মক একটি রোগ। এর আক্রমণে গাছ মারা যায়। এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করতাম। তবে এই ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরে গাছ আর ওই রোগে মারা যায় নি বিধায় ব্যাপক লাভবান হয়েছি। প্রায় অর্ধেক খরচ সাশ্রয় করে ফলন অনেক বেড়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু বলেন, পরিবেশবান্ধব ছত্রাকনাশক উদ্ভাবিত হলে তা মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, গবাদিপশু সকলকিছুর জন্যই উপকারী হবে। এটি দেশের জন্য বিশাল এক সম্ভাবনা হতে পারে। যদি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিলের উদ্ভাবিত ছত্রাকনাশকটি সাশ্রয়ীমূল্যে পাওয়া গেলে আমাদের কৃষি অফিস থেকে সেটি কিনে সাধারণ কৃষকদের সাহায্য করতে পারবো।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) উপদেশমূলক মতামত বাধ্যতামূলক না হলেও বর্তমান বৈশ্বিক বৈরি রাজনৈতিক বাস্তবতার বিপরীতে জলবায়ু নীতি পরিবর্তনে অনেক নৈতিক সাহস যোগাবে। এটি আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে চাপ সৃষ্টি করবে। এ চাপ বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রগুলোকে নীতিমালায় পরিবর্তন আনতেই হবে।”
আজ পরিবেশ অধিদপ্তরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত উপদেশমূলক মতামত বিষয়ে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি ইস্যু যেখানে শুধু সুশীল সমাজ নয়, তরুণ প্রজন্মকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। আজকের প্রজন্ম হয়তো টিকে যাবে, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।”
উপদেষ্টা তার বক্তব্যে নদীভাঙন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা, এবং স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় পুনর্বাসন ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডকে আরও কার্যকর করতে হবে, যেখানে সরকার এবং এনজিও একসাথে কাজ করবে।”
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ‘ন্যাচারাল রিসোর্স প্রটেকশন’ ও 'মরাল অবলিগেশন'-এর দৃষ্টিভঙ্গির কথাও তুলে ধরেন এবং উপদেষ্টা সবার প্রতি আহ্বান জানান—“আসুন, ১০-১২টি পরিবেশবান্ধব বার্তা তৈরি করে তরুণদের মাধ্যমে দেশের জন্য শক্তিশালী জলবায়ু বার্তা পৌঁছে দিই।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনজীবী ও জলবায়ু পরিবর্তন নিগোশিয়েটর অ্যাডভোকেট হাফিজ খান। অধ্যাপক পায়াম আখভান, অধ্যাপক মেরি-ক্লেয়ার এবং নিকোল অ্যান ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ; পরিবেশ অঅধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড মো: কামরুজ্জামান ; ন্যাকমের নির্বাহী পরিচালক এস.এম. মুনজুরুল হান্নান খান; অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির; পিকেএসএস এর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ; পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো: জিয়াউল হক ও মির্জা শওকত আলী ; ব্রাকের পরিচালক লিয়াকত আলী ; সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মোঃ শামসুদ্দোহা; ফ্রেন্ডশিপের সিনিয়র পরিচালক কাজী আমদাদুল হক এবং ইয়ুথ নেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান প্রমুখ।
গোলটেবিল আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তরুণ প্রতিনিধি, পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের দীর্ঘদিনের বেহাল অবস্থার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় জনতা। গত শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দর নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে প্রায়ই যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তারা দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের দাবি জানান এবং এ বিষয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান। বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে যাত্রীরা এবং পরিবহন শ্রমিকরাও অংশগ্রহণ করেন।
গণঅধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি মেহেবুবা আক্তার বলেন, “বহুবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাবেক সদস্যসচিব হৃদয় ভূইয়া বলেন, “এই সড়কে অতিরিক্ত ওজনের পরিবহন চলাচলের ফলে দ্রুত সড়কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনুমোদনবিহীন এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।”
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, “সকাল ১০টা থেকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে আশ্বাস দেন যে, আগামী রবিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।”
জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনের অংশ হিসেবে নওগাঁয় ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক চলচ্চিত্র প্রদর্শণ, অভিভাবক সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নওগাঁর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাদিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবনুল আবেদীন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের মা বেবি নাজনীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মা হিসেবে তাসলিমা ফেরদৌস, নুর তাজসহ অন্যান্যরা।
এসময় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবারের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সন্তানদের অনুপ্রেরনা দেওয়া মায়েরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য জেলা প্রশাসক বলেন, জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে মমতাময়ী মায়েদের অবদান অনস্বীকার্য। আন্দোলনরে সময় মায়ের সামনে থেকে সন্তানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মা জানে না সে সন্তানকে মেরে ফেলা হবে কিনা গুম করা হবে। তারপরও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মায়েরা তাদের সন্তানদের সাহস জুগিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। যাতে তাদের সন্তানরা একটি বৈষম্যহীন সমাজে বেড়ে উঠতে পারে। মায়েরা শুধু সন্তানদের সাহস ও সমর্থন দেননি, বরং আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আন্দোলনকে সফল করতে সহায়তা করেছেন। অনেক মা আন্দোলনকারীদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদেরকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এ ঘটনা গুলোকে আমাদের হৃদয়ে পুনর্জাগরণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তোলে ধরতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এসময় জেলা প্রশাসক পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সব জায়গায় সমান অংশ গ্রহণ ও সমান মর্যাদা নিশ্চিত করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে পৃথক তিনটি অভিযানে মাদকদ্রব্য, কারেন্ট জাল ও আতশবাজি জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার ভোরে মহিষকুন্ডি আশ্রায়ন বিওপি এলাকার পুরাতন ঠোটারপাড়া পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় ৮ হাজার ৮০ পিস ইয়াবা ও ৭৭ কেজি কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এসব মালামালের বাজারমূল্য প্রায় ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
এর আগে শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণপুর বিওপির আওতাধীন মোহাম্মদপুর মাঠে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ২৪ বোতল মদ এবং ২৫৭ পিস ট্যাপেন্ডেবল ট্যাবলেট জব্দ করে বিজিবি। এসবের আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ ১৩ হাজার ১০০ টাকা।
একইদিন রাত ১১টার দিকে চিলমারী বিওপির আওতাধীন শান্তিপাড়া মাঠ এলাকায় আরও একটি অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা এক হাজার পিস সিলডিনাফিল ট্যাবলেট এবং ১ হাজার ৮০ পিস আতশবাজি জব্দ করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ ২৭ হাজার টাকা।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, মালিক বিহীন এসব জব্দকৃত কারেন্ট জাল তাৎক্ষণিকভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং মাদকদ্রব্যগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ধ্বংসের জন্য ব্যাটালিয়নের মাদক স্টোরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে”