১৮ বছর আগের এই দিনে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে তৈরি হয় এক বিভীষিকা। তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী। গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে পড়ে ওই হামলায়। আজ সেই ২১ আগস্ট, রক্তাক্ত বিভীষিকাময় দিন। সবাই ভেবেছিল সে দিনই শেষ হয়ে যাবে দলটি। কিন্তু না, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা তৃতীয়বারে মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২১ আগস্ট বিভীষিকার পর এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে, যা আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এমন ভয়াল হামলা কাবু করতে পারেনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। গ্রেনেডের গভীর ক্ষত বুকে নিয়েই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। ভয়কে জয় করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে। ঘৃণিত এই হামলার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বড় একটি ঐক্যও গড়ে ওঠে।
ওই হামলার পর যে চ্যালেঞ্জগুলো আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিচারপ্রক্রিয়া।
ওই ঘটনায় আনা মামলায় সব পক্ষকে বিদ্যমান সব আইনি সুবিধা দিয়ে বিচারিকপ্রক্রিয়া শেষে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত মামলা এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জন উগ্রবাদী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ছাড়া রায়ে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও অপর ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা রাষ্ট্রীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মামলা। নজিরবিহীন ওই হামলার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্থবির ও ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সে কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর দরখাস্ত করেছি। প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন।
একই বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত তৎপর। এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করছে সরকার।’
এদিকে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২১ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে দলটির দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করতে শুরু করে, যেসব দল সন্ত্রাসী রাজনীতির ধারক-বাহক, তাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি চলতে পারে না। ২১ আগস্টের ঘটনার পরই নির্ধারিত হয়ে যায় ভবিষ্যতে রাজনীতির প্রকৃতি কেমন হবে, রাজনৈতিক সহাবস্থানের রূপ কেমন হবে। আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের মধ্যেই বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিহিত।’
তারেকসহ ১৫ আসামি এখনো পলাতক
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার পরও মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৫ আসামি এখনো পলাতক রয়েছে। পলাতকদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া বাকি আসামিরা কে কোন দেশে অবস্থান করছে, তাও নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার। তবে সম্ভাব্য কয়েকটি দেশে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যাদের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে, আইনি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে তাদেরও ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পলাতকদের অবস্থান শনাক্তের পর ওইসব দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্টের (পারস্পরিক আইনি চুক্তি) মাধ্যমে কিংবা অন্য উপায়ে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার।
পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সূত্রে জানা যায়, পলাতক কয়েকজনের সম্ভাব্য অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় বা পাকিস্তানে। হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন না বেঁচে আছেন সেটা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। রাতুল ইতালি বা মালয়েশিয়া। হানিফ থাইল্যান্ডে বা মালয়েশিয়ায়। পলাতক ১৫ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে তারেক রহমান ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে জারিকৃত রেড নোটিশ ইন্টারপোল প্রত্যাহার করেছে। তারেকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রেড এলার্ট জারি করা হয়। পরের বছরের ২৬ জানুয়ারি ইন্টারপোল জারিকৃত রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে। পরে বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকে ইন্টারপোল কোন ভিত্তিতে রেড নোটিশ প্রত্যাহার করেছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে।
পলাতক আসামিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও খোঁজখবর রাখছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যাদের অবস্থান এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, তাদের চিহ্নিত করতে কাজ করা হচ্ছে। কে কোন দেশে অবস্থান করছে, তা নিশ্চিত হতে গোয়েন্দাসহ একাধিক ইউনিট কাজ করছে। দূতাবাসগুলোকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
দিনভর আওয়ামী লীগের আয়োজন
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও আলোচনা সভা করবে ক্ষমতাসীন দলটি।
২০০৪ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় নিহত হন ২৪ জন। আহত হন আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী।
ঘটনাটির ১৮ বছর পূর্তিতে আজ রোববার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
সকাল সোয়া ১০টা থেকে নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সারা দেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে পালন করতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি অনুরোধও জানান ওবায়দুল কাদের।
২১ আগস্ট উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
‘২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের এ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করা; আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সব অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে বাংলাদেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য আমাদের সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত সাড়ে ১৩ বছরে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ছিল তারই ধারাবাহিকতা। সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনো নানাভাবে সোচ্চার আছে। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির যে-কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবীরা রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যকে মোকাবেলা করেছে এবং পরাজিত করেছে। এভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে তারা। বিশ্বের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন বিপ্লব বলে আমি মনে করি। এই বিপ্লবটি বাংলাদেশের জনগনের ওপরে যে ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছিল শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয় বরং স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব লুন্ঠনকারী ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধেও ছিল।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর দেড় টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লব বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত জুলাই বিপ্লব প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি'র বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই ‘বিপ্লব নাকি অভ্যুত্থান’ এই প্রশ্নের উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না। বরং শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল। তাই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আন্দোলনকে বিপ্লব বলে অবিহিত করি। বিপ্লব মাত্র ৩৬ দিনে শেষ হয় না বরং একটা পর্যায় অবস্থান করে। রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্টসহ অভ্যন্তরীন ও বর্হিবিশ্বের হুমকি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব চলমান থাকবে।
সভায় জুলাই বিপ্লবের বিপদের আশংকা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের জন্য দেশের দুইটি থ্রেট বা বিপদের কথা বলবো যা দুই দিক থেকে আসবে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বিপদ বলতে আমাদের দেশের সকল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের দালাল ও ভারতের আধিপত্য দালালদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করতে চাইবে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। গতকাল সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভারতীয় দালাল 'র' এর এজেন্টদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল আমরা তাদের নিয়ে পত্রিকায় ক্রমাগতভাবে খবর প্রকাশ করেছি। এমন একটা সময় ছিল সামরিক বাহিনী নিয়ে খবর প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করত। এই দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার যুগটা পার করে এসেছি। এই ‘র’ কিংবা ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন না করলে বিপ্লব দীর্ঘজীবী হবে না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আরেকটা বিপদ হচ্ছে এক্সটার্নাল থ্রেট— যা আমার দেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা নিয়ে। যেহেতু আমাদের দেশের চারপাশে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে হিন্দু বা বৌদ্ধিস্ট রাষ্ট্র। সুতরাং মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে সজাগ থাকতে হবে।
আসন্ন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, অন্যদিকে ভারত আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী কারণ তাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বর্হিবিশ্বের হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষিত তরুণরাই যথেষ্ট।
সর্বশেষ তিনি জুলাই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, জুলাই বিপ্লবীদের সাথে ভালো আচরণ করুন। তাদের সম্মান করতে শিখুন। ভারতীয় এজেন্ডার বিরুদ্ধে ও ইসলামের প্রশ্নে বাংলাদেশের তরুণদের দৃঢ়তা আমাকে মুগ্ধ করে।
উল্লেখ্য, বর্ষপূর্তি উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা। ৩৬ জুলাইয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আনন্দ র্যালি-সহ জুলাই স্মৃতিকথা মোড়ক উন্মোচন ও জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা উদ্বোধন করা হয়।
জুলাই গণ-অভ্যূত্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আহত জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা, জুলাই শহীদ পরিবারের সম্মিলন ও স্মৃতিচারণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) সকাল সাড়ে নয়টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে এসে অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্ব আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ, সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন। স্মৃতিচারণ তুলে ধরেন আহত জুলাই যোদ্ধা জহুর আলী, ফয়সল আহমেদ এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসময় ছাত্র সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক ওসমান গনি, জুলাই যোদ্ধা আব্দুল বারী, তাসনিয়া হক তাজিন, ইকরাম আলী সায়েম, মাহফুজুর রহমান মেহিত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারি যোদ্ধাদের সমাগম অনুষ্ঠান, প্রধান উপদেষ্টার আহতদের প্রতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন, জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, শহীদ পরিবারের সম্মিলন ও স্মৃতিচারণ করা হয়।
পরে ফ্যাসিস্ট পলায়নের ক্ষণ উদযাপন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে এক শক্তিশালী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, যার জেরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের। অভিযোগ উঠেছে, এই সিন্ডিকেট অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে এবং রোগী পরিবহনে বাধা দিচ্ছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট থাকার কারণে এই সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৩১শে জুলাই, নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল থেকে রেফার করা ৬৫ বছর বয়সী রোগী অনিল চন্দ্রকে ভাড়া করা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। যে অ্যাম্বুলেন্সটি তাকে ময়মনসিংহ নিয়ে গিয়েছিল, সেই একই অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু ময়মনসিংহ হাসপাতালের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স চালকরা তাতে বাধা দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হলে তাদের ময়মনসিংহ সিন্ডিকেটকে ১৫০০ টাকা ‘সেলামি’ দিতে হবে অথবা তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হবে। এটি তাদের নীরব চাঁদাবাজির একটি কৌশল। তারা জানায়, মৃতদেহ পরিবহনে বাধা দেওয়ার এমন অমানবিক ও বেআইনি নিয়ম তাদের কায়দা করে টাকা আদায়ের লিপ্সা মাত্র। একইভাবে, নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের সামনেও একই ধরনের নিয়ম চালু আছে বলে জানা যায়। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স যদি রোগী নিয়ে নেত্রকোনা আসে, তবে তাদেরও ১৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। অন্যথায় তারা হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী নিতে পারে না। এই ধরনের নীরব চাঁদাবাজির কারণে গরিব ও সাধারণ রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংকট এবং সেগুলোর অব্যবস্থার কারণেই এই অসাধু চক্র এমন সুযোগ পাচ্ছে। তারা এই অবৈধ প্রতারক ও অমানুষ অ্যাম্বুলেন্স চালকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এমন অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিএনপির ভাইস চেয়াম্যান এবং সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন,' জুলাই বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবেনা। জুলাই বিপ্লব শুধু ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটায়নি, বাংলাদেশকে গনতন্ত্রের পথ দেখিয়েছে। বিএনপির এ বর্ষীয়ান নেতা আজ মঙ্গলবার গোপালপুর উপজেলার বিআরডিবি মাঠে 'ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থান বিজয়ের বর্ষ পূর্তি পালন' উপলক্ষে গনজমায়েতে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক মেয়র অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। বক্তব্য রাখেন উপেজলা বিএনপির সম্পাদক কাজী লিয়াকত, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু ঈশা মুনিম, সাবেক সহসভাপতি এবং ব্যবসায়ী খোরশেদুজ্জামান মন্টু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এহসানুল হক ওপেল, শহর বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসান উথান, সম্পাদক চানঁ মিয়া, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম তালুকদার লেলিন, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেন প্রিন্স, কৃষক দলের সভাপতি অধ্যাপক হাতেম আলী, শ্রমিক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, মহিলা দলের সভানেত্রী নাজমা পারভীন, ছাত্র দলের সভাপতি রোমান আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম।
আব্দুস সালাম পিন্টু আরো বলেন,' চাঁদাবাজ, মাদকবাজ এবং সন্ত্রাসীদের দলে ঠাঁই হবেনা। বিএনপিকে পরিশুদ্ধ রাজনৈতিক দলে পরিনত করা হবে। বিগত ১৬ বছরে গোপালপুর- ভূঞাপুরে কোন উন্নমূলক কাজ হয়নি। সামনের নিঅবাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোপালপুর-ভূঞাপুরসহ সারা দেশে সুষম উন্নয়ন করা হবে।
জুলাই আহতের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীর দলীয় শৃঙ্খলা এবং শহিদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট–সাজেক সড়কের মাচালং বাজার অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র ও মাচালং বাজার এলাকায় ২ শতাধিক পর্যটক আটকে পড়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাঘাইহাট জোনের সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়কে পানি ওঠায় সাজেকের সঙ্গে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প উপায়ে বাঁশের ভেলা ও নৌকার মাধ্যমে পর্যটকদের পারাপার করা হচ্ছে।
এদিকে সাজেক-খাগড়াছড়ি সড়কে চলাচলকারী মাহিন্দ্রচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “ভারী বৃষ্টির কারণে মাচালং এলাকায় সড়কে পানি উঠে গেছে। এই কারণে পুরো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে অন্তত দুই শতাধিক পর্যটক আটকে পড়েছেন। বিকেলে যেসব পর্যটক খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন, তাদের বাঘাইহাট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, “সড়কের উপর এখন আনুমানিক ৫ থেকে ৬ ফুট পানি। এই অবস্থায় কোনোভাবেই যান চলাচল সম্ভব নয়।”
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আকতার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অনেক পর্যটক বাঁশের ভেলা ও নৌকার মাধ্যমে ডুবে যাওয়া অংশ পার হচ্ছেন। যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন, তারা আবার সাজেকে ফিরে গেছেন। সড়ক থেকে পানি নামলেই যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আবহাওয়া ও পানির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃক আজ জুলাই র্যালি, বৃক্ষরোপন, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ডিএসসিসির মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া উপর্যুক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসসিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে জুুলাই র্যালিটি নগর ভবন থেকে আরম্ভ করে বঙ্গবাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে নগর ভবনে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে ৩টি কাঠবাদাম গাছের চারা রোপণ করা হয়। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে মাননীয় প্রশাসক বলেন, "৩৬শে জুলাই বিশ্বের অন্য কোনো ক্যালেন্ডারে নেই, কেবল আমাদের আছে; এই অর্জনকে ধরে রাখতে হবে।" তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য ডিএসসিসিতে কর্মরত সকলকে আহ্বান জানান।
এ সময় প্রশাসক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদের স্মরণে ডিএসসিসি কর্তৃক প্রকাশিত "অগ্নিঝরা জুলাই, অতঃপর... নাগরিক প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর" শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামসহ বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনে আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল পৌনে ৯টায় ইসলামাবাদের ডিপ্লোমেটিক এনক্লেভে নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এ সময় মিশনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য ও স্থানীয় পাকিস্তানি নাগরিকসহ চার শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
পরে দূতালয়ের সম্মেলনকক্ষে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে মিশনের কর্মকর্তা ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচকগণ জুলাই পুনর্জাগরণে ছাত্র-জনতার সাহসী ভূমিকার স্মৃতিচারণ করেন। আলোচকরা বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান।
হাইকমিশনার রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে বৈষম্যমুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুসংহত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আলোচনা শেষে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শীদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
হাইকমিশনার অতিথিদের সাথে নিয়ে দূতালয়ে স্থাপিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেন।
'জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫' উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আয়োজনে মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) বাদ যোহর ঢাকার তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবন সংলগ্ন মসজিদে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মইনউদ্দিন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে সড়ক ভবনের সামনে প্রধান অতিথি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক সহ মন্ত্রণালয় ও সওজ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: এহছানুল হক জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫ এর অংশ হিসেবে ঢাকার তেজগাঁওস্থ ডিটিসিএ ভবনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কর্তৃক আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। এসময় ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে হামলা চালিয়ে যারা আন্দোলনকারী ও সাধারন মানুষকে হত্যা করেছে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। হত্যাকারীদের রক্ষা করতে যারা চেষ্টা চালাবে তাদেরকেও আমরা ছাড়বো না। বিচার বিভাগ যদি আমাদের কাছে রশি চায় তাহলে আমরা বিচার বিভাগকে রশি সরবরাহ করব। কেননা স্লোগান উঠেছে, রশি লাগলে রশি নে, জুলাই হত্যাকারীদের ফাঁসি দে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি আয়োজিত ফ্যাসিবাদ মুক্তির বছর পূর্তির আনন্দ র্যালি পূর্ব জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা কালে তিনি এ কথা বলেন।
হাজার হাজার জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীদের মূহু মূহু স্লোগানে মুখর ওই জনসমাবেশে জহির উদ্দিন স্বপন আরো বলেন, জাতিকে আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথ দেখাতে পারছি তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র মেরামত করে।
এখন জাতির মুক্তির জন্য একটাই কাজ, পলাতক শেখ হাসিনা এবং সমস্ত খুনিদেরকে বিচার করা আর অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
আমরা বড় বড় কথা বলি কিন্তু যদি দেখা যায় আমাদের দলের মধ্যেই মাদক ব্যবসায়ী, যদি দেখা যায় আমাদের দলের মধ্যেই গডফাদার। আমাদের দলের মধ্যেই নতুন নতুন হারিছ, আপনারা কি তার মানবেন।
সময় হাজার হাজার জনতা সমস্বরে উত্তর দেন না।
এ পর্যায়ে স্বপন বলেন, কিন্তু গডফাদাররা যদি বিরাট শক্তি নিয়ে ১০-১২-২০ জনের বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে আপনারা কি করবেন, ৫ আগস্ট যেভাবে গডফাদারের রানী শেখ হাসিনাকে মোকাবেলা করেছি গৌরনদী আগৈলঝাড়ায় যে কোন গডফাদার, সে বিএনপি হোক আর আওয়ামী লীগ হোক তার বিরুদ্ধে আমরা গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান খান মুকুল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন, নিউ ইংল্যান্ড বিএনপি’র সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম।
বক্তব্য রাখেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সিকদার হাফিজুর রহমান, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীর জহির সাজ্জাদ হান্নান, আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহমেদ পান্না, গৌরনদী পৌর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন, বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সাইয়েদুল আলম খান সেন্টুসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদের স্বজনরা।
সমাবেশ ও র্যালিতে গৌরনদী আগৈলঝাড়ার উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে আজ ২৪-এর ছাত্রজনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে 'জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনকে স্মরণ করতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর অংশগ্রহণে ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর, বিকেলে সেগুনবাগিচায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সম্মলেন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো: আব্দুর রহমান তরফদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোসা: ফেরদৌসী বেগম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জনাব আলমগীর হুছাইন। আলোচনা সভায় বক্তারা জুলাই গণ অভ্যুত্থানের তাৎপর্য, এর প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত, যা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে দেশে জনগণের শাসন ফিরিয়ে এনেছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম তাদের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছে।
আলোচনা ও স্মৃতিচারণের পাশাপাশি ‘জুলাই ৩৬’ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি ও একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও জুলাই আহতদের সুস্থতা কামনা করে একটি বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাগুরায় পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক জুলাই -আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে দোয়া করা হয়।
মাগুরা সদর উপজেলার বরুনাতৈল গ্রামে শহীদ ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান রাব্বি'র কবর জিয়ারত ও অন্যান্য শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দোয়া মাহফিল শেষে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোঃ ওহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরো ছিলেন, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, সিভিল সার্জন ডা. মোঃ শামীম কবির,গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা। এছাড়াও দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়, শহীদ রাব্বির পরিবারের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বরুনাতৈল এলাকার শত শত মানুষ ।
এর পর জেলা অডিটোরিয়ামের সামনে জুলাই -আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দেয়ালিকা উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন শেষে জেলা অডিটোরিয়ামে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাই শহীদদের স্বজনরা তাঁদের বেদনা, ত্যাগ ও আবেগঘন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তারা অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার দাবি জানান এবং শহীদদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জামালপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত এবং জুলাই যোদ্ধা সম্মিলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সকাল ১১ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু মিলনায়তনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ, সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল হক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন, শহীদ পরিবারের সদস্যগণ ও আহত জুলাই যোদ্ধাবৃন্দ। এর আগে সকালে সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে শহীদ সাফওয়ান আক্তার সদ্য এর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জেলার সকল শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়াও সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
মাদারীপুরে জুলাই গনঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়। ৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্টদের হাতে নিহত মাদারীপুরের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের তাওহীদ সান্ন্যামতের বাড়ীর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ ইয়াসমিন আক্তার, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈম হাসান সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা। এসময় শহীদ তাওহীদ সান্ন্যামতের পিতা, মাতা ও বড় ভাই, মানবাধিকার সংস্থা, আসক ফাউন্ডেশনের জেলার সভাপতি সাংবাদিক ফায়েজুল শরীফ, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, এনটিভির সাংবাদিক এম,আর মর্তুজা ও সময় টিভির সাংবাদিক সঞ্জয় চক্রবর্তী অভিজিৎ সহ উক্ত এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, সেদিনগুলোর ঘটনায় আরো যারা মাদারীপুরের ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন প্রশাসন থেকে তাদের জন্য ভিন্ন-ভিন্নভাবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে তাদের কবরেও পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া করা হয় ।
উক্ত কর্মসূচীর পরে সকাল ১১ টায় জেলা সমন্বিত সরকারী অফিস ভবনের হলরুমে জুলাই গনঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ এর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ ইয়াসমিন আক্তার, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোঃ হাবিবুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈম হাসান, জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী হুমায়ুন কবির (কবির কাজী), জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলার সাবেক আমীর মাওলানা আবদুস ছোবহান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল, তথ্য অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাব সহ জেলার অন্যান্য ৪ টি উপজেলা- কালকিনি, শিবচর, রাজৈর ও ডাসার উপজেলার ইউএনও বৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, টিভি, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।
এছাড়াও মাদারীপুরে শহীদ হওয়া পরিবারগুলো পক্ষে বক্তব্য রাখেন ছাত্রবৈষম্য আন্দোলনের জেলার আহবায়ক মোঃ নেয়ামতুল্লাহ, যুগ্ম আহবায়ক আশিক আহম্মেদ সহ নিহত ও আহতের পরিবারের অভিভাবকগণ। নিহত ও আহত পরিবারের অনেকেই তাদের বক্তব্যে বলেন, জুলাই-আগস্ট/২০২৪ এ পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্ট সরকার কর্তৃক ছাত্র-জনতার উপর সেদিনগুলোর ভয়াবহ নির্মম গণহত্যা, গুম, খুন ও আহত করার স্মৃতিগুলো আমাদের এখনো ভীতসন্তস্ত্র করে তোলে। তারা বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আজ ৫ ই আগষ্ট/'২৫ তারিখ ১টি বছর অতিবাহিত হলো, অথচ একটি হত্যাকান্ডের বিচার এখনো আলোর মুখ দেখেনি, বিচারের রায় হয় নি। তারা মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সেদিনের সকল হত্যাকান্ডের দ্রুত দৃশ্যমান বিচারের রায় ঘোষণা, সর্বোচ্চ সাজা এবং তা কার্যকর করে শহীদের বিদেহী আত্মাগুলোর, শান্তি দেয়ার আহবান জানান। নইলে তারা আবারো রাজপথে নেমে জীবন দেয়ার ঘোষনা দেন। তারা এদেশ থেকে সকল স্বৈরাচারী, মব জাষ্টিস, ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধ সহ নিহত ও আহত পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে সরকারী সুযোগ-সুবিধা, হ ক্ষতিপূরণ সহ ভাতার আওতায় নেয়ার আহবান জানান।