সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের একার পক্ষে সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়

রিজওয়ান রাহমান।
আপডেটেড
২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১১:২৮
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ১১:২৭

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান বলেছেন, দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত বাড়ছে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিসহ দেশের সব মানুষকে এই অনুরোধ করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনাভাইরাস মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কেমন চলছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য?

প্রতিদিন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভালো অবস্থায় আছে সেটিও বলা যাবে না; আবার খুব খারাপ আছে সেটিও বালা যাবে না। ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্তে খুবই কনফিউজড। গতি কোন দিকে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা বুঝতে পারছেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, এগুলো কিন্তু শুধু বৈশ্বিক কারণে। এখন এটি কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ রকম সমস্যা ১০ বছর আগে হলে বাংলাদেশে এত সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল প্লেয়ার। আজকে যদি বাংলাদেশে কিছু হয়, তাহলে বিশ্ববাজারে পাটের দাম বেড়ে যাবে। বিশ্ববাজারে চায়ের দাম বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের কিছু হলে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের (আরএমজি) দাম বেড়ে যাবে। ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কারণ আমরা এগুলো বিশ্বের কাছে সরবরাহ করি।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এখন একটু হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের ডলার ক্রাইসিস আছে। এনার্জি ক্রাইসিস আছে, এগুলো মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে। এখন আমাদের ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি, পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি আরও স্ট্রং হতে হবে। আমাদের এখন শক্ত হতে হবে। আমাদের এনার্জি ক্রাইসিস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হবে। আমি রাশিয়া থেকে নেব না ব্রুনাই থেকে নেব, না চায়না থেকে নেব সেটি বিষয় নয়। দেশের স্বার্থের জন্য আমাদের এগুলো করতে হবে। এটি ক্রাইসিস মোমেন্ট। সব সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নিতে হবে।

এই মুহূর্তে সরকারের হাতেও তেমন কোনো কন্ট্রোল নেই। দুটি দেশের যুদ্ধের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। সরকারের এখানে কী করার থাকতে পারে। ডলারের দামের অবস্থাটা দেখেন। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১২০ টাকাও উঠে গিয়েছিল; কিছুই করার নেই। এখন কেউ এলসি খুলতে পারছে না। আমাকে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী বললেন, তিনি ২১ হাজার ডলারের এলসি খুলতে পারছেন না। এখানে তো আমাদের বলার কিছু নেই। জ্বালানি নিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক ধরনের কথা হয়েছে। গত বুধবারও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমিও ছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সরকারের একার এখানে কিছু করার নেই। যে সরকারই থাকুক, কিছু করতে পারবে না।

তবে আমরা একটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি। আমাদের এত রিজার্ভ দিয়ে কী করব। এর থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে দেন। কিছু তেল নিয়ে আসেন। আমাদের এনার্জি কিনে আনা দরকার। আবার আপনি বাংলাদেশে সারের ভর্তুকি কমাতে পারবেন না। আমেরিকার মতো দেশ এখনো সারে ভর্তুকি দেয়। আপনি অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনেন। আমাদেরও সেটি করতে হবে, না হলে আমরা খাদ্যে নিরাপত্তা দিতে পারব না। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বলেন, আর অর্থনীতি বলেন, কেমন যাচ্ছে সেটি বিষয় না। কতদিন যাবে সেটি হচ্ছে বিষয়। এই যুদ্ধ কতদিনে থামবে, তা কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তাই সবকিছুই এখন অনিশ্চিত। এই অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সামনে রেখেই আমাদের চলতে হচ্ছে। কতদিন চলতে হবে জানি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। এতে কি দেশবাসীর মধ্যে ভয়-শঙ্কা আরও বাড়ছে? আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে? কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ভালোর জন্যই এসব কথা বলছেন। যাতে মানুষ সতর্ক হয়। আমরা একসময় ভালো অবস্থায় ছিলাম। কয়েক বছর আমাদের গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ছিল ৮ শতাংশের ওপর। তারপর যখন আমরা করোনাভাইরাসের মধ্যে হিমশিম খেয়ে গেলাম। তখনও কিন্তু বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে; যা ছিল এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আমি এ কথাগুলো নির্দলীয় কথা বলছি। সব সময়ই আমি এই ধরনের কথা বলি। সরকার যেখানে ভুল করছে, সেটি বলি। আবার ঠিক করলেও বলি। করোনার সময় সরকার অনেক ভুল করেছে আমরা সেটি বলেছি তো। আবার বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাসের সময় ভালো দেশ পরিচালনা করেছে। সরকার বাংলাদেশের মতো ১৭ কোটির জনসংখ্যার দেশে অনেক ভালো অর্থনীতি সামলেছে। সবাই তখন ভালো ভূমিকা পালন করেছেন।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে কিন্তু প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। এখন এই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঘরের সামনে চাষ করুন। এটি তো গুলশানের বাসিন্দাদের বলেননি। এটি নিয়ে ভয় পেয়ে লাভ নেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সামনে ডলারের দাম ১৩০ টাকা যাবে না- কোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কি সেই গ্যারান্টি দিতে পারবেন? বর্তমানে জ্বালানির দাম চার গুণ হয়ে গেছে, এটি যে ৪০ গুণ হবে না সেটি কি কেউ বলতে পারবেন? সে জন্য প্রধানমন্ত্রী বলতেই পারেন আপনাকে সাশ্রয়ী হতে। আপনি এখন যেভাবে চলছেন, সেভাবে যদি চলতে থাকেন তাহলে আপনি আর তিন মাস চলতে পারবেন। আপনি যদি সাশ্রয়ী হয়ে চলতে থাকেন, তাহলে তিন বছর চলতে পারবেন।

আশা করা যায় তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধ-টুদ্ধ সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আমি এটিকে এভাবে দেখি। যারা সরকারবিরোধী, তারা হয়তো অন্যভাবে দেখেন। একেকজন একেকভাবে চিন্তা করেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। তবে বাংলাদেশ যে খারাপ অবস্থায় যাবে না সেটির কোনো গ্যারান্টি নেই। তবে শ্রীলঙ্কা হবে সেটিও ঠিক না। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত খুব শক্তিশালী। খুব খারাপ সময়ে এই খাত ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়েছে।

করোনার মধ্যে সব দেশ যখন খুব খারাপ অবস্থায় ছিল, বাংলাদেশ তখন ভালো ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন তুমি সাবধানে থাকো, সেটিকে নেগেটিভ হিসেবে নেয়া যাবে না।

প্রায় এক বছর ধরে ডলারের বাজার অস্থির। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাগে আসছে না। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার পরও ডলারের দাম কমছে না। সমস্যা আসলে কোথায়? কীভাবে সমাধান হবে? ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

ডলারের বাজার বলা যাচ্ছে না কোন দিকে যায়। এটি পুঁজিবাজারের মতো হয়ে গেছে। কোন দিকে যায় বলা যায় না। গত বছর আমি আমার আগামী তিন বছরের ফোরকাস্টিংটা করেছিলাম। তখন আমি ডলারের দাম ৮৪-৮৫ টাকা ধরেছিলাম। এখন আমি দেখছি সেই ডলার ১১০, ১১৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। সেটি মানিয়ে নেয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন। আমরা কোনো ধারণা করতে পারছি না আগে থেকে। যার কারণে আমাদের সব সময় একটি বাফার ধরে রাখতে হয়। এখন কিন্তু রপ্তানিকারকদের জন্য শুধু আমদানি খোলা। আর সবার জন্য আমদানি বন্ধ। শুধু তৈরি পোশাকের কাঁচামালের জন্য এলসিটা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তখন যারা বাধ্যতামূলকভাবে এলসি করবে। ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে।

আমি মনে করি বাংলাদেশ সমস্যা থেকে উতরে যাবে। বাংলাদেশে এখনো ৩৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। তখন তো ডলারের প্রাইজটি সেখানে এফেক্ট করবে। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে একটি করেছিল। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সেটি তো আমরা ব্যবসায়ীরা মিলে বিদ্যুৎ প্রস্তাব দিলাম যে আপনি এই ডেভেলপমেন্ট ব্যবহার করেন এখন। আপনি তো এখন গ্যাস ডেভেলপমেন্ট করছেন না। দরকার হলে আপনি আমাদের বিদ্যুতের দাম বাড়িয় দেন। বিদ্যুতের দাম যদি বাড়াতে হয় আপনাকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে হবে। এটির জন্য যা যা করণীয় আপনি করেন।

আপনি এখন ফার্নিচার কিনবেন নাকি এলএনজি কিনবেন। গ্যাস ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে আমরা পরে আসি। কারণ গ্যাস পেতে পেতে তো আমাদের ১০ বছর লাগবে।

তবে আমি এ ক্ষেত্রে সরকারকে বলব আপনারা সব সময় একটি বিপদে একটি শর্ট টার্ম সলিউশনকে লং টার্ম বানিয়ে ফেলেন। এটি আর করেন না। আপনারা এখন শর্ট টার্ম সলিউশন করেন। একই সঙ্গে লং টার্ম ডিসিশনটি নিয়ে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার যে ১৩-১৪ বছর ক্ষমতায় ছিল, এতদিনে তো কয়েকটি গ্যাসফিল্ড খুঁড়ে ফেলতে পারত। কিন্তু সেটি করা হয়নি। আমাদের কমপ্লেইন করে লাভ নেই। এখন করব, এই মুহূর্তে করব। ১০ বছর পরে গিয়ে আমরা পাব। এটি কিন্তু পদ্মা সেতুর মতো একটি মাইলফলক থাকবে। আপনি এক্সপেনসিভ ফুয়েলের ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকতে পারবেন না। যেহেতু আপনি আমদানিনির্ভর দেশ। আপনি রপ্তানি কমাতে পারবেন না। আবার বিশ্ববাজারে যদি তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে আপনার রপ্তানি বাজার তো ধসে পড়বেই। বাংলাদেশের সিঙ্গেল লার্জেস্ট এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন হচ্ছে জার্মানি। বাংলাদেশের টোটাল এক্সপোর্টের ১৫ শতাংশ জার্মানিতে যায়। আমাদের ৮৩-৮৪ শতাংশ রপ্তানি যায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে। সেসব দেশে যদি মূল্যস্ফীতি বাড়তেই থাকে, তাহলে ওই সব দেশের লোক পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে- এটিই স্বাভাবিক। তাহলে নিশ্চিতভাবেই আগামী বছর আমার রপ্তানি আয় কমে যাবে।

যুক্তরাজ্যে এখন ১০০ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি। সেখানে তো পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। লন্ডনে আমার এক্সপোর্ট কমে যাবে। যদি এক্সপোর্ট কমে যায়, তাহলে আমার আয় কমে যাবে। এখানে তো বাংলাদেশের কিছু করার নেই। একসময় বিশ্বে সমস্যা হলে বাংলাদেশের কিছু হতো না। তখন বাংলাদেশ ছিল একটি পুঁটি মাছ। আজকে বাংলাদেশ কিন্তু বোয়াল মাছ। বিশাল ব্যাপার। এ জন্য আমি আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব সরকারের এবং বেসরকারি খাতের। রপ্তানি বাজার এবং পণ্য দুটিকে একসঙ্গে বহুমুখী করা লাগবে। আপনি আমেরিকার ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকবেন সারাক্ষণ। আপনি সারাক্ষণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ওপর ডিপেন্ডেন্ট থাকবেন। আপনি নিজে যে এত বড় একটি মহাদেশে বাস করেন, সেটি কি ভুলে গেছেন। এশিয়ায় আপনার এক্সপোর্ট মাত্র ১১ শতাংশ কেন ভাই? ৮৪ শতাংশ যাচ্ছে ইউরোপ আর আমেরিকায় এবং ৪ শতাংশ যাচ্ছে আফ্রিকায়। তাই আমি বলছি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতেই হবে। আমি বলছি না বাড়াতে; আপনাকে আফ্রিকার মার্কেট এক্সপ্লোর করতে হবে, আপনাকে এশিয়ার মার্কেট এক্সপ্লোর করতে হবে। আপনাকে চায়নায় যেতে হবে। চায়না থেকে আমি শুধু মাল কিনব কেন? আমি চায়নায় মাল বেঁচতে পারি না। এটি তো সম্ভব। আপনাকে পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। আপনি গার্মেন্টস করছেন ভালো কথা। সেটি কিন্তু আমরা চামড়াশিল্পের জন্য করতে পারি। আমরা পাটশিল্পের জন্য করতে পারি। সেটি আমরা কৃষি খাতের জন্য করতে পারি। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির জন্য করতে পারি। প্রতিটি খাতের জন্য যদি আমরা করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের পণ্য ডাইভারসিফাই হবে। এই সবকিছুর মধ্যে আপনি যতক্ষণ না আপনার এক্সপোর্ট বাড়াবেন। আপনি ডলারটিকে কন্ট্রোল করতে পারবেন না। আপনি ডলারের প্রাইজ রিভাইস করতে পারবেন না। বিশ্ববাজার যতদিন ঠিক না হবে, ততদিন এই সমস্যা থাকবেই। যখন দুনিয়ার বড় বড় সাহেব মনে করবে যে অস্ত্রের ব্যবসা বন্ধ করে একটি শান্তির ব্যবসা করতে পারতাম। তাহলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান হবে।

আপনি রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বাজার বাড়ানোর কথা বলছেন। এরই মধ্যে কিন্তু আমরা পাশের দেশ ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়তে দেখছি। গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতে। প্রায় দেড় শ কোটি মানুষের দেশ ভারতের বাজার নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

ভারতের বাজার আসলে ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এ বিষয়গুলো কূটনৈতিক, এখানে বেসরকারি খাতের করার কিছু নেই। এ বছরের জুলাইয়ে আমরা ৪৯ জনের একটি দল ভারত গিয়েছিলাম, প্রায় ৪০০-৫০০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললাম। ব্যবসায়ীরা কিন্তু ব্যবসা করার জন্য অস্থির। কিন্তু আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর তাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কী কথা হয়, সেটি তো আমরা বলতে পারব না। তাদের মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক আছে, সেটির ওপর দুই দেশের ব্যবসা নির্ভর করে।

আমি তো মনে করি নর্থইস্ট রিজিয়নটিকে দিল্লির সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য বাংলাদেশ শুড বি দ্য হাব। ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড দ্য সেভেন সিস্টারস। এটি তো একটি ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এখানে আমরা কী করতে পারি। আমি নিজে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে বললেন আমরা দেখছি। আমি ওনাকে বললাম আপনি তো দেখছেন আমার জন্মের আগে থেকে। আপনি যখন একটি দেশের থেকে আপনার ৬০ শতাংশের বেশি আমদানি করবেন, সেই দেশের প্রতি আপনি অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ইম্পোজ করতে পারেন। এখন আপনি আমাকে বলেন, গোটা ভারতের ৬০ শতাংশ কি বাংলাদেশ থেকে ইম্পোর্ট হয়? সেটি কোনো দিন সম্ভব না, বাংলাদেশে কোনো পাটই নেই। তার পরও কেন আপনি আমার ওপরে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি দিচ্ছেন। এগুলো হচ্ছে ডিপ্লোমেটিক ইস্যু। এগুলোকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া অনেক ঝামেলা আছে, সেগুলো আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এগুলো এক রাতে ঠিক হবে না। এগুলো চালিয়ে যেতে হবে।

বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেশের নাগরিকের কাছে যথাযথ মূল্যে সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আপনি কি মনে করেন ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা করছেন, বেশি দামে দেশবাসীর কাছে পণ্য বিক্রি করছেন?

সত্যি কথা বলতে কী বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ডলারের দাম বাড়ার প্রভাবও পড়েছে পণ্যমূল্যে। সবকিছু মিলিয়েই কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষ যে খুবই কষ্টে আছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদের কম লাভে পণ্য বিক্রি করে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।

মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারির সময় কিন্তু সরকার আমাদের প্রণোদনা দিয়েছে। এখন যদি আমরা সরকারের পাশে, মানুষের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে কিন্তু ঠিক হবে না। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কিন্তু ওনার নেতৃবৃন্দ উল্টাটি করছেন। প্রধানমন্ত্রী মোবাইলের মাধ্যমে টাকা দিলেন, আর ওনার এক নেতার কাছে ৩০০ জনের সিম পাওয়া গেল। যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে ইউনাইটেড হওয়ার জন্য। আমরা যদি সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়াই, তাহলে তো মনে হয় না আমাদের কোনো সমস্যা হবে। মহামারিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমরা তো সার্ভাইব করে গেছি। প্রধানমন্ত্রী এখন আমাদের বলছেন, মুনাফা একটু কম করতে। এই মুহূর্তে মুনাফা না করলে ভালোই হয় বলে আমি মনে করি। কিন্তু অনেকে এখন হয়তো চিন্তা করছেন যে আমি তো গত দুই-তিন বছর হিমশিম খেয়ে গেছি। এখন একটু পুষিয়ে নিই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য একটি জিনিস চাওয়া যেমন ডিফিকাল্ট, একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্য চাওয়া কিন্তু আরও কঠিন। সে কিন্তু চায় না, তার মধ্যে একটি ইগো কাজ করে। মধ্যবিত্তরা সমস্যায় থাকে, কোন দিকে যাব আমরা। তবে সব ব্যবসায়ী খারাপ না। একজনের জন্য সব ব্যবসায়ীকে খারাপ বলা যাবে না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যারা খারাপ ব্যবসায়ী তারাই ভালো আছে, যারা ভালো ব্যবসায়ী তারাই বিপদে আছে। যা-ই হোক, সেটি ভিন্ন আলোচনা। আমি বলতে চাই, এই মুহূর্তে মুনাফা করা ঠিক না। এর পরে আবার সময় আসবে, তখন মুনাফা করবেন। এভাবেই তো বাংলাদেশ এগিয়েছে। আগে মানুষ বাংলাদেশকে চিনত না। এখন সবাই সমীহ করে।

নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অর্থনীতির কী হবে? ব্যবসা-বাণিজ্যেরই বা কী হবে?

এটি তো বাংলাদেশের রাজনীতির বিউটি। প্রতি পাঁচ বছরেই হয়। এটি তো ভালো আমাদের বিরোধী দলরা সমাবেশ করছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে অতীতের মতো সংঘাতের রাজনীতি যেন না হয়, সেটি সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি যেন ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে, সেটিই মনে রাখতে হবে।

রাজনীতি করা সবার অধিকার। আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু পরিবেশ। সেটি থাকলেই ভালো, সরকারি দল-বিরোধী দল সবাই রাজনীতি করবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ওপর, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর একটু চোখ রাখবেন প্লিজ! বাস-টাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েন না, আমরা আমাদের ব্যবসা করি, আপনারা আপনাদের রাজনীতি করেন। আসুন, সবাই মিলেমিশে দেশটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।


লবণ উৎপাদনে নতুন রেকর্ডের সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, কৃষির মতো অনেক খাতে সংকট তৈরি হলেও লবণ খাতে উৎপাদন বেড়েছে। প্রখর রোদ ও উত্তাপের কারণে অল্প সময়ে মাঠ থেকে লবণ আহরণ করা যাচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে রেকর্ডভাঙা উৎপাদনের সম্ভাবনা কড়া নাড়ছে এ খাতে।

লবণ চাষের মৌসুম শেষ হতে আরও ১৮ দিন বাকি। এর মধ্যে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৪ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমের শুরুতেও ঘূর্ণিঝড়সহ বৈরী আবহাওয়া কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম লবণ উৎপাদন হয়েছিল।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) লবণ সেলের প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরোয়ার হোসেন বলেন, শিল্পকারখানা বাড়ায় চলতি মৌসুমে লবণের চাহিদা বেড়েছে। এর ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে।

তিনি বলেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদনের আশা করছি এবার।

বিসিকের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে মোট ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন মোট ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।

গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট লবণ উৎপাদন হয়েছে ২১ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৩ সালের একই দিন পর্যন্ত উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ।

গত মৌসুমে ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে রেকর্ড ২২ লাখ ৩০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। শিল্প-সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, তীব্র দাবদাহের কারণে আবারও সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে দেশের লবণ খাত।

সাধারণত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন ও আহরণ হয়ে থাকে।

সাধারণত মাঠ থেকে লবণ আহরণের উপযোগী হতে ১৪ দিন সময় লাগে। তবে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রাভেদে মাত্র ৪ থেকে ৯ দিন পর্যন্ত লাগে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী তাপপ্রবাহ বইছে। চাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় তুলনামূলক কম সময়ে লবণ আহরণের উপযোগী হয়ে উঠেছে। গত কদিন ধরে ২-৩ দিনেই লবণ তোলা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

গত কয়েক দশক ধরে দেশে লবণ চাষের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো। সিংহভাগ উৎপাদন হয় কক্সাবাজারে। চলতি মৌসুমে কক্সবাজারে ৫৯ হাজার ৫০০ একরের বেশি জমিতে লবণ চাষ হয়েছে।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া এলাকার চাষি নূর কাদের চলতি মৌসুমে ছয় একর জমিতে লবণ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গরম পড়ায় আমরা দুই-তিন দিনে লবণ আহরণ করতে পারছি। ভালো মানের ও বেশি লবণ চাষ করা সম্ভব হয়েছে এবার।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, লবণ চাষের জন্য রোদ, গরম ও বাতাস প্রয়োজন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এ জন্য লবণ উৎপাদন অনেক ভালো হচ্ছে।

বিসিকের লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লবণ উৎপাদন কম ছিল। আমরাও চিন্তিত ছিলাম। সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় চলতি মৌসুমে লবণ আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। চাহিদার বেশি উৎপাদন সম্ভব।

দেশে লবণ চাষিরা এক মৌসুমে প্রতি একর জমি থেকে মোট ৩০০ মণ লবণ আহরণ করেন। বিপরীতে জমির ইজারা ও প্লাস্টিকের পলিথিনের ব্যয় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতি ৩ একর জমির জন্য এক লাখ টাকা চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রতি একর জমিতে লবণ চাষের পেছনে মোট ব্যয় হয় ৯০-৯৩ হাজার টাকার মতো।

উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় তুলে বেশি লাভের আশায় কিছু কৃষকের মধ্যে অপরিপক্ব ও অপুষ্ট অবস্থায় মাঠ থেকে দ্রুত লবণ তোলার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। ফলে লবণের মান খারাপ হয়। পাশাপাশি পরিশোধনের সময় অপচয়ের হারও বাড়ে।

লবণ পরিশোধনের মিল মালিকরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে সাধারণ মিলগুলোতে লবণ পরিশোধনে ঘাটতি থেকে যেত ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু লবণের দাম বৃদ্ধি এবং বিপরীতে চাষের ব্যয় বৃদ্ধি প্রভাবে বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব ও অপুষ্ট থাকা অবস্থায় মাঠ থেকে লবণ আহরণ করছেন চাষিরা। ফলে মিলে আসা লবণে ঘাটতি থাকছে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

বিশেষ করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে লবণের চাহিদার বিপরীতে যখন উৎপাদন কম থাকে, তখন এ প্রবণতা দেখা যায়। তখন প্রতি মণ কাঁচা লবণ ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

তবে ভরা মৌসুমে, অর্থাৎ বর্তমানে প্রতি মণ কাঁচা লবণ ৩২০ টাকায় কিনছেন মিল মালিকেরা—গত বছর একই সময়ে যার দর ছিল ৪২০ টাকা।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ভালো গরম পড়ার পাশাপাশি বাতাসও আছে। আশা করছি, লবণের মান কিছুটা বাড়বে।

বিসিকের লবণ সেলের প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরোয়ার হোসেন লবণ পরিশোধনের সময় কয়েক বছর ধরে প্রসেস লসের হার বেড়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের পর এই হার কমে আসে। এবার অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই হার আরও কমবে। আশা করছি, ধীরে ধীরে প্রসেস লসের হার আরও কমবে।’


গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি

বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে পুনঃনিয়োগ পেয়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নের্তৃত্বাধীন কমিশন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। পুনঃনিয়োগ পেয়েই গুজব রটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে যাচ্ছে তার নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ লক্ষ্যে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে ভুয়া ও অসত্য তথ্য বা গুজব প্রকাশ অথবা প্রচার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে আজ রোববার সতর্ক বার্তা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে যারা ভুয়া ও অসত্য তথ্য বা গুজব প্রকাশ বা প্রচারে জড়িত রয়েছেন কিংবা আগামীতে জড়িত থাকবেন তাদের সকলের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কিছু ভিত্তিহীন গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যার কোনও ভিত্তি নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দেশের পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভুয়া ও অসত্য তথ্য বা গুজব প্রকাশ অথবা প্রচারের উপর সতর্ক নজর বজায় রাখছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অপ্রকাশিত তথ্য প্রকাশ, শেয়ার দরের পূর্বাভাস কিংবা ভবিষ্যদ্বাণীসহ যে কোনো ধরনের অসত্য তথ্য ও গুজব প্রকাশ বা প্রচার আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অতএব, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে এ ধরনের ভুয়া ও অসত্য তথ্য বা গুজব প্রকাশ অথবা প্রচার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে সতর্ক করা হলো।

উল্লেখ্য, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম নিয়ে কারাসাজি এবং গুজব রটনাকারী চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন - মো. আমির হোসাইন ওরফে নুর নুরানী (৩৭), নুরুল হক হারুন (৫২) এবং আব্দুল কাইয়ুম (৩৯)। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাঁদাবাজিসহ বাজার অস্থিতিশীল করতে নেতিবাচক ভুমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গেপ্তারকৃতদের মধ্যে আমির হোসাইনের (ছদ্মবেশী নাম নূর নূরানী) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য দমণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। নুরুল হক হারুন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন সদস্যদের একত্রিত করে কোম্পানিগুলোতে চাঁদাবাজি করত। ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ ও টেলিগ্রামে সব মিলিয়ে ৮-১০ টি গ্রুপ চালায় সে। অন-লাইনে তার অনেক ফলোয়ার। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি তিনি। এ পরিষদের নামে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন। আর আব্দুল কাউয়ুম রয়েল ক্যাপিটাল নামক একটি ব্রোকারেজ হাউজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। হোয়াটস্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে টাকার বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন শেয়ার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন।


শিবলী রুবাইয়াতকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে পুনর্নিয়োগ

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
আপডেটেড ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ২১:৩৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। আগামী চার বছর চুক্তিভিত্তিক মেয়াদের জন্য তাকে পুনর্নিয়োগ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জাহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত ৩১ মার্চ শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও এক মেয়াদে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অনুসারে গতকাল এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা-৫(৬) মোতাবেক আগামী ১৭ মে ২০২৪ হতে অথবা যোগদানের তারিখ হতে পরবর্তী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনর্নিয়োগ প্রদান করা হলো। তার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

২০২০ সালের ১৭ মে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমবারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সে হিসেবে চলতি বছরের ১৬ মে তার মেয়াদ শেষ হবে।

তথ্যমতে, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বমানের পুঁজিবাজারে পরিণত করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেন। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শো ও সভা-সেমিনার করে। করোনা পরিস্থিতি-পরবর্তী ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে চার বছর পার করতে যাচ্ছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ টালমাটাল পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ কমিশন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের আইনকানুন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন, সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের ভিত্তি শক্তিশালী করেছেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের মেয়াদকালে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে দেড় শতাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে বিগত চার বছরে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সূচক বিবেচনায় তা দৃশ্যমান না হলেও ভবিষ্যতে এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও যোগ্যতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) পরিচালক (বোর্ড ডিরেক্টর) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আইওএসকোর বোর্ড ডিরেক্টর হয়েছেন। একই সঙ্গে আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির ভাইস চেয়ার হিসেবে পুনর্নিয়োগ পান। ২০২৪-২৬ সাল পর্যন্ত সময়ে উক্ত পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবা রফিকুল ইসলাম খান অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। মা দেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রয়াত হাসিনা মমতাজ। তার স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং বিটিভির একজন সংবাদ পাঠিকা। এই দম্পতির দুই ছেলে সন্তান রয়েছেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এই সময়ে তিনি দেশে-বিদেশে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং এবং বিমা সম্পর্কিত অনেক ব্যবসায়, চেম্বার এবং গবেষণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি টারশিয়ারি পর্যায়ের জন্যে ‘ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং’ এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্যে জাতীয় বোর্ড প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং’ বইয়ের লেখক।


পাঁচ দিনে সোনার দাম কমল ৬,৪৯৭ টাকা

ভালো মানের প্রতি ভরির দাম এখন ১,১২,৯৩১ টাকা
আপডেটেড ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ৬৩০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা।

স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে এই দাম কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল এবং ২৩ এপ্রিল তিন দফা সোনার দাম কমানো হয়। ২৫ এপ্রিল ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল দুই হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল তিন হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়। এখন আবার দাম কমানোর মাধ্যমে চার দফায় ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ছয় হাজার ৪৯৭ টাকা কমল।

শনিবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে নতুন করে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম কমেছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৬৩০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৬০৬ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৫১৩ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৪০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৪১ টাকা বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে ২৫ এপ্রিল সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৬৩০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৫৯৫ টাকা কমিয়ে এক লাখ আট হাজার ৪০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৫১৪ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৯১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৪০৮ টাকা কমিয়ে ৭৪ হাজার ৮০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গত ২৪ এপ্রিল সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৯৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে এক লাখ নয় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এ দামেই সোনা বিক্রি হয়েছে।

সোনার দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ছয় টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম এক হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেন

বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে।

বাজার মূলধন কমার সঙ্গে সূচকেরও বড় পতন হয়েছে। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। দাম কমেছে ৮৫ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশের বেশি।

গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে কমে সপ্তাহ শেষে ওই বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৭টির। আর ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ১৬৮ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৭৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অর্থাৎ ঈদের পর লেনদেন হওয়া দুই সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৩৪৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ২৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। দৈনিক গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।

এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গোল্ডেন সন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বেস্ট হোল্ডিং, মালেক স্পিনিং, স্যালভো কেমিক্যালস, কহিনুর কেমিক্যালস এবং বিচ হ্যাচারি।


মার্চে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে

মার্চ মাসে আমদানি এলসি খোলা ১৭ শতাংশ ও নিষ্পত্তি ১৪.৫ শতাংশ বেড়েছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতে ডলারের তারল্য পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ইম্পোর্ট লেটার অব ক্রেডিট বা আমদানি এলসি খোলা এবং সেটেলমেন্ট বা নিষ্পত্তি– উভয়ই বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ব্যাংকগুলো ৬.১৩ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খুলেছে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি। গত ফেব্রুয়ারিতে খোলা হয়েছিল ৫.২৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি।

এদিকে ২০২৩ সালের মার্চে আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল ৬ বিলিয়ন ডলারের কম। গত এক বছরের মধ্যে মাত্র ৩ বার আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। তবে গত কয়েকমাস ধরে প্রতিমাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি হচ্ছে। রেমিট্যান্স ইনফ্লোও ভালো। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারের তারল্য ভালো। ফলে আগে যেসব পণ্যের আমদানি এলসি আমরা খুলতাম না, এখন সেগুলোও খোলার চেষ্টা করছি।

হাতে ডলার থাকায় সাইট এলসি খোলা আগের তুলনায় বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২/৩ মাস আগেও আমাদের খোলা এলসির ২৫ শতাংশ ছিল সাইট, বাকিটা ছিল ডেফার্ড। মার্চ মাসে যেসব এলসি খোলা হয়েছে, তার ৫০ শতাংশের বেশি সাইট এলসি।

এপ্রিলে এলসি খোলার পরিমাণ কমবে মন্তব্য করে এই ব্যাংকার আরও বলেন, ঈদের কারণে বেশ অনেকদিন ফ্যাক্টরি ও ব্যাংক বন্ধ ছিল। ফলে এপ্রিলে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি– দুটোই কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ভোগ্যপণ্যের আমদানি এলসি খোলা কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি এলসি খোলা কমেছে ১৯ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্য কমেছে ১৭ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামাল কমেছে ৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারির তুলনায় এটি ১৪.৫ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে জানালেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছেন না। এ ছাড়া এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম বেশি দিতে হচ্ছে। এদিকে ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, এলসি নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম রাখা হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা।

দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় আমদানিকারক সিটি গ্রুপ। এই গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা এখনও চাহিদামতো এলসি খুলতে পারছি না। এ ছাড়া এলসি খোলার জন্য আমাদের মার্জিন রাখতে হচ্ছে। এতে আমাদের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। এর উপর এলসি নিষ্পত্তিতে ব্যাংকগুলো আমাদের কাছে ১১১৮ থেকে ১১৯ করে রাখছে।

এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য ‘সিঙ্গেল পার্টি বোরোয়ার লিমিট’ বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এখন কী পরিমাণ পেমেন্ট ভবিষ্যতে করতে হবে– সেটি আগে থেকেই হিসাব করে রাখছে। সে অনুযায়ী, নতুন এলসি খুলছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে এখন ডেফার্ড এলসি পেমেন্টের চাপ কম।


দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড: মঈনুদ্দিন মোনেম

আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈনুদ্দিন মোনেম।
আপডেটেড ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ২৩:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প বিকাশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিপুল পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)। আবদুল মোনেমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও এএমএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্প বিকাশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির, বিপুল পরিমাণ কর ও শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রায় গর্বিত সহযোগী আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)।

তিনি বলেন, একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই আধুনিকায়ন ও বিশ্বমানের কোনো ছাপই ছিল না বাংলাদেশে। ছিল আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবলের অভাব। ওই বৈরী পরিস্থিতি থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে দৃঢ় মনোবল, অসীম আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা ও সততার সাথে শূন্য থেকে শীর্ষে উঠার এক জীবন্ত গল্প তৈরি করলেন তার পিতা আব্দুল মোনেম। তার সাফল্যের মূলভিত্তি ছিল-সততা, শ্রম আর কাজের গুণগত মান।

মঈনুদ্দিন বলেন, একসময় দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হতো। সে অবস্থা থেকে তার বাবা আব্দুল মোনেম নিজের প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানের মতো গড়ে তুলেছেন। পদ্মা সেতু থেকে কর্ণফুলী টানেল কিংবা যমুনা সংযোগ সড়ক অথবা নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো-এসব কিছুরই বড় একটা অংশই বাস্তবে রূপ দিয়েছে তার পিতার সুদূরপ্রসারী ভাবনা। তার নিজস্ব চিন্তা সাহস আর অভিনবত্বে বাংলাদেশকে এনে দিতে থাকেন একের পর এক সাফল্য। বিদেশি প্রতিষ্ঠান নয় নিজ দেশের প্রতিষ্ঠান দিয়েই আন্তর্জাতিক মানের স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব এটিও তিনি প্রমান করেছেন।

এএমএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খুলনা-মোংলা হাইওয়ে, ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-মোল্লারহাট রোড, গোপালগঞ্জ বাইপাসসহ, গড়াই ব্রিজ, মাওনা ব্রিজ, গুলশান বনানী ব্রিজ, বনানী ফ্লাইওভার, লালন ব্রিজের সংযোগ সড়কসহ আরও অনেক কিছু আব্দুল মোনেমের প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে দৃশ্যমান।

১৯৮৪ সালে খুলনা-মোংলা হাইওয়ের কাজ করে প্রথমবারের মতো এএমএল আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড লাভ করে। সেই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠানটি পৌঁছে যায় এক নতুন উচ্চতায়। আর পদ্মা বহুমুখী ব্রিজে কাজ করার মধ্য দিয়ে সেই অবস্থান সুসংহত স্থায়িত্ব লাভ করে। মালয়েশিয়ান কনস্ট্রাকশন ফার্ম এইচসিএমের সঙ্গে এএমএল একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার স্থাপন করেছে। এই ভেঞ্চারের অধীনে পদ্মার মূল সেতুর দুদিকে জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে দুটি সংযোগ সড়ক তৈরির দুটি আলাদা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। দুটি চুক্তির মধ্যে ছিল পাঁচটি ব্রিজ, ২০টি কালভার্ট ও আটটি আন্ডারপাসের নির্মাণকাজ। পদ্মা ব্রিজের জন্য সার্ভিস এরিয়া-২ তৈরি করার আন্তর্জাতিক টেন্ডারও পায় একমাত্র এএমএল। সুউচ্চ ভবন, হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার, বিমানবন্দর, নদীতে জেটি ও টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল, ফ্যাক্টরি এবং এমন আরো অনেক কিছু তৈরি করেছে এএমএল।

এএমএল সফলভাবে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংস্কার প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। সবচেয়ে কম সম্ভাব্য সময়ে ওই প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছিল। সফলভাবে সিলেটে ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাজ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এসএম বারাক অ্যান্ড দামালকোটের কাজ, ঢাকার গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে তিনটি বাস টার্মিনাল, সাত লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তিনটি টাওয়ার মোনেম বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট বানিয়েছে।

এএমএল শুধু নির্মাণকাজের মধ্যেই কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ না থেকে পরবর্তী সময়ে আইসক্রিম ইউনিট ও বেভারেজ ইউনিট, ২০০০ সালে ম্যাংগো পাল্প প্রসেসিং, ২০০৪ সালে ইগলু ফুডস, ড্যানিশ বাংলা ইমালসন, সিকিউরিটিজ ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ইগলু ডেইরি প্রডাক্টস লিমিটেড, ২০০৭ সালে সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও এএম এনার্জি লিমিটেড, ২০০৮ সালে নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ২০১০ সালে এএম অ্যাসফল্ট অ্যান্ড রেডিমিক্স লিমিটেড, ২০১২ সালে এএম অটো ব্রিকস লিমিটেড, ২০১৪ সালে এএম ব্র্যান অয়েল কোম্পানি এবং ২০১৫ সালে আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। এএমএল বেভারেজ ইউনিটের অধীনে এএমএল কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের কোকা-কোলা, ফ্যান্টা, স্প্রাইট ও কিনলে ড্রিংকিং ওয়াটার বোতলজাত করে আসছে। আব্দুল মোনেম লিমিটেডের পণ্য ‘ইগলু আইসক্রিম’ বাংলাদেশে একটি অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় নাম।

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, 'আমার বাবা আব্দুল মোনেমের শেষ স্বপ্ন ছিল প্রাইভেট ইকোনমিক জোন তৈরি। ওই জোনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে। এক কোটি লোকের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। ২০১৫ সালে আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন লাইসেন্স পায়, যা প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন। ইকোনমিক জোনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।'

তিনি বলেন, চাকরির সুযোগ তৈরি ও বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি আব্দুল মোনেম লিমিটেড মনে করে, সমাজের ভালো থাকা নিশ্চিত করার জন্য আরো অনেক কিছু করার রয়েছে। জনগণ, সমাজ ও দেশের প্রতি অবদানের যখন স্বীকৃতি দেয়া হয় তা আমাদের আরো অনুপ্রাণিত করে। এএমএল পেয়েছে সেরা করদাতার সম্মাননা, সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন কর প্রদানকারীর সম্মাননা, আইএফএডব্লিউপিসিএ গোল্ড মেডেল, বিজনেস পারসন অব দি ইয়ার ২০০৮, কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন ২০১০, ২০১১ ও ২০১৩, যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিলেন্স ফর বিজনেস পারফরম্যান্স।

বাংলাদেশের উন্নয়ন গল্প ও আব্দুল মোনেমের আখ্যান একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, নশ্বর এ পৃথিবীতে বিখ্যাত ব্যক্তিরা প্রতিদিন জন্মগ্রহণ করেন না। তারা আসেন হয়তো শতবর্ষের ব্যবধানে। তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনে পৃথিবীতে রেখে যান অনেক কীর্তিগাথা। যা মানুষ মনে রাখে সুদীর্ঘকাল। এর সুফল ভোগ করে প্রজন্মের ওর প্রজন্ম।

তিনি আরও বলেন, 'সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় শূন্য অবস্থান থেকে শীর্ষ সারিতে আরোহণ করা সুপ্রতিষ্ঠিত সফল ব্যক্তির অন্যতম আমার বাবা। আব্দুল মোনেম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আলহাজ আব্দুল মোনেম। যিনি আমার গর্বিত বাবা। লক্ষ্যে পৌঁছার অদম্য মনোবল, চেষ্টা আর অধ্যবসায় যে একজন মানুষকে তার লালিত স্বপ্নের শিখরে নিয়ে যায়, তার এক অনন্য উদাহরণ তিনি। সুদীর্ঘকাল নানা টানাপড়েন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে বাবা অর্জন করেন বিরল সফলতা।'

মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, 'পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে এসএসসি পাস করে বাবা যখন ঢাকায় আসেন, তখন তার হাতে ছিল গুটিকয়েক টাকা, যা দিয়ে চলাই ছিল কঠিন। এ সময় সরকারের সার্ভে পদে পরীক্ষা দেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু চাকরিতে তার মন টেকেনি। স্বপ্ন ছিল আরো বড় কিছু করার, বড় কিছু হওয়ার। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্যবসা। মাত্র ৭০ টাকা পুঁজি করে কীভাবে ব্যবসা করতে হয়, সেটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। দক্ষতা ও সততা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুবিশাল ব্যবসায়ীক ও শিল্প সাম্রাজ্য। বাবা বিশ্বাস করতেন, সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব কাজে এক নম্বর হওয়া সম্ভব।'

অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ঠিকাদার হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে ১৯৫৬ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল) গড়ে তোলেন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৫৭ সালে এএমএল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রা করে। আর অবকাঠামো বিনির্মাণ দিয়ে মূল ব্যবসা শুরু করে আব্দুল মোনেম গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে এএমএল বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

মঈনুদ্দিন বলেন, 'বাবা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ও পরোপকারী মানুষ। মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা এবং সততাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। কাজের বিষয়ে তিনি খুবই দক্ষ ও দূরদর্শী ছিলেন। শুধু ফিল্ড সার্ভে করলেই তিনি বুঝতে পারতেন এ প্রকল্পে কী কী প্রয়োজন হবে এবং কীভাবে প্রকল্পটি সুন্দরভাবে শেষ করা যাবে। এটি তার অন্যতম ব্যতিক্রমী গুণ ছিল। ব্যবসা ও পরিবার একসঙ্গে সফলভাবেই সামলেছেন বাবা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।'

তিনি বলেন, 'আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, এটা আমার বাবার কৃতিত্ব। তিনি আমাকে বলেছেন-তুমি হার্ভার্ডে ট্রাই করো। আমি বলেছি, এমআইটিতে পড়াই তো যথেষ্ট। কিন্তু তিনি বলেছেন, যা-ই করবে নাম্বার ওয়ান হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার বাবার টাকা ছিল না। এক বেলা খাবারের টাকা জোগাড় করাই ছিল খুব কষ্ট। অথচ সেই ব্যক্তি স্বপ্ন দেখছেন, তার ছেলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। সেজন্য আমি একজন আব্দুল মোনেমকে শুধু পিতা হিসেবেই নয়, বরং তাকে আমার জীবনের একজন গাইড, একজন মেন্টর, একজন আর্কিটেক্ট মনে করি। তিনি আমার কাজের অনুপ্রেরণা ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপ আর অক্লান্ত শ্রম নিবেদিত ছিল নিজ হাতে গড়া শিল্প গ্রুপ আব্দুল মোনেম লিমিটেডের জন্য। নির্মাণ আর অবকাঠামো দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ডালপালা ছড়ান বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠানে। কাজের সুযোগ করে দেন অসংখ্য মানুষের। দীর্ঘ ৬৪ বছরের কর্মজীবন তাকেও দিয়েছে দুহাত ভরে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা এসেছে তার হাতে।'

ব্যবসায়ের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে আব্দুল মোনেম গড়ে তোলেন আব্দুল মোনেম ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আব্দুল মোনেমের নিজ গ্রাম বিজেশ্বরে প্রায় ৫২ একর জমি দান করেছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া একটি এতিমখানা পরিচালনাসহ সব খরচ বহন করছে ফাউন্ডেশনটি। এখানে প্রায় তিন হাজার এতিম পড়াশোনা করে। দেশে বন্যা বা অন্য কোনো ধরনের বিপর্যয়ের সময়ও এ ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা করে থাকে।

খেলাধুলায়ও দারুণ আগ্রহী ছিলেন আব্দুল মোনেম। বাংলাদেশে ফুটবলের সুবর্ণ সময়ে ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তার সময়ে ফুটবল লিগে ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

বাইশ পরিবার এখন শুধুই অতীত

আবদুল মোনেমের সাফল্যের হাত ধরে দেশের নির্মাণখাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে আরো উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছেন। দেশে শিল্প-কল কারখানা ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং দিনে দিনে এর প্রসার আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীক জীবনের শুরু থেকে সততা ও গুনগত মান বজায় রেখে নিজেদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতার নজির একমাত্র আব্দুল মোনেমের গড়া প্রতিষ্ঠানই করছেন বাংলাদেশে।

১৯৩৭ সালের ৫ জানুয়ারি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার আখাউড়ায জন্ম আব্দুল মোনেমের। ২০২০ সালের ৩১ মে মহান রবের ডাকে সারা দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান বিভিন্ন ক্ষেত্রে পথিকৃৎ দেশের সফল ব্যাক্তিত্ব আব্দুল মোনেম।

এ জনপদে ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের সমগ্র সম্পদের সিংহভাগই কুক্ষিগত ছিল মাত্র বাইশ পারিবারের হাতে, যাদের মধ্যে একজন মাত্র ছিলেন বাঙালি-এ কে খান।

পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুসহ অনেক নেতা তাদের ভাষণে ওই বাইশ পরিবারের সম্পদ কুক্ষিগতকরণের বিষয়টিকে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে তুলে ধরতেন। একটি বৈষম্যমুক্ত শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা থেকেই লড়াই-সংগ্রাম ও যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত হলো বাংলাদেশ।

নিজ চেষ্টা, উদ্যোগে বৈষম্যমুক্ত দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্র তৈরিতে অবকাঠামো নির্মানে দেশে পথিকৃৎ আব্দুল মোনেম। আব্দুল মোনেমের নামে গড়ে উঠা কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল) দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মানসহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে আব্দুল মোনেমের অবিস্মরণীয় অবদান।

মানুষ বেচেঁ থাকে তার কর্মের মাধ্যমে। তেমনি আব্দুল মোনেমও বেচেঁ থাকবেন তার কর্মে ও সাফল্যগাথায়।


ইইউর নতুন আইনের কল্যাণে দেশে শ্রমিকের জীবনমানে পরিবর্তন আসতে পারে

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অনুমোদিত নতুন সরবরাহ ব্যবস্থা আইন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর শ্রম ও পরিবেশগত মান উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশের ৬৪ শতাংশেরও বেশি পোশাক ইউরোপে রপ্তানি হয়। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এটি গৃহীত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতেও প্রভাব পড়বে।

গত বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ডিউ ডিলিজেন্স ডাইরেক্টিভ (সিএসডিডিডি) পাস করে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্যবসার মান নির্ধারণ করবে। এর লক্ষ্য ইইউ এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও মানবাধিকার সুরক্ষা বাড়ানো।

আইনটিতে এখন ইইউ সদস্য দেশগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রয়োজন। আগামী মে মাসে ইইউ মন্ত্রীপর্যায়ের ভোট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রানা প্লাজা ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৮ পোশাক শ্রমিক নিহত ও ২ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার ১১তম বার্ষিকীতে এ ভোট হয়।

এখন এই বিলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে গৃহীত হলে আগামী পাঁচ বছরে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৭ সালে যেসব কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ৫ হাজার এবং যাদের বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ ১৫০ কোটি ইউরো, তারা এর আওতায় আসবে। এরপর ২০২৮ সালের মধ্যে যেসব কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ৩ হাজার এবং যাদের বার্ষিক ব্যবসা ৯০ কোটি ইউরো, তারা এর আওতায় আসবে। ২০২৯ সালে আসবে সেই কোম্পানিগুলো, যাদের কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার এবং যাদের বার্ষিক ব্যবসা ৪৫ কোটি ইউরো।

২০৩০ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে কার্যকর হতে যাওয়া এই আইন রপ্তানি ও আমদানিকারকদের উৎপাদন, কমপ্লায়েন্স ও দায়িত্বশীল ব্যবসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।

কারণ প্রথমবারের মতো সরবরাহ ব্যবস্থায় কমপ্লায়েন্স না মানার দায় আমদানিকারকদের নিতে হবে। শিল্প-কলকারখানায় মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হলে যেসব ব্র্যান্ড সে কারখানাগুলোতে কার্যাদেশ দেয়, তাদেরও দায়ী করা যাবে- এটাই এই বিলের মূল প্রতিপাদ্য। এর মধ্য দিয়ে শ্রমিকের জীবনমানের উন্নতি হতে পারে।

বিষয়টি হলো এতদিন বাংলাদেশের মতো দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন লাগলে বা শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘিত হরে মূল ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের দায় থাকত না। নতুন এই আইনের কারণে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অর্থাৎ ব্র্যান্ডগুলো এখন দূর দেশের কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অধিকার ও পরিবেশগত অবনতির জন্য দায়ী থাকবে। তাদের এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী আদমানিকাররা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে আইনত বাধ্য ছিল না। তারা স্বেচ্ছায় এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। তবে সিএসডিডিডি পাস হওয়া নিশ্চিত করে যে, ইইউ যথাযথ উদ্যোগ নেবে এবং আমদানি-রপ্তানিকারকদের দায়ী করবে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিএসডিডিডি মেনে চলার মতো অবস্থায় আছে। তবে এমন কিছু ক্ষেত্র আছে গুণগত মান অর্জনের জন্য দেশকে উদ্যোগ নিতে হবে।

তবে বাংলাদেশকে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, সুশাসন ও পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক চারটি মূল নীতিসহ জাতিসংঘের ৩২টি কনভেনশন অনুমোদন দিতে হবে।

জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সব মূল কনভেনশনের অনুমোদন দিয়েছে।

বাংলাদেশ এখনো কার্বন দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ রপ্তানিকারক কারখানা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে। সিএসডি অনুসারে তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডকে ইউরোপীয় ক্রেতারা ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন দূষণ ৫০ শতাংশ কমাতে বলেছে।

বাংলাদেশে জীবন ধারণের মতো প্রয়োজনীয় মজুরি চালু না হওয়ায় এবং শ্রম আইনের কঠোর শর্তের কারণে শ্রমিকরা এখনো কারখানায় ইউনিয়ন গড়তে সমস্যায় পড়ছেন।

বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমানের মতে, মানসম্মত কাজের পরিবেশ, যৌথ দর-কষাকষি ও মজুরির ক্ষেত্রে শিথিলতা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ এগুলো নতুন আইনের মূল বিষয়।

রপ্তানি ও আমদানিকারক এবং শ্রমিকসহ সব পক্ষ যাতে সন্তুষ্ট হয় এবং শিল্পের ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনটি ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি এবং প্রস্তুতি নেওয়ায় নতুন আইনের কারণে আমাদের ক্ষতি নাও হতে পারে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ক্রেতারা যদি রপ্তানিকারকদের পণ্যের যৌক্তিক মূল্য না দেন, তাহলে আইন একতরফা এবং অকার্যকর হয়ে যাবে। এটি ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দেবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মানবাধিকার ও শ্রম-অধিকার রক্ষা করা জরুরি। একইভাবে আমদানি ও রপ্তানিকারকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও দরকার।

তারা বলছেন, নতুন আইনের কঠোর প্রয়োগ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে তা সব দেশে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের করপোরেট জবাবদিহিতাবিষয়ক সহযোগী পরিচালক অরুণা কাশ্যপ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১১তম বার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দেয় কেন যথাযথ আইন অনেক দিন থেকেই প্রয়োজন হয়ে আছে।’

‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভোট যে কঠোর বার্তা দিচ্ছে, তা হলো ইইউর উচিত বড় করপোরেশনগুলোকে মানবাধিকার ও পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখা,’ যোগ করেন তিনি।


বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। কিন্তু গত এক মাস ধরে সংবাদ সংগ্রহের কাজে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢুকতে পারছেন না। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক ও ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বৈঠক ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।

ব্যাংক বিটের সাংবাদিকদের দাবি, সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এর আগেও কয়েকবার এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

ব্যাংক বিটের সাংবাদিক জিহাদুল হক ও জয়নাল আবেদিন খান বলেন, ‘আমরা নির্বিঘ্নে পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে হঠাৎ করে প্রবেশ সীমাবদ্ধ করে দেয়। আগে যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিসিপশনে সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট কার্ড নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করা যেত। গত মাস থেকে বাংলাদেশে ব্যাংকে অবাধ প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে পেশাগত দিক থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজে বাধার মুখে পড়ছেন তারা।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থার অবস্থানের কথা জানান। তখন শুধু তার দপ্তর পর্যন্ত প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়।

বিষয়টি সমাধানের জন্য বেলা ১১টার দিকে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই সময়ে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তবে, প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।

গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, আগামী মে মাসের ৮ তারিখের পর অনুষ্ঠেয় কর্মশালার পর গভর্নর সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করবেন।

বৈঠক ও কর্মসূচি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের যে কর্মকর্তার সাথে দেখা করবে তার দেওয়া পাসের ভিত্তিতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে। জবাবে সাংবাদিকরা বিষয়টিকে অবাস্তব ও তথ্য প্রবাহে বাধার নামান্তর বলে উল্লেখ করেন।


চলতি মাসে সোনার দামে ৭ দফা উত্থান-পতন

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে সোনার দামের উত্থান-পতন অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসে সাত দফা মূল্যবান ধাতুটির দর বাড়ানো-কমানো হয়েছে। বেড়েছে চারবার, কমেছে তিনবার। দেশের সোনা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশে সোনার দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। যে কারণে দামের এত উত্থান-পতন হচ্ছে।

চল‌তি মা‌সে ৬, ৮ ও ১৮ এপ্রিল সোনার দা‌ম বা‌ড়ি‌য়ে‌ছিল বাজুস। এর ম‌ধ্যে ৬ এপ্রিল বে‌ড়ে‌ছিল ১৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১৭৫০ টাকা এবং ১৮ এপ্রিল বে‌ড়ে‌ছিল দুই হাজার ৬৫ টাকা। পরে ২০ এপ্রিল ৮৪০ টাকা কমানোর একদিন পর ২১ এপ্রিল আবার ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস। দুদিন পর ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা এবং ২৪ এপ্রিল ভালো সোনার ভরি ২০৯৯ টাকা কমানোরর ঘোষণা দিল বাজুস। গত দু‌দি‌নে ভ‌রি‌তে সোনার দাম ক‌মেছে ৫ হাজার ২৩৮ টাকা।

বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। আর সেটি হচ্ছে- বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি। এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন সোনার দাম কমত, তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত, তখন বাড়াতাম।’

‘আর এখন আমরা আমাদের সোনার সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে সোনার দাম ঘন্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে- দিনে দুই বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’

কেনো এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন বৈধভাবে কোনো গোল্ড আমদানি করি না। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু প্রতিষ্ঠান আমদানি করলেও এখন কেউ করছে না। কেননা, ডিউটি (শুল্ক) অনেক বেশি। আমদানি করলে প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজুসের সভাপতি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশনায় ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করছি। দেশে গোল্ড রিফাইনারি শুরু হলে এবং শুল্ক কমালে বৈধভাবে আমদানি হলে, তখন আমরা আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোল্ডোর দাম নির্ধারণ করবা।’

এদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে সোনার বাজারে সুদিন চলছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়, অর্থাৎ ২০২০ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১ দশমিক ১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তখন এই দাম ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। তার আগে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ সোনার আউন্স ছিল ১ হাজার ৪৭৯ ডলার। গত চার বছরে সোনার দাম করোনার আগের অবস্থায় ফেরেনি।

এদিকে গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর সোনার দাম আবার বাড়তে থাকে। ১ ডিসেম্বরে সোনার দাম প্রতি আউন্স ২ হাজার ৭২ ডলারে পৌঁছায়। তারপর কিছুটা কমলেও চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে- বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সোনার দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। চলতি মাসে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালানো পর সোনার দাম আরও কিছুটা বাড়ে। গত শুক্রবার প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩৯০ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। যদিও দাম গতকাল ২ হাজার ৩২০ ডলারে নেমেছে।


গুটিকয়েক ট্রেডারের কারসাজিতে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মেহেদী হাসান সজল

কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দূরদর্শী নেতৃত্ব বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেয়নি।

সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণী স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন করছে।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করতো। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করতো তখন তারাও আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাতো। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা না। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে অনেক বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক। যাতে তারা নতুন করে আরো সুযোগ নিতে পারে। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছে। ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছে। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।

এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিএসইসি গতকাল বিকালে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে। দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত আজ থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি। অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারো ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আশা করছি আমাদের বাজারে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।


আবার কমলো সোনার দাম

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও কমেছে সোনার দাম। আজ বুধবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমানো হয়েছে। এখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ক‌মে হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা। এর আগে দাম ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাজুস। সে দিন ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ক‌মে হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। এর আগে দাম ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা।

বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ ২৪ এপ্রিল বিকেল থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে।

এদিকে সোনার দাম কমানো হ‌লেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বর্তমানে ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ১৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা।


৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর, স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক মিলে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা বিগত করবর্ষের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। গত করবর্ষের ৯ মাসে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো- ৯ মাসে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ১ লাখ ৭০২ কোটি ৩৯ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা আয় হয়েছে। তবে এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কিছুটা পিছিয়ে আছে। ৯ মাসে যে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ করবর্ষের ৯ মাসে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ ছিল ৬৭ হাজার ৩৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি করবর্ষের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।

আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। গত করবর্ষের ৯ মাসের ৭১ হাজার ২২৭ কোটি ২২ লাখ টাকার আয়কর রাজস্ব আয় এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও আয়করের মত মূসক আহরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখ করার মতো প্রবৃদ্ধি এসেছে। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত করবর্ষের ৯ মাসে মূসক রাজস্ব আয় ছিল ৮৬ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, চলতি করবর্ষে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।


banner close