বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পুনর্নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। গত ৩১ মার্চ শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও এক মেয়াদে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এরপর ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।
সার সংক্ষেপে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৭ মে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আগামী ১৬ মে তার মেয়াদ শেষ হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা-৫ (১) অনুসারে, বিএসইসিতে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনার থাকেন। বর্তমানে কমিশনে একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন কমিশনার আছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান পুনর্নিয়োগের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা তাদের নিয়োগের তারিখ থেকে চার বছর মেয়াদের জন্য নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন এবং অনুরূপ একটিমাত্র মেয়াদের জন্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য হবেন। তবে শর্ত হলো, কোনো ব্যক্তির বয়স ৬৫ পূর্ণ হলে তিনি চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না অথবা চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদে বহাল থাকবেন না।
সার সংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বয়স আগামী ১৬ মে ৫৬ বছর ৪ মাস ১৫ দিন হবে। অর্থাৎ তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হতে ৪ বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সে অনুযায়ী তিনি আরও একটি মেয়াদে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ অনুযায়ী আগামী ১৭ মে ২০২৪ তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য আরও একটি মেয়াদে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকৃত সম্মতিপত্র অনুসারে চলতি সপ্তাহেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ প্রজ্ঞাপন জারির পর আগামী ১৭ মে হতে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য আরও এক মেয়াদে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার গভ. ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫-১৯৮৯ সালে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিতা রফিকুল ইসলাম খান অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। মা দেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রয়াত হাসিনা মমতাজ। তার স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং বিটিভির একজন সংবাদ পাঠিকা। এই দম্পতির দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এই সময়ে তিনি দেশে-বিদেশে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং এবং বিমা সম্পর্কিত অনেক ব্যবসায়, চেম্বার এবং গবেষণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি টারশিয়ারি পর্যায়ের জন্য ‘ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং’ এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বোর্ড প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং’ বইয়ের লেখক। বিষয়-সংশ্লিষ্ট ১৬টিরও বেশি গবেষণা প্রকাশনা এবং ৫টি আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে তার। অধ্যাপক শিবলী আইন ও ব্যবহারিক ব্যাংকিং, রিটেইল ও ই-ব্যাংকিং, বৈদেশিক বিনিময় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং, করপোরেট সুশাসন, ব্যবসায় ও মৌলিক বিমা সংক্রান্ত আইন বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ। তিনি চীনের চেংদু-তে অবস্থিত সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘অতিথি অধ্যাপক’ হিসেবে এবং বিএকেইউএমএসইএম সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ গবেষণা পত্রিকার উপস্থাপক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও যোগ্যতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) পরিচালক (বোর্ড ডিরেক্টর) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আইওএসকোর বোর্ড ডিরেক্টর হয়েছেন। একই সঙ্গে আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির ভাইস চেয়ার হিসেবে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। আগামী ২০২৪-২৬ সাল পর্যন্ত সময়ে উক্ত পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। চলতি বছরের গত ২০ ফেব্রুয়ারি আইওএসকোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন মোলোনি স্বাক্ষরিত এক বার্তায় তাকে এ তথ্য জানানো হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য প্রথম কোনো বড় অর্জন। এতে দেশের পুঁজিবাজার অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য সমন্বয় করছে সরকার।
এ দফায় অকটেনের দাম ১৩১ টাকা, পেট্রোলের দাম ১২৭ টাকা ও ডিজেলের দাম ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন মূল্যের প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের বিদ্যমান মূল্য ১০৭ টাকা থেকে ০.৭৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১০৭.৭৫ টাকা, পেট্রোলের বিদ্যমান মূল্য ১২৪.৫০ টাকা থেকে ২.৫০ টাকা বাড়িয়ে ১২৭ টাকা এবং অকটেনের বিদ্যমান মূল্য ১২৮.৫০ টাকা থেকে ২.৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সমন্বয়কৃত এ মূল্য ১ জুন থেকে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা হ্রাস পেলেও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এ মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, হংকং কনভেনশন প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত আন্তরিক এবং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সর্বাত্মক সহয়োগিতা প্রয়োজন। আইএমও মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে এতে গতি সঞ্চার হবে বলে আশা করা যায়।
আইএমওর মহাসচিব আর্সেনিও এন্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকো আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর সঙ্গে রাজধানীর মতিঝিলে তার দপ্তরে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, জীবনের শেষ সীমায় পৌঁছানো জাহাজের নিরাপদ এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ গত ২৫ জুন হংকং কনভেনশন অনুসমর্থন করে। সে হিসেবে আগামী ২০২৫ সালের ২৬ জুনের মধ্যে বাংলাদেশকে কনভেনশন প্রতিপালন করতে হবে এবং সকল ইয়ার্ডসমূহে ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ) নিশ্চিত করতে হবে। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বাংলাদেশের এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ গ্রহণসহ করণীয়সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। মন্ত্রী এ সময় হংকং কনভেনশন প্রতিপালনে শিপ ইয়ার্ড মালিকদের জন্য উন্নয়ন সহযোগী বা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে সফট লোন পেতে আইএমও'র সহযোগিতা কামনা করেন। তাছাড়া জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনেও আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সহায়তা চান।
সাক্ষাৎকালে আইএমও মহাসচিব বলেন, জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে আইএমও প্রবর্তিত হংকং কনভেনশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এ শিল্পের টেকসই, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নে সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ স্বচক্ষে দেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আমার এ সফর। আর্সেনিও এন্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকো বলেন, এ শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে দেখে আমি খুশি। আমরা এ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে আইএমও এর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মহাসচিব এ সময় বাংলাদেশ সরকার ও আইএমও এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ও নির্মাণ শিল্প আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) এস এম আলম, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরক্ত সচিব ড. শাহ্ মো. হেলাল উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ১৯৮০ সাল থেকে জাহাজ রিসাইক্লিং করে আসছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় শতাধিক শিপ সাইক্লিং ইয়ার্ড রয়েছে। উল্লিখিত ইয়ার্ডগুলির মধ্যে ৫০টি চালু রয়েছে। দেশের সামগ্রিক লোহার চাহিদার প্রায় ৬০% আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে। প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল।
আসন্ন কোরবানির ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ মসলা। আর ঈদকে ঘিরে সিন্ডিকেটের অসাধু তৎপরতায় অস্থির হয়ে পড়েছে দেশে মসলার বাজার। ফলে সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। দেশে মসলা আমদানি হওয়ার প্রধান দুটি রুট হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং দিনাজপুরের হিলি বন্দর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরে তিন মাস আগে থেকেই মসলা আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। এর ফলে দেশের বাজারে বিপুল পরিমাণ মসলা আমদানি হলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে মসলার দাম।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে লাগামছাড়া এলাচের দাম। কেজি প্রতি বেড়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে দারুচিনি-জিরা-হলুদের দামও। চীনা আদার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ টাকা। স্থির নেই পেঁয়াজের বাজারও। মসলার এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ডলারের দাম বৃদ্ধিকেই যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের মসলার মোকামগুলো ভর্তি নানা রকম মসলা পণ্যে। সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও এর কোনো প্রভাব নেই পণ্যের দামে।
পাইকারি বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। ২৫০০ টাকার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ টাকায়। সবচেয়ে ভালো মানের এলাচের দাম আরও বেশি, ৩৯০০ টাকা কেজি। জিরা আর দারুচিনির দামও বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
পেঁয়াজ-আদা-রসুন-হলুদের বাজারেও স্বস্তি নেই। এক সপ্তাহে চীনা আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। দেশি আর ভারতীয় পেঁয়াজের দামও পাইকারিতে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। আর হলুদের দাম বেড়েছে ৩০
ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও এলসি খোলায় জটিলতার কারণেই মশলার দাম বেড়ে গেছে। তবে নিয়মিত বাজার তদারকি হলে এত দাম বাড়তো না বলেও মনে করেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, এলাচের দাম টন প্রতি যেখানে ১২ থেকে ১৩ হাজার ডলার ছিল, তা বেড়ে এখন ৩০ হাজার ডলার হয়েছে। এলাচের দাম সে কারণে বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সহসভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, জেলা পরিষদ মনিটরিং সেল যেসব আছে তারা যদি বাজার মনিটরিং জোরদার করে তাহলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জানুয়ারি থেকে গত পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে লবঙ্গ-এলাচ-জিরা-গোলমরিচ আমদানি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টন। যেখানে পুরো গত বছর আমদানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮২ হাজার টন।
এদিকে হিলি প্রতিনিধি জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে মসলার আমদানি। তাপরও বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি। বাজারে জিরাসহ মসলা জাতীয় সব পণ্যের দামই বেড়ে গেছে।
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি দুই সপ্তাহের কিছু বেশি সময়। এতে হিলি বাজারে প্রতিটা মসলার দোকানেই বেড়েছে বেচাবিক্রি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মসলার দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে ঈদের আগেই হঠাৎ মসলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
তাদের দাবি, কোরবানির বাকি এখনো প্রায় তিন সপ্তাহ। এর মধ্যেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ফেলেছেন, যা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, আমদানিকারকরা দাম বাড়ানোয় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে মসলা। ফলে তাদেরকেও তুলনামূলক বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে এসব পণ্য।
স্থানীয় এক মসলা বিক্রেতা বলেন, হিলি বাজারে যেসব মসলা বিক্রি হচ্ছে, তার অধিকাংশই ভারত থেকে আমদানি করা। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই জিরাসহ অন্যান্য মসলা আমদানি হচ্ছে। আগে প্রতিদিন দুই-তিন ট্রাক মসলা আমদানি হলেও কোরবানি উপলক্ষে এখন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ ট্রাক।
আগামী জুনের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই কিস্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এলে দেশের ক্রমশ কমতে থাকা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ খানিকটা কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, ঋণের তৃতীয় কিস্তির প্রস্তাবটি আগামী ২৪ বা ২৫ জুন অনুমোদনের জন্য আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় তোলা হবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে আইএমএফ।
গত রোববার আইএমএফ নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণমূর্তি ভেঙ্কারা সুব্রামানিয়ানের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও একই তথ্য জানিয়েছিলেন। সে দিন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়। এখানে অনেক নেগোসিয়েশন আছে। আশা করছি এ সমস্যার আমরা সমাধান করতে পারব। আমরা কাজ করছি। আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, আপনারা সঠিক পথে আছেন। আপনারা যে কাজ করছেন সমস্যা সমাধানে সেটাতে আমাদের সমর্থন আছে।’
গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের অনুমোদন দেয়। দুই কিস্তিতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পাওয়া গেছে। তৃতীয় কিস্তি দেওয়ার বিষয়ে ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আইএমএফ দল গত মাসে ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনা শেষ করে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কর্মী-পর্যায়ে চুক্তি করে সংস্থাটি।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে রিজার্ভ সংক্রান্ত শর্ত ছাড়া বাংলাদেশ বাকি শর্তগুলো পূরণ করেছে।
গত ডিসেম্বরে দেশের নিট রিজার্ভ ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা ছিল। কিন্তু এটি এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কমেছে। এর ফলে আইএমএফকে রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে হয়েছে। সরকারও সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে। এর মধ্যে আছে মুদ্রা বিনিময় হারের পুনর্বিন্যাস, ক্রলিং পেগ গ্রহণ ও সুদের হার উদারীকরণ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে উচ্চ আমদানি বিল পরিশোধের কারণে রিজার্ভ অনেক কমে গেলে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। সে সময় টাকার দাম অনেক কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটি স্বল্প আয়ের মানুষদের ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়।
আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল বলছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টের ৪১ বিলিয়ন ডলার থেকে এখন ১৮ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের আরও একটি কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে। স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর উত্তরা কাচকুরায় অবস্থিত কেসি জ্যাকেট ওয়্যার। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। ফলে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১৮-তে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পরিবেশবান্ধব সনদ পাওয়ার ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।
কেসি জ্যাকেট ওয়্যার প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে। কারখানাটি ইউএসজিবিসি থেকে ১১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৮৪ নম্বর।
বিজিএমইএ তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে বর্তমানে লিড সনদ পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা বেড়ে হয়েছে ২১৮। তার মধ্যে ৮৪টি লিড প্লাটিনাম সনদধারী। এ ছাড়া ১২০টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও ৪টি কারখানা সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৯টি বাংলাদেশে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি লাভ করেছে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর এসএম সোর্সিং। ১১০ নম্বরের মধ্যে কারখানাটি ১০৬ পেয়েছে। দেশের অন্য শীর্ষস্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহের গ্রিন টেক্সটাইল, গাজীপুরের নিট এশিয়া ও ইন্টিগ্রা ড্রেসেস, নারায়ণগঞ্জের রেমি হোল্ডিংস ও ফতুল্লা অ্যাপারেলস, গাজীপুরের লিডা টেক্সটাইল অ্যান্ড ডাইং ও লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং মানিকগঞ্জের তারাসিমা অ্যাপারেলস।
এ ছাড়া বিশ্বের ১০০টি পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার মধ্যে ৫৬টি অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কারখানা বাংলাদেশে। দিন যতই যাচ্ছে দেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি বা পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা ততই বাড়ছে। পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয়।
বাংলাদেশে অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডিএসই কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিনিধিদলে ছিলেন পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মার্গা পিটার্স ও ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্সের টিম লিডার ফাস্ট সেক্রেটারি মিস এনরিকো লরেনজন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা খাইরুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদসহ ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ সোমবার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে উঠে এসেছে।
এ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩১০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়টিক ল্যাবরেটরিজ। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, লাভেলো আইসক্রিম, আইএফআইসি ব্যাংক, রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফারইস্ট নিটিং।
অন্যদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
দেশে মূল্য পরিস্থিতি সহনীয় অবস্থায় রয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
আজ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। সভায় কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, তিন মন্ত্রণালয় একবার বসেছিলাম দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য। যে ফল পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম, তা আমরা অনেকাংশে পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা কী, আমরা ভবিষ্যতে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারি, তা নিয়ে আজও আমরা একমত হয়েছি। সামনে আমাদের বাজেট আসছে। বাজেট আসার পর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আগামী দিনগুলোতে আমাদের সব পর্যায়ের বাজার ব্যবস্থা যাতে আরও সুন্দরভাবে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে আমরা সবাই কাজ করার জন্য একমত হয়েছি। অতীতেও একমত ছিলাম। এতে নতুন কোনো বিষয় যোগ হয়েছে কি না, তা আমরা আলোচনা করেছি।’
‘আমাদের মূল্য পরিস্থিতি সহনীয় অবস্থায় আছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। না হলে দেখতেন দুদিন পরপর মিছিল-মিটিং হতো। আমরা তো মিছিল করে করেই এত বড় হয়েছি। এসব নিয়ে তো আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব নেই’- বললেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চাল, চিনি, আদা ও রসুন সব কিছুরই তুলনামূলক চিত্র আমরা দেখেছি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। সব জায়গায় আমরা প্রিমিয়াম পজিশনে আছি। তাই আমি বলব, আমাদের দেশের নাগরিকদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। জনগণকে আমরা সন্তুষ্ট রাখার জন্য সব ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামীতেও চালিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সজাগ রয়েছেন। তিনি রোববার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার হয়তো উনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমাদের কথা হবে, আমরা আজ যে সভা করেছি, সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করব।’
আজকের যে বাজারদর, তা কি সাধারণ মানুষের জন্য সহনীয়- জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অতীতে একটু দাম বাড়লেই রাস্তা গরম হয়ে যেত, এখন তো এসব নেই।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষত কাঁচাবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘সাপ্লাই চেইন যদি সঠিকভাবে কাজ করে, আজকের ঝড়-তুফান সাপ্লাই চেইনে প্রভাব ফেলছে। এটা তো আপনার-আমার হাতে নেই।’
কৃষি অধিদপ্তর নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য ৫৩ টাকা কিন্তু পাইকারি বাজারে ৬০-৬৮ টাকা। রসুন ৯৪ টাকা কিন্তু পাইকারি বাজারে ১৯৫-২০৫ টাকা। এই পার্থক্যের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় একটা মিনিমাম প্রাইস ঠিক করে দেয় বা যেভাবে করা উচিত। কিন্তু বাজারে যেভাবে সাপ্লাই চেইন বা ডিমান্ড চেইন কাজ করে, সেখানে তো ভ্যারিয়েশন হতেই পারে। এটা তো সব সময়ই হয়!’
এ সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম কৃষিমন্ত্রীর কথার জের ধরে বলেন, ‘আপনারা যদি শুনতে চান, আমার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ডিজি আছেন, ওনার কাছে যাবেন; কীভাবে করছেন উনি বলবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসেছি যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে, ভোক্তারা যেন যৌক্তিক মূল্যে পণ্য পায়, পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি না হয়।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যৌক্তিক মূল্য মানে প্রোডাকশন মূল্য। তার পরে কত হাত বদলায় বাজারে আসতে!’
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। দরপতনের পাশাপাশি এ দিন ডিএসইতে লেনদেন কমে তিনশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২২ প্রতিষ্ঠানের। এ ছাড়া ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ১৮৮ পয়েন্ট। এরপর সূচক আর এত নিচে নামেনি। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫০৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন কমেছে। লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় কমেনি, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারির পর হয়েছে সর্বনিম্ন লেনদেন।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার। ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন, বেস্ট হোল্ডিং, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং স্কয়ার ফার্মা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৫টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকা।
দেশের অর্থনীতি এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আমাদের কোনো দোষে, আমাদের মিস ম্যানেজমেন্টের (অব্যবস্থাপনা) কারণে এসব চ্যালেঞ্জ আসেনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রোববার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কনফারেন্স হলে সংস্থাটির ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা-বিষয়ক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোভিড ও ইউরোপে যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কোভিডের আগ পর্যন্ত আমরা ভালোই করছিলাম। আমাদের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। কোভিড আমরা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হলো। ফেডারেল রিজার্ভ ইনটারেস্ট রেট বাড়িয়ে দিল। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে গেল, আর তাতে আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ল। কমোডিটি (পণ্য), সার ও জ্বালানির দাম বেড়ে গেল। যে তিনটি জিনিস আমরা আমদানি করি, সেগুলোর দাম অনেক বাড়ল। আমাদের অর্থনীতির ওপরও চাপ বাড়ল।
ওএসএস সার্ভিস সম্পর্কে সালমান এফ রহমান বলেন, সম্পূর্ণ অনলাইননির্ভর হলেও এখনো অনেক সেবা নিতে বিনিয়োগকারীকে সশরীরে যেতে হয়- এমন অভিযোগ আছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা দরকার। এ ছাড়া আর বাকি যে ২৬টি সেবা অন্তর্ভুক্ত হবে, সেটা দ্রুত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা ও অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। ওএসএস সেবাগুলো দিতে পারলে আমরা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারব।
সভাপতির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ২০১৯ সালে অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের কার্যক্রম চালু করে বিডা এ পর্যন্ত ৪৮টি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ৪১ সংস্থার ১০১ সেবা বিডা ওএসএস-এ যুক্ত হয়েছে। নিজস্ব ২৩টি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ১০১টি সেবাসহ বিডা বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের বিডা ওএসএস-এর মাধ্যমে ১২৪টি সেবা প্রদান করে আসছে। ৪১ সংস্থার মধ্য ৩০টি সংস্থার সব সেবা এরই মধ্যে বিডা ওএসএস-এ যুক্ত হয়েছে, বাকি ১১টি সংস্থার ২২টি সেবা দ্রুতই বিডা ওএসএস-এ যুক্ত হবে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকারী ৪৮ সংস্থার মধ্য ৭টি সংস্থার কোনো সেবাই এখনো বিডা ওএসএস-এ যুক্ত হয়নি। এখানে ২০টি বিনিয়োগ সেবা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ থেকে শুরু করে বিডা এ পর্যন্ত বিডা ওএসএস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিডার নিজস্ব ১৪ লাখ চার হাজার ৬০৪টি সেবা এবং অন্যান্য প্রটিষ্ঠানের এক হাজার ৮৯৪টি বিনিয়োগ সেবা প্রদান করেছে।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুঁজিবাজার থেকে মূলধন নিয়ে শিল্পায়নে বিনিয়োগ করতে সরকারি, বেসরকারি কোম্পানি ও শিল্পমালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। পুঁজিবাজার ও বন্ডবিষয়ক এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় রোববার প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আসিফ ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মুনতাকিম আশরাফ, সংগঠনের মহাসচিব মো. আলমগীর, সাবেক পরিচালক আক্কাস মাহমুদসহ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে শিল্পায়নে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। শিল্প মালিকদের জন্যও এটি তুলনামূলক সহজ; কিন্তু দুঃখের বিষয়, অল্পসংখ্যক বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। বাকিরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
দেশ-বিদেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে যুক্ত হওয়ারও আহ্বান জানিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার উন্নত হলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়ে। পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে এফবিসিসিআইতে মতবিনিময় সভা আয়োজনেরও পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ এক্সিট সুবিধা থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, স্মার্ট বাংলাদেশসহ রূপকল্প-২০৪১ এর লক্ষ্যগুলো অর্জনে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে দেশের মোট বাজারের তুলনায় পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মুনতাকিম আশরাফ বলেন, পুঁজিবাজারে ছোট বিনিয়োগকারীদের তুলনায় বড় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা অনেক কম। এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তবে বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ এক্সিট ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে গণমাধ্যমের সহযোগিতা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশে পুঁজিবাজার ও বন্ড মার্কেটের আকার বড় হওয়া দরকার। এজন্য বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা ও জণসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে সহজ নিয়মনীতি প্রদান করা দরকার। এ ছাড়া সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হলো ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য মেলা-২০২৪। আজ শনিবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, পোশাক থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী রুচিশীল হস্ত ও কুটির শিল্পের বিভিন্ন ধরনের পণ্য সংগ্রহ করতে মেলায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। মেলায় ক্রেতাদের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের তৈরি বিভিন্ন নকশা করা পোশাক, পাটজাতপণ্য, জুতা, চামড়া পণ্য, প্লাস্টিক, হস্তশিল্প, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তারা তাদের পণ্যে দিচ্ছেন বিভিন্ন অঙ্কের নগদ মূল্যছাড়।
সকাল থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও ছুটির দিন হওয়ায় দুপুর থেকে মেলায় বাড়তে থাকে ভিড়। পছন্দ অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শতভাগ দেশীয় পণ্য সংগ্রহ করতে পরিবার পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয়েছেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে একজন রোমানা আক্তার। রাজধানীর বনানী থেকে মেলায় এসেছেন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি কিনতে। তিনি বলেন, প্রশংসা এসএমই একমাত্র মেলা যেখানে শতভাগ দেশীয় পণ্য পাওয়া যায় এবং তুলনামূলক কম দামে। ছুটির দিন হওয়ায় তাই ননদকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসলাম শাড়ি কিনতে। পছন্দ হলে অন্যান্য জিনিসপত্রও কিনব।
রাজধানীর কলাবাগান থেকে এসেছেন শায়লা আক্তার জেরিন মেলায় এসেছেন তার পুরো পরিবার নিয়ে। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এসএমই মেলার মত এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মেলা আর কোথাও হয় না। ঐতিহ্যবাহী অসাধারণ সব দেশীয় পণ্য এখানে খুব সহজে পাওয়া যায়। এখানে আসা ক্রেতারাও খুব রুচিশীল হয়। এখানকার পরিবেশটা খুব চমৎকার। যে কারণে পরিবার নিয়ে এখানে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করা যায়।
মেলায় প্রতিটি স্টলেই দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। তবে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন স্টলের মধ্যভাগের রাস্তা দিয়ে হাঁটাও যেন ভিড়ের মধ্যে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উদ্যোক্তারাও খুশি ক্রেতাদের উপস্থিতিতে। অনেকেই বলছিলেন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হচ্ছে।
মেলায় অংশগ্রহণ করা ঐতিহ্যবাহী নকশীকাঁথা নিয়ে কাজ করা রাজশাহী নকশী ঘরের কর্ণধার পারভিন আক্তার বলেন, কেনাবেচা ভালো হচ্ছে কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু কম। সূচি শিল্প নিয়ে কাজ করা রংপুর ক্রাফটর ইলোরা পারভিন বলেন, এসএমই মেলা মানেই বিশেষ কিছু। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের কারণে রুচিশীল ক্রেতারা প্রতিবছরই এ মেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পাট জাত পণ্য নিয়ে কাজ করা তুলিকার কর্ণধার আঞ্জুমান কাকলি বলেন, ক্রেতাদের উপস্থিতি খুব ভালো আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো সেল হয়েছে। ছুটির দিন নিয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল সে প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা ছুটির দিনের বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও কিছু উদ্যোক্তারা বলছেন, তাদের বেচাকেনা একদমই ভালো হয়নি। উল্লেখ্য, গত রোববার (১৯ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ১৯ মে থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য মেলা ২০২৪ শেষ হল গতকাল শনিবার।
ঈদুল আযহায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে মসলার দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজামান।
আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। রাজশাহীর একটি তারকা হোটেলের কনফারেন্স রুমে শনিবার সকালে ‘সিটিজেন ওয়ার্কশপবিষয়ক’ এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, ‘মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা তিন মাস আগ থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলা আমদানি করেছেন। সেটি এখন বাজারে মজুদ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন ইচ্ছে করলেই এলসির অজুহাতে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় ইভ্যালির প্রসঙ্গে ভোক্তার ডিজি সফিকুজামান বলেন, ‘ইভ্যালির মালিক ২৭ মাস কারাগারে ছিলেন, কিন্তু কারাগারে আটকে রাখলে টাকা পাওয়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি ইভ্যালি ব্যবসা শুরু করার পর আমরা তাদের শোকজ করেছি। তারপর কিছু শর্তসাপক্ষে আলোচনার মাধ্যমেই টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মূলত যারা নিয়ম মেনে ভোক্তাদের স্বার্থে ব্যবসা পরিচালনা করবে আমরা তাদের পাশে থাকবো। ভোক্তার অধিকার রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’