বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় আর চীন প্রথম, গত দশক পর্যন্ত এমনই ছিল প্রচলিত তুলনা। তবে এ বছর অন্তত ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধিতে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর এতে পোশাক রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্প মালিকদেরও বড় অবদান রয়েছে বলে মনে করেন বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। যুদ্ধ থেমে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আশার কথা শুনিয়েছেন মোহাম্মদ আলী খোকন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
বস্ত্রশিল্প খাতের অবস্থা এখন কেমন? দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কতটা অবদান রাখছে এই খাত?
আমরা বস্ত্র খাতের ব্যাকওয়ার্ড শিল্পের (পশ্চাৎ-সংযোগ শিল্প) সবচেয়ে বড় সংগঠন। আমাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে রপ্তানিতে আমাদের জোগান ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের বস্ত্রের যে জোগান, সেটি আমরাই দিয়ে থাকি। আমরা বছরে দেশে সাত বিলিয়ন মিটার কাপড় জোগান দিই। যার অনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে আমাদের বছরের টার্নওভার প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার। আমাদের যে বিনিয়োগ ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, এটি ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট। এর সঙ্গে যদি আমরা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বিনিয়োগ যোগ করি, তাহলে মোট বিনিয়োগ হবে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আমাদের এই খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। তাই সামগ্রিক বিচারে আমাদের বস্ত্র খাতের অবদানকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা যেটি, সেটি হচ্ছে আমাদের এই ব্যাকওয়ার্ড শিল্প না থাকলে আজকে পোশাকশিল্পের অবদান কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। এই যে গত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে, তাতে কিন্তু আমাদেরও বড় অবদান আছে। আমরা তুলা আনি, সেখান থেকে সুতা বানাই, সুতা থেকে কাপড়, কাপড় থেকে ডাইং ফিনিশিং করছি। সেখানে প্রিন্টিং হচ্ছে, চেক হচ্ছে, ডেনিম হচ্ছে, টুইল হচ্ছে, গ্যাবার্ডিন হচ্ছে, নিট ফ্যাব্রিক হচ্ছে নিট খাতকে ৯০ শতাংশ জোগানদাতা আমরা। ওভেন খাতে আমাদের জোগান হচ্ছে রপ্তানির ৪০ শতাংশ। আর ডেনিমের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জোগানদাতা আমরা। বাংলাদেশে জ্বালানির বড় গ্রাহক আমরা। ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা ব্যবহার করছি। করোনাভাইরাসের সময় আমরা বিপদে পড়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ উদ্যোগে আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। সেই সময়ের উদ্যোগের কারণে পরবর্তী সময়ে আমরা ভালো করতে পেরেছি। আসলে এই শিল্পটি ভালোর দিকে ছিল। নতুন বিনিয়োগ আসছিল; কর্মসংস্থান বাড়ছিল।
আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। কিছুদিন সংবাদ সম্মেলন করে বস্ত্র খাতের সংকটের কথা বলেছিলেন। এখন কেমন চলছে?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপে যখন যুদ্ধ লাগল। গত মার্চ থেকে আমাদের অবস্থা খারাপ হতে থাকল। নামতে নামতে গত অক্টোবর আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেল; এখন যে ভালো সেটি বলব না। গত নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি যে আয় হয়েছে, সেটি অবশ্যই ভালো অর্জন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই যে অর্জন হয়েছে তা হচ্ছে আগে আমাদের অনেকগুলো অর্ডার ছিল, সেটির কারণে হয়েছে। সামনে আমাদের অর্ডারগুলো আছে, কিন্তু খুব স্লো (ধীর) ডেলিভারি। সেগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের সে রকম চাপ নেই যে মালটি দিতে হবে। অন্য সময় আমাদের ওপর চাপ থাকত যে মাল দিতে হবে। এমন অবস্থা মাঝে মাঝে হতো যে প্রাইজ যেটিই হোক, আমাকে মাল দিতে হবে।
সারা বিশ্বে এখন মন্দার ভাব। সেটির প্রভাব কিন্তু আমাদের দিকে আসছে। কিন্তু একটি কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো আছি; অনেক বড় বড় দেশের চেয়ে ভালো আছি। এই তো আমি ইউরোপের কয়েকটি দেশ ঘুরে এলাম, নিজ চোখে দেখে এলাম, তাদের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। বাংলাদেশে আমরা যতটা খারাপ করি, তার তুলনায় প্রচার-প্রচারণা বেশি। যেটি ইউরোপে হয় না। ইউরোপে অনেকের ঘরে খাওয়া নেই, কিন্তু আপনি এটির খবর দেখবেন না। কিন্তু বাংলাদেশে যদি ৯০টি ভালো সেবা পাওয়া যায়, আর ১০টি খারাপ সেবা পাওয়া যায়। আমরা ১০টির খবর পাই। আর ৯০টির খবর পাওয়া যায় না। আমি ৫টি কিস্তি আগে দিয়েছি এই খবর হয় না। কিন্তু বিসমিল্লাহ গ্রুপ টাকা নিয়ে গিয়েছে সেই খবর হয়। আমি গণমাধ্যমের সবাইকে বিনীত অনুরোধ করব যে আপনারা দেশকে নিয়ে পজিটিভ নিউজ করেন। বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে; আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সমালোচনার পাশাপাশি দেশের ভালো খবরও প্রচার করুন দয়া করে।
একটি কথা আমি বারবার বলে থাকি, কোনো দলের রক্ষণভাগ যত শক্তিশালী, তাকে গোল দেয়া তত কঠিন। আমাদের পোশাকশিল্পের রক্ষণভাগ শক্তিশালী, অর্থাৎ আমরা বস্ত্র খাত হলাম পোশাকশিল্পের রক্ষণভাগ। আমরা শক্তিশালী বলেই পোশাক খাতের অনেক অর্জন হচ্ছে। গ্যাস ও বিদুৎ-সংকটের কারণে আমরা সরকারকে বলেছিলাম যে দরকার হলে আমরা একটু টাকা বাড়িয়ে দিই, আপনারা আমাদের বিদ্যুৎ দেন। আমরা বলেছিলাম আমরা যদি ১ লাখ ডলারের জ্বালানি পাই, তাহলে কিন্তু আমরা ২৪ লাখ ডলার আর্ন করতে পারি। এই পরিসংখ্যান যখন আমরা তুলে ধরেছিলাম; বলেছিলাম যে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। আমরা যদি একসঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করি, তাহলে কিন্তু সংকট কাটিয় ওঠা যায়। আমরা যদি সংকটের সময় দোষারোপ করি, তাহলে কিন্তু জাতি সংকট থেকে উদ্ধার হতে পারব না।
এখন কি গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কেটেছে? আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি?
উন্নতি হয়েছে ঠিক; কিন্তু সংকট কিন্তু পুরোপুরি কাটেনি। আমরা এটি বুঝি যে সরকার ইচ্ছে করে ব্যয় সংকোচন করেনি। এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে সরকারকে সহায়তা করা উচিত বলে আমি মনে করি। বিশ্বের সব দেশ সংকটকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার কারণে কিন্তু সংকট কাটিয়ে উঠেছে। জাতীয় সংকটে সব দল এক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের সংকটটিকে বিশ্বের দরবারে আরও বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ফায়দার জন্য। দেশকে কিন্তু আমরা ছোট করছি। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বলব, দেশকে ছোট করে কোনো লাভ নেই। সমস্যা থাকবে, তার সমাধান থাকবে। জ্বালানির সমস্যা সারা বিশ্বের সমস্যা। সুতরাং আমরা মনে করি, সবাই মিলে কাজ করলে এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। আগে আমাদের কোনো জিনিস আনতে যদি ১ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো, এখন ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। আমাদের টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। বাংলাদেশে যে উন্নয়নকাজ হয়েছে, গত ১০ বছরে এগুলোকে আপনি ফেলে দেবেন কীভাবে।
এখন একজন রিকশাওয়ালাও রিজার্ভ (বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা মজুত) নিয়ে কথা বলে। এটি আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আমরা জাতি হিসেবে লজ্জিত। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা করার জন্য রাষ্ট্রের অনেক লোকজন আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে বলে আমি মনে করি। তখন বিশ্ব অর্থনীতির বাজার কিন্তু বিশেষভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। এই বাজারটিকে ধরার প্রস্তুতি এখন আমরা নিচ্ছি। আগামী দিনে বিশ্ব রাজনীতি ঠান্ডা হয়ে এলে অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে তখন দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। এখন বিশ্ব অর্থনীতির যে খারাপ অবস্থা, সেটি একসময় সহনীয় হয়ে যাবে। আর সহনীয় হয়ে গেলে আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। সবাই মিলে সেই প্রস্তুতিই নিতে হবে। যুদ্ধ থেমে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে কি আপনারা উদ্বিগ্ন?
আমি যখন ব্যবসায় আসি ’৮৭ সালে, তখন উত্তাল আন্দোলন এরশাদবিরোধী। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে-পিঠে লিখে শহীদ হলেন নূর হোসেন। ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান, এর পরও দেশে আন্দোলন হয়েছে- এগুলো দেখতে দেখতে আমরা ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই বাধাবিপত্তি-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়েই আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবস্যা করছি। উৎপাদন করছি, কর্মসংস্থান করছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
৩৫ বছরের ব্যবসায়ী হিসেবে আমি মনে করি, এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা ব্যবসায়ীদের থাকা উচিত। প্রত্যেক জিনিসের সিজন থাকে। পিঠা উৎসব শীতকালে হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো একটি ফেস্টিভ ব্যাপার। এতদিন কিছু ছিল না, এখন দেখা যাচ্ছে সমানতালে দুটো দলই করছে। দুই দলেরই প্রচুর লোকজন হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এটিকে এনজয় করছে ফেস্টিভ হিসেবে। সুতরাং আমি আতঙ্কিত নই। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে খারাপ সময় আমরা দেখেছি। সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো আছে। বাংলাদেশে অর্থনীতি বলেন, অর্থনীতির সাইজ বলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের অবস্থান ৪১তম। আমরা যদি ধরে নিই আগামী পাঁচ বছরে আমাদের অর্থনীতির সাইজ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।
এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। আজ থেকে ২০ বছর আগে আমাদের অর্থনীতি কত ছিল। কয়েক মিলিয়ন ডলারের ছিল। অর্থনীতি আস্তে আস্তে ট্রিলিয়ন ডলারের দিতে এগোচ্ছে। প্রাইভেট ব্যাংকগুলো নিয়ে অনেক লেখা হচ্ছে। কিন্তু এই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর যে অবদান আছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, বাংলাদেশের শিল্পে, আমাদের বস্ত্র সেক্টরে যে বিনিয়োগ আছে তার বেশির ভাগ টাকা বেসরকারি ব্যাংক থেকে আসছে। সুতরাং দু-একটি ব্যাংকের খারাপ দিক নিয়ে আপনি সারা ব্যাংকিং খাতের ওপর ঢালাও কথা বলতে পারেন না। সংকট থাকবে; এর মোকাবিলা থাকবে। এই মুহূর্তে আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্র খাত কতটা অবদান রাখছে?
অর্থনীতিতে আমাদের অবদান যদি হিসাব করেন, এটাকে কোনোভাবে খাটো করে দেখা যায় না। বাংলাদেশের ৫২ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে সরাসরি ১ কোটি ১০ লাখ লোক কাজ করে এখানে। ৫২ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতি, এটা হলো রপ্তানি, এতে স্থানীয়ভাবে আমাদের সেক্টরের ৮ বিলিয়ন ডলার, অন্যান্য সেক্টর মিলিয়ে ডোমেস্টিক প্রোডাক্টকে ধরলে আরও ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১৩ বিলিয়ন ডলার হবে। সব মিলিয়ে ৬৫ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার আমাদের ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট। আমাদের টোটাল ইকোনমিতে আমাদের টোটাল ইন্ডাস্ট্রির অবদান হলো ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এটা ২০২২ সালের তথ্য হিসাব করে আমি বললাম। তাহলে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির মধ্যে যদি ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ অবদান হয়, তাহলে ভেবে দেখেন কত বড় অবদান আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির।
আমাদের কৃষির অবদান ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সার্ভিস সেক্টর থেকে ৫১ শতাংশ পাচ্ছি। শিল্প থেকে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ অবদান আসছে তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ টেক্সটাইল থেকে আসছে। আমরা কাজ করছি, সরকারও সহায়তা করছে। আগামীতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার হবে। করোনা শেষ হয়ে গেছে। এখন চিন্তা করার সময়ে হয়েছে যে, কোন বাজারটিকে আমরা আগে দখলে নেব।
বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগ কেমন আসছে? কর্মসংস্থান কেমন বাড়ছে?
আমাদের সেক্টরে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ এসেছে। এগুলোর কোনোটাই বন্ধ হয়নি। আরও হওয়ার কথা ছিল, যুদ্ধের কারণে স্থগিত আছে। আমি বলব, ব্যাকওয়ার্ড শিল্পে আমাদের যে অবস্থানটা আছে, বর্তমানে আমাদের যে টেকনোলজি, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশনারি মেশিনারিজ আমাদের আছে। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, পৃথিবীর এমন কোনো টেকনোলজি নেই যে আমাদের নেই। আমরা প্রস্তুত। বলব যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ, কোনোটাতে ৭০ ও কোনোটাতে ৪৫ শতাংশ প্রস্তুত। আপনারা বলতে পারেন ৪৫ শতাংশ কেন ৭০ শতাংশ হলো না।
আমাদের জ্বালানি সেক্টরে যেটা হলো কি, আপনি জানেন যে ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কানেকশনটা খুবই মন্থর গতিতে যাচ্ছে, যেটা গ্যাসের যতটুকু চাহিদা সেই তুলনায় আমাদের কূপগুলো খনন হয়নি। আমাদের নিজস্ব যে গ্যাস বা সম্পদ সেটা ধীরে ধীরে কমে আসছে এবং যার কারণে আমাদের ওভেন শিল্পগুলোতে প্রচুর গ্যাসের দরকার হয়। এত দিন যদি আমাদের সেই পরিমাণ ইউটিলিটি থাকত, তাহলে হয়তো সেটা হয়ে যেত। যেহেতু এটা প্রাকৃতিক সম্পদ, এই সম্পদের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, মেয়াদ থাকে, তারপর আস্তে আস্তে নিম্নমুখী হতে থাকে। সুতরাং যেটা ২৭০০ এমএমসি গ্যাস উঠত চার-পাঁচ বছর আগে, সেটা ২৩০০ এমএমসিতে নেমে এসেছে। এটাকে পূরণ করার জন্য আমরা এলএনজি কিনছি। আমরা লং টার্মে ৫০০ এমএমসিএফটি কিনছি প্রতিদিন। আমাদের শর্ট টার্মে সেখান ২০০ আমরা কিনছি। কখনো আসছে, কখনো আসতে পারছে না। যুদ্ধের কারণে বিগত দুই-তিন মাসে আসতে পারছে না। প্রাইস অনেকটা হাই হয়ে গেছে। এসব কারণে আমাদের ওভেন শিল্পগুলো আমরা সেভাবে আগাতে পারিনি। কিন্তু আমাদের যে ইয়ার্ন বলি, ইয়ার্নে আমরা ৯০ শতাংশ সফল, ম্যান-মেড ফাইবারে আরও ৫ শতাংশ এগিয়ে যাব। ২০২৩ সালে সম্ভবত আমরা ৯৫ শতাংশ অর্জন করব।
ডেনিমে আমরা প্রায় পুরোটাই সফল হয়েছি। ওভেন-নিটে তো আমাদের পুরো সাপ্লাই ঠিক আছে। আমরা আগামীতে চেষ্টা করব, আমরা দেখছি সরকার অনেক চেষ্টা করছে যে, নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করা যায় কিনা। আসলে কি, আমদানিনির্ভর জ্বালানি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি সাসস্টেইনেবল (টেকসই) হওয়া সম্ভব নয়।
আমাদের নিজস্ব যে গ্যাসগুলো আছে, আগামী পাঁচ বছরে যদি আমাদের পাইপলাইনে যুক্ত হয়, আমি জানি সরকার কাজ করছে, বিভিন্ন জায়গায় কূপ খুঁজছে, সংস্কার করছে, ভোলায় দেখে আসলাম প্রতিদিন ১ থেকে ১০০ অতিরিক্ত গ্যাস থাকে সেটা জাতীয় গ্রিডে যোগ করার জন্য চেষ্টা করছে। সেটাকে লিক্যুইড ফর্মে আনার জন্য পাইপলাইনে। এভাবে দেখা গেছে, সিলেটের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে নতুন আরেকটা কূপ পাওয়া গেছে। আমরা যদি নিজস্ব রিসোর্সগুলো ব্যবহার করতে পারি, আবার যদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে গ্যাসনির্ভর পাওয়ার প্ল্যান্ট যদি কমে আসে, সেই বিদ্যুৎটা যদি শিল্পে সাপ্লাই দেয়া যায়, তাহলে আমি মনে করি যে অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর বর্তমানে অর্থনীতিতে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ যে শিল্পের অবদান তা ৪০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। আমরা যদি গ্যাসকে রিঅ্যারেঞ্জমেন্ট করতে পারি, আমরা যদি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কয়লাভিত্তিক ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে পারি এবং এটা যদি শিল্পে ব্যবহার করতে পারি, অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
আমদানি কমছে। এটা একটা স্বস্তির খবর। তবে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি বেশ কমে গেছে। এতে কি দেশে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না?
এখাতে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ক্যাপিটাল মেশিনারি কিন্তু গ্রোসারি জিনিস নয় যে প্রতিদিন আমদানি করা হয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায়, দুই বছরে একবার আনতে হয়। আপগ্রেশনের কারণে বা অন্য কারণে আমদানি করতে হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারি (মূলধনি যন্ত্রপাতি) আমদানি কমে গেছে এটা আশঙ্কার কিছু নেই। শিল্পের কাঁচামাল (র-ম্যাটেরিয়াল) আমদানি কমে গেলে আশঙ্কার কারণ আছে। ক্যাপিটাল মেশিনারি না এলে উৎপাদন হবে না, র-ম্যাটেরিয়াল আসবে না, টাকাও দরকার নাই। কিন্তু আমার মেশিন আছে, কিন্তু র-ম্যাটারিয়ালের কারণে মেশিন বন্ধ আছে এটা আশঙ্কার বিষয়। কিন্তু মেশিনারি আমদানির হ্রাসে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
সহায়ক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য আপনার প্রত্যাশা কী?
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা ব্যবসায়ীরা জড়াতে চাই না। বিরোধী দল হোক বা সরকারি দল হোক, দেশকে নিয়ে প্রপাগান্ডা (গুজব) ছড়ানো থেকে প্রথমে আমাদের বিরত থাকতে হবে। পৃথিবীর কোনো জাতি এটা করে না। দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে, এর সুফল কিন্তু আমরা নাগরিক হিসেবে সবাই পাব।
জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব যাদের জন্য আজকে মুক্ত স্বদেশ তাদের লাল সালাম। দেশটা স্বাধীন না হলে আমরা কয়টা বাঙালি শিল্পের মালিক হতাম। সুতরাং আমি বলব, জাতি হিসেবে ’৭১ সালে একত্রিতভাবে, সম্মিলিত শক্তি না হলে আমরা কিন্তু পাকিস্তানকে পরাজিত করতে পারতাম না। সুতরাং প্রত্যেকটা সংকটে আমাদের এক হতে হবে। শুধু ব্যক্তিস্বার্থে কাজ-ক্ষমতা দেখলে হবে না। ’৭১ সালে যেমন জাতীয় ঐক্য হয়েছিল। আমি মনে করি অর্থনীতি সংকটে ঐক্য হওয়া উচিত। প্রপাগান্ডা ছড়ানো ঠিক নয়।
এ দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যে দেশ নিজের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু বানাতে পারে, বিভিন্ন ধরনের টানেল করতে পারে- সেই জাতিকে কখনো আপনি খারাপ বলতে পারেন না। আমি বলছি, ১০টা ব্যাংকের ক্লায়েন্ট খারাপ করছে, সেটা যদি ৩০টা টিভি চ্যানেল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচার করে, তাহলে ৯০টা ক্লায়েন্ট যে ভালো করছে তাদের আমরা কেউ চিনি না। আমরা খারাপকে চিনি, ভালোকে চিনি না। আমি মনে করি, আমাদের ঐক্য থাকতে হবে। জাতীয় অর্থনীতি ও দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশটা আমার, আপনার দেশ। দেশর সুনাম নষ্ট করা যাবে না। জাতি হিসেবে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
দেশের বাজারে সোনার দামে অস্থিরতার মধ্যেই নতুন সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তারা এবার সোনার অলংকারে ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে সোনার অলংকার পরিবর্তনে ১০ শতাংশ এবং ক্রেতার কাছ থেকে অলংকার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বাদ দেওয়ার নিয়ম করেছে বাজুস।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাজুস। এতে বলা হয়, সম্প্রতি জুয়েলার্স সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সোনার অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতার কাছ থেকে ৬ শতাংশ হারে মজুরি নিতে পরামর্শ দিয়েছে সমিতি। এর পেছনে সমিতির ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সোনার অলংকার বিক্রিতে ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সোনার অলংকার বিক্রিতে ভারতে ১০, শ্রীলঙ্কায় ৮, চীনে ১৫, ইতালিতে ২০, হংকংয়ে ৩০, মালয়েশিয়ায় ৩৫, অস্ট্রেলিয়ায় ২০, যুক্তরাষ্ট্রে ৬ ও যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ মজুরি নেওয়া হয়।
বাজুস ২০২২ সালের আগস্টে প্রতি গ্রামে কমপক্ষে ৩০০ টাকা মজুরি নিতে সদস্যপ্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেয়। তাতে প্রতি ভরিতে মজুরি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। তবে অধিকাংশ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের ধরে রাখতে মজুরিতে ছাড় দিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়েলার্স সমিতির একজন সদস্য বলেন, ধরা যাক, বর্তমানে এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ টাকা। তাহলে ৬ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে। আর সোনা ও মজুরির ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। নতুন করে মজুরি পুনর্নির্ধারণের ফলে ব্যবসায়ে নতুন করে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোনার অলংকার পরিবর্তন বা বিক্রির ক্ষেত্রে জুয়েলার্স সমিতির নিদের্শনা হলো, পুরোনো অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে এর ওজন থেকে ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে, যা এত দিন ছিল ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া সোনার অলংকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অলংকারের ওজন থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এত দিন এই হার ছিল ৯ শতাংশ।
কয়েক মাস ধরেই দেশের বাজারে সোনার দামে অস্থিরতা চলছে। সর্বশেষ গত রোববার সোনার দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৩২ টাকা বেড়েছে। তাতে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৮২ টাকা।
চলতি বছরের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমে রেকর্ড ১.৪৮ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে এমএফএস চালু হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ মাসিক লেনদেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে- মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার সম্প্রসারণ, রমজান ও ঈদের কেনাকাটার মৌসুমে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা পাঠানোর কারণে মোবাইলে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ১৮,১৯৫ কোটি টাকা বেশি বা ১৪ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে এই মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে। সেই সময়ে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১.৩২ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া এমএফএসের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিলে, সে সময়ে লেনদেন হয়েছে ১.০৭ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে- দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহর কিংবা গ্রামে– এক মুহূর্তে দেশের যেকোনো স্থানে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা যেমন বাড়ছে, লেনদেনের পরিমাণও তেমনি বাড়ছে।
২০২৪ সালের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২২ কোটি ৪০ লাখের বেশি। এর মধ্যে শহরে গ্রাহক আছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ। এ ছাড়া গ্রামে রয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে পুরুষ ১৩ কোটি এবং নারী গ্রাহক ৯ কোটি।
এ বিষয়ে বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, মার্চে ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন, মার্চেন্ট পেমেন্ট, স্যালারি ডিসবার্সমেন্ট পূর্বের সকল সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে রোজা ও ঈদ। সাধারণত, আমাদের স্বজনরা অন্য সময় না পাঠালেও ঈদের সময়ে কিছু কিছু পরিমাণে খরচ মেটানোর জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, এই সময়ে অনেক গার্মেন্টস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্যালারি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে কেনাকাটায় ব্যাপক লেনদেন হয়েছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশেষ করে সরকারি সব ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি ও প্রণোদনা বিতরণে মোবাইল আর্থিক সেবা খাত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এ খাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়েছে, যোগ করেন তিনি।
নগদের একজন কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে নগদের সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা গ্রাহকদের চাহিদার আলোকে নতুন নতুন সেবা চালু করছি। এ ছাড়া মানুষজন এখন ব্যাংকে গিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে সহজেই এমএফএসের মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের টাকা পাঠিয়ে দিতে পারছেন। আমরা মনে করি, সামনের সময়ে এটি আরও জনপ্রিয় হবে।
এ
প্রিলে প্রায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ডিজিটাল কেনাকাটায় গ্রাহকদের বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়েছিল, ফলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেড়েছে, যোগ করেন তিনি।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্যদিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়।
এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপরে রয়েছে নগদ।
রপ্তানি নীতিমালা ২০২৪-২৭-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। একই সঙ্গে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, টিসিবির মাধ্যমে জরুরি প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি বা স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬-এর ৬৮(১) ধারার আওতায় এবং একই আইনের ৩২ ধারায় উল্লেখ করা ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণে পণ্যসামগ্রী সংগ্রহের মেয়াদ চলতি বছরের ২৬ মে শেষ হয়ে যাবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ বিষয়ে সচিব জানান, রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এটি পরে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানো হবে।
রপ্তানি নীতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি জানান, স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া, রপ্তানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক কৌশল- এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২০২৭ মেয়াদে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অনুসরণ করা বিভিন্ন ধাপ এখানে (রপ্তানি নীতি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া খাতের সম্ভাবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা যেমন- সবজি এবং হস্ত ও কারু পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতে স্পিনিং, ফেব্রিক্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, ডাইং, প্রিন্টিং অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওষুধশিল্প ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্ষ পণ্য হস্তশিল্পকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সচিব বলেন, রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা এবং শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য তালিকা হালনাগাদ ও এইচএস কোডের হেডিংসহ উল্লেখ করা হয়েছে। রপ্তানি-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি ও রপ্তানি-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি গঠন ও কার্যপরিধি সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রপ্তানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যমান রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪-এর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। এই ধারাবাহিকতায় রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে ভারতীয় একটি ট্রাকে ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে পেঁয়াজবোঝাই ভারতীয় একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। হিলি স্থলবন্দরের মেসার্স আরএসবি ট্রেডার্স এসব পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক মেসার্স আরএসবি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ সরকার বলেন, ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা গত ৪ মে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়; কিন্তু এরপরও ৪০ শতাংশ শুল্ক থাকায় পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে আমদানিকারকরা চিন্তিত ছিলেন। তবে নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে ১১ দিন পর মঙ্গলবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব পেঁয়াজ প্রতি মেট্রিক টন ৫৫০ ডলারে আমদানি করা হয়েছে। যদি আমদানি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পেঁয়াজের দাম কোরবানি ঈদে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
দেশে প্রবাসী আয়ে সুতাবাস বইছে। চলতি মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ মাসের প্রথম ১০ দিনে এসেছে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে এসেছে আট কোটি ১৩ লাখ ডলার, যা আগের তুলনায় বেশি বলে জানা গেছে।
আজ সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে প্রতি দিনে দেশে এসেছিল ৬ কোটি ৮১ লাখ ২ লাখ ডলার। আর আগের বছরের (২০২৩ সাল) মে মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৬ ডলার।
চলতি বছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সের পালে উচ্চগতির হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। গত জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে।
গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের আশেপাশে রেমিট্যান্স এসেছে। তবে এবার মে মাসের প্রথম ১০ দিনেই এসেছে সবচেয়ে বেশি।
আর বৈদেশিক আয় দেশে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭১ কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম ১০ দিনে একক ব্যাংক হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে
ন্যাশনাল ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার, ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে আট কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ছয় কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তিন কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার এসেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ নারীকর্মী তৈরির মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় আরও বেশি উদ্যোগী হবে।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে আজ সোমবার বিকেলে উইমেন্স ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এসব কথা জানান।
এ সময় সার্ক বিজনেস কাউন্সিল এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বিশেষ করে ফ্যাশন ও এসএমই সেক্টরে নারীকর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থান এবং জাতীয় বাজেটে নারীবান্ধব নীতিমালার প্রতিফলন ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হয়। বিজ্ঞপ্তি
একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব চারটি কোম্পানির শেয়ার দাম ততটাই বেড়েছে। আরও ৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৮ শতাংশের বেশি দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এ চিত্র দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের। তালিকাভুক্ত ৫৮টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৪৭টিই দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর ফলে সার্বিক শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে টানা তিন কার্যদিবসের পতন কেটে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও বিমা খাত যতটা দাপট দেখিয়েছে আর কোনো খাত এতটা দাপট দেখাতে পারেনি। বিমা খাতের ৮১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে পৌনে এক শতাংশ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। তবে এ বাজারটিতেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাত। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। মূল্যসূচক বাড়লেও সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২টির দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। এর মধ্যে বিমা কোম্পানি রয়েছে ৪টি।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানির এমন দাপটের ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৯৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৭ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংয়ের ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে নাভানা ফার্মা। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-গোল্ডেন সন, ফরইস্ট নিটিং, ই-জেনারেশন, মালেক স্পিনিং, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, লাভেলো আইসক্রিম এবং কহিনুর কেমিক্যালস।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৯৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০১টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। বিশেষত বস্ত্র ও পোশাক খাতে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বস্ত্র ও পাট খাতে বাংলাদেশে কোরিয়ান বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক রোববার সচিবালয়ে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জেডিপিসির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়ান দূতাবাসের কনসাল জেয়ং কি কিম উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকারে উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী বস্ত্র খাতে বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোরিয়ার আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদানের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে আমরা বস্ত্র ও পাট খাতে বাজারের বৈচিত্র্য বাড়ানো, পণ্য উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ইত্যাদিতে জোর দিচ্ছি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বৃদ্ধির জন্য আমরা কোরিয়ান কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত তিনটি বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন। এগুলো হলো- প্রথমত কাঁচামাল আমদানি করতে প্রচুর ট্যারিফ দিতে হয়। তার মধ্যে ৫টি পণ্য বস্ত্র ও পোশাক খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর ট্যারিফ কমাতে তিনি মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। দ্বিতীয়ত ভিসাজনিত সমস্যা। বাংলাদেশে যারা কাজ করছে তাদের খুব স্বল্প সময়ের জন্য ভিসা দেওয়া হয়। তিন মাস পরপর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করতে হয়। এ সমস্যা উত্তরণে মন্ত্রীর সহযোগিতা দরকার। তৃতীয়ত কাস্টমস ক্লিয়ারিং এ দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে রাষ্ট্রদূত মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সহজ শর্তে ঋণ পেতে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আগামী ৭ থেকে ৮ মাস যেন তারা ব্যবসা করতে পারে এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর চিঠি ইস্যু করা হবে।
মন্ত্রী আজ রোববার রাজধানীর মতিঝিলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স’-এর ৭ম সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানাসহ টাস্কফোর্সের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, যেহেতু কোরবানি সামনে, ব্যবসায়ীদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো না। এ ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল শর্টফল যাতে না হয় সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর চিঠি ইস্যু করব। যাতে আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের জন্য অর্থ সহায়তা তারা পান। আর ব্যাংকের চলমান ঋণ থাকবে ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে স্বল্পমেয়াদি ও চামড়া শিল্প খাতের সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নীতিগত সহযোগিতাসহ এসব করণীয় বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের চামড়া শিল্প খাতে সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে হবে যাতে চামড়া নষ্ট না হয়। চামড়া ব্যবসায়ী/পাইকাররা যাতে পুঁজির সমস্যায় না পড়েন ও সহজশর্তে ঋণ পান, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, কোরবানির চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো,সংরক্ষণ ও মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আগের অবস্থা আর নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছি।
সভায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং চামড়া সঠিকভাবে ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নিমিত্ত বিজ্ঞাপন/টিভিসি আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা, স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ এবং পর্যাপ্ত লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী সংরক্ষণাগার নির্মাণ, কোরবানির পশুর চামড়ার পাচার রোধ, চামড়া সংগ্রহ ও পরিবহন কার্যক্রমে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা বা বাধার সৃষ্টি না হয় এবং চামড়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ গণমাধ্যমে যেন কোনো গুজব না ছড়ায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিইটিপির পরিশোধন ক্ষমতার মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যে কোরবানির পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে যাতে কোরবানির পশুর চামড়া ঢাকার ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চামড়া শিল্পনগরীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে রেশনিং পদ্ধতিতে ইফ্লুয়েন্ট ডিসচার্জ করা, সারা দেশে পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ এতিমখানাগুলোতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করতে বিসিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় বিটিএ-এর প্রতিনিধির অনুরোধে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে চামড়া ব্যবসায়ীকে ব্যাংক কর্তৃক সহজশর্তে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
অডিট কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ করে সরকারের আর্থিক সম্পদের দক্ষ ও ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আজ শনিবার বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং দেশব্যাপী তিনদিন (১২, ১৩ ও ১৪ মে) বিশেষ সেবা কার্যক্রম উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নেন্স গঠনের জন্য বাংলাদেশ অডিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক বিষয় ও তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানের প্রচলিত কমপ্লায়েন্স ও ফিন্যান্সিয়াল অডিটের পাশাপাশি পারফরমেন্স অডিট, আইটি অডিট এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অডিট পরিচালনা করছে।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় গণতান্ত্রিক সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী ও সুসংহত কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়-এর গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি অডিট অ্যান্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের সকল কর্মচারীকে অধিকতর নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তবেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় অর্থপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘অডিট ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এনে, সময়ের সঙ্গে এর উৎকর্ষতা নিশ্চিত করে যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। নীরিক্ষক ও নীরিক্ষা অফিসের মধ্যে যোগাযোগের পুরনো ব্যবস্থা বদলে দিয়ে নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সামগ্রিকভাবে অডিট কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ করে সরকারের আর্থিক সম্পদের দক্ষ ও ফলপ্রসূ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
আলোচনা সভায় অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী ভৌত, সামাজিক ও প্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণের মাধ্যমে স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার এবং সর্বোপরি স্মার্ট অর্থনীতি গঠন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিযাত্রায় সরকারি সম্পদের সুষ্ঠু, কার্যকর ও মিতব্যয়ী ব্যবহার হচ্ছে কি না তার নিশ্চয়তা প্রদানে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয় স্টেট অডিটর হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি নূরুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে বিনয়, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণকে সেবাদান করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। গুণগত মানসম্পন্ন হিসাব ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়নের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা তথা সুশানের পথ সুগম করার জন্য বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও তা বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১২ থেকে ১৪ মে তিন দিনব্যাপী বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বিশেষ সেবা কার্যক্রমের আওতায় দৈনন্দিন রুটিন সেবা ছাড়াও অডিট অধিদপ্তরসমূহে অডিট বিষয়ক সেবা এবং দেশব্যাপী সকল হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে বেতন-ভাতা, পেনশন, জিপিএফ-সহ অন্যান্য বিশেষ সেবাদান করা হবে।
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাংসদ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮৪ ব্যবসায়ীকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪০ জনকে সিআইপি (রপ্তানি) এবং ৪৪ ব্যবসায়ী নেতাকে সিআইপি (ট্রেড) সম্মানে ভূষিত করা হবে। ২০২২ সালে রপ্তানিতে অবদানের জন্য তারা এই সম্মাননা পাচ্ছেন। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু দেশের খ্যাতনামা রপ্তানিকারকদের সিআইপি (রপ্তানি ও টেড) কার্ড দেন।
রপ্তানি খাতে অবদানের জন্য এক বছর মেয়াদে সিআইপি (রপ্তানি) নির্বাচন করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে নির্বাচিত সিআইপিরা পরবর্তী বছরের সিআইপি (রপ্তানি) ঘোষণার আগ পর্যন্ত সিআইপি (রপ্তানি) মর্যাদায় ভূষিত থাকবেন। সিআইপি (রপ্তানি) হিসেবে নির্বাচিত ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাস ও গাড়ির স্টিকারপ্রাপ্তি, জাতীয় অনুষ্ঠান ও মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ, ব্যবসা সংক্রান্ত ভ্রমণে বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার, ব্যবসায়িক কাজে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন প্রাপ্তি, নির্বাচিত সিআইপি তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন প্রাপ্তির অগ্রাধিকার এবং বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহারের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সরকারিভাবে প্রদত্ত সিআইপি কার্ডধারী বিদেশি ক্রেতার কাছে আস্থা ও সুনামের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে পারেন, যা তার ব্যবসায়িক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করার পাশাপাশি দেশের সার্বিক রপ্তানি প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
পণ্য বা সেবার খাতওয়ারি মনোনীত সিআইপিদের (রপ্তানি ও ট্রেড) মধ্যে কাঁচাপাট ২, পাটজাত পণ্য ৪, চামড়াজাত দ্রব্য ৬, হিমায়িত খাদ্য ৪, তৈরি পোশাকে (ওভেন) ১৮ জন মনোনীত হয়েছেন। এ ছাড়া কৃষিজাত দ্রব্য ৫, অ্যাগ্রোপ্রসেসিং ৫, হালকা প্রকৌশলী পণ্য ৪, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য ৩, হস্তশিল্পজাত পণ্য ৪, স্পেশালাইজড বা হোমটেক্সটাইল পণ্য ৪, তৈরি পোশাক (নিটওয়্যার) ৩৪, সিরামিক পণ্য ১, প্লাস্টিকজাত পণ্য ৪, টেক্সটাইল (ফেব্রিক্স) ৭, কম্পিউটার সফটওয়্যার ২, আসবাব ১, বিবিধ পণ্য ২৭ ও ইপিজেডভুক্ত সি ক্যাটাগরিতে ৫ জন সিআইপি হয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে সিআইপি (ট্রেড ক্যাটাগরি) মনোনীত হয়েছেন ৪৪ জন। সিআইপি কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
রেমিট্যান্সপ্রাপ্তির দিক থেকে ভারতের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। তালিকায় বাংলাদেশ অষ্টম ও পাকিস্তান ষষ্ঠ। রেমিট্যান্স প্রবাহে দক্ষিণ এশিয়ার এই তিনটি দেশ আছে শীর্ষ দশে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়ার দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ দেশ ছিল ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন ও ফ্রান্স। আলোচ্য বছরে ১১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে ভারত। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১০০ বিলিয়ন ও ১১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১১.২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়ে বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে ভারত। প্রথম দেশ হিসেবে ১০০ বিলিয়ন ও ১১১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে দেশটি।
২০২২ সালে ৬১.১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। ২০২১ সালেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দেশটি। রেমিট্যান্স গ্রহণে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছিল চীন। কিন্তু ২০২১ সালে চীনকে পেছনে ঠেলে দিয়ে দুইয়ে উঠে আসে মেক্সিকো।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০১০, ২০১৫ ও ২০২০ সালে যথাক্রমে ৫৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার, ৬৮.৯১ বিলিয়ন ডলার ও ৮৩.১৫ বিলিয়ন ডলার পেয়ে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে প্রথম অবস্থানে ছিল ভারত। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স গ্রহণে প্রথম ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে দেশটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যায়। তাদের সুবাদে এ অঞ্চল বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অংশ পেয়ে থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় রয়েছে।
২০২২ সালে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও অষ্টম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এ বছর পাকিস্তান প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ ২১.৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এর আগে ২০২০ সালেও বাংলাদেশ ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়ে এ তালিকায় একই অবস্থানে ছিল।
আইওএমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ১০.৮৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৫ সালে ১৫.৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল। সেই হিসাবে ১২ বছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১০.৬৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালে রেমিট্যান্স গ্রহণে তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীন ৫১ বিলিয়ন ডলার, চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফিলিপাইন ৩৮.০৫ বিলিয়ন ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ফ্রান্স ৩০.০৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা পাকিস্তান ২৯.৮৭ বিলিয়ন ডলার, সপ্তম অবস্থানে মিসর ২৮.৩৩ বিলিয়ন ডলার, অষ্টম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ২১.৫ বিলিয়ন ডলার, নবম অবস্থানে থাকা নাইজেরিয়া ২০.১৩ বিলিয়ন ডলার এবং দশম অবস্থানে থাকা জার্মানি ১৯.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
অন্যদিকে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর দেশটি ৭৯.১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশে। রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব (৩৯.৩৫ বিলিয়ন ডলার), তৃতীয় অবস্থানে সুইজারল্যান্ড (৩১.৯১ বিলিয়ন ডলার), চতুর্থ অবস্থানে জার্মানি (২৫.৬০ বিলিয়ন ডলার) ও পঞ্চম অবস্থানে আছে চীন (১৮.২৬ বিলিয়ন ডলার)।
রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে অষ্টম অবস্থানে থাকলেও অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ দেশ হচ্ছে ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়া।
আইওএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিট্যান্স বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বহু মানুষের লাইফলাইন হলেও এসব দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী কর্মীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন, আর্থিক শোষণের শিকার হন, অভিবাসন খরচের কারণে অতিরিক্ত আর্থিক দেনায় ডুবে যান। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তারা ‘জেনোফোবিয়া’রও (বিদেশিদের প্রতি ঘৃণার মনোভাব) শিকার হন।
আইওএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, উপসাগরীয় দেশগুলো অভিবাসী কর্মীদের বড় গন্তব্য। গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশই অভিবাসী।
অধিকাংশ অভিবাসীই- যাদের বড় একটি অংশ বাংলাদেশ, ভারত, মিসর, ইথিওপিয়া ও কেনিয়া থেকে যান-নির্মাণ, হসপিটালিটি, নিরাপত্তা, গৃহকর্ম ও রিটেইল খাতে কাজ করেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানোতেও বড় অবদান রাখছে এশিয়ার দেশগুলো। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানোর তালিকায় শীর্ষে আছে চীন, দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। ২০২১ সালে চীন ও ভারত থেকে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৫ লাখ ৮ হাজার শিক্ষার্থী বাইরের দেশে পড়তে গেছেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গন্তব্য হিসবে পছন্দের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র (৮ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি)। এরপরই আছে যুক্তরাজ্য (প্রায় ৬ লাখ ১ হাজার), অস্ট্রেলিয়া (প্রায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার), জার্মানি (৩ লাখ ৭৬ হজারের বেশি) ও কানাডা (প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার)।
আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ দিন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় বাজেট উত্থাপন করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট পেশের দিনক্ষণ ঠিক করে ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।’
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট হবে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার, যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট। এবারের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।