উৎস নির্বিশেষে ব্রয়লার মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর অবশিষ্ট অংশের উপস্থিতি সর্বোচ্চ সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক কম। ফলে ব্রয়লার মুরগির মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনে কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন (ছয় মাস) পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব নাহিদা রশিদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কি না এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে, ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণ ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়।
কৃষিমন্ত্রী জানান, গবেষণায় বাংলাদেশের পাঁচটি জেলা শহরের (ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং বরিশাল) ব্রয়লার খামার (ছোট, মাঝারি এবং বড়) এবং বাজার থেকে ব্রয়লারের মাংস, হাড় ও কম্পোজিট এবং ব্রয়লার খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ঢাকা জেলার তিনটি সুপার শপ থেকে ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত প্রায় ১ হাজার ২০০টি ব্রয়লার মুরগি এবং ৩০টি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য থেকে ৩১৫টি নমুনা প্রস্তুত করে বহুল ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং ৩টি ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণার নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১০টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে সাতটি অ্যান্টিবায়োটিক (এনরোফ্লক্সাসিন, সিপরোফ্লক্সাসিন, নিওমাইসিন, টাইলোসিন, কলিস্টিন, এমোক্সাসিলিন এবং সালফাডায়াজিন) পরীক্ষণের জন্য নমুনাগুলো এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের চেন্নাইয়ের এসজিএস পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। বাকি তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক (ক্লোরামফেনিকল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং ডক্সিসাইক্লিন) এবং তিনটি ভারী ধাতু (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও লেড) পরীক্ষণের জন্য নমুনাসমূহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন সাভারের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মাংসে গড়ে পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ৮ দশমিক শূন্য শতাংশ, ডক্সিসাইক্লিন ৯ দশমিক ১ শতাংশ, আর্সেনিক ৬ দশমিক ২, ক্রোমিয়াম ১৯০ দশমিক ৭ ও লেড ২৫৯ দশমিক ১ শতাংশ রয়েছে। সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার চেয়ে যথাক্রমে যা ১২ দশমিক ৫ গুণ, ১০ দশমিক ৯ গুণ, ৬ দশমিক ৫ গুণ, ৫ দশমিক ২ গুণ ও ২৩ দশমিক ১ গুণ নিচে রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির হাড়ে গড়ে ৫৩ দশমিক ৭ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন ২৭ দশমিক শূন্য, আর্সেনিক ৭ দশমিক ২, ক্রোমিয়াম ৪৩৯ দশমিক ৯ ও লেড ৪৬৪ দশমিক ৬ রয়েছে। সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে যা যথাক্রমে ১ দশমিক ৮ গুণ, ৩ দশমিক ৭ গুণ, ৫ দশমিক ৫ গুণ, ২ দশমিক ২৭ গুণ ও ১২ দশমিক ৯ গুণ নিচে রয়েছে।
কম্পোজিটে গড়ে পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ১৪ দশমিক ৫, ডক্সিসাইক্লিন ১৭ দশমিক ২, আর্সেনিক ১০ দশমিক ৯, ক্রোমিয়াম ২৩৯ দশমিক ২ ও ক্রোমিয়াম ৩০৭ দশমিক ৬ পিপিবি। এটি সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮ গুণ, ৫ দশমিক ৮ গুণ, ৩ দশমিক ৬ গুণ, ৪ দশমিক ১৮ গুণ ও ১৯ দশমিক ৫ গুণ নিচে।
ব্রয়লার মুরগির খাদ্যে গড়ে শূন্য দশমিক ৮ পিপিবি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন ১৯ দশমিক ২, টাইলোসিন ৪ দশমিক ১৯, আর্সেনিক ৭ দশমিক ৬, ক্রোমিয়াম ২ হাজার ১৫৩ দশমিক ৩ এবং লেড রয়েছে ৪৭৮ দশমিক ৬ পিপিবি। যা আর্সেনিকের ক্ষেত্রে ১৮৪ দশমিক ২ গুণ, ক্রোমিয়াম ৯ দশমিক ২ গুণ ও লেডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবশিষ্ট সীমার চেয়ে ২০ দশমিক ৮ গুণ নিচে রয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী আরও জানান, মুরগির খাবারে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করার বিষয়টিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দেশে বর্তমানে হাঁস বা মুরগির খাবারের চাহিদার পরিমাণ ৯৫ লাখ টন, গবাদিপশুর ১৪৫ লাখ টন, অথচ মোট ট্যানারির বর্জ্য হয় মাত্র ৮৫ হাজার টন।
সারা বিশ্বে মুরগি থেকে আমিষের ঘাটতি পূরণ করা হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, বিশ্বে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিত উন্নত জাতের মুরগির মাংস আমিষসমৃদ্ধ ও সস্তা। অনেক উচ্চবিত্তরা মনে করে, এটা গরীবের মাংস। তথাকথিত অনেক অভিজাত শ্রেণি অহংকার করে বলে, আমরা ফার্মের মুরগি খাই না। অথচ উন্নত বিশ্বের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সবচেয়ে বেশি আমিষ গ্রহণ করে মুরগির মাংস থেকে।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। আর এর প্রভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। তবে তৈরি পোশাকশিল্পের বাজার এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই কেউ বাংলাদেশের ওপর চোখ রাঙালেই হবে না বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আজ সোমবার তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমলেও, শুধু ওই বাজারের ওপরই দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যটি নির্ভরশীল নয়। যুদ্ধের কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে পড়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। কাজেই, যত দ্রুত সম্ভব এগুলোর সমাধান করতে হবে।’ পোশাক খাতকে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবেই নয়, সমাজ পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো ও কাস্টমস নিয়ে বড় অভিযোগ রয়েছে। এ সমস্যা বড় সমস্যা। আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে তার মন্ত্রণালয় বিজিএমইকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’
বৈঠকে বিজিএমইএর নতুন সভাপতি এস এম মান্নান কচি তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি এনবিআর ও কাস্টমসের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগও করেন।
কচি বলেন, ‘বৈশ্বিক যুদ্ধ ও তেলের দাম বাড়ার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্টসগুলোর ওপর চাপ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি করে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে বাংলাদেশে, ২১৫টি। করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কর্মরত। তবে যুদ্ধ ও তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। বৈঠকে উঠে আসা সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রতিরোধে প্রযুক্তি জ্ঞান বিনিময়, বজ্রপাত নিরোধ যন্ত্র স্থাপন, অবকাঠামো নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা করতে চায় ফ্রান্স।
সোমবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের সঙ্গে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাৎক্ষণিক এক অনানুষ্ঠানিক বেঠকে রাষ্ট্রদূত এ আগ্রহ ব্যক্ত করেন। খবর বাসসের
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, বজ্র নিরোধক যন্ত্র স্থাপন করাসহ এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বর্তমান সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে কাজ করছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, এ বিষয়ে জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে।
মহিববুর রহমান জানান, বজ্র নিরোধক প্রযুক্তি সুলভ ও ব্যাপকভিত্তিক করতে গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে প্রযুক্তি বিনিময় ও হস্তান্তরের ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে এবার চালু হলো আন্তজেলা বাসের গেটলক সিস্টেম। যেসব বাস গেটলক সিস্টেম না মেনে যত্রতত্র যাত্রী তুলবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবে ট্রাফিক পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এই সিস্টেমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত আন্তজেলা বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে পারবে না। ফলে যানজট অনেকটাই নিরসন হবে। ভবিষ্যতে এই সিস্টেম মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগ বলছে, গেটলক চেকিং সিস্টেমে টার্মিনাল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া আর কোথাও দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে কাকলী, কুর্মিটোলা, খিলক্ষেত ও সর্বশেষ আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে চলে যাবে। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহাখালী থেকে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের তালিকা, চালকের নাম, গাড়ির নম্বরসহ একটি প্রস্থানপত্র দেওয়া হচ্ছে। বাস কাকলীতে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, তালিকা অনুযায়ী যাত্রী আছে কি না। বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করছে ট্রাফিক পুলিশ। পাশাপাশি পরিবহন-সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টির দেখভাল করছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলেন, আমরা লক্ষ করেছি মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সব বাস বনানী পর্যন্ত যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট তৈরি হয়। এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। সম্প্রতি আমরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান ও গুলশান ডিভিশনের ট্রাফিকের উপ-কমিশনার আব্দুল মোমেনসহ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করি। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো গাড়ি বনানী পর্যন্ত কোনো যাত্রী ওঠাবে না। এর মাধ্যমে এই এলাকায় যানজট নিরসন হবে। মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোতে যাত্রীদের তালিকা, ড্রাইভারের নাম ও গাড়ির নম্বরসহ একটি ‘প্রস্থান পত্র’ দেওয়া হবে। পরে বনানীতে আমাদের সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেখানে দেখবেন যে যাত্রীর সংখ্যা সঠিক আছে কি না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ঢাকার যানজট শুধু মহাখালীর জন্য হয় না, একটু লক্ষ করে দেখুন মহাখালীতে প্রবেশের মুখে কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তা দখল করে কাপড়ের মার্কেট, আইসিডিডিআর’বির সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকান- এগুলোও প্রশাসনের নজরে আসতে হবে। আমরা আমাদের নিজেদের এলাকা যানজটমুক্ত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাই আন্তনগর বাসগুলো যাতে বনানী পর্যন্ত যাত্রী না নিতে পারে সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরায়ও আন্তনগর বাসগুলো ব্যাপক পরিমাণ যানজট তৈরি করে। আমরা ভবিষ্যতে উত্তরা ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।
বিভিন্ন আন্তনগর বাসের চালকরা জানান, গেটলক সিস্টেম চালু হওয়ায় তাদের সুবিধা হয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠালে অন্য যাত্রীদের কথা শুনতে হয়, রাস্তায় যানজটের কবলে পড়তে হয়, পাশাপাশি প্রশাসনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এখন বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠবে। আমাদের দেখভাল করার জন্য শ্রমিক সংগঠনের লোকজন থাকবে। গেটলক সিস্টেম চালু হওয়ায় সুফল পাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের যাত্রীরা। তারা বলছেন এই সিস্টেম চালু হওয়ায় যাত্রাপথে ভ্রমণে কোনো অসুবিধা থাকবে না।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী (এমপি) বলেছেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। অটিজম একটি বিশেষায়িত বিষয়। সমাজের সকলকে এ বিষয়ে সচেতন করতে যথাযথ প্রচারণা চালাতে হবে।
আজ সোমবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুল ‘ব্লু স্কাই’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্পিকার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের জন্য সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছেন এবং তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতিটি শিশুকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। তাদের প্রতিভা ও মেধাকে বিকশিত করার সুযোগ করে দিতে হবে। সমাজের সকলকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক সমাজ গঠনে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এ সময় তিনি অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলকে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল নির্মাণের জন্য বিমানবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান এবং ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) আবু জাফর চৌধুরীসহ বাফওয়া কেন্দ্রীয় পরিষদের সভানেত্রী তাহমিদা হান্নান।
হজ যাত্রীদের সবাই যাতে পবিত্র হজ পালন করতে পারেন সেজন্য ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়াতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলে তিনি এই আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম তাকে (প্রধানমন্ত্রী) উদ্ধৃত করে বলেন, ‘সৌদি আরবের উচিত হজ যাত্রীদের জন্য ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানো যাতে, তারা পবিত্র হজ পালন করতে পারেন।’
নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজ যাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। যে সব হজ যাত্রী এখনো হজ পালনের জন্য ভিসা পাননি তাদের ভিসা প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন জটিলতায় সৌদি আরব থেকে এখনও ভিসা পান নি ১০ হাজারের বেশি হজ যাত্রী।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে তার দেশের বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সে সব প্রকল্পের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি তাকে আশ্বস্ত করেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
ফিলিস্তিন ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের সহায়তার জন্য আরেকটি চালান প্রস্তুত করছে এবং ইতোমধ্যে তার দেশ দুইবার সহায়তা পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কয়েকটি মিত্র ছাড়া পুরো বিশ্ব ফিলিস্তিনের সঙ্গে রয়েছে।
সৌদি রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, তার দেশে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন যারা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধ পন্থায় ঢাকায় রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি গত নির্বাচন বর্জনের পর তাদের হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে এখন সেটিই প্রশ্ন।
আজ রোববার বিকালে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে যোগদানের পূর্বে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে’ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পরপর চারবার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন। বিএনপি এখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।’
গত নির্বাচন বর্জনের পর তাদের হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা অদৃশ্য শক্তির ওপর বিশ্বাস করা শুরু করেছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, তারা ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের দুয়ারে যায়, এখন তারা যে কখন তাবিজ-দোয়ার ওপর ভর করে সেটিই আমার প্রশ্ন।’
রাখাইনে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন ‘উই এনগেইজ উইথ দ্য গভর্নমেন্ট’, আমরা মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা করছি। সেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে সেটিও সঠিক। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে মিয়ানমারে সবসময়েই গোলযোগ ছিলো।’
‘গত ৭০-৮০ বছরের ইতিহাস দেখুন, মিয়ানমার কখনোই গণ্ডগোলমুক্ত ছিলো না, কিন্তু সেই কারণে মিয়ানমার থেকে যে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক, শত শত বছর ধরে সেখানে আছে, তাদের ফেরত নিয়ে না যাওয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না’ যুক্তি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষিতে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশগত সমস্যা, আইন-শৃঙ্খলাগত সমস্যা, একই সঙ্গে অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে।’
হাছান মাহমুদ জানান, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গেও নিয়মিতভাবে আমরা আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে করে নিজেদের নাগরিকদের পূর্ণ অধিকারসহ ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর কার্যত চাপ প্রয়োগ করা হয়।’
পরিতাপের সুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, মিয়ানমার সবসময় বলে তারা ফেরত নেবে, কিন্তু গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেয়নি। উপরন্তু আমাদের ওপর নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে ইতিমধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) প্রায় পাঁচশত সদস্য ও তাদের সেনাবাহিনীর সদস্য পালিয়ে আমাদের দেশে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের ফেরত পাঠিয়েছি কিন্তু নতুনভাবে আরও ১৩৮ জন এখন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তার মধ্যে সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও দু'জন মেজরও আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে চৎমকার। গত নির্বাচনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা পত্রে সে কথাই বলেছেন। এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আমাদের চেষ্টা থাকবে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার।’
গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন, ২০২১-এর খসড়ার ওপর পুনরায় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও অংশীজনদের মতামত নেওয়া শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আজ রোববার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনদের নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় মতামত নেওয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়।
সভায় তথ্যপ্রতিমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইনে শ্রম আইনের অধীনে সাংবাদিকদের প্রাপ্য সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। সংবাদমাধ্যমকর্মীরা শ্রম আইনের আওতায় যে সুবিধাগুলো পান, সে সুবিধাগুলোর শতভাগ সুরক্ষা প্রস্তাবিত আইনে আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোথাও ব্যত্যয় থাকে, সে জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রম আইনের অধীনে সংবাদমাধ্যমকর্মীরা যে সুরক্ষা পান, তার কোনো ব্যত্যয় বা ঘাটতি প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে থাকবে না।
তিনি বলেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এ জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমকর্মী আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সব অংশীজনের সহযোগিতা ও মতামতের ভিত্তিতে গণমাধ্যমকর্মী আইন সুন্দর পরিসমাপ্তির দিকে যাবে বলেও এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী। সাংবাদিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনদের গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়ার ওপর লিখিত মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ উল আলম, যুগ্ম সচিব মো. আসাদুজ্জামান, বেসরকারি টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এটকো) সহসভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ফরিদ হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওনাব) সভাপতি মোল্লাহ আমজাদ হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ প্রমুখ।
বাল্যকালেই হারিয়েছেন মাকে। ছবি না থাকায় মায়ের চেহারাও স্মৃতিতে নেই। বিশ্ব মা দিবসে মায়ের কথা স্মরণ করে তাই অঝোরে কাঁদলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আজ রোববার রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসের রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এ দিন ১১ জন গর্ভধারিণী মাকে ‘গরবিনী মা-২০২৪’ সম্মাননা প্রদান করে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গরবিনী মায়েদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন মন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। গলা থেকে স্বর যেন বের হতে চাইছিল না। চোখ মুছতে মুছতেই বক্তব্য শেষ করেন মন্ত্রী। মাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য আমি আজ থেকে ৭৫ বছর আগে মাকে হারিয়েছি। তখন আমি শিশু ছিলাম। মায়ের কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ওই সময় ছবি তুলে রাখার মতো প্রযুক্তি সহজলভ্য ছিল না। আমি ছবিতেও দেখিনি আমার মা কেমন ছিলেন। আমি আমার মায়ের চেহারা মনে করতে পারি না।’
অশ্রুসিক্ত নয়নে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মায়েদের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানদের গড়ে তোলের জন্য মায়ের যে প্রচেষ্টা সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে না দেখলেও আমার বাবা প্রতিবছর আমার মায়ের মৃত্যু দিবস পালন করতেন এবং বলতেন, তুমি জীবনে কখনো কষ্ট পাবা না। তোমার মায়ের দোয়া আছে। হয়তো এ জন্যই আমার এই দীর্ঘ জীবনে আমি ভালো থেকেছি। আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার মায়ের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মায়ের নামে হাসপাতাল করেছি। মায়ের কবরের পাশে মায়েরই জমিতে এই হাসপাতাল। ভবিষ্যতে এটার পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। আমি মনে করি, আমার প্রতিটি কাজে মায়ের দোয়া আছে।’
বর্তমান প্রজন্মের বাবা-মা ও সন্তানদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মায়ের প্রতি ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। মোবাইল আসক্তির কারণে শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। মা ও দেশকে যেন সন্তানরা ভালোবাসে। আমি শঙ্কাবোধ করি, পারিবারিক সৌজন্যবোধ কমে যাচ্ছে। একসঙ্গে সবাই বসে খাওয়ার সময় পায় না। মোবাইল দেখা, টিভি দেখা, পড়াশোনা করা সবকিছুই এখনকার সন্তানরা নিজের রুমেই থাকতে বেশি পছন্দ করে। আমাদের উচিত, চেষ্টা যেন থাকে একসঙ্গে কিছুটা হলেও সময় কাটানো।’
মায়ের ঋণ কখনও শোধ হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাবা সাপোর্ট দেয়। কিন্তু দেখাশোনা করে মা। তাই মায়ের প্রতি ভক্তি, সম্মানবোধ, দায়িত্ববোধ যেন থাকে। আমরা যেন সেটা করি এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও যেন সেটা শিখিয়ে যাই।’
গত এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৬৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৯ জন নিহত এবং ৯৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৩ ও শিশু ১০৮ জন।
আজ রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এপ্রিলে ৬৭২টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৩১৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৫৯ জন মারা যান, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৭ শতাংশ।
এপ্রিলে দুর্ঘটনায় মোট নিহতদের মধ্যে ১১৩ জন পথচারী, যা মোট নিহতের ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৬ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময়ে সাতটি নৌ-দুর্ঘটনায় নয়জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন। ৩৮টি রেল-ট্রাক দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
এপ্রিলে দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী মারা গেছেন ২৫৯ জন (৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ), বাসের যাত্রী ৩৪ জন (৫ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রাম ট্রাক আরোহী ৬৫ জন (৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-জিপ আরোহী ৪৫ জন (৬ দশমিক ৬২ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৩১ জন (১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্রা-পাওয়ারটিলার) ২২ জন (৩ দশমিক ২৪ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১০ জন (১ দশমিক ৪৭ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৩৫টি (৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৬টি (৩৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৮৭টি (১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৭৯টি (১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং ৫টি (দশমিক ৭৪ শতাংশ) অন্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৩৫টি (৩৪.৯৭ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৬টি (৩৯.৫৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৮৭টি (১২.৯৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৭৯টি (১১.৭৫ শতাংশ) শহরের সড়কে ও ৫টি (০.৭৪ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনাসমূহের ১৭৪টি (২৫.৮৯ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৬২টি (৩৯ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২০টি (১৭.৮৫ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৯৭টি (১৪.৪৩ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা ও ১৯টি (২.৮২ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভনে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। চাকরিপ্রত্যাশীদের দিল্লিতে জিম্মি করে পরে বিভিন্ন কৌশলে কিডনি বের করে নেয় চক্রটি। এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০ জন ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি কেটে নিয়েছে চক্রটি।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি মডেল থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামের একজন ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ১১ মে ধানমন্ডি ও বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরফে মোস্তফা (৩৭)-সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন।
ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চক্রটি দেশের দরিদ্র মানুষকে ভালো চাকরি দেওয়ার আশা দিয়ে ভারতে নিয়ে নানা কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদে নেওয়া হয়। পরে তাকে নানা কৌশলে কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করানো হয়। প্রথমে চক্রটি তাকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বললেও তাকে দেয় ৩ লাখ টাকা।
আজ রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলের কোনো এক তারিখে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে চা খাচ্ছিলেন এবং সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথা বলছিলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে পাশে বসা অভিযুক্ত পলাতক আসামি মাছুম নিজ থেকেই রবিনকে বলেন, ভারতে তার ব্যবসা আছে। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি রবিনকে চাকরি দিতে পারবেন।
এক পর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো। এক পর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, পরবর্তী সময়ে মাছুম ভুক্তভোগী রবিনকে বলেন, ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যান মাছুম। সেখানে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি মো. রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে আসামিরা রবিনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেন ভারতের ভিসার জন্য।
ভিসা পাওয়ার পর ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে আসামিরা রবিনের আর্থিক অনটন, সাংসারিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেন। তারা ভয়ভীতি দেখান এবং পাসপোর্ট ছাড়া দেশে ফিরে আসতে পারবেন না বলে জানান। পরে তিনি রাজি হলে দিল্লিতে এশিয়ান হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গুজরাটে নিয়ে একটি বাসায় রাখা হয়।
ডিএমপির এই পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাটে কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রবিনের একটি কিডনি নেওয়া হয়।
অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়া পান রবিন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসামিরা ভারতের অজ্ঞাত স্থানে প্রায় ১০-১১ দিন রবিনকে আটক রাখেন। একপর্যায়ে দালালচক্র রবিনকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলেন। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, চক্রের টার্গেট হলো যাদের আর্থিক চাহিদা আছে, রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে। তাকে কিন্তু খুব সামান্য অর্থ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চক্রটি এসব কিডনি আরও চড়া দামে বিক্রি করে আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত চক্রটি ভারতে নিয়ে ১০ জন ব্যক্তির কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ থেকে ছয়জন ছিল। অপর এক প্রশ্নের তিনি বলেন, চক্রটি রবিনকে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল কিডনির বিনিময়ে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা দেয়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাদের কিডনি নেওয়া হচ্ছে এসব কিডনির গ্রহীতাও বাংলাদেশিরা।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে সৌদি সরকার তাগিদ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ রোববার রাজধানীর নিকুঞ্জে হোটেল লা মেরিডিয়ানে সৌদি আরবের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গিয়েছিল। এর সংখ্যা কত আমাদের জানা নেই। তারা আমাদের জানিয়েছেন ৬৯ হাজার। সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট না থাকলে তাদের ফেরত পাঠায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে সৌদি আরবের একটি চুক্তি হয়েছিল- তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না, তাদের কাগজ রিনিউ করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা স্লো যাচ্ছি কেন? কিংবা আমাদের কোনো অসুবিধা আছে কি না সেটা দেখার জন্য তারা এসেছিলেন। এ ছাড়া সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের উভয় দেশের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে সৌদি আরবে যেসব প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে আমরা বলেছি, তারা যে আমাদের দেশেও এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাঠায়, এতে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও শক্ত হবে।’
‘সৌদি আরব প্রতিনিধিদল উভয় দেশের বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব করেছে। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে। যদি সৌদি আরব এই চুক্তি করে, তবে ভালো হবে। বাংলাদেশ থেকে তাদের সিকিউরিটি গার্ডের জন্য আনসার প্রেরণের কথা বলেছি। এ বিষয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। আপনারা জানেন যে, ভিআইপি নিরাপত্তার জন্য আনসারদের আমরা গার্ড রেজিমেন্ট হিসেবে তৈরি করেছি’- যোগ করে বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেছি। এই বিষয়টি তারাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে যত তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানো যায়, সেটি নিয়ে তারা কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা ওয়েভার রয়েছে। ইউএইর সঙ্গে আমাদের কথা চলছে, ভবিষ্যতে ইউএইর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হবে। সৌদি আরব আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আবর কিন্তু ফেরত পাঠাবে না কাউকে। আবার সৌদি সরকার রোহিঙ্গাদের ওই দেশের নাগরিকত্ব দেবে না। তবে কীভাবে থাকবে। সে জন্য তাদের কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন, সে জন্য তারা আমাদের অনুরোধ করেছিল। আমরা গত বছর সেটি স্বাক্ষর করেছিলাম। সেখানে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না বা কোনো লু-ফলস রয়েছে কি না সে বিষয়ে সরাসরি কথা বলতেই তারা এসেছেন।’
সৌদিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কি বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তো বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। সুতরা আমরা শুধু তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দেব। তাদের নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে যেমন আছে তেমনই থাকবে।’ আলোচনায় সৌদি আরবের উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সৌদিতে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আমরা সে ধরনের উন্নত বাংলাদেশ চাই, যেখানে সমগ্র পৃথিবী এ দেশকে নিয়ে গর্ববোধ ও অহংকার করবে বলে উল্লেখ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
আজ রোববার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘মেরিটাইম অ্যান্টি-করাপশন নেটওয়ার্ক (এমএসিএন) বাংলাদেশ রিপোর্ট লঞ্চ ইভেন্ট এবং মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্যে জালিয়াতি প্রতিরোধ’ শীর্ষক যৌথ সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমাদের গৌরব ও অহংকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে সবকিছু ম্লান হয়ে গিয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করার মধ্য দিয়ে মূলত দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ডকে এবং হত্যাকারীদের যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্র সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। সে জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল যারা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, লাখ লাখ মা-বোনকে নির্যাতন করেছে, সেসব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে, বিচারের রায় কার্যকর করেছে ও বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা শুরু হয়েছে।’
‘গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পেশাদারত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র তৈরি করার যে মহাপরিকল্পনা ছিল, সে জায়গা থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। এ ধরনের পদক্ষেপ, এ ধরনের উদ্যোগ ও এ ধরনের সমাজ গঠনের পদক্ষেপ আমাদের আরও বেশি উৎসাহিত করবে’- বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে। আমরা চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ। উন্নত বাংলাদেশ মানে শুধু অর্থবিত্তের মধ্য দিয়ে উন্নত হওয়া নয়, উন্নত বাংলাদেশ হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। উন্নত বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্বের সুখ-সুবিধা আমাদের মধ্যে থাকবে। সে ধরনের উন্নত বাংলাদেশ চাই, যেখানে সমগ্র পৃথিবী এ বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ববোধ ও অহংকার করবে।’
বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) স্বাগত জানায়, তবে এর অপব্যবহার রোধে কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা এআইকে স্বাগত জানাই, তবে এর অপব্যবহার রোধ করার জন্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গণভবনে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে অ্যাপোস্টোলিক নুনসিও অব দ্য হোলি সি-এর আর্চবিশপ কেভিন এস র্যান্ডালের সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। আমরা সবাই মিলে আমাদের উৎসব উদযাপন করি।’
শেখ হাসিনা আর্চবিশপ কেভিন এস র্যান্ডালের মাধ্যমে পোপকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আর্চবিশপ র্যান্ডাল জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান ও পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বেঠকে উপস্থিত ছিলেন।