রোববার, ১৬ জুন ২০২৪

অগ্নিনিরাপত্তা আইন না মানায় বাড়ছে অগ্নিকাণ্ড

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে আগুন লেগে মারা যান ৪৬ জন।। ফাইল ছবি
আপডেটেড
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:৩৫
শেখ শফিকুল বারী
প্রকাশিত
শেখ শফিকুল বারী
প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:৩৪

সম্প্রতি দেশজুড়ে বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নগর পরিকল্পনাবিদ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকি অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, জনসাধারণের অসেচতনতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো আগুনসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু মানা হচ্ছে না অগ্নিনিরাপত্তা আইন।

এ ছাড়া মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ। পাশাপাশি দেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কেমিক্যাল জাতীয় নানা দাহ্য পদার্থের ব্যবহার।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ৭৭টি আগুন লেগেছে। এসব ঘটনায় সারা দেশে মোট ২৮১ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের সম্পদ।

চলতি বছর জানুয়ারিতে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৭২টি। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজারটি। গত বছর জানুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৪৬টি। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ৭১৩টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের চেয়ে চলতি বছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।

২০২৩ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৩৭৪টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ (১৬৯৪টি) ঝুঁকিপূর্ণ, ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ (৪২৪টি) অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ মোট ঝুকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ৩৯ দশকি ৪১। আর সন্তোষজনক প্রতিষ্ঠান ৫৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ (৩২৫৬টি)।

চলতি মাসের প্রথম দিন রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া এলাকার ধার্মিকপাড়ায় একটি গ্যারেজে আগুন লেগে পুড়ে যায় লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর দুদিন পর খুলনার রূপসা এলাকার সালমা জুট মিলে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শিশু হাসপাতালের ৫ম তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট অনেক চেষ্টার পর আগুন নির্বাপণ করে। এ ছাড়া, গত ১২ এপ্রিল সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ঝাউচর মোড়ে একটি টিনশেড বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ২০টি ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট প্রায় ১ ঘণ্টার চেস্টার পর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে গত ২৪ মার্চ ভোর থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতার গাউছিয়া কাঁচাবাজার, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি সুপারবোর্ড কারখানা এবং পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে দুটি পাটের গুদাম ও একটি তেলের মিলে আগুন লাগে।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। মারা যান ৪৬ জন। ঠিক পরের দিন ১ মার্চ রাতে ওয়ারীর পেশওয়ারাইন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

অতীতেও দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে তপ্ত আবহাওয়ার প্রভাবে ২০২৩ সালে ভোররাতের দিকে বঙ্গবাজার মার্কেট, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ে যায়।

ঘস ঘন আগুন লাগার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। এর বাইরে নগরগুলো আমরা এনভাবে সাজিয়েছি, যা মৃত্যুকূপের মতো। ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অসংখ্য ইলেক্ট্রিক ও গ্যাস লাইন ঠিক নেই। রেগুলার মেইটেন্যান্স নেই। ঘরে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার। মেইন্টেন্যান্স নেই, সার্ভিস লাইন ঠিক নেই, মৃতুকূপটা সব জায়গাতেই আছে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানায় আগুন লেগেছে। এসব আগুন শুধু মৌসুমি কারণে নরমাল আগুন নাকি এর বাইরে কোনো এলিমেন্ট আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অবশ্যই অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো অত্যন্ত বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সার্ভিস প্রোভাইডার যারা আছে, সবাইকে দেখতে হবে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্রস চেক করে দেখতে হবে এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি না। থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু এটা দেখা দরকার যে অস্বাভাবিক না স্বাভাবিক। নগর নিরাপত্তা, এটাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই এদিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত।

আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, আগুনের ঘটনা ঘটে মানুষের অসাবধানতার কারণে। দেখা গেছে আগুন লাগার কারণগুলোর মধ্যে কোথাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক লোড ব্যবহার করা এবং মানহীন বা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা অন্যতম। এ ছাড়া আমাদের দেশ শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। উন্নতমানের নান্দনিক সামগ্রী তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে কেমিক্যাল এজেন্ট ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর ফলে অগ্নিঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদের আগে ব্যবসার প্রয়োজনে অতিরিক্ত পণ্য মজুত করা হয়। এতেও রিক্সফ্যাক্টর বেড়ে যায়। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, শীতকাল পার হওয়ার পর বসন্তে বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হলেও প্রকৃতিতে একটা পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়, টেম্পারেচার (তাপমাত্রা) বাড়ে। গাছের পাতা ঝরে যায়, অনেক সময় জীবন্ত গাছও শুকিয়ে যায়। আর যেসব দাহ্য বস্তু রয়েছে সেসব আরও শুকিয়ে যায়। যেমন আমাদের শরীরেও আবহাওয়ার এই প্রভাব পড়ে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আমরা লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করি।

অপরদিকে শীতকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে। দাহ্য বস্তুর জ্বলে ওঠার প্রবণতা ভেতরে থাকলেও বাইরে তেমন থাকে না। শীতের পর বৃষ্টি শুরু হলেও টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ায় দাহ্যবস্তু ভেতর থেকে শুকিয়ে থাকে এবং বাইরে টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ার ফলে দাহ্য বস্তুর জ্বলে ওঠার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এ জন্য করণীয় কী জানতে চাইলে শাহজাহান শিকদার বলেন, এ জন্য সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেককে অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে চলতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থা্পন করতে হবে। যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মূলত ৪টি ধাপে ভবনকে নিরাপদ করতে হবে। প্রথমত, ভবন নির্মাণের সময় বিএমডিসি এবং ফায়ার সেপটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। তৃতীয়ত, এসব ব্যবস্থা গ্রহণের পর সেগুলো ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত জনবল থাকতে হবে। এ জন্য ভবনের ১৮ শতাংশ লোককে প্রশিক্ষিত করতে হবে ফায়ার সার্ভিস থেকে। আর চতুর্থটি হলো, মাঝে মাঝে এসব প্রশিক্ষণের মহড়া করতে হবে। কিন্তু সে অনুযায়ী অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেউ মনোযোগী না, কম্পলায়েন্স ইস্যুতে মনোযোগী না।

অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম বিষয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম শুধু ফায়ার এক্সটিংগুইশার বুঝায় না। যে ভবনে যে ধরনোর রিক্সফ্যাক্টর থাকবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন একটি ভবনে ২টি সিঁড়ি প্রয়োজন হলে তা রাখতে হবে। কোনো ভবনে স্প্রিঙ্কলার (কক্ষের সিলিংয়ে লাগানো স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানোর যন্ত্র), কোনো ভবনে হোজরিল (প্রতি তলায় সুবিধাজনক স্থানে পানি সরবরাহ কলের সঙ্গে যুক্ত লম্বা নল) স্থাপন করতে হবে। যেখানে হাইড্রেন্ট সিস্টেম প্রয়োজন, সেখানে হাইড্রেন্ট সিসটেম স্থাপন করতে হবে। তা হলেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব বলে আমি মনে করি।’


গ্রামের পানে ছুটছে মানুষ

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে শনিবার দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় যাত্রীদের। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
আপডেটেড ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

এক দিন পরই ঈদ। রাজধানীসহ সারা দেশের কর্মজীবী মানুষের অফিস হয়েছে ছুটি। বন্ধ দেওয়া হয়েছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। তাই আপনজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামের পানে ছুটছে মানুষ। গত শুক্রবারের পর গতকাল ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে ছিল বাস-লঞ্চ-ট্রেনে বাড়ি ফেরা মানুষের মিছিল। আগে থেকে টিকিট করে রেখেছেন যারা তারা গতকাল নিরাপদে পছন্দের যানবাহনে উঠেছেন। কিন্তু, যারা আগে টিকিট কাটেননি বা নিকটবর্তী জেলাগুলোতে থাকেন বলে আগে থেকে টিকিট কাটার প্রয়োজন বোধ করেন না, গতকাল মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তাদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। রীতিমতো সারি বেঁধে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে যানবাহনে উঠতে হয়েছে তাদের। লোকাল হিসেবে পরিচিত এই যানবাহনগুলোতে গতকাল ছিল যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। রীতিমতো লোকে লোকারণ্য হয়েছিল বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন ও সদরঘাট টার্মিনাল। এর মধ্যে ট্রেনেই গতকাল ঢাকা ছেড়ে গেছেন দেড় লাখ মানুষ। গতকাল সূচি মেনেই ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। ছিল না অবৈধ যাত্রীদের চাপও। তবে শেষ সময়ে বাসে ও লঞ্চে রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুটি স্পেশাল ট্রেনসহ মোট ৬৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করেছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। এসব ট্রেনে রাজধানী থেকে মোট দেড় লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১২ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের গন্তব্যে ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন আমরা পরিচালনা করেছি, সেগুলোর যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে ও ভোগান্তিহীনভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন।’

কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার আরও বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। সবগুলো ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ত্যাগ করেছে। যাত্রীরা আমাদের ব্যবস্থাপনায় অনেকটা আনন্দিত হয়েছেন। আমরা এবার বিনা টিকিটে ভ্রমণ করার প্রবণতাটা একটু কম দেখেছি। যাত্রীরা সচেতন হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, জিআরপি, ডিএমপি, র‍্যাব এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনী সম্মিলিতভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ভোগান্তিহীন নিরাপদ ঈদযাত্রা উপহার দিতে পেরেছি। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের শিডিউল বিপর্যয় বা বিলম্ব- সবকিছু এড়িয়ে অত্যন্ত নিরাপদে মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সকল পর্যায়ের একটি মনিটরিং টিম কাজ করছে উল্লেখ করে মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আপনারা জানেন, আগামীকাল আমাদের ঈদযাত্রার শেষ দিন। শেষ পর্যন্ত যাতে সবকিছু স্বাভাবিক থাকে এবং সুন্দরভাবে যাত্রীরা নিজ নিজ মন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে জন্য সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ও সহযোগিতায় আমরা সুন্দর একটি ঈদযাত্রা উপহার দিতে পেরেছি।’

অন্যদিকে, গতকাল অগ্রিম টিকিট না কাটা যাত্রীরা গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ভিড় করায় লোকাল ও আন্তঃনগর বাসগুলোতে বেশ চাপ পড়ে যায়। এসব বাসে ওঠার জন্য প্রায় সবাইকে গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। যাত্রীদের অভিযোগ, যানবাহন কম থাকার সুযোগে দূরপাল্লার যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে খোলা ট্রাক বা পিকআপে করে বাড়ি ফিরছেন।

চলতি মাসের শুরুতে অনলাইনে ও কাউন্টারে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ভিড় আরও বেড়েছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়তে চাওয়া যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। কাউন্টার-সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল সারাদিনই এ অবস্থা ছিল। এ পরিস্থিতি থাকবে ঈদের আগের দিনও।

সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে সকাল থেকেই গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারে ছিল ভিড়। পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরগামী এই গাড়ির যাত্রী মারুফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এদের গাড়ি ১৫ মিনিট পর পর হলেও কোনো গাড়িতে আসন ফাঁকা নেই। আমি অনেক কষ্টে সুপারভাইজারের সিটের একটি টিকিট পেয়েছি। এই টিকিটের ভাড়াও ৫০০ টাকা।’

সাধারণত বাসের একদম সামনে টুলসদৃশ জায়গা থাকে সুপারভাইজারের জন্য। ঈদের সময় সেটিও আসন হিসেবে বিক্রি হয়।

এদিকে সড়কে যানজটের কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না। বরিশালগামী যাত্রী মো. কায়সার জানান, তার গাড়ি ১২টা ৩০ মিনিটে। তবে কাউন্টার থেকে জানিয়েছে, ৯টা ১৫-এর গাড়ি এখনো ঢাকায় আসেনি। তাই তাঁর গাড়িও আসতে দেরি হতে পারে।

মহাখালীতে ভিড় দেখা গেছে ঢাকা থেকে অল্প দূরত্বের জেলাগুলোতে। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর জেলার যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে দেখা যায়। শেষ সময়ে টিকিট না পাওয়ায় অনেককে বাসের সুপারভাইজারের জন্য নির্ধারিত সিটও বাধ্য হয়ে কিনতে দেখা যায়।

এদিকে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলেও ১০ ঘণ্টা পর তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিশেষ করে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল যানজটহীন হতে থাকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত সড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে কোথাও যানজট, কোথাও গাড়ির ধীর গতি ছিল।

গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে দুর্ঘটনা, টোল আদায় বন্ধ, চালকদের বেপরোয়া চালনার কারণে মহাসড়কে যানজট ও গাড়ি চলাচলে ধীর গতির সৃষ্টি হয়।

মহাসড়কে যানজট ও ধীর গতির বিষয়ে মহাসড়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেন, শুক্রবার রাতে ও গতকাল ভোরে সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে হতাহত না হলেও সেতুর ওপর চাপ কমাতে টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। চালকদের ওভারটেক প্রতিযোগিতার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা থেকে বগুড়াগামী বাসগুলোর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা, যা ১০০ টাকা বেশি। এ বিষয়ে কাউন্টার থেকে বলা হয়, এটাই ঈদের জন্য তাদের নির্ধারিত ভাড়া। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৩০০ টাকা হলেও এখন দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা।

ভাড়া বেড়েছে পদ্মা সেতু হয়ে পার হওয়া খুলনা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, বরিশাল ও মাগুরাগামী বাসের। এই রুটের পরিচিত বাস গোল্ডেন লাইনের ভাড়া ২০০ টাকা করে বাড়িয়েছে ঈদ উপলক্ষে। সায়েদাবাদ গোল্ডেন লাইন কাউন্টার থেকে জানানো হয়, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে মাগুরার ভাড়া ৫৫০ টাকা হলেও ঈদের জন্য এই রুটের ভাড়া ৮০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালেও একই চিত্র দেখা গেছে। পদ্মা সেতুর কারণে এই টার্মিনালে বাসের পরিমাণ কমেছে অনেক বেশি। তবে চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা, যশোর অঞ্চলের যাত্রী বেশি এই টার্মিনালে। স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া এই অঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবহনের। অনলাইন টিকিটে এসি গাড়ির ভাড়া বেড়েছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে, জবি প্রতিনিধি মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ জানিয়েছেন, ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শুরুর আগের দিন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। এদিন সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে রাত পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষেরা নৌপথে বাড়ি ফিরেছে। ঈদের আনন্দ সঙ্গে নিয়ে যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়েছে।

গতকাল শনিবার সারা দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার সাথে সাথেই টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীদের উপস্থিতি। সকালে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীচাপ থাকলেও দুপুরের দিকে যাত্রীর উপস্থিতি কমে যায়। তবে বিকেল হতেই যাত্রীর ঢল নামে টার্মিনাল এলাকায়। লঞ্চগুলোতেও দেখা যায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোববার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হলেও এর আগে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেকেই আগেভাগে বাড়ি ফিরছেন। শুক্রবার অনেকে টিকিট কিংবা কেবিন বুকিং করতে না পারায় এদিন যাচ্ছেন। সেজন্য বিগত কয়েক দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে। নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কেবিনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি আগেই শেষ হলেও বিভিন্ন রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় এখনও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। তবে কেবিনের তুলনায় ডেকের যাত্রীর চাপই বেশি বলছেন লঞ্চ সংশ্লিরা।

ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স আওলাদ এর সুপারভাইজার ইহাদ তালুকদার বলেন, আজকে যাত্রীর চাপ আগের দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেড়েছে। কাল থেকে আরও বাড়বে। ঈদের আগের দিন অনেকেই বাড়ি যাবেন। লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় টিকিটেরও ঘাটতি নেই। যাত্রীরা কেবিনের তুলনায় ডেকের টিকিট বেশি নিচ্ছেন।

ঢাকা-ভাণ্ডারিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি ফারহান-৪ এর টিকিট বিক্রেতা সুমন শেখ বলেন, আমাদের অগ্রিম টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। আমরা ডেকের টিকিট দিচ্ছিলাম। ইতোমধ্যেই লঞ্চ ভরে গেছে। যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। সেজন্য এই রুটে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভুঁইয়া বলেন, আজকে যাত্রী চাপ বিগত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। সন্ধ্যা থেকে তা আরও বেড়েছে। এখনও গার্মেন্টসশ্রমিকরা কাজ শেষ করে অনেকেই আসতে পারেননি। আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত আছে। যাত্রী বাড়লে লঞ্চ আরও বাড়ানো হবে। টিকিটের কোনো ঘাটতি নেই। রোববার যাত্রী চাপ সামলাতে আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে টিকিটের ঘাটতি না থাকায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। অনেকেই অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে রাখায় পরে আসলেও ঝামেলা পোহাতে হয়নি। লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় যাত্রীরা ঘাটে এসেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। টার্মিনাল এলাকাতেও তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছেনা যাত্রীদের।

এদিকে যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে লঞ্চ চলাচল করবে বলা জানানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত বয়া-জ্যাকেটের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ কর্তৃপক্ষ।


জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদের জামাতে সর্বস্তরের মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, রাষ্ট্রপতি তার পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার নামাজ জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৭টায় আদায় করবেন।

রাষ্ট্রপতি ঈদগাহে পৌঁছালে প্রধান বিচারপতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপ্রধান ঈদগাহে মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রপতি সকাল ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্য ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন তিনি। পরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।


‘কৃষকের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছিল খালেদা জিয়া’

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে শুধু জনগণের ভোট চুরি না, কৃষকের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবনে কৃষক লীগের উদ্যোগে ‘বৃক্ষরোপণ ২০২৪’ কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ শনিবার তিনি এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত নির্ভর করে কৃষির ওপর। আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর পরই তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি এই ঘুনেধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ার পদক্ষেপ নেন এবং বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তোলার বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দেন। আমাদের দুর্ভাগ্য সেই সময় জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা শুধু মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে তা নয়, এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাকেই নষ্ট করেছিল। আজ ভোটের অধিকারের কথা বলে... আমার খুব হাসি পায় যখন দেখি বিএনপি ভোটের কথা উচ্চারণ করে, নির্বাচনের কথা বলে।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ভোটের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তার সেই হ্যাঁ/ না ভোট দিয়ে যাত্রা শুরু। অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করে তাকে জিতিয়ে আনার জন্য ভোট চুরির একটা প্রক্রিয়া এ দেশে শুরু করেছিল। জিয়াউর রহমানের পরে তারই পদ অনুসরণ করেই ক্ষমতা আসে এরশাদ। এ দেশের কৃষক শ্রমিকরা সব সময় অবহেলিতই থেকে যায়।

ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে একটা প্রহসনের নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। মাত্র ২২ পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল সেখানে। অধিকাংশ সরাসরি নির্বাচনে, কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। জনগণের ভোট চুরি করলে কেউ কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এই ব্যপারে খুব সচেতন।


সন্ধ্যার মধ্যে ছয় জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয় জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া এক পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রংপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের সব বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। ঝড়বৃষ্টির এ প্রবণতা সপ্তাহজুড়েই অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


ঈদ যাত্রায় সড়কে ভোগান্তি, সময় মতো যাচ্ছে ট্রেন

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ পালন করতে ঘরমুখো মানুষ। ছবি: সৈয়দ মাহামুদুর রহমান
আপডেটেড ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

আর মাত্র এক দিন পরেই পালিত হবে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে বাড়ি ফিরছে লাখ লাখ মানুষ।

শেষ মুহূর্তের ভিড় আর দুর্ভোগ এড়াতে বৃহস্পতিবার থেকেই অনেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করলেও গতকাল শুক্রবার থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন সকাল থেকেই সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। আর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ভোর থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ঘরমুখো মানুষের কর্ম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

তবে আগের দুই দিনের তুলনায় গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনেও যাত্রীদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। তবে নেই ট্রেনের বিলম্ব যাত্রা, নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকায় সব মিলিয়ে ট্রেনে আজকের ঈদযাত্রা স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে। তবে শুধু তিতাস কমিউটার ট্রেনটি দেড় ঘণ্টা বিলম্বে স্টেশন ছেড়েছে।

এর আগে ঈদযাত্রার প্রথম দিন বুধবার একাধিক ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার ঘটনায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল যাত্রীদের৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছেড়ে গেলেও বিকেলে কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে ছাড়ে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে মোট ১১টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। সবকটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশন ছেড়েছে। সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মধ্যে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, আজকে সব ট্রেনই সময়মতো স্টেশন ছেড়ে গেছে। কোনো ট্রেনই বিলম্বে যাত্রা করেনি। নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে পারছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকরা জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, কয়েকটি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ও চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ভোরে কালিহাতী উপজেলার পৌলীতে সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক রাস্তার ওপর উল্টে গেলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ ছাড়া গাড়িগুলো সার্ভিস লেন ব্যবহারের কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে পুলিশ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরের ১৬টিসহ মোট ২১টি জেলার প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে; কিন্তু ঈদের সময় এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এতে বিপুল সংখ্যক গাড়ি এক সঙ্গে সেতু পার হতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।

এদিকে এক দিনে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ এবং এর বিপরীত ৪০ হাজার ৯০৬ টি যানবাহন পারাপার হয়। তার মধ্যে কোরবানি পশু ও পণ্যবাহী পরিবহন বেশি পারাপার হয়েছে।

গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৩০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু এবং এর বিপরীত ৪০ হাজার ৯০৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত পদ্মা সেতুর মাওয়া দিয়েও ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ফলে মাওয়া টোল প্লাজা থেকে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।

পদ্মা সেতুতে যানবাহনের লাইন মাওয়া টোল প্লাজা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শ্রীনগর ছাড়িয়ে গেছে। সেতুর টোল প্লাজার মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও ৭টি বুথে টোল নিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না দায়িত্ববানরা।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল ইসলাম জানান, সেতুর মাওয়া প্রান্তের ওজন স্টেশনের লোকজনের অবহেলার কারণে অনেক ট্রাক জমে মূল রাস্তা বন্ধ হয়ে যানজটে কারণ হয়।

সেতুর টোল প্লাজার মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও ৭টি বুথে টোল নিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকালে বেশি চাপের কারণে মোটরসাইকেল বুথ বাড়িয়ে দুটি করা হয়। তবে বেলা বাড়ার পর অন্য যান সামাল দিতে বাইকের বুথ আবার একটিতেই নামিয়ে আনা হয়।

তবে চলন্ত গাড়িতে টোল আদায়ে ১১ মাস আগে পরীক্ষামূলক শুরু হওয়া ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি) এখনো পুরোপুরি চালু করা যায়নি। তাই মিলছে না এর সুফল।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতের সব চেষ্টা চলছে। তবে ঈদের আগে ছুটির দিন হওয়ায় একযোগে বেশি যানবাহনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (টোল) রাজন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ঈদের ৫ দিনের ছুটির প্রথম দিনে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশি। চাপ সামাল দেওয়ার নিরলস চেষ্টা চলছে।

গত বছরের ২০ এপ্রিল থেকে পদ্মা সেতুতে দ্বিতীয় দফায় বাইক চলাচল শুরু হয়। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন খুলে দেওয়া হলে বাইক দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়। এতে কর্তৃপক্ষ সেতু দিয়ে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করে। পরে অবশ্য আবার বাইক চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় চলছে ধীরগতিতে। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে। জুমার নামাজের পর গাড়ির চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের উভয় লেনে একই দৃশ্য দেখা গেছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে শুরু করে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত বেশ থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা অংশে বেতন-বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন গার্মেন্টশ্রমিকরা। ফলে ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নিলে যানজট কমতে থাকে। তবে হঠাৎ গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে চলতে হয়।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল আলম, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম এবং ময়নামতি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার দৈনিক বাংলাকে বলেন, জুমার নামাজের পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চান্দিনায় শ্রমিকদের অবরোধের ফলে সৃষ্ট জটলা না থাকলেও গাড়ি যাচ্ছে ধীরগতিতে।

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশের সমন্বিত ইউনিট কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ঈদযাত্রায় নেই ভোগান্তি

ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ছাড়া ফেরি-লঞ্চ পার হতে পাড়ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা। ঢাকাগামী পশুবাহী ট্রাক পারাপারও হচ্ছে নির্বিঘ্নে। ঘাটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়াতে মোতায়েন আছে বাড়তি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। ঈদ উপলক্ষে ছোট-বড় ফেরির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপার বেশ কমে গেছে। কমেছে যাত্রী ভোগান্তিও। তবে ঈদ উপলক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী, যানবাহন ও পশুবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে পারাপার করতে আগে থেকেই নানান প্রস্তুতি নিয়েছিল ঘাট কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া ঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে চাপ বাড়লেও কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই ফেরি-লঞ্চ পারাপার হচ্ছে। যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসগুলো অনায়াসেই ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। এতে স্বস্তিতে যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ডিজিএম খালেদ নেওয়াছ বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে পারাপারের জন্য ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। এ জন্য দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রী ও যানবাহনগুলো পারাপার হচ্ছে।’

পুলিশ সুপার মো. গোলাম আজাদ খান বলেন, ঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স কাজ করছে। পাশাপাশি পশুবাহী ট্রাকগুলো যেন ঘাটে কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া নির্বিঘ্নে ঢাকার কোরবানির হাটে যেতে পারে সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান’

আপডেটেড ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০৩
সৈয়দ আফজাল হোসেন

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের বৈচিত্র‍্য অনুযায়ী প্রতি দুই মাস পর পর ঋতুর পরিবর্তন হয়। এই নিয়মেই আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। সে হিসেবে আজ বর্ষাকালের প্রথম দিন- পহেলা আষাঢ়। আর বর্ষা ঋতুর প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে বৃষ্টি। তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বর্ষাকে বরণ করেছেন এভাবে: ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে’।

গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহের পরে আষাঢ়-শ্রাবণের অঝোর বারিধারা প্রকৃতিতে অনেকটা স্বস্তি বয়ে আনে। বৃষ্টির জলে অবগাহন করে মানব মনে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটে এবং আবেগ, অনুভূতি ও অফুরন্ত আনন্দের শিহরণ জাগে। মেঘের তর্জন-গর্জন, গুড়ুম গুড়ুম বজ্রধ্বনি, টিনের চালে রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি পতনের শব্দ মানুষের মনকে যেন ছন্দময় করে তোলে। মেঘ আর রোদের খেলায় বর্ষায় বাংলার প্রকৃতিতে এক চমৎকার নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়!

এ সময় বাংলাদেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবাসহ অন্যান্য জলাশয় পানিতে টইটুম্বর হয়ে যায়। অথৈ জলে পরিপূর্ণ নদীর উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মাঝে পালতোলা নৌকা চালানোর সময় মাঝিরা গলাছেড়ে মায়াবী সুরে গাইতে থাকে আবহমান বাংলার ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি গান। যে গানের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের যত সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-বেদনার কথা ধ্বনিত হয়।

বর্ষার জলে পানকৌড়ির ডুবসাঁতারের লুকোচুরি খেলা, পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড়ে লেজ দুলিয়ে ডাহুক পাখির তিড়িং-বিড়িং করে হেঁটে চলা, কুয়ার জলে অবিরাম কোলা ব্যাঙ ডাকার ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর শব্দ, পেখম মেলে ময়ূরের মনোমুগ্ধকর নৃত্য যে কাউকেই বিমোহিত ও বিমুগ্ধ করে।

বর্ষা আর কদম ফুল যেন একে অপরের পরিপূরক। মনে হয় যেন কত শত ভালোবাসার অনুরাগে গাছে গাছে ফুটে উঠেছে কোমল-নরম তুলতুলে কদম ফুল। এ ছাড়াও এ সময় গ্রামবাংলার বিল-ঝিলে ফোটে কত না শাপলা-শালুক আর রঙিন পদ্ম ফুল।

বর্ষা আর বৃষ্টি কবিমনকে ভাবের আবেগে উদ্বেলিত ও রোমাঞ্চিত করে। কেননা, বর্ষা হচ্ছে সবচেয়ে আবেগময়, কাব্যময় ও প্রেমময় ঋতু। বিশ্বের প্রায় সকল কালের, সকল যুগের, সকল ভাষার কবির কবিতায় নানাভাবে বর্ষা বা বৃষ্টির বন্দনা করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যেও অন্য যেকোনো ঋতুর চেয়ে বর্ষার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বাংলা গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গান ও চিত্রশিল্পে বর্ষার রূপ-মাধুর্য ও সৌন্দর্য নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি গ্রামবাংলার রমণীদের নকশিকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে বর্ষার অনিন্দ্যসুন্দর ও অপরূপ রূপের চিত্র ফুটে ওঠে।

তবে বর্ষাকে নিয়ে যত সাহিত্য রচিত হয়েছে, তার অধিকাংশেরই মূল উপজীব্য হচ্ছে বিরহগাথা। বর্ষার বাদলধারার সঙ্গে আহত হৃদয়ের বোবাকান্না যেন ঝরে পড়ে বেদনাশ্রু হয়ে। আর তাই বর্ষাকে বিরহের কালও বলা হয়ে থাকে।

বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে স্বভাব কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন এবং রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশসহ প্রায় সব কবিই বর্ষা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। তাই তার কবিতা ও গানে বর্ষাকে উপস্থাপন করেছেন নানা আঙ্গিকে। অসংখ্য গান-কবিতায় মানবজীবনে বর্ষার চিরায়ত প্রভাবকে গভীর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়’ কিংবা ‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা, কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা’ অথবা ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে/ ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’- এসব কবিতায় তিনি বর্ষাকে চিত্রিত করেছেন আবেগ আর অনুভূতির মাধুর্য দিয়ে।

এ ছাড়াও ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’- কবিগুরু এমনিভাবে গানে গানে বর্ষাকে অভিবাদন জানিয়েছেন। তার ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ ছড়াটি পড়ে মনের অজান্তেই সবাই ফেলা আসা মধুর দুরন্তপনার শৈশবে ফিরে যায়।

‘বর্ষা বিদায়’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন: ‘ওগো বাদলের পরী/ ব্যথা ক’রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি?’ তিনি আরও গেয়েছেন: ‘বর্ষা ঋতু এলো এলো বিজয়ীর সাজে/ বাজে গুরু গুরু আনন্দ-ডমরু অম্বর মাঝে/(বাঁকা) বিদ্যুৎ তরবারি ঘন ঘন চমকায়।’

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘বর্ষাকাল’ কবিতায় লিখেছেন: ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/ উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর/ রমণী রমন লয়ে, সুখে কেলি করে/ দানবাদি দেব, যক্ষ সুখিত অন্দরে।’

বর্ষা বা বৃষ্টির সঙ্গে বিরহবিধুর মানবমনের আকুলতা ও অনুরাগের গভীরতার সম্মিলন ঘটিয়ে রচিত… ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন/ কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ’, ‘এমনি বর্ষা ছিল সেদিন/ শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন/ মনে কি পড়ে প্রিয়’, ‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁইয়ো না/ আমার এত সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন/ ঝর ঝর ঝর ঝর ঝরেছে/ তোমাকে আমার মনে পড়েছে’ কিংবা ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায় অশ্রুভরা দুটি চোখ’… গানগুলো সংগীতপিপাসু মানুষের মুখে মুখে প্রতিনিয়তই ধ্বনিত হয়।

কথাসাহিত্যিক হ‍ুমায়ূন আহমেদও বর্ষাকে নিয়ে কয়েকটি গান রচনা করেছেন। তার লেখা: ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এই বরষায়’ গানটিতে আবেগ, ভালোবাসা ও হৃদয়ের গভীর আকুলতা অনবদ্যভাবে তুলে ধরেছেন।

আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে প্রাচীন যুগের কবি কালিদাস অমর করে রেখেছেন তার অমর সৃষ্টি ‘মেঘদূতম’ কাব্যটির মাধ্যমে। সংস্কৃত ভাষায় রচিত মেঘদূত কাব্যের মূল সুর বিরহের। রামগিরি পাহাড়ে নির্বাসিত এক অভিশপ্ত যক্ষের প্রিয়াবিরহ এই কাব্যের মূল উপজীব্য।


৩৬ শতাংশ পুরুষ বয়স হলেও এখনো বিয়ে করেনি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বয়স হওয়ার পরও বিয়ে করেনি ৩৫.৮ শতাংশ পুরুষ। আর এ জন্যই দেশে নারীর তুলনায় অবিবাহিত পুরুষের সংখ্য ১৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও এখনো বিয়ে করেনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩’-এর প্রকাশিত ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিবিএসের ওয়েবসাইটে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা যেমন নারীর চেয়ে বেশি, তেমনি নারীর চেয়ে পুরুষের একাধিক বিয়ে করার হারও বেশি। একবারের বেশি বিয়ে করেছেন এমন পুরুষের হার প্রায় ৪ শতাংশ, আর নারীর ক্ষেত্রে এটি ১ শতাংশের বেশি।

বিপত্নীক হিসেবে ১ শতাংশের কিছু বেশি পুরুষ একা জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে নারীদের বিধবা হিসেবে জীবনযাপনের হার প্রায় ৯ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে পুরুষদের প্রথম বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ বছর। আর নারীদের ১৮ দশমিক ৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লীতে আগমনের হার ২০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে মৃত্যু হারে এগিয়ে পুরুষ। ২০২৩ সালে প্রতি হাজারে পুরুষের মৃত্যুর হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর সেখানে নারীর মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ১৭১ জন। এ ছাড়া প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯ দশমিক ৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ।


ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর রুটিন চেকআপ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
 বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের কাশিমপুরের তেতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং সেখানে তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ (গতকাল) সকালে হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন।’

হাসপাতালে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক।

প্রধানমন্ত্রী রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিজে হাসপাতালের কাউন্টারে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও চেকআপ ফি পরিশোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তিনি রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।


চলে গেলেন মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিনিধি

বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ (৭০) চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। বাদ জুমা মিরপুর ডিওএইচএস কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে তাকে আর্মি কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কয়েক মাস আগে তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আসার পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এরপর তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই মাস চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি সেনাবাহিনীর একজন মেধাবী অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর জেনারেল রশীদ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টকশো-তে অংশ নিতেন। তার লেখা কলাম বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতো।

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গভীর শোক জানিয়েছেন।


শুধু ১২ জনের কাছেই ট্রেনের ৫০০ টিকিট, বিক্রি হতো ফেসবুকে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ট্রেনের ৫০০ টিকিটসহ ১২ কালোবাজারিকে আটক করেছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যরা। অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এসব টিকিট কেটেছেন তারা, যা পরে চড়া দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা হতো। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর। তিনি বলেন, অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৩ এমন দুটি চক্রের ১২ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বেসরকারি ট্রেনের বিক্রয় প্রতিনিধিও রয়েছেন।

এসব কালোবাজারি আগামী ১০ দিনের প্রায় ৫০০ টিকিট কেটে রেখেছেন। সোহেল ও আরিফুল নামে দুটি চক্র ঠাকুরগাঁও এবং ঢাকা থেকে কালোবাজারি পরিচালনা করতেন। ফিরোজ কবীর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে তারা অভিযান চালান। ঢাকা থেকে ১০ জনকে আটক করেন তারা। আর দুজনকে ঠাকুরগাঁও থেকে আটক করা হয়েছে। আমরা গত রাতে অভিযান শুরু করি। এটি চলমান অভিযান ছিল। এটি দুই থেকে তিন ধাপে পরিচালনা করা হয়। ঢাকার কমলাপুর ও আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের।’

তিনি বলেন, এখানে দুই ধরনের চক্র রয়েছে। এক ধরনের চক্র অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হলে তা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে কেটে রাখত। পরে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। সফটকপি পাঠিয়ে দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা বুঝে নেয়। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘মানিক ও আরেকজনের নাম বকুল। এদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি মানিক মূলত সোহেল নামে একজন ও ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থানকারী আবু, রায়হান ও আনিস নামে আরও একজনের সঙ্গে কালোবাজারি ব্যবসায় আসে। তাদের থেকে আগামী ১০ দিনের টিকিট পাওয়া যায়। এগুলোর হার্ডকপি ও সফট কপি রয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের টিকিটের দাম তিন হাজার টাকা করে বিক্রি করছে।’

ফিরোজ কবীর বলেন, ‘মানিক ও বকুলের মাধ্যমে আনিস ও রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রায়হান একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে। সেখানে ভুয়া সিম ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনেক টিকিট কেটে নেন। এদের বড় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেখানে চাহিদা ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়।’ তিনি বলেন, রায়হান ও আনিস টিকিট পাঠাতেন সোহেল ও মানিকের কাছে। আর মানিক ও বকুল ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতেন।


প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে ২১ জুন ভারত যাচ্ছেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিস্তাসহ দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগিসহ দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার জন্য চলতি মাসেই আবারও দিল্লি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী ২১ ও ২২ জুন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়টি শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান নিশ্চিত করেছেন। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতে লোকসভা নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে দিল্লি যাওয়ার বিষয়টি আগেই মোটামুটি ঠিক করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ২১ জুন দিল্লি পৌঁছাবেন এবং পরেরদিন তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে বসবেন। সফরের খুঁটিনাটি ঠিক করতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা ইতোমধ্যে দুবার ঢাকা ঘুরে গেছেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার সফরে তিস্তাসহ দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি, রেল, সড়ক ও নৌপথে আঞ্চলিক সংযুক্তির কার্যকর প্রসার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের নানা দিক নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে। নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৯ জুন শপথ গ্রহণ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এর আগে ৮ থেকে ১০ জুন ভারত সফর করেন শেখ হাসিনা।


সেবাই আমাদের উৎসব, সেবাই আমাদের আনন্দ: আইজিপি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদে ঘরমুখো মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের প্রতিটি সদস্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

আজ শুক্রবার বিকেলে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শন শেষে চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিজের ঈদ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে না করে দেশের সেবা, মানুষের সেবা, দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, আনন্দ উপভোগ করি। সেবাই আমাদের উৎসব, সেবাই আমাদের আনন্দ এই ব্রত নিয়ে ঈদে আমরা দায়িত্ব পালন করতে থাকি এবং মানুষকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। ঈদের সময় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আজহা নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে। আমরা এ আশাই করছি।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করে থাকেন। এজন্য পর্যটকের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আর ট্যুরিস্ট পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

তিনি বলেন, ঈদে যে সকল মানুষ ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা যেন নিজেদের বাসা বাড়ির সিসি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কিনা তা ঠিক মতো কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন। যে কোনো সমস্যার জন্য নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ কিংবা প্রয়োজনে ৯৯৯ এ ফোন করেও পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাবে। ঈদ উপলক্ষ্যে কোনো ব্যবসায়ী যদি বড় অঙ্কের টাকা-পয়সা পরিবহন করতে চান তাহলে তাদের কেউ পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।

আইজিপি বলেন, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। কোনো পশু নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পথে যদি কেউ গাড়ি থামিয়ে চাঁদা দাবি করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের আইন মেনে চলতে এবং ফিটনেসবিহীন কোনো যানবাহন সড়কে না নামাতে পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়াও ঘরমুখো যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ বা অন্য কোনো অনিরাপদ যানবাহনে গন্তব্যে না যাওয়ার আহ্বান জানান আইজিপি।


আজ মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল। ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখতে এবং শিডিউল বিপর্যয় রোধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের নেওয়া কর্মপরিকল্পনা থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ১৪ জুন রাত ১২টার পর থেকে ঈদের পরের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া অন্য সব পণ্যবাহী (গুডস) ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস, মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল।

কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়, ঈদুল আজহার দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস বা বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোনও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।

এদিকে, ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন আজ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার হওয়াতে কিছুটা চাপ বেশি দেখা গেছে রেল স্টেশনে। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে সড়ক আর নৌপথের মতো ট্রেনেও উপচে পড়া ভিড়।

এর আগে গত বুধবার (১২ জুন) থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। এবার টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুর রেলস্টেশনে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।


banner close