বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৬ আষাঢ় ১৪৩২

বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছেদ, পাল্টে যাবে ভোটের হিসাব

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:২৩

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ঘরোয়া আলোচনায় জোট ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও বিএনপি এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে না ভোটের হিসাবনিকাশের কারণে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটির পাঁচ শতাংশের আশপাশে ভোট রয়েছে, যে ভোট বিএনপিকে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি জোগায়।

এরশাদ সরকারের পতনের পর যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সহযোগী থেকে দুটি নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছে। অন্যদিকে যে নির্বাচনে দুই দল আলাদা ভোট করেছে, সে সময় দুই দলের আসনই অনেক কমে গেছে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, সব মহলে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনে জোটে থাকার পরও বিএনপি-জামায়াতের ভরাডুবি হয়েছে। সেই নির্বাচনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগও জোটের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে লড়াইয়ে নামে।

একক শক্তিতে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগও নেই। তবে তাদের যে পরিমাণ ভোট আছে, সেটি অন্য প্রধান দলের বাক্সে গেলে সেই দলকে শক্তি জুগিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারে।

এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নানা সমালোচনা এবং দেশি-বিদেশি চাপের মধ্যেও জামায়াতের সঙ্গে জোট চালিয়ে গেছে বিএনপি। তবে কয়েক বছর ধরে দূরত্বের মধ্যে এবার দলটির আমির জোট ছাড়ার কথা বলেছেন, যদিও দুই দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

বিএনপি কেন এই বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ, এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তিনি মুখ খুলবেন না। তিনি এমনও বলেছেন, ‘কিছু না বলা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।’

কুমিল্লার একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির স্পষ্ট করেই বলেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট আর নেই। এখন থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তারা আলাদা থাকবেন। প্রশ্ন হলো, জামায়াত সরে গেলে আওয়ামী লীগের মহাজোটের মোকাবিলায় ভোটের ময়দানে বিএনপির অবস্থান কী হবে।

১৯৯১ সালের পর থেকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রধান দুই দল- আওয়ামী লীগের ভোট প্রতিবার বেড়েছে। বিএনপির ভোট একবার কমেছে এবং সেটি অনেক বেশি। সেই নির্বাচনের পরই দলটি রাজনীতিতে অবস্থান হারায়।

বিএনপির পাশে জামায়াত না থাকলে সমীকরণটা কী হবে- জানতে চাইলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর চেয়ারম্যান শারমিন মুরশিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ভোট আছে। সেখানে আওয়ামী লীগের ভোট আছে ৪০ শতাংশের মতো। নরমাল ইলেকশন হলে জামায়াত ভোট পাবে ৫ শতাংশের আশপাশে।’ তবে দীর্ঘদিন একটা দল ক্ষমতায় থাকার পর এসব ফল পাল্টে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এসব বিষয়ে পলিটিক্যাল পার্টির গবেষণা থাকা উচিত।’

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, জামায়াতের জোট ত্যাগ বিএনপির জন্য উপকারিও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘জামায়াত অফিশিয়ালি বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করলে শাসক দল আওয়ামী লীগের অ্যাকশন থেকে তারা তুলনামূলকভাবে গা-বাঁচাতে পারবে। তা ছাড়া জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে যে মৌলবাদঘেঁষা দল হিসেবে ট্রিট করার একটা সুযোগ ছিল, সেটা থেকে তাদের মুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেও বিএনপি যে নির্ভার থেকেছে এমন নয়। গত নির্বাচনের আগে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে জোট করার পরও জামায়াতের অবস্থান নিয়ে স্পষ্ট করতে চায়নি। সে সময় বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলীয় জোট একসঙ্গে চালিয়ে গেছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের এ বিষয়ে ধোঁয়াশায় রেখেছে। এমনকি ভোটের আগে আগে ভারতীয় একটি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন জানান, জামায়াত জোটে থাকবে জানলে তিনি বিএনপির সঙ্গে জোটে যেতেন না।

জামায়াতের ভোট যদি বিএনপির বাক্সে না পড়ে, তাহলে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা আপনাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে না কি?- এমন প্রশ্ন ছিল মির্জা ফখরুলের কাছে। কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যদি বলতে কিছু নাই।’

অতীতের নির্বাচনে তো দেখা গেছে, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা না হলে আপনারা ভোটে ভালো করেননি। তাহলে কেন জামায়াতের জোট ছাড়ার বিষয়ে মূল্যায়ন করা যাবে না। এমন প্রশ্নেও ফখরুল কোনো জবাব দেননি। উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনার কি তাই মনে হয় নাকি?’ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে ফোন রাখেন বিএনপি নেতা।

বিএনপির সমর্থন ছাড়া জামায়াত ভোটে যে ‘অচল মাল’ সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে দলটির প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যদি দিয়ে কোনো কথার উত্তর নেই। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। নির্বাচনের সময় যখন আসবে তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে জামায়াত সিদ্ধান্ত নেবে।’

১৯৯৬ সালে একা ভোট করে জামায়াতের কেবল তিনটা আসন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একাদশে বিএনপি কেন ছয়টা আসন পেল?’ ভোটের ১৭ মাস আগে এসব হিসাবনিকাশ ঠিক হবে না বলেও মনে করেন।

ভোটের হিসাবনিকাশ

১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৬ শতাংশ ভোট পাওয়া জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ শেষে নিষিদ্ধ হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পাওয়ার পর ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেয়। সেই নির্বাচনে দলটি ভোট পায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আসন পায় ১০টি।

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতায় ভোটের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়ে, সেটি বোঝা গেছে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে।

এরশাদ পতনের পর নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ের তথ্য বলছে, তাদেরকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। আর বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি। সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পায় ১৪০টি, জামায়াত পায় ১৮টি। আর আওয়ামী লীগ পায় ৮৮ আসন। ওই নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি পায় মোট ভোটের ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ আর নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ পায় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ। জামায়াতের বাক্সে পড়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বাভাবিক হারের দ্বিগুণের বেশি ভোট পাওয়াতেই এটা স্পষ্ট হয় যে, নেপথ্যে কিছু একটা ছিল।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক জোটই করে দল দুটি। সঙ্গে ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে আসা একটি অংশ এবং কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর মোর্চা ইসলামী ঐক্যজোট। এই সম্মিলিত শক্তিতে আওয়ামী লীগকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেয় তারা। বিএনপি একাই পায় ১৯৩টি, জামায়াত পায় ১৭টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিজেপি পায় চারটি, ইসলামী ঐক্যজোট পায় দুটি আসন। ওই বছর আওয়ামী লীগ আসন পায় ৬২টি। এর মধ্যে উপনির্বাচনে দলটি আরও চারটি আসন হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আসন দাঁড়ায় ৫৮তে। কিন্তু সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের পার্থক্য ছিল কমই। বিএনপি পায় ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ, আর আওয়ামী লীগ ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ। জামায়াতের আসন ১৭টি হলেও তাদের ভোট ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সব দল একক শক্তিতে যে ভোট করে, তাতে জামায়াতের ভোট কমে যায়। ওই বছর জামায়াত মোট ভোটের ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ পায়, আসন নেমে আসে ৩টিতে।

ভোটের ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পড়ে আওয়ামী লীগের বাক্সে, আসন পায় ১৪৬টি। বিএনপি ১১৬টি আসন পায় ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে। অর্থাৎ এই নির্বাচনেও যদি বিএনপি ও জামায়াতের সমঝোতা থাকত, তাহলে তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ভোট পেতে পারত।

২০০৮ সালের পর নতুন সমীকরণ

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈরি হয় নতুন সমীকরণ। আওয়ামী লীগও ভোটে নামে জোটের শক্তি নিয়ে। নৌকা ও জাতীয় পার্টির সম্মিলিত ভোটে পাত্তা পায়নি বিএনপির জোট। ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ২৩০টি। বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, আসন হয় ৩০টি।

জাতীয় পার্টিও পায় ২৭টি আসন। ভোট দাঁড়ায় ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা ছিল আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি। ওই নির্বাচনে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লায় ভোট পড়ে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। আসন কমে হয় দুটি।

সমালোচনা গায়ে মাখেনি বিএনপি

নানা সময় ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কয়েকটি আসনে জামায়াত এককভাবেই লড়াই করতে পারে। এর মধ্যে আছে উত্তরে দিনাজপুর ও নীলফামারী, গাইবান্ধায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনায় দুটি করে, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জে একটি করে।

খুলনা বিভাগে সাতক্ষীরার চারটি, যশোরে দুটি, খুলনা ও ঝিনাইদহে একটি করে আসনে লড়াই করতে পারে তারা।

বরিশাল বিভাগে পিরোজপুরে একটি আসনে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একটি আসনে লড়াই করার শক্তি আছে তাদের। তবে এর বাইরে ৫০ থেকে ৬০টি আসনে ১০ থেকে ২০ হাজার ভোট আছে দলটির।

জামায়াতের এই ভোটের বিষয়টি হিসাবনিকাশ করেই বিএনপি ১৯৯৯ সালে জোট করে। সেই জোটে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি ও কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দলগুলোর জোট ইসলামী ঐক্যজোটও ছিল। ভোটের আগে আগে এরশাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর দলে ভাঙন ধরে এবং দলের একাংশ জোটে থেকে যায়। দেশ বিদেশে নানা চাপের মুখেও এই জোট চালিয়ে নিয়ে গেছে বিএনপি, যদিও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কই তাদের কাল হওয়ার একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দলের মূল্যায়নে। ওই নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে ১০টি কমিটি গঠন করা হয় বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনার জন্য। এর মধ্যে ৯টি কমিটিই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতাকে দায়ী করে, যা ছিল বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিমত।

নির্বাচনের পর বিএনপির তরুণ নেতারাও প্রকাশ্যেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি তোলেন জামায়াত ছাড়ার।

২০০১ সালে এই জোট জেতার পর ১৯৭১ সালের খুনে বাহিনী আল বদরের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রী করার পর সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। সেই সরকারের পাঁচ বছরের শাসন শেষে নানা ঘটনাপ্রবাহে জরুরি অবস্থা জারি হলে, ২০০৭ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে দাবি ওঠে, তাতে চাপে পড়ে জামায়াত এবং তার জোটসঙ্গী হিসেবে বিএনপিও। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে বাজিমাত করে আওয়ামী লীগ।

এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি এবং আরও কিছু ছোট ছোট দলের সম্মিলিত ভোটও বিএনপি জোটকে হারাতে ভূমিকা রেখেছে।

সেই নির্বাচনের পর বিএনপি ও তার জোট আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। মাঝে ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে নেমে ব্যাপক সহিংসতার পর সমালোচিতও হয়। তবে ভোট ঠেকাতে পারেনি।


আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বিএনপি

আপডেটেড ৭ জুন, ২০২৫ ১৫:৫৫
ইউএনবি

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ‌্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ‌্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।

শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।

বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’

এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।

এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’

ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব‌্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ‌্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।

দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।

এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।


ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন দিতে রাজি প্রধান উপদেষ্টা: ফখরুল

গুলশানের দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকালে তিনি এ বিষয়ে একমত হন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবাই আশা করেছিল এই বৈঠক একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে এই বৈঠকটি সত্যিই একটি টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে।’

বৈঠকের পর আজ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত এপ্রিল থেকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার প্রস্তাব করেছিলেন তারেক রহমান। কারণ, সেই সময়টি ভোটের জন্য অনুকূল নয়। ‘প্রধান উপদেষ্টা এতে সম্মত হওয়ায় সমগ্র জাতি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে এবং তারা (সরকার) ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।’

তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি তার বিচক্ষণতা ব্যবহার করে তারেককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং এইভাবে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে জাতিকে নতুন আশা নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

ফখরুল বলেন, বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, দুই নেতার মধ্যে আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে।

বিএনপি নেতা বলেন, বৈঠকে আলোচিত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টিই প্রধান।

তিনি বলেন, অতীতের ভুল বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্যকে আরও সুসংহত করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এখন জরুরি।

ফখরুল বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গত ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, রক্তপাত করা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন—তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তারেক সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।

এছাড়াও, ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এর আগে, লন্ডনে তাদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা এবং ভারপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে প্রস্তাব করেছিলেন যে আগামী বছর রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও বিশ্বাস করেন সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান উপযুক্ত হবে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে সংস্কার এবং বিচারের বিষয়ে এই সময়ের মধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতির প্রয়োজন হবে।’

এতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন তারেক রহমান। দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ‘ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য তারেক রহমানকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

সাধারণ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষ হয়।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে দুপুর ১টার দিকে লন্ডনের বাসভবন থেকে সভাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান।

লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় এই বৈঠক শুরু হয় এবং বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিট (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত চলে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে হোটেলে পৌঁছালে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান।


অন্তবর্তী সরকারকে নির্বাচনের সময়সূচি পুনঃবিবেচনার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’

আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’

অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’

ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।

তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’

ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।

ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’

ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।


ইউনূস-তারেক বৈঠক এই মুহূর্তে রাজনীতির প্রধান ইভেন্ট: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।

বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।


আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও নির্বাচন- দুটোই চাই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও নির্বাচন-দুটোই চাই। শুধু গণতন্ত্র হলেই হবে না, এর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র সত্যিকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে।

আজ সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার চাই, নির্বাচন চাই—আমরা অন্য অধিকারগুলোও চাই, ছাত্রদের অধিকার চাই। শুধু গণতন্ত্র হলেই তো হবে না, সেই গণতন্ত্রকে বুঝতে হবে। গণতান্ত্রিক যেমন অধিকার আছে, গণতন্ত্রের তেমন দায়িত্বও আছে। সেই দায়িত্ব পালন করলেই গণতন্ত্র সত্যিকারের অর্থেই একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারবে।

জাতির পুনর্গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ জাতি পুনর্গঠন করতে গেলে আমাদের ছাত্রদের তৈরি করতে হবে। তারা যেন সব ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে পারে। এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে কিন্তু জ্ঞানের প্রতিযোগিতা করতে হবে। এখন তো আরও কঠিন হয়েছে। টেকনোলজি এমন এক জায়গায় চলে গেছে যে, টেকনোলজিতে যদি আমরা কোপ-আপ করতে না পারি, তাহলে আমরা পিছিয়ে যাব।

শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে এত আন্দোলন, বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থান হলেও শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সারাদেশেই শিক্ষার মান উদ্বেগজনকভাবে খারাপ হয়ে গেছে। কে দায়ী, সেদিকে না গিয়ে আমি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবেই মান কমেছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে সুন্দর করতে হলে, একটা সুন্দর জাতি নির্মাণ করতে হলে, আপনাকে অবশ্যই লেখাপড়া করতে হবে। লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। দুই নম্বর, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস করতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। শারীরিক যোগ্যতা প্রমাণ করতে হলে কাজ করতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে। লেখাপড়ায় যেমন প্র্যাকটিস করতে হবে, খেলাধুলাতেও প্র্যাকটিস করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘রিভারভিউ হাই স্কুলের শিক্ষার মান কমার কোনো কারণ ছিল না, কারণ ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুলের পরেই এর স্থান ছিল। আমি প্রত্যাশা করব, যারা দায়িত্বে আছেন, তারা সবাই চেষ্টা করবেন যেন রিভারভিউ স্কুলের শিক্ষার মানটাকে উন্নত করা যায়। এ ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যেতে পারে না।


বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়, না হলে জানুয়ারিতে

ছবি:সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তা না হলে খুব বেশি হলে জানুয়ারিতে হতে পারে।

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকে দেশে আর নির্বাচনী পরিবেশ থাকবে না। দেশে নির্বাচন মানে একটি উৎসব, একটি মহাযজ্ঞ। এ সময়ে ঝড়, তুফান, রোজা ও পরীক্ষা হয়ে থাকে। ফলে এপ্রিলে নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে না। এজন্য বিএনপিসহ প্রায় ৫০টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছে। বিএনপির প্রত্যাশা, নির্বাচন যেন ডিসেম্বরের মধ্যেই হয়, খুব বেশি হলে জানুয়ারিতে হতে পারে।

আজ সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নয়, সে ব্যাপারে কোনো কথা কিংবা ব্যাখ্যা দেয় না সরকার। কি কি কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, তাও স্পষ্ট করতে পারেনি। এছাড়া ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে নির্বাচন হয়েছিল তা তিন মাসের মধ্যেই হয়েছিল। সে সময় যতটুকু সংস্কার করার তা করা হয়েছিল। কিন্তু এ সরকার প্রায় ১০ মাস আছে। এতদিনে খুব বেশি উল্লেখযোগ্য কিছু নেই।

আওয়ামী লীগের ভোটে আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, যাদের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এ সংগঠনের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক দাবি করাও বেআইনি কাজ। এ অবস্থান থেকে কে কি বললো তা নিয়ে ভাবনা চিন্তার কিছু নেই। তাদের কৃতকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কারও ফাঁসি হবে, কারও যাবজ্জীবন হবে, কেউ জেলে যাবে। তারা আবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলে কীভাবে? এটিই তো অসংলগ্ন এবং বেআইনি।

যারা অপকর্ম করে, তারা বিএনপির কেউ না উল্লেখ করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি স্পষ্ট বলে দিয়েছে, অভিযুক্তদের ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে। কেউ যদি অপকর্ম করে থাকে, সে দায় তাকেই নিতে হবে। বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত নয়। যারা করছে, তারা বিএনপির কেউ না।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ওয়াহেদুজ্জামান বুলা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামীম রেজা ডালিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।


এপ্রিল নয়, ডিসেম্বরই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়: ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এপ্রিল মাস উপযুক্ত নয়, বরং ডিসেম্বর মাসই হবে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

তিনি বলেন, ‘এপ্রিল মাস বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত নয়। সেই সময় তীব্র তাপদাহ থাকে এবং ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে। রমজানের ঠিক পরেই এপ্রিল মাস আসবে এবং সেই সময়ে পাবলিক পরীক্ষাও নির্ধারিত হয়।’

শনিবার (৭ জুন) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল রোজার মাসে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনার অসুবিধার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, ‘রমজানে প্রচারণা চালানো অত্যন্ত কঠিন।’

তিনি বলেন, তাদের দল মনে করে না যে সরকার এপ্রিল মাসে সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত রাতে আমাদের স্থায়ী কমিটি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে এবং এরই মধ্যে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, যা জাতির জন্য (ভোট দেওয়ার জন্য) সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হবে।’

এর আগে শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সংস্কার, ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।’

এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, ‘আমরা গতকাল (শুক্রবার) আমাদের দলের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। আমরা সবসময় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে এসেছি। জনগণের প্রত্যাশাও তাই ছিল।’

‘সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি,’ বলেন তিনি।

এসময় ফখরুলের সঙ্গে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা ঈদুল আজহা উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তারা সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন এবং জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম ও আব্দুল হালিম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সাপু, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর নেওয়াজ আলী এবং আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০০৮ সালে কারাবন্দী হওয়ার আগে প্রতি ঈদে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঐতিহ্য ছিল। তার অনুপস্থিতিতেও দলের সিনিয়র নেতারা এই ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে আসছেন।

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সকলকে ঈদ মোবারক জানাই।’


বাজেটকে 'একতরফা, অকার্যকর' অভিহিত করল বিএনপি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’

বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।

প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।

বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।

বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।


ট্রাইব্যুনালে হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ সালাহউদ্দিনের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।

সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।


সংস্কারের নামে কলা দেখাচ্ছে সরকার: সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিয়ে ‘সংস্কারের’ নামে কেবল ‘কলা দেখাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

আজ শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কৃষক দল।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘সংস্কারের এই নাটক কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম দফায় উদ্বোধন, তারপর দ্বিতীয় দফায় আবার। এখন তৃতীয় দফায় আরেকটা উদ্বোধন! এটি আসলে সংস্কারের নামে ‘কলা দেখানো’ ছাড়া কিছু নয়।’’

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ২ জুন আরেক দফা সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আমরা আগেই বলেছি—যা আলোচনা হয়েছে, সব একত্র করে জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। কিন্তু আপনারা শুধু আনুষ্ঠানিকতা করছেন, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ২ জুন আবার নতুন করে আলোচনার কী প্রয়োজন?’

তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারের চেয়েও বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা—ফ্যাসিস্টদের বিচারের দাবিই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’

সালাহউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সরকারের আগের প্রতিশ্রুতি থেকে তারা সরে এসেছে। ‘আপনারা বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এখন আবার পিছু হটলেন—এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

২০১৫ সালের ১০ মার্চ উত্তরার বাসা থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে অপহরণের শিকার হওয়া সালাহউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, কারাবরণ করেছে, ‘আয়নাঘরে’ বন্দী হয়েছে। এসব কিছু কি শুধু গল্প? আমরা এসব ভোগ করেছি এমনি এমনি।’

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যেই বিএনপি আন্দোলন করছে বলে মন্তব্য করেন দলটির এই নেতা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বললেই যদি আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, তবে সেটা অত্যন্ত হতাশাজনক। সংস্কারের নামে কতদিন আর নির্বাচন বিলম্ব করবেন?’

নির্বাচন পেছানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আপনার (ড. ইউনূস) কোনো যুক্তি নেই। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন না করার একটি কারণও যদি থাকে—তা জাতির সামনে তুলে ধরুন।’

সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, সংস্কারকে অজুহাত বানিয়ে নির্বাচন পেছানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘সংস্কার কখনও সম্পন্ন করার মতো কাজ নয়, সময় ও দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী তা বিকশিত হয়। কিন্তু তাই বলে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি এটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিতে পারেন।’

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ কৃষক দলের নেতারা।


উপদেষ্টা থাকাকালে নাহিদের এনআইডি লক করেছিল ইসি

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।

তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।

তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।

তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।

এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।

এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।

বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।


সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে হাসিনা জিম্মি করে রেখেছিল: সারজিস

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পৃথিবীর যেকোনো বাহিনীকে টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা রাখলেও অতীতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা তাদের জিম্মি করে রেখেছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের চৌরাঙ্গী মোড়ে এক পথসভা এ মন্তব্য করেন তিনি।

সারজিস আলম বলেন, ‘হাসিনার কারণে বিজিবি এত দিন ভারতের বিরুদ্ধে তাদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে পারেনি। সীমান্তে পুশইনের ঘটনা বাংলাদেশবিরোধী ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো সন্তোষজনক নয়। যে ব্যক্তি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে প্রতিবেশীর মতো আচরণ করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত থাকবেন তত দিন বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’

সারজিস আলম বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে প্রতিবেশীর মতো শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক হতে হবে। এখন পর্যন্ত ভারত যে আচরণ বাংলাদেশের সঙ্গে করেছে তা সন্তোষজনক নয়। এই আচরণ দিয়ে ভারত কখনোই প্রতিবেশীর মতো সম্পর্ক পাবে না।

সারজিস বলেন, ‘ভারত তাদের নাগরিক কিংবা এজেন্টদের বাংলাদেশে পুশইনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে শুধু বিজিবি নয়, এই অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিককেই সজাগ থাকতে হবে।’

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র দেখবেন, তখনই তা প্রতিহত করুন।’

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারের অধিক হত্যা ও লাখের অধিক মানুষকে রক্তাক্ত করার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে তারা (ভারত) আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে শেখ হাসিনা সরকার জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের শক্তি সামর্থ্যকে প্রকাশ করতে দেয়নি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে সবসময় ছোট করে রেখেছিল। অস্ত্রের সক্ষমতা নয়, কলিজার সক্ষমতা থাকতে হবে। ১৯৭১ সালে এ দেশ স্বাধীন করে বাংলাদেশ সেটার প্রমাণ দিয়েছে। এসময় তিনি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিন্দু মাত্র আপস না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ সময় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা, কেন্দ্রীয় সংগঠক উত্তরাঞ্চলের রাসেল আহমেদ, লালমনিরহাট জেলা সমন্বয়ক রকিবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


দেশে পদে পদে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

দেশে গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভিডিও বার্তায় একথা বলেন তিনি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ দিয়া আমৃত্যু যে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে গেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

‘প্রতি বছর মে মাসের এই দিনটি আমাদের পরিবারে বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে আসে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশই হয়ে ওঠে বেদনার্ত ও অভিভাবকহীন,’ বলেন তিনি।ঢ়

সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ জিয়াউর রহমান। যে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে তিনি এ দেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ করেছিলেন, সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’

শিগগিরই দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খালেদা বলেন, দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করাই যেন হয় শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীর দৃঢ় অঙ্গীকার।

এ লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের নিরলস কাজ করার আহ্বান জানান দলটির চেয়ারপারসন।


banner close