বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

চিকিৎসার আড়ালে জঙ্গি তৎপরতা

ছবি: দৈনিক বাংলা
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৭:৫২

নুরুজ্জামান লাবু

পেশায় চক্ষু চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিতভাবে ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং বা ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেন ডা. শাকির বিন ওয়ালী। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট (র‌্যামফিট) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের আড়ালে তিনি ওইসব তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্যবস্তু করে উদ্বুদ্ধ করতেন জঙ্গিবাদের ভাষায় ‘জিহাদে’।

সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে তিনজন শাকিরের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছেন। আরেকজন ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট আটক করে তাকে। এভাবেই অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বানিয়েছেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই নতুন কৌশলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি আলোচনার নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র‌্যামফিট অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো শুরা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়।

রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের পাশেই ডমইনো ভবনের চতুর্থ তলায় র‌্যামফিটের কার্যালয়। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে শরিয়াহ হসপিটাল, মেডিকেল ফিকাহর পাশাপাশি অথেনটিক ইসলামিক নলেজ প্রচারসহ বিভিন্ন ফতোয়া কোলাবরেশন করার বিষয়টি উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। শায়খ আবুল হাসনাত কাশিম নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানটির শরিয়াহ বোর্ডের প্রধান। এর শুরা সদস্যদের প্রায় সবাই মুফতি। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি প্রচারণার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্যও আহ্বান জানিয়ে থাকে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে র‌্যামফিটের বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। শাকির এবং র‌্যামফিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে অনুদানের নামে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অবশ্য গত শনিবার র‌্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. শরীফুল ইসলাম শিশির এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নন। শাকির বিন ওয়ালী তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করতেন। শাকিরের মতাদর্শকে তারা বিশ্বাস করেন না বলেও দাবি করেন শরীফুল।

তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে র‌্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাদের একজন মনোরোগ চিকিৎসক আছেন। ওই চিকিৎসক ছাড়াও আরও কয়েকজন এই বিষয়ে লন্ডনের আল-বালাঘ একাডেমি থেকে অনলাইনে ডিপ্লোমা করেছেন।

তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আল-বালাঘ বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখা নিয়মিত আল-বালাঘ ম্যাগাজিনের বিভিন্ন কন্টেন্ট বাংলায় অনুবাদের পর নিজেদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করে। আনসার আল ইসলাম (এএআই) মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। তারা নিজেদের আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে মনে করে। এএআই আগে এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।

হঠাৎ হিজরত, আশঙ্কা বাড়ছে

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলাম গত কয়েক বছরে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম বা কর্মী সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর তারা আর কোনো হত্যা মিশনে অংশ নেয়া বা হামলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছরে তারা সদস্যদের হিজরত করতেও পাঠিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবার নতুন কৌশলে তৎপরতা শুরু করেছে। আগের মতো টার্গেটেড কিলিং বা হামলার জন্য সদস্যদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই কুমিল্লা থেকে একযোগে সাতজনের কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, সাম্প্রাতিক সময়ে আরও অন্তত ২০ জন কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই ফিরে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি জানার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এটা সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র‌্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের কারণে বড় ধরনের হুমকি আসার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না, তবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের খুঁজে বের করা এবং আস্তানাসহ পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি ।’

‘এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার আশঙ্কা নেই। তবে এই আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিই না।’- বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সম্প্রতি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় আমাদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই তরুণদের ঘরছাড়ার মানে হলো জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তারা কেন এবং কাদের মাধ্যমে ঘর ছেড়েছে তা গভীর তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। একই সঙ্গে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’

যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এএআই

জঙ্গিবাদী সংগঠনের কার্যক্রম অনুসরণ করেন এমন বেশ কয়েকজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির প্রায় সব শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেপ্তার হয়েছে অথবা অভিযানে মারা গেছে। কিন্তু আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখনো অধরা।

২০১১ সাল থেকে পালিয়ে থাকা সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আনসার আল ইসলামের অন্যতম একজন শুরা সদস্য হিসেবে সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জন্য একটি নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছেন। কাট আউট ও সিপ্লার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সংগঠনের একটি তৈয়ফা বা সেলের সদস্যরা একে অন্যকেও চেনে না। প্রাথমিক প্রশিক্ষণেই তাদের কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা বা জানতে না চাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জিয়ার তৈরি করা কৌশলের কারণেই কুমিল্লায় নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একজন ফিরে এলেও তার মাধ্যমে অন্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে আনসার আল ইসলামের মাশসুল পর্যায়ের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও শীর্ষনেতাদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর তার পিটি আইডি বা অ্যাপস আইডিতে ঢুকে যোগাযোগ করলেও প্রথম কথপোকথনেই শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝে যায়।

সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

আনসার আল ইসলামের এই তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, তারা তাদের মোবাইলে যোগাযোগের অ্যাপসগুলো অন্য নামে রেখেছিল। কারও কারও মোবাইলের সিস্টেম থেকে যোগাযোগের অ্যাপস খুঁজে বের করে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিত আছে সংগঠনটির দাওয়াহ বিভাগ। তারা দুই ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইদরাতুল দাওয়াহ ওয়াল নুসরাহ বা আইডিএনের দায়িত্ব হলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা। আর কিসমাতুল দাওয়াহ নেটওয়ার্কের কাজ হলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা।

এখন শীর্ষ নেতৃত্বে কারা?

বাংলাদেশে আল-কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শায়খ জসিম উদ্দীন রাহমানী। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হিসেবে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গণ্য করা হয়।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জসিম উদ্দীন রাহমানীর পর এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গণিকে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার শুরা সদস্য হিসেবে আছেন শাইখ তামিম আল আদনানী, যদিও তার চেহারা সংগঠনের সদস্যরাই দেখেনি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই সংগঠনের শুরা পর্যায়ে আছেন এমন অন্তত তিনজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও আরেকজন গত চার বছর ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজারিস্তানে অবস্থান করছে।

জিয়াকে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সহজে ধরতে পারলেও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে না ধরা পর্যন্ত আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আত্মগোপনে থাকা জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও জিয়া নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে, তার অবস্থান সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে না।

অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অন্তত তিন বার জিয়ার অবস্থান শনাক্তের পর অভিযান চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ১০ মিনিটের জন্য জিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ধারণা, জিয়া এখনো দেশেই আছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম মূলত আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এজন্য তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থেকে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’


ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জাতীয় সামাজিক ব্যবসা কেস প্রতিযোগিতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় জাতীয় সামাজিক ব্যবসা কেস প্রতিযোগিতা ২০২৫-এর গ্র্যান্ড ফাইনাল।

১৫তম সামাজিক ব্যবসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাটি যৌথভাবে আয়োজন করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার, সোশ্যাল বিজনেস স্টুডেন্টস ফোরাম এবং ইউনূস সেন্টার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্ভাবনী, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতা। এতে অংশগ্রহণ করে দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৬টি দল, যার মধ্যে ছিল মোট ৬৫৪ জন প্রতিযোগী।

এই প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের "সিলকোনোমিস্টস" দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রথম রানারআপ হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের "সুশি" দল এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির "নো সারপ্রাইজেস" দল।

সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনূস সেন্টারের ওয়াইএসবিসির রিলেশন ম্যানেজার জিনাত টি. ইসলাম, তুরস্কের ইস্তানবুল কৈতুর ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন বিভাগের উপ-প্রধান সেরেফি সেনেম গুনিসু এবং গারবেজম্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সোশ্যাল বিজনেস স্টুডেন্টস ফোরামের আহ্বায়ক মো. কামরুজ্জামান দিদার, উপদেষ্টা ড. খাদিজা রহমান তানচি এবং সহ-আহ্বায়ক সৈয়দ রায়হান-উল-ইসলাম।


আগামীকাল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামীকাল ২৬ জুন সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে। বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হয়ে লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।

এ বছর মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পরীক্ষায় অংশ নেবে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ জন। অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (আলিম) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ১০২ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।

দেশে মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ৭৯৭টি। এছাড়া বিদেশে ৮টি কেন্দ্রে ২৯৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ বছর মোট ৯ হাজার ৩১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রের ২শ গজের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।


দৌলতপুরে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ, সার ও ফলের চারা বিতরণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ৬৩৫০ জন শিক্ষর্থী এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার ও ফলের চারা বিতরণ কর্মসুচির শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে বুধবার (২৫ জুন) সকাল ১১টার দিকে উপজেলা কৃষি অফিস চত্তরে এ কর্মসুচীর শুভ উদ্বোধন করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খরিপ -২/২০২৫-২৬ মৌসুমে কৃসি প্রনদনা কর্মসুচীর আওতায় আমন (উফশী আমন) ধান গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, নারিকেল, তাল, আম, নিম, বেল, জাম ও কাঁঠাল, উফশী জাতের শাকসবজী ও হাইব্রীড জাতের মরিচের আবাদ ও উৎপাদণ বৃদ্ধির লক্ষে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ, সার ও ফলের চারা বিনামূল্যে প্রদান করেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

এসময় কৃষি অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ২৭০০ প্রান্তিক কৃষককে সার ও ধান বীজ, ৮০০ কৃষককে গৃষ্মকালীন সার ও পেঁয়াজ বীজ, ১০০ জন কৃষককে শাকসবজী বীজ, ১০০ জন কৃষককে মরিচের চারা, ৩০০ জন কৃষকের মাঝে তালের চারা এবং ১৭৫০ জন শিক্ষর্থীদের মাঝে আম, নিম, বেল, জাম ও কাঁঠালের চারা বিতরন করা হবে।

এসময় উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও সাংবাদিকবৃন্দ।


কুষ্টিয়ায় ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান, অস্ত্র-মাদকসহ ৫ ‘সন্ত্রাসী’ আটক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

কুষ্টিয়ার একটি বাড়ি থেকে পাঁচ ব্যক্তিকে আটক করেছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল। তারা সবাই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য বলে দাবি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দিবাগত গভীর রাতে সদর উপজেলার আইলচারা বাজার-সংলগ্ন একটি তিনতলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও ফেনসিডিল জব্দ করে দলটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আটকরা দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনটি অপরাধের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তারা বাড়িটিকে একটি টর্চার সেল বা নির্যাতনকেন্দ্রে রূপান্তর করেছিল। সেখানে অপহরণ করে ধরে আনা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। এরপর অপহৃতদের পরিবার থেকে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ।

আটকরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ইমরান খান মানিক, বড় আইলচারা এলাকার বাসিন্দা রনি, মিরপুর থানার পোড়াদহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কাটদহ এলাকার বাসিন্দা সজীব এবং একই ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের রাব্বি ও শাকিল।

স্থানীয়দের দাবি, মানিকের নেতৃত্বে এই চক্রটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভয় ও ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাস ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ।

তবে যৌথ অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে এবং অনেকে বাইরে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অপহরণ সংক্রান্ত ধারায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদেরও শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।’


নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


যশোর আদালতে মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি গায়েব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।

এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’

অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।

যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’

আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।


পদ্মার চরে ভাঙনে দিশেহারা আশ্রয়নসহ হাজার পরিবার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

গত কয়েক মাস ধরে উজান থেকে বয়ে আসা বন্যার পানি আর অতি বৃষ্টিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পদ্মার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সুতালড়ী, আজিমনগর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এরই মধ্যে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে লেছড়াগঞ্জ ইউপির ২নং ওয়ার্ডের হরিহরদিয়া, শ্রীলমপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকা। অসহায় হয়ে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আশ্রয়নের ঘরে থাকা ১৪০টি পরিবার। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে জানা যায়, গত ২৪ বছর ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় আশ্রয়নের ঘরে থাকা বাসিন্দাদের খবর নেয়নি কেউ।

পদ্মার প্রায় ২০০ মিটার কাছে এই আশ্রয়নের ঘরে ভাঙন আতঙ্কে অশ্রুসিক্ত নয়নে ঘুম নেই কারো। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে জয়পুর নতুন হাটবাজার, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আরও হাজার পরিবার।

পদ্মার ভয়ংকর থাবায় সবকিছু হারিয়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষায় স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, হরিরামপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের মধ্যে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনের হাত থেকে শেষ রক্ষা পেতে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। কিন্ত মাথা গোজার ঠাইটুকু মিলছে না করো।

উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া গ্রামের আঁখি বেগম জানান, আমার স্বামী রহিজ উদ্দিন ৫ বিঘা জমিতে চাষ করে ভাল ফলন ওইছিলো। এহন চোহের পলকে চইলা গেলো। এহন আমরা কি করুম?

আশ্রয়নে থাকা মেছের জানান, ‘নদীভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসায় ঘর সরিয়ে কোথায় নেব? ভাইবা পাইতাছি না। পাশে নটাখোলা এলাকায় এক জায়গায় ৩৮ একর, আরেক জায়গায় ৩৫ একর জায়গা হার সোসাইটি নামের এনজিওর দখলে আছে। কিভাবে তারা ৭৩ একর জায়গা তাদের দখলে আছে, জানি না, তবে সেখানে আপাতত অস্থায়ী হলেও থাকার জায়গা করে দিলে অনেক উপকার হতো। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে মনে হয় বাপ-দাদার রেখে যাওয়া ভিটেমাটিটুকুও থাকবে না।’

একই এলাকার আছিয়া বেগম বলেন, ‘এইবারের পদ্মার ভাঙনে শেষ সম্বল যাওয়ার পথে। লোকমুখে শুনছি, সাবেক সংসদ সদস্য, দানবীর মুন্নু মিয়ার সুযোগ্য কন্যা, জেলা বিএনপি আহ্বায়ক রিতা আপা কাউরে ফিরায়ে দেয় না। রিতা আপার কাছে আমগো দাবি- আমগো মাথা গোজার ঠাঁই করে দেন। আমরা পরান ভইরা আপার জন্য দোয়া করুম।

এরমধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতার নির্দেশে ভাঙন কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করে ভাঙন আতঙ্কে থাকা পরিবারের অনত্র সরিয়ে নেয়া এবং পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

হরিরামপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি হান্নান মৃধা জানান, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগ্রামী আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা আপার নির্দেশে আমরা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিএনপি সব সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকে। তাদের সুখ দুখের ভাগিদার আমরা সবাই।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার বলেন, আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।


কক্সবাজার সৈকতে বালি কেটে কৃত্রিম খাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আশরাফ বিন ইউছুপ, কক্সবাজার

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে এবার বাণিজ্যিক দুই প্রতিষ্ঠান মিলেমিশে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি হয়েছে একটি কৃত্রিম খাল। প্রাকৃতিকভাবে পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে একটি বাঁধ তৈরি পর কৃত্রিম খালটি খনন করা হয়েছে।

এতে অবিচ্ছিন্ন সৈকত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি বালিয়াড়িতে তীব্র ভাঙ্গনের আশংকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকত জুড়ে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়ে পর্যটকদের নিরাপদ সমুদ্রস্নানে প্রতিবন্ধকতারও আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কৃত্রিম খাল দিয়ে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লাযুক্ত পানি সরাসরি সাগরে মিশে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ; এমনটা মন্তব্য পরিবেশবাদীদের।

গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্টসংলগ্ন ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ দিয়েই দেখা মিলেছে কৃত্রিম খালটির। আশে পাশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, হোটেল-মোটেল জোনের কিছু অংশের পানি ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পিছনের সীমানার পাশ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ছড়া দিয়ে চলাচল করত। ওই ছড়ার পানি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে মালিক পক্ষ ছড়াটি বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয় একটি বাঁধ। এতে বাঁধের কারণে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে পানি জমে বড় ও গভীর ডোবার সৃষ্টি হয়। পরে জমে থাকা নিষ্কাষনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার কোণ ঘেঁষে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয় একটি কৃত্রিম খাল। এতে খালটি দিয়ে জমে থাকা পানির পাশাপাশি ভারী বর্ষণে ঢলের পানি খালটি দিয়ে প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাচ্ছে। আর জোয়ার-ভাটার সময় পানি যাতায়তের কারণে খালটির দিন দিন পরিধি বাড়ছে। এতে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে অবিচ্ছিন্ন সৈকত। প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে ও ডিভাইন ইকো রিসোর্টের নিয়োগ করা শ্রমিকরা এই কৃত্রিম খালটি খনন করেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানিয়েছেন, দুইটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এতে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লাযুক্ত পানি প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাওয়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষণের খালটি বড় আকার ধারণ করছে। এ খালের কারণে পর্যটকদের নিরাপদ সমুদ্র স্নানের প্রতিবন্ধকতা তৈরি ছাড়াও প্রাণহানির আশংকা দেখা দিতে পারে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্ব পালনকারি সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানিয়েছেন, সম্প্রতি বর্ষায় সৈকতের বিভিন্ন স্থানে গর্ত এবং গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমুদ্র স্নানে যাওয়া ৮ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট গর্ত ও গুপ্তখাল চিহ্নিত করা খুবই কষ্ঠের।

ডিভাইন ইকো রিসোর্টের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রাকৃতিকভাবে যে পথে পানি নেমে যেত যেখানে একটি বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রচীন ভাঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন বিকল্প পথে পানি যাচ্ছে। এটি কৃত্রিমভাবে খনন করা হলেও তারা এটার সঙ্গে জড়িত নন। কারা করেছে তাও জানেন না।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব মূলত কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তারপরও অবৈধ পন্থায় কেউ কিছু খোঁজ খবর নিয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।


দৌলতপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দূর্ধর্ষ ডাকাতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সশস্ত্র ডাকাতদল বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ১ভরি স্বর্ণালংকার ও ১০০ ভরি রুপা লুট করে নেয়। সোমবার (২৩ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের সিরাজনগর বেলতলীপাড়া গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হায়দার আলীর বাড়িতে এ দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, সিরাজনগর বেলতলীপাড়া গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হায়দার আলী পাশর্^বতী বাহিরমাদী বাজারে তার স্বর্ণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে ব্যবসার নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে যান। এসময় পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ৩-৪ জনের একদল সশস্ত্র ডাকাত বাড়িতে প্রবেশ করে ব্যবসায়ী হায়দার আলীর মাথায় পিস্তুল ঠেকিয়ে ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যাগভর্তি নগদ ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ১ভরি স্বর্ণালংকার ও ১০০ ভরি রুপা লুট করে নেয়। বাড়ির লোকজন চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে গেলে ডাকাতদল তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নির্বিগ্নে চলে যায়।

এ ঘটনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হায়দার আলী আজ মঙ্গলবার বিকালে দৌলতপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ডাকাতি ঠিক বলা যাবেনা, চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


গ্রাম বাংলায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

শ্যামনগরসহ আশপাশের এলাকায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এসি খ্যাত ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি দেয়াল ঘর। উপজেলা সবত্র গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছর পুর্বেও মাটির ঘর বা দেয়াল ঘরের বাড়ি ছিল। এসব দেয়াল ঘর বা মাটির ঘরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও ঘরের ভেতরে বেশ আরামদায়ক ও শীতল আবেশ ছিল। এর বিপরিতে শীতের দিনে ঘরে গরমের পরিবেশ ছিল। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, মাটির দেয়াল ঘর এর চতুরপাশ্বের ওয়াল প্রায় দুই থেকে তিন ফুট পুরো ও বিশেষ পক্রিয়ায় মাটির দিয়ে প্রলেপ দেয়ার কারনে এসব ঘরে শীতের বাতাশ বা রুদ্রের তাপ সহজে প্রবেশ করতে না পারায় গরমে শীতল ও শীতে গরম অনুভত হওয়ায় লোকজন বেশ আরামে বসবাস করেছেন। যদিও এটি মাটি দিয়ে তৈরি তারপরও এর নির্মানশৈলী কিন্তু মোটেই সহজ নয়। প্রথমে মাটি কেটে বড় গর্তে ফেলে এটিকে দলাই-মলাইয়ের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে পানি দিয়ে বেশ অনেকদিন কুপিয়ে কুপিয়ে মাটিকে একবারে আঠালো করে পচন পক্রিয়ায় কাচাকাছি নিয়ে অনেকটা তুলতুলে মন্ডার মত করে ঘরের নিদিষ্ট মাপের মধ্যে মাটির কয়েকফুট নিচ থেকে বসিয়ে বিরতি দিয়ে ঘর বানাতেন কারিগড়রা। পরে দেয়াল সাইজ মত কেটে প্রলেপ দিয়ে এটিকে সাজিয়ে তুলতেন। বিত্তবানরা এতে বিভিন্ন নকশা করাতেন। অনেকে মাটির দু-তলাও বানাতেন। এটি অনেক কষ্টকর কাজ ছিল, তবে ঘর বানানোর মেস্তরীর চাহিদাও ছিল ব্যাপক। এক সময় প্রায় সব শ্রেণীর লোকেরাই মাটির ঘরে বসবাস করতেন। অতি ধনাঢ্য লোকেরা টিনের ঘরে বসবাস করতেন। বর্তমানে কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তি পথে মাটির তৈরি ঘর। এর স্থানে উঠছে রড় রড় দালান বাড়ি। তবে গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখনো অনেক মাটির ঘর রয়েছে। এমনি ঘরে বাস করা ইমদাদুল হক টুটুল ও মর্জিনা দম্পত্তি সহ অনেকে জানান, এ ঘর অনেকটা এয়ারকন্ডিশনের মতো শীতে গরম থাকে ও গরমে ঠাণ্ডার আবেশে তারা বেশ আরামেই আছেন। প্রতি বছর মাটির সঙ্গে ধানের তুষ দিয়ে প্রলেপ দিলে এসব ঘর অনেক বছর (৪০-৫০)পর্যন্ত টিকে থাকে বলেও জানিয়েছেন। মাটির ঘর নির্মানেও বেশ খরচ হয়। বর্তমানে হোসেনপুর-গফরগাঁওসহ আশপাশের উপজেলার গ্রাম এলাকায় মাটির ঘর খুব কম দেখা যায়। এক সময় এ পেশায় অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জীবন মানের ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, ফলে মাটির ঘরের স্থানে উঠেছে বড়-বড় ইমারত। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালিদের চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতির এয়ারকন্ডিশনখ্যাত মাটির ঘর।


বাংলাদেশের মুদ্রার মান এ দেশ থেকেই নির্ধারিত হবে, গুগল পে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মুদ্রার মান দেশীয়ভাবে নির্ধারিত হবে এবং কোনো অযৌক্তিক কারণে এক পয়সাও অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। দুবাই থেকে আমাদের টাকার মান নির্ণয় হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, নইলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন, তবে তা নষ্ট করার সুযোগও সীমাহীন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত গুগল পে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে গভর্নর জানান, ব্যাংক খাতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আগামী জানুয়ারি থেকে ‘রিস্ক বেজ সুপারভিশন’ চালু করা হবে। ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংকে সুপারভিশন পরিচালনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাকে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন।

তার মতে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে, তবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে আরো সময় লাগবে।

আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার অংশ হিসেবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনার কথাও জানান গভর্নর। তিনি আশ্বস্ত করেন, আমানতকারীদের কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। সবাই তাদের বর্তমান ব্যাংকে থেকেই সেবা নিতে পারবেন।

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল ‘গুগল পে’

অনুষ্ঠানে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। গুগল, মাস্টারকার্ড এবং ভিসার সহায়তায় সেবা চালু করছে ‘সিটি ব্যাংক পিএলসি’, যা দেশের প্রথম কোনো ব্যাংক হিসেবে গুগল পে-র সঙ্গে যুক্ত হলো।

প্রথম পর্যায়ে কেবল সিটি ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টারকার্ড গ্রাহকরাই গুগল ওয়ালেটে কার্ড সংযুক্ত করে গুগল পে ব্যবহার করতে পারবেন। পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য ব্যাংক যুক্ত হলে সেবাটি আরো বিস্তৃত হবে।

গ্রাহকের হাতে আধুনিক ও নিরাপদ পেমেন্ট প্রযুক্তি

গুগল পে ব্যবহারে গ্রাহকেরা দেশে ও বিদেশে যেকোনো POS টার্মিনালে স্মার্টফোন ট্যাপ করেই লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন, ফলে কার্ড বহনের প্রয়োজন হবে না।

গুগল পে কোনো ট্রানজেকশন ফি নেয় না। নিরাপত্তার জন্য কার্ডের পরিবর্তে ‘টোকেন’ ব্যবহার করে।

গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ, সিইও মাসরুর আরেফিন, মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি জ্যাকবসন, মাস্টারকার্ড ও ভিসার দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সিটি ব্যাংকের সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ভবিষ্যতমুখী ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গঠনের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। গুগল পে চালুর মাধ্যমে সিটি ব্যাংক আবারও প্রমাণ করল যে, আমরা ডিজিটাল উদ্ভাবনের অগ্রদূত।


জয়পুরহাটে হিমাগার সিন্ডিকেটে জিম্মি কৃষকরা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট 

আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। আর এ আলু চাষ করে কৃষকরা ও আলু ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর লাভ করে অভ্যস্ত। তবে এবার পড়েছেন বড় ধরনের বিপাকে। আবার জেলার ২১টি হিমাগারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি হিমাগার অবস্থিত কালাই উপজেলায়।

একদিকে বাজারে আলুর দাম অস্থির, অন্যদিকে হিমাগারে সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সংরক্ষণ মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় প্রশাসনের চাপে ভাড়া না বাড়াতে বাধ্য হলেও পরে কিছু হিমাগারের মালিক নানা অজুহাতে প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রির মৌসুম পুরোদমে শুরু না হতেই ভাড়া বাড়ানো এবং বাজার অস্থিরতায় জেলার অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দ্রুত নীতিসহায়তা ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না হলে সংকট আরও বেশি হবে বলে আশঙ্কা তাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বস্তায় ৫০ পয়সা বেশি মজুরি দেওয়া হচ্ছে। যা তাদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অথচ বিদ্যুৎ-সংকট নেই, বিদ্যুতের ভাড়াও বাড়েনি, তা সত্ত্বেও প্রতি বস্তায় ৫০-৭০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক

আলু ব্যবসায়ী মইনুল ইসলাম বলেন, এম ইসরাত হিমাগার, সালামিন ফুডস, আরবি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ ও পুনট হিমাগার থেকে প্রতিদিন তিনি ৫০০-১০০০ বস্তা আলু কেনাবেচা করেন। এসব আলু তিনি পাঠান কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে। গত দুই-তিন বছর ভালো লাভ হয়েছে। কিন্তু এবার প্রতিদিন বস্তা প্রতি গড়ে এক থেকে দেড় টাকা লোকসান গুনছি। বাজার ওঠানামা করছে। একদিন ৫০ পয়সা লাভ হলেও পরদিন ১ টাকা লোকসান হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকায়। অথচ সংরক্ষণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০ টাকা। গত বছর একই ওজনের বস্তার ভাড়া ছিল ৩৫০-৩৬০ টাকা।

জেলার সদর উপজেলার সোটাহার ধারকী গ্রামের কৃষক তোতা মিয়া বলেন, খুব কষ্টে ৬০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছি আরবি কোল্ড স্টোরে। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রতি বস্তা ৪৩০ টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে প্রশাসনের চাপে ৩৫০ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল। একদিকে বাজার দর নেই, অন্যদিকে অতিরিক্ত ভাড়া এই সংকটে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন আমাদের হিমাগার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করুন।

কালাই পৌরসভার সড়াইল এলাকার আলু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, জয়পুরহাটের পার্শ্ববর্তী বগুড়ার হিমাগারগুলোতে এখনো প্রতি বস্তা আলুর ভাড়া ৩৫০-৩৬০ টাকা। অথচ জয়পুরহাটে তা ৪২০-৪৩০ টাকা।

কালাই উপজেলায় অবস্থিত পুনট হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব ঘোষ বলেন, কিছু কৃষক ঝুঁকি নিয়ে এবার বাড়িতেই আলু রেখেছেন। সেসব আলুই এখনো বিক্রি শেষ হয়নি। তাই হিমাগার থেকে আলু কম আনলোড হচ্ছে।

এম ইশরাত হিমাগার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রায়হান আলম বলেন, এবার হিমাগারে ২ লাখ ৩০ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ২১০০ বস্তা আনলোড হয়েছে, যেখানে গত বছর এ সময় পর্যন্ত হয়েছিল ২০ হাজার ৯৯০ বস্তা।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, উপজেলার ১৩টি হিমাগার মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেন কৃষকের স্বার্থে কেজি নয়, বস্তা অনুযায়ী ভাড়া নেয়।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, এবার জেলায় ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত বছর হিমাগারের সংখ্যা ছিল ১৯টি।

উল্লেখ্য, এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্থানীয় কৃষক ও ছাত্র-জনতা কালাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আলুর ন্যায্যমূল্য ও হিমাগারের অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে তারা স্মারকলিপিও দেয় উপজেলা প্রশাসনকে। ফলে, গত বছরের দরেই আলু সংরক্ষণের ভাড়া নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।


‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে ভাতা পাবেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

তিনি বলেছেন, মাসিক ভাতার পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘আহত যোদ্ধারা’ আজীবন সরকারি মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে বিনা খরচে চিকিৎসা পাবেন। গতকাল সোমবার বাসসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে ৫৪ বছর লেগেছে। কিন্তু আমরা (বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মাত্র সাত-আট মাসের মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শহীদ যোদ্ধা ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে ফেলেছি। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও আহত যোদ্ধারা যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারেন, সেভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।

উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১০ম তলায় এ অধিদপ্তরের জন্য বিশ জন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে অধিদপ্তর থেকে জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যোদ্ধারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ আজীবন তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ দেশের সরকার ও জনগণ তাদের ত্যাগের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফারুক-ই-আজম আরো বলেন, শহীদদের অনেকেরই হয়তোবা খোঁজ আমরা রাখি নাই বা রাখতে পারিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পরেও যদি কেউ অধিদপ্তরে এসে অভিযোগ করে যে, তার কোন স্বজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন। তার সন্ধান তিনি চান। সেক্ষেত্রে যাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের আবেদনের বিষয়ে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে। তাদের জন্য সরকারের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ ক্যাটাগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধারা ‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে মাসিক ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরি ‘এ’ মাসে ২০ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি মাসে ১৫ হাজার এবং ‘ক্যাটাগরি’ ক্যাটাগরি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী সনদ ও পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে।

তিনি বলেন, আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে যারা চিকিৎসা নেয়ার পরও অন্যের সহায়তা ছাড়া জীবন যাপন করতে পারছেন না, যেমন যার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে গেছে। অথবা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যার কারণে তার পক্ষে একা একা চলাফেরা করা অসম্ভব, তারা ‘এ’ ক্যাটাগরির জুলাই যোদ্ধা হিসাবে বিবেচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকাসহ মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। বাকী ৩ লাখ টাকা আগামী জুলাই মাসে পাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা ও উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা, পরিচয়পত্র পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। অনেককে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

‘ক্যাটাগরি- বি’ তে রয়েছেন ৯০৮ জন। যারা গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু অন্যের সহায়তা ছাড়া মোটামুটি চলাফেরা করতে পারেন, যেমন যাদের এক চোখ বা এক পা নষ্ট হয়ে গেছে বা এমন অঙ্গহানি হয়েছে যে, তারা একা মোটামুটি চলতে ফিরতে পারেন। অর্থাৎ চিকিৎসার পর অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম যোদ্ধারা আছেন ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। আর আগামী মাসে বাকি ২ লাখ টাকা পাবেন। তাছাড়া এই ‘বি’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও আধা-সরকারি কর্মসংস্থানে চাকরি ও পরিচয়পত্র পাবেন।

চিকিৎসার পর বর্তমানে যারা সুস্থ তাদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বাসসকে বলেন, ১০ হাজার ৬৪২ জন ‘জুলাই যোদ্ধাকে’ এই ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া আগামী মাস থেকে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। সাথে পাচ্ছেন পুনর্বাসন সুবিধা এবং পরিচয়পত্র।

উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্টকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় দিবস হিসাবে আগামীতে এই দিবসকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পালন করা হবে।

তিনি বলেন, ৮৩৪ শহীদ পরিবারের মধ্যে ১৩৪ জনের পরিবারকে ওয়ারিশ জটিলতার কারণে পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। তাও অতি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আহত যোদ্ধাদের তালিকায় যে সব ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে সেটারও সমাধান করা হচ্ছে।


banner close