রোববার, ১২ মে ২০২৪

চিকিৎসার আড়ালে জঙ্গি তৎপরতা

ছবি: দৈনিক বাংলা
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত
নুরুজ্জামান লাবু
প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৭:৫২

নুরুজ্জামান লাবু

পেশায় চক্ষু চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিতভাবে ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং বা ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেন ডা. শাকির বিন ওয়ালী। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট (র‌্যামফিট) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের আড়ালে তিনি ওইসব তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্যবস্তু করে উদ্বুদ্ধ করতেন জঙ্গিবাদের ভাষায় ‘জিহাদে’।

সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে তিনজন শাকিরের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছেন। আরেকজন ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট আটক করে তাকে। এভাবেই অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বানিয়েছেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই নতুন কৌশলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি আলোচনার নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র‌্যামফিট অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো শুরা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়।

রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের পাশেই ডমইনো ভবনের চতুর্থ তলায় র‌্যামফিটের কার্যালয়। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে শরিয়াহ হসপিটাল, মেডিকেল ফিকাহর পাশাপাশি অথেনটিক ইসলামিক নলেজ প্রচারসহ বিভিন্ন ফতোয়া কোলাবরেশন করার বিষয়টি উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। শায়খ আবুল হাসনাত কাশিম নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানটির শরিয়াহ বোর্ডের প্রধান। এর শুরা সদস্যদের প্রায় সবাই মুফতি। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি প্রচারণার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্যও আহ্বান জানিয়ে থাকে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে র‌্যামফিটের বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। শাকির এবং র‌্যামফিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে অনুদানের নামে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অবশ্য গত শনিবার র‌্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. শরীফুল ইসলাম শিশির এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নন। শাকির বিন ওয়ালী তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করতেন। শাকিরের মতাদর্শকে তারা বিশ্বাস করেন না বলেও দাবি করেন শরীফুল।

তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে র‌্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাদের একজন মনোরোগ চিকিৎসক আছেন। ওই চিকিৎসক ছাড়াও আরও কয়েকজন এই বিষয়ে লন্ডনের আল-বালাঘ একাডেমি থেকে অনলাইনে ডিপ্লোমা করেছেন।

তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আল-বালাঘ বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখা নিয়মিত আল-বালাঘ ম্যাগাজিনের বিভিন্ন কন্টেন্ট বাংলায় অনুবাদের পর নিজেদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করে। আনসার আল ইসলাম (এএআই) মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। তারা নিজেদের আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে মনে করে। এএআই আগে এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।

হঠাৎ হিজরত, আশঙ্কা বাড়ছে

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলাম গত কয়েক বছরে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম বা কর্মী সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর তারা আর কোনো হত্যা মিশনে অংশ নেয়া বা হামলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছরে তারা সদস্যদের হিজরত করতেও পাঠিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবার নতুন কৌশলে তৎপরতা শুরু করেছে। আগের মতো টার্গেটেড কিলিং বা হামলার জন্য সদস্যদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই কুমিল্লা থেকে একযোগে সাতজনের কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, সাম্প্রাতিক সময়ে আরও অন্তত ২০ জন কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই ফিরে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি জানার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এটা সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র‌্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের কারণে বড় ধরনের হুমকি আসার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না, তবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের খুঁজে বের করা এবং আস্তানাসহ পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি ।’

‘এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার আশঙ্কা নেই। তবে এই আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিই না।’- বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সম্প্রতি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় আমাদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই তরুণদের ঘরছাড়ার মানে হলো জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তারা কেন এবং কাদের মাধ্যমে ঘর ছেড়েছে তা গভীর তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। একই সঙ্গে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’

যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এএআই

জঙ্গিবাদী সংগঠনের কার্যক্রম অনুসরণ করেন এমন বেশ কয়েকজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির প্রায় সব শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেপ্তার হয়েছে অথবা অভিযানে মারা গেছে। কিন্তু আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখনো অধরা।

২০১১ সাল থেকে পালিয়ে থাকা সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আনসার আল ইসলামের অন্যতম একজন শুরা সদস্য হিসেবে সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জন্য একটি নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছেন। কাট আউট ও সিপ্লার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সংগঠনের একটি তৈয়ফা বা সেলের সদস্যরা একে অন্যকেও চেনে না। প্রাথমিক প্রশিক্ষণেই তাদের কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা বা জানতে না চাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জিয়ার তৈরি করা কৌশলের কারণেই কুমিল্লায় নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একজন ফিরে এলেও তার মাধ্যমে অন্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে আনসার আল ইসলামের মাশসুল পর্যায়ের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও শীর্ষনেতাদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর তার পিটি আইডি বা অ্যাপস আইডিতে ঢুকে যোগাযোগ করলেও প্রথম কথপোকথনেই শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝে যায়।

সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

আনসার আল ইসলামের এই তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, তারা তাদের মোবাইলে যোগাযোগের অ্যাপসগুলো অন্য নামে রেখেছিল। কারও কারও মোবাইলের সিস্টেম থেকে যোগাযোগের অ্যাপস খুঁজে বের করে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিত আছে সংগঠনটির দাওয়াহ বিভাগ। তারা দুই ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইদরাতুল দাওয়াহ ওয়াল নুসরাহ বা আইডিএনের দায়িত্ব হলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা। আর কিসমাতুল দাওয়াহ নেটওয়ার্কের কাজ হলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা।

এখন শীর্ষ নেতৃত্বে কারা?

বাংলাদেশে আল-কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শায়খ জসিম উদ্দীন রাহমানী। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হিসেবে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গণ্য করা হয়।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জসিম উদ্দীন রাহমানীর পর এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গণিকে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার শুরা সদস্য হিসেবে আছেন শাইখ তামিম আল আদনানী, যদিও তার চেহারা সংগঠনের সদস্যরাই দেখেনি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই সংগঠনের শুরা পর্যায়ে আছেন এমন অন্তত তিনজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও আরেকজন গত চার বছর ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজারিস্তানে অবস্থান করছে।

জিয়াকে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সহজে ধরতে পারলেও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে না ধরা পর্যন্ত আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আত্মগোপনে থাকা জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও জিয়া নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে, তার অবস্থান সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে না।

অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অন্তত তিন বার জিয়ার অবস্থান শনাক্তের পর অভিযান চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ১০ মিনিটের জন্য জিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ধারণা, জিয়া এখনো দেশেই আছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম মূলত আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এজন্য তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থেকে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’


ফতুল্লায় ফ্লাইওভারের পাইলিংয়ে গ্যাস পাইপ ফেটে অগ্নিকাণ্ড

নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকায় রোববার তিতাসের গ্যাসরে পাইপ ফেটে আগুন লাগে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১২ মে, ২০২৪ ১৮:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য পাইলিং করার সময় তিতাস গ্যাসের মূল সংযোগের পাইপ ফেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাস্তার পাশের একটি ভবনের প্লাস্টিকের সুয়ারেজের বেশ কয়েকটি লাইন ও বিদ্যুতের তার পুড়ে যাওয়া সহ ৮ থেকে ৯টি টিনসেড দোকান পুড়ে যাওয়াতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আজ রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ফতুল্লার শাসনগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ২০২৩ সাল থেকে দ্বিতল ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে শাসনগাঁও এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে পাইলিং নির্মাণের কাজ করার সময় মাটির নিচে তিতাস গ্যাসের মূল বিতরণ সংযোগের বারো ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ফেটে সেখানে আগুন ধরে যায়।

তারা আরও জানান, গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে আগুন প্রায় ছয় তলা ভবন সমান উঁচুতে উঠতে দেখা গেছে। এ সময় আতঙ্কে আশপাশের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার বের হয়ে এসে ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে আগুনে কেউ হতাহত হননি বলে জানা গেছে।

আগুন লাগার খবর পেয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ওই এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ফতুল্লা, পাগলা ও শহরের মন্ডলপাড়া স্টেশনের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা ১১টার দিকে আগুন পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিতাসের নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফখর উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগুনের খবর পাওয়ার পর আমাদের তিনটি স্টেশন থেকে মোট ছয়টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এর আগে তিতাস কর্তৃপক্ষ ওই পাইপ লাইনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।’

তবে এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িদের অভিযোগ, কোন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফ্লাইওভার প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। শিগগিরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করার দাবি জানান তারা।


হাসপাতালের লিফটে ‘৪৫ মিনিট’ আটকা পড়ে রোগীর মৃত্যু

গাজীপুরে অবস্থিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১২ মে, ২০২৪ ১৬:৩৮
গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকা পড়ে মমতাজ বেগম (৫০) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর লিফটে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত মমতাজ বেগম গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন স্ত্রী।

মৃতের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয় মমতাজ বেগমকে। এরপর চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের চতুর্থ তলার কার্ডিওলজি বিভাগে নিয়ে যেতে বলেন। রোগীর স্বজনরা তাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলিতে উঠিয়ে লিফটে তোলেন। কিন্তু লিফট হাসপাতালের নবম ও দশম তলার মাঝমাঝি এসে থেমে যায়। তখন লিফটের অপারেটরদের রোগীর স্বজনেরা বার বার ফোন করলেও তারা কোনো যোগাযোগ করেননি। একপর্যায়ে আটকে থাকার ৪৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও লিফট অপারেটররা দরজা ফাঁকা করে কয়েকজনকে বের করে আনেন। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়।

লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. রুবিনা ইয়াসমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কারও ঘাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে ৪ মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে হাসপাতালের ১২ তলার ভেতরের দেওয়াল ও মেঝের মধ্যে থাকা ফাঁকা স্থান দিয়ে এক রোগী ১০ তলা থেকে পড়ে মৃত্যুর বরণ করেন। ওই ঘটনার সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার আরেকজন রোগী একই হাসপাতালে মারা গেলেন।


কালিয়াকৈরে লড়াই হবে গুরু-শিষ্যের 

কামাল উদ্দিন সিকদার (আনারস প্রতীক), সেলিম আজাদ (মোটরসাইকেল প্রতীক)। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১২ মে, ২০২৪ ০৮:৩৮
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জমে উঠেছে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারটি দখলে নিতে মরিয়া গুরু ও তার শিষ্য। চেয়ার পেয়ে গুরুর জনবিমুখ ও চেয়ার পেয়ে শিষ্যের জনমুখো হওয়া নিয়ে হিসাব কষছেন জনগণ। তবে জনমুখো ও কর্মফলের কারণে তাদের এ লড়াইয়ে জনমুখে ভাসছে শিষ্যের নাম।

এলাকাবাসী, নেতা-কর্মী ও উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২১ মে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচন সামনে রেখে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নিয়ে। এখানে চেয়ারম্যান পদে কাগজে-কলমে তিন প্রার্থী। তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী (কাপ-পিরিচ) মুরাদ কবীর শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাই এ পদে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদারের (আনারস) সঙ্গে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহচর, বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আজাদ (মোটরসাইকেল)। নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা এই দুই নেতার লড়াইকে গুরু-শিষ্যের লড়াই হিসেবে দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, কামাল উদ্দিন সিকদার দুইবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনের পর উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও ধীরে ধীরে জনবিমুখ হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি জনগণের কাছে না যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

পক্ষান্তরে, তার শিষ্য সেলিম আজাদ বিপুল ভোটে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও থেমে থাকেননি। প্রত্যেকটা গ্রাম পাড়া-মহল্লায় জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন এবং এখনো যাচ্ছেন। তাদের সমস্যা ও সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ান সেলিম আজাদ। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন। ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে প্রায় তিন হাজারের বেশি ওয়াজ মাহফিলে যোগদান করেন। তার অনুদানের ছোঁয়া লেগেছে বিভিন্ন মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দিরসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এমন কোনো গ্রাম, পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আজাদের অনুদান যায়নি। এমন জনমুখো ও কর্মফলের কারণে গুরু-শিষ্যের এ লড়াইয়ে জনমুখে ভাসছে শিষ্যের নাম। তাদের ভাষ্য, যাকে আমরা কাছে পাই, তাকেই আমরা নির্বাচিত করব। জনগণ মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিবে, এতে সেলিম আজাদের ভোটের অভাব হবে না।

তবে সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার উন্নয়নমূলক কাজ করলেও এলাকায় যোগাযোগ কম। তবে সেলিম আজাদও উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। আবার বারবার এলাকাবাসীর কাছে গিয়েছেন, তাদের সমস্যার কথা শুনেছেন ও অনুদান দিয়েছেন।

মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম আজাদ বলেন, ‘আনারস প্রতীকের প্রার্থী নিজেও তার সমর্থক, নেতা-কর্মীরা আমার মোটরসাইকেল সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাই আমি সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে অনেক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হব।’

অন্যদিকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিকদার তার প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে তিনি এবারও বিজয়ের মালা গলায় পরার বিষয়ে আশাবাদী।

অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৪ জন।


ভাঙ্গা ও নরসিংদীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নরসিংদীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নরসিংদীতে পৃথকভাবে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আজ চার ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় ছেলে, বাবা, চাচা নিহত হয়েছেন। অপর দুটি দুর্ঘটনায় এক কলেজছাত্রী ও এক ষাটোর্ধ্ব নারী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ছেলে মুরসালিন শিকদারকে (৮) ফরিদপুরের একটি মাদরাসায় ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা কাশেম শিকদার (৪০)। সঙ্গে ছিলেন ভাই নাজমুল শিকদার (৩৫)। পথে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ওই তিনজন নিহত হয়েছেন। ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহেল বাকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা সবাই গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের কহলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদি বাসস্ট্যান্ডে পেছনদিক থেকে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন।

নিহত শিশু মুরসালিনের মামা আবু বক্কর বলেন, ‘আমার ভাগ্নে মুরসালিনকে ফরিদপুর শহরের একটি মাদরাসায় ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভগ্নিপতি। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমি ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই।’

ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। মরদেহগুলো পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে সকাল আটটার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার কৈডুবি সদরদী এলাকায় যাত্রীবাহী একটি ইজিবাইককে অজ্ঞাত একটি গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যায়। এই দুর্ঘটনাও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ঘটে। এ ঘটনায় ওই ইজিবাইকের চার যাত্রী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অপর তিনজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানে শাবান্তী আক্তার (১৭) নামের এক কলেহছাত্রীর মৃত্যু হয়।

নিহত শাবান্তী ভাঙ্গার ঘারুয়া ইউনিয়নের খামিনারবাগ গ্রামের শাহাদাত হোসেনের মেয়ে। সে ভাঙ্গা সরকারি কাজী মাহবুবউল্লাহ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

আর সকাল সাতটার দিকে ভাঙ্গার পুখুরিয়া-সদরপুর আঞ্চলিক সড়কে একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সড়কে পড়ে গিয়ে নিহত হন রিজিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারী। তিনি ভাঙ্গার মানিকদাহ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের রজব আলী মিয়ার স্ত্রী। বাড়ির সামনে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

নরসিংদীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে গায়ক পিয়ালসহ নিহত

নরসিংদীর পাঁচদোনায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে গায়ক আহসান তানভীর পিয়ালসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসে থাকা অন্য তিন যাত্রী। শনিবার ভোরে পাঁচদোনার ড্রিম হলিডে পার্কের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাসের চালক মো. সালাম (৪৩) ও যাত্রী আহসান তানভীর পিয়াল (২৬)। আহতরা হলেন ঢাকার মহাখালি এলাকার আফতাব উদ্দিনের ছেলে আকিব (২৬), সিলেট হবিগঞ্জ এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে সাকিব (২৬) এবং চট্রগ্রাম পাথর ঘাটা এলাকার অনুপের ছেলে অমিত (২৭)।

দেহপাশে কেউ কেঁদো না, গল্পগুলো রেখো অজানা’ গানের ভোকালিস্ট ও ‘অড সিগনেচার’ মিউজিক ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন আহসান তানভীর পিয়াল।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আজ ভোরে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি মাইক্রোবাস ভোর ৫টার দিকে নরসিংদীর চৈতাব এলাকার ড্রিম হলিডে পার্কের সামনে পৌঁছালে হানিফ পরিবহনের এটি বাসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের চালক সালাম ও শিল্পী পিয়াল নিহত হন। আহত তিন যাত্রীকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা ছেড়ে দেওয়া হয়।

দুর্ঘটনার পর যাত্রীবাহী বাসটি পালিয়ে যাচ্ছিল, পরে ভুলতা থেকে সেটি আটক করেছে বলে হাইওয়ে থানা পুলিশ জানায়।

মাধবদী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার খাইরুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করি এবং মাধবদী থানায় হস্তান্তর করি।


চাকরির কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ, দুই পুলিশ বরখাস্ত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদারীপুরে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া দুই ‍পুলিশ সদস্য হলেন, পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম ও তানজিলা আক্তার।
শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেয়ার কথা বলে চাকরি প্রার্থী রতন দাসের কাছে থেকে অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে মাদারীপুরে কর্মরত কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম ও নারী কনস্টেবল তানজিলা আক্তার।
পরে রতন রতন দাস এ বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর অভিযোগ করেন। ইতোমধ্যে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (৯ মে) তাদের অভিযুক্ত দুই কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।


পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’

দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতু ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

যমুনা নদীর বুকে অবশেষে দৃশ্যমান হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। সর্বশেষ ৪৯ নম্বর স্প্যানটির স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার মাধ্য দিয়ে এখন পুরোপুরি দৃশ্যমার দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতুর অবয়ব। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশের যমুনা নদীর দু’প্রান্তে দুটি প্যাকেজে নির্মিত হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, রেলওয়ে সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। বাকি কাজের মধ্যে এখন সেতুর ওপর ডুয়েল গেজ রেললাইন বসানোর কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ রেললাইন বসানোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। তবে আশা করা যায় ডিসেম্বরের শেষদিকে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে সেতুটি। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার।

ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৩৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হওয়ার পর ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। কারণ এটি ডবল লাইনের হওয়ায় একইসঙ্গে একাধিক ট্রেন চলতে পারবে। এতে এ অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

বিষয়:

বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার খয়খাটপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশি দুই যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ও ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্তে ওই দুই যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের কর্মকর্তাসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তেতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত

তিনি বলেন, ‘বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে নিহত দুই যুবকের মরদেহ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতে মরদেহ ময়নাতদন্ত হওয়ায় আমরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দুই পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

গত ৮ মে ভোরে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার খয়খাটপাড়া সীমান্তে বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের ফকিরপাড়া ক্যাম্পের সদস্যদের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক জলিল (২৪) ও আলীর (২৩) মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একই দিন বিকেলে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা পতাকা বৈঠক করেন।

বিষয়:

গাইবান্ধায় রেল লাইনে নারীর দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধায় রেললাইনেরর ওপর থেকে আনুমানিক ৪৮ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক নারীর দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। পরে নাম-পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে গাইবান্ধার আঞ্জুমান মফিদুল।

শুক্রবার বিকেল ৫ টার দিকে গাইবান্ধার পৌর কবরস্থানে ওই নারীর মরদেহ দাফন করা হয়। একইদিন সকালে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গাইবান্ধার আঞ্জুমান মফিদুলে মরদেহ হস্তান্তর করে রেলওয়ে পুলিশ। এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার কুপতলা এলাকার লাইনের ওপর থেকে ওই নারীর দ্বিখন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।

বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহ দাফনের বিষয়টি মোবাইল ফোনে দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আঞ্জুমান মফিদুলের গাইবান্ধার উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান খান। তিনি বলেন, দুপুর নাগাদ পুলিশ রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হওয়া নাম-পরিচয়হীন এক নারীর মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে বাদ আছর (বিকেল) আমরা ওই নারীর মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে পৌর কবরস্থানে দাফন করি।

বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম

মুঠোফোনে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয়দের খবরে কামারপাড়া-কূপতলার মাঝামাঝি এলাকার (৩৯৪/২-৪ কেএম সংলগ্ন) রেল লাইনের ওপর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর দ্বিখন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই নারী একইদিন রাত ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে ১৯-আপ ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বিখন্ডিত হয়। পরে পুলিশি পদ্ধতি অবলম্বন করেও তার নাম-পরিচয় না পাওয়ায় সকালে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলে হস্তান্তর করা হয়েছে।


ওয়াজ শুনে ফেরার পথে নারীকে গণধর্ষণ, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় ওয়াজ মাহফিল শুনে ফেরার পথে এক নারীকে বনের ভেতর নিয়ে গণধর্ষণ করা মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুদ রানা ওরফে মাকছুদুলকে (২৬) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৯টার দিকে জয়দেবপুরের হোতাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার র‌্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি মো. মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঝর্ণা আক্তার নামে এক নারী ওয়াজ ফাহফিল শুনে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মাসুদ রানা ও আরও ৩ ব্যক্তি তাকে জোর করে শ্রীপুরের শিমুলতলা এলাকার গজারি বনের ভেতরে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ভুক্তভোগী নারী শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। র‌্যাব-১ এর গাজীপুর ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশালাইজড কোম্পানি (সিপিএসসি) ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি সিপিএসসি গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পারে ওই মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুদ রানা ওরফে মাকছুদুল জয়দেবপুরের হোতাপাড়া বাইল্লা মার্কেট এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন। রাত ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে বাইল্লা মার্কেটের একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি ওই গণধর্ষণে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।


শাহ আমানতে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ১৯১ যাত্রী ও ৭ ক্রু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো
এবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন এয়ার এরাবিয়ার ১৯১ জন যাত্রী ও ৭ জন ক্রু। যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইট। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ থেকে চট্টগ্রামে আসছিল।
শুক্রবার (১০ মে) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ফ্লাইটটি অবতরণ করে।
জানা যায়, এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট জি-৯৫২৬ শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণের পর হাইড্রোলিক প্রেসার সিস্টেম বিকল হয়ে যায়। এ কারণে বিমানটি প্রায় ১২ মিনিট আটকা পড়ে। পরে যাত্রী এবং ক্রুদের নিরাপদে নামিয়ে আনার পর বিমানটি রানওয়ে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইট শারজাহ থেকে ১৯১ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সকালে অবতরণ করে। বিমানটি অবতরণের আগে হাইড্রোলিক প্রেসার সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেয়। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণে সাহায্য করেছি।
তিনি বলেন, ‘বিমান থেকে সব যাত্রী এবং ক্রুদের নিরাপদে নামিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি যাত্রীরা বুঝতে পারেননি।’


নানার কবরে চির শায়িত হলেন পাইলট আসিম জাওয়াদ

আপডেটেড ১০ মে, ২০২৪ ১৬:৪২
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান এবং সহকর্মীসহ হাজারো মানুষের চোঁখের জলে শেষ বিদায় নিয়ে নানার কবরে চির শায়িত হলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার পাইলট আসিম জাওয়াদ রিফাত। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত এই পাইলটকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

শুক্রবার বাদ জুমা বেলা ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ কোর্ট মসজিদের ইমাম মুফতি রফিকুল ইসলাম মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে ৩য় জানাযার নামাজ পড়ান। এরপর দাফনের জন্য লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে শহরের সেওতা কবরস্থানে নেওয়া হয় এবং সেখানে আসিম জাওয়াদ রিফাতের নানার কবরে তার কবর দেওয়া হয়।

এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার-২১৯ এর মাধ্যমে ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ মানিকগঞ্জে নেওয়া হয়।

আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহে বহনের সময় বহনকারী হেলিকপ্টারে তার বাবা ডাক্তার আমান উল্লাহ, স্ত্রী অন্তরা আক্তার, ৬ বছরের শিশু কন্যা আয়জা আক্তার ও ১ বছরের শিশু পুত্র আয়মান ইসলামসহ বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন।

মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টারের শব্দ পেয়ে মাঠে ছুটে আসেন মা নিলুফার খানম। হেলিকপ্টারের দিকে তাকিয়ে ছেলের জন্য আত্ম-চিৎকার করতে থাকেন। হেলিকপ্টার মাঠে অবতরণের পর পরই ছেলের মুখ দেখার জন্য পাগলের মতো ছুটে যান মা নিলুফার খানম। পরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগীতায় পরিবেশ শান্ত করে ছেলের কাছে নিয়ে যান মা নিলুফার খানমকে। ছেলের মরদেহ কফিন দেখেই হেলিকপ্টারের ভিতরে কফিন জড়িয়ে ধরে ছেলের জন্য আত্ম-চিৎকার করতে থাকেন। পরে তাকে শান্তনা দিয়ে হেলিকপ্টারের বাহিরে আনা হয়।

হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ আসার আগেই ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন মা নিলুফার খানম। এছাড়া আসিম জাওয়াদ রিফাতকে শেষ বারের মতো দেখতে ভীড় অপেক্ষা করেন আত্মীয় স্বজন ও সাধারণ মানুষ। রিফাতকে সম্মান জানাতে এব্ং তার মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন বিমান বাহিনীর সদস্য, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিগণ।

নিহতের বাবা আমান উল্লাহ বলেন, ছোট বেলা থেকেই ছেলেকে ঘিরে আমাদের সংসার সাজিয়েছি। আমার ছেলে অনেক মেধাবী ছিল। স্কুলে থেকে ভার্সিটিতে সব সময় ফাস্ট বয় ছিল। আমি আর ওর মা ওকে (ছেলে) অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে বলছিলাম। কিন্তু ছেলে তার শখ পূরণের জন্যই বিমান বাহিনীতে যোগদান করলো। আমি এবং আমার স্ত্রী সব সময় আসিম জাওয়াদ রিফাতের চাওয়া-পাওয়াকে প্রধান্য দিয়ে এসেছি। আমাদের পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের কাছেও সে খুব আদরের ছিল। আমাদের ছেলে তো চলে গেলো, আমরা কাকে ঘিরে বেঁচে থাকবো। কে আমাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিবে। আমি আর কোনদিন বাবা ডাক শুনতে পারবো না, আমিও আর কোনদিন বাবা বলে ডাকতে পারবো না। আমার ছেলে একা মারা যায় নাই, আমাদের পরিবারটাকে মেরে গেছে। এসময় তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানাযায় উপস্থিত সকলের কাছে ছেলের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেন এবং ছেলের রেখে যাওয়া স্ত্রী মেয়ে ও শিশু ছেলের জন্যও সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার আন্নু জানান, শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নিহত আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। এরপর তাকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয় এবং লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে তার মরদেহ রাখা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে কিছুক্ষণের জন্য লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকেই শেষবারের মতো জনসাধণের জন্য আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) পাইলট আসিম জাওয়াদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর ইয়াক-১৩০ নামক একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। পরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি। এ সময় পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন, পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে নেমে পড়েন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট আসিম জাওয়াদ মারা যান। অপর পাইলট মো. সোহান হাসান খান বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃত্যুকালে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের বয়স হয়েছিল ৩২ বছর।


পাইলট জাওয়াদের মরদেহ মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার (১০ মে) দুপুর ১২টার দিকে তাকে বহনকারী বিমানবাহিনীর-২১৯ হেলিকপ্টারটি মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে অবতরণ হয়।

বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার আন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদ রিফাতের মরদেহ নিয়ে মানিকগঞ্জে পৌঁছানোর পর গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে তার মরদেহের কফিনটি একটি ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাদ জুমা শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাকে জেলা শহরের সেওতা কবরস্থানে দাফন করা হবে। শেষবারের মতো আসিম জাওয়াদকে দেখতে স্বজন ও স্থানীয়রা ভীড় জমিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) পাইলট আসিম জাওয়াদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর ইয়াক-১৩০ নামক একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। পরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি। এ সময় পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন, পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরী প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে নেমে পড়েন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট আসিম জাওয়াদ মারা যান। অপর পাইলট মো. সোহান হাসান খান বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃত্যুকালে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।


চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার 

উদ্ধার করা বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হওয়া বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে নৌ বাহিনীর অভিযানকারী দল। কর্ণফুলী থানার জুলধা মাতব্বর ঘাট সংলগ্ন এইচএম স্টিল কারখানার পাশে কর্ণফুলী নদী থেকে বিমানের অংশটি উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে বিমানটি উদ্ধার করে নৌবাহিনী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে এম শফিউল আজম ও নৌ বাহিনীর উদ্ধারকারি দল।
জানা যায়, বিমানের ভগ্নাংশ খুঁজে পেতে বিমান বাহিনীর আধুনিক উদ্ধার জাহাজ ‘বলবান’ ধ্বংস হওয়া বিমানের ভাঙা অংশ উদ্ধারে কাজ চালিয়েছেন।
এছাড়াও বিমানটি খুঁজতে বিশেষ ‘সোনার সিস্টেম’ও ব্যবহার করা হয়েছিলো। উদ্ধারকারীরা তিন ভাগে বিমানটি খুঁজছেন। যে জায়গায় বিমানটি পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেখানে লাল রংয়ের একটি বেলুন দিয়ে শনাক্ত করেছেন, সেখানে ডুবুরি দিয়ে খোঁজা হয়েছিলো।
অন্য একটি দল নদীর পাড়ে খোঁজ চালিয়েছিলেন। এছাড়া আরেকটি দল জহুরুল হক ঘাঁটিতে বসে সবকিছু মনিটরিং করছিলেন। অবশেষে নদীতে নৌ বাহিনীর ডুবুরী দল নামার এক ঘন্টার মধ্যে বিমানটি নদীতে সনাক্ত করে উপরে জাহাজে তুলতে সক্ষম হন বলে জানান নৌ বাহিনীর কর্মকর্তাগণ। উদ্ধারে সেনা, নৌ, বিমানসহ ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কাজ করেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিধ্বস্ত বিমান উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার কাজ শেষ করেননি। তারা আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিলে উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পতেঙ্গা এলাকার কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের ১১ নম্বর ঘাটের নতুন পতেঙ্গা টার্মিনালের অপর পাশে এইচএম স্টিল মিল প্রান্তে বিমানটি আঁছড়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় যান্ত্রিক ক্রুটির ফলে আগুন লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ সময় পাইলট উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন, পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লীডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরী প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে নেমে পড়েন।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট আসিম জাওয়াদ মারা যান।
অপর পাইলট মো. সোহান হাসান খান বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃত্যুকালে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগেও রাশিয়ার তৈরি ইয়াক-১৩০ মডেলের তিনটি প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হয়। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীর পুটিবিলা ও ছোট মহেশখালীতে বিধ্বস্ত হয়। এর আগে একই বছরের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার থানার কাইশ্যাঘোনা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এসব ঘটনায় পাইলটরা আহত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
ইয়াক-১৩০ মডেলের যুদ্ধবিমান ১৯৯৬ সালে প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করে। এরপর ২০০২ সালে একে রুশ সামরিক পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রধান আকাশযান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১৫ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে বিমানগুলো কেনা হয়। রাশিয়ার সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইরকুত করপোরেশন এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নির্মাণ করে থাকে। যুদ্ধবিমানগুলো মৌলিক ও যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য উপযোগী। পাশাপাশি একে আক্রমণের কাজেও ব্যবহার করা যায়।


banner close